বড় গল্প
সুহৃদ সংশপ্তক
বীরেন্দ্র নাথ মহাপাত্র
Image Source : Internet |
আমি এবং বলাই দাস বাবু দুজনেই একেই
বিদ্যালয়ে সহ শিক্ষকের কাজ করতাম । ওঁর সঙ্গে আমার খুব নিবিড় সম্পর্ক ছিল । যেন
একেবারে হরিহর আত্মা ।
ওঁর স্ত্রী
এবং আমার স্ত্রী দুজনেই থাইরয়েডে আক্রান্ত হয়ে একেবারে পাগলা হয়ে গিয়েছিল, তারপর প্রথমে আমার স্ত্রীকে মৌড়িগ্রামে ওয়েস্ট ব্যাঙ্ক এ
নিয়ে গিয়ে ভাল করে নিয়ে এসেছিলাম । পরে ওনার স্ত্রীকে ওই একই জায়গায় নিয়ে গিয়ে ভাল করে নিয়ে
এসেছিলেন ।
তবে আমার দুই মেয়ে এবং এক ছেলে, আর ওঁর দুই ছেলে এক মেয়ে । তবে ওঁর বড় ছেলে সায়ন এবং ছোট ছেলে
নয়ন দুজনেই পড়াশুনায় ভালো । সায়নের পরে মেয়ে সংগীতাও পড়াশুনায় ভাল ।
আমরা দুজনেই একই দিনে বিদ্যালয় থেকে
অবসর নিয়েছিলাম ।
উনি আমার বাড়ি অনেকবার এসেছেন ; কিন্তু আমার
অবসরের আগে পর্যন্ত ওঁর বাড়ি কোন দিনই আমার যাওয়া হয়নি । তবে ওঁর স্ত্রীকে উভয়েই ওয়েস্ট ব্যাঙ্ক
দেখানোর সময় আমি দেখেছিলাম । উনি যতদিন চাকুরী করতেন বাড়ি থেকে যাতায়াত করতেন ।
ওঁর বাড়ি
চাঁদড়া গ্রামে । চাঁদড়া
থেকে বরাবরই বিদ্যালয়ে আসতেন । তবে একমাত্র আমাকেই বলেছিলেন যে, তাঁর
বড়ছেলে কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থ বিজ্ঞানে এম. এস.সি. ফার্স্ট ক্লাস
ফার্স্ট হওয়ায় কলকাতার এক সংস্থা ওকে লন্ডনে গবেষণা করানোর জন্য পাঠিয়েছিল । তবে ওঁর
অবসর গ্রহণ করার আট বছর আগে সায়ন একদিন চিঠি লিখে জানিয়ে ছিল যে, সে আর দেশে ফিরবে না, ওখানেই
এক মেয়েকে বিয়ে করে ওখানের এক নামী দামী কোম্পানীতে চাকুরী পেয়ে গেছে । তার জন্য
আর চিন্তা করতে বারণ
করেছিল ।
বড় ছেলের এই সংবাদ পেয়ে ওঁর মা
কাদম্বিনী সেই থেকে মনমরা হয়ে গেছে । মায়ের মনের যাতনাটা সহজে টের পাওয়া যায় ; কিন্তু বাবার মনের যন্ত্রণাটা সহজে কোনদিন কেউ টের পায় না । যেমন বলাই
বাবুর ব্যাপারে ঠিক একই অবস্থা ছিল । উনি কোনদিনের জন্য বড়ছেলের স্বার্থপরতা নিয়ে বিদ্যালয়ে কোন
শিক্ষকের কাছে এমনকি আমার কাছে ও বহিঃ প্রকাশ করেননি । তবে ছোটছেলে বড় ছেলের মত স্বার্থপর
এখনো হয়নি ;
তবে সে তার
দাদার মতো উচ্চশিক্ষা লাভ না করলেও মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক স্টার নিয়ে
পাশ করে ইন্টারভিউ দিয়ে নিজের চাকুরী নিজেই জোগাড় করে নিয়েছে । বলাইবাবুর
অবসরের চার বছর আগে । সে
খড়গপুর পোস্ট অফিস এ চাকুরী করে । সেও তার বাবার মতো প্রতিদিন বাড়ি থেকে অফিস যায় । অবসরের ঠিক
দু'বছর আগে ডিসেম্বর মাসে বড়দিনের আগের দিন বলাইবাবু
মেদিনীপুর বাসস্ট্যান্ডে বাস ধরার জন্য তাড়াতাড়ি হাঁটছিলেন, তখন বার্জ টাউনের গলির মুখে একটি পুরুষ কুকুর বাচ্চা তাঁর
ডান পায়ের জুতোর তলায়, হঠাৎ এসে যাওয়ায় বাচ্চাটা চীৎকার করে
ওঠে, তখন তিনি একটু দাঁড়িয়ে দেখলেন যে
বাচ্চাটা
খোঁড়াচ্ছে, তবুও বাচ্চাটা খোঁড়াতে খোঁড়াতে আবার তাঁর দিকে আসছে ।তখন সেই
বাচ্চাটির প্রতি মায়া পড়ে গেল । তখন সেই কুকুর বাচ্চাটিকে মাটি থেকে তুলে ক্ষুদিরাম
স্ট্যাচুর কাছে এসে ওষুধ দোকান থেকে জিজ্ঞাসা করে ওষুধ কিনে নিয়ে গেলেন । তারপর
বাসস্ট্যান্ড এর দিকে বাচ্চাটিকে কোলে নিয়ে চললেন । বাসস্ট্যান্ড -এ এসে ধেড়ুয়া
মেদিনীপুর বাসে উঠলেন ।
বলাইবাবুর হাতে কুকুর ছানা দেখে অনেকে রসিকতা করলেন, আবার
কেউ কেউ বললেন যে কুকুর খুবই প্রভুভক্ত প্রাণী, ওদের মতো বিশ্বস্ত বন্ধু দুনিয়ায়খুঁজে পাওয়া যায় না । তিনি
দেখলেন যে, ছানাটা বেশ তাঁর কোলে
বসে আছে, কোন কান্নাকাটি করছে না এবং উৎপাত ও
করছে না ।
বাস ছাড়তে দেরী দেখে বাসে নিজের সিটে একটা রুমাল রেখে একটা চা দোকানে এসে পয়সা
দিয়ে একটু দুধ কিনলেন, তারপর দোকানের একটা বড় মাটির খুরিতে
দুধ দিতেই বাচ্চাটা সবটাই খেয়ে নিল । তারপর তাকে নিয়ে বাসে এসে বসলেন । বাসের সময় হতেই বাস স্টার্ট দিল ; কিন্তু বাচ্চাটার কোন ভয় লাগল না । সে দিব্যি তার প্রভুর কোলে বসে
প্রভুর বাড়ির কাছে কোলে থাকা অবস্থায় নামল । তারপর সেই কুকুর বাচ্চাটি দেখে তার মেয়ে খুব আনন্দ পেল । তবে তাঁর
স্ত্রী একটু রাগ দেখাল বটে,
পরে কুকুরবাচ্চার কান্ড
কারখানা দেখে রাগটা উবে গেল ।
বলাইবাবুর
মেয়ে গোপ কলেজে বাংলা অনার্স নিয়ে পড়ে । পরদিন অর্থাৎ পঁচিশে ডিসেম্বর থেকে দোসরা জানুয়ারী পর্যন্ত
ছুটি পেয়ে বলাইবাবু ওই কুকুরবাচ্চটিকে এক ভেটেরিনারি ডাক্তারকে ফিস দিয়ে দেখিয়ে
তার সমস্ত রকমের খাওয়াদাওয়া এবং ওষুধপত্র সব কিনে নিয়ে সারাদিন ওকে নিয়ে সেই কয়দিন
ব্যস্ত রইলেন ।
দোসরা জানুয়ারী রবিবার থাকার জন্য সে বছর তেসরা জানুয়ারী বিদ্যালয় খুলে ছিল । সবচেয়ে
বলাইবাবুর আশ্চর্য লাগল যে সেই ছুটির কয়দিনে বাচ্চাটি বলাইবাবুর কাছ ছাড়া কোনমতে
হল না ।
বলাইবাবুকে না দেখতে পেলে চীৎকার করে ঘর ফাটিয়ে দেয় । বলাইবাবুর বাড়ির সবাই অর্থাৎ ওঁর
স্ত্রী, মেয়ে এবং ছোট ছেলে এই ছোট কুকুর
বাচ্চাটার কান্ড কারখানা দেখে বিস্ময়বোধ করতে লাগল । সবাইকে সবচেয়ে অবাক করল, যেদিন ওঁর বিদ্যালয় খুলল সেদিন বলাইবাবু যেই বাড়ি থেকে
বিদ্যালয় আসবার জন্য চাঁদড়া বাসস্ট্যান্ডে এলেন, সেই
ছানাটা তখন শব্দ করে ওঁর সঙ্গে এল । সে কোন মতে বলাইবাবুকে ছেড়ে থাকতে চাইল না । তাই বাধ্য
হয়ে বলাইবাবু ওকে নিয়ে বিদ্যালয়ে এলেন । বিদ্যালয়ে সব শিক্ষক বলাইবাবুর সঙ্গে বাচ্চা কুকুরটিকে
দেখে অবাক হয়ে গেলেন ।
তখন বলাইবাবু এই বাচ্চা কুকুরের সব ঘটনা অফিস রুম এ বললেন, বলাইবাবু ক্লাস করতে
গেলে ওঁর সঙ্গে গিয়ে ওঁর চেয়ারের নীচে চুপটি করে বসে থাকত । এইভাবে একমাস করার পর তাঁর ছোট ছেলে তার বাবার
বিশেষ করে ওই কুকুর বাচ্চাটির জন্য একটা ট্যাক্সি লোন করে কিনে দিল । ওই
ট্যাক্সি করে প্রতিদিন বলাইবাবু অবসর দিন পর্যন্ত তাঁর ভক্তকে নিয়ে আসতেন এবং
যেতেন ।
বলাইবাবু অবসরের আগে মেয়েকে বিয়ে দিবেন বলে মনস্থির করেছিলেন । তাই তিনি চারিদিকে
ঘটকের সঙ্গে যোগাযোগ করলেন । অবশেষে অবসরের ঠিক একবছর আগে বৈশাখ মাসে মেয়ের বিবাহ স্থির
করে ফেললেন ।
তখন মেয়ে বি.এ. পড়া সম্পূর্ণ করে ফেলেছে ।
সবং থানার শিতলদা গ্রামে সুবোধ রায়ের
একমাত্র ছেলে নির্বেদ রায়ের সঙ্গে মেয়ের বিয়ের কথাবার্তা পাকা করলেন । ২৬ শে
বৈশাখ সোমবার ছেলের বাড়িতে দিন স্থির
করে বলাইবাবু এবং তার ছোট
ছেলে বাড়ি ফিরে এলেন ।
ছেলে যে কোলকাতার এক নামী দামী
কোম্পানীর বড় পদে চাকুরী করে সেটা ওঁরা একেবারে নিশ্চিত হয়ে গেলেন । যৌতুক বাবদ
পাঁচভরি সোনা,ছেলেকে একটা দামী মোটরসাইকেল, নগদ পঁচিশ হাজার টাকা এবং দান সামগ্রী হয়ে উভয়পক্ষ ঘটকের
সামনে একটা কাগজ সই করলেন ।
এদিকে
বলাইবাবু বিদ্যালয়কে মেয়ের বিবাহের কথা জানালেন না ; কিন্তু
আমাকে তাঁর ঘনিষ্ঠ সহযোগী এবং বিপদের বন্ধু হিসাবে নিমন্ত্রণ কার্ড দেননি বটে ; তবে তাঁর ভালবাসার অন্তরঙ্গ বন্ধু হিসাবে আহ্বান জানিয়ে
গিয়েছিলেন ; কিন্তু যেদিন বিবাহ সেদিন আমার মাকে
হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছিল এবং খুব সংকটজনক অবস্থা ছিল, সেই
জন্য সঙ্গে সঙ্গে তাঁর মোবাইলে ফোন করে জানিয়ে দিয়েছিলাম । তবে ওঁর মুখে শুনেছিলাম যে মেয়ের বিয়েটা মেয়ের
বিয়েটা খুবই আনন্দের মধ্যে এবং জাঁকজমক সহকারে হয়েছিল । তবে একটা কথা লিখতে ভুলে গেছি, ওঁর মেয়ের নগদ পঁচিশ হাজার টাকাটা ধার স্বরূপ নিয়েছিলেন, তবে তিনি এই ধারের টাকা ব্যাঙ্কের সুদ হিসাবে দিতে রাজী
হয়েছিলেন ; কিন্তু আমি ওঁকে বললাম, …তাহলে বন্ধু কি করে হলাম ! তোমার দুর্দিনে একটু সাহায্যের
হাত বাড়ানোর অধিকারটা আমাকে একবারের মতো দাও ।
তখন অবশ্য
আর একটি কথা ও বললেন না ।
নবদম্পতি ওখানে অর্থাৎ চাঁদড়ায় বাসর
ঘরে সারারাত হৈ -হুল্লোড় করে আত্মীয়বর্গরা সারারাত মাতিয়ে রেখেছিল । তারপর দিন
বিদায় কালে বড়দা সায়নের জন্য সঙ্গীতা কনে বেশে তার বাবা, মা, ভাইয়ের কাছে সবশেষে পিকু অর্থাৎ বলাইবাবুর নিত্য সঙ্গীর
কাছে ডুকরে কাঁদতে শুরু করল ।
কাঁদতে
কাঁদতে বলেছিল, ... জান বাবা, আমি
নিজে দাদাকে আমার বিয়েতে একবার আসবার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম, তাতে সে ফোনে বিশেষ কাজের জন্য আসতে পারবে না বলে জানিয়েছিল, দাদার কি একবার এই বোনের কথা মনে পড়ল না, সে কি এত স্বার্থপর হয়ে গেল ?
বলেই সে আরও জোরে কাঁদতে লাগল
।
তখন কোন প্রকার প্রশিক্ষণ ছাড়াই পিকু যে ঘটনাটা ঘটিয়েছিল, সেই
ঘটনা বলাইবাবুর মেয়ের বিয়ে বাড়িতে উপস্থিত আত্মীয়বর্গ সবিস্ময়ে ও সমম্ভ্রমে
প্রত্যক্ষ করলেন ।
সে হঠাৎ
বলাইবাবুর চেয়ারে ওঠে পা দুটোকে দেওয়ালের উপর তুলে দাঁত দিয়ে আলনায় রাখা জামাকে
বের করে এনে সঙ্গীতার বুকের কাছে দু ' হাত জোড় করে
রুমাল মুখে নিয়ে তার দু 'চোখ মুছিয়ে
দিল ।
আবার দৌড়ে গিয়ে সঙ্গীতার ঘরের উপরে টেবিলের উপরে তার বড়দার ফটোটা ওই একইভাবে
নামিয়ে এসে সঙ্গীতার পায়ের কাছে ফেলে দিল এবং কনের সাজের কাপড় টেনে ডান পা দিয়ে তার দাদার
ফটোটাকে ভেঙে দিতে বলল ।
যখন সঙ্গীতা
কোন মতে করল না,তখন সে নিজে মুখ দিয়ে ধরে তিনবার আছড়িয়ে ভেঙে
তার ফটোটি বের করে দৌড়ে নিয়ে জ্বলন্ত উনানে ফেলে দিল ।
তারপর বর ও কনে যে শক্ত বাঁধনের
কাপড়কে ধরে ধরে এনে তাদের ট্যাক্সিতে তুলে দিল ; এবং
নিজে আওয়াজ করে তাদের বিদায় সম্বর্ধনা জানাল ।তারপর বলাইবাবুর ট্যাক্সিতে নয়ন
দাদাবাবুকে টেনে ঢুকিয়ে দিয়ে নিজেও ওই গাড়িতে গিয়ে বসল ।
তারপর সবার চোখের জলে বিদায় নিয়ে বর
কনে বলাইবাবুর ঘর থেকে বেরিয়ে গেল । ওরা সবাই যথাসময়ে শিতলদা গ্রামে পৌঁছল । ওখানের
রীতিমত ওই দিনই দু পুরে বৌভাত অনুষ্ঠান ছিল, বৌভাত
অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পর পিকু সঙ্গীতাকে বুঝিয়ে দিল যে সে এবং ছোড়দা এবার চলে যাবে । পিকু এবং
নয়ন শিতলদা থেকে বেরিয়ে চলে এল ।
নবদম্পতিদের ওই দিন কালরাত্রি । পরেরদিন
ওখানে সব আত্মীয়বর্গরা বিশেষ করে মেয়েরা বলাইবাবুর পাঠানো ফুলশয্যার তত্ত্ব বর এবং
কনেকে সুন্দর ভাবে সাজিয়ে ফুল,ধুপ এবং
নানারকম আতর দিয়ে সেদিনের মতো সাজানো ইন্দ্র ও ইন্দ্রানীকে ওই কল্পনার রাতটাকে
সম্পূর্ণ রূপে ভোগ করার সুযোগ করে দিয়ে সবাই সেই স্বর্গের কক্ষ ত্যাগ করে চলে এল । একমাত্র
আমাকেই বলাইবাবু সম্পূর্ণভাবে ওই বিবাহের ঘটনাগুলি পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে আলাদাভাবে
ডেকে বলেছিলেন ।
তারপর
সঙ্গীতা এবং নির্বেদ তিনরাত্রির জন্য বলাইবাবুর বাড়িতে ফেরত জামাই তিথি কাটাতে এল । ফেরত জামাই
পর্ব শেষ হওয়ার পর তারা আবার শিতলদা ফিরে গেল ।
এদিকে
বলাইবাবু এবং তার নিত্য সঙ্গী যেমন ট্যাক্সিতে করে বিদ্যালয়ে আসত সেই রকম আসা
যাওয়া করতে লাগলেন ।
এইভাবে তিনমাস কাল চলে যাওয়ার পর সঙ্গীতা এবং জামাই ভাদ্র কাটাতে চাঁদড়ার বাড়িতে
এল ।
যেদিন এলো
সেদিন মেদিনীপুর বাসস্ট্যান্ড এ তার বাবা এবং পিকুর সঙ্গী হয়ে চাঁদড়া বাড়িতে এল । তবে সেদিন
একটু সন্ধে হয়ে গিয়েছিল ।
তবুও সেদিন বাড়িতে যেমন করে তাঁর স্ত্রীকে বাজার থেকে ভাল খাবার এবং মাংস আনিয়ে
রাখতে বলেছিলেন ।রাতে
মাংস এবং নানান তরিতরকারী সবাই শুতে গেল । জামাই ও মেয়ে বিছানায় শুতে যাওয়ার আগে পিকু একটা সবচেয়ে
আশ্চর্যজনক ঘটনা এবং সঙ্গীতার ভিতরে অন্তরের জ্বালার বহিঃ প্রকাশ ঘটিয়ে ফেলল, এই ঘটনাটা বলাইবাবু নিজ চোখে প্রত্যক্ষ করলেন । পিকু
সঙ্গীতার সর্বাঙ্গ শরীর শুঁকতে শুরু করলো । সঙ্গীতা যেই তাকে আদর করল, সেটা
সে সাদরে গ্রহণ করলেও যখন মেয়ে জামাইকে সঙ্গীতার ঘরে বিছানাতে শুতে যেতে সঙ্গীতার
মা বললেন, তখন পিকু সঙ্গীতার কাপড়টারে টানতে
টানতে তার মায়ের ঘরের দিকে নিয়ে চলে এল । তখন পিকুর ঘটনাটা কেউ না বুঝতে না পারলেও সঙ্গীতা পুরোপুরি
কারণটা জানতে পারল ।
অবশেষে
পিকুকে একটু আদর করে তার কানের কাছে আস্তে করে যে কথাটি বলল, সেটা কিন্তু বলাইবাবু শুনতে পেয়ে গেল । তারপর সঙ্গীতা নির্বেদের ঘরে চলে এল
।
তখন আর পিকু আর একটু ও শব্দ করল না । তবে বলাই বাবু মেয়ের ভিতরের যন্ত্রণাটা অর্থাৎ ও দাম্পত্য
জীবনের পথে কত বড় মারাত্মক সেটা সে সারারাত ধরে বিছানায় ছটফট করেও এর আসল কিনারা
সঠিকভাবে নির্বাচন করতে পারলেন না ।
সে যাই হোক বলাই বাবু মেয়ের সমস্ত
ঘটনা তার মাকে দিয়ে জানবার জন্য পরেরদিন বিদ্যালয়ে গেলেন না । জামাই সেদিনের দুপুরের খাবার খেয়ে
সোজা কোলকাতা চাকুরীতে যোগ দিবে বলে ওখান থেকে বাসে মেদিনীপুর স্টেশনে পরে
মেদিনীপুর থেকে ট্রেনে হাওড়া চলে গেল ।
জামাই চলে
যাওয়ার পর পিকুর গত রাতের ঘটনাটা বলাইবাবুর স্ত্রী অর্থাৎ কাদম্বিনীদেবীকে মেয়ের
কাছে প্রকৃত ঘটনা জানাবার জন্য লাগলেন । প্রথমে সঙ্গীতা ঘটনার প্রকাশ না স্বীকার করলে ও পরে হাউ
হাউ করে কেঁদে উঠল ।
কাঁদতে কাঁদতে সঙ্গীতা বলেই ফেলল, ... তিনমাস সে স্বামীর বিছানায় আশ্রয়
পেলেও তার স্বামী সহবাসে অপারগ, তাঁর স্বামী
নিজেই স্বীকার করে নিয়েছে যে সে সহবাসে অক্ষম, তবে
তার স্বামী এবং স্ত্রীর মধ্যে ভালোবাসা খুব নিবিড় ; কিন্তু
তার স্বামী তাকে শুধু ভালোবাসায় ভরিয়ে দিতে পারে, দাম্পত্য
জীবনে যে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে যৌবনের বাসনা কামনায় এক নতুন জীবনের অধ্যায় শুরু
হবে এবং তাকে নিয়ে উভয়ের মধ্যে পিতা ও মাতার অধ্যায় শুরু হবে সে আশা নাই ।
এই কথা
শোনার পর কাদম্বিনী কাঁদতে কাঁদতে বলাই কাছে হাজির হল । বলাইবাবু সব শোনার পরই সে তৎক্ষণাৎ
ঘটকের বাড়ি অর্থ্যাৎ খড়্গপুররের সালুয়া গ্রামে হাজির হলেন,তবে
ট্যাক্সিতে পিকু গেল, সে কোন মতে গাড়ি থেকে নামল না । যখন তারা
সেখানে গেলেন তখন হরিনারায়ণ বাবুর কাছে চার - পাঁচ জন লোক ঠিকুজী দিতে এসেছে এবং
দক্ষিণা ও অগ্রিম দিতে হচ্ছে । পিকু প্রথমেই গাড়ি থেকে ঝাঁপ মেরে নেমেই হরিনারায়নবাবুর
কাছে গিয়ে তার জামা এবং কাপড় সব টেনে ছিঁড়ে দিল এবং তার কাজের সমস্ত ঠিকুজী মুখের
ভিতর পুরে সব খেয়ে নিল ।
হরিনারায়ণবাবু এই কুকুরের ঘটনা থেকে অবাক হয়ে গেল ।
পরে
বলাইবাবু বললেন, -আপনাকে আমি জানতাম ভদ্রলোক ; কিন্তু আপনি যে জাত ঘটক সেই ঘটনা আমি আজ স্বচক্ষে দেখলাম, এরকমভাবে জেনে শুনে কত হাজার হাজার মেয়ের সর্বনাশ করেছেন ?
প্রথমে হরিনারায়ণবাবু স্বীকার না
করলেও পিকুর ভয়ে সব স্বীকার করে নিলেন এবং বললেন যে পাত্রপক্ষ অর্থাৎ পাত্রের বাবা
তার ছেলের ঘটনাটা সম্পূর্ণ চাপা রাখবার জন্য দশ হাজার টাকা দক্ষিণা দিয়েছিলেন ।
বলাইবাবু এই
ঘটনা শোনার সঙ্গে সঙ্গে সেইখানে অজ্ঞান হয়ে গেলেন ।
তখন পিকু
নিজে এক লাফে দৌড়ে গিয়ে হরিনারায়নবাবুর ঘরে একটা গামছা খাটের উপরে পড়ে ছিল, সেই গামছাকে মুখে নিয়ে ওনার পুকুর থেকে ডুবিয়ে নিয়ে
বলাইবাবুর সামনে হাজির হল এবং সেই ভিজে গামছা ওনার সারা মাথায় এবং কপালে মুখ দিয়ে
মোটামুটি জড়িয়ে দিয়ে আবার হরিনারায়নবাবুর রান্নাশালে একটা হাতল দেওয়া প্লাসটিকের
বড় মগ ছিল, তাতে জল ভর্তি ছিল, সেই মগটাকে মুখের দাঁত দিয়ে শক্ত করে ধরে তার মনিবের কাছে
নিয়ে এল ।এসেই
সে সামনে চায়ের গ্লাস পড়েছিল তাতে একটু একটু মগ থেকে বসে অর্ধেক করে জল সামনের
দুটো পা জড়ো করে মনিবের চোখে ও মুখে ঢালতে লাগল, তবুও
কারো সাহায্য নিল না ।
ধীরে ধীরে বলাইবাবুর জ্ঞান ফিরে এল ।
জ্ঞান ফিরতেই পিকু
বলাইবাবুর কাপড়কে টেনে নিয়ে গিয়ে এবং হরিনারায়নবাবুর কাপড়কে টেনে এনে দুজনকে সামনে
বসিয়ে একটা আওয়াজ তুলল ।
এতে
বলাইবাবু বুঝতে পারল যে তার পিকু আজই দিদির ফয়শালা করে নিতে সে বলছে ।
সেই মতো হরিনারায়নবাবুর সঙ্গে কথাও
হয়ে গেল ।
তবে হরিনারায়ণবাবু ছয়মাস সময় চেয়ে নিলেন ; কারণ
আগে ছেলেমেয়ের মতামত নিতে হবে । তারপর উকিল ধরে আদালতের কাছে উভয়ে স্বীকারোক্তি দিলেই
ডিভোর্স হবে ।
তবে বলাইবাবুর দেওয়া জিনিসপত্র সব ফেরত দিতে হবে, ওই
কাগজের উপর ভিত্তি করে ।
যদি বরপক্ষ অর্থাৎ সুবোধবাবু দিতে রাজী না হন, তাহলে
আবার অন্য মামলা করে টাকা আদায় করে দিবেন বলে কথা দিলেন ।
তবে হরিনারায়ণবাবু, উপস্থিত দায়গ্রস্ত পিতারা এবং হরিনারায়নবাবুর স্ত্রী
নারায়ণী এই একটা সাধারণ জাতের কুকুরের কান্ডকারখানা এবং তার বুদ্ধিকে বলাইবাবুকে
না বলে থাকতে পারল না ।
শেষে নারায়ণী পিকুকে ভালবেসে ওর জন্য
খাবার এনে দিলে ও বাবু তার মাথায় হাত দিয়ে খেতে বললেও স্পর্শ করল না ।
তারপর যে কাণ্ডটা সে ঘটিয়ে ফেলল তা
অতি বিস্ময়কর । সে
সামান্য শব্দ করে প্লেটটার ঘ্রাণ নিল তারপর বাবুর দিকে তাকিয়ে নেওয়ার পর খাবার
গুলি আস্তে আস্তে খেল । বলাইবাবু, হরিনারায়ণবাবু, উপস্থিত লোকেরা এবং হরিনারায়নবাবুর স্ত্রী নারায়ণী, তারা সবাই বুঝতে পারল ,
যে ওর খাবারে বিষ মিশিয়ে দেওয়া আছে
কিনা, সেটা সঠিক পরীক্ষা করে সিদ্ধান্ত
নেওয়ার পর সেই খাবারগুলি তবেই খেল ।
বলাইবাবুর নিত্যসঙ্গীকে সবাই গায়ে
হাত বুলিয়ে আদর করল এবং বলল, --তুমি বাবা
দীর্ঘজীবী হয়ে তোমার প্রভুর সুদিনে ও দুর্দিনে এইভাবে অতন্দ্র প্রহরী হয়ে সেবা করে
যাও।
তারপর পিকু তাঁদেরকে শব্দ করে এবং
সামনের পা দুটোকে জোর করে নমস্কারের ভঙ্গী দেখিয়ে ট্যাক্সিতে উঠে বসল ।
তারপর বলাইবাবু ট্যাক্সি চালিয়ে বাড়ি
অভিমুখে রওনা দিলেন ।
ওরা যখন বাড়িতে পৌঁছলেন তখন অনেক রাত্রি হয়ে গেছে । সেদিন সবাই রাতের খাবার খেয়ে দিয়ে
যে যার বিছানায় শুতে গেল ।
আগে পিকুর সবার ঘটনা বলা হয়নি । পিকু বলাই
বাবুর ঘরে বলাইবাবুর খাটের নীচে পিকুর বিছানা করে দিতে হয় । তারপর মশারি টাঙিয়ে দিতে হয়, আবার শীতের দিনে ওকে একটা কম্বল দিতে হয় । ওখানে
ছোটবেলা থেকে আসা অবধি কোনদিন বাড়িতে নোংরা জিনিস খায় না ।
পরেরদিন ও
সকালে কোন আলোচনা হল না
। বাবা,ছেলে যথাক্রমে বিদ্যালয়ে,অফিসে
এবং বলাইবাবুর সঙ্গী ওনার সঙ্গে গেল । সেদিন অবশ্য আমি বলাইবাবুকে বিদ্যালয়ে যেতেই কমনরুমে সব
শিক্ষক এবং শিক্ষয়িত্রীদের সামনে গতকাল বিদ্যালয়ে না আসার কারণ জিজ্ঞাসা করছিলাম । তখন তিনি
কোনদিন আমার সঙ্গে কোন রুঢ় ব্যাবহার করেননি,যেটা
সেদিন করে ফেললেন ।
তিনি রাগান্বিত স্বরে বললেন, -আপনার কাজ না থাকতে পারে, আমার
তো বাড়িতে কোন কাজ থাকতে নেই বুঝি, আবার অবসর
হতে পাঁচমাস বাকি আছে, বিদ্যালয়ে প্রতিদিন হাজির হয়ে পাওনা
চুক্তিগুলো তো নেওয়াই হল না, আপনার
বিদ্যালয়কে তো বাড়ি-ঘর করে ফেলেছেন, তা না হলে
আপনারও পাঁচমাস আয়ু আছে, পরে তো ওই
সিংহাসন খালি পড়ে থাকবে, সারা কর্ম
জীবনটা তো বিদ্যালয় বিদ্যালয় করে মরলেন, এর যথাযথ
মর্যাদা কেউ কখনও দিয়েছে না দিবে, ফেলে দেওয়া
জঞ্জালকে কেউ আবার বাড়িতে ফিরিয়ে আনে, তাকে
বিসর্জনে যেতেই হয়, অতএব এখনও ওর প্রতি মায়া কেন বাড়িয়ে
চলছেন ?
তখন আমি
যতটা মর্মাহত না হলাম, তার চেয়ে কমনরুমে সমস্ত শিক্ষক ও
শিক্ষয়িত্রীরা বলাইবাবুর রূঢ় ব্যবহারে অবাক হলেন ।কারণ কোনদিনই এরকম ব্যবহার উনি করেন
না ।
তাই ও নিয়ে
আর কেউ কথা না বাড়িয়ে প্রার্থনার বেল বাজতেই সবই ছাত্রছাত্রীদের সামনে হাজির হয়ে
জাতীয় সঙ্গীত গাইলাম, পরে ক্লাসের বেল বাজতেই সবাই যে যার
ক্লাসে চলে গেলাম ।
সেদিন
টিফিনের সময় বলাইবাবুর সঙ্গে কারও কোন কথা তেমন হল না । বলাইবাবু টিফিন এর সময় নিজে বাইরে
গিয়ে পিকুর জন্য নাস্তা দু'প্যাকেট এবং
বিদ্যালয়ে এসে নিজে দুটো বিস্কুট আর চা এবং পিকুকে প্রতিদিনের মতো নিজের ব্যাগ
থেকে একটি বাটি বের করে চা নিয়ে ওকে খেতে দিলেন ।
তারপর টিফিন ঘন্টা শেষ হওয়ার পরেই
ওঁর সেদিন দুটো ক্লাস ছিল, তারপর হেড
মিস্ট্রেস কে বলে ট্যাক্সিতে বাড়ি যাবেন বলে গাড়িতে একটু সোজা দিয়ে বিদ্যালয়ের
রাস্তা আড়াল হতেই সোজা আমার বাড়ি চলে এলেন ।
আমি যথারীতি
বিদ্যালয় ছুটি হওয়ার পর একটু বাইরে কাজ সেরে বাড়ি ফিরে দেখি বলাইবাবু আমার স্ত্রী
অঞ্জুর সঙ্গে চা খেতে খেতে জমিয়ে গল্প করছেন । আর ওর ভক্তও চা এবং বিস্কুট খাচ্ছে । যেই পিকু
আমাকে গেট খুলতে দেখল এবং সাইকেল ঘরে রাখলাম, তারপর
একটু গম্ভীর গলায় স্ত্রীকে বললাম, - জান আজকে
খুব খিদে পেয়েছে, ওঁর সঙ্গে গল্প বাদ দিয়ে আমাকে কিছু
খেতে দিয়ে পরে গিয়ে সারাদিন গল্প করো।
তখন পিকু হঠাৎ আমার পা দুটিকে জড়িয়ে
ধরল এবং তার মনিবের রূঢ় ব্যবহারের জন্য পিছনের পা দুটিকে নীচে বসিয়ে সামনের দুটো
পা দিয়ে নমস্কারের ভঙ্গীতে ক্ষমা ভিক্ষা চেয়ে নিল ।
অবলা পশু
তার প্রভুর রূঢ় কথা বলার জন্য ক্ষমা ভিক্ষার আবেদনে আমি সাড়া না দিয়ে পারলাম না । সে কথা না
বলতে পারলে ও সব কথাবার্তা বোঝে । তাই তার এই অনুভূতিকে সাধুবাদ না জানিয়ে কেউ থাকতে পারবে
না ।
পরক্ষণে আমাকে এবং বলাইবাবুকে সে
মিল করানোর জন্য দুজনের কাপড় ধরে এক
জায়গায় জড়ো করল ।
তখন আমার
স্ত্রী অঞ্জু পিকু কেন এরকম করছে সে কথাটা আমাকে জিজ্ঞাসা করল ।
তখন আমি
বললাম, -ও সব বোঝে, আজকে
আমাদের দুজনের মধ্যে একটু মন কষাকষি হয়ে গেছে, তাই
ও আমাদের মধ্যে যাতে ভুল বুঝা বুঝির অবসান ঘটে, তারই
জন্য এরকম ব্যবহার করছে।
তখন আমার
স্ত্রী বলাইবাবুকে জোর করে টেনে নিয়ে আমার কাছে বসাল এবং আমরা দুজন দুজনে গলায়
জড়াজড়ি করে সমস্ত বিরোধ মিটিয়ে নিলাম । তারপর বলাইবাবু কেঁদে কেঁদে বলতে লাগলেন, -আমি আমার মেয়ের জীবনটা শেষ করে ফেলেছি, যাকে এত ধুমধাম করে জামাই করে আনলাম, সে দাম্পত্য জীবনে স্ত্রীকে কখনই তর মনের আশাপূরণ করতে
সক্ষম হবে না, তাই গতকাল বিদ্যালয়ে না গিয়ে ঘটকের
কাছে গিয়ে সমস্ত কথা বলার পর ঘটক ছয়মাস সময় নিয়েছেন, তাতে
ওদের ডিভোর্স করিয়ে তারপর ছেলের বাবার কাছে আমার দেওয়া জিনিস তিনি ফেরত দেওয়া
করাবেন, সেখানেও পিকুর অনুভূতিতে সমস্ত জিনিস
জানতে পারা এবং ঘটকের বাড়িতে অগ্রগামী হয়ে কাজটাকে সহজ করার সব দায়িত্ব ভার ওই
নিয়েছিল-।
আবার বললেন,-সব যদি ও সুরাহা হয় তবুও আমার এই সুন্দর মেয়েটা সারাজীবন
কিভাবে যে কাটাবে সেই চিন্তায় আমি গতকাল সারারাত ঘুমাতে পারিনি, তাই মন খুবই খারাপ থাকায় আপনার উপর যে রূঢ় ব্যবহার করেছি, তারজন্য আমি খুবই অনুতপ্ত।
বলাইবাবু এবার আস্তে আস্তে সব
ঘটনাগুলি বলতে আরম্ভ করলেন ।
তিনি বললেন যে পিকু এসব সমাধান এবং যোগসূত্রের মূল নায়ক, এই কথা বলে ঘটক হরিনারায়নবাবুর বাড়িতে পিকু যে ঘটনা ঘটিয়ে
ছিল সে কথাগুলি সব পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বলতে লাগলেন । সব কথা বলা শেষ হওয়ার পর বলাইবাবু
বাড়ি ফেরার জন্য আমার স্ত্রীর কাছে অনুমতি রাখলেন । তাতে আমার স্ত্রী আপত্তি করলেও আমি
কিন্তু ওর অর্থাৎ আমার স্ত্রীর কথায় সায় দিতে পারলাম না ।
তাই সে বাধ্য হয়ে বলাইবাবু বাড়ি
যাওয়ার ছাড়পত্র দিয়ে দিল । তখন বলাইবাবু পিকুকে গাড়ি চালিয়ে নিয়ে বাড়ি চলে এল ।
বলাইবাবু
যখন বাড়িতে এলেন তখন সন্ধে ৭.৩০ মিনিট । বলাইবাবু যখন বাড়িতে পৌঁছলেন তখন অবশ্য তাঁর ছোট ছেলে বাড়ি
চলে এসেছে ।
তাই স্ত্রী, ছোট
ছেলে এবং বিশেষত যাকে নিয়ে বলাইবাবু বেশি চিন্তা তাকে ডেকে নিজের কাছে নিয়ে সব কথা
একে একে বলতে আরম্ভ করলেন । মেয়ে সঙ্গীতা ডিভোর্সের কথা শুনে হাউ হাউ করে কাঁদতে শুরু
করে দিল ।
তাকে সান্ত্বনা বাক্য দিয়ে একটু সঠিক পথে এনে তিনি বললেন, -তোকে
এই ডিভোর্সের ব্যাপারটা মাথায় আগে আনতে হবে, তারপর
অন্য চিন্তাটা আমার হাতে ছেড়ে দে, তোর গায়ে
যাতে কোন কলঙ্ক না লাগে, সে দায়
দায়িত্ব সম্পূর্ণ আমার ; তাই প্রথমে
তোকে জামাইকে ফোনে খবর পাঠিয়ে দুজনে বসে এক সিদ্ধান্তে আসতেই হবে, তা না হলে আমি বেঁচে থাকতে তোর সারাজীবন এইভাবে অমানিশার
আকাশে নিমজ্জিত হবে, সেটা আমি কোনোমতে সহ্য করতে পারি না
বা পারব না।
সঙ্গীতা এবার নীরব হওয়ায় বলাইবাবু
মনে মনে বুঝতে পারলেন যে ধাক্কা আসছে, সেটাকে
সামলে উঠতে একটু কেন বেশ ভাল সময় দিতে হবেই ।
তাই আর এ বিষয়ে কোন কথা আর না বাড়িয়ে বা তিক্ততায় পরিণত না করে সবাই রাতের
খাবার খাওয়ার জন্য প্রস্তুত হলেন । যথাসময়ে খাওয়া শেষ হল । তারপর সবাই একসঙ্গে যে যার ঘরে শুতে
চলে গেল ।
দেখতে দেখতে বলাইবাবু এবং আমার
চাকুরী জীবনের বিদায় ক্ষণ উপস্থিত প্রায় এসে গেল । আর এদিকে সঙ্গীতা নির্বেদকে প্রায় কথাটা
জানিয়ে বসল ।
তাতে নির্বেদ সম্পূর্ণ মতামত প্রায় দিয়ে ফেলল । আর এদিকে দেড়মাস পর হরিনারায়নবাবু
ছুটির দিন অর্থাৎ রবিবার দেখে বলাইবাবুর বাড়িতে উপস্থিত হলেন তিনি রবিবার সকালের
দিকে এলে ও রবিবার সারাদিন এবং রাতে থেকে ডিভোর্সের জন্য সমস্ত রকম ব্যাবস্থা পাকা
করে পরের দিন সকালে তাঁর নিজের বাড়ি ফিরে গেলেন ।
ঘটক চলে
যাওয়ার ঠিক পনেরো দিনের মাথায় অধিক রাতে নির্বেদ বলাইবাবুর বাড়িতে এল । তখন ওঁদের
বাড়িতে সবাই খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে, তখন সে এসে
চুপিচুপি সংগীতাকে ডাকতে লাগল ।
তারপর নির্বেদ যে একটা ঘটনা সেই অধিক
রাতে ঘটিয়ে ফেলল, তা দেখে সবাই মর্মাহত তথা বিস্মিত
হয়ে পড়লেন । সে
সংগীতাকে ডেকে বলাইবাবুর বাড়ির আড়ালে নিয়ে গেল এবং শেষ ভালবাসার চিহ্ন হিসাবে এক
অতি মূল্যবান হীরের আংটি তার হাতে অর্থাৎ সঙ্গীতার হাতে পরিয়ে দিয়ে সেই রাতেই
বিদায় নেবার উপক্রম প্রায় নিয়েই ফেলেছিল এবং সবার সামনে সে বলেই ফেলল, -আমি আমার শারীরিক অক্ষমতার জন্য সংগীতাকে আমার জীবন থেকে
মুক্ত করে দিয়ে গেলাম এবং ডিভোর্সের পেপারে সই স্বাক্ষর করতে রাজি বলে মতামত
জানালাম।
অবশেষে বলাইবাবুর বিশেষ অনুরোধে সেই
রাতটা থাকল বটে, তবে সবার বিছানা ছাড়ার আগে একটা চিঠি
সে সংগীতাকে লিখে দিয়ে তার দেওয়া আলাদা বিছানার উপর রেখে চলে গেল ।
প্রিয়তমা,
প্রথমেই
তুমি আমার অন্তরের গভীর ভালবাসা গ্রহণ করিও । এই শেষবারের মতো ' প্রিয়তমা ' বলে সম্ভাষণ
করলাম । আর
হয়তো কোনদিনই দেখা হবে না । দেখা না করাই শ্রেয় আমি মনে করি । কারণ উভয়ের দুর্বলতায় পুনরায় নীড়
গড়ার স্বপ্নে বিভোর হয়ে যাবে । এ-নীড়ের কোন দাম নেই, কারণ
যে নীড়ের মধ্যে নবজাতকের জন্ম হবে না, তাকে
অঙ্কুরেই বিনষ্ঠ করা উচিত বলে আমি মনে করি । যে বিষয়ে আমার সম্পূর্ণ সায় আছে । আমার বাবা ও মা সবাই আমার অক্ষমতার
কথা তারা জানত, তবুও সব জেনে ও ওরা যে পাপকর্ম করেছে, ওদেরকে তুমি কোন অভিশাপ দিও না । ওদেরকে বিধাতা পুরুষ যা শাস্তি
দেবেন তা ওদেরকে মাথা পেতে নিতে হবে । ওখানে বাবা, মামা, ছোটভাই এবং সবার প্রিয় আমার ও প্রিয় পিকুকে আমার যথাক্রমে
শেষ সশ্রদ্ধ ভক্তিপূর্ণ প্রণাম ও আন্তরিক ভালবাসা জানালাম । হ্যাঁ, একটা
কথা বলতে ভুলে গেছি, সেটা হল যেদিন কোর্ট এ ডিভোর্স পেপার
সই করে বিচারকের কাছে আমরা উভয়ের ছাড়পত্র গ্রহণ করব, সেদিন
তো আর একবার দেখা হবেই , তবে আমার
একটা শেষ অনুরোধ, তুমি তোমার মনকে দৃঢ় কর ।
তবে আমি
শুভাকাঙ্খী হয়ে আগামীদিনের শুভযাত্রা যাতে কণ্টকহীন হয় দয়াময়ের কাছে সেই প্রার্থনা
আমি কায়মন বাক্যে বরাবরই করার যাব ।
আমি আমার
কলঙ্ক ময় মুখ আর দেখাব না বলে সবার বিছানার ছাড়ার আগে আমি চলে এলাম ।এছাড়া আমার
আর কোন উপায় ছিল না ।
এই সাড়ে চারমাসের আমাদের দাম্পত্য
জীবনে যদি আমি তোমাকে জ্ঞানত কোন অসম্মানজনক কথা বলে থাকি তাহলে ক্ষমা করো ।
তাই যাওয়ার
বেলায় তোমার প্রতি রইল আমার শুভ আশীর্বাদ ।ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি তোমার যাত্রাপথ মঙ্গলময় হোক...
আজ থেকে--
...মুছে যাক সব
অতীতের স্মৃতি
লভ তুমি
নতুন জীবন,
এতেই হবো আমি খুশি
সবার চেয়ে বেশি তখন ।
নারী পায় সার্থক জীবন
আসবে নীড়ে
ফিরে,
কিশলয়ের
আগমন
ভেলায় ভাসিয়ে সুখের আসরে ।
যৌবন ভান্ড রেখে সঞ্চিত
এ-তোমার অর্জিত অধিকার,
মগ্ন
শকুন্তলার মতো
পরো প্রেমের হার ।
প্রীত্যন্তে
শুভাকাঙ্খী
নির্বেদ রায় ।
এই চিঠি পড়ে যেমন অঝোর নয়নে
সঙ্গীতা বিছানায় শুয়ে চিঠি বুকে ধরে কাঁদতে লাগল, ঠিক
তেমনই ভাবে বাড়ির সবাই শুধু বলাইবাবু বাদে সবার মন খুব খারাপ হয়ে গেল । বলাইবাবু
একেবারে শেষ সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললেন যে এখন মেয়ের মধুর লাগলে ও পরে ওদের জীবনে গভীর
অমানিশা নেমে আসবেই ; তাই আগে ভাগে সাবধান হয়ে গেলে সাময়িক
মেয়ের মন একটু ভাঙলে ও তাতে ক্ষতির চেয়ে লাভ বেশি হবে ।অতএব এই মায়ার বাঁধন মেয়েকে ছিন্ন করতেই
হবে ।তাই
সেদিন বাড়িতে না থেকে বিফ্যালয়ের পথে নিত্যসঙ্গীকে নিয়ে হাজির হলেন । আগের দিনের
ঘটনা সব বলাইবাবু আমাকে বললেন । তাতে আমি বললাম যে আপনি ও এদিক থেকে শত বাধা এলেও কোন
বাধাতে নরম মনোভাব মোটেই নিবেন না ;কারণ মেয়েটা
এখন তার ভাল মন্দ বুঝতে না পারলে ও পরে ওই বিষয় সাংঘাতিক হকয়ে দাঁড়াবে । অতএব এখনও
তেমন ক্ষতি হয়নি, এর স্থায়ী নিষ্পত্তি ঘটিয়ে নতুনভাবে
নতুন করে আবার বিবাহ দেন, দেখবেন ওতে
মেয়েরই খুবই উপকার হবে ।
তারপর আবার এদিকে ছোট ছেলের বিবাহ দিতে হবে, সেদিকটা
চিন্তার মধ্যে রাখতে হবে । তারপর অবসরের সময় তো আমাদের ঘনিয়ে এল । অতএব ওই সব
ঝামেলা তাড়াতাড়ি মিটিয়ে ফেলুন, দেখবেন তাতে
দেহ ও মনে শান্তি ফিরে পাবেন ।
এদিকে ঘটক যথারীতি উভয় পক্ষের সঙ্গে
যোগাযোগ রেখে ঠিক চারমাসের মাথায় উকিল ধরে উকিলের কথামত দু'পক্ষকে মেদিনীপুর আদালতে হাজির করলেন ।
তবে সেদিন নির্বেদ এবং সঙ্গীতার
হাজির হওয়ার কোন দরকার হয় না । উকিলকে দু'পক্ষ থেকে
চারশত টাকা নেওয়ার পর একশত টাকার স্ট্যাম্প এ বয়ান লেখা হল ;এবং বয়ানের নির্দেশানুসারে একমাসের পরেরদিন কেস এর দিন পড়ল । তাতে
উভয়পক্ষের মতামত সঠিকভাবে যাচাই করা হবে । পরে অর্থাৎ আদালতের কাছে ওরা ওদের সমস্ত কারণ দেখিয়ে
সম্মানীয় বিচারক মহাশয়ের কাছে ওদের ডিভোর্স পেপার এ উভয়ে সই করে বিচ্ছেদ পর্ব
নিষ্পন্ন করবে ।
উকিলের
কথামত দুটো কেস এর তারিখে উভয়পক্ষ হাজির হয়ে সমস্ত দরকারী কাগজ আদালতের কাছে পেশ
করানো হল ।
মাননীয় জজ সাহেব দু'পক্ষকে ফাইন্যাল কেস এর দিন ছেলে ও মেয়েকে হাজির করাতে
বললেন ।
দেখতে দেখতে
দিন এসে গেল ।
উকিল সেদিন বাকি টাকা অর্থাৎ ছয়শত টাকা নিয়ে এজলাসের দরবারের সামনে সঙ্গীতা এবং
নির্বেদকে দাঁড়াতে বললেন ।
যখন ওদের কেস এর ডাক পড়বে, তখন ওরা সম্মানীয় জজ সাহেবের কাঠগড়ায় দুজন দুদিকে দাঁড়িয়ে
কেন ওরা ডিভোর্স চায়, সে বিষয়টা ওনার সামনে দর্শাতে হবে, দেখতে দেখতে সন্ধিক্ষণ এসে গেল ।
ওরা দুজনে দুজনার মতামত কোর্ট এ বলতে
শুরু করল ।
সাময়িকভাবে সঙ্গীতার চোখ ছল ছল করলেও নির্বেদ তার কথা রেখেছে ।তাই ওদের
ওদিন থেকে ডিভোর্স গ্রাহ্য হয়ে গেল ।
সঙ্গীতা এখন থেকে নির্বেদ রায়ের
স্ত্রী রইল না । সে
এখন স্বামীর দেওয়া সিঁথিতে সিঁদুর মুছে সঙ্গীতা দাস রূপে পরিগণিত হল ।
ডিভোর্স ফয়শালা হওয়ার দিন মৌলিক দেনা
পাওনার কথা কোন আর আলোচনা হল না ।তবে ঘটক বলাইবাবুকে আর পাঁচমাস মত সময় চেয়ে নিল । সেই
পাঁচমাসের মধ্যে ওনার সমস্ত টাকা, গহনা, দান সামগ্রী সব ফেরত পেয়ে যাবেন বলে ঘটক বলাইবাবুর সঙ্গ
ত্যাগ করে নিজের বাড়ি অভিমুখে রওনা দিলেন ।
এদিকে বলাইবাবু, তার নিত্য সঙ্গী, সঙ্গীতা এবং
ছোট ছেলে সবাই ট্যাক্সিতে চড়ে নিজেদের বাড়ি অভিমুখে রওনা দিলেন ।
এদিকে আমার এবং বলাইবাবুর অবসর আড়াই
মাস অর্থাৎ কাগজে কলমে তিনমাস বাকি রইল । কারণ উভয়েরই জন্ম তারিখ চারদিন হওয়ায় দু হাজার দশের মার্চ
মাসটা নিয়ম মাফিক বেতন পাওয়া যাবে ।
দেখতে দেখতে ঘটকের কথাও তিনমাস সময়
হতে আর দশ দিন বাকি রইল ।
ঠিক তিন মাস শেষ হওয়ার দুইদিন বাকি
থাকতে বরপক্ষ থেকে নগদ পঁচিশ হাজার টাকা নিয়ে হরিনারায়ণবাবু একেবারে খুব সকালে
বলাইবাবুর বাড়িতে হাজির হলেন । বলাইবাবুকে যখন ঘটক মহাশয় নগদ পঁচিশ হাজার টাকা দিয়েছিলেন, তখন পাশে সঙ্গীতা দাঁড়িয়ে দেখছিল । তারপর হরিনারায়ণবাবু বলাইবাবু কাছেই
মোটর সাইকেলের বাবদ টাকা এবং গহনা তো মেয়ের কাছে আছে বলে বললেন এবং আরও বললেন যে
ওখানে যে সব যৌতুক গহনা ও টাকা পয়সা পড়েছে, সেগুলো
সব নির্বেদের নিজস্ব আলমারির মধ্যে আছে, সেগুলো সব
দেড় মাসের মধ্যে পেয়ে যাবেন ।
তারপর বলাইবাবুকে হরিনারায়ণবাবু তাঁর
বাড়ির বাইরে নিয়ে গিয়ে তাঁর মেয়ের আবার বিবাহ দিবেন কিনা মতামত নিয়ে নিলেন । এই কথা
শোনামাত্রই বলাইবাবু হ্যাঁ ছাড়া কোনমতেই না বলতে পারলেন না ।
হরিনারায়ণবাবু
আবার বললেন, -যা আপনার দেওয়া পাঁচ হাজার টাকা ফেরত
দিতে ভুলে গিয়েছিলাম, -এই বলে পকেট থেকে পাঁচ হাজার টাকা
বের করে দিলেন ।
তখন
বলাইবাবু বললেন, ওটা আপনি রেখে দিন, আবার তো দিতে হবে ।
তখন হরিনারায়ণবাবু বললেন, এবার আপনার মেয়ের সম্বন্ধ এবং হস্ত বন্ধন সমাধা করেই তবে
আমার দক্ষিণা নিব, নইলে কোনমতে নিব না।
এই সব কথা
হওয়ার পর বলাইবাবু হরিনারায়ণ বাবুকে বাড়িতে নিয়ে এলেন । বাড়িতে এসে বলাইবাবু তাঁর স্ত্রীর
হাতে পাঁচ হাজার টাকা রাখতে দিলেন এবং পঁচিশ হাজার টাকা নিজে রেখে দিলেন । কারণ
বলাইবাবু আমার কাছে পঁচিশ হাজার টাকা ধার নিয়েছিলেন, সেটা
বাড়ির সবাই জানত ।
এই সময় তাঁর ছোট ছেলে নয়ন এসে বলল, -বাবা আমি আজ একটু তাড়াতাড়ি অফিস এ চলে যাচ্ছি, কারণ অডিট আছে। সে এই কথা বলে অফিস বেরিয়ে গেল । আর এদিকে বলাইবাবুর স্ত্রী দুজনের
জন্য সামান্য জলখাবার ও চা এবং পিকুর জন্যও জলখাবার ও চা নিয়ে এলেন । ওরা সবাই
খেয়ে নিলেন ।
পিকু ও তার জলখাবার ও চা খেয়ে নিল । এবার হরিনারায়ণবাবু বলাইবাবু ও
তাঁর স্ত্রীকে নমস্কার জানিয়ে, সংগীতাকে
ডেকে বললেন, তাহলে 'মা' আসি এবং সবশেষে পিকুকে আদর করে বাড়ির উদ্দেশ্যে যাত্রা
করলেন ।
খানিকবাদে
সঙ্গীতার হাতে পেপারওয়ালা পেপার দিয়ে গেল । সঙ্গীতা পেপারের তৃতীয় পৃষ্ঠার নীচে হঠাৎ দেখতে পেল, মেদিনীপুরে
একজন লোক রাস্তায় কুড়িয়ে পাওয়া সদ্য শিশুকে কোতোয়ালী থানায় দিয়ে এলে তাকে
হাসপাতালে পুলিশেরা সেবা শুশ্রূষা করবার জন্য দিয়ে আসেন, তারপর
শিশুটি একমাস কয়েকজন নার্সের সেবা যত্নে সুস্থ আছে ।
কোতোয়ালী থানার জরুরী বিজ্ঞপ্তি আইন
অনুসারে ওই শিশুকে দায়িত্ব পূর্বক দত্তক নেওয়ার পূর্ণ অধিকার যে কোন দম্পতি
নিম্নলিখিত ঠিকানায় পনেরো দিনের মধ্যে মানবাধিকার কমিশনে দরখাস্তের প্রত্যায়িত নকল
এবং সুরক্ষা আইন মোতাবেকে একজন ভারপ্রাপ্ত বিচারকের কাছে সরকারী স্টাম্পে তাঁর
সইয়ের প্রত্যা য়িত নকল এবং সর্বশেষে সেই শিশুকে সুস্থ নাগরিক গড়ে তোলার দম্পতিদের
অঙ্গীকার পত্র ও তাঁদের মাসিক আয় এই সমস্ত নথিপত্র নিয়ে এই নিম্নোক্ত ঠিকানায়
যোগাযোগ করার আহ্বান জানান হইতেছে ।
আইনানুগ অনুসারে
মাননীয় ভারপ্রাপ্ত থানার অফিসার,
মেদিনীপুর, কোতোয়ালী
থানা,
মেদিনীপুর,
জেলা -পশ্চিম
মেদিনীপুর ।
বি:--দ্র:...ঠিক বেলা ১০.৩০
মিনিটে হাসপাতালের সুপারের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁর কাছে ওই শিশুর
সম্পূর্ণ সুস্থ এবং হাসপাতাল থেকে ওর ছাড় পত্রর নিয়ে জেলা শাসকের অনুমতি ক্রমে
থানা হইতে ওই শিশু কে নিয়ে যাওয়া পূর্ণ সম্মতি পাইবেন ।
ফোন নং-কোতোয়ালী
থানা০৩২২২/২৭৫৭১৬
" "মেদিনীপুর
জেলাশাসক--
০৩২২২/২৭৫৫৭১,২৭৫৭০
"
"হাসপাতাল-১০২,২৭৫৭৬৪
"
"সি.এম.ও.এইচ-০৩২২২/২৭৫৭৭৩,২৭৫৬৯
"ডি.এম.ও.-০৩২২২/২৭৫৫০৩,২৬১০০৮
সঙ্গীতা খবর কাগজে এই খবর
দেখে উৎফুল্ল মনে সে দৌড়ে তার ঘরে নিজের আলমারির চাবিটা খুলল এবং তা থেকে একটা
ডায়েরি নিয়ে সে তার মাকে বলে গেল, যে এখুনি
আসছি 'মা' আমাদের
বাজার থেকে ।
তখন বলাইবাবু পুকুরে স্নান করতে গিয়েছিলেন । সেই সময় পিকু বৈঠকখানায় হাফ নিদ্রায় মগ্ন ছিল ।
যখন সঙ্গীতা তার কাছ দিয়ে
চারবার দৌড়াদৌড়ি করল এবং আলমারী খোলার শব্দ ও পেল, তখন
পিকু হঠাৎ ভাবল, মনে দিদির এত আনন্দ এল কি করে ?
তাই সে
সঙ্গীতার ঘরে ঢুকে পড়ে থাকা শক্ত লাল রঙের টুলকে মুখ দিয়ে টেনে এনে আলমারীর দুটো
চাবির মধ্যে নিচের চাবিটা মুখের দাঁত দিয়ে কেটে সে তার প্রভুর খাটের গদির ভিতর
ঢুকিয়ে দিল ।আবার
সঙ্গীতার ঘরে ফিরে গিয়ে টুলটা যেমন জায়গায় ছিল, ঠিক
তেমন জায়গায় রেখে দিয়ে যেমন ঘুমাচ্ছিল সেই রকম রইল ।
বলাইবাবু
বিদ্যালয় যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হলেন । কারণ পরের দিন ওঁর এবং আমার অবসরের দিন থাকায় ওদিন বিদায়
সম্বর্ধনা জানানোর জন্য ক্লাস হবে না । তাই বলাইবাবু খেয়ে দিয়ে বেরিয়ে পড়লেন ;
কিন্তু
আশ্চর্য ব্যাপার ওদিন পিকু মনে হয় যাবে না ; কারণ
প্রভুর আয়ু তো প্রায় শেষ, ও বুঝতে
পেরেছে তাই হয়তো যাবে না । তাই ওকে না জাগিয়ে আজ বাসে করে বিদ্যালয়ে গেলেন । ট্যাক্সি
নিলেন না ।
কিছুক্ষণ
বাদে সঙ্গীতা বাড়িতে প্রবেশ করল । এসে তার মাকে জিজ্ঞাসা করল যে তার বাবা আজ কি বিদ্যালয়ে
গেল কিনা ?
তখন তার মা
বলল,-হ্যাঁরে মা, তোর
বাবা আজও বিদ্যালয়ে গেল -। তখন সঙ্গীতার হঠাৎ নজর পড়ল পিকুর দিকে । তখন
সঙ্গীতা বলল, কিরে পিকু ?তোর
প্রভু চলে গেল, তুই গেলি না কেন ...?
সঙ্গীতা এইসব কথা বলার পরই নিজের ঘরে
প্রবেশ করল এবং চাবি খুলে ডায়েরি টা ঢুকিয়ে রাখল । এইসব ঘটনা পিকু শুয়ে শুয়ে সব দেখতে
লাগল ।
ঠিক ওই দিন
দুপুরের একটু পরে বলাইবাবুর বাড়ির ল্যান্ড ফোন বেজে উঠল । তখন হঠাৎ পিকুর ঘুম ভেঙে গেল । সে দেখতে
পেল যে সংগীতাদি উৎসুক মনে কার সঙ্গে কথা বলছে । তবে এইটুকু পিকুর কানে বোধ হয়
এসেছিল যে দিদি আগামী সপ্তাহে মঙ্গলবার মেদিনীপুর স্টেশনে বেলা এগারোটা থেকে বেলা
একটা পর্যন্ত অপেক্ষা করবে, কে যেন তার
সঙ্গে দেখা করবে ।
ফোনটা বন্ধ হয়ে যেতেই ও ঘর থেকে মা জিজ্ঞাসা করলেন, হ্যাঁরে মা, কার ফোন এসেছিল ...?
তখন সঙ্গীতা
সঙ্গে সঙ্গে বলল,--আমার এক বান্ধবী, সেই শিউলীর ফোন মা । তখন তার মা আর কোন উত্তর দিলেন না ।
এদিকে বিকেল গড়িয়ে একটু সন্ধে হতেই
বলাইবাবু বাড়িতে ঢুকলেন,এসে বললেন
যে পঁচিশ হাজার টাকা আমাকে তিনি দিয়ে এসেছেন । তারপর একটা বড় প্যাকেট মিষ্টি এনে
প্রথম চারটি মিষ্টি পিকুকে খেতে দেওয়ার পর বাকি মিষ্টি তাঁর স্ত্রীর হাতে দিলেন ।
তখন তাঁর
স্ত্রী বললেন, দেখলি পিকু, তোর
প্রভুর কর্তব্য জ্ঞান, তুই বাবা আমাদের বিপদে ফেলে চলে যাস
না যেন । তখন
পিকু আনন্দ মনে খেতে খেতে লেজ নাড়িয়ে ঘরের গিন্নীকে সম্ভাষণ জানাল ।
এই দেখে বলাইবাবু বললেন,--দেখ গিন্নী, অবলা পশু
হলে ও তোমার কথা শুনে সে কেমন লেজ নাড়িয়ে তোমাকে সন্তুষ্ট করছে ।
একটু রাত
করে নয়ন বাড়ি ফিরল ।
এসে তার মাকে বলল, 'মা' একটু চা দাও না, বড্ড মাথা
ধরেছে, আজ যা কাজের চাপ ছিল, একটু বাইরে এসে টিফিন খাওয়ার সময় ও পাই না ।
তখন তার মা
তার বাবার আনা চারখানা মিষ্টি দিয়ে গেলেন এবং পরে ছয়খানা নোনতা বিস্কুট ও চা দিয়ে
গেলেন ।
হঠাৎ নয়ন বলল,--'মা' আজকে দিদিকে
তো দেখতে পাচ্ছি না, সে কোথায়... ?
তখন মা বললেন, তার আজ সন্ধে থেকে নাকি বড্ড মাথা ধরেছে, তাই বাজার থেকে ওষুধ এনে খেয়ে তার ঘরে ঘুমিয়ে পড়ছে বোধ হয় ।
তখন
বলাইবাবু বললেন, সেকি,আমার সোনা মার শরীর খারাপ, তুমি
তো এতক্ষণ বলনি কেন ... ? এই কথা বলেই
সঙ্গীতার ঘরে আলো জ্বেলে তার কপালে হাত দিয়ে দেখলেন যে জ্বর নেই । তাই তার
মেয়েকে না জাগিয়ে তিনি আবার বৈঠকখানায় চলে এলেন ।
তারপর ছোটছেলের মাথায় হাত দিয়ে বলতে
লাগলেন,--জানিস বাবা, গতকালের
পর থেকে আমি এবার সম্পূর্ণ বেকার হয়ে যাব, অতএব
তুই এবার থেকে আমার বাবা হবি,আর আমি হবো
তোর বেকার ছেলে ।এই
কথা বলে বলাইবাবু কাঁদতে লাগলেন ।
হঠাৎ পিকু
কথা থেকে দৌড়ে এসে তার প্রভুকে ওখান থেকে মুখ দিয়ে টেনে টেনে রান্নাশালে নিয়ে, মুখ দিয়ে আসন করে বসিয়ে দিল । আবার দৌড়ে এসে তাঁর গিন্নী মায়ের
কাপড় টেনে নিয়ে এলেন রান্নাশালে । তখন দুজনে পিকুর কি উদ্দেশ্যে তারা সব বুঝতে পারলেন ।
তারপর
বলাইবাবু এবং নয়ন একসঙ্গে বসে খেল এবং পাশে পিকু ও খেয়ে নিল । তারপর সংগীতাকে তার মা ডাকতে গেলে
মেয়ে খাবে না বলে দেওয়ায় তিনি নিজে এসে খেয়ে নিলেন । তারপর সবাই যে যার বিছানায় ঘুমাতে চলে গেল ।
পরেরদিন অর্থাৎ শনিবার বলাইবাবু ভোরে
ওঠে চা খেয়ে দাড়ি কামিয়ে ভাল ইস্ত্রি করা জামাকাপড় পরে একটু তাড়াতাড়ি ট্যাক্সি
নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন, সেদিন কিন্তু পিকু সঙ্গে গেল ।
তারপর আমাদের দুজনের বিদায়
সম্বর্ধনার পালা প্রায় শেষ পর্বে এসে গেল । তারপর আমি ও বলাইবাবু ছাত্রছাত্রীদের জন্য দশ টাকা করে
টিফিন বারোশত অর্ডার দিয়ে এসেছিলাম, সেগুলি দিয়ে
দেওয়ার পর আমরা দুজন সমস্ত ছাত্রছাত্রীদের হাত দিয়ে বিদায় পর্বের সমাপ্তি সঙ্গীত
গেয়ে দিয়ে আমরা দুজন বিদ্যালয়ের কর্মজীবন শেষ করে বাড়ি ফিরে এলাম । সেদিন
বলাইবাবু তাঁর ছেলে, মেয়ে, স্ত্রী
এবং পিকু সবাই একসঙ্গে বসে রাতের খাবার খেয়ে যে যার বিছানায় ঘুমাতে চলে গেল ।
পরের দিন
বলাইবাবুর আর কাজে যাওয়ার তাড়া থাকল না । তাই সকালে চা,বিস্কুট খেয়ে বাজারের দিকে গেলেন । সেদিন ছিল রবিবার । তাই সেদিন
একটু মাংস, মিষ্টি এবংদই নিয়ে দুপুরের ছুটির
আমেজটা ভালভাবে কাটিয়ে দিলেন । পরেরদিন সোমবার এসে গেল । আমার আর বলাইবাবুর আর কোন কাজ থাকল
না ।
তবে দুজনের মধ্যে ফোনে যোগাযোগ ঠিক থাকল । আমার মোবাইল ৯৯৩২২৪৭২১৩এবং তাঁর নাম্বার৯৮৩২৭৭৮৪০৮ । মঙ্গলবার দিন বলাইবাবু বেকার
থাকার জন্য সেই সকালে চা বিস্কুট খেয়ে বাজারের দিকে যে বেরিয়ে গিয়েছিলেন, দুপুরের একটু পরে বাড়িতে ফিরে এলেন । আসতেই তাঁর স্ত্রী বকাবকি করতে
লাগলেন । ...এতক্ষণ
পর্যন্ত না খেয়ে কোথায় গিয়েছিলে...-?
স্ত্রীর
প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে তাড়াতাড়ি পুকুরে স্নান সেরে এসে বললেন,-- দাও গিন্নী, এবার সুস্থ
মনে খেতে আমাকে এবং পিকুকে দাও ।
তারপর
বলাইবাবু হঠাৎ বললেন, কি গো, আমার
সোনা মা কোথায়... ? তখন তাঁর স্ত্রী বললেন, সে তাড়াতাড়ি
স্নান সেরে ভাল চুড়িদার পরে বেরিয়ে গেল, এবং যাওয়ার
সময় বলে গেল, তার ফিরতে ২.৩০ মিনিট মতো বাজবে, তুমি এবং বাবা খেয়ে নিবে, আমার
জন্য কোন চিন্তা করবে না ।
বলাইবাবু
বলেই ফেললেন,--যাই হোক মেয়ে আস্তে আস্তে অতীতের
জীবন ভুলতে শুরু করেছে, জান গিন্নী, এটাই ওর পক্ষে মঙ্গল ।
মায়ের মন তো, মেয়ে
খায়নি, সে কি করে খেতে পারে ?তাই আজকের কাগজটা নিজের বিছানায় শুয়ে শুয়ে পড়ছিলেন, তারপরদেওয়ালে ঘড়ির দিকে তাকাতেই দেখলেন বেলা ২.৩০ মিনিট
বেজে গেছে ।
তখন নিরুপায় হয়ে বিছানা থেকে ওঠে রান্নাশালের দিকে খাবার জন্য পা বাড়ালেন, তখন বাইরের দরজা খুলে মেয়ে বৈঠকখানা হয়ে প্রবেশ করল ।তারপর মা ও
মেয়ে একসঙ্গে বসে খেয়ে নিল । রাতে ছেলে চলে আসার পর ছেলের সঙ্গে মেয়ের পরিবর্তনের কথা
শুনিয়ে সবাই একসঙ্গে বসে খেয়ে যে যার বিছানায় ঘুমানোর জন্য চলে গেলেন ।
সঙ্গীতার
হাত থেকে এক টুকরো কাগজ পিকুর কাছে বাতাসে উড়ে এল ।পিকু সেই কাগজটাকে পায়ে চেপে রেখে
দিল ।সময়
বুঝে সেই কাগজকে দরকারী ভেবে প্রভুর খাটে চাবির উপর রেখে দিয়ে আবার চলে এল
বুধবার দিন
সকালে যথারীতি বলাইবাবু চা বিস্কুট খেয়ে বাজারের দিকে গেলেন এবং বাজারে গিয়ে আনাজ
নিয়ে তাড়াতাড়ি এলেন ; কারণ ছোটছেলে খেয়ে অফিস যাবে, না নিয়ে এলে গিন্নী আবার রেগে যাবে । ছেলে খেয়ে অফিস বেরিয়ে গেল এবং
বলাইবাবু গিন্নীকে বলে গেলেন, আমি এক্ষুণি
বাজার ঘুরে আসছি, এসে স্নান করে দুপুরের খাবার খাব, আজ আর দেরী হবে না ।
তখন তাঁর স্ত্রী বললেন, দীর্ঘদিনের অভ্যাস তো, সেটা
এখনো ছাড়তে পারছি না, তাই সব সময় একটু ভাল পোশাক পরে থাকতে
ইচ্ছে হয় ।এই
কথা বলে বলাই বাবু বাজারের জামা থেকে আনাজ বাজারের ফেরৎ টাকা,পয়সা পরা জামাতে নিয়ে এবং মোবাইল পকেটে নিয়ে বাজারের
উদ্দেশ্যে অগ্রসর হলেন ।
বাজারে চেনা লোকদের নানান ধরনের কথাবার্তা বলে বাড়ির দিকে পা বাড়ালেন ।
হঠাৎ তাঁর
মোবাইল বেজে উঠল ।
তিনি তখন মোবাইল অন করে কানে নিতেই যেন একটি মেয়েলি কণ্ঠস্বর শুনতে পেলেন,সে বলছে যে তাঁর মেয়ে গতকাল এক ছেলের সঙ্গে গন্ডগোল পাকিয়ে
এসেছে, সে ওকে শাসিয়েছে যেখানে ওকে শায়েস্তা
করবেই, তখন সেই মেয়ে মোবাইলের কন্ঠস্বরের
কাছাকাছি থাকার জন্য সব শুনে তাই বাধ্য হয়ে গোপনে ফোন করছে, এখানে এলে ওই ছেলের নামে কোতোয়ালী থানায় ডায়েরি করে দিব, তাই সত্বর গেটবাজারে চলে আসতে বলছে ।
তখন
বলাইবাবু বললেন,--আপনি আমার ফোন নাম্বার পেলেন কি করে ...?
তখন সে বলল, আমি আপনার বন্ধুর কাছ থেকে মোবাইল নাম্বার জোগাড় করে ফোন
করছি--।
তখন
বলাইবাবু দিশাহীন হয়ে আর বাড়িতে না গিয়ে সোজা ধেড়ুয়া -মেদিনীপুর বাস ধরে গেট
বাজারের উদ্দেশ্যে অগ্ৰসর হলেন ।
এদিকে কাদম্বিনী ঘড়ির দিকে তাকিয়ে
দেখল বেলা ১.৩০মিনিট বেজে গেল । সে তো এখনও এল না । তাই বাধ্য হয়ে সঙ্গীতাকে বাজারে পাঠালেন তার বাবার খোঁজ
করতে ; কিন্তু সঙ্গীতা চারধার বাজারে খোঁজ
করল তার বাবার সন্ধান কেউই দিতে পারল না ।
এদিকে পিকু
সঙ্গীতার ঘরে প্রবেশ করল ; সে ভাবল যে
কেবলমাত্র একটা কাগজ দিদির পড়ার টেবিলের উপরে পড়ে আছে, বাকি
সবদিনের কাগজ তার বাবুর টেবিলে পড়ে আছে, এমন
কি আজকের আসা কাগজ ও বাবুর চেয়ারে পড়ে আছে, তাই
তার মনে সন্দেহ জাগল, জাগা মাত্রই সে আর এক
মুহূর্ত দেরী না করে টুল এনে টেবিল থেকে দুটো বড় বই সরিয়ে কাগজটিকে সেই বাবুর ঘরের
খাটের তলায় যেখানে টিকিট, আলমারীর
চাবি সেখানে কাগজটি মুড়ে রেখে দিল । টুলটিকে সঠিক জায়গায় রেখে সে আবার বৈঠকখানায় অর্ধ নিদ্রায়
মগ্ন থাকল ।
কিছুক্ষণ
পরে সঙ্গীতা ঘরে ফিরে এল বটে, কিন্তু বাবা
যে কোথায় গেল তার পাত্তা পাওয়া গেল না,শুধু এই কথা
মেয়ের মুখ থেকে তার মা শোনার পর কাঁদতে শুরু করে দিল ।
পিকু ওঠে গিয়ে দেখল এবং অনুভব করল যে
বাবুর মেয়ের চোখ দিয়ে এক ফোঁটা জল ও বের হল না, সর্বোপরি
তার মাকে ও সান্ত্বনা ও দিল না ।
এই বিষয়টা পিকুর মনে দাগ কাটল । সে
সর্বক্ষণ দিদির দিকে এবার থেকে নজর দেবে বলে সে মনে হয় চিন্তা করল । তাই সে
গিন্নিমার কাপড় দিয়ে বসে থাকা গিন্নিমার চোখে কাপড় ধরিয়ে দিল । পিকুর এই
ঘটনা গিন্নিমাকে ব্যাকুল করে তুলল ।
তিনি পিকুকে বারবার কাঁদতে কাঁদতে
বললেন, ওরে পিকু, তুই
তোর বাবুর সঙ্গে এতদিন নিত্যসঙ্গী হয়ে থাকলি, আজ
তুই বাবুর প্রতি কেন অবহেলা করলি ...?
তখন পিকু শব্দ করে যেন সে বুঝিয়ে দিল, জীবনে সে কখনও বাবুর প্রতি অবহেলা করে না এবং করবে ও না ।
এদিকে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা
নামল ; কিন্তু বিদ্যালয় থেকে একজন ঘরে ফিরল না, তবে অফিস থেকে ঠিক সময়ে ছেলে নয়ন বাড়ি ফিরল ।
নয়ন বাড়ি ফিরতেই তার মা কেঁদে
আকুল হয়ে ছেলের গলা জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করে দিলেন ।
কেঁদে কেঁদে বললেন, জানিস বাবা, তোর বাবাকে
নিশ্চয় কেউ কিডন্যাপ করেছে, না হলে তিনি
কোথায় গেলেন ...?
আবার বললেন, ...ওকে নিয়ে গিয়ে কোথায় মেরে ফেলেছে বলে আমার মনে হয় । আচমকা তার
মায়ের কথা শুনে কি করবে এখন চিন্তা করতে পারল না ।
তবে তার মাকে বলল, দেখ মা, আজকের রাতটা
দেখ, কাল সকালে কোতয়ালী থানায় একটা মিসিং ডায়েরি
করে দিয়ে আমি ডায়েরি নাম্বারটা নিয়ে অফিস চলে যাব । তবে অফিস থেকে সাহেবকে বলে একটু
তাড়াতাড়ি বাড়ি চলে আসব ।
এই বলে নয়ন অফিসের উদ্দ্যেশ্যে
বেরিয়ে গেল ।
তবে বাবার নিখোঁজ হওয়ার ব্যাপারে মেয়ের কোন উৎসুক্য দৃষ্টি যে নেই সেটা পিকু মনে
হয় নিজের অন্তরে অনুভব করল ।
প্রভু নিখোঁজ হওয়ার পরদিন
থেকে পিকু এই বাড়ির কোন খাবার ছুঁলো না । গিন্নিমা পিকুকে বারবার খেতে দিলেও খাবার ছুঁয়েও দেখল না, শুধু তার দু'চোখ বেয়ে
অশ্রুধারা পড়তে থাকে । সে
কেবল নিশ্চল হয়ে বাবুর ঘরের সামনে বসেই কাটিয়ে দিচ্ছে ।
তারপর
বিকেলের একটু আগে নয়ন অফিস থেকে বাড়ি ফিরে এল । বাড়িতে এসে তার মাকে বলল যে যাওয়ার
সময় থানায় মিসিং ডায়েরি করে এসেছি । থানা থেকে তদন্ত করতে আসবে বলে পুলিশ অফিসার জানালেন ।
দেখতে দেখতে সাতদিন পার হয়ে গেল ; কিন্তু বলাইবাবুর কোন হদিশ পাওয়া গেল না ।
থানা থেকে ডায়েরি
করার তিনদিন পর ওরা বাড়িতে এসে তদন্ত করে কখন এবং কোথা থেকে উধাও হয়ে গেছে, সব নথিপত্র তাঁর স্ত্রীর কাছ থেকে নিয়ে গেলেন ।
তখন ছোট ছেলে নয়ন মায়ের কাছে
পরামর্শ নিতে গেল, নয়ন ভাবল যে আন্তর্জাতিক মানের
কাগজের প্রথম পৃষ্ঠায় তার বাবার ফটো দিয়ে নাম, উচ্চতা, গায়ের রঙ, পরনের কাপড়
ও জামার বিবরণ এবং সঠিক ঠিকানা দিয়ে কত তারিখ থেকে নিরুদ্দেশ সব জানিয়ে বিজ্ঞাপন
দিবেন ।
তাতে নয়নের
দিদি বলল যে দেখবি ভাই, বাবা নিশ্চয়
কোথাও ভুলক্রমে চলে গেছেন, পরে একদিন
ফিরে আসবেনেই ।
তবু নয়ন কোন কথা না শুনে এগারো দিনের
মাথায় খবরের কাগজে সব নথিপত্র মেদিনীপুরে সাব agent এর
কাছে জমা দিয়ে এলেন এবং পাঁচ শত টাকা খরচ ও দিয়ে এলেন । নয়ন নিজে আর ঘোষণা করলেন যে উপযুক্ত
ব্যক্তির যে খোঁজ দিতে পারবে, তাকে পঞ্চাশ
হাজার টাকা পুরস্কার দেওয়া হবে । বারো দিনের দিন সকালে আমি বাজারে দু'রকমের কাগজ নিয়ে বাজার করে বাড়ি ফিরে আসি । তারপর
বাড়িতে জলখাবার খেতে খেতে যে কাগজে বলাইবাবুর ছবি দেওয়া আছে, তা দেখে খুবই মর্মাহত হলাম । এই কথাটি আমার স্ত্রীকে ও বললাম ।
আমার স্ত্রী বলল, তুমি স্নান করে দুপুরের খাবার খেয়ে বেরিয়ে যাও, ওদের দুর্দিনে আমাদের পাশে থাকাটা একটা মানবিক ধর্ম।
তবে আমি
বলাইবাবুর মোবাইলে বারবার চেষ্টা করেও বিফল হলাম । তাই দুপুরে খাবার খেয়ে চাঁদড়ার
উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম ।
আমি যখন ওখানে নামলাম তখন প্রায় সন্ধে হয়ে গেছে, বাস
স্ট্যান্ডে নেমে বাড়িতে ছেলের ফোনে ফোন করে দিলাম, আমি
জানিয়ে দিলাম যে ভালভাবে এখানে পৌঁচেছি । তারপর আস্তে আস্তে বলাইবাবুর বাড়িতে পৌঁছলাম ।
বাড়িতে আসতেই পিকু আমাকে দেখে
নানারকম শব্দ করে কি যেন বুঝাতে চাইল, তারপর ওঁর
স্ত্রী আমার কাছে আ কুলভাবে কাঁদতে কাঁদতে বললেন...সে তো আজ পর্যন্ত কারো অন্যায় করেনি, তবুও কার ওর প্রতি আক্রোশ পড়ল যে আমার সিঁথির সিঁদুর খসিয়ে
দিল।
ছোট ছেলেও কাঁদতে শুরু করে দিল । কিন্তু ওর মেয়েকে এই আমি প্রথম দেখলাম । অত্যন্ত
সুন্দরী, ওর ভাগ্যে যে এত বিড়ম্বনা আসবে তা
আমি দেখে সম্পূর্ণ কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গেলাম, মনে
মনে ওকে আমার ছেলের বউমা করার ইচ্ছা মনে স্থির ও করে ফেললাম । তবে বলাইবাবুর সঠিক খবর জানার পর এই
সিদ্ধান্তের কথা বলা যাবে ।
পরেরদিন সকালে বলাই বাবুর স্ত্রী
স্নান করে সিঁদুর আর পরবেন না বলে মনস্থির করে ফেললেন, পিকু
তখন মুখে সিঁদুর কৌটা নিয়ে গিন্নিমাকে ঘিরে ধরে সিঁদুর পরিয়ে ছাড়ল, শব্দের মাধ্যমে জানাল যে তার বাবু ঠিক বেঁচে আছেই ।
সেইদিনই
বিকালে পিকু আমাকে নিয়ে বলাইবাবুর বিছানার কাছে নিয়ে এল ।তারপর আমার কাপড়টা ধরে চেয়ারে বসাল । তারপর নিজে
মুখ দিয়ে বাবুর খাটের তোষকের নীচ থেকে একটা চাবি, একটা
ছোট কাগজ এবং একটা বড় কাগজ বের করে আমার হাতে দিল ।
প্রথমে
চাবিটা মুখে নিয়ে সঙ্গীতার ঘরে এলো । তখন সঙ্গীতা তার বিছানায় ঘুমিয়ে আছে । সে এসে টুল নিয়ে টুলের উপর উঠল এবং
আমাকে মুখ দিয়ে চাবিটা দিল এবং খুলতে নির্দেশ আওয়াজের মধ্যে জানিয়ে দিল । আমি আলমারি
খুললাম ।
যেই খুললাম সে তখন আলমারির ভিতর থেকে একটা ডায়েরি বের করল । তারপর ছোট কাগজটা মুখ থেকে দিল । সেটা
দেখলাম একটা বাসের টিকিট, ধেড়ুয়া-
মেদিনীপুরের বাস ।
তাতে একজনের বাসের দাম লেখা আছে এবং তারিখটা ০৩.০৪.২০১১, তখন
হিসাব করলাম ওটা মঙ্গলবার হবে । হিসেব মতো বলাইবাবু বুধবার ০৪.০৩.২০১১ তারিখ থেকে নিখোঁজ ।
আবার বড়
কাগজটা দেখলেন ৩০.০৩.২০১১ তারিখের । খবর কাগজটা কেন পিকু দিল, কাগজটা
উল্টাতে উল্টাতে নয় তৃতীয় পৃষ্ঠায় বড় হরফে একজন ছেলেকে
দত্তক নেওয়ার বিজ্ঞপ্তি দেওয়া আছে, তাই আমার
সন্দেহের দানা সঙ্গীতার উপর পড়ল ।
সেই ডায়েরি যেই আমি কলম দিয়ে ওই সব
তারিখগুলো লিখছি, তখন হঠাৎ
সঙ্গীতার ঘুম ভেঙে গেল ।
সঙ্গে সঙ্গে সে চিৎকার করে উঠল,--'মা'-'মা'দৌড়ে এস, আমার ঘরে একজন চোর ঢুকেছে ।
তখন আমার কোন কিছু বলার আগে নয়ন ও
তার মা সঙ্গীতার ঘরে দৌড়ে এল । নয়নের হাতে অবশ্য মোটা বড় লাঠি ছিল ।
এসে দেখে , তার
মা বলেন, ও... আপনি, লজ্জার
বিষয়, ও তোর বাবার বিদ্যালয়ের একজন সহকারী
শিক্ষক এবং সর্বোপরি তোর বাবার একেবারে নিকটতম বন্ধু ।
সঙ্গীতা
আমাকে কোনদিন না দেখলেও এই ব্যবহারে সন্দেহের তীব্রতাটা ক্রমশঃ ঘনীভূত হয়ে উঠল ।
নয়নকে ডায়েরি
তে আমার লেখা সব তারিখগুলো দেখলাম এবং সমস্ত পিকুর দেওয়া
প্রমাণপত্র দেখালাম ।
তখন নয়ন তার
দিদিকে বলল, কিরে দিদি, শেষে
তুই এই কাজ করলি...?
তখন সঙ্গীতা বলল, আমাকে তোরা শুধু শুধু দোষ দিচ্ছিস, আমি
বাবার ব্যাপারে বিন্দু বিসর্গ জানি না ।
তখন এই
ফাঁকে হাসপাতালে সি.এম.ও.এইচ. পরে ডি.এম.ও.কে খবর কাগজের বিজ্ঞাপন দেখে আমি ফোন
করলাম, এবং জিজ্ঞাসা করলাম, ওই শিশুর দত্তক নেওয়ার জন্য কতজনের নাম পড়েছে জানাবেন ; কারণ
আমি ও আমার স্ত্রী দত্তক নিতে আগ্রহী ।
তখন ডি.এম.ও.তথ্য জেনে বললেন, মাত্র
চারজনের নাম পড়েছে, তার মধ্যে প্রথম দম্পতিদের সমস্ত
নথিপত্রের প্রমাণপত্র নিখুঁতভাবে প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে, অতএব
আমরা সবাই আইন মোতাবেকে প্রথম দম্পতির হাতে শিশুকে তুলে দেওয়ার
সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি, অতএব আমরা
আর কোন দরখাস্ত ও নথিপত্র নেব না ।
তখন আমি
জিজ্ঞাসা করলাম, আর একটু অনুরোধ রাখছি, প্রথম দম্পতিদের নাম একটু দয়া করে জানাবেন ।
তখন উত্তরে
জানালেন, ওনাদের নাম নির্বেদ রায় এবং সঙ্গীতা
রায় ।
আমি আমার মোবাইলে লাউড স্পিকার অন
করে রেখে ছিলাম, তার ফলে নয়ন এবং তার মা সব শুনতে পেল
।
তখন নয়ন বলল, ভাল চাস তো দিদি, বাবাকে
কোথায় লুকিয়ে রেখে এইসব কাজ নির্বেদ জামাইবাবু এবং তুই হাসিল করছিস ।
তখন সঙ্গীতা
কোনমতে মানতে চাইল না, হঠাৎ পিকু বৈঠক খানায় না খেয়ে খেয়ে
দুর্বল হয়ে পড়েছিল এবং ক্রমশঃ তাঁর প্রভুর জন্য খ্যাপা বাঘের মত হয়ে গিয়েছিল, সে হঠাৎ দৌড়ে গিয়ে সঙ্গীতার পা একটা টেনে টেনে নিয়ে বাইরে
গেল, টানতেই সঙ্গীতা মাটিতে যেই পড়ে গেল, পিকু তার গলার নলী তে সজোরে চাবল বসিয়ে রাখল, তখন সবাই পিকুকে টেনে কোনমতে সরাতে পারল না । এই অবস্থায়
সঙ্গীতার দমবন্ধ হয়ে প্রায় আসছিল, তখন সে
ক্ষীণ কণ্ঠে বলল, লাল গড় জঙ্গলের মধ্যে বুলডি বলে এক
গ্রামের মধ্যে বন্দী অবস্থায় রাখা আছে ।
এই কথা শোনামাত্রই সঙ্গীতাকে ছেড়ে
চাঁদড়া বিদ্যালয়ের উত্তর দিকে লালগড়ের যে মোরামে তার প্রভুকে উদ্ধার করার জন্য
দৌড়াতে শুরু করে দিল । আর এদিকে
আমি নিজেই কোতোয়ালী থানায় ফোন করে সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ অফিসার এক গাড়ি ভর্তি পুলিশ
নিয়ে বুলডির পথে রওনা দিলাম । পুলিশেরা বুলডির এক বাড়ি থেকে হাত পা বাঁধা অবস্থায়
বলাইবাবুকে উদ্ধার করে চাঁদড়ার পথে রওনা দিল ।
বনের মধ্যে গাড়ি দুটি যখন আসছিল, তখন প্রায় সন্ধে হয় হয় করছে, ফলে গাড়ির লাইট রাস্তাতে পড়ছে, হঠাৎ
দেখতে পেলেন একটা কুকুর হাঁফাতে হাঁফাতে রাস্তা দিয়ে এগিয়ে আসছে । সেই ধাবমান
কুকুরটিকে দেখে বলাইবাবু চীৎকার করে উঠলেন, ...-ওই
আমার পিকু, একটু দয়া করে গাড়ি দাঁড় করান ,ওকে আমার কোলে আসতে দিন।
গাড়ি যেই
একটু থামল, তখন পিকু দৌড়ে গিয়ে তার প্রভুর কোলে
উঠে এল ।
বলাইবাবুও যেমন দুর্বল হয়ে পড়েছেন,ও একমুখ
পোকা দাড়ি গজিয়েছে, তেমনই বলাই বাবুর মনে হল পিকু যেন
ক্রমশঃ নিস্তেজ হয়ে আসছে ;তবুও অবলা
পশু বুঝতে দিল না প্রভুকে কৃতজ্ঞতা জানাবার,তাই
সে শব্দ করে বোঝাতে চাইল যে এতদিন না খেয়ে কাটিয়েছি প্রভুর হাতের না খাবার খেয়ে
তবুও বেঁচে আছি ।
কিছুক্ষণ গাড়ি চলার পর গাড়ীগুলি বলাই
বাবুর বাড়ির সামনে দাঁড়াল । গাড়ি থেকে বলাইবাবু পিকুকে নিয়ে নামলেন । বলাইবাবু
পিকুকে তাঁর বিছানার উপর শুইয়ে দিলেন ।
এদিকে পুলিশ আমার এবং নয়নের বয়ান
অনুযায়ী সঙ্গীতাকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে চলে গেলেন । মায়ের আপত্তি এবং বলাইবাবুর শত
আপত্তিতে কোন কাজ হল না ।
পরদিন পুলিশ সঙ্গীতার সেই
ডায়েরী দেখে এবং সংগীতাকে জিজ্ঞাসা করে নির্বেদ রায়কে ফোন করে মেদিনীপুর কোর্টে
হাজির হতে বললেন ।
বুলডির বাড়ির গৃহকর্তা, সঙ্গীতা এবং
নির্বেদ রায়কে ওইদিন বেলা সাড়ে এগারোটায় মেদিনীপুর আদালতে তোলা হলে বিচারক তাদেরকে
আট দিনের পুলিশ হেফাজতে পাঠান ।
বলাইবাবু,আমি, নয়ন, নয়নের মা এবং পিকু বলাইবাবুর কোলে শুয়েছিল, কখন প্রভুকে তাঁর গিন্নীমার কাছে ফিরিয়ে দিয়ে সিঁথির সিঁদুর
অক্ষয় করে রেখে সে যে চিরদিনের মত ঘুমিয়ে পড়ল, কেউই
তা টের পেল না ।
বলাইবাবু জল ভরা চোখে পিকুর দিকে
তাকিয়ে শুধু একটা কথা তার মুখ থেকে বেরিয়ে এল এ যে ' সুহৃদ
সংশপ্তক ' ।
| ALEEK PATA- Your Expressive World | Online Magazine |
| Editor: Swarup Chakraborty | Publisher: Debasree Chakraborty |
| Bengali New Year 2024 | April-24 | Seventh Year First Issue |
| © All Rights Reserved by The Editor and The Publisher |
| Published By : Aleek Publishers- www.aleekpublishers.com |
| a DISHA-The Dreamer Initiative |
No comments:
Post a Comment
Please put your comment here about this post