ছোট গল্প
খুশি
জয়ীতা গাঙ্গুলী
Image Source: Internet |
ছোট্ট রিচির আজ সকাল থেকেই
খুব মন খারাপ।
এইবারের জন্মদিনেও ওর বাবা মা থাকতে পারবেননা।এরকম অবশ্য প্রতিবছরই হয়।এবারে ক্লাস
সেভেন ওর।যখন
ছোট ছিলো এগুলো নিয়ে ওর মন খারাপ হতো।তোমরা হয়তো ভাবছো রিচি তো ছোটোই।কিন্তু রিচির মনে হয় ও অনেক অনেক
বড় হয়ে গেছে।আসলে
রিচির বাবা মা দুজনেই একটা বিশাল বড় মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানি তে কাজ করেন।তাই তাদের
বেশির ভাগ সময়ই নানা রকম কনফারেন্সের জন্য বাইরে যেতে হয়।প্রথম প্রথম তারা রিচিকে সঙ্গে করে
নিয়ে গেলেও এখন রিচিকে আর সাথে নিয়ে যান না।যদি না রিচির স্কুলে ছুটি থাকে।রিচি তো
এমনটাও শুনেছে যে ওর ক্লাস টেন হয়ে গেলে ওকে হোস্টেলে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।আসলে
মাম্মামের তো ওকে বিদেশেই পড়াশোনা করানোর ইচ্ছে ছিল।কিন্তু রিচির বাপি বলেছিলেন রিচি
একটু হলেও নিজের দেশের সব কিছু চিনুক জানুক।তারপর বিদেশ তো রইলোই পড়ে।সত্যি এইটুকু বয়সেই রিচির বেশ কিছু
জায়গা ঘোরা হয়ে গেছে।গত
বছরের গরমের ছুটিতে তো ওরা থাইল্যান্ড গিয়েছিল।তার আগেরবার লন্ডন।আরো যখন ছোট
ছিল ও শুনেছে ওকে নিয়ে মাম্মাম আর বাপি লন্ডন,প্যারিস,নেদারল্যান্ডস সব ঘুরে এসেছে।রিচির যদিও সেগুলো কিছুই মনে নেই।কিন্তু ওখান
থেকে কিনে আনা অনেক জিনিস ওর আছে।আর বাপি আর মাম্মাম সাথে ওর অনেকগুলো ছবিও আছে।তাই ওদের
কথা গুলো যে সত্যি সেটা রিচি জানে।যদিও ওরা দুজনে কখনো মিথ্যা কথা বলেনা।কারণ ওরা বলে ওরা মিথ্যে কথা বললে
রিচি তো মিথ্যে কথা বলা শিখবেই সাথে সাথে ওর আরো নানা রকম মিথ্যে আশা তৈরি হবে
যেটা ঠিক হবেনা।সেই
জন্যেই তো যখন রিচি বললো জন্মদিনের কথা দুজনেই না বলে দিলো।দুজনেরই নাকি কনফারেন্স রয়েছে বাইরে
সেই সময়।অবশ্য
রিচির কি উপহার চায় সেটা দুজনেই জানিয়ে দিতে বলেছে।কি করে বোঝায় রিচি যে ওর শুধু ওদের
দুজনকেই চাই।একসাথে।এর বাইরে
অন্য কোনো জিনিস ওর কোনো খুশি নেই।অবশ্য শুধু রিচি না। মাম্মাম আর বাপি নিজেরাও খুব কম একসাথে থাকে।তবে নিয়ম
করে দুজনে একসাথে ওকে ভিডিও কল করার চেষ্টা করে। হ্যাঁ,ভিডিও
কলেই তো রিচির সাথে ওদের কথা বেশি হয়।রিচির সাথে এমনিতে থাকে সব সময়ের জন্য এলা আণ্টি।এলা আণ্টি
ওর খুব প্রিয়।কারণ
ওর সাথেই তো ও থাকে।এর
আগে ওর দিদুন অবশ্য থাকতো ওর সাথে।তখন রিচির জীবন এতটা একার ছিলোনা।কিন্তু দু বছর হলো দিদুন মারা গেছে
তাই এখন রিচি একদমই একা।এলা
আণ্টি ওকে সময় সময়ে সব করায়।রিচির জীবনটাই তো ঘড়ির তালে তালে চলে।সকালে ওঠে।তখন মাম্মাম আর বাপি ওকে ভিডিও কল
করে।কখনো
একসাথে কখনো আলাদা আলাদা।পাঁচ
মিনিট করে।ওই
একই প্রশ্ন।আজকে
কি করবে রিচি।হোমওয়ার্ক
কমপ্লিট রেখেছে কিনা।
হ্যাভ অ্যা নাইস ডে।রিচির
মুখস্ত হয়ে গেছে।রাতে
আবার পাঁচ মিনিট করে।
লাঞ্চ করেছিল কিনা, ডিনার করেছে কিনা।এলা আন্টিকে
ডিসটার্ব করেনি তো।এইসব।রিচির এগুলো
মুখস্ত।এর
বাইরে রিচির থেকে ওদের কিছু জানার নেই।রিচির ওদের জন্য মন খারাপ কিনা।কিচ্ছুনা।
প্রথম প্রথম রিচির অনেক কষ্ট
হতো।অনেক
কান্নাকাটি করতো।কিন্তু
এখন আর কিছু বলেনা ও।কারণ
জানে ওদের কাছে ওই সময়টা নেই।আর বলে রিচির ভবিষ্যতের কথা ভেবেই নাকি ওরা এগুলো সব করে।তাই তো রিচি
যা চায় তাই ওরা রিচিকে কিনে দিতে পারে।যেখানে চায় রিচি যেতে পারে।আর কথাটা সত্যি।রিচির কোনো জিনিসের অভাব কোনো দিনই
নেই।ঘর
ভর্তি অফুরন্ত খেলনা,আলমারি ভর্তি জামাকাপড়।ওর স্কুলে
যাতায়াতের জন্য গাড়ি ও আছে।ড্রাইভার আঙ্কেল নিয়ে আসে নিয়ে যায় ওকে।আর বাপি বা
মাম্মাম থাকলে ওরাও মাঝে মাঝে নিয়ে যায় রিচিকে স্কুলে।সেইদিন গুলো রিচির কাছে খুব স্পেশাল। ও এত খুশি
হয়।যদিও
সেরকম প্রকাশ করেনা।কারণ
বাপি বলে বেশি ইমোশনাল হলে এই জগতে হয়না। হ্যাঁ লোকে ভাববে এসব বড় বড় কথা বোঝার মত বয়স হয়নি ওর।কিন্তু বাপি
আর মাম্মাম এর মতে এখনই ওর এগুলো বোঝার সময়।এখন থেকে বুঝলে তবে তো ও বড় হয়ে সব
পারবে।দিন
দিন কম্পিটিশন বাড়ছে।বাপি,মাম্মাম যেরকম ভাবে বড় হয়েছে রিচিকে আরো বেশি তৈরি হতে
হবে।কিসের
যেনো একটা অদৃশ্য প্রতিযোগিতা চলছে ওর মনে সব সময়।কর্ সাথে ও নিজেও জানেনা।পড়াশোনায়
অবশ্য ও ভালোই।প্রতিবছর
প্রথম না হলেও প্রথম তিনজনের মধ্যেই থাকে।ওদের স্কুলটাও অবশ্য ভারতের সেরা দশটা স্কুলের মধ্যে একটা।সব ভালো ভালো
ছেলে মেয়েরাই পড়ে ওখানে।তবে রিচির মতো এতটা একা কেউ থাকেনা।রিচির মত এত সেরা সেরা জিনিসও সবার
নেই।এইজন্য
ও জানে স্কুলের অনেকে ওকে হিংসা করে।ওর সাথে মিশতে চায়না।বাড়িতেও রিচি একা।স্কুলেও
রিচি একা।এছাড়াও
অনেক এক্টিভিটিস আছে রিচির।সাঁতার, ক্যারাটে,অ্যাবাকাস,ফ্রেঞ্চ
ভাষা শেখা।
হ্যাঁ,রিচিকে বাইরের ভাষা শিখতে হবে বলেছে বাপি।এরপরে বাইরে
গিয়ে থাকতে হবে।তাই
এখন থেকে শিখতে থাকলে ওর অনেক বেশি সুবিধা হবে।ওর বাপি ও জানে।ফ্রেঞ্চ,জার্মান,স্প্যানিশ।মাম্মাম ও।ওদের স্কুলেও ফ্রেঞ্চ এর ক্লাস হয়।তবে রিচি আলাদা করে কোচিং নেয়।এতসব কিছু
করার বিনিময়ে ওরা রিচিকে অনেক জিনিস কিনে দেয়। রিচিও চাহিদা করে।নতুন নতুন
ফোন,ল্যাপটপ,গেমিং
এর জিনিস।নতুন
ড্রেস।মাথার
মধ্যে এসব জিনিস ভাবতে থাকে ও।অনেকে স্কুলে বলে ও নাকি ভীষন বেশি স্পয়লড।হবে হয়তো
বা। ও
তো জানে ওর বাপি আর মাম্মাম ও যা বলবে তাই করবেই।হয়তো এভাবেই ওরা রিচিকে সময় না
দেওয়াটা পূর্ণ করতে চায়। রিচিই বা তার সুযোগটা নেবেনা কেন? আর
তো কিছু পাওয়ার নেই ওর ওদের থেকে।মাঝে মাঝে মনে হয় ছেড়ে ছুড়ে পালিয়ে যাবে ও কোথাও।কিন্তু সেই
যাওয়ার জায়গাটা এখনও নেই ওর।তাই এখানেই থাকতে হয়।মাঝে মাঝে অবশ্য ওর উল্টোপাল্টা
বায়না পূরণ করে দিলে কিছু দিনের জন্য খুশি থাকে ও।কিন্তু ঐ অল্প কিছু সময়ই।তারপরেই
খারাপ লাগাটা চেপে ধরে।
মাঝে মাঝে ও ভাবে বাপি আর মাম্মামকে বলবে ওর মনের কথা।কিন্তু ফোনে ওদের সময় হয়না।আর যখন ওদের
পায় রিচি তখন এসব কথা বলতে ওর ভালো লাগেনা।আজকেও ও জানতো ওরা আসতে পারবেনা।তাও বলে দেখলো।আসলে ওরা মনে হয় রিচিকে ভালোই
বাসেনা।
যাক এসব ভাবনা বাদ দিয়ে রিচি
কম্পিউটারে চোখ রাখলো।বেশ
কিছু প্রজেক্ট আছে স্কুলের।সেগুলোর জন্য নেটের সাহায্য লাগবে ওর।প্রজেক্ট করতে করতেই রিচির মাথায়
একটা ভাবনা আসলো।ভাবনাটা
ঠিক করতে করতেই ও পরবর্তী কাজগুলো ভেবে নিলো ওর।আর মুখের মধ্যে ফুটে উঠলো একটা মৃদু
হাসি।
তার পাঁচ দিন পরের কথা।রিচির
জন্মদিন আজ।বাপি
আর মাম্মাম তো আসতে পারবেনা জানতোই।অনেক গিফট পাঠিয়েছে অবশ্য ওরা।কিন্তু ওগুলো নিয়ে। ওর কোনো
মাথা ব্যথা নেই।বাপি
আর মাম্মাম ওর জন্য বেশ কিছু করে টাকা প্রতি মাসেই পাঠিয়ে দেয়।তার থেকেই ও
এইবারে কিছু টাকা তুলেছে।বাপি
পরে নোটিশ পেলে ওর কাছে জানতে চাইবে নিশ্চয়ই যে ও কি করলো টাকা নিয়ে।কিন্তু এখন
ওগুলোর জন্য সময় নেই ওর।আজকে
স্কুলে যাবেনা ও।আজ
ও যাচ্ছে বেশ দূরে।এই
সবটাই অবশ্য এলা আণ্টি আর ওর স্কুলের একজন ম্যামের সাহায্যে। ও চেয়েছিল আজকের দিনটা কোনো অনাথ
আশ্রমে গিয়ে কাটাতে।সেই
মত ও পৌঁছে গেছে ওর বাড়ির থেকে একটু দূরের একটা অনাথ আশ্রমে।ওখানকার বাচ্চাদের জন্য অনেক খেলনা,জমা,বই সব নিয়ে
এসেছে ও।আর
খাবার তো আছেই।সব
কেনাকাটা অবশ্য এলা আণ্টিই করে দিয়েছে।ওর স্কুলের ম্যাম ও এসেছেন আজ।আর ও ভিতরে ঢুকে অবাক হয়ে দেখলো ওর
বেশ কিছু সহপাঠীরাও এসেছে।যাদের থেকে ও দূরে সরে থাকতো হয়তো কিছুটা ভুল বুঝেই।
নাহ্,আর
কোনো মন খারাপ নেই ওর।এতদিন
এটার কথা ভাবেনি কেনো ও সেটাই জানেনা রিচি।এরপর থেকে ওর মন খারাপ হলেই ও এখানে চলে আসবে।ওদের সবার
এই নির্মল হাসির মধ্যে ওর মন ভালো করার রসদ ও খুঁজে পেয়ে যাবে যখন ওর প্রয়োজন
হবে।আসলে
এই পৃথিবীতে ভালবাসার আর খুশির অভাব নেই।অপেক্ষা শুধু ঠিক সময় সেটাকে খুঁজে নেওয়ার।
| ALEEK PATA- Your Expressive World | Online Magazine |
| Editor: Swarup Chakraborty | Publisher: Debasree Chakraborty |
| Bengali New Year 2024 | April-24 | Seventh Year First Issue |
| © All Rights Reserved by The Editor and The Publisher |
| Published By : Aleek Publishers- www.aleekpublishers.com |
| a DISHA-The Dreamer Initiative |
No comments:
Post a Comment
Please put your comment here about this post