অলীক পাতার অন্যান্য সংখ্যা- পড়তে হলে ক্লিক করুন Library ট্যাব টি



"অলীক পাতা নববর্ষ সংখ্যা ১৪৩১ প্রকাশিত, সমস্ত লেখক -লেখিকা এবং পাঠক -পাঠিকাদের জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা..."বিশদে জানতে ক্লিক করুন " Notice Board ট্যাব টিতে"

Wednesday, May 4, 2022

নব বরষে নবীন হরষে-গল্প -নববর্ষ- অদিতি ঘটক

নব বরষে নবীন হরষে-গল্প

নববর্ষ

অদিতি ঘটক

Image Courtesy: Google Image Gallery
     

ছেলে বউমা নাতি নাতনি বার বার বললেও ঠাকুর ঠুকুর, চাষবাস, গরুবাছুর ছেড়ে আর যাওয়া হয়ে ওঠে না। বীরেন বাবু তবু এক আধ বেলার জন্য গেছেন কিন্তু অমলা দেবী এত কিছু ফেলে নড়তেই পারেন না। এবার  দূর সম্পর্কের বোনকে সব দায়িত্ব দিয়ে ছেলের বাড়ি যাচ্ছেন। ওখানেই এবার বছরের প্রথম দিনটা খাওয়া দাওয়া হই হুল্লোড় গল্পগুজব করে কাটাবেন। সেই জন্য আগের দিন রাতেই পৌঁছে গেছেন যাতে আনন্দে কোনো ঘাটতি না থাকে। ওরা তো এমন সারপ্রাইজএ অবাক হয়ে গেছে। বীরেন বাবুও বেশ উপভোগ করছেন সবার সান্নিধ্য। বলছেন, “এবার পরিবার পরিবার  মনে হচ্ছে।”

 

বীরেন বাবুর বয়স পঁচাত্তর পেরিয়ে গেছে। এই বয়সেও বলার মত কোনো রোগ ভোগ নেই। সামান্য সর্দি কাশি ছাড়া। সক্কাল বেলা উঠে চলে যান ক্ষেতে। ফসলের হাল হকিকত দেখে বাজার করে বাড়ি ফেরেন। ফিরেই গিন্নিকে নিত্য নতুন ফরমাস করতে থাকেন আজ এই দিয়ে এই কর, ঐ দিয়ে তাই কর আর হবে নাই বা কেন লোহা চিবিয়ে যে হজম করতে পারেন। কোনো ছুতো পেলে তার উৎসাহ দ্বিগুণ হয়ে যায়।

 

     অমলা দেবী পরদিন সক্কাল সক্কাল স্নান সেরে নতুন শাড়ি পরে পুজোর ঘরে গেছেন। ঠিক ঘর নয় কাঠের পার্টিশন দেওয়া একচিলতে খুপরিগ্রামের মানুষ অত বেলা অবধি শুতে পারেন না। আর আজ তো একটা বিশেষ দিন। ঠাকুরের আসন পরিস্কার করে নতুন কাপড় পেতে পুজো দিচ্ছেন। তবে তার আগে একটা কাজ তিনি করে নিয়েছেন গোবরছড়া তো এখানে আর দিতে পারবেন না তাই বাড়ি থেকে নিয়ে আসা ঘুঁটে ভেঙে ফ্ল্যাটে ঢোকার দরজার সামনে আর ঠাকুরের আসনের সামনে একটু মারুলি দিয়ে দিয়েছেন।

 

প্রসাদী থালা হাতে নিয়ে বেরবার সময়ই কলিংবেলের আওয়াজ... বীরেন বাবু হৈ হৈ করে বাজারের থলে হাতে ঢুকলেন-জানো আজ জমিয়ে খাওয়া হবে। ইলিশ যা ভালো পেয়েছি না সাথে একটু তোপসেও আছে আর একেবারে কচি পাঁঠা। নটে শাকও দু আঁটি এনেছি। প্রথম পাতে খাওয়ার জন্য আর জলখাবারে নকুড়ের সন্দেশ আর ভীম নাগের রসগোল্লা। একটু গাওয়া ঘিয়ের লুচি, ছোলার ডাল আর গরম গরম বেগুন ভাজা কর তো

 

         য়বড় বৌমা প্রাপ্তি ঘুম থেকে উঠে ডাইনিং টেবিলে বসে মোবাইল এ নববর্ষের শুভেচ্ছা পাঠাচ্ছে। অমলা দেবী প্রসাদ দিতে এলে বৌমা বলে উঠল মা লাড্ডু দেবেন না। আমি ডায়েট করছি। খালি পেটে ফল খাব কি করে?

 

নাতির ঘরে প্রসাদের থালা নিয়ে গেছেন  দেখেন নাতি  শুয়ে শুয়ে কানে হেডফোন দিয়ে গান শুনছে। প্রসাদের কথা প্রথমে শুনতে পায়নি। পরে উত্তর দিল আজ  বেলা এগারোটাতে ওদের “রব”  ব্যান্ডের প্রোগ্রাম। গানটা  মাথায় হেডফোন চাপিয়ে  দিয়ে অমলা দেবীকে শোনাল। কিছুটা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লাগল বলাতে নাতি সোমক থুড়ি স্যামি বলে উঠলো নতুন গান গ্র্যানি ! একটা দুটো কথা দাড়িওয়ালা বুড়োর। আর ও এখন  ওসব খেতে টেতে পারবে না। কেননা মুখ হাত ধুয়ে  গিটারের সাথে গানটা শেষ বারের মত প্র্যাক্টিস করে নেবে। ব্যান্ডের লিড গিটারিস্ট ও। খুব চাপের। তবে সন্দেশের একটা টুকরো ইচ্ছে করলে গ্র্যানি রেখে যেতে পারে। ফর হার ওন প্লেজার। অমলা দেবী তাই করলেন।

       

নাতনির ঘরে প্রসাদ  নিয়ে গেলেন। নাতনি ঘুমে অচেতন পর্দা সরিয়ে ডাকতে যাবেন তখনই ধড়মড় করে উঠে বসে বলল, “ঠামু তোমায় বলে দিয়েছিলাম না  তুমি ওঠবার সময়ই আমায় ডেকে দেবে।  ইশ দেরি হয়ে যাবে”

 -এত তাড়াতাড়ি কোথায় যাবি?

আরে আমাদের বেঙ্গলি নিউ ইয়ার গেট টুগেদার আছে রবীন্দ্রসদনে।”

  -তোরা নাচ গান আবৃত্তি করবি?

ওহ ঠামু সবাই মিলে শাড়ি, পাঞ্জাবি পরে বেঙ্গলি সাজে কিছুক্ষণ কাটিয়ে কটা স্টেটাস আপডেট দিয়ে কফি হাউস। পরে ভজহরি মান্নায় লাঞ্চ। অত বুঝবে না ছাড়ো। আর আমার সময় নষ্ট করো না ফ্রেশ হয়ে মেকআপ করতে বসতে হবে-

-দিদিভাই, প্রসাদ টা রেখে যাই ?

ঠামু আমি শুধু শসা খাব। ওটস এর সাথে  মিশিয়ে।

ছেলে মর্নিং ওয়াক করে ফিরলো। মা বললেন, “হাত মুখ ধুয়ে প্রসাদটা খেয়ে দিন শুরু কর। খুব ইচ্ছে ছিল কালীঘাটে পুজো দিইতোদের কারুর তো সময় নেই। বয়স হয়েছে তো কলকাতার রাস্তায় আমাদের একা যেতে সাহস হয় না।”

 -মা চা টা খাই তারপর না হয় খাব। এখন রেখে দাও।

 

       বীরেন বাবু বাথরুম থেকে হাতমুখ ধুয়ে বেরিয়ে বললেন, “কি গো লুচি টা শুরু করলে?”

অমলা দেবী কিছু বলার আগেই বৌমা বলল, বাবা আমি ব্রেকফাস্ট, লাঞ্চ অনলাইনে বুক করে দিয়েছি। আপনি যেমন চান তেমনি। আজ সরলা দি মানে রান্নার বউ আসবে না তো তাই।

 

        বীরেন বাবু অমলা দেবী খানিকক্ষণ পরস্পরের দিকে মুখ চাওয়াচায়ি করলেন তারপর অমলা দেবীই বলে উঠলেন, “তোমার যেমন বলিহারি। এই বয়সে কি এত কিছু সহ্য হবে। বাজার গুলো বরং ফ্রিজে রেখে দিয়ে অল্প অল্প করে খাওয়া হবে। আমাদের সময় কি এত কিছু ছিল ? বৌমা শিখিয়ে দিয়ো তো রোজের ঝঞ্জাট থেকে বাঁচি।”      

 

হ্যাঁ রে খোকা, কালী ঘাটের পুজোটা অনলাইন এ দেওয়া যায় না!” বীরেন বাবু বলে উঠলেন। বাড়িতে হাসির রোল উঠল।

| বর্ষ বরণ সংখ্যা-১৪২৯ | aleekpata.com | 29th Edition |

| ALEEK PATA- Your Expressive World |Online Magazine |

| Editor: Swarup Chakraborty | Publisher: Debasree Chakraborty |

| Bengali New Year, 2022 | April-June 2022 | Fifth Year Third Issue |

© All Rights Reserved by The Editor and The Publisher |

| a DISHA-The Dreamer Initiative |

No comments:

Post a Comment

Please put your comment here about this post

Main Menu Bar



অলীকপাতার শারদ সংখ্যা ১৪২৯ প্রকাশিত, পড়তে ক্লিক করুন "Current Issue" ট্যাব টিতে , সবাইকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা

Signature Video



অলীকপাতার সংখ্যা পড়ার জন্য ক্লিক করুন 'Current Issue' Tab এ, পুরাতন সংখ্যা পড়ার জন্য 'লাইব্রেরী' ট্যাব ক্লিক করুন। লেখা পাঠান aleekpata@gmail.com এই ঠিকানায়, অকারণেও প্রশ্ন করতে পারেন responsealeekpata@gmail.com এই ঠিকানায় অথবা আমাদের ফেসবুক গ্রুপে।

অলীক পাতায় লেখা পাঠান