অলীক পাতার অন্যান্য সংখ্যা- পড়তে হলে ক্লিক করুন Library ট্যাব টি



। । "অলীক পাতা শারদ সংখ্যা ১৪৩১ আসছে এই মহালয়াতে। । লেখা পাঠানোর শেষ তারিখ ১৫ ই আগস্ট রাত ১২ টা ।.."বিশদে জানতে ক্লিক করুন " Notice Board ট্যাব টিতে"

Saturday, October 1, 2022

গল্প - কটন ক্যান্ডি আর তুলতুল - শ্রাবণী গুপ্ত সরকার

 গল্প

কটন ক্যান্ডি আর তুলতুল

শ্রাবণী গুপ্ত সরকার



 

রোজ ইস্কুল থেকে ফেরার পথে একটা লোক প্যাকেটে ভরা হাল্কা মিষ্টি গোলাপি রঙের তুলোর মতো দেখতে কী যেন একটা বিক্রি করে। অনেকেই কেনে, তারপর দিব্যি খুশি খুশি মুখ করে খায়। তুলতুল ওর দেখাশোনার দিদার হাত ধরে গুটগুট করে বাড়ির দিকে হাঁটতে হাঁটতে ফিরে ফিরে দেখে।

 

বলতে নেই আর পাঁচটা বাচ্চার মতো তুলতুল খেতে টেতে আপত্তি বিশেষ করে না। বরং যা দেওয়া হয় না এমন অনেক কিছুই ওর চাখা হয়ে গেছে। মায়ের একটা শ্যাম্পুর পাউচও দাঁত দিয়ে ফুটো করে একবার খেয়ে ফেলেছিল খানিকটা। তখন অবশ্য ও আরও ওনেক ছোটো ছিল। কিন্তু খেতে ও বেশ ভালোই বাসে। উচ্ছে ভাজা, নিম বেগুন থেকে পায়েস বা আইসক্রিম কোনোটাই অপছন্দ নয় তুলতুলের। মিষ্টি ফুলকো গাল কিন্তু ডিগডিগে রোগা তুলতুল একবার লোভে পড়ে প্রায় আধ কৌটো মিল্ক মেইড খেয়ে ফেলেছিল। আসলে মা, বাবা কেউই বাড়িতে থাকে না। দিদাও তখন দিব্যি  আরাম করে ঘুমোচ্ছিল .... সেই সুযোগেই আর কি।

 

কিন্তু পরের ব্যাপারটা খুবই খারাপ হলো। পেট ব্যথা, বমি, তার চেয়েও খারাপ হলো মা খুব বকলো এমন হ্যাংলামো করার জন্য। এমনিতে মা বেশ খুশি তুলতুল খাওয়া নিয়ে একেবারেই জ্বালায় না বলে। কিন্তু ঘরে থাকা জিনিস একসঙ্গে অত খেয়ে পেট খারাপ করার কোনো মানে হয়, ফ্রিজের আইসক্রিম চুরি করে খেলেও মা ঠিক ধরে ফেলে। আসলে ওটা মায়েরও খুব পছন্দের জিনিস তো।

 

সে যাই হোক, স্কুলের স্পোর্টসের দিন ওদের অভিভাবকদের উপস্থিতির কথা বলা থাকে। মায়ের কী একটা ট্রেনিং থাকায় বাবার সঙ্গে তুলতুল গেছে। স্পোর্টসে তো ঘোড়ার ডিম পেলো। বাড়ি ফেরার পথে ঐ গোলাপি তুলো দেখিয়ে বললো, “ও বাবা! ওগুলো কী গো? কিনে দেবে আমায়।”           

 

“না মা, এগুলো খুব খারাপ জিনিস। বাজে রঙ থাকে তো। শরীর খারাপ হবে খেলে।”

 

ঢোঁক গিলে নেয় তুলতুল। ইসস আজ মা থাকলে ঠিক কিনে দিতো। আসলে মা ওর এই সব খেয়ালগুলো বুঝতে পারে। মনে হয় মাও পুরোপুরি বড়ো হয়ে যায় নি। তবে পড়াশোনা না করলে আর ফ্রিজ ঘাঁটলে বড্ড রেগে যায় মা। সেদিন ডিম ভাঙার পর পিঠে দু’ঘা দিয়েও দিয়েছিল। সারাদিন কাজ করে বাড়ি ফিরে অমন বিকট কীর্তি দেখলে অবশ্য রাগই হওয়ার কথা। কি বিচ্ছিরি আঁশটে গন্ধ হয় না ডিমের।

 

দুদিন পরে স্কুল থেকে ফিরে ওর স্নান খাওয়ার পর দিদা যথারীতি মেঝেতে শুয়ে নাক ডাকিয়ে ঘুমোচ্ছে। কাল দিদা ঐ তুলোর একটা ছোট্টো বল কিনে দিয়েছিল। বাবার কথা ভেবে ভয় ভয় পেলেও দিদা বলল এগুলো চিনি দিয়ে তৈরি। আহা কি ভালোই না খেতে! তবে ঐটুকু খেয়ে কী আর মন ভরে। দিদার কাছে চাওয়াটাও ঠিক না। মাকে বলে দিলে আর দেখতে হবে না।

 

তাই চিনির শিশি আর মায়ের ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ার থেকে তুলো নিয়ে তুলতুল বসল মিষ্টি তুলো বানাতে। গোলাপি হবে না ঠিকই, কিন্তু সাদা তো বানাতেই পারে। বেশ করে তুলো আর চিনি মিশিয়ে মুখে দিতেই যাচ্ছেতাই কান্ড। গলায় জড়িয়ে ওয়াক টোয়াক উঠে একাকার। তুলোগুলো কি বিশ্রী খেতে রে বাবা। ঐ রকম মিষ্টির জায়গায় পানসে! দাঁতের মধ্যে আটকে বিকট অবস্থা! 

 

দিদা ঘুম থেকে উঠে হাঁউমাউঁ জুড়ে দিল তার উপর। মা জানলে দুজনকেই দেবে বেশ করে। দিদা ঘুমোয় আর তুলতুল কুকর্ম করে বেড়ায় বুঝলে আর রক্ষা নেই।

 

রবিবার রান্না, খাওয়ার পরে মা আর তুলতুল মাঝে মাঝে বেড়াতে যায়। মামাবাড়ি তো আছেই, তা ছাড়াও এদিক, সেদিক। সেদিন মায়ের রান্না দুর্দান্ত পাঁঠার মাংস, চাটনি, ভাত খেয়ে ওরা বার হলো একটা শপিং মলের উদ্দেশ্যে। কি সব গিফট কেনার আছে যেন। আর মায়ের তো সারাবছর শপিং লেগেই থাকে। এই নিয়ে বাবার সঙ্গে রাগারাগি করে আর সবার জন্য আরও বেশি করে জিনিস কিনে আনে।

 

উপহারের জিনিস কেনা হলো। তুলতুলের একটা মিষ্টি টিশার্ট, মায়ের কুর্তি, কি সব সাজের জিনিস, বাবার শার্ট সব কেনাকাটা শেষ হওয়ার পর ওর সবচেয়ে প্রিয় কেকের দোকান থেকে চিকেন প্যাটিস আর কফি প্যাস্ট্রি, আইসক্রিম বাদ গেল না মোটেই। কি সুন্দর একটা কমলালেবুর কুচি দেওয়া নতুন আইসক্রিম খাওয়ালো মা।

 

সবকিছুই গুছিয়ে নিয়ে গাড়ি বুক করে মা যেই ওকে নিয়ে বেরোতে যাবে .... সেই রঙিন তুলো। শুধু গোলাপিই না আকাশি, মিষ্টি একটা হলুদ, হাল্কা সবুজ। মায়ের হাত ধরে টান দিতেই মা বলল, “আবার কী রে?”

 

“ঐ তুলোগুলো খেলে পেটে ব্যথা করে মা?”

 

“না তো, আমরা তো ছোটোবেলায় চিড়িখানায় গেলেই খেতাম। কটন ক্যান্ডি বলে। রাস্তায়ও তো বিক্রি হয়, দেখিস নি। চল কোন রঙটা নিবি নে। তবে এখন তো পেটভর্তি, বাড়ি গিয়ে আবারও যখন দুষ্টুখিদে পাবে তখন খাস। আমাকেও একটু ভাগ দিস কিন্তু।”

 

খুব খুশি হয়ে তুলতুল ঐ সবুজটাই বাছল। ভাগ্যিস মাটা এখনও একটু একটু ছোটো আছে। হাতে সবুজ কটন ক্যান্ডি নিয়ে লাফাতে লাফাতে গাড়ির দিকে চলল তুলতুল। আজ বাবাকে খুব বকবে ও। ছোটো বলে কিনা ওকে গুলতাপ্পি দেওয়া!


| শারদ সংখ্যা-১৪২৯ | aleekpata.com | 30th Edition |

| ALEEK PATA- Your Expressive World |Online Magazine |

| Editor: Swarup Chakraborty | Publisher: Debasree Chakraborty |

| Durga Puja , 2022 | July-Oct 2022 | Fifth Year Fourth Issue  |

© All Rights Reserved by The Editor and The Publisher |

| a DISHA-The Dreamer Initiative |

 

No comments:

Post a Comment

Please put your comment here about this post

Main Menu Bar



অলীকপাতার শারদ সংখ্যা ১৪২৯ প্রকাশিত, পড়তে ক্লিক করুন "Current Issue" ট্যাব টিতে , সবাইকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা

Signature Video



অলীকপাতার সংখ্যা পড়ার জন্য ক্লিক করুন 'Current Issue' Tab এ, পুরাতন সংখ্যা পড়ার জন্য 'লাইব্রেরী' ট্যাব ক্লিক করুন। লেখা পাঠান aleekpata@gmail.com এই ঠিকানায়, অকারণেও প্রশ্ন করতে পারেন responsealeekpata@gmail.com এই ঠিকানায় অথবা আমাদের ফেসবুক গ্রুপে।

অলীক পাতায় লেখা পাঠান