অলীক পাতার অন্যান্য সংখ্যা- পড়তে হলে ক্লিক করুন Library ট্যাব টি



। । "অলীক পাতা শারদ সংখ্যা ১৪৩১ আসছে এই মহালয়াতে। । লেখা পাঠানোর শেষ তারিখ ১৫ ই আগস্ট রাত ১২ টা ।.."বিশদে জানতে ক্লিক করুন " Notice Board ট্যাব টিতে"

Tuesday, January 11, 2022

সত্যজিৎ শতবর্ষ ক্রোড় পত্র-মগজাস্ত্র-গন্ধ - মৌসুমী চৌধুরী


 

গন্ধ

মৌসুমী চৌধুরী

Image Courtesy: Google Image Gallery
 

আজকাল প্রায়ই বাতাসে একটা বিদেশি সেন্টের গন্ধ পায় রাই ৷ খুব তীব্র নয় গন্ধটা, মৃদু সুগন্ধ একটা, কিন্তু বার বারই গন্ধটা নাক ছুঁয়ে যায়। আর তখনই বেশ একটা রহস্য দানা বাঁধে মনে। কোথা থেকে আসছে এ সুগন্ধ?  সন্দেহে ফালাফালা হয় মন। এই গন্ধের উৎস কোথায় মনোযোগ দিয়ে বুঝতে চেষ্টা করবার  আগেই গন্ধ বিলিয়ে দিয়ে গন্ধের উৎসটা কোথায় যেন মিলিয়ে যায়! ব্যাপারটা ধরতে পারে না সে।

ইদানীং আরেকটি জিনিস লক্ষ্য করে রাই।

অফিসের পর বাড়িতে ফিরে এসেও অফিসের গল্পেই যেন মত্ত থাকতে চায় মানব। বিশেষ করে অফিসের নতুন প্রবেশনারি অফিসার সেঁজুতির কথা বলতে বলতে যেন আর থামতেই চায় না সে। কতটা এফিসিয়েন্টলি কাজ করছে সেঁজুতি। পাবলিক রিলেশন কতটা সুন্দর হাসি মুখে সামলায় সে, সেঁজুতি আসবার পর তাদের ব্রাঞ্চের কাস্টমার স্যাটিসফ্যাকশান বেড়েছে ইত্যাদি ইত্যাদি।  শুনে শুনে রাইয়ের একেবারে কান ঝালাপালা হয়ে যাওয়ার উপক্রম।

 

পাগল পাগল লাগে রাইয়ের। আচ্ছা এই সেঁজুতি আর সুগন্ধ এ দুইয়ের মধ্যে কি কোথাও সূক্ষ্ম একটা যোগসূত্র আছে? সন্ধের পরেই গন্ধটা কি একটু বেশি জাঁকিয়ে নাক জাপটে ধরে?  নাকি এটা তার নাকের অলফ্যাক্টরি রিজিয়নের কোন সমস্যা! কে জানে! আসলে হয়তো কোন গন্ধই নেই। সবটা মনের ভুল তার! না না... নাহ্! দুদিকে মাথা নাড়ে রাই। সকাল থেকে সন্ধে পর্যন্ত এ বাড়ির সব গন্ধই তো সে খুব ভালোভাবে চেনে। সব গন্ধ তার একেবারে নখদর্পনে।

 

তাদের বাড়িটা শহরের ভিড়ভাট্টা থেকে একটু দূরে। তাই খুব ভোরে পাখিদের সমবেত ভোর-বন্দনায় রাইয়ের ঘুম ভেঙে যায়। ভোরবেলায় লেবুফুলের গন্ধ আর রাস্তার ধারের বাজারের টাটকা সবজির গন্ধ মিলে- মিশে একটা ককটেল সুবাস নাকে আসে। তারপর টুথপেষ্টের গন্ধ, চায়ের লিকারের গন্ধ, টাটকা খবরের কাগজের গন্ধ, শাশুড়ি মায়ের পুজোর ঘর থেকে ভেসে আসা ধুপের গন্ধ, রান্নাঘরের ডাল ফোড়ন, মাছের ঝোল থেকে বাতাস বয়ে আনে স্বাদু গন্ধ। এই গন্ধগুলো একের পর এক উঠে এসে রাইয়ের নাকে ধরা দিতে থাকে। সকালবেলায় বাবুনের দুধ থেকে কেমন একটা আদুরে মা মা গন্ধ ওঠে! ছেলে- বেলা মনেপড়ে যায়।

 

দিন দিন সুগন্ধটা বড় রহস্যময় হয়ে উঠছে রাইয়ের জীবনে। ঠিক সন্ধেবেলায় মানব অফিস থেকে ফেরা মাত্রই সুগন্ধটা যেন আরও আষ্টেপৃষ্টে জাপটে ধরে তাকে। শাশুড়ি মায়ের কাছেও রাই বার বার জানতে চায় তিনিও সেই সুগন্ধ পাচ্ছেন কিনা। তিনি তো বলেন ওইরকম কোন গন্ধ  তিনি পান না। বয়সজনিত কারণে নাকি তার শ্রবণশক্তির সঙ্গে সঙ্গে ঘ্রাণশক্তিও অনেক কমে গেছে। আর না থাকতে পেরে কয়েকদিন পর বলেই ফেলল মানবকে, — আমার মনে হচ্ছে গন্ধটা থুড়ি সুগন্ধটা যেন তুমিই বয়ে নিয়ে আসছ! কী রহস্য বল দেখিনি? সুগন্ধি ছড়িয়ে, চিত্ত ভরিয়ে কেউ কি আজকাল তোমায় ঘিরে রেখেছে ?

 

হঠাৎ যেন প্রয়োজনের চেয়ে একটু বেশিই রুক্ষ হয়ে ওঠে মানব,

—মুখ সামলে কথা বল, বলে দিলাম। সারাদিন তো কোন কাজকর্ম নেই তোমার। খুন্তি নাড়া কোনক্রমে শেষ করে ফেলুদা- তোপসে, সন্তু-কাকাবাবু, মিতিন মাসী গ্রোগ্রাসে গিলে চলেছ দিনের পর দিন। তাই মাথাটা গেছে, সবেতেই রহস্য দেখতে পাচ্ছ। যাও যাও আমার মাথা গরম করিও না।

 

চুপ করে যায় রাই। কিন্তু মনের খচখচানিটা যেতে চায় না। হঠাৎ এতটা রুক্ষ হয়ে উঠল কেন মানব? আশ্চর্য তো! খুন্তি নাড়াটা কোন কাজ নয়? অফিসের প্রবেশনারি অফিসারেরাই যত কেজো মেয়ে! সন্দেহের কাঁটাটা আলপিনের মতো বিঁধে থাকে রাইয়ের মনের চামড়ায়। ফেলুদা কাউকে বা কোনকিছুকেই সন্দেহের বাইরে রাখতেন না। তাই বাতাসের ডানায় উড়ে আসা বিশেষ সেই সুগন্ধ মাথায় হাতুড়িপেটা করতে থাকে রাইয়ের!

 

দেখতে দেখতে পুজো এসে গেল। আকাশ ঝকঝকে নীল। সাদা অসল মেঘেরা কেমন গা ছেড়ে দিয়ে ছুটির আমেজে ভেসে বেড়াচ্ছে গোটা আকাশ জুড়ে। সপ্তমীর দিন থেকে অফিসে ছুটি পড়ে গেল মানবের। এবার তারা ট্যুরে যাবে না। করোনা সংক্রমণের তৃতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কা কাঁটার মতো বিঁধে আছে ভ্রমণবিলাসী বাঙালির জীবনে। তাছাড়া এবার পুজোয় রাইয়ের মনে এতটুকুও শান্তি নেই। মানবের সঙ্গে বাক্যালাপ প্রায় বন্ধ তার। ছুটির বেশির ভাগ সময়টা হোয়াটসঅ্যাপ-চ্যাটিং-এ কাটাল মানব। তবে ছুটির দিনগুলোতে সেই বিশেষ গন্ধটা রাইকে আর তাড়া করল না।  পুজোর চারটি দিন কেটে গেল একরকমভাবে।

 

পুজোর পর শাশুড়ি মা দিন পনেরোর জন্য বেড়াতে চলে গেলেন মেয়ের বাড়িতে। বাবুনের স্কুল লক্ষ্মীপূজোর পর খুলে গেলে আর যাওয়া হবে না বলে ছেলেকে নিয়ে বাপের বাড়ি গেল রাই। ঠিকে কাজের মেয়ে বাসন্তীকে টাকা দিয়ে গেল মানবের অফিসের ভাত রেঁধে দেওয়ার জন্য।

 

ফিরে এসে বেডরুমে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গেই আবার সেই সুগন্ধ তীব্রভাবে ফিরে এল রাইয়ে -র নাকে। আর মস্তিষ্কের কোষে কোষে ছড়িয়ে পড়ল ফেলুদা-সন্দেহ। কপালের দু'পাশের শিরা রাগে দপদপ করতে লাগল যখন শুনল বাসন্তীকে ছুটি দিয়ে মানব নাকি একাই রেঁধে খেয়েছে। তবুও মাথা স্থির রেখে ভিতরের রাগটাকে দমন করল সে। তারপর গন্ধের উৎস সন্ধানে নামল। সমস্ত বেডরুমে তন্ন তন্ন করে খুঁজেও কোন ট্রেস পেলনা। বারান্দা, ড্রয়িং রুম, রান্নাঘর কোন জায়গাতেই খুঁজতে বাকি রাখল না। আজ এস্পার নয় ওস্পার করতেই হবে। তারপরই হঠাৎ চোখ পড়ে  বাথরুমের কাছে বেসিনের পাশে টুথব্রাশ-পেষ্ট রাখবার কেসটির ওপর। দেখে মুহূর্তে চমকে ওঠে রাই! কেসের মধ্যে মানবের নীল রঙের টুথব্রাশের পাশে দাঁড়িয়ে আছে আরও একটি কার যেন সবুজ রঙের টুথব্রাশ এবং ছোট্ট একটি লেডিস পারফিউমের শিশি! অপরাধী চলে গেলও কোন না কোন চিহ্ন রেখেই যায়। প্রদোষ চন্দ্র মিত্তির ওরফে ফেলুদাকে আবার মনে পড়ে গেল রাইয়ের।

 

দৌড়ে শোবার ঘরের দিকে ছুটে যায় রাই।

ঘরে ঢোকার আগে শুনতে পায় মানব খুব হেসে হেসে কার সঙ্গে যেন ফোনে  কথা বলছে।

— তবে তোমার ওই তুলোয় করে সুগন্ধি আমার পকেটে গুঁজে দেওয়ার দাওয়াইটা কিন্তু মারাত্মক কাজে এসেছে, সেঁজুতি। হাঃ হাঃ হাঃ! ওকে সাইকো বললে লোকে এখন আর অবিশ্বাস করবে না।সেঁজুতি আর সুগন্ধি এই দুই "স"-এর মধ্যে একটা সরল সমীকরণ খুঁজে পেয়ে বুকটা অনেক হালকা হয়ে গেল রাইয়ের।

 

পরদিন এক হাতে ঢাউস সুটকেসটা আর অন্য হাতে বাবুনকে ধরে গেট খুলে বাড়ি থেকে

বেরিয়ে গেল রাই। পেছনে পড়ে রইল তার এক সময়ের যত্ন করে সাজান তাসের ঘর।

ফিরুন সূচিপত্রে



| হিম সংখ্যা-১৪২৮| aleekpata.com|
  |ALEEK PATA- Your Expressive World |Online Magazine |
| Editor: Swarup Chakraborty | Publisher: Debasree Chakraborty|
 Winter , 2021 | August -December 2021 | Fifth Year  Second  Issue |28 th Edition|
|© All Rights Reserved By The Editor and The Publisher |
|a DISHA-The Dreamer Initiative |

No comments:

Post a Comment

Please put your comment here about this post

Main Menu Bar



অলীকপাতার শারদ সংখ্যা ১৪২৯ প্রকাশিত, পড়তে ক্লিক করুন "Current Issue" ট্যাব টিতে , সবাইকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা

Signature Video



অলীকপাতার সংখ্যা পড়ার জন্য ক্লিক করুন 'Current Issue' Tab এ, পুরাতন সংখ্যা পড়ার জন্য 'লাইব্রেরী' ট্যাব ক্লিক করুন। লেখা পাঠান aleekpata@gmail.com এই ঠিকানায়, অকারণেও প্রশ্ন করতে পারেন responsealeekpata@gmail.com এই ঠিকানায় অথবা আমাদের ফেসবুক গ্রুপে।

অলীক পাতায় লেখা পাঠান