অলীক পাতার অন্যান্য সংখ্যা- পড়তে হলে ক্লিক করুন Library ট্যাব টি



। । "অলীক পাতা শারদ সংখ্যা ১৪৩১ আসছে এই মহালয়াতে। । লেখা পাঠানোর শেষ তারিখ ১৫ ই আগস্ট রাত ১২ টা ।.."বিশদে জানতে ক্লিক করুন " Notice Board ট্যাব টিতে"

Sunday, February 28, 2021

৩৮ গল্প-আলোকবর্তিকা শ্রাবণী গুপ্ত সরকার

 

আলোকবর্তিকা 

শ্রাবণী গুপ্ত সরকার   


মেয়ের জন্মের পর ঐশী খুব শখ করে নাম রেখেছিল ইমন। আসলে নিজের বড়ো পছন্দ ছিল ধ্রুপদী সংগীত। বিয়ের পর সংসার আর চাকরি সামলে আর বজায় রাখতে পারেনি ভালোলাগার বিষয়টির চর্চা। তাই দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানোর মত মেয়ের নামটা রাগের নামেই দিয়েছিল। তো সেই মেয়ে গানটাও গায় বেশ ভালোই। মেধাও মন্দ নয়, কিন্তু বড় অলস। কিছুতেই যেন চাড় নেই—হচ্ছে, হবে এভাবেই চলছে।

 

মন্দার আর ঐশীর বড়োই চিন্তা মেয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে। শেষ পর্যন্ত পড়াশোনা শেষ করে একটা প্রাইভেট কোম্পানীতে ঢুকলো ইমন। তারপর একদিন বাড়ীতে নিয়ে এল তূণককে। পুরোনো ছন্দের নামের ছেলেটাকে খুবই ভালো লেগে গেল ঐশীর। বেশ মজার স্বভাব, চাকরিটাও খারাপ করে না। সবচেয়ে ভালো লাগল বাড়িটা কাছাকাছির মধ্যে। মেয়েটাকে ইচ্ছে করলে দেখা যাবে।

 

তারপর তো সময়ের চাকা অনেকবার পাক খেলো। ইমন দুটো চাকরি পাল্টে একটা মাল্টি-ন্যাশনাল কোম্পানীতে যোগ দিল। তূণক দুবার বিদেশে গিয়ে মোট পাঁচ বছর কাটিয়ে এল। মন্দার আর ঐশীর ঘরে বিদেশী পারফিউম আর চকোলেট খুব কমন হয়ে উঠল। হঠাৎ একটা হার্ট অ্যাটাকে মন্দার চলে গেল অন্য জগতে... আর ইমনের একটা ফুটফুটে ছেলে হল, যে কিনা খুব দুষ্টুও। ঐশীর তো খুব সাহিত্যপাঠের ঝোঁক চিরকালই, নাতির নামটা তাই খুব বেছে বেছে রাখল- জিষ্ণু। 

 

তবুও পরিবর্তনের স্রোতে ভেসে যায় নি ঐশী। নিজের হাতে রান্না করা, শপিং, সিনেমা আর অফিসের পরে বই আর গান নিয়ে বেশ কাটে ওর সময়। মাঝে মধ্যে ইমনের ফোন আসে। জিষ্ণুর নিত্যনতুন দুষ্টুমিতে ওরা দুজনেই খুব অসহায় বোধ করে। ঐশী ভাবে ইমনের ছোটোবেলার কথা। ফাঁকা বাড়িতে আয়ার হাতে রেখে যাওয়া সেই ছোট্ট মেয়েটা আজ নিজেই জননী। চাকরি, সংসার দুটোই সামলাচ্ছে। হয়ত খুব দক্ষ হাতে নয়, কিন্তু করছে তো! তা সে যাই হোক, সময় তো থেমে থাকে না। দেখতে দেখতে ঐশীর চাকরির শেষ দিন এসে গেল।

 

ইমনের খুব চিন্তা মা এতদিন পরে খুব একা হয়ে যাবে। কি করে একা একা সময় কাটাবে! ইমনের ইচ্ছা মাকে নিজের কাছে নিয়ে আসা। তবে ফ্ল্যাট ছেড়ে আসতে রাজী হবে কিনা খুবই সন্দেহ আছে। একটা বয়সের পর নিজের পরিচিত জায়গা ছাড়ার কথা মানুষ আর ভাবতেই পারে না।

 

ঐশীর খুব মনে পড়ে পুঁচকী ইমন কেমন করে গ্রিল বেয়ে উঠে মায়ের ফেরার পথের দিকে চেয়ে থাকত। বড়ো হয়ে কথার ফাঁকে বেরিয়ে এসেছে যখন ওর ভীষণ খিদে পেতো তখন আয়া ওকে খেতে না দিয়ে অপেক্ষা করতো কখন টিভিতে দুপুরের সিনেমাটা শুরু হবে, তখনই নিজের সঙ্গে ইমনেরও খাবার পরিবেশন করতো। খিদে মরে যেত বেচারির, ভালো তরকারী, মাছ সবই লাগতো আয়ার ভোগে। একজন তো আবার  ইমনকে বাবার পকেট থেকে টাকা সরাবার শিক্ষাও দিতে শুরু করেছিল। ঐশীর সচেতন চোখ ব্যাপারটা ধরে ফেলে পত্রপাঠ বিদায় করে তাকে।

 

খুবই কষ্ট পেয়েছে মেয়েটা। অথচ ওকে ভালো রাখার জন্য, স্বাচ্ছন্দে রাখার জন্যই যথেষ্ট টাকা দিয়ে আয়া রাখা হয়েছে। অবশেষে ক্লাস সেভেনে উঠে ইমন বিদ্রোহ ঘোষণা করল। আয়ার কাছে আর থাকবে না। ওর অনিচ্ছা সত্ত্বেও টিভিতে নিম্নরুচির সিরিয়াল আর সিনেমা দেখতে বাধ্য হয়। স্কুলের গাড়িতে তোলা, নামানোর সময়টাও খেয়াল রাখে না। তার থেকে দরজায় তালা দিয়ে চাবী নিয়েই ইমন স্কুলে যাবে। সেটাই ভালো। ঐ যে কথায় বলে না ‘সুখের চেয়ে স্বস্তি বড়ো’।

 

শেষ পর্যন্ত মেয়ের কথাই রইলো। দিব্যি একা একা স্নান, খাওয়া, চুল বাঁধা, দরজায় তালা দিয়ে ব্যাগে চাবি নিয়ে স্কুলে যেতে অভ্যস্ত হয়ে গেল। ঐশীর বাপের বাড়ি থেকে মা-বাবা কচ্চিৎ কখনও এসে থেকে গেছেন মাঝে মধ্যে, এই পর্যন্ত। একা একাই স্কুল, কলেজ বেলা কাটিয়ে মেয়েটা আজ মা। আহা! না জানি কত চিন্তা নিয়ে আয়ার হাতে কচি বাচ্চাটাকে রেখে বেরোয় বেচারি। দিন কাল এখন তো আরও খারাপ। হ্যাঁ, ঘরে সি.সি ক্যামেরা বসিয়েছে, কিন্তু তাও দুশ্চিন্তা থাকে কত রকম। তার উপর অত বড় কোম্পানীতে হাজার একটা নিয়মের বেড়াজাল। ছুটি ছাটা তো খুব কম। জিষ্ণু মাকে খুব মিস করে, আর বাবাকে তো বছরে এক দুবার বিদেশে যেতেই হয় কয়েক মাসের জন্য। 

 

দেখতে দেখতে রিটায়ারমেন্টের দিনটাও চলে এল। একগাদা বই, দামী একটা সিল্কের শাড়ি, ফুল, চকোলেট, মিষ্টি, পেন আর অবসর নিয়ে বাড়ি ফিরল ঐশী।

 

বিকেলবেলায় তাড়াতাড়ি অফিস থেকে বেরিয়ে চলে এল ইমন। মায়ের মন খারাপটা কাটাতে হবে তো। এতগুলো বছর পর একদম একা। কিন্তু মা তো দিব্যি ঝলমলে মুখে দরজা খুলল। একটু কিন্তু কিন্তু করে ইমন মাকে বলল ওদের বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাবটা। ঐশী হেসেই উড়িয়ে দিলো। “মাথা খারাপ নাকি। এই বয়সে চেনা জায়গা ছেড়ে আবার নতুন করে অভ্যস্ত হতে হবে। নারে মা, পারব না। আমি এখানেই সবচেয়ে ভালো থাকবো সোনা। তোর বাবার স্মৃতিটা তো আছেই। আর সময় কাটানো নিয়ে চিন্তা করিস না। একটা প্ল্যান আছে মাথায়। দেখবি হুড়হুড়িয়ে সময় কেটে যাবে। তুই বরং সোমবার থেকে জিষ্ণুকে আমার কাছে রেখে যাস। ওর কিছু খেলনা আর এবিসিডি, রাইমস-এর বইও নিয়ে আসিস। আমিই ওর দেখাশোনা করব। তুই আয়াকে একমাসের মাইনে দিয়ে ছাড়িয়ে দে।”  

 

ইমন খুব হতভম্ব হয়ে গেল মায়ের কথাবার্তা শুনে। ওর ভ্যাবাচাকা খাওয়া মুখটা দেখে ঐশী বলল, “ওরে আমার শরীর, মাথা সব ঠিক আছে একদম। আমি তো ভেবেই রেখেছি ঠিক পাঁচটা বাচ্চাকে নিয়ে একটা ক্রেশ খুলবো। তোর ছোটোবেলাটা আমি তো ভুলিনি ইমন। তাই আমার যতটুকু সাধ্য করবো। এতদিন সমাজের থেকে নিলাম তো অনেক। এবার দিই কিছু।”

 

কিন্তু মা তুমি একা পারবে এত সব ঝামেলা সামলাতে?” “আমি তো জোনাকি, ইলা আর রীনাকে বলেছি আমার পরিকল্পনার কথা। ওরা থাকবে আমার সঙ্গে। আমার তো পেনশন আছেই। যা টাকা ক্রেশ থেকে পাবো, সেটা দিয়ে ক্রেশের উন্নতি আর ওদের মাইনে দেবো। দেখবি খুব ভালো থাকবো আমি আর বাচ্চারাও।” ঠিক পাঁচটা বাচ্চা নিয়ে শুরু হয়ে গেল ক্রেশ। ঐশীর তো দারুণ লাগছে। ছোটোদের সবাই ভালোবাসে, তাদের নিয়ে সময় কাটাতে সময় কখনও বাড়তি হয় না। ধীরে ধীরে ওর ক্রেশের জনপ্রিয়তা    বাড়তে লাগল। একটু দূর থেকেও অনুরোধ আসতে লাগল। শুধু বাচ্চাদের খাবারটা দিয়ে যাওয়ার কথা ছিলো অভিভাবকদের। ধীরে ধীরে একটা ক্যান্টিনও চালু করে দিল ঐশী। বাচ্চাদের উপযুক্ত মুখরোচক আর হাল্কা রান্না শুরু হলো। ক্রেশের জনপ্রিয়তা আরও বাড়াতে সাহায্য করল এই ব্যবস্থা। ইতিমধ্যে বেশকিছু মাঝবয়সী গৃহবধূ স্বেচ্ছায় যোগ দিয়েছেন এই সংস্থায়। সরকারী আর বেসরকারী দুরকম সাহায্যই সবিনয়ে প্রত্যাখ্যান করেছে ঐশী। কেবল পুজোর একমাস বন্ধ ক্রেশ, ঐশী নিজেকে সময় দেয়, বেড়াতে যায়।      

 

ঐশীর ক্রেশ অনেক বড় হয়েছে। একটা নতুন ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়েছে। কিছু কমবয়সী লেখাপড়া, নাচগান জানা মেয়েও যোগ দিয়েছে ওর প্রতিষ্ঠানে। এত বৈচিত্র্যময় ক্রেশ খুব কমই আছে এই শহরের বুকে। মাঝে মাঝে বাচ্চাদের মজার সিনেমা দেখানো হয়। ঐশী নিজে বাছাই করা বই পড়ে শোনানোর ব্যবস্থা রেখেছে। বাচ্চারা নিজের সংস্কৃতিটাকে যাতে চিনতে শেখে, সেটা বড় দরকার তো। যাদের ছোটবেলা এই ক্রেশে কেটেছে তারাও মাঝে মধ্যে স্বেচ্ছাসেবা দেয় এখানে। ঐশী দারুণ উপভোগ করছে অবসরহীন অবকাশ। জিষ্ণু এখন ক্লাস নাইনে পড়ে। মাঝে মধ্যেই এসে দিব্যি সামলায় সব কিছু। ঐশীর ক্রেশ ‘লাইটহাউস’ অনেক বিভ্রান্ত মা-বাবাকে নিশ্চিন্ত জীবন দিয়েছে।


Download ALEEK PATA Mobile APP
DOWNLOAD ALEEK PATA ANDROID APP
। মধুমাস -১৪২৭।
| Aleekpatamagazine.blogspot.com |
  |ALEEK PATA- Your Expressive World |Online Magazine |
| Editor: Swarup Chakraborty | Publisher: Debasree Chakraborty |
| Special Spring Issue, 2021 | March-April 2021| 
| Fourth Year  Fifth Issue |26 th Edition|
|© All Rights Reserved By The Editor and The Publisher |
|a DISHA-The Dreamer Initiative |




 

1 comment:

  1. Merkur 15c Safety Razor - Barber Pole - Deccasino
    Merkur herzamanindir.com/ 15C Safety Razor - Merkur - 15C for Barber Pole is the perfect https://jancasino.com/review/merit-casino/ introduction to worrione the Merkur Safety Razor. deccasino

    ReplyDelete

Please put your comment here about this post

Main Menu Bar



অলীকপাতার শারদ সংখ্যা ১৪২৯ প্রকাশিত, পড়তে ক্লিক করুন "Current Issue" ট্যাব টিতে , সবাইকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা

Signature Video



অলীকপাতার সংখ্যা পড়ার জন্য ক্লিক করুন 'Current Issue' Tab এ, পুরাতন সংখ্যা পড়ার জন্য 'লাইব্রেরী' ট্যাব ক্লিক করুন। লেখা পাঠান aleekpata@gmail.com এই ঠিকানায়, অকারণেও প্রশ্ন করতে পারেন responsealeekpata@gmail.com এই ঠিকানায় অথবা আমাদের ফেসবুক গ্রুপে।

অলীক পাতায় লেখা পাঠান