লাল গোলাপ
অনিন্দ্য
পাল
Image Courtesy: Google Image Gallery
বাগানের কংক্রিটের চেয়ারে বসে
ছিলেন কিশোর। এই অবসর যাপনে প্রধান অবলম্বন। আজকাল আর পড়তেও ভালো লাগে না। স্টিলের
গেটের এপাশে বসে ওপাশের বড় রাস্তার বাহন স্রোত দেখেন, বছরে একবার
যখন ওই দরজার ওপাশে একমাত্র ছেলে সৌম্য সপরিবারে এসে দাঁড়ায়, একমাত্র সে
দিনই তিনি গেটের বড় তালা খোলেন। নচেৎ আমিনাই এ সব করে। সেই কদিন নিউইয়র্কের গন্ধে মম করে বাড়িটা। আজ ও তেমন
একটা দিন। সন্ধ্যার একটু পরে ওরা পৌঁছে যাবে শিকড়ের কাছে। আনমনে এসব ভাবছিলেন।
চোখে ভেসে উঠলো পঁয়ত্রিশ বছর আগের একটা দিন। ঋতু যে দিন প্রথম এল এ বাড়িতে, সৌম্যর
গভর্নেস হয়ে। ফ্যালোপিয়ান টিউব ফেটে যাওয়ার পর রুমি শুধু ছেলের মুখটা দেখে এক
বছরের একটা হিসেবি দাম্পত্য থেকে তাকে যখন মুক্তি দিলো, কিশোর তখন
মাত্র একত্রিশ। ঋতু যে কখন তার আর সৌম্যর একমাত্র অবলম্বন হয়ে উঠেছে, তারা কেউ
বুঝতে পারে নি। পেরেছিলেন কিশোরের বাবা, তার পর একসঙ্গে তেত্রিশ বছর। ভাবতে
ভাবতে মাথাটা এলিয়ে দিলেন চেয়ারের পিঠে। চোখ বুজে যেন দেখতে পেলেন সেই গঙ্গার পাড়ে, প্রথম যেদিন
ঋতুকে নিজের করে পেয়েছিলেন,
কোলে মাথা রেখে শুয়ে ছিলেন ঘন্টার পর ঘন্টা। কোন শব্দ নেই, দু’জন মানুষ
যেন প্রত্ন মূর্তির মত একে অন্যকে আশ্রয় করে আছে, কোন কাঁটা নেই, কোন কিন্তু
নেই। সেদিন একটা লাল গোলাপ দিয়েছিলেন ঋতুকে। মনে হল, এখনও সেই গঙ্গার পাড়েই আছেন, শুয়ে আছেন
ঋতুর কোলে মাথা রেখে। নরম একটা হাতের স্পর্শ আর সেই মৃদু অদ্ভুত সুন্দর সুগন্ধে
কিশোরের চোখ জুড়িয়ে এল। কেমন যেন একটা কষ্ট, কান্না গলার কাছটায় জমে উঠলো হঠাৎ।
অস্ফুটে বললেন, এই
দু’টো
বছর একবারও এলেনা? ছেলেটাও
চলে গেল, তুমিও
চলে গেলে, আমার
কথা মনেও পড়লো না? আর
পারছিনা ঋতু এই একলা জীবন বয়ে বেড়াতে। অনুভব করলেন একটা আলতো স্পর্শে ঋতু সেই প্রথম দিনের মত ঠোঁট দিয়ে
ছুঁয়ে দিলেন তাঁর কপাল। রিন রিন করে বললেন, “তোমার কাছেই তো আছি সব সময়, ওই লাল
গোলাপ হয়ে, দেবে
না আজ আমাকে, আজকের
দিনটা তো তুমি ভোলো নি কখনও।”
আমিনা চা নিয়ে কিশোরকে দিতে আসছিলো।
বারান্দায় থেকে নেমেই দেখলো কিশোর পাগলের মত ছুটে গোলাপ গাছের দিকে যাচ্ছেন। তার
চোখের সামনেই জল দেবার পাইপে পা আটকে গেল কিশোরের। বাবু বলে চেঁচিয়ে ছুটে এল
আমিনা। চায়ের কাপ পড়ে রইলো বাগানের ঘাসের উপর। কিশোর ও।
বাইরে তখন সবে প্রথম হেমন্তের
সন্ধ্যা নামছে।
️
No comments:
Post a Comment
Please put your comment here about this post