অলীক পাতার অন্যান্য সংখ্যা- পড়তে হলে ক্লিক করুন Library ট্যাব টি



। । "অলীক পাতা শারদ সংখ্যা ১৪৩১ আসছে এই মহালয়াতে। । লেখা পাঠানোর শেষ তারিখ ১৫ ই আগস্ট রাত ১২ টা ।.."বিশদে জানতে ক্লিক করুন " Notice Board ট্যাব টিতে"

Wednesday, May 4, 2022

নব বরষে নবীন হরষে-গল্প- কৃষ্ণচূড়া- চন্দ্রাণী গুপ্ত ব্যানার্জি

 

নব বরষে নবীন হরষে-গল্প
কৃষ্ণচূড়া

চন্দ্রাণী গুপ্ত ব্যানার্জি

Image Courtesy: Google Image Gallery


আবার একটা অলস  দুপুরের হাতছানি। বারান্দার পাশেই মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা টকটকে লাল আগুনের মত কৃষ্ণচূড়া। গ্রীষ্মের দাবদাহ যত বাড়ে তত নাকি কৃষ্ণচূড়া তার আগুন রঙ ছড়ায়। সমগ্র গাছটা লালে লাল হয়ে আছে। রাস্তার ওপাশে বেড়ে ওঠা দ্বিতীয় কৃষ্ণচূড়া টির সাথেই সখ‍্যতা করে দুজনে একটা  বেশ সুন্দর চাঁদোয়া সৃষ্টি করেছে। চারিদিকে শুধু রং আর রং... লাল আর লাল। মাঝে মাঝে শুধু নীল আকাশের উঁকি ঝুঁকি। এত লালের মধ্যে বুঝিবা দমবন্ধ হয়ে আসে আবিরার। তার নিশ্বাস নিতে  বডড কষ্ট হয় হাঁপিয়ে ওঠে মন আর শরীর দুটোই। বারান্দার একচিলতে এই জায়গাটিকে বড়ো চেনা মনে হয় । পাশে রাখা মোড়াখানি নিয়ে টেনে বসে।  আস্তে আস্তে রোদের ঝাঁঝ অনেকটাই কমে গেছে এখন। হালকা হাওয়ায় কৃষ্ণচূড়ার সবুজ পাতা নড়ছে। তুমি তখনও ছিলে কৃষ্ণচূড়া ... আজো আছো...কাল ও থাকবে। তবে সেই মধুর মূহূর্ত গুলো কেন  হারিয়ে গেল? স্মৃতির সুখ সাগরে ডুব দেয় আবিরা। স্মৃতির প্রতিটা পাতায় শুধু একটাই মুখচ্ছবি।

 

একটা নিটোল মুক্তোর মতো   সময় গড়িয়ে গেছে। কতক্ষন যে এইভাবে বসে ছিল আবিরা তা সে নিজেই জানে না। বুঝতে পারল যখন তার ডান কাঁধে কারো  স্পর্শ অনুভব করল সে। ঘাড় ফিরিয়ে দেখল পেছনে দাঁড়িয়ে রীণা। সামনে এসে   দুহাতে, আলতো করে  আবিরার মুখখানি তুলে ধরলেন। আবিরার দুচোখে নদীর দুকুল ছাপিয়ে বর্ষা নেমে এসেছে তখন।

  

কর্ম সূত্রেই  আবিরা চৌধুরীর সাথে নিখিল চ্যাটার্জীর পরিচয় । ঝকঝকে , স্মার্ট, বুদ্ধিদীপ্ত  মেয়ে টির  সঙ্গে বন্ধুত্ব হতে খুব বেশি সময় লাগেনি নিখিলের। বন্ধুত্ব থেকে প্রেম। নিখিলের পরিবার অত্যন্ত রক্ষণশীল। গোঁড়া ব্রাহ্মণ  ও উচ্চবিত্ত। সেই তুলনায় আবিরা একটি মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা মেয়ে। দুজনের পরিবারের মধ্যে বিত্ত একটি পাহাড় সম পাঁচিল হয়ে দাঁড়িয়েছে। নিখিল কিন্তু কোনদিনই আবিরাকে  উচ্চবিত্তর আঁচ  তার ভালোবাসায় বুঝতে দেয়নি। বরাবরই সে অতি অমায়িক প্রকৃতির। মায়ের সুকোমল গুণের প্রতিটিই তার জন্ম সূত্রে পাওয়া। বাবা চিরকালই রাশভারী।  বাড়িতে  বাবার  কথাই শেষ কথা। সাহিত্য নিয়ে পড়াশোনা করার ইচ্ছে থাকলেও সে ইচ্ছে বাস্তবায়িত হয়নি। বাবার  রক্তচক্ষু উপেক্ষা করতে পারে নি। অগত্যা বিজ্ঞান নিয়েই তাকে পথ চলতে হয়েছে। ছবি আঁকতেও ভালবাসত নিখিল। কিন্তু এই ভালো লাগাও তার জীবনে আসে নি। কিন্তু আজ কোন ভাবেই সে আবিরাকে ত্যাগ করার কথা  ভাবতে পারে না। তার সুকোমল মনের চারিপাশে অনমনীয় , দুর্ভেদ্য এক প্রাচীর গড়ে উঠেছে যেখানে সে আবিরাকে অতি যত্নে সুরক্ষিত করে রাখতে চায়। কোন এক বসন্তের লালরঙা বিকেলে   অফিস ফেরত দুজনে বসে ছিল গঙ্গার ধারে।  দুজনের হাতে হাত। নিখিল আবিরা কে তার পরিবারের সঙ্গে দেখা করাতে নিয়ে যেতে চায়।

 -“তোমাকে নিয়ে যেতে চাই আমাদের বাড়িতে। মা আর বাবার সাথে দেখা করাব।”

 -“তা কি সম্ভব?”

 -“কেন নয় বল তো? আমরা তো ঠিকই করে রেখেছি যে বিয়ে করব। তুমি অবুঝ হয়ো না লক্ষীটি।”

 -“তোমায় কি করে বোঝাই নিখিল? আমার পরিবার যে তোমার পরিবারের মত  বিত্তশালী নয়। তোমার পরিবার যে আমায় মেনে নেবে না।” কাতর কণ্ঠে বলে ওঠে আবিরা।

 -“ঠিক মেনে নেবে দেখ। ভরসা রাখো আমার ওপর।”

 -“আমি যে বড় মরমে মরে আছি...সত্যি টা না বলার জন্য।”

-“কি আবিরা? তোমরা হয়তো সেরকম বিত্তশালী নও। কিন্তু তাতে আমার কিছু আসে যায় না। আমি তোমাকেই ভালোবাসি।”

 -“পারবে‌ কি আমায় চিরকাল এভাবেই ভালোবাসতে?”

 -“কেন নয়?”

 -“কারণ আমি যে তোমার ধর্মের নই আমি যে বিধর্মী।‌ আমি‌ যে মুসলমান। আবিরা চৌধুরী।”

 

কথা রেখেছিল নিখিল। ভালোবাসায় কোন খামতি রাখেনি সে। আবিরাকে নিয়ে গেছিল তাদের বাড়িতে। দুপাশে  লাল আগুন রঙা কৃষ্ণচূড়ারা তখনো দাঁড়িয়ে। চাঁদোয়া বানিয়ে ছিল তখনো তারা। রীণা আর রণতোষ বাড়িতেই ছিলেন। আবিরা জড়সড় হয়ে সোফার একপাশে বসা। রীণা একটা রেকাবীতে মিষ্টি আর জল নিয়ে এলেন। নিখিল মায়ের সাথে আবিরার পরিচয় করিয়ে দিল। তখনই ঘরে ঢুকলেন রণতোষ।

 -“রীণা ,তুমি যে মিষ্টি নিয়ে এলে ? তুমি কি জানো মেয়েটি মুসলমান? তার ছায়াও আমাদের এই হিন্দু, ব্রাহ্মণ পরিবারের কেউ মাড়ায় না।”

       ব‍্যস! সেখানেই শেষ। বাড়ির সাথে সেদিনই সমস্ত সম্পর্ক চুকিয়ে আবিরার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলো নিখিল। রীণা অনেক বার চেয়েছিলেন পুত্র ও পুত্রবধূকে ঘরে নিয়ে যেতে। কিন্তু রণতোষের গোড়ামি সর্বদাই পথ আটকে ছিল রীণার। এক অক্ষম  মায়ের মতো কেঁদেছেন শুধু। গুমরে গুমরে মরেছে মায়ের হদয়।

 

আজও কৃষ্ণচূড়ারা ঠায় দাঁড়ানো। গাছ থেকে  লাল ফুলেরা ঝরে পথে পড়ে আছে। রীণা শক্ত মুঠোয় আবিরার হাত ধরে আছেন। পাছে আবিরা পড়ে না যায়। বড় দুর্বল হয়ে পড়েছে মেয়েটি। হাসপাতাল থেকে আজই ছুটি হল ওর। দুদিন আগে ছুটি হল নিখিলের। আবিরার যে বড্ড কষ্ট। কিন্তু নিখিলের  যে কোন কষ্টই নেই আর। তার যে চিরতরে এ জীবন থেকে ছুটি হয়ে গেছে। দেড় বছরের সুখের বিবাহিত জীবন তাদের কপালে সইল না। একটা সড়ক দুর্ঘটনায় নিখিল গুরুতর ভাবে আহত হয়। বেশকিছু দিন আই.সি.ইউ তে ছিল। পাগলের মত ছুটে এসেছিল আবিরা তার পরম কাছের মানুষটির কাছে। ঝড়ে লুটিয়ে পড়া মাধবীলতার মতো ভূলুণ্ঠিত  সে। দুরসম্পর্কীয়া আত্মীয়ের বাড়িতে থেকে মানুষ হওয়া আবিরা আজ অসহায়। নিজের শেষ রক্তটুকু দিয়ে বাঁচাতে চেয়েছে সে নিখিল কে। বোতলের পর বোতল কোন কাজেই লাগল না।

ডাক্তাররা কোন আশা ই দিতে পারছিল না। কোন মিরাকেলও হল না। শেষ রাতে একটু চোখ মেলে চেয়েছিল সে। ডান হাতের দুটো আঙ্গুল শুধু নড়ছিলো। আই.সি.ইউ র বাইরে বসে থাকা আবিরাকে ডেকে এনেছিল নার্স। আবিরার দুচোখে শ্রাবণের ধারা। আবিরার হাত টুকু স্পর্শ করতে চাইল নিখিল। চোখের কোণ থেকে দুফোঁটা মুক্তো গড়িয়ে পড়ল। কিছু বলতে চাইল... ঠোঁট কেঁপে উঠল... দুচোখের মণিতে ঐশ্বরিক কিছুর প্রকাশ?

নিভে গেল দীপের আলো...রইল পড়ে শুধু আঁধার। মনিটরে শুধু সমান্তরাল রেখা।

  

সন্ধ্যে নেমে এসেছে। পাখিরা সব যে যার নীড়ে ফিরে যাচ্ছে। কিন্তু আসবে না ফিরে নিখিলই তার নীড়ে। কোনদিনই না। অন্ধকারে দুই রমণীর নিশ্বাস প্রশ্বাস যেন একে অন্যে শুনতে পাচ্ছে। একে অন্যের আশ্রয়স্থল। হাসপাতাল থেকে যে রাতে খবর দিয়েছিল যে  নিখিল আর নেই, সেই  মূহুর্তেই রণতোষ আর রীণা উদভ্রান্তের মত ছুটে গেছিলেন। ছেলেকে হারিয়েছেন। আর হারাতে চান না কাউকে। বিগত দিনগুলোতে নিখিলের বাবার রক্তচক্ষু , ঔদ্ধতে চাপা  পড়ে গেছিল রীণার চোখের জল ও কন্ঠস্বর। কিছুই করতে পারেনি তিনি। কিন্তু  আর নয়। চোখে জল কিন্তু অনমনীয়, তেজোদীপ্ত কন্ঠে তিনি জানান আবিরা কে তিনি আর দূরে সরিয়ে রাখবেন না।

 নিস্তব্ধতা ভেঙে  রীণাই প্রথমে কথা বললেন।

 -“আয় মা ভেতরে আয়। আলো জ্বালাই। সন্ধ্যে নেমে এসেছে। ঠাকুরঘরে যাই চল।”

 -“কিন্তু মা ...আমি কি ভাবে ঠাকুরঘরে যাব? আমার যাওয়াটা কী ঠিক হবে?”

 -“কেন হবে না মা? সমাজের মানা কিংবা না মানা আমি জানি না। কিন্তু  এটাই  জানি তুই আমার ঘরের লক্ষী।”

 দুজনের চোখেই জল।

 -“আর ভালোবাসারও কোন জাত হয় না। তেমন মায়েরাও জাতপাতের উর্ধ্বে। মায়ের কোনো জাত হয় না। তুই আমার নিখিলের সন্তানের মা। আমার আদরের পুত্রবধূ শুধু আমার  বুঝতে  বেশ কিছু টা সময় চলে গেল। পারলে আমায়  ক্ষমা করিস্  মা।”

 পেছনে যে কখন রণতোষ এসে দাঁড়িয়েছিলেন দুজনের কেউই তা বোঝেন নি। রণতোষের কোলে তখন খিলখিল করে হাসছে ছোট্ট নিনি ।

আগামীকাল পয়লা বৈশাখ। ফেলে আসা বিগত কয়েকদিনের দুঃখের স্মৃতিগুলো কালবৈশাখীর  ঝড়ে উড়ে যাক।  শুধু রয়ে যাক ভালোবাসা। চারিদিকে তখন শোনা যাচ্ছে শুধু উলুধ্বনি আর শাঁখের আওয়াজ।

| বর্ষ বরণ সংখ্যা-১৪২৯ | aleekpata.com | 29th Edition |

| ALEEK PATA- Your Expressive World |Online Magazine |

| Editor: Swarup Chakraborty | Publisher: Debasree Chakraborty |

| Bengali New Year, 2022 | April-June 2022 | Fifth Year Third Issue |

© All Rights Reserved by The Editor and The Publisher |

| a DISHA-The Dreamer Initiative |

No comments:

Post a Comment

Please put your comment here about this post

Main Menu Bar



অলীকপাতার শারদ সংখ্যা ১৪২৯ প্রকাশিত, পড়তে ক্লিক করুন "Current Issue" ট্যাব টিতে , সবাইকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা

Signature Video



অলীকপাতার সংখ্যা পড়ার জন্য ক্লিক করুন 'Current Issue' Tab এ, পুরাতন সংখ্যা পড়ার জন্য 'লাইব্রেরী' ট্যাব ক্লিক করুন। লেখা পাঠান aleekpata@gmail.com এই ঠিকানায়, অকারণেও প্রশ্ন করতে পারেন responsealeekpata@gmail.com এই ঠিকানায় অথবা আমাদের ফেসবুক গ্রুপে।

অলীক পাতায় লেখা পাঠান