চিঠি
প্রিয় চিঠি,
শম্পা
সান্যাল
প্রিয় চিঠি,
এই যে! শোনোও না!
চিঠিতে এমন সম্বোধন পেয়ে প্রথমবার
তুমি খুউব হেসেছিলে, তারপরেও কথাচ্ছলে বলে হাসতে কিন্তু আমি আর ঐ যে "প্রিয়", "সুচরিতেষু"
এসব লিখবো ভেবেও আর লিখে উঠতে পারিনি। নাম ধরে সম্বোধন, করতে নেই যে।
এভাবেই অভ্যস্ত আমি আজও তাই...। "কিগো!
" "শুনছো!" এসব সম্বোধনও সামনাসামনি
আর ক'দিনই
বা করতে পারলাম বলো! তাই চিঠিতেই! শোনো না!
যেকথা বলতে আজ কাগজ-কলম নিয়ে বসা।
আচমকা জীবন যখন হাত ধরে কানাগলির
অন্ধকারে এনে ফেলেছিল, কেঁদেছিলাম, খুউব। পথের সন্ধানে নেমে দিশাহীন আমি
তবুও মরিনি,
মরতে দিইনি আমার ভালোবাসাকে। চিঠি লিখেছি বারবার, লাল ডাকবাক্সে
ফেলে এসে অপেক্ষায় থেকেছি প্রতিটি দিন। " কই গো, চিঠি আছেএএ!
"…এ ডাকের প্রতীক্ষায় ঘরবার করেছি নিত্যদিন। সহসা সেই "চিঠি"
যখন এলো,
পথসন্ধানী আমাকে এক মুহূর্তে পথঘাট পেরিয়ে এনে ফেললো তেপান্তরের মাঠে। উথালপাথাল
হৃদয়ে ঝোড়ো আওয়াজে শুনতে পেলাম তোমার মনের কথা,
"... আমাকে আর চিঠি
লিখো না। মেসবাড়ি ছেড়ে চলে যাচ্ছি আমি। তোমার চিঠি না এলে মন আনচান করেছে কিন্তু, খুলে
পড়ার সাহস হয়নি কোনোদিন। জানি উত্তর চেয়েছো, আমার চিঠির অপেক্ষায়
রয়েছো, তোমার
এই সামান্য চাহিদা পূরণেরও আমার ক্ষমতা নেই, সাহস নেই সেই
অশুভ রাতের স্মৃতির মুখোমুখি হওয়ার যদিও সে তাড়া করে ফেরে, নিয়ত।
ক্লান্ত,
বড্ড ক্লান্ত আমি তোমার থেকে ছুটি পেতে চাই। পারলে ক্ষমা করে দিও আমাকে।
ইতি শুভময়
গঙ্গোপাধ্যায় ।"
শুভময়। আচমকা এক ঝড়ের সন্ধ্যায়
তোমার দৌড়ে এসে আশ্রয় নেওয়া, স্পষ্ট মনে পড়ে আজো। হ্যারিকেনের নরম
আলোয় সামনে বই খুলে বসা আমি, একটু দূরে তুমি। আমার দায়িত্বে তোমাকে
রেখে মা রান্নাঘরে। আমি তখন সত্যিই নাইন আর তুমি তখন ... তারপর এক শুভদিনে তোমার হাতে
সমর্পিত আমি । জীবন-কথা তো বলতে বসিনি তবু কিছু কথা থেকে যায়। ক্যালেন্ডারের পাতা
পাল্টে যায়,
জীবনও যে ! হঠাৎ করে হারিয়ে গেলাম তোমাদের থেকে, তারপর না তোমার
, না আমার
বাবা মায়ের ,
গ্ৰহণযোগ্য থাকলাম না কারো কাছেই।
কেন এমনটা হলো ! এ "কেন"-র
উত্তর চাইবো কার কাছে!
"এক সূত্রের দিয়ে, দেব, গেঁথে
রাখো এক সাথে…
টুটে না ছিঁড়ে না যেন, থাকে
যেন ওই হাতে।
তোমার শিশির দিয়ে রাখো তারে বাঁচাইয়ে…
কী জানি শুকায় পাছে সংসার রৌদ্রের মাঝ।"
এই তো জেনেছিলাম, এই তো
মেনে ছিলাম।
দুটি অন্তরের শপথ-বাক্য বাহ্যিক কলরবে হারিয়েই গেল তবে !
বেশ ! ছিন্ন হোক্ সম্পর্ক। আদৌ
কি যুক্ত ছিলাম! ঝরা পাতার মতন ঠিকানা বিহীন জীবনেও মনের মাঝে একফালি বারান্দা সযত্নে বয়ে বেড়াতাম।
যেখানে দাঁড়িয়ে আমার ভালোবাসাকে জড়িয়ে ধরতাম, আদর করতাম; তারপর
আমার উজাড় করা যতো কথা, যতো ব্যথা পত্রালাপে ছড়িয়ে দিতাম। পড়ো
না যে আমি জানতাম, তবুও। হঠাৎ আসা চৈতালি ঝড়ো হাওয়ায় সেই ঠিকানাও হারিয়ে গেল।
শুভময়, ভালোথেকো, যেখানেই
থাকো ভালো থেকো।
ইতি,ভালোবাসান্তে
মাধুরী
৮। ৪। ৭৪
পুনশ্চ: ভালো রাখবো নিজেকেও। নতুন
করে খড়কুটো জোগাড় করে এনে আবার বাসা বাঁধবো আমি, নিজেকে ভালোবেসে
বেঁচে থাকবো, বাঁচবো নিজের আনন্দকে ভালোবেসে। বাঁচিয়ে রাখবো আমার "ভালো
বাসা"- কে। জীবন তো ! পাল্টে যাবেই। বসন্তের সমাগমে নতুনকে খুঁজে পেতে বেরিয়ে
পড়লাম আমিও।
ঠিকানা বিহীন এ চিঠি ঝোড়ো হাওয়ায়
ঘুরে বেড়াক এ ডাকঘর থেকে ও ডাকঘরে, এ ঘর থেকে...
| নববর্ষ সংখ্যা-১৪৩০ | aleekpata.com | 31 st Edition |
| ALEEK PATA- Your Expressive World |Online Magazine |
| Editor: Swarup Chakraborty | Publisher: Debasree Chakraborty |
| Bengali New Year 2023 | April-July 23| Sixth Year First Issue |
| © All Rights Reserved by The Editor and The Publisher |
| a DISHA-The Dreamer Initiative |
No comments:
Post a Comment
Please put your comment here about this post