ভালোবাসার
মোড়কে
চন্দ্রাণী
গুপ্তা ব্যানার্জী
Image Courtesy: Google Image Gallery
পুরনো মানিব্যাগটার
চেনটা খুলতেই লীনার চোখ দুটো আনন্দে
জ্বলজ্বল করে উঠলো। মানিব্যাগ টা থেকে উঁকি মারছে তিনটে পাঁচশো টাকার নোট। কবে যে
নোটগুলো লীনা ব্যাগটায় রেখেছিল, মনে করতে পারল না। খরচ হবার ভয়ে
মাঝে মধ্যেই এখানে ওখানে টাকা রেখে সে
ভুলে যায়। তার জন্য সন্দীপের কাছে সে বকুনিও কম খায় না। ভুলো মন বলে লীনার অপবাদ
ও আছে। সে যাই হোক, অফিসে যাওয়ার আগে আলমারিটা খুলে ছিল সে।
গোলাপি শাড়িটা ধরে টানতেই তার ভাঁজে রাখা
মানিব্যাগটা বেরিয়ে পড়ল। কৌতূহলবশত লীনা ব্যাগের চেইনটা খুলতেই সেই পরম প্রাপ্তি।
কত ভাবনা যে
মনের মাঝে খেলা করে যাচ্ছে। অফিসের কলিগ রত্নাদি কী সুন্দর একখানা লাল রঙের
লিপস্টিক পরে আসে। রত্নাদির থেকে নামটা আর শেড নম্বর টাও জেনে নিয়েছিল আগে।
কিন্তু ওটা যে বড্ড দামী। আজ পর্যন্ত আর কেনা হোলো না। প্রায় হাজারের কাছাকাছি
ছিল। অনলাইনে একটা সিল্কের শাড়িতে লীনার গত বছর পুজোর সময় চোখ আটকে গেছিল । কিছু
টাকা আলাদা করে জমিয়ে ও রেখেছিল। ভেবেছিল কিনবে। কিন্তু হোল আর কই ? অ্যাকোয়া গার্ডের A.M.C র জন্য টাকাটা খরচ হয়ে গেল। সেই
নীল রঙা শাড়ি টাকে আজো ভুলতে পারে নি লীনা।
উফ্... কী
ভীড় রে বাবা বাসটায়। কোন রকমে চেপেচুপে বসার সিটটা পেল। কিছুক্ষণের জন্য শান্তি।
ব্যাগ থেকে ফোনটা বের করে খুলতেই অপাদির হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ। বেশ কয়েকটা শাড়ির ছবি। অপাদির শাড়ির
অনলাইন স্টোর আছে। শাড়িগুলোর ছবি আপনমনে দেখতে দেখতে একটা ছবিতে থমকে দাঁড়ালো
লীনা। সেই নীল রঙা শাড়িটার মতো দেখতে একখানা শাড়ি। অনেকটা কাছাকাছি। মনে মনে তো
তাকেই খুঁজছে লীনা। দামটাও মোটামুটি আয়ত্তের মধ্যে। এখুনি অর্ডারটা প্লেস করে
দেওয়া যায়। আর বাকি টাকাটা দিয়ে লাল শেডের লিপস্টিকটা অফিস ফেরত গড়িয়াহাটে
নেমে কিনে নেবে। ভাবছে ভ্যালেন্টাইন্স ডেতে ওই শাড়িটা পরে সন্দীপ আর মেয়ে
বিন্নির সাথে একটু এদিক ওদিক ঘুরে ও আসবে।
-"দিদি , ভাড়াটা দিন।"
কন্ডাক্টরের ডাকে হুঁশ ফিরল লীনার। মানিব্যাগের চেনটা খুলে খুচরো
পয়সা বের করতেই হাতে এল একটা ছোট্ট রসিদ।
কলিং বেলটা
টিপতেই বিন্নি এসে দরজাটা খুলে দিল। মায়ের হাতে দুটো প্যাকেট। বিন্নি প্রতিদিনই
আশা করে থাকে মা অফিস ফেরত তার জন্য কিছু না কিছু আনবেই। বেশীরভাগ সময়ই আশাভঙ্গ হয়। এই টানাটানির
সংসারে সব কিছু সামলে লীনার পক্ষে উপরি খরচ করা সম্ভব পর হয় না। কলঘর থেকে জলের
শব্দ আসছে। সন্দীপ আজ তাড়াতাড়ি ফিরেছে। অন্যদিন বেশ রাত হয়। হাড়ভাঙ্গা খাটুনির
পর মানুষটা বাড়িতে ফেরে। হ্যান্ডব্যাগ আর প্যাকেটগুলো পাশে রেখে লীনা ধপাস করে
সোফায় বসে পড়ে। প্যাকেটগুলো কি এখন খুলবে, না সন্দীপ ফ্রেশ
হয়ে ফিরলে! চোখটা বুজে এলো। সারাদিনের ক্লান্তির পর।
-ওঠ, চা টা খেয়ে নাও।
কপালে ঠান্ডা হাতের ভালবাসার
উষ্ণ প্রলেপ। এক কাপ চা হাতে সন্দীপ দাঁড়িয়ে আছে।
-কিভাবে বুঝলে যে মনটা চা চা
করছিল ?
-এত বছর সংসার করে যদি এটা
নাই বুঝলাম তো আর কি করলাম।
লীনা চায়ের কাপে চুমুক দিল।
-চা টা তুমি বরাবরই ভালো
বানাও।
দুজনেই হেসে উঠলো। বিন্নি
দৌড়ে মা-বাবার কাছে এল। প্রতি দিনের মত আজকেও
বলে, “মা, কি এনেছ আজ আমার
জন্য ?”
লীনা র চোখে লুকোচুরি। একটা
প্যাকেট বিন্নির হাতে তুলে দিল। বিন্নি উচ্ছ্বাসের সাথে প্যাকেটটা খুলতেই আনন্দে
লাফিয়ে উঠলো।
-মা, এটা তো সেই কালার বক্সটা!
-হ্যাঁ, বিন্নি সোনা, এটা তোমার। তখন কিনে দিতে পারিনি। আজ
নিয়ে এলাম । তুমি খুশি তো?
-ভী...ষ...ণ খুশি। কতত...
কালারস দ্যাখো।
বিন্নির চোখ আনন্দে ঝিকমিক
করে উঠলো। কাগজ নিয়ে তখুনি রং করতে বসে পড়ল।
-এই যে শুনছো, এটা নিয়ে এলাম।
লীনা সন্দীপের হাতে একটা
প্যাকেট দেয়।
-কী এটা?"
-তোমার ঘড়িটা। যেটা চলছিল না।
বিয়ের সময় বাবা যেটা তোমায় দিয়েছিল। ওটা তো তিনমাস আগে সারাই করতে দিলে। আনা
আর হচ্ছিল না। আজ নিয়েই এলাম। নাও,দ্যাখো, ঠিকঠাক চলছে কিনা।
সন্দীপ প্যাকেটটা খুলে ঘড়িটা
বের করে হাতে পরল। পুরনো। কিন্তু বহু স্মৃতি এর গায়ে লেপ্টে আছে। বৃদ্ধ শশুর মশাই
এর অপত্য স্নেহ ও ভালোবাসা সন্দীপের মুখে হাসির ঝিলিক। বিন্নি খুব মন দিয়ে একটা
ছবি আঁকছে। একটা ছোট্ট বাড়ি, পাহাড়ের
গায়ে, রঙ বেরঙের ফুলের বাগান, রঙিন প্রজাপতি, পাখি, মা-বাবা ও সাথে ছোট্ট
বিন্নি। লীনা ভাবে এই টুকরো টুকরো ছোট্ট ছোট্ট ভালোবাসার মূহুর্ত গুলোই তো পরম
প্রাপ্তি। জীবনে কোন বিশেষ তারিখ ভালবাসার দিবস নয়। প্রতিটি দিন-প্রতি টি
মূহুর্তই ভালোবাসার মোড়কে আবৃত।
️
Vishon bhabe mon chhuye galo.... Ei chhoto chhoto muhurto guloi manush ke eke oporer sathe bedhe rakhe sarajibon.
ReplyDeleteগল্পটি পড়ার জন্য অশেষ ধন্যবাদ আপনাকে।
Delete