তনিমা
সাহা
মনীলালের ব্যবসায়িক পরিবারে
টাকা-পয়সার অভাব নেই। তার বাবা'রা সাতভাই। মনীলালের বাবা রতনলাল সাতভাইয়ের মধ্যে সবচেয়ে
ছোটো এবং মাথামোটার জন্যে কিছুটা অবহেলিতও বটে। তাই সংসারের যাবতীয় গতর-খাটানো
কাজগুলো রতনলালকে দিয়েই করাতো তার ছয়বৌদি। এই অবহেলা সূঁচের যন্ত্রনাটা রতনলালের
স্ত্রী শোভনাকেও সহ্য করতে হয়েছিল।
মনীলালের বুদ্ধি-সুদ্ধি বেশ কম। এই মোটা মাথার দোষটা সে রতনলাল থেকেই পেয়েছে। তবে রতনলাল থেকে আরেকটি অমূল্য গুণও পেয়েছে। রতনলাল খুব সুন্দর আঁকতে পারতেন। মনীলালও সাদাকাগজের ওপর শুধু হাতের-নখ দিয়ে দাগ কেটেকেটে অবয়ব আঁকে। অবশ্য এই গুনটির কথা শোভনা ছাড়া আর কেউ জানে না।
মনীলালের স্ত্রী আজ দুবছর হলো পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেছেন। মা শোভনা এবং দুই মেয়ে অক্ষরা ও অয়নাকে নিয়েই এখন মনীলালের সংসার। নিজে জ্ঞানের আলো থেকে বঞ্চিত ছিলেন, কিন্তু মেয়েদের ক্ষেত্রে তা হতে দেননি।
আগামীকাল স্বরস্বতী পুজো। বড়োমেয়ের এবছরই স্কুলের শেষ স্বরস্বতী পুজো। হেডস্যার অক্ষরার পিতৃসম। সংসারের অনটনের জন্য যতবার অক্ষরারা বিপাকে পড়তো ততবারই হেডস্যার নির্দিধায় সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতেন। তাই হেডস্যারকে কিছু একটা উপহার দিতে চাইছে সে। কিন্তু শত মাথা খাটিয়েও উপহারের ব্যাপারে কিছুই ভেবে উঠতে পারলোনা। অক্ষরাকে চিন্তিত দেখে শোভনা কাছে এসে বললেন, "কি হয়েছে দিদিভাই। এই মিষ্টি মুখটায় চিন্তার ছায়া কেন"? মুখটা ব্যাজার করে অক্ষরা বললো, "আর বোলোনা ঠাম্মু, আমার চিন্তার কি আর শেষ আছে। ভাবলাম স্কুল ছাড়ার আগে হেডস্যারকে একটা স্মারক-উপহার দেব। কোনো হাতের কাজ জানা থাকলে বেশ হতো...কিছু একটা বানিয়ে দেওয়া যেত"। মুচকি হেসে শোভনা একটা পুরোনো টিনের-বাক্স খুলে কিছু ছবি বার করে আনলেন। ছবিগুলোতে শুধু ফুলের পাপড়ি, পাতা দিয়ে আঁকা। সময়ের চাপে হয়তো পাপড়ি বা পাতার রঙ ম্লান হয়ে গেছে কিন্তু ছবিগুলোর সৌন্দর্য্য ম্লান হয়নি এতোটুকুও। অক্ষরার অবাক মুখের দিকে তাকিয়ে শোভনা বললেন, "এগুলো তোর বাবার হাতের কাজ...."।
ঠিক একবছর পর…
রূপসা মেলায় সবচেয়ে আকর্ষণীয়-কেন্দ্র হলো 'অঙ্কনতাঁবু'। শিল্পী নাকি হাতের নখ দিয়ে অবয়ব এঁকে তা ফুলের পাপড়ি দিয়ে রাঙায়। প্রতি পোট্রেটে পঞ্চাশ টাকা দাম। বলাবাহুল্য 'অঙ্কনতাঁবু'র বাইরে লম্বা লাইন পড়েছে। তাঁবুর ভেতরে একের পর এক পোট্রেট এঁকে যাচ্ছেন মনীলাল এবং মেয়েরা ভীড় সামলাচ্ছে।
No comments:
Post a Comment
Please put your comment here about this post