গল্প
ভালোবাসা কারে কয়
তপন তরফদার
“ সখি ভালোবাসা কারে কয় ”। “ পৃথিবীর
সবচেয়ে বড় দূরত্ব কোনটি জানো? নাহ্
জীবন থেকে মৃত্যু পর্যন্ত, উত্তরটা সঠিক নয়। সবচেয়ে বড় দূরত্ব হলো যখন আমি তোমার সামনে
থাকি, কিন্তু তুমি জানো না যে আমি তোমাকে কতটা
ভালবাসি।“ -- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
“ভালোবেসে সখী নিভৃতে যতনে আমার নামটি লিখ
তোমার মনের মন্দিরে” ভালোবাসা থেকেই প্রেমের উত্তরণ। এই মানব সভ্যতায় প্রেম অবিনশ্বর।
প্রেম আছে ও থাকবে। কবে থেকে যে প্রেমের শুরু কেউই বলতে পারেনা। নিউ র্নমাল যুগের
অনেক আগের ঘটনা। তখনও অনেক প্রেমঘটিত ঘটনা
সমাজে দাগ কেটেছিল, সেই ঘটনা কালজয়ী হয়ে আমাদের
মনের মন্দিরে গেঁথে আছে। আবার এমন অনেক ঘটনা ঘটেছে যা লোকচক্ষুর আড়ালে থাকার জন্য আলোকিত
হয়নি। দেশের রাজধানী,বা নামজাদা শহরের ঘটনায় যেমন আলোচিত ও আলোকিত হয় মফস্বল, এক অনামী
গ্রামের প্রেমকাহানীর ঘটনা বা রটনা বাতাসে ভেসে
থাকতে পারেনা। কিন্তু এদের প্রেমের মশলা অনেক অনেক প্রেম গাথার থেকেও ঝাঁঝালো।
যুগের পরিবর্তন হয়েছে, প্রেমের ও পরিবর্তন
হয়েছে। চণ্ডীদাস কত কষ্ট ও কসরত করে প্রেম করেছিল সবাই জানে। কেষ্টকে কত কষ্ট করে মাথায় ময়ূরের পালক লাগিয়ে
কদমতলায় শরীরের সব দম বাঁশির পিছনে ফুঁকে রাধিকার
মান ভঞ্জন করতে হয়েছিল। এই প্রণয়ঘটিত কাহিনি অনেকেই জানেনা।
উত্তর বঙ্গের অনেক চা বাগান আছে। প্রত্যেক
চা বাগানের কুলি কামিনদের নিজস্বতার গল্পকথন থাকে। ঠিক মত প্রচার পেলে লায়লা মজনুর কাহিনী ম্লান হয়ে যেত। মথুরা চা বাগানের ঘটনা। সিমলাবাড়ি থেকে আরও চার মাইল খাড়াই পথের দূরত্বে মথুরা টি এস্টেট।
সিমলাবাড়ি কে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে স্কুল,গ্রামীন হাসপাতাল, কিছু দোকান। আশেপাশের
পয়সাওলা লোকেদের বিনোদনের জন্য হোটেল কাম বার কাম অল্প সময়ের কাম-ঘর ভাড়ায় পাওয়া যায়।
হোটেলের নাম ব্লু হেভেন। সিমলাবাড়ির মুকুটে নতুন পালক যোগ হয়েছে ভানু ভক্ত স্কুল উচ্চমাধ্যমিকে
উন্নত হয়েছে। আগে উচ্চমাধ্যমিকের জন্য সদর শহরে যেতে হত, এখন আশেপাশের ধামগুজারি, চিলপাতা,
চকোযা, কুর্মাই বাঁশবাড়ির ছেলে মেয়েরা এখানেই
পড়ছে। সিমলাবাড়ি আরও জমজমাট হচ্ছে ব্লু হেভেনের নাম ছড়িয়ে পরেছে। কপোত কপোতীদের বকবকমে
নীল স্বর্গ জমজমাট।
মথুরা চা বাগানের করণিক পরেশ চক্রবর্তী
চুটিয়ে সংসার করছে। এখানে ব্রাহ্মনের বড়ই অভাব। পরেশবাবু ও নিজের জাত নিয়ে গর্বিত।
চা বাগানের সাধারণ সরল মনের কুলি-কামিনরা উঁচু জাতের মানুষকে সমীহ করে। পরেশ চক্রবর্তীর
মেয়ে ওই ভানু ভক্ত স্কুলের ছাত্রী। কোদাল বস্তি হয়ে মালাঙ্গি পেরিয়ে হাইওয়ের পাশে বাঁশবাড়ি
থেকে হাজিরা বাবু কদম ছেত্রীর দুর সম্পর্কের ভাগ্নে দেবেশ, ভানু ভক্ত বিদ্যালয়ে বিঞ্জান
বিভাগে ভর্তি হয়েছে।
আজ স্কুলে পড়াশোনার পাঠ নেই তবুও গায়ত্রী
সেজেগুজে স্কুলে এসেছে। সরস্বতী পুজোয়,
প্রথম শাড়ি পরেছে। আয়নায় নিজেকে দেখছে আর বলছে এই আমি কি সেই আমি।একটা শাড়ি একটা মেয়ের
মনে এতো পরিবর্তন এনে দিতে পারে। সরস্বতী পুজোর
দিন মেয়েরা বাসন্তী রঙের শাড়ি পরে। কেন পরে কেউ জানেনা। গায়ত্রী পড়েছে হালকা গোলাপি
রঙের শাড়ি।শাড়িতে কাঠগোলাপ ফুলের নকশা। ফুল হাতা গোলাপি ব্লাউজ। মাথার্ভতি ঢেউ খেলানো
চুল। চুলের রঙের সাথে মিশে যাওয়া কালো ক্লিপ দিয়ে মাথায় লাগিয়েছে কাঠগোলাপ ফুল। গায়ত্রীর
উজ্জ্বল ত্বক,সুন্দর গড়ন। পেলব ঠোঁট, হাসলে গালে টোল পড়ে । গায়ত্রী সাইকেলই স্কুলে
যায়। গায়ত্রী আজ উপোস করে আছে। স্কুলে পুষ্পাঞ্জলি দেবে। স্কুলেই প্রসাদ খাবে, খিচুড়ি খাবে।
পুষ্পাঞ্জলির “কুচ যুগল শোভিত” উচ্চারণের
সঙ্গে সঙ্গে শরীরে আলোড়ন ওঠে। গায়ত্রীর মুখে রক্তিম ছোপ। আবার মোচড়। এবার বুঝতে পারে মেয়েদের প্রতি মাসের সেই সঙ্গী মোচড়। দিশেহারা হয়ে যায়। গায়ত্রী কাউকেই কিছুই না
বলে পাঁই পাঁই করে সাইকেল চালিয়ে বাড়িতে ফিরতে চায়। সোনপুর পেরিয়ে ঢালু বাঁকটা নামতে
গিয়ে ধাক্কা মারে এক মাউন্টেন সাইকেল চালককে। মাউন্টেন সাইকেলের চাকা চওড়া এবং পাহাড়ি
রাস্তায় রাস্তা কামড়ে চলে,সহজে পিছলে যায়না। গায়ত্রীর কমফর্ট সাইকেল যা পাহাড়ি রাস্তার
জন্য তেমন উপযুক্ত নয়, অনেকটা ঝুঁকে চালাতে হয়। ছিটকে পড়ে গায়ত্রী। সাইকেল চালক দেবেশ
গায়ত্রীকে শক্ত হাতে তুলে ধরে। দুজনের চোখ দুজনের চোখে। “বধূ কোন আলো লাগলো চোখে”।
দেবেশ এক সুপুরুষ যুবক। গ্রীক ভাস্কর্যের প্রতিরূপ। টিকালো নাক। ধারালো মুখ। উজ্জ্বল
দুটি চোখ। মাথা ভর্তি কোঁকড়ানো চুল। সব মেয়েরা শিব পুজো করে এরকমই শিবের জন্য। প্রাথমিক
জড়তা কাটিয়ে গায়ত্রী বলে আমার শরীরটা খারাপ লাগছে তাড়াতাড়ি বাড়িতে যাব। দেবেশের ঘোর
কাটেনি। মনে হচ্ছে কোন এক তুলতুলে পরি তার কোলে ধরা দিয়েছে। দেবেশ বলে আমি বাড়িতে পৌঁছে
দেবো। গায়ত্রী বলে, না না দরকার নেই। পরে কথা হবে। দেবেশ বলে, একই স্কুলের আমরা। নিশ্চয়ই
দেখা হবে। গায়ত্রীর যন্ত্রণা ক্লিষ্ট মুখেও এক তাৎপর্য পূর্ণ হাসি।
ওদের স্কুলের
যাতায়াতের পথে চিলপাথা ফরেস্ট গেটের ডান দিক দিয়ে সরু খাঁজ কাটা পাথরের রাস্তা
মিশেছে বানিয়া নদীর কিনারায়। প্রত্যেক অঞ্চলেই একটা স্থান থাকে যেখানে কপোত-কপোতীরা
বক-বকমের জন্য মিলিত হয়। এইসব স্থানে প্রেমিক -প্রেমিকারা তাদের প্রেমকে অমর করে রাখতে গাছের কাণ্ডে কিংবা পাথরে নাম খোদাই করে রাখে। বানিয়া
নদীর তিরে প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে পড়ে থাকা পাথরের বুকেও তার নিদর্শন আছে।সেদিন হঠাৎই আকাশ থেকে পুষ্পবৃষ্টির মত ঝিরি ঝিরি বারি ধারা। গায়ত্রী বলে আমারা একটা
ঝোপের আড়ালের পাথরে আমাদের নাম খোদাই করি।
দেবেশ পড়াশোনায় ভালো, খোঁজ খবর ও রাখে। দেবেশ বলে পৃথিবীতে প্রাচীনতম প্রেম পত্রটি
পাওয়া গেছে মেসোপটেমিয়ার ক্যালডিয়া অঞ্চলে।
২২০০খ্রিঃপূঃ তে ব্যাবিলনের একটি ছেলে
এক খন্ড পাথুরে মাটির ফলকে ইউফ্রেটিস
নদীর তীরে সিপারাবাসী তার প্রেমিকাকে হিব্রু, আরবি, আরমিক ভাষা মিশিয়ে প্রেমগাথা লিখেছিল।
দেখতে দেখতে দু বছর কেটে গেল।গায়ত্রী
ক্লাস ইলেভেন উঠলো। দুজনের বাড়িতে জানাজানি হয়ে যায়। গায়ত্রীর মা বলে দেবেশ ছেলেটা ভালো ওরা
দুজনে দুজনকে ভালোবাসে। নিজের পায়ে দাঁড়ালে
ওদের বিয়ে দেবো। পরেশবাবু কথাটা শুনেই রেগে
টং, বলে কখনো না। আমরা ব্রাহ্মন মেয়েকে প্রাণপণ ভালোবাসি। ওই নিচু জাতের ছেলের সঙ্গে
বিয়ে কিছুতেই নয়। ভগবান পরেশবাবুর কথা শুনতে পায়। মালিঙ্গী চা বাগানের ম্যানেজার মোনোজ মুখার্জ্জীর ছেলের সঙ্গে বিয়ের
ঠিক করে।
গায়ত্রীকে ঘর থেকে বেরুতে দেয় না। কিন্তু
ইতিহাস বলে প্রেম যারা করে তারা ঠিক কোনো না কোন
উপায় বার করে মিলিত হয়। দেবেশ গায়ত্রীয়দের বাড়িতে ঠিকে ঝি বাসবীর মাধ্যমে চিঠি
চালা চালি শুরু করলো। সিদ্ধান্ত হলো বিয়ের দিন রাত্রে পালিয়ে যাবে নয়তো বিষ খেয়ে কিংবা গলায় দড়ি দিয়ে
আত্মহত্যা করবে।
“ স্টুপ টু কনকার।“ দেবেশ গায়ত্রীর বাড়িতে
গিয়ে পরেশবাবু কে প্রণাম করে ক্ষমা চেয়ে, বলে আমার বাড়ির লোকজনেরও এই প্রণয়ে, এই বিয়েতে
মত নেই। আমি ও চাই ওর ভালো জায়গায় বিয়ে হোক।
মেসোমশাই বিয়েতে খাটা খাটনির জন্য আমি আছি। দেবেশ তার অভিনয়ের দৌলতে ঘরের ছেলের মতোই
বিশ্বাসী হয়ে গেল। সব কাজ হাসিমুখে করছে। এমন
কি সবার সামনেই গায়ত্রীর সঙ্গে কথা বলছে। বিয়ের ভোজের জন্য বাছাই করে পাঁঠা কেনা হয়েছে।
পাঁঠারা পাতা চিবাচ্ছেই আর ব্যাঁ ব্যাঁ করে ডাক ছাড়ছে। দেবেশ সবার সামনেই জিজ্ঞাসা করে -এই বিয়েতে কত পাঁঠা বলি হবে। যে যার মতোই অঙ্ক কষে উত্তর দেয়। গায়ত্রীর
মনের কাঁটা খচখচ করে উঠে। তবে কি দেবেশদা ধরে নিচ্ছে ওর জীবন বলি হয়ে গেল। বিয়ের দিন
সকাল এগারোটা নাগাদ খবর এলো দেবেশের কোন কাকার স্ট্রোক হয়েছে কলকাতা যেতে হবে। গায়ত্রী খবরটা শুনেও মনে মনে বলে,
সন্ধ্যায় নিশ্চিত ও আসবেই।
ম্যানেজারের ছেলের বিয়ে। বিয়েতে জমকালো
কিছু করতেই হবে। সাদরি মেয়েদের নাচের ট্রুপ
এসেছে । ঝুরানি নাচ, একতার নাচ, মাছ ধরার নাচ সর্বপোরি জোৎস্না রাতের সেই মায়াবী ভালোবাসার
নাচ। সঙ্গতে সেই লম্বা লম্বা কাল বাঁশি, ঢোল, ফ্লুট যোগে নাচ। সারা মহল্লায় সাড়া পরে
যায়। ম্যানেজারের ছেলে মনোজ মন জয় করতে বন্ধুদের আকন্ঠ দারু খাইয়েছে ও খেয়েছে। গায়ত্রী
কনের সাজে বসে আছে, মনে মনে প্রমাদ গুনছে, দেবেশ এখনো কেন এলোনা। কনেকে পিঁড়িতে করে বিয়ের আসরে নিয়ে আসা হলো তবু
দেবেশের দেখা নেই। বর মালা বদল করার
জন্য দাঁড়াতে গেলে টলে পড়ে যায়। গায়ত্রী সাহস
করে বলে উঠে ওই মোদো মাতাল ছেলেকে বিয়ে করবো
না। মা ও বলে এই বাজে ছেলের সঙ্গে আমার মেয়ের বিয়ে দেবনা। হৈচৈ বেঁধে যায়। বিয়ে বন্ধ
।
গায়ত্রীর যে বিয়ে হল না এই খবরটা দেবেশ
জানে কিনা তাও জানা গেল না। আবার বিয়ের ব্যবস্থা করতে গেলে গায়ত্রী জেদ করে বলে “বিয়ে
করবে না। “গায়ত্রীর মা স্বর্গবাসী হল। গায়ত্রী নার্সিং ট্রেনিং নিয়ে নার্স হয়ে মানুষের
সেবা করে জীবন কাটিয়ে দেবে। সময়ই সব দুঃখ কষ্টকে মলমের প্রলেপে ভুলিয়ে দেয়। খেয়ে নেয়।
কিছু কষ্টের দাগ ছুরিকাঘাতের দাগের মতোই থেকে
যায়। গায়ত্রীর মন থেকে দেবেশ মুছে যায়নি। প্রথম এবং শেষ প্রেম।
বিলাসপুরের আম্বেদকার মেমোরিয়ল হাসপাতালের নার্স গায়ত্রী। বাবাকে নিয়ে
কোয়ার্টারেই থাকে। রবিবার রাতে অ্যক্সিডেন্টে
গুরুতর আহত এক রুগি ভর্তি হয়েছে। মাথায় সেলাই করে রক্ত বন্ধ করা গেছে, কিন্ত
রোগি চোখে দেখতে পাচ্ছেনা। ডাক্তার চৌরাশিয়া বলেন, দৃষ্টি শক্তি হারানো, বিরল ঘটনা।
বৃহস্পতিবারে ডিউটিতে গিয়ে শোনে সেই রুগিকে বাইশ নম্বরে আনা হয়েছে। রুগিকে ওষুধ খাওয়াতে
গিয়ে নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারেনা। দেবেশ। দেবেশ এখানে কি করে আসলো। গায়ত্রী কোনো
কথা না বলে রুগিকে পরম মমতায় শুশ্রূষা করে। সেবা আশ্রমের ম্যানেজার এসে বলে, উনার নাম
ডাক্তার দেবেশ রায়। গত দশ বছর ধরে আমাদের সেবা
কেন্দ্রের ডাক্তার।ওনার দুকুলে কেউ নেই। রুগীরাই ওর আপন জন। উনি ডাক্তারি না করতে পারলে
বাঁচবেন কি করে।
গায়ত্রী অসতর্ক মুহূর্তে কথা বলে ফেলে। দেবেশ কন্ঠস্বর শুনেই বলে
গায়ত্রী কেমন আছো। এ জীবনে তোমার সঙ্গে দেখা হবে ভাবিনি। সেদিন যেতে পারেনি। তুমি সুখে
সংসার করো। গায়ত্রী বিয়ের দিনের সব ঘটনা বলে। দেবেশদা আমি তোমাকে
ছাড়া কারও সঙ্গে ঘর বাঁধবোনা। আমি আমার একটা চোখ তোমাকে দেবো। দেবেশ বলে পাগলামি
করোনা। গায়ত্রী বাবাকে বলে দেবেশেকে ও ওর একটা চোখ দেবে।
আগামী রবিবার দিন অপারেশন হবে। রবিবার ভোর বেলায় দেখা যায় পরেশবাবু গলায় দড়ি দিয়ে সিলিং
ফ্যানে ঝুলছে। বুকে বড়ো অক্ষরে লেখা, “আমার চোখ দুটো দেবেশকে দিয়ে অমি প্রায়শ্চিত্ত করতে চাই।“
| শারদ সংখ্যা-১৪২৯ | aleekpata.com | 30th Edition |
| ALEEK PATA- Your Expressive World |Online Magazine |
| Editor: Swarup Chakraborty | Publisher: Debasree Chakraborty |
| Durga Puja , 2022 | July-Oct 2022 | Fifth Year Fourth Issue |
| © All Rights Reserved by The Editor and The Publisher |
| a DISHA-The Dreamer Initiative |
No comments:
Post a Comment
Please put your comment here about this post