অলীক পাতার অন্যান্য সংখ্যা- পড়তে হলে ক্লিক করুন Library ট্যাব টি



। । "অলীক পাতা শারদ সংখ্যা ১৪৩১ আসছে এই মহালয়াতে। । লেখা পাঠানোর শেষ তারিখ ১৫ ই আগস্ট রাত ১২ টা ।.."বিশদে জানতে ক্লিক করুন " Notice Board ট্যাব টিতে"

Saturday, January 8, 2022

গল্প-অন্য বসন্ত -বনবীথি পাত্র

 

অন্য বসন্ত

বনবীথি পাত্র

Image Courtesy: Google Image Gallery

বড়লোকের ছেলের সঙ্গে পীরিত হচ্ছে! দুদিন মজা লুটবে, তারপর মধু খেয়ে মৌমাছি উড়ে যাবে। কলঙ্ক গায়ে মেখে তুই মরবি মুখপুড়ি। আর যদি কোনদিন ওই ছেলেটার সঙ্গে মিশতে দেখেছি, ঠ্যাং খোঁড়া করে ঘরে ফেলে রেখে দেব।

 

মা এলোপাথাড়ি কঞ্চি দিয়ে এমন মেরেছে হাত, পিঠ জ্বালা করছে পূর্ণিমার। তবু দাঁতে দাঁতে চেপে হিসহিস করে বলে,

 

-সোমেনদা মোটেও তেমন ছেলে নয়...

 

কথাটা শেষ হওয়ার আগেই মায়ের হাতের কঞ্চিটা ছপাৎ করে এসে পড়ে পূর্ণিমার পিঠে। দিদিকে মার খেতে দেখে ছোট ভাই দুজন ভয়ে চৌকির এককোণে ভয়ে জড়সড় হয়ে বসে আছে। বাবা সারাদিনের কাজের শেষে বাইরের দাওয়ায় বসে ঝিমোচ্ছিল।

আজকাল একটুতেই বড় ক্লান্ত হয়ে পড়ে। এতক্ষণে উঠে এসে মায়ের হাত থেকে কঞ্চিটা কেড়ে নিয়ে বলে,

 

-সোমত্ত মেয়ের গায়ে আর হাত তুলো না সৌদামিনী। তুমি ওকে বুঝিয়ে পারবে না! গাঁয়ে থাকলে নিজের সব্বোনাশ করেই ছাড়বে। তার থেকে হরেন শহরে যে কাজের কথা বলেছিল, সেখানেই বরঞ্চ পাঠিয়ে দাও। একটা পেটের ভারও কমবে, মানটাও বাঁচবে।

 

সোমেনদা মোটেও যে তেমন ছেলে নয়, ওকে ঠকাবে না; এই কথাটুকু বারবার বোঝাতে চেয়েও বোঝাতে পারেনি পূর্ণিমা। পরেরদিন ছিল দোল পূর্ণিমা। গ্রামের রাধাগোবিন্দের মন্দিরে কত ধূমধাম; অথচ সেদিনই হেমেনকাকার হাত ধরে গ্রাম ছাড়তে হয়েছিল ওকে। সোমেনদা তখন সদ্য হাসপাতালে চাকরিটা পেয়েছে, সপ্তাহের শেষে বাড়ি আসে। দোলের দিন দুপুরে ফিরে  আবীর নিয়ে ভাঙা মন্দিরের পিছনে অপেক্ষা করবে বলেছিল। কিন্তু পূর্ণিমাই সেদিন সোমনদা ফেরা অবধি অপেক্ষাটুকুও করতে পারেনি।

 

তারপর...

 

তারপর আর কী! হেমেনকাকা শহরে কাজের নাম করে এনে তুলেছিল ওই কানাগলিতে। ষোল বছরের পূর্ণিমার জীবন থেকে মা, বাবা, ভাই, নিজের বাড়ি, তার প্রেম সব হারিয়ে গেল! নিজের নামটাও মুছে গেল, সে হয়ে গেল চাঁদনী। নরকেই কেটে গেল চব্বিশ-পঁচিশ বছর। বাকী জীবনটাও ওই গলির অন্ধকারেই কেটে যেত, যদি না আপনারা উদ্ধার করে আনতেন।

 

একটানা কথাগুলো বলে হাঁফাতে থাকে চাঁদনী ওরফে পূর্ণিমা। তিনদিন আগে “সুরক্ষা” এনজিও সংস্থা থেকে বেশ কয়েকজন দেহকর্মীকে উদ্ধার করে আনতে পেরেছে। পূর্ণিমা তাদের মধ্যেই একজন। ওর শরীরের অবস্থা এতটাই খারাপ ছিল যে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছিল। মারাত্মক রকমের অ্যানিমিয়া ছাড়াও শরীরে বাসা বেঁধেছে নানারকম মেয়েলি রোগ। দু ইউনিট রক্ত দেওয়ার পর আজ কিছুটা সুস্থ বোধ করায় আজকে ওর সঙ্গে একটু কথা বলতে এসেছিল “সুরক্ষা” বড়দিদিমণি। এতক্ষণ পূর্ণিমার কথা শুনে বড়দিদিমণি জিজ্ঞাসা করেন,

 

-তুমি এখন তাহলে কোথায় যাবে কিছু ভেবেছ?

 

হঠাৎ আনমনা হয়ে যায় পূর্ণিমা। আজ সকালেই হাসপাতালে নার্স দিদিরা বলাবলি করছিল, কালকে নাকি দোল। বেডের পাশের খোলা জানলাটা দিয়ে তাকালে কিছুটা সবুজ চোখে পড়ে। সদ্য লাল লাল কচি পাতায় ভরা মেহগনী গাছটা দেখে অনেকদিন পর বাড়ির উঠোনের কাঠগোলাপ গাছটার কথা মনে পড়ে পূর্ণিমার। শীতকালে সব পাতা ঝরে গিয়ে ফাল্গুন মাসের এই সময়ে নতুন পাতায় ভরে যেত গাছটা। শীতের রিক্ততা পূর্ণ হত বসন্তে। একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে পূর্ণিমা বলে,

 

-আমার জীবন থেকে তো সব ঠিকানা হারিয়ে গেছে দিদিমণি। কোথায় যাব আমি!

 

তখনই অজানা একটা কণ্ঠস্বরে পূর্ণিমা আর বড়দিদিমণি দুজনেই ফিরে তাকায়।

 

-সব হারিয়ে যায়নি পূর্ণিমা। আমি আজও যে তোমার অপেক্ষাতেই আছি...

 

মাঝখানে এতগুলো বছর কেটে গেলেও সোমেনদাকে চিনতে অসুবিধা হয় না পূর্ণিমার। সোমেনদা কী করে পূর্ণিমার খোঁজ পেল! তার মত নষ্ট মেয়ের জন্যও কেউ অপেক্ষা করে! একরাশ প্রশ্ন মনের কোণে উঁকি দিলেও মুখ ফুটে কিছুই যেন বলতে মন চাইছে না পূর্ণিমার। নিজের ফ্যাকাশে বর্ণহীন জীবনটাকে হঠাৎ কেমন যেন রঙিন লাগছে পূর্ণিমার...

ফিরুন সূচিপত্রে



| হিম সংখ্যা-১৪২৮| aleekpata.com|
  |ALEEK PATA- Your Expressive World |Online Magazine |
| Editor: Swarup Chakraborty | Publisher: Debasree Chakraborty|
 Winter , 2021 | August -December 2021 | Fifth Year  Second  Issue |28 th Edition|
|© All Rights Reserved By The Editor and The Publisher |
|a DISHA-The Dreamer Initiative |

No comments:

Post a Comment

Please put your comment here about this post

Main Menu Bar



অলীকপাতার শারদ সংখ্যা ১৪২৯ প্রকাশিত, পড়তে ক্লিক করুন "Current Issue" ট্যাব টিতে , সবাইকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা

Signature Video



অলীকপাতার সংখ্যা পড়ার জন্য ক্লিক করুন 'Current Issue' Tab এ, পুরাতন সংখ্যা পড়ার জন্য 'লাইব্রেরী' ট্যাব ক্লিক করুন। লেখা পাঠান aleekpata@gmail.com এই ঠিকানায়, অকারণেও প্রশ্ন করতে পারেন responsealeekpata@gmail.com এই ঠিকানায় অথবা আমাদের ফেসবুক গ্রুপে।

অলীক পাতায় লেখা পাঠান