গল্প- বৈঠকি
অলভ্য
ঘোষ
|
চিত্র ঋণ -গুগল ইমেজ গ্যালারী |
কয়েক হাজার লোক জড়ো হয়েছে; সাদা সাদা
টুপি পরা মাথা গুলো অনেক ওপর থেকে পাখির চোখে দেখলে মনে হবে জান্নাতে দুধের নহর; লম্বা লম্বা
বাঁশে বাঁধা নানা রঙের জরির ঝিল্লি দিয়ে সাজানো পতাকা গুলো যেন জান্নাতে ডালিমের
গাছ।
কিন্তু হুর কোথায়?সাদা ধবধবে
ফর্সা;গোলাপের
পাপড়ির মত গায়ের রং।
তামাম মুসলমান জান্নাতে গিয়ে
এই হুর পাবার জন্য পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে?
এসব প্রশ্ন যারা করে নাস্তিক
না হয় বিধর্মী ইসলাম বিরোধী। জাহান্নামেও এদের ঠাঁই হবে না। দোযখের আগুনে পুড়ে
মরবে।
মাহফিলে বেহেস্তে যেতে উপচে
পড়া ভিড়ে একজনও জেনানা নেই। তারা বাইরে বের হবে কোন দুঃখে!তাদের বাইরে বেরোনো গুনা
পরওয়ারদিগারের জিকিরে নামাজ, রোজা রাখুক; মশগুল থাকুক খানা পাকাতে ছেলে মেয়ে
মানুষ করতে। তাতেই তাদের জান্নাত নসিব হবে।
-জান্নাত দেখার পরই সঠিকভাবে বোঝা
যাবে যে জান্নাত কত বিশাল এবং তার নেয়ামত কত অসংখ্য। আল্লাহ্ তা'আলা বলেন, “তুমি যখন
দেখবে তখন দেখতে পাবে ভোগ বিলাসের নানান সামগ্রী আর এক বিশাল রাজ্য।” (সূরাহ আদ্-দাহ্রঃ
২০)”জান্নাতে একটি বৃক্ষের ছায়া এত লম্বা হবে যে কোন অশ্বারোহী ঐ ছায়ায় শত বছর
পর্যন্ত চলতে পারবে। দুনিয়ার চেয়ে দশগুণ বড় জান্নাত! জান্নাতের অট্টালিকাসমূহ
সোনা-রূপার ইট দিয়ে নির্মিত। তার গাঁথুনি হল সুগন্ধযুক্ত মেশক আম্বর। তার কংকর
মোতি ও ইয়াকুতের। তার মাটি জাফরানের। যে ব্যক্তি সেখানে প্রবেশ করবে সে জীবন
উপভোগ করবে, তার
কোন কষ্ট হবে না। চিরকাল জীবিত থাকবে, মৃত্যু হবে না। জান্নাতিদের কাপড়
কখনো পুরানো হবে না। আর তাদের যৌবন কখনো বিনষ্ট হবে না”। (তিরমিজী- কিতাবুল
জান্নাহ) জান্নাতিদের প্রত্যেকের অট্টালিকায় তাঁবু থাকবে যেখানে হুরেরা অবস্থান
করবে। আল্লাহ্ তা'আলা
বলেন,”তাঁবুতে
সুরক্ষিত থাকবে সুলোচনা সুন্দরীরা।” (আর রাহমান - ৭২)জান্নাতের প্রত্যেক জান্নাতির
পছন্দমত সর্ব প্রকার ফলমূল মজুদ থাকবে। জান্নাতের ফলের ছড়া অনেক বড় হবে। জান্নাতের
নদীসমূহের পানির রং ও স্বাদ সর্বদা একই রকমের থাকবে। কুরআনুল কারীমে আল্লাহ্ তা'আলা বলেন,মুত্তাক্বীদেরকে
যে জান্নাতের ও'য়াদা
দেয়া হয়েছে তার উপমা হল: তাতে আছে নির্মল পানির ঝর্ণা, আর আছে
দুধের নদী যার স্বাদ অপরিবর্তনীয়, আছে পানকারীদের জন্য সুস্বাদু মদের
নদী আর পরিশোধিত মধুর নদী। (সূরাহ মুহাম্মদঃ ১৫)
-আউরতের জন্য বাহাত্তর জন হুর সুরার
নদী এসব কি কাজে লাগবে?
-যে চার আয়াতে হুর শব্দের উল্লেখ আছে; হুর দ্বারা
পরুষ বা স্ত্রী কোনটাই নির্দিষ্ট করে বোঝানো হয় না। সুতরাং পুরুষদের জন্য মহিলা
হুর এবং মহিলাদের জন্য পুরুষ হুর থাকবে।
বড় হাঁড়িতে বসেছে বিরিয়ানি
সকলের জন্য। ম ম করছে গন্ধ।আর যিনি এই ওয়াজ মাহফিলের মূল আকর্ষণ হয়ে সব প্রশ্নের উত্তর করছেন। সেই হুজুরের জন্য আছে একটা আস্ত মুরগির; মুরগি
মুসল্লম।
-বোলো মারহাবা বোলো মারহাবা ।
শেরওয়ানি, সুফিয়ানী
দাড়ি,
মাথায় সোনালি কাজ করা টুপি; মঞ্চ আলোকিত করে বসে আছে বারেলি জামা মসজিদের ইমাম হুজুর
মুফতি খুরশিদ আলম সাহাব।এ ধরনের মাহফিল খানাপিনা ওয়াজের জন্য যারা মোটা অংকের
টাকা নজরানা দেয় তাদের জন্য শোকরানা আদায় করে আল্লাহর কাছে দোয়া চায় ইমাম
সাহাব।তাদের কামাই হালাল না হারাম একবারও ভেবে দেখে না!
-কিছুই সঙ্গে যাবে না।সঙ্গে যাবে কি
ইমান।কবরে আমাদের শরীর থেকে মাংস খসে খসে পড়বে।এত যত্নের শরীরটা পচে গলে যাবে
পোকায় খাবে কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না দান-খয়রাত করেন না হলে সব মাটি হবে।
এক বুড়ো ইমাম সাহেবের কানে
কানে ফিসফিস করে মনে করিয়ে দিল ফতোয়ার কথাটা।যার জন্য এত আয়োজন তা ভুললে
চলে।কোনও ওষুধ নেই, কোন
নামাজ নেই,তার
জন্য কোন কবর নেই;তার
জন্য কেবল অপেক্ষা করে আছে ফতোয়া।
কে সে? নূর না হুর?পুরুষের
বেহেশতের পরী হুর সে নয়;নূর
ও সে নয় তবে ফতোয়া হত না। তবে কি হুর নয় Whore? বেশ্যা...রেন্ডি...?
তিন তালাকের শিকার ও সমালোচক
নিদা খান;
বছর তিনেক আগে নিদার সঙ্গে উস্মান রেজা খানের
বিয়ে হয়। মাত্র এক বছরের মাথায় ঘর ভাঙে। তিনবার তালাক উচ্চারণ করতেই সব
সম্পর্ক শেষ করেন উস্মান। ধর্মপ্রাণ বিশিষ্ট পরিবারের উস্মান নিদা কে এমন
মারাত্মকভাবে মারধর করতো যে একদিন তার গর্ভস্রাব ঘটেছিল। নষ্ট হয়ে গেছিল পেটের
সন্তানটি।
-পশুর পেটে বাচ্চা থাকলে ওই অবস্থায় ঐ
পশুও কুরবানি করা জায়েজ কি?
-পেটে বাচ্চা থাকা অবস্থায় পশু
কুরবানি করায় শরী ‘আতে কোন বাধা নেই। এছাড়া উক্ত পশুর গোশত খাওয়া যাবে। এমনকি রুচি
হ’লে পেটের বাচ্চাও খেতে পারে। আবু সাঈদ খুদরী বলেন, আমি বললাম হে আল্লাহর রাসূল! আমরা
উটনী, গাভী
ও ছাগী যবেহ করি এবং কখনো কখনো আমরা তার পেটে বাচ্চা পাই। আমরা ঐ বাচ্চা ফেলে দিব, না খাব? রাসূল (ছাঃ)
বললেন, ‘তোমাদের
ইচ্ছা হ’লে খাও। কারণ বাচ্চার মাকে যবেহ করা বাচ্চাকে যবেহ করার শামিল’ (আবুদাউদ
হা/২৮২৮; মিশকাত
হা/৪০৯১-৯২)।
কুরবানির মূল শিক্ষা হল
আত্মত্যাগ। এ কোন কুরবানি এ কোন আত্মত্যাগ। বনের পশুর সাথে মনের পশুকে কোরবানি
করাই হচ্ছে এর শিক্ষা। আমাদের মনে পশুত্ব-সুলভ যে স্বভাবগুলো রয়েছে তা পুষে রাখা
কি কোরবানি?
এই সব ঘটনাকে জীবনের নিয়তি
বলে মানতে রাজি হয়নি নিদা। আদালতে মামলা করেছে তিন তালাক বিরোধিতা করে। জিতেও গেছে
উস্মানের বিরুদ্ধে।আর এখানেই আঘাত পেয়েছে স্পর্শকাতর ইসলামের ধ্বজাধারীরা।এ যে
ইসলামকে অপমান শরিয়তের অপমান।আসল কথা সবাই যদি হুজুর দের বিচারে সন্তুষ্ট না হয়ে
সিভিল কোর্টে ছোটে; হুজুর
দের ব্যবসা লাটে উঠবে প্রভাব থাকবে কই।
চিৎকার করে ওঠে ইমাম সাহেব;
-ওই আউরত যা করেছে তা ইসলাম বিরোধী!
তার সাথে আমাদের কোনও সম্পর্ক থাকবে না আজকের পর থেকে।যদি সে অসুস্থ হয়ে পড়ে কেউ
তাকে ওষুধ খাওয়াতে যাবে না।যদি সে মারাও যায় তার 'জানাজা' য় নামাজ
অর্পণ করাও কঠোর ভাবে নিষিদ্ধ।মরার পর সে কোনও কবরস্থানে এক তিল মাটি পাবে না।
মরার আগে যারা কিছুই পেল না; মরার পরে কি
তাদের নিথর দেহটার পাবার কিছু বাকি থাকে।
ইমাম সাহেব আরও জোরে চেঁচিয়ে
উঠল মাইক ভেদ করে সেই চিৎকার যেন উপবিষ্ট অনুরাগীদের অন্তর অবধি কাঁপিয়ে দিতে
লাগলো।
-আর যে বা যারা তাকে আমার কথা অমান্য
করে সহায়তা বা সমর্থন করবে তাদের শাস্তি হবে একইরকম।
নিজের অনুগামীদের উপর তার
অগাধ আস্থা রেখেই সুর একটু নরম করেন হুজুর মুফতি খুরশিদ আলম সাহাব।
-তবে যদি সে ‘ইসলাম বিরোধী’ কাজের
জন্য প্রকাশ্যে ক্ষমা চায় তাহলে অবশ্য ফতোয়া প্রত্যাহার করার ব্যাপারে ভাবনা চিন্তা
করা হবে।
সে পথে হাঁটার আউরত নিদা নয়।
আদালত তাঁর পক্ষে রায় দেওয়ার পর থেকে জনসচেতনতা
বাড়ানোর কাজ শুরু করেছেন তিনি। শুধু তিন তালাক নয় নিকাহ হালালার বিরুদ্ধেও
সুর চড়িয়েছেন।সারা ভারতবর্ষের সংবাদ মাধ্যম গুলো র প্রশ্নের মুখে এখন নিদা
খান। উত্তর প্রদেশের বারেলি জামা মসজিদের ইমাম হুজুর মুফতি খুরশিদ আলম সাহাব তার
বিরুদ্ধে যে ফতোয়া জারি করেছেন সে প্রসঙ্গে কিছু বলুন নিদা ...
নিদা খান বলতে শুরু করে;
-এ ধরনের কাজ যারা করে তাদের
পাকিস্তানে চলে যাওয়া উচিত। ভারতের মতো গণতান্ত্রিক দেশে কেউ কারও বিরুদ্ধে ফতোয়া
জারি করতে পারে না। আর কে অপরাধী সেটা বিচারের অধিকার আল্লা ছাড়া আর কারও নেই।
তবে কে বিচারের ভার নিজে হাতে
তুলে নিচ্ছে ধর্ম নাকি ধর্মের মাতব্বরেরা। নিদা খান বেহেশতে পুরুষের উপভোগ্য হুর
নয়;সে
নারীবাদী;মানবতাবাদী
জীবনের ওপারে একটা জান্নাতের আকাঙ্ক্ষায় সে তার গোটা জীবন কাটাতে চায় না;বরং এ
জীবনেই দুনিয়ার মালিকের দোয়ায় এই নষ্ট পৃথিবীটাকে জান্নাত বানাতে চায়। সে মুসলমান
মেয়েদের মানুষের মত বাঁচার অধিকার চায়। আর যে অধিকার আল্লাহ্ তা'আলা দিয়েছেন
তা ছিনিয়ে নেবার অধিকার দুনিয়ার কারো নেই।
| বর্ষ বরণ সংখ্যা-১৪২৯ | aleekpata.com | 29th Edition |
| ALEEK PATA- Your Expressive World |Online Magazine |
| Editor: Swarup Chakraborty | Publisher: Debasree Chakraborty |
| Bengali New Year, 2022 | April-June 2022 | Fifth Year Third Issue |
| © All Rights Reserved by The Editor and The Publisher |
| a DISHA-The Dreamer Initiative |
No comments:
Post a Comment
Please put your comment here about this post