অলীক পাতার অন্যান্য সংখ্যা- পড়তে হলে ক্লিক করুন Library ট্যাব টি



"অলীক পাতা নববর্ষ সংখ্যা ১৪৩১ প্রকাশিত, সমস্ত লেখক -লেখিকা এবং পাঠক -পাঠিকাদের জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা..."বিশদে জানতে ক্লিক করুন " Notice Board ট্যাব টিতে"

Saturday, April 13, 2024

ছোট গল্প - খুশি - জয়ীতা গাঙ্গুলী

 ছোট গল্প

 

খুশি 

জয়ীতা গাঙ্গুলী



Image Source: Internet

 

ছোট্ট রিচির আজ সকাল থেকেই খুব মন খারাপ এইবারের জন্মদিনেও ওর বাবা মা থাকতে পারবেননাএরকম অবশ্য প্রতিবছরই হয়এবারে ক্লাস সেভেন ওরযখন ছোট ছিলো এগুলো নিয়ে ওর মন খারাপ হতোতোমরা হয়তো ভাবছো রিচি তো ছোটোইকিন্তু রিচির মনে হয় ও অনেক অনেক বড় হয়ে গেছেআসলে রিচির বাবা মা দুজনেই একটা বিশাল বড় মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানি তে কাজ করেনতাই তাদের বেশির ভাগ সময়ই নানা রকম কনফারেন্সের জন্য বাইরে যেতে হয়প্রথম প্রথম তারা রিচিকে সঙ্গে করে নিয়ে গেলেও এখন রিচিকে আর সাথে নিয়ে যান নাযদি না রিচির স্কুলে ছুটি থাকেরিচি তো এমনটাও শুনেছে যে ওর ক্লাস টেন হয়ে গেলে ওকে হোস্টেলে পাঠিয়ে দেওয়া হবেআসলে মাম্মামের তো ওকে বিদেশেই পড়াশোনা করানোর ইচ্ছে ছিলকিন্তু রিচির বাপি বলেছিলেন রিচি একটু হলেও নিজের দেশের সব কিছু চিনুক জানুকতারপর বিদেশ তো রইলোই পড়েসত্যি এইটুকু বয়সেই রিচির বেশ কিছু জায়গা ঘোরা হয়ে গেছেগত বছরের গরমের ছুটিতে তো ওরা থাইল্যান্ড গিয়েছিলতার আগেরবার লন্ডনআরো যখন ছোট ছিল ও শুনেছে ওকে নিয়ে মাম্মাম আর বাপি লন্ডন,প্যারিস,নেদারল্যান্ডস সব ঘুরে এসেছেরিচির যদিও সেগুলো কিছুই মনে নেইকিন্তু ওখান থেকে কিনে আনা অনেক জিনিস ওর আছেআর বাপি আর মাম্মাম সাথে ওর অনেকগুলো ছবিও আছেতাই ওদের কথা গুলো যে সত্যি সেটা রিচি জানেযদিও ওরা দুজনে কখনো মিথ্যা কথা বলেনাকারণ ওরা বলে ওরা মিথ্যে কথা বললে রিচি তো মিথ্যে কথা বলা শিখবেই সাথে সাথে ওর আরো নানা রকম মিথ্যে আশা তৈরি হবে যেটা ঠিক হবেনাসেই জন্যেই তো যখন রিচি বললো জন্মদিনের  কথা দুজনেই না বলে দিলোদুজনেরই নাকি কনফারেন্স রয়েছে বাইরে সেই সময়অবশ্য রিচির কি উপহার চায় সেটা দুজনেই জানিয়ে দিতে বলেছেকি করে বোঝায় রিচি যে ওর শুধু ওদের দুজনকেই চাইএকসাথেএর বাইরে অন্য কোনো জিনিস ওর কোনো খুশি নেইঅবশ্য শুধু রিচি না মাম্মাম আর বাপি নিজেরাও খুব কম একসাথে থাকেতবে নিয়ম করে দুজনে একসাথে ওকে ভিডিও কল করার চেষ্টা করে হ্যাঁ,ভিডিও কলেই তো রিচির সাথে ওদের কথা বেশি হয়রিচির সাথে এমনিতে থাকে সব সময়ের জন্য এলা আণ্টিএলা আণ্টি ওর খুব প্রিয়কারণ ওর সাথেই তো ও থাকেএর আগে ওর দিদুন অবশ্য থাকতো ওর সাথেতখন রিচির জীবন এতটা একার ছিলোনাকিন্তু দু বছর হলো দিদুন মারা গেছে তাই এখন রিচি একদমই একাএলা আণ্টি ওকে সময় সময়ে সব করায়রিচির জীবনটাই তো ঘড়ির তালে তালে চলেসকালে ওঠেতখন মাম্মাম আর বাপি ওকে ভিডিও কল করেকখনো একসাথে কখনো আলাদা আলাদাপাঁচ মিনিট করেওই একই প্রশ্নআজকে কি করবে রিচিহোমওয়ার্ক কমপ্লিট রেখেছে কিনা হ্যাভ অ্যা নাইস ডেরিচির মুখস্ত হয়ে গেছেরাতে আবার পাঁচ মিনিট করে লাঞ্চ করেছিল কিনা, ডিনার করেছে কিনাএলা আন্টিকে ডিসটার্ব করেনি তোএইসবরিচির এগুলো মুখস্তএর বাইরে রিচির থেকে ওদের কিছু জানার নেইরিচির ওদের জন্য মন খারাপ কিনাকিচ্ছুনা

প্রথম প্রথম রিচির অনেক কষ্ট হতোঅনেক কান্নাকাটি করতোকিন্তু এখন আর কিছু বলেনা ওকারণ জানে ওদের কাছে ওই সময়টা নেইআর বলে রিচির ভবিষ্যতের কথা ভেবেই নাকি ওরা এগুলো সব করেতাই তো রিচি যা চায় তাই ওরা রিচিকে কিনে দিতে পারেযেখানে চায় রিচি যেতে পারেআর কথাটা সত্যিরিচির কোনো জিনিসের অভাব কোনো দিনই নেইঘর ভর্তি অফুরন্ত খেলনা,আলমারি ভর্তি জামাকাপড়ওর স্কুলে যাতায়াতের জন্য গাড়ি ও আছেড্রাইভার আঙ্কেল নিয়ে আসে নিয়ে যায় ওকেআর বাপি বা মাম্মাম থাকলে ওরাও মাঝে মাঝে নিয়ে যায় রিচিকে স্কুলেসেইদিন গুলো রিচির কাছে খুব স্পেশাল ও এত খুশি হয়যদিও সেরকম প্রকাশ করেনাকারণ বাপি বলে বেশি ইমোশনাল হলে এই জগতে হয়না হ্যাঁ লোকে ভাববে এসব বড় বড় কথা বোঝার মত বয়স হয়নি ওরকিন্তু বাপি আর মাম্মাম এর মতে এখনই ওর এগুলো বোঝার সময়এখন থেকে বুঝলে তবে তো ও বড় হয়ে সব পারবেদিন দিন কম্পিটিশন বাড়ছেবাপি,মাম্মাম যেরকম ভাবে বড় হয়েছে রিচিকে আরো বেশি তৈরি হতে হবেকিসের যেনো একটা অদৃশ্য প্রতিযোগিতা চলছে ওর মনে সব সময়কর্ সাথে ও নিজেও জানেনাপড়াশোনায় অবশ্য ও ভালোইপ্রতিবছর প্রথম না হলেও প্রথম তিনজনের মধ্যেই থাকেওদের স্কুলটাও অবশ্য ভারতের সেরা দশটা স্কুলের মধ্যে একটাসব ভালো ভালো ছেলে মেয়েরাই পড়ে ওখানেতবে রিচির মতো এতটা একা কেউ থাকেনারিচির মত এত সেরা সেরা জিনিসও সবার নেইএইজন্য ও জানে স্কুলের অনেকে ওকে হিংসা করেওর সাথে মিশতে চায়নাবাড়িতেও রিচি একাস্কুলেও রিচি একাএছাড়াও অনেক এক্টিভিটিস আছে রিচিরসাঁতার, ক্যারাটে,অ্যাবাকাস,ফ্রেঞ্চ ভাষা শেখা হ্যাঁ,রিচিকে বাইরের ভাষা শিখতে হবে বলেছে বাপিএরপরে বাইরে গিয়ে থাকতে হবেতাই এখন থেকে শিখতে থাকলে ওর অনেক বেশি সুবিধা হবেওর বাপি ও জানেফ্রেঞ্চ,জার্মান,স্প্যানিশমাম্মাম ওওদের স্কুলেও ফ্রেঞ্চ এর ক্লাস হয়তবে রিচি আলাদা করে কোচিং নেয়এতসব কিছু করার বিনিময়ে ওরা রিচিকে অনেক জিনিস কিনে দেয় রিচিও চাহিদা করেনতুন নতুন ফোন,ল্যাপটপ,গেমিং এর জিনিসনতুন ড্রেসমাথার মধ্যে এসব জিনিস ভাবতে থাকে ওঅনেকে স্কুলে বলে ও নাকি ভীষন বেশি স্পয়লডহবে হয়তো বা ও তো জানে ওর বাপি আর মাম্মাম ও যা বলবে তাই করবেইহয়তো এভাবেই ওরা রিচিকে সময় না দেওয়াটা পূর্ণ করতে চায় রিচিই বা তার সুযোগটা নেবেনা কেন? আর তো কিছু পাওয়ার নেই ওর ওদের থেকেমাঝে মাঝে মনে হয় ছেড়ে ছুড়ে পালিয়ে যাবে ও কোথাওকিন্তু সেই যাওয়ার জায়গাটা এখনও নেই ওরতাই এখানেই থাকতে হয়মাঝে মাঝে অবশ্য ওর উল্টোপাল্টা বায়না পূরণ করে দিলে কিছু দিনের জন্য খুশি থাকে ওকিন্তু ঐ অল্প কিছু সময়ইতারপরেই খারাপ লাগাটা চেপে ধরে মাঝে মাঝে ও ভাবে বাপি আর মাম্মামকে বলবে ওর মনের কথাকিন্তু ফোনে ওদের সময় হয়নাআর যখন ওদের পায় রিচি তখন এসব কথা বলতে ওর ভালো লাগেনাআজকেও ও জানতো ওরা আসতে পারবেনাতাও বলে দেখলোআসলে ওরা মনে হয় রিচিকে ভালোই বাসেনা

যাক এসব ভাবনা বাদ দিয়ে রিচি কম্পিউটারে চোখ রাখলোবেশ কিছু প্রজেক্ট আছে স্কুলেরসেগুলোর জন্য নেটের সাহায্য লাগবে ওরপ্রজেক্ট করতে করতেই রিচির মাথায় একটা ভাবনা আসলোভাবনাটা ঠিক করতে করতেই ও পরবর্তী কাজগুলো ভেবে নিলো ওরআর মুখের মধ্যে ফুটে উঠলো একটা মৃদু হাসি

তার পাঁচ দিন পরের কথারিচির জন্মদিন আজবাপি আর মাম্মাম তো আসতে পারবেনা জানতোইঅনেক গিফট পাঠিয়েছে অবশ্য ওরাকিন্তু ওগুলো নিয়ে ওর কোনো মাথা ব্যথা নেইবাপি আর মাম্মাম ওর জন্য বেশ কিছু করে টাকা প্রতি মাসেই পাঠিয়ে দেয়তার থেকেই ও এইবারে কিছু টাকা তুলেছেবাপি পরে নোটিশ পেলে ওর কাছে জানতে চাইবে নিশ্চয়ই যে ও কি করলো টাকা নিয়েকিন্তু এখন ওগুলোর জন্য সময় নেই ওরআজকে স্কুলে যাবেনা ওআজ ও যাচ্ছে বেশ দূরেএই সবটাই অবশ্য এলা আণ্টি আর ওর স্কুলের একজন ম্যামের সাহায্যে ও চেয়েছিল আজকের দিনটা কোনো অনাথ আশ্রমে গিয়ে কাটাতেসেই মত ও পৌঁছে গেছে ওর বাড়ির থেকে একটু দূরের একটা অনাথ আশ্রমেওখানকার বাচ্চাদের জন্য অনেক খেলনা,জমা,বই সব নিয়ে এসেছে ওআর খাবার তো আছেইসব কেনাকাটা অবশ্য এলা আণ্টিই করে দিয়েছেওর স্কুলের ম্যাম ও এসেছেন আজআর ও ভিতরে ঢুকে অবাক হয়ে দেখলো ওর বেশ কিছু সহপাঠীরাও এসেছেযাদের থেকে ও দূরে সরে থাকতো হয়তো কিছুটা ভুল বুঝেই

নাহ্,আর কোনো মন খারাপ নেই ওরএতদিন এটার কথা ভাবেনি কেনো ও সেটাই জানেনা রিচিএরপর থেকে ওর মন খারাপ হলেই ও এখানে চলে আসবেওদের সবার এই নির্মল হাসির মধ্যে ওর মন ভালো করার রসদ ও খুঁজে পেয়ে যাবে যখন ওর প্রয়োজন হবেআসলে এই পৃথিবীতে ভালবাসার আর খুশির অভাব নেইঅপেক্ষা শুধু ঠিক সময় সেটাকে খুঁজে নেওয়ার


 | ALEEK PATA- Your Expressive World | Online Magazine |

| Editor: Swarup Chakraborty | Publisher: Debasree Chakraborty |

| Bengali New Year 2024 | April-24 | Seventh Year First Issue |

| © All Rights Reserved by The Editor and The Publisher |

| Published By : Aleek Publishers- www.aleekpublishers.com | 

| a DISHA-The Dreamer Initiative |

No comments:

Post a Comment

Please put your comment here about this post

Main Menu Bar



অলীকপাতার শারদ সংখ্যা ১৪২৯ প্রকাশিত, পড়তে ক্লিক করুন "Current Issue" ট্যাব টিতে , সবাইকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা

Signature Video



অলীকপাতার সংখ্যা পড়ার জন্য ক্লিক করুন 'Current Issue' Tab এ, পুরাতন সংখ্যা পড়ার জন্য 'লাইব্রেরী' ট্যাব ক্লিক করুন। লেখা পাঠান aleekpata@gmail.com এই ঠিকানায়, অকারণেও প্রশ্ন করতে পারেন responsealeekpata@gmail.com এই ঠিকানায় অথবা আমাদের ফেসবুক গ্রুপে।

অলীক পাতায় লেখা পাঠান