চিঠি
আমার তিয়া
দেবাশীষ
চক্রবর্তী
আমার তিয়া,
শোনো আমি ওই টুক টুক করে ফোনে লিখতে
পারি না। আমার মোটা মোটা আঙুল যে বর্ণে রাখতে যাই তার পাশের বর্ণে গিয়ে পড়ে। তাই এই
চিঠি লিখছি। তুমি যে যে প্রশ্ন করেছ তার সব উত্তর আমি এখানেই দেব। আমার হাতের লেখা
খারাপ কষ্ট করে পর নিও।
তুমি ভাল করেই জান, তবুও আরেকবার
বলে রাখা ভাল,
আমার একটু বাড়িয়ে বলা স্বভাব আছে। একটু বেশি কথা বলার অভ্যাসও আছে। এটাতো জান
যারা বেশি কথা বলে তারা অবশ্যই মিথ্যে কথা বলে আমিও ব্যাতিক্রম নই। তবে আমি নির্দোষ
মিথ্যে বলি।
এই যেমন ধরো এই যে আমি নিজেকে ইংরেজিতে এম.এ.
বলেছি এটা সত্যি নয়, তবে বি.এ.-তে আমার ইংরেজি ছিল। দ্যাখো এই মিথ্যেতে তোমার কোনও
ক্ষতি হয়নি কারণ আমি তো তোমার ইংরেজির মাস্টারমশাই নই। আমি তোমাকে ভালবাসি। আমি তোমাকে
অন্য কিছু শেখাব। তোমার কি মনে হয় আমি অন্যায় করেছি?
আমি বলেছি আমার বাবা ডাক্তার। আসলে আমার বাবা
কম্পাউন্ডার। কম্পাউন্ডারকে তো আধা ডাক্তার বলাই যায়, তাই না? আমি
স্বপ্ন দেখি আমার বাবা বিরাট এক চিকিৎসক সবাই
তাঁকে সম্মান করে। আমার মা-ও তো বাবাকে 'ডাক্তার বলে'। মা কি মিথ্যে
বলে না কি?
সারা পৃথিবী যা বলে বলুক আমাদের
কাছে আমার বাবা ডাক্তার। না, তুমিও বাবাকে ডাক্তার ছাড়া অন্য কিছু ভাববে না।
আমি যে চাকরি করি না, কবিতা
লিখি আর ছাত্র পড়াই তা তুমি জেনে গেছ। তোমার মামাতো দাদার শালি যে আমাদের পাশের বাড়ির
বউ, আমার
রূপাবউদি তা তো জানতাম না। আশ্চর্যের ব্যাপার তুমি সব জেনেও আমাকে কিছু বলোনি, বুঝতে
দাওনি। আমি যেমন তোমাকে বুঝতে দিইনি রুদ্রদার কথাটা আমি জানি। ওই লোকটা তোমাকে ঠকিয়েছে।
তিয়া, তুমিই বলো জানলেই
কি সবকথা বলতে হয়? কিছু ব্যথার কথা, কিছু হারের কথা, হতাশার
কথা বা স্বপ্নের কথা গোপন থাকলে, গোপন রাখলে কার কী যায় আসে?
এই মিথ্যেগুলোতে আমাদের ভালবাসা কমে না। এই
মিথ্যেতো কাউকে সত্যিই ঠকাতে চায় না। এই মিথ্যের গভীরে থাকে হয়ে ওঠার তীব্র ইচ্ছে।
যা হতে চাই,
যা হতে চেয়েছিলাম, কিন্তু পারিনি সেগুলোই তো মিথ্যে করে বলি। উদ্দেশ্য একটাই
তোমার প্রশ্রয় দেওয়া চোখ, টুকরো
হাসি আর অনেকটা সুখ - তোমার আমার দুজনের।
তবে কী জানো তোমাকে যতক্ষণ না সব সত্যি জানাতে
পারছি ততক্ষণ বেশ একটা অপরাধবোধে ভুগছি। এই সত্যিগুলো না জানলে বা না জানালে সূর্য
থমকে যাবে না,
হাওয়া ঘুমিয়ে পড়বে না, তবু তোমাকে সব ঠিকঠাক না বললে আমার খুব
কষ্ট হয়। লুকোনোর স্বভাবটা আমার কোনও দিনই নেই, ভগবান করুন কখনও
যেন তেমন না হয়।
তিয়া আমার এই চিঠি পড়ে তোমার কী মনে হলো জানিও।
তুমি হয়তো ফোনে লিখে জানাবে, তাই জানিও। আমি প্রতীক্ষায় রইলাম। অনেক
আদর, চুমু
আর ভালবাসা দিলাম।
আমি তোমার তুমি আমার, আমারই
থেকো।
আলিঙ্গনান্তে
তোমার অচিন
ইন্দিরালয়, নরসিংহ
দত্ত ঘাট রোড,
সুখচর, কলকাতা-
৭০০১১৫
| নববর্ষ সংখ্যা-১৪৩০ | aleekpata.com | 31 st Edition |
| ALEEK PATA- Your Expressive World |Online Magazine |
| Editor: Swarup Chakraborty | Publisher: Debasree Chakraborty |
| Bengali New Year 2023 | April-July 23| Sixth Year First Issue |
| © All Rights Reserved by The Editor and The Publisher |
| a DISHA-The Dreamer Initiative |
No comments:
Post a Comment
Please put your comment here about this post