অলীক পাতার অন্যান্য সংখ্যা- পড়তে হলে ক্লিক করুন Library ট্যাব টি



। । "অলীক পাতা শারদ সংখ্যা ১৪৩১ আসছে এই মহালয়াতে। । লেখা পাঠানোর শেষ তারিখ ১৫ ই আগস্ট রাত ১২ টা ।.."বিশদে জানতে ক্লিক করুন " Notice Board ট্যাব টিতে"

Showing posts with label অধিবাস পর্ব. Show all posts
Showing posts with label অধিবাস পর্ব. Show all posts

Wednesday, October 21, 2020

অধিবাস পর্ব- গল্প- বুদবুদ -বনবীথি পাত্র

 

বুদবুদ
বনবীথি পাত্র

 

গত কয়েকদিন ধরে যখন তখন বৃষ্টি হচ্ছে, অথচ গরম এতটুকুও কমছে না। আজও আকাশে মেঘ রয়েছে। তাই বোধহয় একটু বেশি অন্ধকার। প্রভাত যখন বাড়ি ফিরছে রাস্তার কুকুর আর লাইটপোস্টের আলোগুলো ছাড়া সবাই বোধহয় ঘুমিয়ে পড়েছে। এত বছরের চেনা রাস্তাটাকেও কেমন যেন থমথমে লাগছে। ট্রেন থেকে নেমে একটা রিক্সা করবে ভেবেছিল, কিন্তু ত্রিশটাকা ভাড়া চাওয়াতে আর সেটা সম্ভব হয়নি। মাধবী জেগেই ছিল, একবার ডাকতেই দরজা খুলে দিল  ওর চোখদুটো অনেক কথা জানতে চাইছিল। কিন্তু প্রভাত কোন কথা না বলে সোজা বাথরুমে ঢুকে যায়।
শাওয়ারটা খুলে দিতেই সারাটা দিনের ক্লান্তি ধুয়ে যায় ঠান্ডা জলের ছোঁয়ায়। সেই কাল রাত থেকে হাসপাতাল চত্বরে ছোটাছুটি করতে করতে শরীরটা যেন অবশ হয়ে পড়েছিল। কয়েক কাপ চা আর বিস্কুট ছাড়া কিছুই পেটে পড়েনি। ক্ষিদে কি মানুষের সব চিন্তাকে আবছা করে দেয়? এত চিন্তার মাঝেও আগে যেন কিছু খাবার চাইছে শরীরটা।
ভাত খেতে খেতেই মাধবীকে জানায়,  ডাক্তার যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার আটচল্লিশ ঘন্টার মধ্যে নিতে বলেছেন। নাহলে পেশেন্টের কন্ডিশন ওনাদের হাতের বাইরে চলে যাবে।
সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে চিকিৎসা হলেও ওষুধপত্র, রক্ত নিয়ে হাজার পঞ্চাশের ধাক্কা। গত চারমাস ধরে কোম্পানীর চাকরিটাও নেই প্রভাতের। কোম্পানীর প্রফিট কম হচ্ছিল বলে কিছু কর্মী ছাঁটাই করেছে , আর সেই তালিকাতে প্রভাতের নামটাও থাকায় ওর কাজটা গেছে। অল্প মাইনের চাকরিতে কোনরকমে সংসারটা চলে যেত , সঞ্চয় বলে তো কিছুই করতে পারেনি। এই চারমাসে অভাব তার করুণ চেহারা নিয়ে প্রবেশ করেছে সংসারে। দুমাসের বাড়ি ভাড়া বাকি , মুদির দোকানে ধার। গোয়ালার দুধের রোজ বন্ধ করে দিতে হয়েছে। দেড়বছরের মেয়েটাকেও শুধু ভাত, মুড়ি খাওয়াতে হচ্ছে । সেটুকুও আর কতদিন টানতে পারবে তার কোন ভরসা পাচ্ছে না প্রভাত। মাধবীর যে সামান্য সোনার গয়না ছিল গত পুজোর আগে প্রভাতের হার্নিয়া অপারেশনের সময় সোনার দোকানে বাধা দিয়েছিল। সে গয়না আর কখনও ছাড়াতে পারবে বলে মনে হয়না। তারপর এই বিপদ!
গতকাল সন্ধেবেলা হঠাৎ মায়ের বুকে যন্ত্রণা । সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরেরদিন সকালে সেখান থেকে সদর হাসপাতাল । আপাতত একটু ভালো থাকলেও আটচল্লিশ  ঘন্টার মধ্যে অপারেশন করতে হবে , হার্টের কনডিশন সুবিধার নয়। এই মুহূর্তে পঞ্চাশ হাজার টাকা জোগাড়ের কোনো দিশা পাচ্ছে না দুজনে । মাধবী দাদাকে খবর দেওয়ার কথা বলছে।

-যতই হোক দাদারও তো মা। একবার বলেই দেখো না! মনে হয় এই বিপদের সময়েও মুখ ফিরিয়ে থাকতে পারবেন না।

ছোট থেকেই প্রভাত শুনে আসছে দাদার লেখাপড়ায় মাথা আছে আর ওর নাকি মাথা মোটা। পড়াশুনো হবে না ওর দ্বারা। ছোটবেলাতে খুব হিংসা হত, যখন অঙ্কে ছাব্বিশ পাওয়ার জন্য ও বাবার কাছে মার খেত আর ক্লাসে ফার্স্ট হওয়ার জন্য দাদার ভাগে জুটত অনেক আদর । নিজেকে মা বাবার খারাপ ছেলে ভেবে অন্ধকারে কত কাঁদত কিন্তু পড়াশুনোটা কিছুতেই মাথাতে ঢুকত না। বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে  বুঝেছে পড়াশুনোটা সত্যি ওর জন্য নয় । কোনরকমে উচ্চমাধ্যমিকের গেরোটা পার হয়ে মা সরস্বতীকে প্রণাম জানিয়ে কাজের ধান্দায় লেগে পড়েছিল। দাদা স্কলারশিপের টাকাতে তখন ব্যাঙ্গালোরে আইটি পড়ছে । বাবা চলে যাওয়াতে সংসারে তখন পয়সার বড় দরকার ছিল। তবু দাঁতে দাঁত চেপে মা আর প্রভাত লড়াই করেছিল অভাবের সঙ্গে। মনে একটাই আশা ছিল, দাদা ভালো চাকরী পেয়ে গেলে তাদের আর কোন কষ্ট থাকবে না। কিন্তু তারপরের ঘটনা ঠিক সিনেমাতে যেমন হয়। দাদা তার প্রফেসারের আদুরে মেয়েকে বিয়ে করে ব্যাঙ্গালোরেই থেকে গেল। একবার বৌকে নিয়ে এসেছিল মায়ের কাছে , কিন্তু এই ডার্টি প্লেসে একরাত ও কাটাতে পারেনি নবাবনন্দিনী। সেই রাতেই বৌকে নিয়ে হোটেলে চলে যেতে হয়েছিল মায়ের আদরের বড় ছেলেকে। তারপর কেটে গেছে প্রায় পনেরটা বছর, একদিন ফোন করেও খোঁজ নেয় না মা কেমন আছে। শুধু বিজয়ার পর পাড়ায় এক বড়লোক বন্ধুর বাড়িতে ফোন করে মাকে ডেকে দিতে বলে। মা গেলে একটা প্রণাম অবশ্য জানায় , তবে জানতেও চায়না কেমন আছে। প্রভাত মোবাইল কেনার পর অবশ্য আর বন্ধুর বাড়িতে ফোনটা করে না। প্রভাতের মোবাইলেই ফোন করে।

ছেলেটা নতুন ক্লাসে উঠেছে বই কিনতে হবে । হাজার অভাবেও পাঁচশ টাকা বাঁচিয়ে রেখেছিল মাধবী। সেই বাঁচানো টাকাটুকু স্বামীর হাতে তুলে দেয় আপাতত কিছু ওষুধ যদি কেনা যায় ! অভিমানী সুরেই বলে,

-তুমি যতই বারণ করো, আমি আজ দাদাকে ফোন করব। মাকে বাঁচাতে না হয় দাদার কাছে ভিক্ষা চাইব। দাদার নম্বরটা আমাকে দিয়ে যাও, আমি টেলিফোন বুথ থেকে ফোন করব আজ। আমার মন বলছে দাদা নিশ্চয় সাহায্য করবেন ম। দাদার সঙ্গে কথা বলে আমি তোমাকে জানাবো। তুমি মায়ের অপারেশনের ব্যবস্থা কর।

গতকাল সন্ধেতেও আসার সময় মায়ের হাতটা ধরে মাকে বলে এসেছিল প্রভাত। মা হাতের আলতো চাপে সম্মতি দিয়েছিল। কিন্তু আজ মায়ের এ কি অবস্থা! সম্পূর্ণ নেতিয়ে পড়েছে। অক্সিজেনের মাস্ক পড়ানো রয়েছে মুখে । অক্সিজেন সিলিন্ডার থেকে গ্যাস একটা তরলপূর্ণ পাত্রের মধ্যে দিয়ে শরীরে ঢুকছে । সেই তরলপূর্ণ পাত্রের বুদবুদ টুকু জানান দিচ্ছে মানুষটা এখনও বেঁচে আছে । ডাক্তারবাবু রাউন্ডে এসে এতটুকু ভরসাও দিতে পারলেন না। এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। চোখের সামনে বসে এত কাছের মানুষকে চলে যেতে দেখা যে কি কষ্টের প্রভাত জীবনে প্রথমবার বুঝতে পারল। যদি গতকাল অপারেশনটা হয়ে যেত, মা হয়তো বেঁচে যেত। সত্যি সে মায়ের অধম সন্তান।
তরল পাত্রে বুদবুদটা করছে তো! নাকি থেমে গেল চিরতরে! চিৎকার করে বলতে ইচ্ছা করছো , যেও না মা। ক্রমশ যেন ধীর হয়ে আসছে বুদবুদের গতি ।
মোবাইলটা বাজছে। অজানা একটা নম্বর । মাধবী ফোন করেছে টেলিফোন বুথ থেকে। দাদাকে ফোন করেছিল। দাদা বাইশ লাখ টাকা দিয়ে ফ্ল্যাট কিনেছেন , ওনার হাত এখন একদম ফাঁকা। এখনই উনি কিছু সাহায্য করতে পারবেন না ।
পৃথিবী যেন থমকে গেছে প্রভাতের কাছে । ততক্ষণে থেমে গেছে তরল পাত্রের বুদবুদ 
ওদিকে মাধবী ফোনে বলে চলেছে ,

-টাকার কি করবে তাহলে? সরকার বাবু সুদে টাকা ধার দেন ; ওনার সাথে কথা বলব আমি ?
প্রভাত ডুকরে কেঁদে ওঠে ,

-মাধবী মা আর নেই...

 Download ALEEK PATA Mobile APP

DOWNLOAD ALEEK PATA ANDROID APP


| Aleekpatamagazine.blogspot.com |
  |ALEEK PATA- Your Expressive World |Online Magazine |
| Editor: Swarup Chakraborty | Publisher: Debasree Chakraborty |
| Special Puja Issue, 2020 | October-November 2020 | শারদ সংখ্যা -১৪২৭।
| Fourth Year Third Issue |24 th Edition|
|© All Rights Reserved By The Editor and The Publisher |
|a DISHA-The Dreamer Initiative |
পড়া শেষ? পত্রিকা বন্ধ করুন


অধিবাস পর্ব- গল্প- ভাগাড় -উত্তম কুমার পুরকাইত

ভাগাড়
 উত্তম কুমার পুরকাইত
 

 

জমিতে সার দিয়ে পুকুর পাড়ে এসে দাঁড়ায় সুহাস। ঝুলে থাকা তালগাছটার উপর পা রাখে। হাত-পা ধোয়। মুখে জল দিয়ে কোমর থেকে গামছাটা খোলে। মোছে। পাকা রাস্তার ধার থেকে পচা দুর্গন্ধ ভেসে আসে। মুচিরা ছাল ছাড়িয়ে নিয়ে যাওয়ার পর থেকে বীভৎস অবস্থায় পড়ে আছে গরুটা। কয়েকটা কুকুর খুবলে খুবলে খাচ্ছে। হাড়গোড় নিয়ে টানাটানি করছে।

দৃশ্যটা ভাবলেই তার হোটেলটার কথা মনে পড়ে। মাংস রাখার লম্বা ট্রে-র দিকে তাকিয়ে কতবার তার শরীর ঘিনিয়ে উঠেছে, মরা পশুর কিংবা মানুষের মাংস নয়তো?

তার হাবভাবে সহকর্মীরা বিরক্ত হয়েছে। ম্যানেজারও বকুনি দিয়েছে, তবু তার সন্দেহ ঘোচেনি।

 দ্বিজেন মামা পেড়েছিল কথাটা। মফস্বলের মানুষ দ্বিজেন মামা বলেছিল ওদের ওখানে কোন ভাগাড় থেকে গভীর রাতে নাকি মরা পশু লোপাট হয়। সেগুলো মাংস হয়ে প্যাকেটে ভরে শহরের বড়ো হোটেলে যায়। এমনকি বড়োলোকের বাড়িতেও।

 সুহাস চমকে উঠেছিল। এ গল্প সে বিশ্বাস করেনি। কিন্তু রাজ্য জুড়ে ধরপাকড় হতে দ্বিজেন মামাদের রেস্টুরেন্টটা সিল হয়েছিল। ওখান থেকেও নাকি বেরিয়ে এসেছিল পচা মাংসের প্যাকেট। 

বেচারা দ্বিজেন মামা! যে রেস্টুরেন্টে কাজ করত, সেটাকে বুঝতে পারল না কোনোদিন। অথচ ওই ওকে পাশের হোটেলের কাজটা করে দিয়েছিল।

দ্বিজেন মামা কাজ ছাড়ার পর সুহাসও কাজটা ছেড়ে দিয়েছিল। তারপর কত কাজ ধরল ও। মিস্টিদোকান, সিকুরিটি গার্ড, ব্যাগ কারখানা, গেঞ্জি কারখানা। কোনো জায়গায় থিতু হতে পারল না। বাধ্য হয়ে বৌদি বলল, কোনো কাজ তোমার পোষাচ্ছে না, বাবার জমি-জায়গা নিয়ে থাকো।

সুহাস নাকে হাত চাপে। গন্ধটা সহ্য হয় না। ভাগাড়টা এখন পার্টির দখলে। ক্লাব হবে। তাই তার বাড়ির কাছে রাস্তার ধারে খালপাড় বরাবর সংকীর্ণ জায়গায় এখন মরা পশু। দুর্গন্ধ ছড়ায়। তবু কারো হেলদোল নেই। দূরের লোপাট হওয়া ভাগাড়টার দিকে তাকায় সুহাস। গ্রামের হালচাল এখন ভালো নয়। কেউ প্রতিবাদ করলে ফেঁসে যাওয়ার ভয়।

বাড়ি ফিরে পরিষ্কার জামা-প্যান্টে ছিমছাম বেরিয়ে পড়ে সে। বৌদি বলে, তাড়াতাড়ি ফিরো। 

বৌদিকে দেখলে তার করুণা হয়। ছোটোবেলায় মা মারা যাওয়ার পর অসহায় কোনো মেয়েকে দেখলে যেমন হয়। এ বাড়িতে বৌদির আসা তিন বছর। ঠাকমা তাকে বড় করে স্বর্গে গেলে তার আসা। বৌদি আসার পর বছর না ঘুরতেই ও বেচারির মা-ও মারা যায়। বাবা আবার বিয়ে করে। সেই থেকে বাপের বাড়ির নাম করে না বৌদি।

ফিরো, একা আমার ভয় করে। 

সমবয়সী মেয়ে। না শোনার ভান করে সে বেরিয়ে পড়ে। সোজা ঠাকুর থান। আষাঢ়ের স্যাঁতসেঁতে ওয়েদারে ব্রজেনদাদু ধর্মপাঠ করছে। ইটের রাস্তার উপর দাঁড়িয়ে থাকে সুহাস। ব্যাঙেরা ডাকছে। ওদিকে একটা নেড়িকুত্তাকে ঘিরে কয়েকটা কুকুরের চিৎকার।

ব্রজেনদাদু  অস্বস্তি বোধ করে। হঠাৎ তার মুখ থেকে রাম-রাম ধ্বনি বেরোয়। কে যেন বলে, আহা পাপ পাপ...।

রোজকার মতো শম্ভুদা ধুনুচি আর নারকেল ছোবড়া নিয়ে বসে আছে। একটু পরে বাতাসে ধুনোর গন্ধ হবে। সব উৎকট গন্ধ মুছে যাবে।

কুকুরগুলো থামে না। মিনিট পনেরো দাঁড়িয়ে থেকে সুহাস বসে। প্রতিদিনের এই ধর্মপাঠ যে তার ভালো লাগে তা নয়। তবু আসে। সন্ধ্যার পর বাড়িতে তার কাজ নেই। বৌদি আর সে। ওমন সুন্দর মেয়েটাকে ছেড়ে দাদা কেন যে পালাল! উঠে দাঁড়ায় সুহাস।

শম্ভুদা বলে, বাড়িতে মন টানছে বুঝি? 

জানোই তো সব। 

শম্ভুদা মিটিমিটি হাসে। এসবের অর্থ বোঝে সুহাস। বৌদি আর তাকে নিয়ে টিপ্পনী।

সে প্রতিবাদ করে না। হাসাহাসিটাকে বাড়াবাড়ির পর্যায়ে নিয়ে যেতে ভয়।

সুহাস মোবাইলের আলোয় পথ ফেরে। পুকুর ধারে ডুমুরের পাতায়, ফণীমনসার ঝোপে নিথর হচ্ছে অন্ধকার। দ্রুত হাঁটে সে। বৌদির রান্নাবান্না হয়তো এতক্ষণ শেষ। দরজা বন্ধ করে গুটিসুটি টিভি দেখছে নিশ্চয়। 

শ্যামসুন্দর ঘোষ হেরে যাওয়ায় এ পাড়ায় আতঙ্ক নেমেছে। পুলিশ টহল দিচ্ছে। তবুও। মোবাইলের আলোটা ফেলেই তড়াস করে দু'পা সরে আসে সুহাস। মাথায় চাকা দাগ। সাপটা সাঁ বেগে চলে যায়। সে থম মেরে দাঁড়িয়ে থাকে। কাউকে ডাকে না। মালটা ঝোপের মধ্যে ঢুকে যেতেই সে হাঁটতে থাকে। মৃত্যুচেতনা পৃথিবীর সমস্ত প্রাণীর মধ্যে। তাই সাপও ভয়ে পালায়। পুকুরে জোনাকিরা ভেসে বেড়ায়। আকাশের দিকে ও তাকায়। মেঘলা জমিনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে গোটা কয়েক তারা। হঠাৎ একটা নেমে আসে পৃথিবীতে। তারপর হারিয়ে যায়।

সদর দরজায় ঠেলা দিতে খোলে না। কড়া ধরে নাড়তে বৌদি চমকায়, কে? সুহাস?

অনেকটা ভয়, অনেকট সন্দেহ, অনেকটা আশা। চেনা মানুষের কণ্ঠস্বরও ভুল হয়। ব্রজেনদাদু বলে, ঘোর কলি। কাউকে চেনা যায় না। 

বৌদি আবার হাঁকে, সুহাস?

হ্যাঁ।  নিস্পৃহ কণ্ঠস্বর।

দড়াম করে দরজা খুলে যায়। জ্বলজ্বলে চোখে তাকায় বৌদি, তোমাকে তো বলেছি সন্ধের পর বেশি দেরি করবে না, তাড়াতাড়ি ফিরবে। 

আগে এসব বলত না বৌদি। আজকাল বলে। বাধ্য হয়ে বলে।

সুহাস বাধ্য ছেলের মতো ভেতরে ঢোকে। এখন তাড়াতাড়ি খিল-দরজা এঁটে চোখ-কান খোলা রাখতে হয়। এ গ্রামে এভাবে সবাইকে থাকতে হচ্ছে, অভ্যাস করতে হচ্ছে। সরীসৃপকে জড়িয়ে শুয়ে থাকতে থাকতে সবাই  সাপুড়ে হয়ে যাচ্ছে।

ভাতের থালা সামনে বসিয়ে দিয়ে বৌদি বলে, তুমি তো জানো আমার একা ভয় করে। 

কিন্তু কী করবে সুহাস! সারাক্ষণ একটা যুবতী মেয়ের সান্নিধ্যে তারও তো অস্বস্তি হয়। চারপাশের  নোংরামি, টিপ্পনী যে অসহ্য। কিন্তু বৌদির ভয়টাও তো স্বাভাবিক। তার ঘর থেকে দেখা যায় নবীন-মুকুন্দদের বাড়ি। যে রাতে ওরা খুন হলো, একটাও কুকুর ডাকেনি গ্রামে। বোমার পর বোমা। দিনকয়েক পুলিশ এসে তোলপাড় করল এবাড়ি-ওবাড়ি। আসামি খোঁজার বাহানায় তাদের বাড়িতেও ঢুকল এক সন্ধ্যায়। সুহাস ছিল না। বৌদি ভয় পেয়েছিল। প্রায় কাঁদতে কাঁদতে বলেছিল, সন্ধের পর আর বাইরে থেকো না।

আলটপকা সুহাস বলেছিল, এবার থেকে কি বাড়ির চৌকিদার হয়ে থাকব?

কেমন গম্ভীর হয়ে তাকিয়েছিল বৌদি। স্থির কন্ঠে বলেছিল, চৌকিদার তো পুরুষ মানুষদের হওয়ার কথা।

'পুরুষ' শব্দে সে কাঁপে। এসব আর আলোচনা করতে চায়নি। কতই বা বয়স তার! এখন কেন হবে সে পুরুষ! কেন বৌদির চোখ তার যৌবনে আলোড়িত হবে?  কেন সে একটু একটু করে মরবে?

দাদা পাশের বাড়ির এক বৌদি সম্পর্কের মহিলার সঙ্গে চলে যাওয়ার ঠিক আগে বৌদি হেলথের কাজটা পেয়েছিল। ছোটখাটো চাকরি। গ্রামের পাড়ায়-পাড়ায়, বাড়ি-বাড়ি ঘুরে ওষুধ বিলি আর প্রসূতি মায়েদের খবর নেওয়ার কাজ। এটাকে অবজ্ঞা করে চলে যেতে পারল না। নইলে অল্প শিক্ষিত হলেও বৌদি আধুনিকা। বাড়িতে কোনোদিন কাপড় পরে না। নাইটি নয়তো চুড়িদার। তার পক্ষে অন্য ছেলে জোটানো কঠিন নয়। 

সুহাস তোমার কিছু লাগবে না তো আর?

ডাল দিয়ে আর কত ভাত খাব?

বৌদি রাগ করে, পুকুরে জাল ফেলে তো একটা মাছ তুলতে পারতে।

সুহাস সাড়া করে না। বৌদি এবার হাসে, তুমি তো নিজেই নিরামিষাশী হওয়ার মতলবে আছো। আগে মাংস খেতে, সেটাও ছাড়ছ। কী হয়েছে বলো তো, সাধু হবে?

মাংসের কথা শুনলে ভাগাড়কে সে এড়াতে পারে না। প্যাকেটে জমানো মাংস। বমি পায়। কী করে যে মানুষ পচা মাংস খায়? এসব কথা সে অনেকবার বলেছে বৌদিকে। তবু কেন যে বৌদি সেই মাংসের কথা খুঁচিয়ে তোলে? 

কতদিন মাংস খাইনি, আনো না একদিন।

ঝকঝকে চোখে জ্যান্ত মুরগির মতো বৌদির অঙ্গখানা হঠাৎ দুলে যায়। সুহাস সেই দৃশ্যে কেমন শিউরে যায়। আগে অনেকবার ভেবেছে, তার জায়গায় অন্য কেউ হলে জোর করে টুটি চেপে এই মুরগিকে ছিঁড়ে  খেত। পরক্ষণে সে চমকে উঠেছে। লজ্জায় আধমরা হয়েছে। 

কিন্তু এখন তার নিজেকে যেন ভিজে মোরগের মতো লাগে।

মাথা নিচু করে খাওয়ার চেষ্টা করে সুহাস। পারে না। নিজের কামনা-বাসনা চেপে একদিন সে ভরত কবিরাজের কাছে গিয়েছিল। নিজের লিঙ্গস্খলনের কথা বলেছিল। সব শুনে কবিরাজ বলেছে, শরীরের উত্তেজনা কমানোর সহজ উপায় নিরামিষ ভোজন। 

অর্থাৎ ডিম-মাংস ছাড়া।  সে থতমত খেয়েছে, এই বয়সে নিরামিষ! আমি কি সাধু?

কবিরাজ হেসেছে, সাধু হওয়া কি খারাপ? সুস্থ রুচির মানুষের খাওয়ার জন্য কোনোদিন মাংস লাগে না।  

আর কি কোনো উপায় নেই? সব ছাড়লে শরীরে প্রোটিন পাব কীভাবে? 

হো হো করে হেসেছে ভরত কবিরাজ। হাসির দমক থামলে তার গায়ে হাত বুলিয়ে বলেছে, উপায় একটা আছে। তাড়াতাড়ি বিয়ে কর।

কিন্তু কী করে সে বিয়ে করবে? বিয়ে করলে বৌদি কি থাকতে পারবে এ বাড়িতে? বরং বৌদি তো পারে বিয়ে করে অন্য ঘরে যেতে।

খেতে খেতে কী ভাবছ?

সুহাস চমকে ওঠে। পরক্ষণে মাথা নিচু করে খায়। মনে মনে ভাবে তার মতো বৌদিও কি রুচি হারাচ্ছে? নিজেকে কেমন অপরাধী লাগে।

থালা-বাটি সমেত তার সামনে মেঝেতে থেবড়ে বসে বৌদি। হঠাৎ তার দিকে বীভৎস তাকায়। কেটে কেটে বলে, না পশু-পাখির মাংস না মানুষের। কী যে হলো তোমার? বিয়ে করলে অন্তত বুঝতে মাংসের স্বাদ।

এতদিনে কদাচিৎ ইয়ার্কি করেছে বৌদি। আজ হঠাৎ যেন তার ঘাড় ধরে ঝাঁকায় মেয়েটা। অবাক হয়ে চেয়ে থাকে সুহাস। বৌদি কি পাগল হলো! অচেনা লাগছে কেন? খ্যাপাটে লাগছে কেন? আকাশটা হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে।  

শোনো, তোমার দাদা চলে যাওয়ার পর আমি একা একজন মেয়েমানুষ, কতদিন এভাবে চলবে বলো! আমার সঙ্গে থাকতে তোমার অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। চারদিকে এই খুনখারাপি, আতঙ্ক অসহ্য! 

কেঁপে যায় সে। ভিতরটা কিলবিলিয়ে ওঠে। এমন অলীক হচ্ছে বৌদি, কী করবে সে? 

কোনোরকমে দুটো খেয়ে পালায় সুহাস। উঠানে জামরুল গাছের নিচে দাঁড়ায়। একটা চামচিকে ঝুলছে ডালে। পাঁচিলের ওপার থেকে ঝুলে পড়া বাঁশের পাতায় পাতায় কর্কশ ধ্বনি।

রাত এখন ন'টা। শুলে ঘুম আসার নয়। বৌদির যেমন বাইরের ভয়, তার তেমনি ভিতরে। একই ঘরে তারা উপর-নিচে। তবুও।

নবীন-মুকুন্দ খুন হওয়ার পরের দিন রাতে নিজের ঘর থেকে উঠে এল বৌদি, ও-ঘরে আমার খুব ভয় করছে, তোমার ঘরে থাকব।

আমতা আমতা করে সুহাস বলেছিল, বেশ তো উপরে থাকো। আমি নিচে থাকছি।

বৌদি বয়সে বছর তিনের বড়ো। অনেকটা বড়ো দিদির মতো। কিন্তু সেভাবে  তাকায় না কোনোদিন। কেমন ধারালো, তকতকে দুই চোখ। দৃষ্টি নামিয়েছিল সুহাস। 

বৌদি এক পলক তাকে দেখল। সুযোগ পেয়ে খেলাটা বুঝি মুঠোয় নিল।

আমি কাছে থাকলে ভয়?

আঁতকে উঠেছিল সে। শিকারীর হাতে গুলতি। যেন কোনো পাখিকে নয়, তার হৃদপিণ্ডকে ঘিরে। কোনো জবাব না দিয়ে একটা চাদর আর বালিশে সে নিচে নেমেছিল।

ঘুম হয়নি রাতে। রোমকূপের নিচে চিতলের মতো ঘাই মেরে নাড়াচাড়া করল কেউ। কাছে এল বৌদি। ওকে ড্যাবড্যাবে চোখে তাকিয়ে থাকতে দেখে মুখের উপর মুখটা চেপে ধরল হঠাৎ।

ছিটকে গিয়েছিল সুহাস। চটাস করে চড় মারল বৌদি, একই ঘরে কম বয়সী নারী-পুরুষ এভাবে থাকতে পারে!

সুহাস হাঁপাচ্ছিল। বৌদি চোখে চোখ রেখে বলল, এদ্দিন একই বাড়িতে আছি, তোমার মনের খবর আমি বুঝি না? কথাগুলো বলে তার কাঁধে খামচাল, তুমি জানো ঘরে যার বর থাকে না, বাপের বাড়িতে মা নেই, বাবা দ্বিতীয় পক্ষকে নিয়ে মেয়ের কথা ভুলে যায়, তারা কত নিরাশ্রয়! নবীনরা মরার পরদিন পুলিশগুলো বাড়িতে ঢুকে ইনকোয়ারির নামে যেভাবে আমাকে টর্চার করল, যদি আমার ইজ্জত নিত, তোমার কি কোনো দায় থাকত না? ভয় পাচ্ছ আমাকে নিয়ে এক ঘরে থাকতে?

ওর চোখের উপর চোখ হানল বৌদি, আমি জানি আমার জন্য তোমার শরীর নাচে। তুমি ভরত কবিরাজের কাছে যাও। জানি না ভেবেছ? তোমার ওষুধ আমার চোখে পড়েনি? 

কথাগুলো বলে বৌদি কেমন বেসামাল হয়ে পড়েছিল। অনেকক্ষণ পরে মাথাটা নিচু করে উপরে বিছানায় ফিরে মর্মভেদী কন্ঠে বলেছিল, এরপরে যদি না চাও তাহলে দুজনের মৃত্যু ছাড়া কিছু নেই।

মৃত্যু! দুজনের! বুকের ভিতরে চড়াৎ করে একটা ফাটল নেমে এল। সে তো বাঁচতে চায়। সুস্থ শরীরে, সুস্থ মনে।  

পরের দিন বৌদিকে কেমন শান্ত দেখায়। বলল, কাল রাতের জন্য ক্ষমা কোরো। চারদিকে এত খুন-জখম, নোংরামি হলে মাথার ঠিক থাকে না। তাছাড়া তুমি তো জানো আমি খুব আপডেটেড মেয়ে। রাখঢাক নেই, কুসংস্কার নেই, নিজের বরটার থেকে কিছু না পেয়ে খুব বেহায়া বুঝলে। একটু চুপ থেকে হাসল বেচারি, তোমার কাছাকাছি থাকতে থাকতে তার কথা ভুলতে বসেছি। এটা আমার অন্যায়, তাই না?

সুহাস চমকে উঠেছিল। মেয়েটা সম্পর্কে তার বৌদি। সে জানে তার দাদা চরম অপরাধ করেছে। তার কাছে যা প্রেম,  বৌদির কাছে তা লজ্জা। একটা শবদেহকে ঘিরে তাদের মরণ। সে কেঁপে ওঠে। 

পাকা রাস্তার গন্ধটা এই উঠান থেকেও টের পাওয়া যায়। সুহাসের গা ঘুলিয়ে ওঠে। তবু এখন অনেকক্ষণ সে নাকে সইতে পারে। ভরত কবিরাজের টোটকা কি তাকে সবার থেকে আলাদা করে দিল? নিষ্কাম, নির্লোভ...

বৌদির জন্য মায়া হয়। অনেকদিন মারা গেছে বিদ্যাসাগর, তবুও এদেশে বিধবা কিংবা স্বামী পরিত্যাক্তা সধবাদের পুনর্বিবাহ হলে চোখ বাঁকায় মানুষ। বৌদিকে ও সম্ভ্রমের চোখে দেখে। তাই নিজেকে বাঁধে। এসব হয়তো তার নিজের মতো করে ঘরোয়া সংস্কারকে ধরে রাখার মরিয়া চেষ্টা কিংবা বিশ্বাস। কিন্তু এই বিশ্বাসের ভাঙচুরটা আজকাল সে টের পায়।

খোলা উঠানে জলজ হাওয়ার স্পর্শ পায় সুহাস। মনে তার কু ডাকে। অনেকদিন আগে যতনদার মুদি দোকানে খবরের কাগজে একটা তথ্য দেখেছিল। ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে আঘাতের পর আমেরিকার বাজারে কনডমের হু-হু সেল। মৃত্যুভয়কে নাকি বেমালুম করে দিতে

পারে যৌনাচার। এখন মনে হয়, ঠিক। চারদিকে জীবনের অস্থিরতা, সন্ত্রাসের কারণে সমাজের আনাচে-কানাচে চলছে অবাধ, অবৈধ শারীরিক মগ্নতা। মনের চেয়ে শরীরের চাওয়া-পাওয়া বুঝি তৃপ্তির। বৌদি সংস্কারমুক্ত মেয়ে। কিন্তু সুহাস? শরীরের রন্ধ্রে রন্ধ্রে সে টের পায় নগ্ন না হতে পারার জ্বালা। তাই সবাইকে লুকিয়ে সে ভরত কবিরাজের কাছে ছোটে। শরীরের জ্বালা থেকে রেহাই পেতে। অথচ তার সে লজ্জাও ধরে ফেলল বৌদি। 

সদর থেকে বেরিয়ে সামনে ডোবার ধারে শিমূলের নিচে সে দাঁড়ায়। একটা মাছ ঘাই মারে। খড়কুটো দিয়ে হলদে যে পাখিটা বাঁসা বেধেছে ক্ষীণ ডালে, তারও ঘুম ভাঙে। গা ঝাড়া দিয়ে ডেকে ওঠে কিচকিচ শব্দে। সুহাসের ভয় করে। শিরায় শিরায় সন্ধ্যার সাপটা

এঁকেবেঁকে ছোটে। চারদিকে চাপ চাপ ভয়। অথচ কতদিন বৌদিকে এড়িয়ে আকাশের নিচে রাত বাড়াবে সে, জানে না।

  কতক্ষণ বাইরে থাকবে?

বৌদির ডাক কানে আসতেই নিজের বিছানায় ফেরে। মনে মনে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করে, বৌদি যেন আর কখনো তার কাছে না আসে। ওর রক্ত আছে। সেই রক্তের ডাক ও কেমন করে আটকাবে!

দড়াম করে দরজা বন্ধ করে খিলটা তুলে দেয় বৌদি। সুইচ বোর্ডে হাত। নাইটল্যাম্পের নীলচে আলোয় খুব কাছে। খোপায় হাত গুঁজে কোমরটা বাঁকিয়ে। মিহি আলোয় অলৌকিক পরীর স্টাইলে। কেন পালাল দাদা?

সুহাস চোখ বুঝে নিজের মৃত্যু কামনা করে। মেয়েটা বলে, তোমার সঙ্গে আমার সম্পর্কটা ছেঁদো নয়। তুমি আমার দেবর। মানে দ্বিতীয় বর।

  ছি ছি, আমি এমন সম্পর্কে বিশ্বাসী নয় বৌদি।

বৌদি হাসে, শব্দ করে হাসে। সুন্দরী মেয়েরা কুৎসিত হাসলে হরর সিনেমার প্রেতিনীদের মতো লাগে। কিন্তু এই মেয়েকে একা রেখে সে কোথায় পালাবে! 

বৌদিকে কাছে এগিয়ে আসতে দেখে ভয়ে সিঁটিয়ে যায় সুহাস। হঠাৎ লোকজনের হই হই আওয়াজ ভেসে আসে। দ্রুম দ্রুম। পর পর বোমা। ত্রস্ত রাতের জড়িমা খানখান করে কারা ছুটছে।

উঠে দাঁড়ায় সুহাস। বিছানার উপর থপ করে বসে পড়ে বৌদি। গুলির শব্দ বাতাস ফুঁড়ে ঘরের জানলায় ধাক্কা খায়। বৌদি সজোরে তাকে টেনে নেয়। জড়িয়ে ধরে। খুঁজে ফেরে শরীরের ভেতরে সাহসী শরীর।

সুহাসের সব প্রতিরোধ ভেসে যায়। বৌদি ওর উপর চেপে বসে। তীব্র ফ্ল্যাশে তাকায়। চোখ-মুখ বদলে যাচ্ছে দ্রুত। হরর নায়িকার বিকৃত চেহারা। বলপূর্বক তৃপ্তি পেতে মানুষ কি এমন বদলায়? মানুষ মানুষের মাংস খায় এভাবে?

ছাড়ো বৌদি ছাড়ো। এ অন্যায়, পাপ! 

পাপ? ওই ভরত কবিরাজ বলেছে?  এতদিন এক বাড়িতে আছি, আমি কি জানি না আমার শরীরের দিকে তোমার লোভ?

বৌদি আর বলার সুযোগ দেয় না। হিস হিস করে বলে, আমার কথামতো না চললে কী করতে পারি জানো তো? নিজে মরব, তোমাকেও ফাঁসাব।

ভীত, সন্ত্রস্ত সুহাসের কানের কাছে মুখ আনে বৌদি। বলে, যখন প্রেম থাকে না, জীবনটা অরুচির হয়, তখন এই শরীর, এই মাংস।  তার ভালোমন্দ, পচাগলা কিছুই থাকে না। আর এটাই আমাদের বাঁচিয়ে রাখে। এসো নিজে বাঁচো, আমাকে বাঁচতে দাও। 

এক বঞ্চিত যুবতীর সঙ্গে মেঝেতে যুঝতে যুঝতে আক্রান্ত সুহাসের চোখ পড়ে তক্তাপোশের নিচে। চকচক করছে একটা হেঁসো । এই হেঁসো দিয়ে সে গাছ ছাড়ায়। খেজুরের রস করে, তালের রস করে। আজ মনে হয় এই হেঁসো দিয়ে সে কুচিকুচি করতে পারে আস্ত একটা মেয়েকে। প্রেম আর প্রাণে সে বড় নিষ্ঠুর। 

  

যখন ঘোর কাটে, দেখে তার সামনে একটা মৃত রক্তাক্ত শরীর। চারপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে মৃত শকুন। সে কী করবে বুঝতে পারে না। ধীরে ধীরে হেঁসেটা নামায় নিজের তলপেটের কাছে। মৃত্যুর আগে একটু কাঁদতে ইচ্ছে করে, কিন্তু পারে না। তীব্র দুর্গন্ধ। বমি। হাজার হাজার কুকুর ছুটে আসছে। বানের মতো ভেসে আসছে বৃহদাকার ভাগাড়। সে অসহায়, ভীষণ অসহায়...

Download ALEEK PATA Mobile APP
DOWNLOAD ALEEK PATA ANDROID APP


| Aleekpatamagazine.blogspot.com |
  |ALEEK PATA- Your Expressive World |Online Magazine |
| Editor: Swarup Chakraborty | Publisher: Debasree Chakraborty |
| Special Puja Issue, 2020 | October-November 2020 | শারদ সংখ্যা -১৪২৭।
| Fourth Year Third Issue |24 th Edition|
|© All Rights Reserved By The Editor and The Publisher |
|a DISHA-The Dreamer Initiative |
পড়া শেষ? পত্রিকা বন্ধ করুন


অধিবাস পর্ব- রম্য রচনা-কিতনে বাজু! কিতনে শির!- সৌরচক্র

 


কিতনে বাজু! কিতনে শির!
সৌরচক্র

 




কিতনে বাজু! কিতনে শির! শুনলে মনে হয় যেনো শত্রু পক্ষের গুরুত্ব গণনা চলছে প্রবল বিস্ময়ে। যেনো যুদ্ধ হবে। যদিও এখানে বিষয়'টা অন্যরকম, তবে অনেকটা তাই। বোধন থেকে দশেরা যুদ্ধ জয়ের শৈল্পিক উদযাপন তো বটেই। এক "দশ" (দশভূজা) এর বিজয় উৎসব, আর অন্য "দশ" (দশানন) এর নিধন উৎসব।

 

তবে একটা সময় বিস্ময়টাই শুধু ছিল। কারণ  যুদ্ধ কি তা জানা ছিলনা। জ্ঞান হওয়ার পর প্রথম দুর্গা আর রাবণ'কে দেখলে প্রথম যে বিস্ময়'টা শিশু মনে জাগতো, সেটা অবশ্যই সংখ্যা'র বিস্ময়।  "ও বাবা, কতগুলো হাত! কতগুলো মাথা!"

 

এখন সময় অনেক বদলেছে। এখন যুদ্ধ, বিস্ময় সবই অনুভূত হয়। তবে তাতে কোনও পৌরাণিক কাহিনী নেই। আছে আধুনিক বাস্তব। এখন, অনেক যুদ্ধ করেও যখন ভিড় ঠেলে দুর্গা পুজোর মণ্ডপে বা দশেরার প্রাঙ্গণে প্রবেশের ব্যর্থতা নিয়ে অনেক দূর থেকে দাঁড়িয়ে দেখি হাজার হাজার মানুষের মাথা আর সবার দু'হাত তুলে মোবাইলে ছবি তোলার ব্যস্ততা, তখনও ঠিক একই রকম বিস্ময়ে মাতৃভাষা ভুলে গিয়ে অস্ফুটে বলে ফেলি "উরিব্বাস, কিতনে বাজু! কিতনে শির!"


Download ALEEK PATA Mobile APP

DOWNLOAD ALEEK PATA ANDROID APP


| Aleekpatamagazine.blogspot.com |
  |ALEEK PATA- Your Expressive World |Online Magazine |
| Editor: Swarup Chakraborty | Publisher: Debasree Chakraborty |
| Special Puja Issue, 2020 | October-November 2020 | শারদ সংখ্যা -১৪২৭।
| Fourth Year Third Issue |24 th Edition|
|© All Rights Reserved By The Editor and The Publisher |
|a DISHA-The Dreamer Initiative |
পড়া শেষ? পত্রিকা বন্ধ করুন



 

অধিবাস পর্ব- রহস্য রোমাঞ্চ- প্রতিহিংসা - অবাস্তব ডায়েরী

 

প্রতিহিংসা
অবাস্তব ডায়েরী


অবশেষে  কলকাতার বুকে  ঘটে  যাওয়া  রহস্যময়  খুনের  সমাধানের  নিস্পত্তি  হলো আজ। না ! পুলিশ  এর  কোনো  সমাধান  করতে  পারেনি।  এই  সমাধানের  পিছনে  রয়েছে  আমি আর। ...

না  গোড়া  থেকেই  সব  শুরু করা যাক।

আমি..., নাহ  আমি  নাম  টা   এখনই  বলবো না। কলকাতার  নামী  একটা  বহুজাতিক  সংস্থা উইলসন  ইনফরমাটিকা এর  একজন  টেকনিক্যাল  এজেন্ট।  বিগত  সাত  বছর ধরে এই  কোম্পানি তে  কাজ  করছি। সেক্টর  ফাইভ  এর প্রায়  ২১ একর  জায়গা জুড়ে অফিস। আমাদের অফিস মেইনলি আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর ওপর কাজ করে। দেশে বিদেশে প্রধানত রোবোটিক্স হিউম্যানয়েড আর রোবোটিক্স মেশিনারী এক্সপোর্ট করা হয়। মূলতঃ পূর্ব এশিয়ার দেশ গুলোর সাথেই আমাদের ব্যবসা চলে। 

তবে সাম্প্রতিক কালে জার্মানিতে আমাদের নতুন ব্রাঞ্চ অফিস খুলছে।আমার মনের মতো একটা  প্রোফাইল।আমার সহকর্মী বলতে অর্ঘ্য। ও যদিও আমার আন্ডার এ কাজ করে। বেশ করিৎকর্মা ছেলে। 

 বেশিদিন হয়নি জয়েন করেছে তবুও কর্মদক্ষতার জন্য কোম্পানির সুনজরে এসেছে। এছাড়া আরেকজন আছে  রাহুল। একটু নিজের স্বার্থ নিয়ে চলে বলে ওর সাথে আমার বেশি বনে না। 

আর ছিল আমাদের ডিপার্টমেন্টাল হেড রেহান। ও ছিল আমাদের থেকে অনেক বছরের সিনিয়র। বিদেশে কাজ করার জন্য ওর জন্য কমিউনিকেশন ছিল দুর্দান্ত। আর রোবোটিক্স এর জন্য ছিল অগাধ জ্ঞান। মূলত বেশ কিছু  সফলতার জন্যই ওকে ডিপার্টমেন্টাল হেড করা হয়েছে। আর একজন অসাধারণ টীম লিডার। চারিত্রিক দিক থেকে যেমন খুব ভালোমানুষ ছিল, তেমনি কর্মদক্ষতা ছিল। 

আমাদের সাথে সম্পর্ক এতটাই ভালো ছিল যে  মাঝে মাঝে ওর বাড়ির হাউস পার্টিতে আমাদের ইনভাইট করতো। ওর বাড়িতে ওর নিজস্ব বানানো একটা রোবট আছে। আমাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলো।

ওর নাম ছিল মোমো।  ওর বাড়ির লোক অন্য শহরে থাকতো , তাই টুকটাক কাজের জন্যই নাকি এইসব বানিয়েছিলো। প্রায়  ১৬ রকম  ভাষা  জানতো  মোমো। আমাদের  কোম্পানির  বানানো  রোবটের  তুলনায়  অনেকটাই  আলাদা  ছিল  মোমো। ওর সমস্ত  ইনফরমেশন  নখদর্পনে  ছিল। সব  থেকে  আশ্চর্য  ছিল  ও প্রত্যেক  তা  মানুষ  কে  আলাদা ভাবে  চিনতে  পারতো। আর ওকে  বানানো  হয়েছিল  অবিকল  একটা মানুষ এর  মতো। আর যখন    কেউ  রেহানের  বাড়ি  আসত তারা  মোমো   কে  দেখে ঘাবড়ে  যেত। 




রিসেন্টলি আমাদের  অফিস থেকে  দুজন   কে  জার্মানি  পাঠাবার  প্রস্তাব  উঠেছে। আমরা  সবাই  নিশ্চিত  রেহানের এর  সাথে  আরেকজন  কে  পাঠানো  হবে। প্রত্যেকেই  ফরেন  ট্যুরের  লোভ  সামলাতে  পারছি না। কিন্তু অদ্ভুত ভাবে আমাকে আর অর্ঘ্যকে সিলেক্ট করা হয়েছে এই মিটিং এর জন্য। আমরা তো যারপরনাই খুশি।জীবনে প্রথম বার সুযোগ পেয়ে অর্ঘ্য তো পুরো পাগল। 

আবার রেহান কে জন্য বেশ খারাপ ও লাগছে। এরকম একজন সিনিয়রকে কেন সিলেক্ট করলো না তা আমার মাথায় ঢুকলো না। অফিস শেষে আমরা দুজন তাই গেলাম রেহান এর বাড়ি। দেখি ও ল্যাপটপের সামনে বসে ডায়রি  নিয়ে কিছু একটা করছে। আমাদের দেখতে পেয়ে চট করে ডায়েরি আর ল্যাপটপ টা বন্ধ করে দিলো। আমাদের দেখে ব্যস্ত হয়ে বললো 

এই কিছু না, আচ্ছা, তোরা  যেন কবে যাচ্ছিস ? ”

আমাদের তো সব ঠিক করে আছে। শুধু অফিস থেকে টিকেট আসলেই হবে। কিন্তু যাই বল তোকে কেন সিলেক্ট করলো ঠিক বুঝলাম না। তুই আমাদের সিনিয়র, তার ওপর আবার বাইরের প্রজেক্ট কমপ্লিট করার এক্সপেরিয়েন্স আছে”।

মুখটা নামিয়ে কথাটা বললো রেহান। অর্ঘ্য বললো “তুই কি খুব আপসেট ?” “আরে দূর আপসেট হতে যাবো কেনো?” তোদের ওপর কোম্পানি কত বড় দায়িত্ব দিয়েছে। টিম লিডার হিসেবে আমারও খুব ভালো লেগেছে। তোরা ভালো ভাবে প্রজেক্ট সামলা। একদিন না একদিন টিম লিডার সবাইকেই হতে হবে।

আজ আমি আছি,কাল তোদের মধ্যেই কেউ হবি”।

বলতে বলতে দেখি সামনে হাজির মোমো।

আমাদের সামনে দাড়াতেই ওর চোখে দুটো সবুজ আলো জ্বলে উঠলো।

তার পর বললো  “ওয়েলকম দীপন। ওয়েলকম অর্ঘ্য। মোমো তোমাদের স্বাগত জানায়।“ তারপর সামনের টেবিলে কাপ গুলো রেখে চলে গেলো।

আমি বললাম “ল্যাপটপের সামনে বসে অত মনোযোগ দিয়ে কি করছিলি?

“আর বলিস না মোমো কে আরেকটু অ্যাডভান্স বানাবো ভাবছিলাম। সামনের মাসে রোব সাইন্স এক্সিবিশন এর জন্য ওকে নিয়ে যাবো। তোরা যাওয়ার পরেই এই এক্সিবিশন টা”।

তার পরে আবার ডাইরি টা খুলে লিখতে বসে গেলো।

ওর হাব ভাবে বুঝলাম , ও বলতে চাইছে  তোরা এবার মানে মানে কেটে পড়। 

কফির শেষ চুমুক টা দিয়ে আমি অর্ঘ্য কে নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। 

গাড়িতে যেতে যেতে অর্ঘ্য চুপ করে বসে। আমি বললাম , “আজ গাড়িতে যাচ্ছিস কাল আবার ফ্লাইটে চড়বি”।

আমার স্বপ্নের ক্লাব বায়ার্ন মিউনিখ। একবার হলেও ইচ্ছে ছিলো আলিয়াঁজ এরিনা র সামনে দাড়াব। ছোটো বেলায় জার্মানী কে ফুটবল ওয়ার্ল্ডকাপেই দেখেছি।  আর কদিন বাদে জার্মানী তে পা রাখবো।"

অর্ঘ্য এতক্ষণ চুপ ছিল। এবার ও মুখ খুললো, " তুই মোমো র হাব ভাব পরিবর্তন দেখলি?"

 আমি বললাম  “রেহান ওকে কত অ্যাডভান্স বানাচ্ছে। একটু তো পরিবর্তন হবেই। এমনিতেই ওকে আবার সামনের মাসে  হ্যাকথনে পাঠাবে। কত ভালো রেহান দা।

আমাদের কত করে উইশ করলো। নিজে যাচ্ছে না তাও কোনো আফসোস নেই”

অর্ঘ্য শুধু বললো  “সেইই”।



তারপর তিন দিন কেটে গেল। পরের সপ্তাহে আমাদের যাওয়া। রাতের ডিনার করছি, দেখি অর্ঘ্যর বাড়ি থেকে কল করছে। ফোন ধরতেই বলল,

"ওর পিসির একটা অ্যাকসিডেন্ট হইছে। ইমিডিয়েটলি হসপিটাল যেতে হবে ।

কোনো রকমে খাবার ফেলেই হসপিটাল এ পৌঁছলাম। হসপিটালে গিয়ে দেখি আইসিউ এর সামনে অর্ঘ্য আর ওর কয়েকজন আত্মীয় দাঁড়িয়ে, একরকম বিধ্স্ত হয়ে। আমি ওকে জিজ্ঞেস করলাম “এসব হল কি করে ?”

অর্ঘ্য বলল “জানি না , টিউশন পড়িয়ে ফিরছিল , ডাক্তার বলছে কিছুতে হেভিলি শক খেয়েছে। ইন্টারনাল অর্গান অনেক ড্যামেজ খেয়েছে। বাঁচার সম্ভাবনা নেই একদম।”

 পরদিনই অর্ঘ্যর কথা সত্যি প্রমাণিত হল। ওর পিসি মারা গেল। এরম অস্বাভাবিক মৃত্যুর জন্য পুলিশে তদন্ত শুরু করলো। আর এদিকে  গোটা  অফিস চাউর  হয়ে গেছে এই ঘটনাটা।  বস থেকে  শুরু করে এমপ্লয়ী  সব্বাই ফোন করছে।  ঘটনা শুনে রেহানও দুঃখ প্রকাশ করলো। আমাকে অফিসে ডেকে বলল “আরে ভাই বসের  মুখে  শুনলাম , অর্ঘ্যর ইনসিডেন্টটা...। তোরা  এতো বড়ো  একটা প্রজেক্টে যাবি ,আর  ঠিক  সেই  সময়েই  এরকম একটা আকস্মিক  ঘটনা।  আচ্ছা  চল একবার ওদের  বাড়ি যাই।” 

হুমমম চল, এমনিতে ছেলেটা ভেঙে পড়েছে, এই সময়ে  মানসিক শক্তি  খুব দরকার”। আমি সম্মতি জানিয়ে বললাম। 



এই ঘটনার পর অর্ঘ্য জানিয়ে দিল ওর পক্ষে আর প্রজেক্টে জার্মানি যাওয়া সম্ভব না। ওর কথায় আমি চমকে উঠলাম আর  বললাম “আর মাত্র এক সপ্তাহ  বাকি আছে ,লাইফ এর  এতো বড়ো  একটা অপরচুনিটি কি করে ছাড়বি  তুই ?” অর্ঘ্য এর কোনো উত্তর দিল না। আমি আবার  বললাম “দেখ ভাই, আমি চাই না তুই এই প্রজেক্ট থেকে  সরে যাস।  ঠান্ডা মাথায় ভেবে সব ডিসিশন নে। “ কিন্তু এই মৃত্যু যেহেতু অস্বাভাবিক সন্দেহের আওতায় অর্ঘ্য আছে।  তাই অর্ঘ্যকে শহর ছাড়তে বারণ করেছে লোকাল পুলিশ। ফলে আর কিছু করার থাকলো না। অবশ্য পুলিশ এখনো কোনো রহস্য উদ্ধার করতে পারেনি। কারণ এরম ইলেকট্রিক শক হঠাৎ রাস্তায় লাগার কোনো স্বাভাবিক কারণ নেই। আর যদি কেউ খুন করে থাকে ,তবে এভাবে ইলেকট্রিক শক দিয়ে খুন করবেই বা কেন আর এটা করা সম্ভব না।

নেক্সট দিন আমি কেবিনে বসে কাজ করছি। অর্ঘ্য স্যার কে বললো ওর না যেতে পারার  কারণ।

স্যার সবটাই জানতো, তাই মেনে নিলো। আমাকে অ্যাসিস্ট করার জন্য আমাদের জুনিয়র রাহুলকে নেওয়া  হলো। স্যার বললেন ও যেন আমার থেকে সব কিছু   বুঝে নেয়। 

রাহুল আমাদের সাথে বেশি মেলামেশা করতো না। নরমাল মুখ দেখা হলে শুধু কথা বলতো।


কিন্তু ওই দিন দেখি স্যারের কেবিনে স্যার আর রেহানদা র কি একটা বিষয় নিয়ে তর্কাতর্কি হচ্ছে। কিছুক্ষন পর রেহান গোমড়া মুখ করে বেরিয়ে এল। আমরা জিজ্ঞেস করতে ও আমাদের এড়িয়ে চলে গেল। কিন্তু এসব খবর হাওয়ায় ভাসে। পরে জানলাম অর্ঘ্য যাবেনা তাই জন্য ও জানতে চেয়েছিল ওর জায়গায় রাহুল কে
  কেন পাঠানো হচ্ছে।তো বস বলেছে “তুমি হোল্ড এ থাকো ,যদি ওদের কেউ না যেতে পারে, তাহলেই তুমি যাবে।” এইরকম শর্ত শুনে রেহান গিয়েছে ক্ষেপে।  তবে এ ব্যাপার নিয়ে আমরা রেহানদা কে খুব একটা ঘাটালাম না। রাহুল আমার থেকে সমস্ত কাজ বুঝে নিল। 





আমার যাওয়ার ঠিক তিন দিন আগেই ঘটলো সেই ঘটনা। আমার একজন নিকট আত্মীয়ের এক্সিডেন্ট হলো। এক্সিডেন্টের কারণ অর্ঘ্যর পিসির মতোই ইলেকট্রিক  শক খেয়ে। তবে আমার আত্মীয় যে আমার সম্পর্কে দাদা হয় প্রাণে বেঁচে গেছে। কিন্তু পুরো প্যারালাইসিস হয়ে গেছে। কথা বলার শক্তি হারিয়েছে। আমাদের কেমন যেন সন্দেহ হল দুটো মৃত্যুই কোনো এক ব্যক্তির জন্য হয়েছে। আর সেই ব্যক্তিটি একজনই। মন সায় দিচ্ছিল না যে প্রজেক্ট থেকে ইস্তফা দি। কিন্তু কি করবো বুঝতে পারছিলাম না। 

 

অর্ঘ্য কেন জানি না সেদিনের পর থেকে বারবার রেহান দাকে  সন্দেহ করছিল। তবে ওর মত লোককে সন্দেহ করা অমূলক। কিন্তু অর্ঘ্য বারবার বলছিল এর পেছনে রেহানের হাত আছে। তাই অর্ঘ্য বলল একবার “রেহানের বাড়ি যাবি “? অর্ঘ্য ছেলেটা বেশ বুদ্ধিমান ও যা বলে বেশ ভেবেচিন্তে বলে ,তাই ওর কথা ফেলতে পারলাম না। আমি বললাম “চল”। পরদিন একটা কাজের অজুহাতে রেহানের বাড়ি গেলাম আমরা দুজন। আমাদের কে দেখে অবাক হয়ে রেহান বলল ,” আরে তোরা এখানে?”



আমি বললাম “হ্যাঁ রে ওই প্রজেক্টের বিষয়ে একটা সমস্যা হচ্ছে তাই জন্যই তোর কাছে আসা।”

ও হাসিমুখে বলল “ও বা ভালোই করেছিস এসে। বল কি সমস্যা হচ্ছে।”

অর্ঘ্য বলল “রেহান তুই এত কাজে হেল্প করেছিস। আজ আমাদের তরফ থেকে একটা গিফট এনেছি তোমার জন্য। “ বলেই  ও হুইস্কি বোতলটা টেবিলে রাখলো। আমি ব্যাপারটা কিছুই বুঝলাম না। রেহান বোতলটা হাতে নিয়ে হাসিমুখে বলল “আরে এসবের কি দরকার ছিল। তা এনেছিস যখন আজ এইটা হাতে নিয়েই কথা হোক। দাঁড়া আমি গ্লাস আর বরফ নিয়ে আসি”। এরপর তিনজন হুইস্কি হাতে কথা বলতে থাকলাম ,আস্তে আস্তে দেখলাম রেহান কেমন নেশার ঘোরে ভুলভাল বকা শুরু করেছে। ও বলছে “ভাই তোরা জানিস আমি তোদের মধ্যে সব চেয়ে সেরা এমপ্লয়ী । তোরা সব আমার কাছে চুনোপুঁটি রে। আমি জানিস আইআইটি বোম্বে র স্টুডেন্ট ছিলাম। তোদের আমার সাথে কথা বলার ও যোগ্যতা নেই। সেইখানে বস তোদের কে প্রজেক্ট এ নিয়েছে বলে কি সাপের পাঁচ পা দেখেছিস? তোদের যোগ্যতা কি ওখানে যাওয়ার। আরে তোদের থেকে তো আমার রোবট অনেক বেশি কাজ করে দেবে। ওকে আমি ডিজাইন করেছি আমার স্বার্থসিদ্ধির জন্য। আমার একটা ইশারায় ও সব কিছু করে দেবে। ” শেষের কথাটা  যেন আমার মাথায় বিদ্যুতের ঝিলিক খেলে দিয়ে গেল। স্বার্থসিদ্ধি মানে , কিসের স্বার্থ ,তবে কি ...?

 

একটু পরেই রেহান নেশায় ঝিমিয়ে গেল আমরা দৌড়ে মোমোর খোঁজ করলাম। আর পেয়েও গেলাম, চার্জে লাগানো ছিল। আমি কিছু ভাবার আগেই অর্ঘ্য মাথার দিকটা খুলতে শুরু করলো। আমি বললাম “এসব কি করছিস ?’ অর্ঘ্য বলল “তুই আগামী একঘন্টা যা হচ্ছে চুপচাপ দেখে যা। একটা কোথাও বলবি না। আমাকে আমার কাজ করতে দে “ তারপর ল্যাপটপ খুলে রোবটের মাথার মেমোরিটা স্ক্যান করলো। তাতে অনেক ডেটা দেখাচ্ছিল তারপর আরো কিছুক্ষুণ নাড়াচাড়া করে বলল “ইউরেকা! যা ভেবেছি ঠিক তাই”। আমি বললাম “কি ভেবেছিলি”?  ও আমার সামনে ল্যাপটপ দিয়ে বলল “নিজেই দ্যাখ”। আমার দেখে চক্ষু চড়কগাছ ল্যাপটপ আমার দাদা আর অর্ঘ্যর পিসির ছবিসহ সমস্ত ডিটেলস আছে। আমি বললাম যাদের  অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে তাদের ডিটেলস রেহানের কাছে কি করে এল ,আর কেনই বা এল। অর্ঘ্য শুধু বলল “খুনটা করেছে রেহান। তবে নিজে না মোমোকে দিয়ে। তুই জানিস মোমো রোবট। ও নিজের শরীর থেকে  ২০০ ভোল্ট বের করতে পারে যা একটা মানুষের মৃত্যুর কারণ, আমার পিসির ক্ষেত্রে তাই হয়েছে। ওকে দেখতে যেহেতু মানুষের মত তাই কেউ বুঝতেই পারেনি। ও নাভির মাধ্যমে এই শক শরীরে দিত। তোর দাদাও মারা যেতে পারত কিন্তু ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেছে। রোবটের ডেটাবেস এ ভিকটিমের সমস্ত ডিটেইলস রাখা আছে। আর স্ক্যানের সাহায্যে ও কাউকে আইডেন্টিফাই করতে পারে। আর সমস্ত তথ্যই কোনো না কোনো সোশাল মিডিয়া থেকে সংগ্রহ করা। আমাদের  ফ্যামিলিকে  এভাবে মারা হয়েছে যাতে এই ঘটনায় দুঃখ পেয়ে আমরা যাওয়া ক্যানসেল করে দি। আর এটাই ওর স্বার্থসিদ্ধি ”

আমার মানতে কষ্ট হচ্ছে রেহান এরম করবে ভাবিনি। আমি বললাম “তবে চল সমস্ত ডিটেলস পুলিশকে দি। “ অর্ঘ্য বলল “লাভ নেই , পুলিশ আসতে আসতে ও মোমোকে বদলে ফেলবে। প্রমান কিছুই হবে না। অন্য উপায় করতে হবে। আমার মাথায় একটা আইডিয়া আছে”।

আমি বললাম “কি করবি তবে”?

অর্ঘ্য বলল “যেমনভাবে ও আমাদের যাওয়া নষ্ট করেছে শুধুমাত্র নিজে যেতে পারবে না বলে । এবার আমরা ওর যাওয়া নষ্ট করবো “

আমি বললাম “কি ভাবে “

অর্ঘ্য কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে মুখে শুধু বলল “না থাকবে বাঁশ ,না বাজবে বাঁশি।  তুই খালি দেখতে থাক”।

দেখতে দেখতে তিন দিন কেটে গেছে আমিও দাদার জন্য যাওয়া ক্যানসেল করেছি। আমার বদলে 

রেহান যাওয়ার সুযোগ পেয়েছে। খুব রাগ আর ঘৃণা হচ্ছিল ওর প্রতি। কিন্তু কি আর করা যাবে। আমরা 

বুঝতে দিইনি যে আমরা সব বুঝে গেছি। যদিও এটা অর্ঘ্যর প্ল্যান। পরদিন ও আর রাহুল যাবে। কিন্তু 

পরদিন অফিসে গিয়ে একটা খবর শুনে চমকে উঠলাম। রেহানের কাল অফিস থেকে ফেরার পথে 

অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুর কারণ খুবই চেনা , ইলেকট্রিক শকের জন্য। বুঝতে বাকি রইলো না 

অর্ঘ্যর আসল প্ল্যান ঠিক কি ছিল সত্যি “না থাকবে বাঁশ ,না বাজবে বাঁশি”।

Download ALEEK PATA Mobile APP

DOWNLOAD ALEEK PATA ANDROID APP

| Aleekpatamagazine.blogspot.com |

  |ALEEK PATA- Your Expressive World |Online Magazine |
| Editor: Swarup Chakraborty | Publisher: Debasree Chakraborty |
| Special Puja Issue, 2020 | October-November 2020 | শারদ সংখ্যা -১৪২৭।
| Fourth Year Third Issue |24 th Edition|
|© All Rights Reserved By The Editor and The Publisher |
|a DISHA-The Dreamer Initiative |
পড়া শেষ? পত্রিকা বন্ধ করুন



Main Menu Bar



অলীকপাতার শারদ সংখ্যা ১৪২৯ প্রকাশিত, পড়তে ক্লিক করুন "Current Issue" ট্যাব টিতে , সবাইকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা

Signature Video



অলীকপাতার সংখ্যা পড়ার জন্য ক্লিক করুন 'Current Issue' Tab এ, পুরাতন সংখ্যা পড়ার জন্য 'লাইব্রেরী' ট্যাব ক্লিক করুন। লেখা পাঠান aleekpata@gmail.com এই ঠিকানায়, অকারণেও প্রশ্ন করতে পারেন responsealeekpata@gmail.com এই ঠিকানায় অথবা আমাদের ফেসবুক গ্রুপে।

অলীক পাতায় লেখা পাঠান