অলীক পাতার অন্যান্য সংখ্যা- পড়তে হলে ক্লিক করুন Library ট্যাব টি



। । "অলীক পাতা শারদ সংখ্যা ১৪৩১ আসছে এই মহালয়াতে। । লেখা পাঠানোর শেষ তারিখ ১৫ ই আগস্ট রাত ১২ টা ।.."বিশদে জানতে ক্লিক করুন " Notice Board ট্যাব টিতে"

Showing posts with label ক্রোড় পত্র. Show all posts
Showing posts with label ক্রোড় পত্র. Show all posts

Tuesday, January 11, 2022

সত্যজিৎ শতবর্ষ ক্রোড় পত্র-ফেলুদার জন্মদাতা- ডাঃ অরুণ চট্টোপাধ্যায়

 



ফেলুদার জন্মদাতা

ডাঃ অরুণ চট্টোপাধ্যায়

Image Courtesy: Google Image Gallery

 

যেকোন জিনিস ঐতিহাসিক হয় তখনই যখন ইতিহাস তাকে ধরে রাখে। যুগ থেকে যুগান্তরে অনায়াসে সে হেঁটে চলে মানুষের ভালবাসার স্মৃতির হাত ধরে। তেমনি অভূতপূর্ব এক সৃষ্টি হল ‘ফেলুদা’। এটি শিশুকিশোরদের জন্যে সুগঠিত এক গোয়েন্দা চরিত্র যা ছোটদের তো বটেই মন কেড়ে নিয়েছে আপামর বাঙ্গালীর শিশু-বৃদ্ধ নির্বিশেষে। ছোটদের কাছে রহস্য গল্প খুব প্রিয়। সত্যজিৎ ছোটদের জন্যে সৃষ্টি করেছেন তাদের মনপসন্দ এমন এক গোয়েন্দা চরিত্র যিনি প্রায় সমস্ত ছোটদের মন আর প্রাণ ভরাতে প্রস্তুত। ফেলুদা দীর্ঘকায় সুপুরুষ, সাহসী আর একগুঁয়ে, জ্ঞানী আর অবশ্যই তীক্ষ্ণ বুদ্ধিধর। আচারে ব্যবহারে সাধারণ অথচ অসাধারণ মেধা সম্মত বিশ্লেষণ ক্ষমতা তাঁর। ছোটরা সাধারণত যাদু পছন্দ করে খুব বেশি। কারণ যাদুতে একটা তাৎক্ষণিক মজা আছে। একজন সুদক্ষ যাদুকরের মতই ফেলুদা চট করে ধরে ফেলেন দুষ্টু লোকেদের মতিগতি। আর করে ফেলেন তার সমাধান। অচিরে ধরা পড়ে যায় চোর-ডাকাত-খুনী-গুন্ডা। গল্পের মধ্যে থাকে টান টান উত্তেজনা আর উন্মাদনা। তাই ফেলুদা চরিত্রটি আর তার গল্পগুলো তো ছোটদের একেবারে হৃদয়ে গাঁথা হয়ে গেছে। তাঁর সহকারী কে? না সেও একজন কিশোর। মানে এও কিন্তু কিশোরদের মধ্যে একটি ইঙ্গিত দেওয়া যে কিশোররা ছোট হলেও কিন্তু ছোট নয়। একজন সুযোগ্য আর সুদক্ষ গোয়েন্দার সহকারী সে হতেই পারে। অর্থাৎ এই গোয়েন্দা কাহিনীগুলি যেমন ছোটদের জন্যে তেমনই ছোটদের দ্বারা। এগুলি তাদের মন আর প্রাণের ঐশ্বর্য।

 

সোনার কেল্লা’, ‘জয় বাবা ফেলুনাথ’, ‘হীরক রাজার দেশে’, ‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’, ‘বাক্স রহস্য’, ‘গোরস্থানে সাবধান’, ‘বাদশাহী আংটি’ ‘রয়েল বেঙ্গল রহস্য’, গ্যাংটকে গন্ডগোল ইত্যাদি ফেলুদার রহস্য সমাধানের কীর্তির তালিকা উজ্জ্বল আর দীর্ঘ। ফেলুদার গল্পগুলি তাঁর লেখা হলেও বেশির ভাগ চলচ্ছিত্র নির্মিত হয়েছিল তাঁর সুপুত্র সন্দীপ রায়ের পরিচালনায়। তবে এগুলির চিত্রনাট্য আর সঙ্গীত পরিচালনা ছিল সত্যজিতের।

 

চলচ্চিত্রের এই প্রবাদপুরুষের শততম জন্ম বছরে এসে শুধু যেন মনের মধ্যে ফেলুদার কথাটাই সর্বদা ঘুরপাক খায়। ফেলুদা অসাধ্য সাধন করতে পারেন। তেমনি করতে পারেন তাঁর স্রষ্টা সত্যজিত। সাহিত্যে, শিল্পে, সঙ্গীতে, চলচ্চিত্রে তাঁর অবিস্মরণীয় কর্মকান্ড দেখে শুধুই হতবাক হতে হয়।

 

গুপী আর বাঘার কথায় আসি। গুপী বেচারির গান গাওয়ার কত শখ কিন্তু ক্ষমতা নেই একফোঁটা।  তেমনি প্রাণের বন্ধু বাঘা পারত না বাজনা বাজাতে। তাদের আপ্রাণ চেষ্টার ফসল শুধু লোকালয়ে লোকের তাড়া খেয়ে আঁদাড়ে পাঁদাড়ে গীতবাদ্যের হাস্যকর চেষ্টা করা। অবশেষে বনের প্রান্তে। ঘন বনের গাঢ় অন্ধকারে ভূতের রাজা স্বয়ং এসে দেখা দিলেন তাদের। গুপী আর বাঘার আন্তরিক প্রচেষ্টায় খুশি হয়ে ভূতের রাজা তাদের তিনটে বর দিলেন। সুরহীন গুপী পেল সুর আর বাঘা পেল ঢোল বাজানোর চমৎকার হাত। সে ক্ষমতায় ছিল যাদু মাখা। গান আর বাজনার সুরে মোহিত হয়ে সকলে থাকবে শুধু নীরব নয় নিথরও বটে। একেবারে ‘নট নড়ন চড়ন নট কিচ্ছু’। ফাউ হিসেবেও পেল এক আশ্চর্য চটিজোড়া। যার সাহায্যে তারা ‘যথা ইচ্ছা তথা যাইতে পারত’। রাজার বরে তারা ‘যাহা ইচ্ছা তাহা খাইতে পারত’। কিন্তু মানুষ হিসেবে ছিল বড় খাঁটি ছিল এই বন্ধুযুগল। এমন যাদুর ক্ষমতা তারা ভাল কাজে প্রয়োগ করেছিল কখনও খারাপ কাজে নয়। খারাপের খারাপ আর ভালর ভাল করেছিল। তাইতো তারা পেল দুই সুন্দরী রাজকন্যা আর রাজ্য। ভাল মানুষের পুরস্কার স্বরূপ। ছোটরাও তাদের মনের অগোচরে রোমান্স চায়। এইভাবে গুপী বাঘার কাহিনীতে সত্যজিতের দাদু উপেন্দ্রকিশোর মিশিয়েছিলেন মিষ্টি রোমান্স আর সুযোগ্য নাতি সত্যজিত তাকে চিত্রায়িত করেছেন ‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’ চিত্রে। রূপকথাধর্মী এই চিত্রের ভক্ত তো শিশু-বৃদ্ধ নির্বিশেষে প্রায় সবাই। 

 

এই মোহিত করা চলচ্চিত্র দেখতে দেখতে সকলেই যেন চলে চায় অপূর্ব সেই ইচ্ছাপূরণের দেশে। যেখানে সৎ আর সরল দুই মানুষ তাদের সততার আর অন্যের ভাল করার ইচ্ছাকে ব্রত করে সব দর্শকের মনের ভেতরে ‘যথা ইচ্ছা তথা যাইতে পারে’। শুধু তাই নয় ‘যাহা ইচ্ছা তাহা করিতেও পারে’।

 

দাদু উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী আর বাবা সুকুমার রায় ছিলেন শ্রেষ্ঠ শিশু সাহিত্যিক। অর্থাৎ শিশুদের মনের চাহিদা নিয়ে তাদের মনের মত করে গড়ে তুলতেন ছড়া, গল্প, নাটক, প্রবন্ধ এইসব। রামায়ণ, মহাভারত, পুরাণ এসমস্ত ধর্মগ্রন্থাগুলিকে তাঁরা শিশু উপযোগী করে লিখেছিলেন। এই সমস্ত গল্পের মধ্যে দিয়ে শিশুরা বিনোদনের সঙ্গে শিক্ষায় পেয়েছে প্রচুর। বাবা সুকুমার যেন আক্ষরিক অর্থে জীবনভর শিশুই ছিলেন। শিশুদের সরলমতি মনের দিকে তাকিয়ে তিনি তৈরি করেছিলেন তাঁর বিখ্যাত ‘ননসেন্স ক্লাব’। এর ছিল না মাথা ছিল না মুন্ডু। ছিল না কোনও ভাবার অবকাশ। শুধু হাসি আর মজা দিয়ে সাজানো এই ক্লাবে সবাই উপভোগ করত ‘যথা ইচ্ছা তথা যা’ –এর মজা। ‘হাসজারু’ আর ‘বকচ্ছপ’, ‘হাতিমি’ কিংবা ‘টিয়ামুখো গিরগিটি’ নিয়ে তিনি দিব্বি হাজির হতেন শিশুদের কাছে। ‘হেড অফিসের বড়বাবুর খ্যাংরা ঝাঁটা গোঁফ’ ধরে মেরেছেন টান, ‘কাঠবুড়োকে’ দিয়ে গন্ধ শুঁকিয়েছেন এমন কি ‘চন্ডীদাসের খুড়োকে’ দিয়েও এমন কল বানিয়েছেন যা স্থান নিয়েছে বাংলার প্রবাদে।

 

সেই সুযোগ্য পিতার সুযোগ্য সন্তান হলেন সত্যজিত রায়। যিনি তাঁর পূর্বসুরীদের প্রতিভাকে অনায়াসে টেনে নিয়ে গিয়েছিলেন আর ক্রমেই করেছেন উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর। শুধু তাই নয় সঞ্চারিত করেছেন তাঁর উত্তর সুরীদের মধ্যে। 

 

১৯২১ সালের ২রা মে, পিতা সুকুমার রায়ের ঔরসে ও সুপ্রভা রায়ের গর্ভে কোলকাতায় সত্যজিতের জন্ম হয়। দাদু উপেন্দ্রকিশোর আর বাবা সুকুমারের কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে অন্য অনেক জিনিসের মধ্যে উল্লেখযোগ্য যে জিনিসটি পেয়েছিলেন তা হল শিশুদের ভালবাসা আর শিশুদের সঙ্গে শিশুদের মতই মিশে যাবার ক্ষমতা। বাবা সুকুমার শুধু কথার শিল্পী ছিলেন তাই নয় তিনি একজন সুন্দর চিত্রশিল্পীও ছিলেন। তাই চিত্রশিল্পের প্রতি সত্যজিতের প্রথম থেকেই টান ছিল মাত্রাতিরিক্ত। প্রেসিডেন্সিতে তিনি অর্থনীতি নিয়ে পড়া সত্ত্বেও বিখ্যাত চিত্রশিল্পী নন্দলাল বসুর চিত্রকলা সম্পর্কে আগ্রহী হন। ১৯৪০ থেকে ১৯৪৩ এই তিন বছর শান্তিনিকেতনে নন্দলাল বসুর চিত্রকলা নিয়ে পড়াশোনা করেন। অজন্তা ইলোরা প্রভৃতি গুহায় ভাস্কর্য তাঁকে টেনেছে। পরবর্তীকালে এই অজন্তা ইলোরার পটভূমিকে কেন্দ্র করে তৈরি করা তাঁর বেশ কিছু চলচ্চিত্রও আমরা দেখেছি। ছোটদের জন্যে নির্মিত ‘কৈলাসে কেলেংকারি’ চলচ্ছিত্রে দর্শক এগুলি দেখে মোহিত হয়েছেন। তাঁর বেশির ভাগ চলচ্চিত্রই ছিল ভ্রমণমূলক। অর্থাৎ গল্প এক জায়গায় দাঁড়িয়ে না থেকে স্থান থেকে স্থানে ভ্রমণ করতে থাকে। সোনার কেল্লা, জয় বাবা ফেলুনাথ, গ্যাংটকে গন্ডগোল, কৈলাসে কেলেঙ্কারি ইত্যাদি অনেক। সুন্দর গল্পের মাধ্যমে তিনি বিশেষ করে ছোটদের বেড়িয়ে নিয়ে এসেছেন কত নতুন নতুন জায়গায়। ছেলেদের শুধু শিক্ষাই হয় নি, তারা পেয়েছে আনন্দ, সঞ্চয় করেছে নতুন অভিজ্ঞতা, বিস্ময়। সন্ধান পেয়েছে নিত্য নতুন কৌতূহলের। গল্পের মধ্যে দিয়ে কেউ যখন শিক্ষা পায় তখন সে শিক্ষা তার মনে গেঁথে যায়। সে শিক্ষা সার্থক হয়ে ওঠে। 

 

প্রথম কর্মজীবনে একটি বৃটিশ বিজ্ঞাপন সংস্থার দপ্তরে তিনি জুনিয়র ভিসুয়ালাইজার হিসেবে যোগ দেন। চিত্রসজ্জার এই কাজটি  তাঁর মনে বেশ আগ্রহ আর প্রেরণাদায়ক হয়। পরে যুক্ত হন ভারতীয় পুস্তক প্রকাশনা ‘সিগনেট প্রেসের সঙ্গে’। প্রকাশিতব্য বইগুলির প্রচ্ছদ নির্মাণের কাজ স্বাধীনভাবে পেয়ে বেশ খুশিই হয়েছিলেন তিনি। মনের মত এই কাজটি পেয়ে আর বিশাল সংখ্যক বইয়ের প্রচ্ছদ নির্মাণে্র মাধ্যমে তাঁর শিল্পকর্মের প্রতি সকলের দৃষ্টিও আকর্ষিত হয়। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জহরলাল নেহেরুর ‘দা ডিসকভারি অফ ইন্ডিয়া’ আর বিখ্যাত ব্যাঘ্র শিকারী জিম করবেটের ‘ম্যান ইটার্স অফ কুমায়ুন’ উল্লেখযোগ্য বই দু্টির প্রচ্ছদ নির্মাণ ছিল সত্যজিতের উল্লেখযোগ্য একটি কাজ।

 

১৯৪৭ সালে বেশ কিছু গুণী ব্যক্তির সঙ্গে মিলিত হয়ে ‘ক্যালকাটা ফিল্ম সোসাইটির’ প্রতিষ্ঠা ছিল তাঁর আর একটি বিশাল কীর্তি। এখানে দেশী বিদেশী প্রচুর চলচ্চিত্র দেখার সুযোগ  তাঁর ভেতরের শিল্পসত্ত্বা তাঁকে চলচ্চিত্র শিল্পের দিকে টেনে নিয়ে যেতে প্রেরণা দেয়। বিজ্ঞানের কৃতি ছাত্র বাবা সুকুমার বিলেত থেকে আহরণ করে এনেছিলেন প্রিন্টিং টেকনোলোজির আধুনিক জ্ঞান আর তার প্রয়োগেই করে উন্নত করেছিলেন পৈতৃক পুস্তক প্রকাশনা ব্যবসা ‘ইউ রায় এন্ড সন্স’ এর। বাবার মতই সত্যজিত পেয়েছিলেন শিশু-প্রেম। তিনিও শিশুদের মন বুঝতেন। তাই উদ্ভট কল্পনার জাল বুনে রচনা করেছেন কত কল্পবিজ্ঞানের গল্প এমন কি ভবিষ্যতে চলচ্চিত্রায়িতও করেছেন। তাঁর এমনই অপূর্ব সৃষ্টি হল প্রফেসর শংকু।  

 

শিশুরা প্রকৃতির সঙ্গে মিশে থাকতে ভালবাসে। কারণ প্রকৃতি বিশাল আর সে বাঁধনছাড়া। লাগাম শিশুদের একেবারে পছন্দ নয়। তারা তাদের মনকে ছুটিয়ে নিয়ে যেতে চায় সর্বত্র। তাই তো গাছপালা, ফুলফল, পশু-পাখি, নদ-নদী, খাল-বিল, আকাশ-বাতাস সকলের সঙ্গে খোলামেলা সখ্য শিশুদের। শুধু ছোটরাই নয়, বড়রাও কমবেশি প্রকৃতির ভক্ত। এই প্রকৃতির লেখক বিভুতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের রচনার চিত্ররূপ দিয়ে তিনি নির্মাণ করলেন ‘পথের পাঁচালি’। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের প্রযোজনায় ১৯৫৫ সালে নির্মিত তাঁর প্রথম ‘পথের পাঁচালি’ চলচ্চিত্রটি মন কেড়েছিল মানুষের বেশ ভালভাবেই। কাহিনীতে, আবহে, শিল্পে এই চিত্রটি যেন সত্যিই উঠে এল গ্রাম বাংলার মাটি থেকে। দারিদ্র, সামান্যতা আর প্রকৃতিই ছিল যার পটভূমি। এই চিত্রের শিল্প ভাবনা তাঁর নিজস্ব ছিল। ছবিগুলিও তিনি নিজে এঁকেছিলেন। ছবিটি প্রথমে না হলেও পরে মারাত্মক রকমের সাফল্য পায় আর আজ এক অবিস্মরণীয় চিত্র হিসেবে স্থান পেয়েছে।

 

পরের বছর থেকে প্রায় প্রতি বছরই বেরোতে থাকে অপরাজিত, পরশ পাথর আর জলসাঘর। ভাবতে অবাক হতে হয় এই প্রথম দিকের ছবিগুলিতেই তাঁর শুধু চলচ্চিত্র ভাবনাই নয়, সমাজ ভাবনাও কত পরিণত ছিল। মানুষ কত সহজে কত শক্ত জিনিস পেতে চায়। কারণ তারা অলৌকিকতায় বিশ্বাসী। তাই পরশ পাথরে তারা বিশ্বাস করে যা লোহার মত কুৎসিত অদামী জিনিসকেও মুহূর্তের স্পর্শে সোনার মত উজ্জ্বল আর দামী করে দিতে পারে। এ যেন না পড়ে টুকলি করে প্রথম হওয়ার মত চিন্তা। কিন্তু বাস্তব অন্য কথা বলে আর তা মানুষের চোখের সামনে স্পষ্ট করে দেখিয়ে দিয়েছেন সত্যজিৎ তাঁর পরশ পাথর চলচ্চিত্রে।

 

প্রধানত সাহিত্যাশ্রয়ী চলচ্চিত্রই নির্মাণ করতেন সত্যজিৎ। তৎকালীন বাংলার  সাহিত্য ছিল অত্যন্ত পরিপুষ্ট এক সামাজিক দর্পণ। কিন্তু বইয়ের দুই মলাটের মধ্যে স্থান পাওয়া একটি কাহিনীগুলি  পৌঁছতে পারে সীমিত সংখ্যক মানুষের হাতে। চিত্রায়িত হলে সেটি এসে পড়ে হাজার হাজার মানুষের চোখে। চলচ্চিত্রে বাস্তব জীবনের প্রতিচ্ছবি হিসেবে প্রতিবিম্বিত হয় প্রতিটি মানুষের চোখের সামনে। চোখের মধ্যে দিয়ে চলে যায় অন্তরের গভীরে। উপন্যাসের মর্ম পুরোপুরি গ্রহণ করতে অক্ষম তাঁরাও চলচ্চিত্রটি থেকে এর মর্মার্থ বা স্বাদ গ্রহণ করতে সমর্থ হতে পারেন।  পরিচালকের অন্তর্দৃষ্টি আর বহির্দৃষ্টি যত বেশি গভীর আর পরিচ্ছন্ন হবে ততই চলচ্চিত্রের মর্মার্থ গ্রহণে সমর্থ হবে দর্শকেরা। সত্যজিৎ রায় ছিলেন এমন এক উচ্চ স্তরের পরিচালক।

 

শাস্ত্রীয় সঙ্গীত তাঁর খুব পছন্দের বিষয় ছিল আর তাই তাঁর চলচ্চিত্রে পন্ডিত রবিশংকর, বিলায়েত খাঁ, আলি আকবর খাঁর সেতার, সরোদ, বেহালা প্রভৃতি আবহসঙ্গীতে ব্যবহার করেছেন। গ্রাম্যদৃশ্যে এসেছে ভাটিয়ালি বা পল্লীগীতি আবার গৃহের আভ্যন্তরীণ বা সামাজিক পটভূমিতে ব্যবহৃত হয়েছে সুমধুর রবীন্দ্রসঙ্গীত। সঙ্গীত শুধু ভালবাসাই নয়, সঙ্গীত সৃষ্টিতেও তিনি সিদ্ধহস্ত ছিলেন। ‘পথের পাঁচালি’, ‘অপরাজিত’, ‘অপুর সংসার’, ‘পরশ পাথর’ চলচিত্রগুলিতে সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে ছিলেন পন্ডিত রবিশংকর। ‘জলসাঘর’-এ বিলায়েত খাঁ, ‘দেবী’-তে ছিলেন আলি আকবর খাঁ। কিন্তু ‘তিন কন্যা’ থেকে তাঁর নিজের সঙ্গীত পরিচালনা শুরু। তারপর থেকে নিজের সব ছবিতেই তিনি নিজে সঙ্গীত পরিচালনা করেন। 

 

দীর্ঘাকার সুপুরুষ সত্যজিতের দেহের উচ্চতার মতই বিশাল তাঁর চলচ্চিত্র সৃষ্টির মান। ‘অপুর সংসার’, ‘তিন কন্যা’, ,’দেবী’, ‘মহানগর’, ‘কাঞ্চনজঙ্ঘা’, ‘অভিযান’, ‘নায়ক’, ‘চিড়িয়াখানা’, ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’, ‘সীমাবদ্ধ’, ‘অশনি সংকেত’, ‘জন অরণ্য’, ‘সতরঞ্জ কা খিলাড়ি’, ‘ঘরে বাইরে’, ‘শাখা প্রশাখা’, ‘চারুলতা’, ‘আগন্তুক’, ‘গণশত্রু’, ‘ঘরে বাইরে’ ইত্যাদি হল বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। 

 

আগেই বলেছি তাঁর মনের একটা বিশাল একটা জায়গা দখল করে ছিল ছোটরা অর্থাৎ শিশু আর কিশোররা। ভালবাসার ছোটদের জন্যেই কলমও তুলে নিয়েছিলেন তিনি। ঝুলি ভরে উঠেছিল  নানা স্বাদের গল্পের বিপুল সম্ভারে। মজা, আনন্দ, আর উল্লাস কি না ছিল সে গল্পের মধ্যে? আর ছিল একরাশ কৌতূহল। ছিল রোমহর্ষক মাদকতা।

 

আগেই বলেছি বাবা সুকুমার বিজ্ঞানের কৃতি ছাত্র ছিলেন। সত্যজিৎ নিজে অর্থনীতি পড়েছেন আর শিল্প আর সঙ্গীত সৃষ্টি করেছেন। তবু বিজ্ঞানের যাদুর প্রভাব ছিল তাঁর মধ্যে। কল্পবিজ্ঞান হল কল্পনা দিয়ে গড়া এক বিজ্ঞান যা এখনও আসে নি কিন্তু আসতে পারে। তাই কল্পবিজ্ঞান অনেকেই ভালবাসে। ছোটরা তো বটেই। কল্পবিজ্ঞানের কাহিনী লিখলেন ‘প্রফেসর শংকুকে’ নিয়ে। তাতেই ছোটরা একেবারে মাত হয়ে গেল। এমনই তাঁর লিখনশৈলী।  

 

সারা জীবন ধরে চলচ্চিত্রকে আঁকড়ে ধরে পড়ে থাকা সত্যজিৎ পুরস্কারও পেয়েছিলেন প্রায় সারা জীবন ধরেই। তাঁর বহু আলোচিত চলচ্চিত্র ‘পথের পাঁচালি’ বিভিন্ন দেশের চলচ্চিত্র পুরস্কারে পুরস্কৃত হওয়া ছাড়াও অর্জন করে ‘দাদাসাহেব ফালকে (১৯৮৪)’ পুরস্কার। ৩য় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (১৯৫৫), সপ্তম বার্লিন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র পুরস্কার (১৯৫৭), ১ম সান ফ্রান্সিসকো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব (১৯৫৭)। তিনি মোট ৩৫টি জাতীয় চলচ্চিত্র পেয়েছিলেন। ‘পথের পাঁচালি’ তো বটেই, তাছাড়া ‘অপুর সংসার’, ‘চারুলতা’, ‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’, ‘সীমাবদ্ধ’, ‘আগন্তুক’ শ্রেষ্ঠ ফিচার ফিল্ম, ‘জলসাঘর’, ‘অভিযান’ ও ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’ পেয়েছিল দ্বিতীয় শ্রেষ্ঠ পুরস্কার। এছাড়াও বহু জাতীয় ও আন্তর্জাতিক শুধু পুরস্কারই নয় অসামান্য খ্যাতি পেয়েছিলেন তিনি সারা জগৎ জোড়া। পেয়েছেন বিভিন্ন বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চলচ্চিত্র বিষয়ে সাম্মানিক ডক্টরেট সম্মান।

 

সব পুরস্কারের উল্লেখ এই স্বল্প পরিসরে করা সম্ভব নয়। তেমনি শুধু পুরস্কার দিয়েই বিচার করা যায় না এমন এক বিশাল প্রতিভার।

 

একবার পদ্মশ্রী আর দুবার পদ্মভুষণ ছাড়াও ১৯৯২ সালে তিনি পান ভারতের সবচেয়ে বড় পুরস্কার ‘ভারতরত্ন’। প্রথম ভারতীয় চলচ্চিত্রকার হিসেবে সত্যজিৎ রায় (১৯২১-১৯৯২) বিশ্ব চলচ্চিত্রের সব চেয়ে সম্মানজনক পুরষ্কার ‘অস্কার’ জিতে নেন। ভারতীয় হিসেবে এ গর্বের ভাগ তাঁর সঙ্গে আমরা অনায়াসে ভাগ করে নিতে পারি।

 

 ১৯৯২ সালের ২৩শে এপ্রিল তিনি আমাদের সকলকে কাঁদিয়ে তিনি পাড়ি দিলেন না ফেরার দেশে। তার কিছুদিন আগে অসুস্থ শয্যাশায়ী সত্যজিৎ এই পুরস্কার পান। এটিই বিশ্বের সবচেয়ে বড় চলচ্চিত্র পুরস্কার। তাই তাঁর এই অর্জনে বাঙ্গালী হিসেবে আমরা ভীষণ ভাবে গর্ব বোধ করতে পারি।


ফিরুন সূচিপত্রে



| হিম সংখ্যা-১৪২৮| aleekpata.com|
  |ALEEK PATA- Your Expressive World |Online Magazine |
| Editor: Swarup Chakraborty | Publisher: Debasree Chakraborty|
 Winter , 2021 | August -December 2021 | Fifth Year  Second  Issue |28 th Edition|
|© All Rights Reserved By The Editor and The Publisher |
|a DISHA-The Dreamer Initiative |








সত্যজিৎ শতবর্ষ ক্রোড় পত্র-মনের মানিক-রাতদুপুরে নিশ্চিন্দিপুরে - বনবীথি পাত্র


 

রাতদুপুরে নিশ্চিন্দিপুরে

বনবীথি পাত্র

Collage: Swarup Chakraborty




-অপু, এই অপু, উঠে পড়। এখন না গেলে ভোরে মায়ের ঘুম ভাঙার আগে ফিরতে পারব না। তোর তো কিছুই না, দুমাদুম কিলগুলো তো আমার পিঠেই পড়বে! বেশ তুই ঘুমো, আমি একাই চললাম।

আধো ঘুমে দিদির কথাগুলো সব শুনতে পাচ্ছিল অপু। কিন্তু ঘুম থেকে একটুও উঠতে ইচ্ছা করছিল না ওর। কিন্তু দিদি একা চলে যাচ্ছে শুনেই ধড়ফড় করে উঠে বসে। পাশেই মা ঘুমচ্ছে। ঘুমের মধ্যেও তালপাতার হাতপাখাটা নড়ছে নির্দিষ্ট গতিতে। অপু এতটুকু আওয়াজ না করে আস্তে আস্তে বিছানা থেকে উঠে ঘর থেকে বেরিয়ে আসে। দুর্গা প্রায় নিঃশব্দে ঘরের নড়বড়ে দরজাটা ভেজিয়ে দেয়। দাওয়ায় বাঁশের ওপর রাখা গামছাখানা টেনে নিয়ে কোমরে বেঁধে নেয়। অপু ফিসফিস করে শুধায়,

-গামছা কী হবে?

দুর্গা ভাইয়ের মাথায় আলতো একটা টোকা মেরে বলে,

-আমগুলো কুড়িয়ে রাখবি কিসে?

চারধার একেবারে ঘুটঘুটে অন্ধকার।  অন্ধকারে চোখ বশ হতে খানিক সময় লাগে। কোথাও কোন আলোর রেখাটুকুও নেই। যদিও এ তাদের চেনা পথ, আলোর দরকার নেই। অপুর হাতটা শক্ত করে ধরে মুখুজ্জে বাড়ির পিছন দিকের পথটা দিয়ে হাঁটতে থাকে দুর্গা। এই পথ দিয়ে গেলে মিত্তিরদের আমবাগানটা কাছে হয়। চলতে চলতে অপু হঠাৎ থমকে দাঁড়ায়। দুর্গা একরাশ বিরক্তি নিয়ে জিজ্ঞাসা করে,

-কী হল, থামলি কেন? যদি ভয় করে তো বল্ তোকে বাড়িতে রেখে আসি।

অপু কোন কথা না বলে সামনে আঙুল তুলতেই দুর্গাও থেমে যায়। দোতলার ঘরের জানলা থেকে হালকা আলোর রেখা পড়েছে মিত্তিরদের বাগানের পুবদিকটাতে। আলোতে যে কেউ ওদের দেখে ফেলতে পারে। দুর্গা ফিসফিস করে বলে,

-এত রাত অবধি কোনও মানুষ জেগে থাকে? রাত জেগে বুড়োটা কী করছে বল তো?

অপু বিজ্ঞের স্বরে বলে, -উনি বিজ্ঞানী মানুষ, নিশ্চয় পড়াশুনো করছেন। জানিস দিদি মাস্টারমশাই বলছিলেন, উনি নাকি এমন একটা রোবট বানিয়েছেন...

অপুকে কথাটা শেষ করতে না দিয়ে দুর্গা বিরক্তির সুরে শুধায়, -রোবট আবার কী?

-রোবট হল যন্ত্রচালিত পুতুল। কিন্তু সেই পুতুলটা মানুষের মত সব কাজ করতে পারে।

-গাছ থেকে আম পাড়তে পারে? কাঁদরে মাছ ধরতে পারে? সরকার খুড়ির রোদে দেওয়া তেঁতুলের আচার চুরি করতে পারবে? রোবট এইসব কাজ করতে পারে কি না সেটা জানা নেই অপুর। তাই একটুক্ষণ বোকার মত মুখ করে চুপ করে থেকে বলে,

-দিদি তুই ইস্কুলে যাস না কেন?

অপুর নীরবতার অর্থ রোবট ওসব কাজ পারে না ধরে নেয় দুর্গা এবং রোবটের থেকে নিজেকে অনেক বেশি গুনবতী ভেবে নিয়ে একমুখ হেসে বলে,

-ধুর ও সব পড়াশুনো আমার ভালো লাগে না। এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সময় নষ্ট করবি না যাবি? বাগানের দক্ষিণদিকের পাঁচিলে একটা জায়গা ভাঙা আছে, ওখান দিয়ে ঢুকতে পারবি তো?

অপু ঘাড় নেড়ে সম্মতি জানায়। কিন্তু মনে একটা সন্দেহ থেকেই যায়। একটু ভয়ে ভয়েই দিদিকে বলে,

-বিজ্ঞানীর বাড়ির পাশ দিয়েই তো আমাদের যেতে হবে, যদি আমাদের দেখে ফেলে?

আশঙ্কাটা যে দুর্গার মনেও হচ্ছে না তা নয়। তবু ভাইকে অভয় দিয়ে বলে,

-দেখে ফেলে কী করবে, আমাদের ধরতে নীচে আসবে? আসুক না বুড়ো! বুড়োর দাড়ি টেনে ছিঁড়ে দেব।

বুড়ো বিজ্ঞানী প্রফেসর শঙ্কুর দিদির হাতে নাকাল হওয়ার দৃশ্য কল্পনা করে আপন মনেই হাসতে থাকে অপু। হাসতে হাসতে দুই ভাইবোন সবে বিজ্ঞানীর বাড়ির পাশটাতে এসেছে, ঠিক তখনই একতলার জানলার কার্নিশের ওপর থেকে ঝুপ করে কী যেন একটা লাফিয়ে পড়ল ওদের সামনে। অপু তো ভয়ে দিদিকে জড়িয়ে ধরে দিদির কোলে মুখ লুকোয়। দুর্গাও বেশ ভয় পেতে গিয়েছে। ভূত প্রেত নয় তো! ভয়ে ভয়ে চোখ পিটপিট করে তাকাতেই জ্বলজ্বলে চোখ দুটো দেখে সবে কী জন্তু ভাবছে; তখনই তার ম্যাঁও ডাকে দুজনেই যেন বুকে বল পায়। বিজ্ঞানীর পোষা হুলো বিড়ালটাও ওদের মত নৈশ অভিযানে বেরিয়েছে। বিড়ালটাকে পাশ কাটিয়ে যেতে যেতে অপু বলে,

-ওই বিড়ালটার নাম কী জানিস?

-কী নাম?

অপু বলে, -নিউটন।

-এর থেকে ফুলিদের বিড়ালটার গুগলি নাম অনেক সুন্দর! জানিস গুগলির তিনখানা ছানা হয়েছে। মা বিড়াল পছন্দ করে না তাই, না হলে একটা ছানা আমি বাড়িতে এনে পুষতাম। মিত্তিরদের বাগান এসে যাওয়ায়, বিড়াল পোষার কথাটা আর এগোয় না। মিত্তিরদের বাড়ি লাগোয়া বাগানটা। বাড়িতে পুরো দারোয়ান ছাড়া কেউ থাকে না। সে কি আর এত রাতে না ঘুমিয়ে বাগান পাহাড়া দেবে! তা নিশ্চয় দেবে না। তবু সাবধানে চুপিসাড়ে পাঁচিলের ফাঁক দিয়ে টুক করে ঢুকে পড়ে বাগানে। গতকাল রাতে বৃষ্টি হয়েছিল, এখনও কাদা প্যাচপ্যাচ করছে। পা গেঁথে যাচ্ছে মাটিতে। দিনের বেলাতেই পাঁচিলের বাইরে থেকে হিমসাগর আমের গাছটাকে মোটামুটি নিশানা করে গিয়েছিল দুর্গা। তাই বোধহয় অন্ধকারে গাছটাকে খুঁজে পেতে অসুবিধা হয় না। কোমরে জড়ানো গামছাটা খুলে গাছের তলায় পেতে দেয়।

-আমি গাছ থেকে আম ফেলব আর তুই এই গামছায় জড়ো করবি।

গাছে উঠতে গিয়েও থেমে যায় দুর্গা। অপুর কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে বলে,

-কাউকে আসতে দেখলে আমায় বলবি।

অপু বোকার মত প্রশ্ন করে,

-কী করে বলব। তুই তো গাছের ওপরে থাকবি!

দুর্গা এবার রেগে গিয়ে বলে, -মাথামোটা ছেলে একটা! দুপুরে কতবার শিখিয়ে দিলাম যে তোকে মনে নেই! কুকুরের মত ডাকবি। তাহলেই আমি বুঝে যাব যে কেউ আসছে।

সবে এক মানুষ সমান উঠেছে হঠাৎ কাপড়ে টান পড়তেই রেগে যায় দুর্গা।

-কী রে কাপড় ধরে টানছিস কেন?

কোন উত্তর না পেয়ে পিছন ফিরে তাকিয়েই তো চক্ষু চড়কগাছ দুর্গার।

-এ কে!

অন্ধকারে লম্বা লোকটাকে চিনতেই পারে না দুর্গা। তবে এ যে বুড়ো দারোয়ান নয় তা নিশ্চিত। গাছ থেকে নেমে লোকটাকে ফাঁকি দিয়ে এক দৌড়ে পালাতেই পারে দুর্গা। কিন্তু লোকটার হাতে অপুকে ছেড়ে দিয়ে পালানোর মত ডরপোক্কা দুর্গা নয়। লোকটার হাতের ইশারায় গাছ থেকে নেমে আসে দুর্গা। গাছ থেকে নামতেই দুর্গার হাতটা খপ করে চেপে ধরে লোকটা। দুর্গা বিরক্তি সহকারে বলে,

-লাগছে।

-লাগুক।

গম্ভীর গলায় উত্তর দেয় লোকটা।

অপু অন্ধকারেই দিদির চোখের ভাষা পড়ার চেষ্টা করছিল। তার বড় আশা ছিল এই লোকটার খপ্পর থেকে পালানোর কিছু একটা বুদ্ধি দিদি নিশ্চয় বের করবে। কিন্তু দিদি এমন মুখ নীচু করে আছে, কিছুই দেখতে পেল না অপু। লোকটা ততক্ষণে দুজনকে দুহাতে ধরে প্রায় টানতে টানতে বাগান পেরিয়ে বাড়িতে নিয়ে চলে এসেছে। অপুর ভয় করছে লোকটা ওদের খুব মারবে। আর দুর্গার ভয় হচ্ছে লোকটা যেন মাকে খবর না দেয়। বাড়ির ভেতরে ঢুকে বারান্দার আলোটা জ্বালাতেই লোকটাকে চিনতে পারে দুর্গা। প্রতিবার পুজোর সময় গাঁয়ে আসে, এই বাড়িরই ছেলে ফেলু মিত্তির। গাঁয়ের লোকে বলে, এই লোকটা নাকি পুলিশে চাকরি করে। বড় বড় খুনি, চোর, ডাকাত সবাইকে শায়েস্তা করে।

তবে কি এখন ওদের পুলিশে দেবে? পুলিশের কথা মনে পড়তেই ভয়ে বুকটা কেঁপে ওঠে। গতবছর চড়কের মেলায় একটা চোরকে ধরেছিল পুলিশ। রোগা প্যাংলা লোকটাকে লাঠি দিয়ে মারার দৃশ্যটা দুর্গার চোখের সামনে ভেসে ওঠে। এই লোকটা বাড়িতে এসেছে খবরটা জানলে আজ দুর্গা মোটেও মিত্তিরদের বাগানে আসত না।

ফেলু মিত্তির জোর গলায় হাঁকে,

-তোপসে...

এক ডাকেই ঘরের ভেতর থেকে অল্পবয়সী একটা ছেলে বেরিয়ে আসে।

-আমায় ডাকছিলে ফেলুদা?

তারপরেই অবাক গলায় বলে,

-এরা কারা? এই রাত দুপুরে এদের কোথায় পেলে?

-আম চুরি করতে এসেছিল।

গম্ভীর গলায় উত্তর দেয় ফেলু মিত্তির।

-যা তো ঘর থেকে আমার বন্দুকটা নিয়ে আয় তো...

ফেলুদার হাতের মুঠোটা একটু বোধহয় আলগা হয়ে এসেছিল। অপু বন্দুকের কথা শুনেই ফেলুদার হাত ছাড়িয়ে দিদির পিছনে গিয়ে লুকোয়। দুর্গা এতক্ষণ মাথা নীচু করে দাঁড়িয়েছিল। বন্দুকের কথা শুনে ভয়ে ভয়ে শুধায়,

-তোমার বন্দুক আছে?

উত্তরের অপেক্ষা না করেই কিছুটা আত্ম সমর্পনের ভঙ্গিতেই বলে,

-আমরা তো আম চুরি করিনি, আমাদের গুলি করবে কেন?

ফেলুদা ধমকে ওঠে,

-চুরি করার জন্যই তো গাছে উঠেছিলে।

দুর্গার গলাটা এবার করুণ শোনায়।

-তার জন্য গুলি করে মেরে ফেলবে আমাদের? আমাদের অন্য শাস্তি দাও। বেত মারো, নাক খত দিতে বলো। আর গুলি যদি করতেই হয় আমাকে করো, ভাইকে ছেড়ে দাও।

অপু তো বন্দুকের কথা শুনে থেকে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদেই চলেছে। দিদিকে বন্দুকের গুলির মুখে ছেড়ে দিয়ে সে কিছুতেই যাবে না। দিদিকে জড়িয়ে ধরে এবার সে হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে। এবার ফেলু মিত্তিরও যেন একটু ঘাবড়ে যায়। অপুর কান্নার আওয়াজ শুনে ভেতর থেকে টাক মাথা একটা লোক বেরিয়ে আসে বারান্দায়।

-সবেমাত্র সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ অরণ্যে প্রবেশ করেছি, তখনই কান্নাকাটির আওয়াজ। এই রাতদুপুরে কী এমন ঘটল মশাই!

তোপসে মিচকি হেসে বলে, -ফেলুদা চোর ধরেছে।

টাক মাথা লোকটা অপু দুর্গাকে আপাদ মস্তক নিরীক্ষণ করে হেসে ওঠে,-এ তো নেহাতই ক্ষুদে চোর মশাই। তা এই চোরের জন্য আপনি বন্দুক চাইছিলেন?

ফেলুদা ততক্ষণে একটা চারমিনার সিগারেট ধরিয়ে ইজি চেয়ারে শরীর এলিয়ে দিয়েছে। সিগারেটে একটা লম্বা টান দিয়ে বলে, -লালমোহনবাবু তাহলে আপনিই বলুন কী শাস্তি দেব ওদের?

লালমোহন নামটা শুনে এমন বিচ্ছিরি সময়েও হাসি পেয়ে যায় অপুর। ফিক করে হেসে ফেলতেই টাক মাথা লোকটা গম্ভীর গলায় বলে, -এই খোকা হাসলে কেন?

খোকা ডাকটা শুনলে অপুর বড্ড রাগ হয়। অপু রাগী রাগী গলায় বলে,-আমি খোকা নই। আমার নাম অপু, অপূর্ব রায়। আমার বাবা হরিহর রায়। লালমোহনবাবু ভ্রু কুঁচকে তোপসের দিকে তাকিয়ে বলে, -ধানি লঙ্কার ঝাঁঝ আছে।

ফেলুদা চেয়ারের হেলান ছেড়ে সোজা হয়ে বসে বলে,

-আচ্ছা হরিহর পুরোহিত তোমাদের বাবা!

দুর্গার যেন মনে হল লোকটা বাবার কাছে নালিশ করবে। তেমন হলে এক কেলেঙ্কারি কাণ্ড হবে। তাই ভয়কে যতটা সম্ভব গোপন রেখার চেষ্টা করে বলে,-আমরা দোষ করেছি, আমাদের শাস্তি দাও। বাবার নাম জেনে কী হবে!

টাক মাথা লোকটা হেসে ফেলে এবার।

-যুক্তি কিন্তু একদম ঠিকঠাক আছে মশাই। দোষী শাস্তি পাবে, সেখানে বাবার নাম নিয়ে কী হবে!

-তা খুকি তুমি কোন্ ক্লাসে পড়ো?

অপু জবাব দেয়,

-দিদি পাঠশালা যায় না। আমি যাই?

ফেলুদা চোখ পাকিয়ে দুর্গাকে জিজ্ঞাসা করে,

-পড়াশুনো করো না কেন?

-ভাল্লাগেনা।

-কী ভালো লাগে রাতদুপুরে আম চুরি করতে?

জবাব দেয় না, মাথা নামিয়ে চুপ করে থাকে দুর্গা।

-আমরা একমাস এখন গাঁয়ে থাকব। পাঠশালায় তো এখন গরমের ছুটি চলছে। রোজ দুপুরে এই লালমোহনবাবুর কাছে পড়তে আসবে। এটাই তোমাদের শাস্তি। মনে থাকবে? একদিনও যদি কামাই করো সোজা তোমার বাবার কাছে নালিশ জানাব।

বাধ্য মেয়ের মত ঘাড় নাড়ে দুর্গা। পড়াশুনোর কথাতে দিদিকে এমন রাজি হতে দেখে বেশ অবাক হয় অপু। দুর্গা বলে,

-এবার তাহলে আমরা যাই?

ফেলুদা ঘাড় নাড়িয়ে সম্মতি দেওয়া মাত্র অপুর হাত ধরে বাগানের দিকে ছুটে যাচ্ছিল দুর্গা। কিন্তু ফেলুদার ডাকে থামতেই হয়।

-ওই বনবাদাড় দিয়ে নয়, সদর দরজা দিয়ে যাও। যা তো তোপসে সদর দরজাটা খুলে দে। আর কালকে রাতে যে আমগুলো পড়েছিল, ওই সিঁড়িতে আছে। ওগুলো ওদের দিয়ে দে।

আমের ঝাঁকাটা হাতে পেয়ে একবার ফেলুদাকে ঘুরে দেখে দুর্গা। তারপরেই ভাইয়ের হাত ধরে এক ছুট। লোকটাকে যতটা খারাপ মনে করেছিল ততটা নয়। আমের ঝাঁকাটা রান্নাঘরের পিছনে লুকিয়ে দুজনে চুপচাপ গিয়ে শুয়ে পড়ে মায়ের পাশটাতে। অপু ফিসফিস করে বলে,-কাল থেকে ওই টেকো বুড়োটার কাছে পড়তে যাবি? দুর্গা এক মুখ হেসে নির্বিকার গলায় বলে, -ধুস কে যাবে পড়াশুনো করতে! সারা দুপুর ওই স্লেট পেন্সিল নিয়ে বসে থাকার থেকে জোড়া অশ্বত্থ তলার ছায়ায় বসে কাঁচা আম মাখা খাওয়া ঢের ভালো।

অপু ভয়ে ভয়ে বলে, -কিন্তু বাবাকে যদি নালিশ করে?

-সমু, ও সমু, কখন থেকে ডাকছি তোকে। ক্লাবের ছেলেরা দু দুবার এসে ডেকে গেছে।

দুর্গার উত্তরটা শোনার আগেই মায়ের ডাকে ঘুম ভেঙে যায় সুমনের। এবার পুজোয় সত্যজিৎ রায়ের জন্ম শতবর্ষ উপলক্ষ্যে নতুন কিছু করার কথা ভাবা হচ্ছে। আজ সন্ধেতে ক্লাবে তারই মিটিং আছে। ছেলেগুলো তাই এত ডাকাডাকি করছে। দুপুরে খেয়ে উঠে শুয়ে শুয়ে সেই ভাবনাই ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিল বুঝতেই পারেনি। আর সেই সুযোগে অপু, দুর্গা, হরিহর, ফেলুদা, তপসে, লালমোহনবাবু, প্রফেসর শঙ্কু সবাই এসে হাজির হয়েছিল স্বপ্নে। স্বপ্নটার কথা ভেবে নিজেই হাসতে থাকে সুমন, প্রফেসর শঙ্কুর পোষা বিড়াল নিউটনও বাদ যায়নি...

ফিরুন সূচিপত্রে



| হিম সংখ্যা-১৪২৮| aleekpata.com|
  |ALEEK PATA- Your Expressive World |Online Magazine |
| Editor: Swarup Chakraborty | Publisher: Debasree Chakraborty|
 Winter , 2021 | August -December 2021 | Fifth Year  Second  Issue |28 th Edition|
|© All Rights Reserved By The Editor and The Publisher |
|a DISHA-The Dreamer Initiative |




সত্যজিৎ শতবর্ষ ক্রোড় পত্র-মনের মানিক-সত্যজিতের কলমে ... -শ্রাবণী গুপ্ত সরকার

 


সত্যজিতের কলমে সাধারণ মানুষ

শ্রাবণী গুপ্ত সরকার

Collage: Swarup Chakraborty
 


মনে হয় জন্ম থেকেই দাদার কল্যাণে, মা আর বাবার আনুকূল্যে বাড়িতে সন্দেশ আসত প্রতিমাসেই। তারই মলাটে সদ্য অক্ষর পরিচয়ের পরে সত্যজিৎ রায়ের নামটি জানা। সেখান থেকেই শুরু, না, খুব ছোটদের  জন্য উনি কলম ধরতেন না। চমৎকার মনোময়, বুদ্ধিদীপ্ত, হৃদয়াবেগে আর্দ্র গল্পগুলো মূলতঃ কিশোর পাঠ্য।

 

তাঁর গল্পে নিপাট ভালোমানুষরাও একদম সাদামাটা সরল উপস্থিতি নিয়ে অনায়াসে এসে আমাদের মনের সবটুকু জয় করে নেয়। তাঁদের নাম, খ্যাতি, বুদ্ধির দীপ্তি নাই বা রইলো, হৃদয়ের ছোঁয়া উষ্ণ করে তোলে পাঠকের মন। সাধারণ বাঙালি পাঠক দিব্যি নিজেদের মুখ দেখতে পান এসব চরিত্রের দর্পণে। অন্যরকম একটা সিক্ততায় মনের মাটি ভিজে ওঠে। 

 

আমি অল্প কয়েকটি এমন চরিত্রের কথা একটু মনে করাতে এলাম। প্রথমেই ম্যাকেঞ্জি ফ্রুট গল্পের নিশিকান্তবাবু। নিপাট ভালোমানুষ। বুদ্ধিমান, কিন্তু কূটবুদ্ধি নেই। ভালোবাসেন প্রকৃতি আর শুভচিন্তা ছেয়ে থাকে তাঁর মধ্যবিত্ত নির্লোভ মনে। ম্যাকেঞ্জি সাহেবের বাগানের অচেনা গাছের ফলে কামড় বসানোর আগে রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের ছবিতে একটা প্রণাম ঠুকে দেবভোগ্য ফলের আস্বাদ পেয়ে কোথায় চুপচাপ স্বার্থ হাসিল করবেন, তা না সবাইকে বলে টলে খাইয়ে দাইয়ে নিজেই বৃত্তের বাইরে চলে গেলেন বেচারি ভদ্রলোক। এমন জীবনে কখনো হয় নি, এইরকম নিরীহ বাঙালি আছেন? গল্পের শেষে ম্যাকেঞ্জি ফ্রুটের প্যাকিং কারখানা থেকে চেয়ে আনা টিনের কৌটোয় তাঁর নিজের হাতে সংগ্রহ করে আনা আশ্চর্য গুণ সমৃদ্ধ একটি চমৎকার টাটকা ম্যাকেঞ্জি ফ্রুট দেখার বর্ণনায় মনের তারে কেমন একটা আশ্চর্য মোচড় লাগে। 

 

‘লোডশেডিং’ গল্পে ফণীবাবু ভুল করে অন্য ফ্ল্যাটে ঢুকে পড়েন। তারপর চোর আসে, আরও নানা কান্ডের পরে তিনি বোঝেন ভুল করে পড়শীর ফ্ল্যাটে ঢুকে পড়েছিলেন। কিন্তু নিজের ফ্ল্যাটে গিয়ে কারেন্ট আসার পরে আবিষ্কার করেন পুরোনো ছাতার বদলে দিব্যি চমৎকার নতুন ফ্যাশনেবল ছাতাটি পড়শীর থেকে তাঁর কাছে চলে এসেছে। কি কান্ড! 

 

ফটিকচাঁদের হারুণদা ওস্তাদ জাগলার, চমৎকার বুদ্ধিমান আর সপ্রতিভ একটি আদ্যোপান্ত মনকাড়া চরিত্র। কিন্তু বাড়ি পালানো, লেখাপড়া না শেখা, বস্তিবাসী সাধারণ মানুষ। সে গুণী, হৃদয়বান, নির্লোভ এবং স্বার্থ বোধহীন, স্মৃতিভ্রষ্ট ফটিকচাঁদকে অনায়াসে কাছে টেনে নিয়ে কি সুন্দর স্বার্থহীন ভালোবাসায় ভরে দেয়। ধনী ঘরের আজন্ম সুখে লালিত কিশোরকে আশ্চর্য অ্যাডভেঞ্চারারের সন্ধান দিয়ে চির বিরহী করে তোলে। ফটিকচাঁদ আর কী কখনও বাবলু হয়ে উঠবে পুরোপুরি?

 

অসাধারণ গল্প ‘বৃহচঞ্চু’। অবাক হতে জানেন না তুলসীবাবু কিন্তু আমরা শিহরিত হই, জুরাসিক যুগের ভয়াল পাখী যখন দন্ডকারণ্যে ডিম ফুটে বেড়িয়ে তুলসীবাবুর পিছু ধরে। প্রদ্যোতবাবুর অনুসন্ধিৎসায় চঞ্চুর প্রাগৈতিহাসিক উৎস জেনেও তিনি অবাক হন না। এমনকি বৃহচঞ্চুর আশ্চর্য বুদ্ধি, মাংসাশী স্বভাব, শক্ত নখওয়ালা পা, ধারালো ঠোঁট, হিংস্র হলুদ চোখ দেখেও। পড়শী তড়িৎবাবুর হুলো হত্যার পর, চঞ্চুকে  দন্ডকারণ্যে ছাড়তে গেলেন তুলসীবাবু। দন্ডকারণ্যে আশ্চর্য হিংস্র প্রাণীর প্রাদুর্ভাবের খবর পড়ে আবারও গিয়ে চঞ্চুর মাংসের আসক্তি নিজের বুদ্ধিতে দূর করলেন সাধারণ মানুষ তুলসীবাবু। সরল না হলেও মধ্যবিত্তের শুভবুদ্ধি কি সুন্দর জিতে গেল।

 

এবার আমার অন্যতম প্রিয় গল্পটির কথা বলে ইতি টানি। ‘অসমঞ্জসবাবুর কুকুর’ কি মিষ্টি! হাসিমারায় বন্ধুর বাড়ি বেড়াতে গিয়ে একা মানুষ অসমঞ্জসবাবু একটা বন্ধুত্বপূর্ণ স্বভাবের সুন্দর কুকুরছানা কিনে আনলেন কমলালেবু কিনতে গিয়ে। ব্রাউন রঙের ছানাটির নাম দিলেন ব্রাউনি, বিলিতি নামের প্রতি তাঁর বড় আকর্ষণ। খুব বুদ্ধিমান ব্রাউনির বিশেষ বৈশিষ্ট্য সে হাসতে পারে এবং বুদ্ধিদীপ্ত হাসি। কুকুরের হাসি বিষয়ে জানতে গিয়ে বেচারি অসমঞ্জসবাবু বড়োই অপ্রস্তুত হলেন। তারপরে যখন গোপন করবেন ভাবলেন তখনই আকস্মিকভাবে ডগ লাভার পিলু পোচকানওয়ালার সামনে হেসে উঠল ব্রাউনি। ব্যস বাড়িতে এল রিপোর্টার। কাগজে হাস্যমান কুকুরের খবর পড়ে সবার আগ্রহের অত্যাচারে ছুটির দিনে বাড়ি ছাড়লেন অসমঞ্জসবাবু হ্যাঁ সঙ্গী সেই ব্রাউনিই। কাহিনীর শেষে মার্কিন ধনকুবেরের লোভের হাতছানি অগ্রাহ্য করে ব্রাউনির হাসির অর্থ বুঝে তাকে কোলে টেনে নিয়ে আরও একবার এই সাদামাটা মানুষটি বুঝিয়ে দিলেন ভালোবাসা পণ্য হয় না। হাজার বুদ্ধিমান, অনন্যসাধারণ চরিত্রগুলোর পাশে এই সাধারণ, সরল, নির্লোভ, স্নেহপ্রবণ, সবাইকে বিশ্বাস করা, অবহেলিত, অপমানিত চরিত্রগুলি সত্যজিৎ রায়ের যাদু কলমে বড়ো কাছের আর মনকাড়া বলে মনে হয় আমার।  


ফিরুন সূচিপত্রে



| হিম সংখ্যা-১৪২৮| aleekpata.com|
  |ALEEK PATA- Your Expressive World |Online Magazine |
| Editor: Swarup Chakraborty | Publisher: Debasree Chakraborty|
 Winter , 2021 | August -December 2021 | Fifth Year  Second  Issue |28 th Edition|
|© All Rights Reserved By The Editor and The Publisher |
|a DISHA-The Dreamer Initiative |

Main Menu Bar



অলীকপাতার শারদ সংখ্যা ১৪২৯ প্রকাশিত, পড়তে ক্লিক করুন "Current Issue" ট্যাব টিতে , সবাইকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা

Signature Video



অলীকপাতার সংখ্যা পড়ার জন্য ক্লিক করুন 'Current Issue' Tab এ, পুরাতন সংখ্যা পড়ার জন্য 'লাইব্রেরী' ট্যাব ক্লিক করুন। লেখা পাঠান aleekpata@gmail.com এই ঠিকানায়, অকারণেও প্রশ্ন করতে পারেন responsealeekpata@gmail.com এই ঠিকানায় অথবা আমাদের ফেসবুক গ্রুপে।

অলীক পাতায় লেখা পাঠান