ছোট গল্প
পাত্রী
বাছাই
শ্রীমতি সুপ্রিয়া
গঙ্গোপাধ্যায়
হিরণ উজ্জ্বল গৌরবর্ণের
সুঠামদেহী, পাঁচ ফুট দশ ইঞ্চি উচ্চতার বত্রিশ বছর বয়সী এক তরুণ অধ্যাপক। উত্তর কলকাতায় বাঙালি পরিবারে জন্ম হলেও দক্ষিণে আর্যভট্ট
কলেজে ইকনমিকস পড়ায়।শিক্ষার্থীরা
যথেষ্ট শ্রদ্ধার সঙ্গে ভালোবাসে তাঁকে।সহকর্মীরাও একটু সম্ভ্রমের চোখেই দেখে।কারণ একটু রাশভারী প্রকৃতির সে।তাঁর
ব্যক্তিত্বের মোড়কে যে শিশুটি বাস করে সে চায় প্রকৃতির সান্নিধ্য।
বাড়িতে মা,বাবা আর সর্বক্ষণের বিনুমাসি। এ ছাড়া পাখি,কুকুর,বিড়াল_ কোনও কিছুরই অভাব নেই আরেক স্থায়ী সদস্য বাসুকাকার দৌলতে। বাগানের একটি অংশে
নিপুণহাতে একটি জংলী চিড়িয়াখানা বানিয়ে তুলেছে সে।বাবা অবসরপ্রাপ্ত মিলিটারী অফিসার।তিনি এখনও
পর্যন্ত শৃঙ্খলাবদ্ধ জীবনযাপন করেন।তবে সতীর্থদের সঙ্গে প্রায়শঃই কয়েকদিনের জন্য ছোটখাটো
সফরে বেরিয়ে পড়েন।সেই
অবকাশে মা জননী অনেক ব্যক্তিগত কাজকর্ম সেরে ফেলেন।
মাস ছয়েক যাবৎ মায়ের অভিযান
ছেলের জন্য পাত্রী বাছাইয়ের। গোটাচারেক সংবাদপত্রে, এছাড়া
অন - লাইন বিবাহ - বন্ধনীগুলিতেও বিজ্ঞাপন দিয়েছেন _ '... ফর্সা,অতীব সুন্দরী,স্লিম,৫'৪" - ৫'৬" উচ্চতা বিশিষ্ট ২৫ - ২৮ বয়সের যোগ্য পাত্রী চাই ।' বিশেষণের
ঘনঘটা অনুল্লিখিত রইল।
যত সম্বন্ধই আসুক সবই নাকচ
করে দেয় হিরণ।মায়ের
অনুনয়,' তোর পছন্দের কেউ থাকে তো বল।খোঁজখবর করি।' ' বলছি
তো কেউ নেই।' 'তাহলে তোর প্রিয় নায়িকার নাম বল তো দেখি।' তা-ও
বলে না।
কাকে কীভাবে বোঝাবে যে ওর একমাত্র কৃষ্ণবর্ণের গোলগাল চেহারার পাত্রীই পছন্দ_ ঠিক যেমনটি দেখেছিল কৌসাম্বীর পাহাড়ে ঝর্ণার ধারে! তার
অপরূপ মাধুরী দেশ - কালের সীমা ছাড়িয়ে জুড়ে আছে হিরণের হৃদয়।
পুজোর ছুটিতে ব্যাগ গুছিয়ে
পালাল পাহাড় - ভ্রমণে।ছুটি
পড়লেই হিরণকে টানে পাহাড়।বেড়ানোর সঙ্গী একটি ট্যাব_ যার
মধ্যে তার প্রিয় প্রচুর বই লোড করা আছে।আর ব্যাগে সব সময়ে উপস্থিত বাইনোকুলার, সামান্য প্রসাধনী,এক সেট
কালোপযোগী জামাকাপড় আর টুকিটাকি ওষুধপত্র, ব্যস্। অন্ -
লাইনে টিকিট কাটাই ছিল।ট্রেনে
চেপে বসল।
পাশের সহযাত্রীটি সামনে রাজনীতির
কচ্ কচে গল্প দ্বারা তার ভ্রমণসুখের বিঘ্ন ঘটাচ্ছিলেন। রাত বাড়তে শয়নের উদ্যোগের অছিলায়
ভদ্র লোকটির হাত থেকে রেহাই পাওয়া গেল। শুয়েই ঘুম।ট্রেনের দোলানির হাতে নিজেকে সঁপে দিল হিরণ।
ভোরের দিকে একটি স্টেশনে
ট্রেনটি কিছুক্ষণ দাঁড়াবার পর জানা গেল আরও ঘন্টাখানেক সেটি ঐ স্টেশনে দাঁড়াবে।ইত্যবসরে
ইঞ্জিনের বৈকল্য দূর করা হবে।
ব্যাগটি ট্রেনে রেখেই
প্লাটফর্মটি একটু ঘুরে দেখতে গিয়ে এক ভদ্রলোকের সঙ্গে আলাপ হল।ওখানকার
ডিয়ার পার্কে গিয়ে বসল তারা। পার্কে আগে থেকেই জনাচারেক সম্ভ্রান্ত ব্যক্তির কথোপকথন চলছিল। ' এই সেরেছে , এরা যে পাত্রী দেখে ফিরছে '( স্বগতোক্তি
)।এদের
মধ্যে দু'জন পাত্র _ অরণ্য
আর কিঙ্কর।ফর্সা
মেয়ে দেখে দেখে অরুচি ধরে গিয়েছে।তাই ওরা আলোচনা করে একটি বিজ্ঞাপনের বয়ান প্রস্তুত করছে। '... ফর্সা ব্যতীত সুশ্রী, অনূর্ধ্ব পঁচিশ, কমপক্ষে পাঁচ ফুট উচ্চতা
বিশিষ্ট সুযোগ্য পাত্রী চাই।' "না রে , এরকম
হলে কেমন হয়! '...পচিশ থেকে আঠাশ বছর বয়সী কমপক্ষে পাঁচ ফুট উচ্চতার শ্যামাঙ্গী পাত্রী চাই..'।" ' আরে দূর দূর, আমি বলছি, "... কৃষ্ণ বর্ণা,স্বাস্থ্যবতী,পচিশ থেকে আঠাশ বছর বয়সী কমপক্ষে পাঁচ ফুট উচ্চতার লাবণ্যময়ী সুপাত্রী চাই। ফর্সা হলে আলাপ নিষ্প্রয়োজন.."।' ওদের
চারজনের সঙ্গে হিরণও হাত মেলাতে জোর্ আওয়াজ হল।ট্রেন চলতে শুরু করেছে। 'মানে? স্বপ্ন ছিল!'
সাত সকালেই শাদী ডট - কমে এমন
একটি বিজ্ঞাপন পাঠাল হিরণ।
প্রথম সাত দিন কোনও সাড়া নেই।এরপর একটি
মাত্র জবাব এল _ এক বৌদি তার ননদের জন্য ক্লিক করেছেন।পাহাড় থেকে
বেড়িয়ে ফেরার পর কলেজে ছুটির সময়কালে একদিন সহসা সেই বৌদির রূপসী ননদিনী,আঁখি ওরফে রাজন্যা সোরেনের আবির্ভাব! বয়স পঁচিশ- এর সামান্য
কম বলেই মনে হয়।
আলাপের পর হিরণ উদ্বেলিত। ' এই বিজ্ঞাপনের জবাবে -এ
একমাত্র আপনাদের প্রতিক্রিয়া পেলাম। কোন মানসিকতা থেকে এটিকে মঞ্জুর করলেন আপনি?' ' স্যার, আপনাকে
কলেজের প্রথম দিনের ক্লাসে দেখেই আমি .. ম ম মানে পছন্দ করে ফেলেছি।শুধু কালো
বলে নিজেকে গুটিয়ে রেখেছিলাম।...' সান -
গ্লাসটা সরাতেই আঁখির ফাঁদে পড়লেন ডা: শ্রীমান হিরণ তরফদার। ' এ
চোখ তো আমার যৌবনের শুরু থেকেই চেনা_ সেই
কৌসাম্বীতে পাহাড়ের ঝর্ণা ধারায় স্নাত (স্বগতোক্তি)!' 'রাজন্যা !!!' ' স্যার !!'
| ALEEK PATA- Your Expressive World | Online Magazine |
| Editor: Swarup Chakraborty | Publisher: Debasree Chakraborty |
| Bengali New Year 2024 | April-24 | Seventh Year First Issue |
| © All Rights Reserved by The Editor and The Publisher |
| Published By : Aleek Publishers- www.aleekpublishers.com |
| a DISHA-The Dreamer Initiative |
No comments:
Post a Comment
Please put your comment here about this post