চিঠি
জাসমিনা তুমি
হামিদুল ইসলাম
01.03.2023
প্রিয় জাসমিনা
আশা করছি ভালো
আছো। কতোদিন দেখিনা তোমায়। কোথায় আছো তাও জানিনা।
তোমার সাথে শেষ
দেখা হয়েছিলো চার বছর আগে। তখন আমরা কলেজে
প্রথম বর্ষের ছাত্রছাত্রী ।
কলেজে তোমাকে
প্রথম দেখে আমার ভেতরটা কেমন যেনো উদগ্রীব হয়ে উঠেছিলো । বিশেষ করে তোমার গালের সেই
টোল টা আমাকে পাগল করে দিয়েছিলো । ক্লাসের শেষ বেঞ্চে বসে আমি তোমাকে চুপটি করে দেখছিলাম। আহা ! এমন সুন্দর নাক ! এমন সুন্দর পটল চেরা গাল
! এমন সুন্দর হরিণী চোখ ! ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক
! মুক্তোর মত সাদা দাঁত ! সামান্য হাসলেই
সেই টোল ! যেন পাগল হয়ে যাচ্ছি আমি।
আমি তাকিয়ে
আছি তোমার দিকেই। ক্লাসের স্যার কী পড়াচ্ছেন কী বোঝাচ্ছেন সবই আমার ধর্তব্যের বাইরে। কখন স্যার ব্লাকবোর্ড ছেড়ে
আমার কাছে উঠে এসেছেন আমি জানি না।
তিনি আমার নাম
ধরেই ডাক দিলেন, ' লালন '
আমি যেনো সম্বিত ফিরে পেলাম। আমার চোখে
তার চোখ।
জিজ্ঞেস করলেন, ' কোথায় গিয়েছিলে ? '
' না স্যার। যাই নি তো কোথাও। '
' আচ্ছা। আমি এতক্ষণ কী বোঝালাম? '
' আপনি।
আপনি তো ------- '
আমি ইতস্তত করছি। আমি বলতে পারছি
না কিছুই।
স্যার বললেন, ' Don't look out
side. Mind your own business. Keep attention and try to guess what I 'm saying.
'
' o. k. sir. thanks.'
স্যার চলে যাওয়ার পর ক্লাসের
সমস্ত ছাত্র ছাত্রীরা হো হো করে হেসে উঠলো। লজ্জায় আমার মাথা কাটা যাচ্ছে। আমি নিশ্চুপ।
জাসমিনা স্থির। ও বিষয়টা ঠাওর করতে পারে নি। ওর দু চোখ বাইরের দিকে।
কলেজ ছুটির পর বাড়ি ফিরছি। রাস্তায়
জাসমিনা। ওকে দেখে আমার চোখ মুখ লাল হয়ে উঠেছে। লজ্জায় আমি দাঁড়িয়ে পড়লাম সেখানেই।
ও আসলো আমার কাছে।
বললো, ' তখন
ক্লাসে অতো হাসাহাসি হচ্ছিলো কেনো ? '
' ও এমনিই। '
' কক্ষনো না। তুমি আমাকে বলছো না। তুমি
আমার কাছে কিছু লুকাচ্ছো। '
‘আমি একটু হাসবার চেষ্টা করে বললাম, ক্লাসে
আমি তোমার দিকে তাকিয়ে ছিলাম তাই।'
' ও। বুঝেছি। তুমি আমার দিকে তাকিয়েছিলে
কেনো? স্যার, তখন একটা ইম্পরট্যান্ট
বিষয় বুঝাচ্ছিলেন । শোনো নি নিশ্চয়ই। '
‘ না। '
' কেন? '
' বললাম তো। '
' ক্লাসে অমন করে আমার দিকে আর তাকাবে না।
'
' তাকাবো। '
' এবার আমি প্রিন্সিপালকে কমপ্লেন করবো।
'
' করো। '
' তুমি তো খুব জেদি ছেলে। '
' আমি জেদি। তুমি আমার জেদটাই দেখলে। আমার
ভেতরটা বুঝতে চাইলে না। '
' তোমার আবার ভেতর কি? '
' লাভ। '
' মানে? '
' আই লাভ ইউ জাসমিনা । '
কিন্তু আমাদের সেই ভালোবাসা বেশিদূর
এগোতে পারে নি। বিষয়টি ক্লাসে জানাজানি হয়ে
যায়। সারা কলেজে জানাজানি হয়ে যায়। প্রিন্সিপালের
কানে যায় কথাটা। প্রিন্সিপাল কমিটির মিটিং
ডাকেন। কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমাদের নোটিস ধরিয়ে কলেজ থেকে বহিষ্কার করা হয়।
জীবন কঠিন থেকে কঠিনতর পর্যায়ে
নেমে আসে। খুব কষ্ট করে দূরে একটা কলেজে আমরা
দুজনে ভর্তি হই। আমাদের ভালোবাসা সেখানেও জানাজানি হয়ে যায় । আমরা সেই কলেজ
থেকে আবার বিতাড়িত হলাম।
তৃতীয়বারের জন্যে ভর্তি হলাম
শহরের একটা কলেজে। এখানেও ধরা পড়লো আমাদের ভালোবাসা। কী করবো বুঝে উঠতে পারছিলাম না।
সেদিন থেকে জাসমিনা আর ক্লাসে আসে না। কোথায়
হারিয়ে গেছে বাড়ির লোকও জানেনা। সব আত্মীয়-স্বজনের বাড়ি বাড়ি খোঁজ করা হয়েছে।
কোথাও নেই। পুলিশে খবর দেয়া হয়েছে। পুলিশও কিছু করতে পারেনি।
আমার পড়াশুনা বন্ধ। আমি আজও পাগলের
মতন জাসমিনাকে খুঁজি। খুঁজে পাই না তাকে। আমার দু চোখের জল জাসমিনা হয়ে ঝরে পড়ে অতল
জলের সাগরে। আজ জাসমিনাকে হাওয়ায়
পাঠিয়ে দিলাম এই চিঠি। তুমি যেখানেই থাকো, সুখে থাকো। আমার
জাসমিনা। আমার প্রিয় জাসমিনা।
তোমার ফেলে আসা বন্ধু।
লালন
কুমারগঞ্জ
দক্ষিণ দিনাজপুর।
| নববর্ষ সংখ্যা-১৪৩০ | aleekpata.com | 31 st Edition |
| ALEEK PATA- Your Expressive World |Online Magazine |
| Editor: Swarup Chakraborty | Publisher: Debasree Chakraborty |
| Bengali New Year 2023 | April-July 23| Sixth Year First Issue |
| © All Rights Reserved by The Editor and The Publisher |
| a DISHA-The Dreamer Initiative |
No comments:
Post a Comment
Please put your comment here about this post