অলীক পাতার অন্যান্য সংখ্যা- পড়তে হলে ক্লিক করুন Library ট্যাব টি



। । "অলীক পাতা শারদ সংখ্যা ১৪৩১ আসছে এই মহালয়াতে। । লেখা পাঠানোর শেষ তারিখ ১৫ ই আগস্ট রাত ১২ টা ।.."বিশদে জানতে ক্লিক করুন " Notice Board ট্যাব টিতে"

Saturday, January 8, 2022

গল্প- কলতলা -সুনীল কর্মকার

 কলতলা

সুনীল কর্মকার

Image Courtesy: Google Image Gallery
 

‌‌‌এ পাড়ার মেয়েদের বিয়ে সাধারণত মেয়েদের নিজেদের কেই ঠিক করে নিতে হয়। মোবাইল চালু হওয়াতে কাজটি বেশ সহজ হয়েছে। মোবাইল ঘাঁটতে ঘাঁটতে দুজন-দুজনের আলাপ। তারপর কাছাকাছি। তারপর বিয়ে। বিয়ের আগে একটু ফস্টি নষ্টি, একটু হাত ধরাধরি, টুকটাক খাওয়া। মেয়েরা একটু বড়ো হলেই নিজেরা সচেতন হয়ে ওঠে। বাবা-মা এবিষয়ে খুব একটা নাক গলায় না। কী করেই বা নাক গলাবে? ওপার থেকে শ্যাওলার মতো ভাসতে ভাসতে এ পারে ঠেকা। চালচুলো হারিয়ে কোন রকমে একটু আশ্রয়। ফাঁকা জায়গায় ত্রিপল খাটিয়ে থাকতে থাকতে, ফুটে দোকান দিয়ে কিংবা হকারি করতে করতে কেউ কেউ সস্তায় জলা জমি কিনে চারটা পিলার দাঁড় করিয়ে মাথার উপর একটি ছাদন দিয়ে ঘর বানিয়ে সংসার। একটু বেশি বৃষ্টিতেই ঘরের ভিতর জল। তারপর  মশা ,সাপ এসব তো আছেই। ঘরে ঘরে ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়া, জণ্ডিস। পেটের চিন্তায় ছেলেমেয়েদের দিকে তাকাতেই পারেনা। সচেতন বাবা মা হলে স্কুলে পাঠায় নতুবা ছোট থেকেই রোজগারের ধান্দায় নেমে কেউ বনে যায় জেল ফেরৎ খোকা , কিংবা নেতার পিছু পিছু ঘুরতে ঘুরতে মোনা মস্তান।

মেয়ের বিষয়ে কানাঘুষো কিছু শুনতে পেলে মা সাবধান করে দেয়, “দেখে শুনে পা দিস। শেষকালে যেন চোখের জল ফেলতে নাহয়”।  ব্যস এটুকুই, সেটা কথার কথা। বেশ হাসি-খুশি নিয়ে প্রিয় মানুষ টার সাথে হাত ধরে বেরিয়ে একরাশ বিষন্নতা নিয়ে ফিরে আসে বছর না ঘুরতেই। কেউ কেউ লাঠি ঝাঁটা খেতে খেতে একদিন অসহ্য হলে জীবনটাকেই শেষ করে দেয়। মৃত্যুর একটা খবর ওপাশ থেকে ভেসে আসে। তারপর সব চুপচাপ। যারা ফিরে আসে তাদের অন্য এক জীবন শুরু হয়। সে এক কঠিন লড়াই। কারো লেখাপড়া থাকলে সামান্য টাকায় কল সেন্টার অথবা শপিংমলে জায়গা পায়। আর নাহলে ভাসতে ভাসতে কে কোথায় গিয়ে ঠেকবে কেউ জানতেও পারেনা।

 

পাড়ার পুরুষদের এসব বিষয়ে উৎসাহ না থাকলেও মেয়েরা কিন্তু কল তলায় জল ধরতে গিয়ে রসিয়ে রসিয়ে এসব নিয়ে কলতলাকে জমিয়ে রাখে। কোন্ মেয়ে কোথায় যায়, ক’টায় ফেরে, কোন্ ছেলের সঙ্গে কোথায় দেখেছে-সেসব নিয়ে মুখরোচক গল্প চলতেই থাকে যতক্ষণ না পর্যন্ত জল পড়া বন্ধ  হচ্ছে। জলের শব্দ বন্ধ হলে তবেই গল্পের শেষ  হয়। আবার পরের দিন সেই একই, চলতেই থাকে দিন-মাস-বছর ধরে আলোচনা।

 

 মধুজা  মায়ের কাছে বেশ কদিন ই এসেছে। বছর খানেক আগে বিয়ে করেছে। শহরতলি ছাড়িয়ে মেদিনীপুরের কোন এক গাঁয়ে নাকি তার শ্বশুর বাড়ি। মোবাইলে যোগাযোগ। দীপঙ্কর পড়তে এসে মোবাইলে মধুজাকে দেখেছিল। দীপঙ্করের চেহারা, কথাবার্তা , স্মার্টনেস দেখে মধুজার বেশ পছন্দ হয়েছিল। ক্রমশঃ দীপঙ্করের আসা -যাওয়া শুরু হলো মধুজাদের বাড়িতে। পাড়ার অনেকেই দেখেছে। দীপঙ্কর বলেছিল “চাকরি না পেলে তার পক্ষে বিয়ে করা সম্ভব নয়। অপেক্ষা করতে হবে”,  বছর দুই অপেক্ষার পর ওরা বিয়ে করে। সাধ্যমতো অনুষ্ঠান করে, পাড়ার অনেককে নিমন্ত্রণ করে খাইয়েছিল। মধুজার প্রিয় বান্ধবী শ্রীময়ী বুঝিয়েছিল “আমার মতো তুই যেন ভুল করিস না। এখনকার ছেলেদের বিশ্বাস করা ঠিক নয়”।  শিলিগুড়ির রতন এপাড়ায় প্রাইভেট কোম্পানিতে কাজ করতে করতে শ্রীময়ীর সাথে ভাব জমে। ঐ পাড়াতেই ভাড়া থাকতো রতন। দেশের বাড়ি, জায়গা জমির কথা বলে অনেক স্বপ্ন দেখিয়েছিল। কোম্পানি বন্ধ হলে দেশে গিয়ে শ্রীময়ী দেখে সব উল্টো। থাকার একটিই ঘর। টাকা পয়সা সামান্য যা ছিল তাতে করে একটা টোটো কিনে চালাতে শুরু করে। শহরে হাজার হাজার টোটো। রোজগার ও সব দিন হয়না। যা রোজগার তা আবার জুয়োর নেশায় উড়িয়ে দিয়ে নেশা করে ফাঁকা হাতে বাড়ি ফিরে শ্রীময়ীর উপর জোর জুলুম। হাত ও উঠতে লাগল শ্রীময়ীর উপর। অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে একদিন পালিয়ে এলো মায়ের কাছে।

এসব ঘটনা মধুজা সবই জানতো। তবু দীপঙ্করকে অন্যদের থেকে আলাদা মনে হয়েছিল। রেনু কাকীমারা সেই নিয়েই মধুজার পিণ্ডি চটকাচ্ছিল। বিশাখা পিসি বলে –“দ্যাখো ক'দিন পরেই শুনবে ওখানকার পাট চুকিয়ে চলে এসেছে ও । যাবার নাম গন্ধ আছে?

 

রেনু কাকীমা বিশাখার কথার খেই ধরে বলে, “হ্যাঁ গো আগে কত্তো হাসিখুশি থাকতো। সেই ছোট্ট থেকে দেখছি-আমাদের ঘরে তো পড়েই থাকতো। এসে থেকে মাত্র গোনাগুন্তি একদিন কিছুক্ষণের জন্য এসেই চলে গেল। আমার বাপু ক্যামন ক্যামন লাগলো..."

কনিকা বলে, “না না ও ওরকম নয় ই। লেখাপড়া জানা মেয়ে। এখানে স্কুলে পড়াতো...”

-“তুই আর বলিস না বাপু, কত টুকুই বা ওকে চিনিস? বড়ো প্যাঁচালো,” রেনু বলে ।

বিশাখা বলে, “বিয়েটা নামমাত্র। দ্যাখো এখানে কার সঙ্গে ফেঁসে আছে। ওর প্রিয় বান্ধবী টাকে দেখছো না-উড়ে বেড়াচ্ছে। ওর মতো এও হবে। মনের মিল নাহলে বন্ধু হয়?

ইতিমধ্যে কলে জল এসে গেছে। মধুজা তাড়াতাড়ি আসছে বালতি হাতে কলতলায়। ওকে  দেখে সবাই প্রসঙ্গান্তরে চলে গিয়ে জল ও ধরে কথাও চলে। রেনু কাকীমা মধুজাকে উদ্দেশ্য করে বলে, “কি রে! জল নিবি? তোর মা?

-“মাকে বললাম তুমি থাকো,আমি যাচ্ছি। যদ্দিন আছি তোমাকে কষ্ট করতে হবেনা”।

উপস্থিত সবাই এ-ওর মুখের দিকে তাকায়। চোখ বড়ো বড়ো করে রেনু কাকীমা বলে—“সে কীরে এই তো কবে এলি? এর মধ্যেই চলে যাবি?

-“হ্যাঁ গো কাকিমা ওরাতো আসতেই বারণ করছিল। আমিই জোর করে এসেছি। আবার কখন আসবো কে জানে?

সবাই আরো কাছাকাছি এসে ততক্ষণে মধুজাকে ঘিরে একটা বৃত্ত তৈরী করে ফেলেছে।

-“কখন আসবি মানে?” বিশাখা ভীষণ কৌতুহল নিয়ে জিজ্ঞেস করে।

-“না মানে তোমাদের জামাইয়ের তো প্রোমোশন হয়েছে। ম্যানেজার হয়ে বাংলার বাইরে চলে যেতে হবে। কোথায় যেতে হবে এখনো জানা যায়নি”, মধুজা বলে।

খবরটা শুনেই কলতলার কলকাকলি থেমে গিয়ে নিস্তব্ধতার গভীরে যেন ঝিমিয়ে পড়ল। সে দৃশ্য মধুজার চোখে কতখানি ধরা পড়ল সেটা মধুজাই বলতে পারবে তবে নীরবতা ভেঙে মধুজার পিঠ চাপড়ে রেনু কাকীমা বলল, “বড়ো ভালো মেয়ে তুই রে। দেখবি তোর কোন কষ্ট হবেনা, তোরা এলে আমাদের যেমন ভালো লাগে, তেমনি যাবার কথা শুনলেই মনটা খারাপ হয়ে যায়রে”।  উপস্থিত সকলেই ঘাড় নাড়িয়ে কথাটাকে সমর্থনের ভঙ্গিতে বলে, “সত্যিই মনটা খারাপ হয়ে যায়  রে”।

ফিরুন সূচিপত্রে



| হিম সংখ্যা-১৪২৮| aleekpata.com|
  |ALEEK PATA- Your Expressive World |Online Magazine |
| Editor: Swarup Chakraborty | Publisher: Debasree Chakraborty|
 Winter , 2021 | August -December 2021 | Fifth Year  Second  Issue |28 th Edition|
|© All Rights Reserved By The Editor and The Publisher |
|a DISHA-The Dreamer Initiative |

No comments:

Post a Comment

Please put your comment here about this post

Main Menu Bar



অলীকপাতার শারদ সংখ্যা ১৪২৯ প্রকাশিত, পড়তে ক্লিক করুন "Current Issue" ট্যাব টিতে , সবাইকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা

Signature Video



অলীকপাতার সংখ্যা পড়ার জন্য ক্লিক করুন 'Current Issue' Tab এ, পুরাতন সংখ্যা পড়ার জন্য 'লাইব্রেরী' ট্যাব ক্লিক করুন। লেখা পাঠান aleekpata@gmail.com এই ঠিকানায়, অকারণেও প্রশ্ন করতে পারেন responsealeekpata@gmail.com এই ঠিকানায় অথবা আমাদের ফেসবুক গ্রুপে।

অলীক পাতায় লেখা পাঠান