অলীক পাতার অন্যান্য সংখ্যা- পড়তে হলে ক্লিক করুন Library ট্যাব টি



। । "অলীক পাতা শারদ সংখ্যা ১৪৩১ আসছে এই মহালয়াতে। । লেখা পাঠানোর শেষ তারিখ ১৫ ই আগস্ট রাত ১২ টা ।.."বিশদে জানতে ক্লিক করুন " Notice Board ট্যাব টিতে"

Saturday, April 13, 2024

গল্প - কৃষ্ণকলি - সুতপা মিত্র রায়

 গল্প

 কৃষ্ণকলি

সুতপা মিত্র রায়



"সুন্দরী গৌরবর্ণা পাত্রী চাই"- রবিবারের খবরের কাগজে পাত্রী চাই বিজ্ঞাপনের এই লাইনটা চোখে পড়লেই মনের ভেতরটা কেমন যেন খচ্- খচ্ করে ওঠে নিখিল বাবুর নিখিল বাবুর একটা বিবাহযোগ্যা কন্যা আছে সুন্দরী না হলেও মুখটা ভারী মিষ্টি তবে গৌরবণা সে মোটেই নয় বরং গায়ের রং বেশ কালো শুনেছি বিয়ের আট বছর পর শ্যামা কালির কাছে মানত করে এ মেয়ে জন্মায় নাম লিখেছিলেন কৃষ্ণকলি কিন্তু সবাই ওকে কালী বলেই ডাকে কালী ছোট থেকেই খুব অভাগা মাত্র ৮ বছর বয়সে সে তার মাকে হারায় একবার পুকুরের জল থেকে খেলার বল টা তুলতে গিয়ে কালি ডুবে যাচ্ছিল, তার মা তখন তাকে বাঁচায় কিন্তু নিজেই ডুবে যায় সেই থেকে সে পিসি ঠাম্মার কাছেই মানুষ খুব মা ন্যাওটা ছিল মেয়েটা, মায়ের চোখের মনি ছিল সে সারাদিন মায়ের পেছন পেছন ঘুরতো কত খুনসুটি করত কিন্তু মা মারা যাওয়ার পর মেয়েটা কেমন যেন শান্ত হয়ে গেল পিসি ঠাম্মা বেশ খিটখিটে তবুও ভালোবেসে আগলে রেখে মানুষ করছিল কালীকে যে বছর কালী মাধ্যমিক দিল সে বছরই পিসি ঠাম্মা মারা গেল সেই থেকে একা একাই বড় হয়েছে কালী তার বাবা গানের মাস্টার আগে একটা গানের স্কুল ছিল কিন্তু তেমন গান কেউ গ্রামে শিখতে চাই না বেশিরভাগ গরিব মানুষ তাই সাইকেল নিয়ে নিখিল বাবু শহরে গিয়ে গানের টিউশনি করে কোন রকমের সংসার টা চালান প্রত্যেক বাবার মতই নিখিল বাবু চান মেয়েটার খুব ভালো বিয়ে হোক তার যেন অর্থ কষ্ট না থাকেকালী এখন গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করেছে সে আরও পড়তে চাই কালীর গানের গলাটাও বেশ ভালো কিন্তু নিখিল বাবু মেয়ের বিয়ে দিয়ে দিতে চান তিনি বলেন, "কবে আমি আছি ,কবে নেই তারপর তোকে কে দেখবে মা বিয়েটা দিয়ে দিতে পারলে আমি নিশ্চিন্ত"

 

অনেক দেখা দেখির পর, আজিমগঞ্জ এর হরিপদ বাবুর একমাত্র ছেলের জন্য কালীকে পছন্দ করে ওরা ছেলে প্রাইমারি স্কুল টিচার ফ্যামিলি ও ছোট নিখিল বাবু বেশ খুশি কিন্তু বিয়ের দিন যতই এগোতে লাগলো ওদের পনের দাবি তত বাড়তে লাগলো প্রথমে ৭০ হাজার টাকা নগদ , পাঁচ ভরি গয়না, পরে একটা বাইক চেয়ে বসলো তাতেও হলো না, যখন পাত্র একটা টু,বি এইচ. কে. ফ্ল্যাট কেনার ডাউন পেমেন্টের পুরো টাকাটাই হবু শ্বশুরের কাছে চেয়ে বসলো, তখন নিখিল বাবুর মাথায় হাত এত টাকা তিনি যোগাড় করবেন কোথা থেকে একদিন কালী এসে বাবাকে বলল, "এই বিয়ে আমি করতে চাই না বাবা এটা বিয়ে নয়, টাকার পরিবর্তে মেয়ের হাতবদল"বিয়েটা ভেঙে গেল  

আবার স্নো পাউডার মেখে সেজেগুজে কালী পাত্রপক্ষের সামনে ইন্টারভিউ দিয়েই চলেছে কিন্তু কোথাও বিয়ে পাকা হচ্ছে না কেউ বলছে কালো রং, কারুর অনেক দাবিদাওয়া বছর খানেক পর, মালদা নিবাসী এক বড় কাপড় ব্যবসায়ী ঋষিকেশ বাবু তার ছোট ছেলের জন্য কালিকে পছন্দ করেন ছেলেটি একটি বেসরকারি সংস্থায় ভালো পদে চাকরি করে বিয়ের দিনক্ষণ পাকা হয়ে যায় কালীও খুব খুশি পছন্দ মতো শাড়ি, গয়না কিনেছে আজ কালীর বিয়ে গোটা বাড়ি প্যান্ডেল করে, টুনি দিয়ে সাজানো হয়েছে ‌ নিমন্ত্রিতরা চলে এসেছেন গায়ে হলুদের তোর জোর চলছে নিখিল বাবু তার সারা জীবনের সঞ্চয় দিয়ে সুন্দরভাবে মেয়েকে বিয়ে দিয়ে যেতে চান তাই কোন বিষয়ে কোন ত্রুটি রাখেননি তিনি এমন সময় মালদা থেকে হঠাৎ ঋষিকেশ বাবুর ফোন ঋষিকেশ বাবু দুঃখের সাথে জানান তার ছেলে একটি মেয়েকে ভালোবাসতো, বাড়িতে অমত ছিল তাই আজ সকালেই তারা মন্দিরে গিয়ে বিয়ে করেছে বিনা মেঘে বজ্রপাতের মত এ ধাক্কা নিখিল বাবু সামলাতে পারেন নি তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন কি হবে তার মেয়ের! সে তো লগ্নভ্রষ্টা হবে ‌ লগ্নভ্রষ্টা মেয়েকে তো আর কখনো কেউ বিয়ে করবে না এক নিমেষে বিয়ে বাড়ির সব আনন্দ মুছে গিয়ে যেন শ্মশানপুরীতে পরিণত হয়েছে তার মধ্যে কানাঘুষা আলোচনা চলছে মেয়েটা সত্যিই অপয়া কালী ও যেন কেমন পাথর হয়ে গেছে তবুও কালী শক্ত হয়ে তার বাবাকে সুস্থ করার আপ্রাণ চেষ্টা করছে নিখিল বাবুর বুকের যন্ত্রণা বাড়তে থাকায় তাকে একটা স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় সেখানে তার চিকিৎসা চলছে গোটা রাত হাসপাতালের বেঞ্চে বসে কনে সাজে কালীর রাত কেটে ভোর হতে চলেছে এর মধ্যে তার কানে এসেছে তার বাবা তার জন্য কত দেনা করেছে বাজারে আজ তার জন্যেই এমন অবস্থা সে সত্যিই অপয়া, তার বেঁচে থাকার কোন অধিকার নেই এইসব ভাবতে থাকে কালী এমন সময় ডাক্তার বাবু এসে বলেন নিখিল বাবুর শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল আর ভয়ের কিছু নেই কিন্তু কালী জানে তার বাবা তাকে দেখলেই আবার অসুস্থ হয়ে পড়বে তাই খুব ভোরে সবার চোখের আড়ালে সে হসপিটাল থেকে বেরিয়ে পড়ে

 

এই সংকল্প নিয়ে বেরিয়েছে কালী যে তার মূল্যহীন জীবনটাকে সে আর রাখবে না শেষ করে দেবে পথ চলতে চলতেই সে দেখে, মাথার উপর দিগন্ত জোড়া উন্মুক্ত নীল আকাশ, দূরে ধান খেতের পাশে সারিসারি কাশফুল হাওয়ায় দুলছে, মাথার উপর কত পাখি কিচির মিচির করে উড়ে যাচ্ছে স্বাধীনভাবে কি সুন্দর এই পৃথিবী সে অনুভব করে তারপর কানে আসে খিল্- খিল্ করে হাসির শব্দ, একদল সাঁওতাল মেয়ে নিজেদের মধ্যে ঠাট্টা তামাশা করতে করতে হেঁটে চলেছে কালীকে দেখে ওরা বলে, 'ওমা দেখ্লো নতুন বউ ওর কাছে এসে একটি মেয়ে জিজ্ঞাসা করে "ওলো নতুন বউ, তু ইখানে কি করছিস গা বিয়া না কইরে পালিয়ে আসিস নাকি?" কালী নিরুত্তর সব মেয়েগুলো এবার ওকে ঘিরে ধরেছে কি প্রাণোচ্ছল ওরা মাথায় আবার কেউ কেউ জংলিফুল গুজেছে কালি এবার জিজ্ঞাসা করল "তোমরা কে গো? কোথায় যাচ্ছ?" ওরা একগাল হেসে উত্তর দেয় ,"মুরা সাঁওতাল পাড়ার মেয়েরা সব শহরে যাচ্ছি গা মাঠে-ঘাটে যা শাকসবজি হয়, ভুট্টা টুট্টা যা হয় আর মুরা চুপড়ি-টুবরি যা বানায় এই সব কিছু শহরে বিচতে যাই মুদের ঘরে তো আর মরদ নাই, যে বসে বসে খাওয়াবে, তাই নিজেদের পেটের ভাত নিজেদের যুগাড় করতি হয়" ওদের দেখে কালীর খুব ভালো লাগে আবার বাঁচতে ইচ্ছে হয় নারী কি শুধু পুরুষের জন্যই! তার নিজেরও তো একটা অস্তিত্ব আছে শুধু পুরুষের উপর নির্ভর করে, পুরুষের তৈরি ঘেরাটোপে চিরকাল নারীরা বন্দী থাকবে কেন? না কক্ষনো না কালী বুক ভরে নিঃশ্বাস নেয় ফিরে যায় বাবার কাছে আজ থেকে নতুন করে বাঁচবে সে


 | ALEEK PATA- Your Expressive World | Online Magazine |

| Editor: Swarup Chakraborty | Publisher: Debasree Chakraborty |

| Bengali New Year 2024 | April-24 | Seventh Year First Issue |

| © All Rights Reserved by The Editor and The Publisher |

| Published By : Aleek Publishers- www.aleekpublishers.com | 

| a DISHA-The Dreamer Initiative |

 

No comments:

Post a Comment

Please put your comment here about this post

Main Menu Bar



অলীকপাতার শারদ সংখ্যা ১৪২৯ প্রকাশিত, পড়তে ক্লিক করুন "Current Issue" ট্যাব টিতে , সবাইকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা

Signature Video



অলীকপাতার সংখ্যা পড়ার জন্য ক্লিক করুন 'Current Issue' Tab এ, পুরাতন সংখ্যা পড়ার জন্য 'লাইব্রেরী' ট্যাব ক্লিক করুন। লেখা পাঠান aleekpata@gmail.com এই ঠিকানায়, অকারণেও প্রশ্ন করতে পারেন responsealeekpata@gmail.com এই ঠিকানায় অথবা আমাদের ফেসবুক গ্রুপে।

অলীক পাতায় লেখা পাঠান