অলীক পাতার অন্যান্য সংখ্যা- পড়তে হলে ক্লিক করুন Library ট্যাব টি



"অলীক পাতা নববর্ষ সংখ্যা ১৪৩১ প্রকাশিত, সমস্ত লেখক -লেখিকা এবং পাঠক -পাঠিকাদের জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা..."বিশদে জানতে ক্লিক করুন " Notice Board ট্যাব টিতে"

Sunday, January 9, 2022

ধারাবাহিক ভ্রমণ কাহিনী-পর্ব ৩-কৌশিক বসু

 ধারাবাহিক ভ্রমণ কাহিনী (পর্ব ৩)

কৌশিক বসু

 অলীকপাতা শারদ সংখ্যা ২০২১ থেকে ধারাবাহিক ভাবে শুরু হওয়া আধ ডজন ভ্রমণ কাহিনীর 

তৃতীয় কিস্তি

 আগের পর্ব পড়তে ক্লিক করুন এই লিঙ্কে ( পর্ব ২)


এবারের পর্ব কুর্গ

এবারে লিখছি আমাদের কুর্গ ভ্রমণ নিয়ে। আগেরদিন বানেরঘাটা ঘুরে রাত্রে মহীশূর থাকার একটি কারণ ছিল কুর্গের দিকে একটু এগিয়ে থাকা যাতে একদিনের সফরে একটু  বেশী সময় হাতে থাকে। খ্রীষ্টমাস ইভ এর দিন অর্থাৎ ২৪ ডিসেম্বর ২০১১, সকাল আট টা নাগাদ হোটেল থেকে বেরিয়ে পড়লাম আমরা, বেশ কনকনে ঠান্ডা  লাগছিলো সকালে, এতটা ঠান্ডা আশা করিনি রাস্তায় একটু দাঁড়িয়ে ব্রেকফাস্ট করে নেওয়া হলো। ব্রেকফাস্ট যাকে বলে বেশ গুছিয়েই হয়েছিল, তার পরে রাস্তায় প্রচুর ফলের দোকান দেখলাম, তার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো কমলালেবু, খুব ইচ্ছে হচ্ছিল কেনার কিন্তু গিন্নী মানা করলো - এক ছেলে গাড়ি নোংরা করবে খেতে গিয়ে আর লম্বা সফর বাকি আরো ৮ দিনের যার মধ্যে বাসে যাওয়া আছে। তাই নিজের তাৎক্ষণিক লেবু খাবার ইচ্ছা দমন করতেই হলো, অগত্যা গোমড়া মুখে চললাম।

 

ছেলে বসেছিল ড্রাইভারের পাশে, ড্রাইভার সাহেব বিশাল চেহারার কানাড়ি ভদ্রলোক, ব্যাঙ্গালোর থেকে আমাদের সঙ্গে আছেন গতকাল থেকে, বাচ্চা ছেলেকে গান শোনাচ্ছিলেন নিজের পেন ড্রাইভ এর স্টক থেকে, তার মধ্যে একটি গান ছিল - ওয়াই দিস কোলাভেরি  দি। শুনে ছেলে মোহিত, ড্রাইভার সাহেবও ছেলেকে খুশি করে প্রথমে খুশি, কিন্তু একটু বাদে বুঝতে পারলো কি ভুল করেছে। একবার করে গান শেষ হচ্ছে আর ছেলে অমনি রিওয়াইন্ড বোতাম টিপে আবার এক গান বাজাচ্ছে। এক গান শুনে কান প্রায় পচে যাওয়ার জোগাড়! এইসব চলতে চলতে প্রায় আড়াই ঘন্টা গাড়িতে লাগলো প্রথম গন্তব্যস্থলে পৌঁছতে।

 

প্রথম গন্তব্যস্থল আবে জলপ্রপাত। এই শীতকালে জলপ্রপাতে যথেষ্ট জল দেখে লেবু না খাবার দুঃখ বা এক গান শোনা পচা কান নিমেষে ঠিক হয়ে গেল। বেশ ভালোই ভিড় ছিল, যতবার ছবি তুলতে যাই, কেউ ঠিক ফ্রেম এ ঢুকে পড়ে। আমাদের দেশে লোকজন এতো অবুঝ কেন ভাবতে ভাবতে যেভাবে পারি ছবি তুলে ফেললাম পটাপট। একটি ছোট লোহার ব্রিজ রয়েছে দর্শনার্থীদের জন্য, সেখান থেকে সুন্দর কিছু ছবি তুলে একটু শান্ত হলাম। কালো পাথরের ওপর জলের সাদা ধারা, যদিও প্রায় পুরোটা গাছের ছায়ায় নাহলে হয়তো ছবি আরো ভালো আসত।

 

জলপ্রপাত থেকে আমরা মেডিকেরির দিকে রওনা হলাম, রাস্তায় হরিণ দেখলাম কয়েকবার। প্রথমবার তো গাড়ি দাঁড় করিয়ে রীতিমতো ছবিও তোলার প্রচেষ্টা হলো, কিন্তু হরিণ বড়ই লাজুক, তাই ক্লিক করার আগেই ঝোঁপের মধ্যে ধুলে গেল, অগত্যা জায়গাটারই একটা ছবি তুললাম - সবুজে মোড়া চারদিক, মাঠে গরু চড়ছে। ড্রাইভারসাহেবের কাছে শুনলাম আরো অনেক জন্তু জানোয়ার দেখা যায় উনি নিজে দেখেছেন - হাতি, চিতা, শুয়োর, ইত্যাদি। এরপর আমরা মেডিকেরি  পৌঁছলাম।

 

একদম প্রথমে গেলাম ওঙ্কারেশ্বর মন্দিরে। প্রথমে মন্দিরে যাওয়ার কারণ কিছুক্ষনের মধ্যে মন্দির দুপুরে বন্ধ হয়ে যাবে। এই মন্দিরটি ভগবান শিবকে উত্সর্গীকৃত একটি প্রাচীন মন্দির। রাজা লিঙ্গরাজেন্দ্র দ্বারা ১৮২০ সালে নির্মিত মন্দিরটির বিশেষত্ব হ'ল এটির নির্মাণ গথিক এবং ইসলামী শৈলীর মিশ্রণকে প্রতিফলিত করে। এটা বিশ্বাস করা হয় যে এখানে প্রতিষ্ঠিত ভগবান শিবকে কাশী থেকে আনা হয়েছিল এবং কাশীতে পূজা করা পাঁচটি শিবলিঙ্গদের মধ্যে অত্যন্ত পবিত্র একজন।

 

এর পরের গন্তব্যস্থল রাজার আসন (Raja’s seat)। তা যে রাজার কারণে এই স্থানের নামকরণ তিনি যে প্রকৃতি প্রেমিক তাতে কোনো সন্দেহ রইলো না এখানে এসে। অনেকটা খোলা জায়গা চারদিকে, বহুদূর অবধি দেখা যায়, তাই দৃশ্যও অতি মনোরম। এখানে নিচে একটি প্রায় অর্ধ বৃত্তাকার বারান্দার মতন আছে আর ওপরে রাজার আসন। এক দিনের না হলেও নিজেকে এক পলকের রাজা মনে করার চেষ্টা করে এই অপরূপ সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করলাম কিছুক্ষণ। সম্বিৎ ফিরে পেয়ে কিছু ছবিও তুললাম। এখানে একটি অত্যন্ত ছোট টয় ট্রেন আছে জাতীয় চড়ে কাছাকাছি অনেকটা ঘুরে দেখা যায়, সৌভাগ্যবশতঃ খুব একটা বেশিক্ষণের অপেখ্যা করতে হয় এমামদের তার জন্য। কিছুটা রাজার বাগান আর কিছুটা অকৃত্তিম প্রকৃতি ভরা রাজ্য ঘুরে দেখা হলো এই ভাবে।

 

ঘুরতে ঘুরতে দুপুর দুটো বেজে গেছে, খিদেও পেয়েছে প্রচন্ড, তাই খাওয়াটাও হলো রাজকীয়, যে রেস্টুরেন্টে গেলাম সেখানে শুধু খালি পাওয়া যাচ্ছিলো তখন, অগত্যা তাই অর্ডার করলাম। খেয়ে দিয়ে আবার মেডিকেরি দুর্গ জয় করতে এগিয়ে পড়লাম আমরা। দুর্গ  বিশাল বা আহামরি কিছু নয়, কিন্তু এসে যখন পড়েছি তখন ঘুরে দেখলাম। এখানে দশেরা খুব ধুমধাম করে হয়, তার কিছু মূর্তি দুর্গের নিচে রাখা আছে, আর কিছু মূর্তি আছে যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু কালো পাথরের হাতি। আরেকটি উল্লেখযোগ্য জায়গা হলো একটি ছাদের মতো জায়গা যেখান থেকে অনেকটা দেখা যায় দুর্গের।

 

এরপর আমরা পৌঁছলাম দুবারে হাতির ক্যাম্পে, এখানে বুনো হাতি ধরে এনে পোষ মানানো হয়। আমরা পৌছেছি তখন প্রায় সাড়ে তিনটে বেজে গেছে, আমাদের হাতির স্নান দেখার সৌভাগ্য আর হয় নি। পাশ দিয়ে কাবেরী নদী বয়ে চলেছে, সৌভাগ্যবশতঃ শীতকাল হলেও জল ভালোই  ছিল, একটু নৌকোবিহার করলাম, সঙ্গে প্রকৃতিকে উপভোগ করা হলো, ঘন সবুজে ঘেরা চারদিক, দূরে কয়েকটা বকও  দেখা গেল উপরি হিসেবে।

 

পরের গন্তব্যস্থলের  নাম খুব সুন্দর, নামকরণের তাৎপর্য বুঝতে হলে একবার এখানে আসতেই হবে। তবে রাস্তায় গ্রামগুলিও খুব সুন্দর, গাড়ি দাঁড় করিয়ে কয়েকটা ছবিও তুললাম। যাইহোক, জায়গার নাম নিসর্গধাম, কাবেরী নদীর একটি ব দ্বীপ - আরেকটি দারুন টুরিস্ট স্পট। ঢুকেই প্রচুর হাঁস আর রাজঁহাস দেখা গেল, গেটের মুখ থেকেই অনেকগুলো পাখি আর জন্তুর খোপ আছে ডান দিকে, সেখানে হাঁস ছাড়া ময়ূর আর  খরগোশ। একটা রাজঁহাস তো প্রায় ঠুকরে দিচ্ছিল আরেকটু হলে জালের ফাঁক থেকেই! নদীর ওপর একটি সরু লোহার দড়ির সাঁকো আছে যা দিয়ে নদীর ওপর ঘুরে এলাম, পাশে একটি দড়ির পুরোনো সাঁকো আছে, যাতে ট্যুরিস্টদের উঠতে দেয়া হয়না অবশ্য সতর্কতা হিসেবে। চারদিকে গাছে অনেক বাঁদর রয়েছে, টুরিস্ট দেখে অভ্যস্ত, একটি তো গাছ থেকে সাঁকোর দড়ির ওপর দিয়ে ব্যালান্স করে এগিয়ে এলো। আরেকটি একটু দূরে অপেক্ষা করছে - বোঝা গেল খাবারের আশায় এসেছে। আরেকটু লক্ষণীয় ব্যাপার হলো নদীর নিচে অনেক মাছ ঝাঁক বেঁধে অপেক্ষা করছে ওপর থেকে খাবারের আশায়। এখানে লোহার জালে ঘেরা অনেক হরিণ এবং তাদের খাওয়ানোর ব্যবস্থাও আছে, তাই আমার উৎসাহিত হলাম হরিণ কে খাওয়াতে। পাশেই ১০ টাকার শসার প্লেট বিড়ি হচ্ছিলো, একটা বড় শসাকে ৪ টি লম্বা টুকরো করে কেটে দিচ্ছে, এক প্লেট কিনে নিলাম। একটি করে শসার টুকরো আমি আর ছেলে খাওয়ালাম, গিন্নীর একটু জন্তু জানোয়ারের প্ততি ভয় আছে, সে ফটোগ্রাফার হয়ে ছবি তুললো। এর মধ্যেই একটি ঘটনা ঘটলো - আমি দ্বিতীয় শসার টুকরো খাওয়ানোর চেষ্টা করছি, ছেলের হাতে শেষ টুকরো, হঠাৎ লক্ষ্য করলাম, সেও শসাতে কামড় বসিয়ে দিয়েছে। শসা তার খুব প্রিয়, তাই আরেকটি টুকরো হরিণকে না খাইয়ে নিজেই খেয়ে নিলো। এখানে হাতির পিঠে চড়ার সুযোগ আছে, যদিও আমরা আর তা করলাম না। হরিণশালার ঠিক পেছনে একটি বাঁশবনও আছে, যা ঘুরে দেখার জন্য ও ছবি তোলার জন্য বেশ ভালো স্পট। একটু হেঁটে চলে গেলাম তাল কাবেরী বলে একটি জায়গায়। তাল কাবেরী কে কাবেরী নদীর উৎস হিসেবে গণ্য করা হয় এবং পবিত্র স্থান হিসেবে গণ্য করা হয়, অনেকে পুজো আর্চা করছিলো দেখলাম। সবমিলিয়ে নিসর্গধাম অভিজ্ঞতা খুবই মনোময়।

 

আমাদের শেষ গন্তব্যস্থল বাইলাকুপপে। এটি কূর্গ বা কোডাগু জেলার অন্তর্গত নয়, মহীশুর জেলার অন্তর্গত। ধর্মশালার পরে তিব্বতের বাইরে বাইলাকুপে ভারতে দ্বিতীয় বৃহত্তম তিব্বতি বসতি, স্থাপিত হয় ১৯৬১ সালে । এখানে আমরা নামড্রোলিং মঠটি দেখতে এলাম যা স্বর্ণ মন্দির নামেও পরিচিত। দলাই লামার ছবি সমেত অনেক বৌদ্ধ মূর্তি দেখার সৌভাগ্য হলো আমাদের। মন্দিরের বিস্তারিত কারুকার্য মুগ্ধ করার মতো, তার সঙ্গে বাইরে শান্ত পরিষ্কার পরিবেশ, বেশ ভালো লাগলো, সঙ্গে উপরি হিসেবে বাগানে পাখি আর ফুল।

 

সেখান থেকে মহীশুর ফিরে আমরা একটা রেস্টুরেন্টে ঢুকে চিকেন চেট্টিনাড আর রুটি দিয়ে ডিনার সেরে হোটেলে ফিরলাম। একদিনের পাওয়ার প্যাকড সফর শেষ করে। ছবি তো প্রচুর তুলিই, কিছু ছবিও পোষ্ট করলাম, কেমন লাগলো জানাবেন।

  

আবে জলপ্রপাত

 

ওঙ্কারেশ্বর মন্দিরে প্রবেশ করার জন্য জলাশয়ের ওপর কংক্রিট এর সরু ব্রিজ




মন্দিরের প্রবেশ দ্বার



মন্দির প্রাঙ্গণ

 

 রাজার আসন থেকে নৈসর্গিক দৃশ্য



রাজার আসন



টয় ট্রেনে দেখা দৃশ্য  রাজার বাগান

 

 

নিসর্গধামকাবেরী নদীর ওপর লোহার সাঁকো থেকে পুরোনো দড়ির সাঁকো

 

নৌকাবিহার

কূর্গের গ্রাম জীবন

খাবারের আশায় এগিয়ে আসছে
নামড্রোলিং মঠের প্রবেশ দ্বার 
হরিণ কে শসা খাওয়ানো পর্ব



বাঁশবনে কুমফু পান্ডা কে মনে পড়ে গেছে
খাবারের আশায় জলে অপেক্ষা


 
 স্বর্ণ মন্দির

 আগের পর্ব পড়তে ক্লিক করুন এই লিঙ্কে ( পর্ব ২)

ছবিঃ লেখক

 

 

ফিরুন সূচিপত্রে



| হিম সংখ্যা-১৪২৮| aleekpata.com|
  |ALEEK PATA- Your Expressive World |Online Magazine |
| Editor: Swarup Chakraborty | Publisher: Debasree Chakraborty|
 Winter , 2021 | August -December 2021 | Fifth Year  Second  Issue |28 th Edition|
|© All Rights Reserved By The Editor and The Publisher |
|a DISHA-The Dreamer Initiative |

 


 

 

 

 

 


 


 

 

 





No comments:

Post a Comment

Please put your comment here about this post

Main Menu Bar



অলীকপাতার শারদ সংখ্যা ১৪২৯ প্রকাশিত, পড়তে ক্লিক করুন "Current Issue" ট্যাব টিতে , সবাইকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা

Signature Video



অলীকপাতার সংখ্যা পড়ার জন্য ক্লিক করুন 'Current Issue' Tab এ, পুরাতন সংখ্যা পড়ার জন্য 'লাইব্রেরী' ট্যাব ক্লিক করুন। লেখা পাঠান aleekpata@gmail.com এই ঠিকানায়, অকারণেও প্রশ্ন করতে পারেন responsealeekpata@gmail.com এই ঠিকানায় অথবা আমাদের ফেসবুক গ্রুপে।

অলীক পাতায় লেখা পাঠান