অলীক পাতার অন্যান্য সংখ্যা- পড়তে হলে ক্লিক করুন Library ট্যাব টি



। । "অলীক পাতা শারদ সংখ্যা ১৪৩১ আসছে এই মহালয়াতে। । লেখা পাঠানোর শেষ তারিখ ১৫ ই আগস্ট রাত ১২ টা ।.."বিশদে জানতে ক্লিক করুন " Notice Board ট্যাব টিতে"

Thursday, April 15, 2021

গল্প-ভালোবাসার ধর্মযুদ্ধ - তপন তরফদার

 ভালোবাসার ধর্মযুদ্ধ

তপন তরফদার

 

বিচার চাই।

ব্যাঙ্কশাল কোর্ট আজকে জমজমাট। মেয়ের বিরুদ্ধে বাবা, ঘুরিয়ে বলা যেতে পারে বাবার বিরুদ্ধে মেয়ে। মেয়েই এখন কাঠগড়ায়। মেয় সাক্ষী দিচ্ছে, দর্শকদের মুখে রসগোল্লা খাওয়ার হাসি। যত বেশি কথা চালাচালি হবে তত বেশি কেচ্ছা শোনা যাবে।

 

খুব দরদি গলায় মেয়েটি বলতে শুরু  করলো। ধর্মাবতার, আমি ও নিরপেক্ষ বিচার চাই।

এই মুহূর্তে আমি আপনার সামনে কাঠগড়ায়। সাক্ষী হিসেবে। আমার কর্তব্য সত্যকে প্রতিষ্ঠা করা। আমি গীতা ছুঁয়ে শপথ নিয়েছি। একবর্ণও মিথ্যা বলব না। মিথ্যাচার কে আমি ঘৃণা করি।

প্রথমেই আপনার কাছে বিনম্র প্রার্থনা,প্রতিটি ঘটনার সঠিক মূলায়ন করবেন।  লক-আপের মধ্যে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছেন এক যুবক! ওঁর সম্পর্কেই সাক্ষ্য দিতে আমাকে ডাকা হয়েছে। ভয়ঙ্কর অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত। আপনার রায়ের উপর নির্ভর করছে ওর জীবন।

মেয়েটি একটু   দম নেওয়ার জন্য থেমেছে, এই ফাঁকে মেয়েটার একটু  পরিচয় জানা  যাক।

আমার নাম মাধুরী  আমি এক গরিব পূজারি ব্রাহ্মণের কন্যা। শ্যামলারঙা, দোহারা  শুনেছি আমার জন্মে বাবা খুশি হননি। ব্যাজার হয়েছিলেন তাঁর পরিবারের লোকজনও। ওনাদের আকাঙ্ক্ষা ছিল পুত্রসন্তান। কিন্তু হলাম কন্যা। না। আমার জন্মের পর বাড়িতে শাঁখ বাজেনি। উল্টে, পুত্রসন্তান উপহার দিতে না পারার অপরাধে আমার সদ্যপ্রসূতি মাকেও নাকি বহু গঞ্জনা শুনতে হয়েছিল। যে আর্থ-সামাজিক পরিবেশে আমার পরিবারের অবস্থান, সেখানে ওই পরিস্থিতি একধরনের স্বাভাবিকই বলা চলে।

 

 

ধর্মাবতার, ওই যে যুবকটির কথা প্রথমেই বললাম, এই মামলায় প্রধান অভিযুক্ত করা হয়েছে তাঁর পরিবারের বৃদ্ধ মা বাবা উপ্স্থিত আছেন।   আপনার এজলাসে এই মুহূর্তে আমার বাবা, কয়েকজন আত্মীয়-স্বজন ও বাবার শুভানুধ্যায়ীদের দেখতে পাচ্ছি। আমার বাবা পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছেন  আমার স্বামী আব্দুল রেজ্জাক  এবং ওর পরিবারের লোকজন আমাকে জোর করে  কিডন্যাপ করে আটকে রেখেছে। মহামান্য  বিচারপতি এখানে পুলিশের অতিসক্রয়িতা লক্ষ করেছেন। বাবা অনেক টাকা দিয়েছেন পুলিশকে। বাবার সামাজিক সমস্যা হয়েছে  আমি মুসলিম ছেলেকে বিয়ে করে কলঙ্কিত করেছি আমার পরিবারকে। আমি কেন আব্দুলকে বিয়ে করেছি আপনার কাছে  নিবেদন করবো।

তখন আমি  ক্লাস টুয়েলভে পড়ি। টিউশন থেকে ফিরছি। সাইকেল পাংচার হয়ে যায় প্রাইমারি স্কুলের আগে। রাত দশটা প্রায় বাজতে চলেছে। এতরাতে স্কুলের বারান্দায় কারা। কিছু  বোঝার আগেই চারজন ঘিরে ধরে বলে সাইকেল সারিয়ে দেবে। বদলে দেখি আমাকেই টেনে অন্ধকারময় গাছের তলায় টেনে  নিয়ে যাচ্ছে। ওদের মুখ  দেখে আমি চিনতে পারি ওরা  এই গ্রামেরই বর্ধিষ্ণু পরিবারের বখাটে  ছেলে। এখানে মদের আসর বসিয়েছে। আমি  বিপদ বুঝতে পেরে চিৎকার করতে থাকি। আমার ভাগ্য ভালো। আব্দুল  ওই রাস্তা দিয়ে সাইকেল করে যাচ্ছিল। ও এগিয়ে আসে। ওরা ওকে ঘিরে ধরে। বচসা শুরু  হয়। আব্দুল দমবার পাত্র নয়। হাতাহাতি শুরু  হয়ে যায়। আব্দুল বলে মাধুরী তুমি পালিয়ে যাও, এরা তোমার সর্বনাশ করবেই।  একজন শক্ত একটা  গাছের  ডাল দিয়ে সজোরে ওর মাথায় মারে। আব্দুল মাটিতে পড়ে যায়। ওরা চারজন মিলে বেধড়ক মারতে থাকে।  আমি  দৌড়ে বাড়িতে এসে বাবাকে সব বলি। বাবা বলেন, চুপচাপ থাকবি। কথাটা ভুলেও মনে আনবি না বদনাম হয়ে যাবে। সবাই রসিয়ে রসিয়ে গুজব ছড়িয়ে দেবে। আমরা মুখ  দেখাতে পারবোনা।

পরের দিন গ্রামের আলোচনার বিষয় আব্দুল কোনও এক মেয়েকে ফুসলে এনেছিল ফূর্তি করতে। ধরা পড়ে যায়। মেয়ের বাড়ির লোকেরা ওকে মেরে মেয়েকে উদ্ধার করে নিয়ে গেছে। কোন মেয়ে, কারা মেরেছে  খোঁজ করেনা  আমাদের হিন্দু  গ্রামের লোকজন। সবাই খুশি একটা মুসলমানকে মেরে উচিৎ শিক্ষা দিয়েছে।

আব্দুলের অবস্থা ভালো নয়। ওর পরিজনরা কলকাতায় নিয়ে যায়। যমে মানুষে টানাটানি।  অবশেষে বেঁচে যায় কিন্তু  বাঁ পায়ের মালাইচাকি ঠিকমতো সচল হয়না।  ঠিক মত হাঁটতে পারেনা।  আব্দুল  লেখা পড়ায় প্রথম থেকেই ভালো ছিল। দুস্থ পরিবারে জন্ম। পড়াশোনার খরচ চালাতে নিজেই কোচিং সেন্টার  খুলেছে ।  কম পয়সায় পড়ায়।  যেহেতু  কম পয়সায় ভালো পড়ায় তাই হিন্দুদের ছেলে মেয়েরা ও পড়তে আসে।  আবদুল টিউশনি করে আর সরকারি চাকরির প্রতিযোগিতা মূলক পরীক্ষায় বসে।

মাধুরীর চোখে মুখে কৃতজ্ঞতার ছাপ। আব্দুলের মনে কোনো আক্ষেপ নেই।  একদিন বেশ আগেই পড়তে চলে আসে মাধুরী। নিজেই সে দিনের কথা তুলে কৃতজ্ঞতা জানায়।  আব্দুল বলে  ওসব ভুলে যাও। মাধুরী বলে  আমার জন্যই সারাজীবন আপনার ভোগান্তি। আব্দুল বলে, মানুষের কপালে কখন কি ঘটে  কেউ বলতে পারে না। দুর্ঘটনা  কখন ঘটবে  কেউ বলতে পারেনা। মানুষ কখন কার সঙ্গে প্রেমে পড়ে যায়। আর সেই প্রেম যদি  বিজাতীয় হয় তার বাঁধুনি কতটা মজবুত তা আমরা ইতিহাসে পড়েছি। মাধুরী  আর আব্দুলের বিষয়টি কিছু  পড়ুয়া বুঝতে পারে  মাধুরীর বাবা  ত্রিলোচনের কানে  পৌঁছে যায়। মাধুরীকে আর পড়তে পাঠায়না।

ইশ্বর আছেন  আল্লাহ আছেন। আব্দুল উচ্চ -প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষকের চাকরি পেয়ে যায় পাশের গ্রাম তক্তাপোলে। ওরা কিভাবে যোগাযোগ রাখে কেউ বুঝতে পারেনা। ডুবে ডুবে  জল খায় শিবের বাবাও টের পায়না। শিবের মাথায় জল ঢেলে শিবরাত্রির দিন মাধুরী কোথায় গেল কেউ খুঁজে পায়না। দুদিন বাদে জানা গেল ওদের দুজনকে দীঘায় দেখা গেছে। ত্রিলোচন চোখে ধুতরো ফুল দেখে, আত্মসন্মান ধুলোয় মিশলো,উপরন্তু যজমানি বাড়িগুলো হাতছাড়া হয়ে যাবে। ওরা আর ডাকবেনা।

পুরোহিতরা জানে মূল্য ধরে  দিলে সাতখুন মাফ। সব পাপ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। ত্রিলোচন দারোগাবাবু কে উপযুক্ত নাজরানা দিয়ে ডায়েরি করে দেয় আমার মেয়েকে কিডন্যাপ করেছে। দারোগাবাবুরা জানে কান টানলেই মাথা চলে আসবে। আব্দুলের বৃদ্ধ্ আব্বাজান ও আম্মাকে সিধে গারদে ঢুকিয়ে দেয়। ম্যজিকের মত কাজ হলো সুড়সুড় করে  আব্দুল থানায়  হাজির হলো। কিন্তু  ত্রিলোচনের কাজের কাজ কিছুই হলোনা। মাধুরীকে ঘরে তোলা তো দুরের কথা ওকে খুঁজেই পাওয়া গেলনা।

পুলিশ কোর্টে চালান করে দিয়েছে। ত্রিলোচন দুঁদে উকিল লাগিয়েছেন এমন কেস সাজিয়েছে যাবজ্জীবন জেল নিশ্চিত। কোনো দিন আর কোনো মুসলিম ছেলে হিন্দু মেয়েদের দিকে তাকাবারই সাহস পাবেনা।  কেসটা এখন আড়াআড়ি ভাবে হিন্দু  -মুসলমানে ভাগ হয়ে  গেছে। যে কোন সময়ে দাঙ্গায় পরিনত হতে পারে।

ধর্মাবতার, আমি  জানতাম আমার পরিবার  আমাকে সর্মথন করবেনা।  তাই বাবার আপত্তিকে আগ্রাহ্য করেই আমরা বিয়ে করলাম। দেশের আইন মেনেই। তারপর একবস্ত্রে চলে গেলাম শ্বশুরবাড়িতে। শ্বশুর-শাশুড়ি আমায় বুকে টেনে নিয়েছেন। কন্যার আদর দিয়েছেন। দিয়েছেন পুত্রবধূর প্রাপ্য মর্যাদা।

ওরা আমার স্বামী এবং বৃদ্ধ শ্বশুর-শাশুড়িকে গ্রেপ্তার করেছে।   অপরাধ? শুনলামআমার বাবা থানায় নালিশ ঠুকেছেন। আমার  আব্দুল  নাকি আমাকে অপহরণ করেছে। ফুসলিয়ে বিয়ে করেছেন। শুধু তাই নয়, জোর করে আমার ধর্ম পরিবর্তন করে দিয়েছেন। এটা নাকি লাভ জেহাদ। আর, স্বামীর বৃদ্ধ বাবা-মা ওই অপকর্মে ছেলেকে সাহায্য করেছেন। সেজন্য তাঁরাও অভিযুক্ত। ওই দেখুন, ওই তিনজনই এই মুহূর্তে আপনার কোর্ট লক-আপে বন্দি।

 

ধর্মাবতার! আপনাকে জানাচ্ছি, কোনও জোর জবরদস্তিতে নয়, আমি স্বেচ্ছায় স্বামীর ধর্ম গ্রহণ করেছি। আমি নিষ্ঠাবান হিন্দু পরিবারে জন্ম নেওয়া এক নারী। যে পরিবারে শেখানো হয় স্ত্রীকে প্রকৃত অর্থেই স্বামীর সহধর্মিনী হতে হয়। সহধর্মিনী না হতে চাওয়াটা ক্ষমাহীন অপরাধ, সীমাহীন পাপ। আমি সেই অপরাধ, সেই পাপ করতে রাজি নই। তাছাড়া, স্বামীর সুখ, দুঃখ, আনন্দ বেদনা, স্বাচ্ছন্দ্য, প্রেম, ভালোবাসা সমস্ত কিছু যখন গ্রহণ করছি, তখন তাঁর ধর্মটা গ্রহণ করতে দ্বিধা থাকবে কেন! ধর্মাবতার, বলুন, আমি কি অপরাধ করেছি?

 

আর, লাভ জেহাদের কথা বলছেন? হ্যাঁ ধর্মাবতার। আমরা লাভ জেহাদই করেছি। শুনেছি জেহাদ মানে ধর্মযুদ্ধ। আমরা ধর্মযুদ্ধই করতে চাই। মানবতার পক্ষে ধর্মযুদ্ধ। নারী-পুরুষের পবিত্র প্রেম ভালোবাসা দিয়ে। আমাদের ভালোবাসার ফসল হয়ে সন্তান আসবে। সেই সন্তানের ধর্ম হবে মানবতা। সেই ধর্মের জোরেই সে একসময় পূর্ণ হবে কারও অকৃপণ প্রেম-ভালোবাসায়। বেঁচে থাকুক এই লাভ জেহাদ। ভালোবাসার ধর্মযুদ্ধ।

আর আমার গোপন  কথা সবাইকে জানালাম। যে নিজের জীবন দিয়ে মেয়েদের ইজ্জত বাঁচায় সে সকলের উর্ধ্বে। সে পরম পুরুষ। আমার মনের মানুষ।

Download ALEEK PATA Mobile APP
DOWNLOAD ALEEK PATA ANDROID APP

। নববর্ষ-১৪২৮| Aleekpata.com |
  |ALEEK PATA- Your Expressive World |Online Magazine |
| Editor: Swarup Chakraborty | Publisher: Debasree Chakraborty |
|Bengali New Year Issue, 2021 | April -July 2021| 
| Fifth Year  First  Issue |27 th Edition|
|© All Rights Reserved By The Editor and The Publisher |
|a DISHA-The Dreamer Initiative |


No comments:

Post a Comment

Please put your comment here about this post

Main Menu Bar



অলীকপাতার শারদ সংখ্যা ১৪২৯ প্রকাশিত, পড়তে ক্লিক করুন "Current Issue" ট্যাব টিতে , সবাইকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা

Signature Video



অলীকপাতার সংখ্যা পড়ার জন্য ক্লিক করুন 'Current Issue' Tab এ, পুরাতন সংখ্যা পড়ার জন্য 'লাইব্রেরী' ট্যাব ক্লিক করুন। লেখা পাঠান aleekpata@gmail.com এই ঠিকানায়, অকারণেও প্রশ্ন করতে পারেন responsealeekpata@gmail.com এই ঠিকানায় অথবা আমাদের ফেসবুক গ্রুপে।

অলীক পাতায় লেখা পাঠান