অলীক পাতার অন্যান্য সংখ্যা- পড়তে হলে ক্লিক করুন Library ট্যাব টি



"অলীক পাতা নববর্ষ সংখ্যা ১৪৩১ প্রকাশিত, সমস্ত লেখক -লেখিকা এবং পাঠক -পাঠিকাদের জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা..."বিশদে জানতে ক্লিক করুন " Notice Board ট্যাব টিতে"

Saturday, April 13, 2024

হাসির গল্প - গণ্ডগোল - মিলন কুমার মুখার্জি

 হাসির গল্প

  

গণ্ডগোল

মিলন কুমার মুখার্জি


গোলোকেশ গোলদার ছিল তার ভাল নাম আর ডাকনাম ছিল 'গণ্ডগোল', অবশ্যই বন্ধুসমাজে ডাকনামটার যাথার্থ বোঝাতে গেলে বছর তিরিশেক পিছিয়ে যেতে হবে

 

আমরা তখন ক্লাস সেভনে একদিন আমাদের ক্লাসটিচার দেবেশ বাবু একটি নতুন ছেলেকে এনে পরিচয় করালেন অমন রোগা প্যাঁকাঠির নামে অত গোল আসে কোথা থেকে! সৈকত টিফিনের সময় বারান্দায় দাঁড়িয়ে রুটি-আলুভাজা খেতে খেতে জিজ্ঞেসও করেছিল,'তোর নামের মানে কী রে?' গোলোকেশ পাল্টা প্রশ্ন করে বসল,'হেডস্যার তোর কেউ হন?' সৈকত এমনিতেই পড়াটড়া বিশেষ করত না এবং শিক্ষকদের কাছে প্রবল বকুনি এবং প্রভূত মার খেত হেডমাস্টার মশাই একটু বেশিই 'স্নেহ' করতেন সৈকতকে যেকোনো অপ্রীতিকর ব্যাপারের পেছনেই যে সৈকত আছে, এ বিষয়ে উনি সবসময়েই নিশ্চিত থাকতেন মুখে না বললেও ফকল্যান্ড বা ইরাকের যুদ্ধের পেছনেও যে সৈকতের হাত আছে, এ রকম সন্দেহ ওনার ছিল বলেই মনে হয় তাই ক্লাস, বারান্দা, লাইব্রেরি, খেলার মাঠ - যেকোনো জায়গাতেই উনি সৈকতের শাস্তির সুব্যবস্থা করে ফেলতেন - কান ধরে দাঁড়ানো, নীলডাউন, মুরগি হওয়া ইত্যাদি সৈকতও ওনাকে সাক্ষাৎ যমরাজ হিসেবেই দেখত

 

একটা সাদামাটা প্রশ্নে গোলোকেশ যখন হেডস্যারের প্রসঙ্গ এনে ফেলল, তখন সৈকত ভীত এবং আশ্চর্য - দুইই হলো ঘন্টাখানেক আগে যে ছেলেটা স্কুলে এল, সে কিকরে তার এই দুর্বল জায়গাটা টের পেয়ে গেল! বলে উঠল,'এর মধ্যে হেডু কোথা থেকে এল?' তখনই ঠিক পেছন থেকে গর্জন ভেসে এল,'এখান থেকে এল হতভাগা! ভদ্রতা শিখিসনি? মাস্টার মশাইদের সম্বন্ধে কিভাবে কথা বলতে হয় জানিস না! ছুটি অবধি কান ধরে দাঁড়িয়ে থাক বারান্দায়!' হেডস্যার যে কখন পেছনে এসেছেন, আমরা কেউ টেরই পাইনি সৈকত পড়ল মহা মুশকিলে! তার বাঁ হাতে আধখাওয়া টিফিন সমেত টিফিনকৌটো আর ডান হাত ভর্তি আলুভাজার তেল ঠাকুর-দেবতাদের চার বা দশ হাত থাকলেও, মানুষের স্রেফ দুটি হাত - এও এক বিরাট বঞ্চনা! অন্তত সেই মুহূর্তে সৈকতের তাই মনে হচ্ছিল রুটি-আলুভাজা দেখে হেডস্যারেরও বোধহয় খিদের ইচ্ছেটা চাগাড় দিয়ে থাকবে, অথচ শাস্তি কার্যকর না করে স্থানত্যাগ করার অর্থ হল কাজে গাফিলতি তাই চিৎকার করে উঠলেন,'কী হল? দেরি হচ্ছে কেন?' রুটি আটকান গলায় সৈকত কিছু বলার চেষ্টা করছিল বটে, কিন্তু বিচিত্র একটা শব্দ ছাড়া কিছুই বের হল না হেডস্যার বাঘের মত তেড়ে এলেন,'তবে রে! ভ্যাঙ্গানো বার করছি, দাঁড়া!' খাদ্য আর খাদকের এই ভয়ঙ্কর টানাপোড়েনে পড়ে সৈকত তড়িঘড়ি টিফিনকৌটো ফেলে নিজের কান ধরতে গেল টিফিনের অবশিষ্ট রুটি কৃষ্ণের সুদর্শন চক্রর মত উড়ে গেল আর আলুভাজা পুষ্পবৃষ্টির মত ছড়িয়ে পড়ল আশেপাশে কয়েক টুকরো আলু ঠাঁই খুঁজে নিল স্যারের ধবধবে সাদা ধুতির কুঁচিতে আলুভাজার আক্রমণে হেডস্যারের মাথায় রক্ত উঠে গেল নিজেই ধরতে গেলেন সৈকতের কান কিন্তু আলুভাজার তেল মাখানো কান ধরা কি সহজ কাজ! যতই ধরতে যান, ততই পিছলে যায়! শেষে প্রচণ্ড রাগে সাজার মেয়াদ বাড়িয়ে এক হপ্তা করে দিয়ে গটগট করে চলে গেলেন বাথরুমের দিকে, সম্ভবত ধুতি ধুতে সেই থেকেই গণ্ডগোলের শুরু পরে আমরা জিজ্ঞাসা করেছিলাম গোলোকেশকে,'তুই হঠাৎ হেডস্যারের কথা বললি কেন?' সে বললে,'ভাই, মৌখিক পরীক্ষার সময় হেডস্যার এই প্রশ্নটাই প্রথম করেছিলেন কিনা!'

 

বেশ কয়েক মাস পরে ঘটল আরেকটা ঘটনা গোলোকেশের খুব সাহিত্যানুরাগ দেখা দিল বাংলার স্যারকে রাজি করিয়ে আমাদের ক্লাস থেকে মাসিক দেয়াল-পত্রিকা চালু করার ব্যবস্থা করল একটা বড় আর্টপেপারে ক্লাসের ছেলেদের লেখা গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ ইত্যাদি স্থান পাবে আর মেনগেটের পাশে টাঙানো থাকবে সেই পত্রিকা বাংলা-স্যারের নাম প্রধান উপদেষ্টা আর গোলোকেশের নাম সম্পাদক হিসেবে জ্বলজ্বল করবে বাঙালি সাহিত্যিকের জাত অস্থিতে মজ্জায় সাহিত্য ফলে সাত দিনের মধ্যে এত লেখা জমা পড়ল যে, চারটে আর্টপেপারেও ধরবে না! সুতরাং জোরদার বাছাই করতে হচ্ছিল বাংলা-স্যার গোলোকেশকে বললেন, 'সাহিত্য হচ্ছে সহিতের ভাব তাই যে লেখার মধ্যে যত বেশি বাস্তবের প্রতিফলন দেখবি, সে লেখাকে তত প্রাধান্য দিবি ' অনেকের লেখাই বাতিল হল লেখার মান, পত্রিকার সম্মান আর বাংলা-স্যারের অপমানের কথা ভেবে শুধু কৃৎকর্মের প্রায়শ্চিত্ত করতে গোলোকেশ সৈকতের লেখাটা মনোনীত করল তাতে নাকি বাস্তবের প্রতিফলনও বেশি ছিল বেরোলো পত্রিকা যথাসময়ে বাংলা-স্যার সেই পত্রিকা দেখে প্রথম দিকে খুশিই হচ্ছিলেন, কিন্তু সৈকতের কবিতায় হঠাৎ অগ্নিমূর্তি ধারণ করলেন এক টান মেরে আর্ট পেপার ছিঁড়ে ফেললেন আর গোলোকেশকে এমন বকুনি দিলেন যে, আবহ বিভাগ 'বিনা মেঘে বজ্রপাত'-এর ঘোষণা করে ফেলে আর কি! কবিতাটা ছিল -

"বিদ্যালয়ের কথা করি গো বর্ণন,

এস্থলে ক্রমাগত ঘটে অঘটন

প্রধান শিক্ষক যিনি ভয়ানক রাগী,

দর্শন মাত্রেই মোরা হেথাহোথা ভাগি!

হিংস্র মানব, প্রায় দানব সমান,

প্রতি ব্যবহারে তুমি পাইবে প্রমাণ

তাঁর এক ডানহাত - বাংলার স্যার

কথা বোঝা যায় নাকো, শুধু ঘ্যাড়ঘ্যাড়!

ক্লাসে এলে শুরু হয় রিডিংয়ের ধূম,

চেয়ারে বসিয়া নিজে দেন শুধু ঘুম!

গণিতের স্যারেদের শোণিতের সাধ,

না বুঝিলে অংক ঘটে পরমাদ!

ভূগোলের শিক্ষক আসি মাঝে মাঝে

ক্লাসেই ব্যস্ত হন আপনার কাজে

ইতিহাস পড়ানোর কথা আছে যাঁর

কদাচিৎ আমরা দেখা পাই তাঁর

বিজ্ঞানক্লাস জুড়ে গল্পের বান

পড়াশুনা ডকে তোলা স্যার ভগবান!

বিদ্যালয়ের কথা অমৃত সমান

সৈকত রায় কহে শুনে পুণ্যবান!"

 

এরপর গোলোকেশ বেশ কিছুদিন চুপচাপ ছিল ক্লাস এইটে হঠাৎ তার ওপর ভর করল ফুটবল দিন নেই রাত নেই তার অনুশীলন আর ম্যাচ রাইট ব্যাক পজিশনে মোটামুটি খেলত ক্লাস টিমে জায়গাও পেল স্কুলে শুরু হল ইন্টার ক্লাস টুর্নামেন্ট আমাদের এইট-বি টিম দারুণ খেলতে লাগল সিক্স এ-কে পাঁচ গোল, সেভেন বি-কে তিন গোল আর সেভেন সি-কে চার গোল দিয়ে সেমি

ফাইনালে উঠল আমাদের টিম ওদিক থেকে উঠল এইট-সি খেলার আগের দিন থেকে অশোক পড়ল জ্বরে ও আমাদের গোলকিপার, দারুণ দারুণ সব সেভ করে টিমকে তুলেছে আমরা পড়লাম বিপদে গোলোকেশই প্রস্তাব করল ও গোলে খেলবে কিন্তু আমাদের অধিনায়ক সতু দ্বিতীয় গোলকিপার রমেনকে বলল খেলতে রমেন মোটেই ভাল খেলছিল না একটা গড়ানো শটে গোলও খেয়ে গেল তার খানিক বাদেই হল আরেক কাণ্ড এইট সি কর্নার পেল ওদের বিলু কর্নার করে গোলের সামনে বল তুলল বল আসার আগেই গোলোকেশ লাফ দিয়ে বসল ও যখন নীচের দিকে নামছে, বল তখন ঠিক মাথার আধ হাত ওপরে পেছনেই ওদের স্ট্রাইকার অজয় গোলোকেশ হাত দিয়ে বলে লাগল ঘুষি হ্যান্ডবল, পেনাল্টি ভাগ্যিস, ওদের অজয় পেনাল্টি কিকটা বাইরে মেরেছিল! পরে আমাদের সঞ্জয় আর ত্রিদিব দুটো গোল করে আমাদের জিতিয়ে দেয় খেলার পর জিজ্ঞাসা করায় গোলোকেশ বলল,'কাল প্রথমে আমি গোলি খেলব বলেছিলাম না, মাথায় ওটাই ছিল তাই ফিস্ট করেই ক্লিয়ার করেছিলাম '

 

একদিন পরে ফাইনাল - নাইন এ-র সঙ্গে সতু বললে,'রমেন রিজার্ভ বেঞ্চে থাক গোলোকেশ বরং গোলে খেলুক আর জগা খেলুক রাইট ব্যাকে ' শুরু থেকেই হাড্ডাহাড্ডি খেলা চলল গোলোকেশ তিনটে অবধারিত গোলও বাঁচাল স্কুলের নিয়মের নির্দিষ্ট পঞ্চাশ মিনিটে কোন পক্ষই গোল করতে পারল না একস্ট্রা টাইমের দ্বিতীয়ার্ধও প্রায় ছ-সাত মিনিট হয়ে গেল, খেলা গোলশূন্য আমাদের পুরো দল প্রতিপক্ষের সীমানায় আক্রমণ চালাতেই লাগল গোলোকেশ এগিয়ে প্রায় মাঝমাঠে এসে টিমকে সাহায্য করছে এমন সময় ওদের সন্তোষ বল ধরে হঠাৎ প্রতিআক্রমণে উঠতে লাগল আমাদের হাফে গোলোকেশ ছাড়া কেউই নেই গোলোকেশ সন্তোষের থেকে কোনোগতিকে বল কাড়লো কিন্তু তারপরেই ব্যাকপাস করল নিজের গোলের দিকে সেমসাইড গোল দু মিনিট পরে হেরে মাঠ ছাড়লাম আমরা সবাই চেপে ধরলাম গোলোকেশকে,'কিরে ব্যাকপাস করলি কেন?' মাথা নীচু করে ও বলল,'সরি ভাই, আমার অভ্যাস মত মনে হল পেছনে অশোক গোলে আছে আর আমি ব্যাকে, তাই...' যখন ব্যাকে খেলে নিজেকে ভাবে গোলি আর যখন গোলে খেলে তখন নিজেকে ভাবে ব্যাক! এ শুধু গোলোকেশের পক্ষেই সম্ভব এর পর থেকেই গোলোকেশের নাম পাকাপাকি ভাবে 'গণ্ডগোল' হয়ে গেল

 

ওকে খেলা ছাড়তেই হল কিছুদিন শান্ত থাকলেও, আবার নতুন ইচ্ছে জাগল মাথায় এবার সংগীত সাধনায় লেগে পড়ল কোন এক গুরুর কাছে পুরোদস্তুর তালিম নেওয়া শুরু করল গোলোকেশের পড়শী ছিল তপন তপন একদিন বলল সেই ঘটনা ! গণ্ডগোল সকাল নেই বিকেল নেই, শুধু বিকট সুরে সারেগামা আর আ-আ করে যাচ্ছে চারপাশের লোকজন খুব ক্ষেপে গেছে কিন্তু ও তো শোনার পাত্র নয়! পাশের বাড়ির গৌর দত্ত অসুস্থ বুড়ো মানুষ গণ্ডগোলের গান শুনে ওনার প্রেশার চড়ে নাকি তিনশোর কাছেপিঠে পৌঁছেছে গৌর বাবুর ছেলে, প্রতাপ দত্ত পুলিশের কাছে গিয়েছিলেন, কিন্তু থানার দারোগা, বিভাসবাবু বলেছেন সকাল ছটা থেকে রাত দশটার মধ্যে গান গাইলে ওনাদের কিছু করার নেই

তখন প্রতাপ দত্ত বিভাস বাবুর হাতে-পায়ে ধরেন,"কিছু একটা করুন স্যার, বাঁচান আমার বাবাকে!" বিভাস বাবু বললেন,"ঠিক আছে, দেখি কী করা যায়"! বিভাস বাবু একবার গণ্ডগোলকে বোঝাবার চেষ্টা করলেন, কিন্তু সফল হলেন না গণ্ডগোল সাফ বললে,'স্যার, গান গাওয়া কোন আইনে নিষিদ্ধ একবার দেখান, আমি গান ছেড়ে দেব ' অকাট্য যুক্তি! পরে বিভাস বাবু প্রতাপ দত্তকে বললেন,'এক কাজ করুন, আপনার বাবাকে কিছুদিনের জন্যে অন্য কোথাও, মানে আত্মীয়র বাড়ি বা দেশের বাড়ি কোথাও পাঠিয়ে দিয়ে আমার সঙ্গে দেখা করুন, বলব কী করতে হবে' প্রতাপ দত্ত ব্যাপারটা না বুঝলেও মেনে নিলেন বাবাকে গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে আবার দেখা করলেন বিভাস বাবুর সঙ্গে বিভাস বাবু বললেন,'এবার আপনি কয়েক দিন একটা কুকুর পুষুন শুধু ওটিকে বেঁধে রাখবেন ওই গোলোকেশের ঘরের পাশে আপনার যে জানলাটা আছে, তার পাশে ' প্রতাপ দত্ত তাই করলেন ফল ফলতে দেরি হল না গোলোকেশ যেই গান শুরু করল, প্রতাপের সেই কুকুর আকাশের দিকে মুখ তুলে তার ভাষায় চিৎকার শুরু করল মিনিট দুয়েকের মধ্যে পাড়ার যত কুকুর ছিল, সব এসে জড়ো হল জানলার নিচে এবং সোৎসাহে যোগ দিল সেই চিৎকারে কান পাতা দায়! গোলোকেশও পড়ল বিপদে সে থামলে, কুকুররা থামে বটে, কিন্তু শুরু করলেই আবার যোগ দেয় সে রেগে গিয়ে প্রতাপকে কুকুরকে অন্য জায়গায় বাঁধতে বলল, কিন্তু প্রতাপ তাতে কর্ণপাতও করল না অগত্যা থানায় হাজির হয়ে বিভাস বাবুকে বলল,'এক্ষুনি এই কুকুর পোষা তথা ভৌ-কার বন্ধ করুন ' বিভাস বাবুরও সাফ জবাব,'কুকুর পোষা বা কুকুরের ডাক কোন আইনে মানা আছে, একবার দেখাও, আমি ব্যবস্থা নেব' বাড়ি ফিরে আরো দুয়েক বার চেষ্টা করেছিল গান করার, কিন্তু এই ভয়ঙ্কর কর্ণবিদারী কোরাসের কাছে প্রতিবারই তাকে হার মানতে হল অবশেষে সে নাকি তার হারমোনিয়ামটা বেচেই দিয়েছে

 

এই সব হতে হতে এক সময় স্কুলের গণ্ডী পার করে আমরা নানান দিকে ছড়িয়ে গেলাম ধীরে ধীরে যোগাযোগটাও কমে গেল প্রায় পঁচিশ বছর কেটে গেছে বছর পাঁচেক হল উত্তর কলকাতার ভাড়া বাড়ি ছেড়ে দক্ষিণ শহরতলিতে একটা ফ্ল্যাট কিনে চলে এসেছি হঠাৎ মাসখানেক আগে ফেসবুকে একটা ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পেলাম গণ্ডগোলের মানে গোলোকেশের ছবি দেখে চিনতে অসুবিধেও হল না সেও আমার মতই ছেলেমেয়ে নিয়ে পুরোপুরি সংসারী ফোন নম্বর দেওয়া-নেওয়া হল, বার দুয়েক ফোনে গল্পগুজবও হল ওরা এখনও উত্তর কলকাতার পুরোনো বাড়িতেই থাকে বলল, আমাদের এই এলাকাটা ও নাকি চেনে একদিন বাড়ি আসতে বললাম

 

এর মধ্যে এসে গেল পুজোর ছুটি কেনাকাটা, ঠাকুর দেখা, বিজয়া করা - এসব নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম সেদিনটা ছিল শনিবার সন্ধ্যায় বেরিয়েছিলাম স্টেশন পাড়ার বাজার থেকে কয়েকটা জিনিস কিনে আনতে ফেরার সময় বাঁকা বটতলায় দেখি ছোটখাট একটা ভিড়, চেঁচামেচি! উৎসুক হয়ে একটু দাঁড়িয়ে পড়লাম দেখি মিলন, মানে মিলন সাহা একটা লোকের কলার চেপে ধরে খুব হম্বিতম্বি করছে আর চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে 'চোর', 'ডাকাত', 'ইমপস্টার' এই সব বলছে এই পাড়ায় দুই মিলন - আমি আর এ ভালই চিনি জিজ্ঞাসা করলাম,'কী হল মিলন? কী ব্যাপার?' তখন মিলন সাহা বলল ব্যাপারটা আজ মিলনের বাড়িতে একটু আগে ওর বস গোপাল ঘোষ ফোন করে জানান তিনি নাকি এদিকেই কী কাজে এসেছেন স্বভাবতই মিলন সাহা ওঁকে বাড়িতে আসতে বলে পরে বৌকে বলে,'জি জি স্যার আসছেন আমি ঝট করে একটু মিষ্টিটিষ্টি নিয়ে আসি আমি ফেরার আগে উনি যদি এসে পড়েন, তাহলে বসিও ' এর খানিকক্ষণ পরে নাকি এই লোকটা বেল বাজায় মিলন সাহার স্ত্রী দরজা খুলতে লোকটা বলে,'মিলন আছে?' মিলন সাহার স্ত্রী বলে,'আপনি কি জি-জি-স্যার?' তাতে লোকটা বলে,'হ্যাঁ' তখন সে লোকটাকে বাইরের ঘরে বসায়, এক গ্লাস মিরিন্ডা দেয় লোকটা মিরিন্ডা শেষ করতে না করতেই ভাগ্যিস মিলন সাহা ফিরে আসে! নইলে কী যে হত, ভগবান জানেন!

 

ইতোমধ্যে ভিড়ের মধ্যে থেকে দু-এক জন একটু আধটু চড়-থাপ্পড় শুরুও করে দিয়েছে এই বার লোকটা চিৎকার করে উঠল,'বলছি আমি স্কুলটিচার, মোটেই চোর নই এখানে আমি আমার বাল্যবন্ধুর বাড়িতে এসেছিলাম, আপনারা বিশ্বাস করুন!' সামনে যে ছেলেটা মারতে উদ্যত হয়েছিল, সে বলল,'বটে? বন্ধু নিজেই চিনতে পারছে না, আবার বাল্যবন্ধু!' লোকটার কথায় কেমন যেন লাগল, ভিড় ঠেলে মুখটা দেখে চমকে উঠলাম - এ তো গোলোকেশ! বললাম,'গোলোকেশ না?' সে এবার চমকে উঠে বলল,'মিলন, তুই এদের বোঝা'! ব্যাপারটা বুঝতে পারলাম - মিলন মুখার্জির বদলে মিলন সাহার বাড়ি চলে গেছে গোলোকেশ এদিকে 'গোপাল ঘোষ' নামক জি-জি-স্যারের জায়গায় এসে পড়েছে 'গোলোকেশ গোলদার' নামক জি-জি-স্যার বুঝতে পেরে মিলন সাহা গোলোকেশের কাছে ক্ষমা চেয়ে চলে গেল গোলোকেশকে নিয়ে আমাদের বাড়ির দিকে যেতে যেতে জিজ্ঞাসা করলাম,'ঠিকানা ছাড়া আসতে গেলি কেন? আমায় ফোন করলেই তো পারতিস '! গোলোকেশের সেই পুরোনো স্টাইলের জবাব,'ভেবেছিলাম, হঠাৎ এসে তোকে চমকে দেব' সত্যিই ওকে নিয়ে আর পারা যায় না!

 | ALEEK PATA- Your Expressive World | Online Magazine |

| Editor: Swarup Chakraborty | Publisher: Debasree Chakraborty |

| Bengali New Year 2024 | April-24 | Seventh Year First Issue |

| © All Rights Reserved by The Editor and The Publisher |

| Published By : Aleek Publishers- www.aleekpublishers.com | 

| a DISHA-The Dreamer Initiative |


No comments:

Post a Comment

Please put your comment here about this post

Main Menu Bar



অলীকপাতার শারদ সংখ্যা ১৪২৯ প্রকাশিত, পড়তে ক্লিক করুন "Current Issue" ট্যাব টিতে , সবাইকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা

Signature Video



অলীকপাতার সংখ্যা পড়ার জন্য ক্লিক করুন 'Current Issue' Tab এ, পুরাতন সংখ্যা পড়ার জন্য 'লাইব্রেরী' ট্যাব ক্লিক করুন। লেখা পাঠান aleekpata@gmail.com এই ঠিকানায়, অকারণেও প্রশ্ন করতে পারেন responsealeekpata@gmail.com এই ঠিকানায় অথবা আমাদের ফেসবুক গ্রুপে।

অলীক পাতায় লেখা পাঠান