অলীক পাতার অন্যান্য সংখ্যা- পড়তে হলে ক্লিক করুন Library ট্যাব টি



। । "অলীক পাতা শারদ সংখ্যা ১৪৩১ আসছে এই মহালয়াতে। । লেখা পাঠানোর শেষ তারিখ ১৫ ই আগস্ট রাত ১২ টা ।.."বিশদে জানতে ক্লিক করুন " Notice Board ট্যাব টিতে"

Showing posts with label চিঠি. Show all posts
Showing posts with label চিঠি. Show all posts

Thursday, June 1, 2023

চিঠি - আত্মজা'র চিঠি - স্বাগতা

চিঠি

আত্মজা'র চিঠি

স্বাগতা



 

শ্রীচরণেষু মা,

ভালো আছো তুমি? কেমন লাগছে তোমার নতুন বাড়ি? মেঘ, বৃষ্টির সাথে নিশ্চয়ই তোমার কথা হয়। মেঘবালিকার সাথে আলাপ হলো?

মেঘেদের সাথে ঘুরতে যাও সেই দূরের সবুজ পাহাড়ে, যেখানে পাশ দিয়ে নদী বয়ে চলে, শ্যামলা পথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ শুরু হয় মেঘ বৃষ্টির কাটাকুটি খেলা। ঠিক তখনই ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি আসে, আর তুমি ভালোবাসা হয়ে সবুজ পাতায় ঝরে পড়। বৃষ্টি ভেজা হাওয়ায় মিশে থাকে এক মন কেমন করা গন্ধ, সেই গন্ধে আমি তোমায় খুঁজে পাই মা, মনে পড়ে ফেলে আসা গান "বাদল-ধারা হল সারা, বাজে বিদায়-সুর। গানের পালা শেষ করে দে রে, যাবি অনেক দূর॥"

এখন একাকিত্ব আমার সঙ্গী, ভালোই লাগে নিজের সাথে সময় কাটাতে, আত্মবিশ্লেষণ করতে। আগে যখন তুমি রোজ সকালে আমার অফিসে পৌঁছানোর খবর নিতে ফোন করে, বা দুপুরে লাঞ্চ করেছে কিনা জিজ্ঞাসা করতে, খুব একঘেয়ে লাগতো, মনে হতো রোজ কেন একি কথা জিজ্ঞেস করো। কাজের ব্যস্ততার মাঝে মনে মনে একটু বিরক্তই হতাম। ওই ফোনের একঘেয়ে, বিরক্তিকর প্রশ্ন গুলোর মধ্যে যে কতখানি স্নেহ, ভালোবাসা, আবেগ মিশে থাকতো কখনো তা অনুভব করার চেষ্টাই করিনি, এখন তাই অপেক্ষা করে থাকি তোমার ফোনের জন্য। এখন কেউ আর খোঁজ নেয়না, এখন আমি খুব একা হয়ে গেছি মা। মনের মধ্যে গভীর নির্জনতা।

রাতে যখন গিয়ে বসি শোবার ঘরের কোণে, জানলা দিয়ে আকাশের দিকে তাকালেই চাঁদের আলোয় তোমার ঝলমলে হাসি মুখটা রোজ দেখতে পাই।

আমি প্রতি মুহূর্তে অনুভব করি তোমায় মা, তুমি আছো, তুমি মিশে আমার মধ্যে। কখনো ভোরের হাওয়া হয়ে, কখনো বা ফলের গন্ধে তুমি আমায় জড়িয়ে ধরে বলে যাও- "কান্না রাখিস না, মা তো ছিলই মা তো আছেই,সবখানেতেই মা"।

এখন খালি অনন্ত অপেক্ষা, কবে আবার তোমার সাথে আমার দেখা হবে। যেখানেই যা কিছু সুন্দর পাচ্ছি, দেখে রাখছি, গল্প গুলো সব তুলে রাখছি, দেখা হলেই সব বলবো। আবার আমরা মুখোমুখি হব, দেখা হলে তুমি ঠিক আগের মতো বলবে, "দুষ্টু, ছিলি কোথা।" আমি বলব, "বলব না সে কথা।"

নাই বা হলো চোখের দেখা, মনের দেখা তো রোজই হয়। এই ভাবেই চলতে থাকুক তোমার আমার গল্প। এখন না হয় মেঘ পিয়নের হাত দিয়ে চলুক আমাদের চিঠির আদান প্রদান। ভালো থেকো মা, আনন্দে থেকো।

 আমার প্রণাম নিও।

                              

              ইতি

               তোমার আত্মজা


 নববর্ষ সংখ্যা-১৪৩০ | aleekpata.com | 31 st Edition |

| ALEEK PATA- Your Expressive World |Online Magazine |

| Editor: Swarup Chakraborty | Publisher: Debasree Chakraborty |

| Bengali New Year 2023 | April-July 23| Sixth Year First Issue |

| © All Rights Reserved by The Editor and The Publisher |

| a DISHA-The Dreamer Initiative |

 

চিঠি -ছড়া কবিতার খাতা - মুহাম্মদ আলম জাহাঙ্গীর

 চিঠি

ছড়া কবিতার খাতা

মুহাম্মদ আলম জাহাঙ্গীর

 


 

প্রিয় আব্বু,

প্রথমে আমার 'সালাম' নিবেন। আশা করি আল্লাহর অশেষ রহমতে ভালোই আছেন। আপনি সার্বক্ষণিক সংসার এবং আমার জন্য চিন্তা করেন। আপনি খুব সকালে ঘুম হতে উঠেন। ফজর নামাজ পরেই রোজ বেরিয়ে পড়েন কৃষি ক্ষেতে। গরু দিয়ে জমি চাষ করে

ধান,গম,পাটসহ নানা শাক সবজি রোপন করেন। সেসব বিক্রি করেই পুরো সংসার চলে কোনো রকম টেনেটুনে। তার উপর আমার লেখাপড়ার খরচ দিনকে দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সামনে আমার বি এ পরীক্ষা। সেই পরীক্ষার ফরম ফিলাপের টাকার জন্য আপনি খুবই চিন্তিত। আমার টাকার জন্য, আমাকে না জানিয়ে আমাদের হালের যে দু'টি গরু ছিলো। তার একটি বিক্রি করে আমাকে টাকা দিয়েছেন। আমি জানতে চাইলে বলছেন আল্লাহ জোগাড় করে দিছে। শুনছি আপনি এখন নিজেই কোদাল দিয়ে মাটি কুপে কুপে কোনোমতে জমি চাষ করছেন। অধিক পরিশ্রমের জন্য আজকাল আপনার শরীর ভালো যাচ্ছে না। আমার পরীক্ষার ও আর বেশিদিন নেই। পরীক্ষা শেষে আমি যে কোনো একটি কাজ জোগাড় করব ইনশাআল্লাহ। তখন আর আপনাকে সংসারের চিন্তা করতে হবে না। শুধু বাড়ি বসে খাবেন আর নামাজ পড়বেন। মা'কেও আমার 'সালাম' দিবেন। আজ তবে রাখি।

                                                ইতি

  তাং- ০৬/১১/২০২২ খ্রিঃ                                         

                                  আপনার আদরের সন্তান

                                  মুহাম্মদ আলম জাহাঙ্গীর

                                             নতুন পানিসারা, শেরপুর, বগুড়া, বাংলাদেশ


| নববর্ষ সংখ্যা-১৪৩০ | aleekpata.com | 31 st Edition |

| ALEEK PATA- Your Expressive World |Online Magazine |

| Editor: Swarup Chakraborty | Publisher: Debasree Chakraborty |

| Bengali New Year 2023 | April-July 23| Sixth Year First Issue |

| © All Rights Reserved by The Editor and The Publisher |

| a DISHA-The Dreamer Initiative |


    

চিঠি - প্রিয় চিঠি - শম্পা সান্যাল

 চিঠি

প্রিয় চিঠি,

শম্পা সান্যাল



 

প্রিয় চিঠি,

 

এই যে! শোনোও না!

চিঠিতে এমন সম্বোধন পেয়ে প্রথমবার তুমি খুউব হেসেছিলে, তারপরেও কথাচ্ছলে বলে হাসতে কিন্তু আমি আর ঐ যে "প্রিয়", "সুচরিতেষু" এসব লিখবো ভেবেও আর লিখে উঠতে পারিনি। নাম ধরে সম্বোধন, করতে নেই যে। এভাবেই অভ্যস্ত আমি আজও তাই...।  "কিগো! " "শুনছো!"  এসব সম্বোধন‌ও সামনাসামনি আর ক'দিন‌ই বা করতে পারলাম বলো! তাই চিঠিতেই!  শোনো না! যেকথা বলতে আজ কাগজ-কলম নিয়ে বসা।

আচমকা জীবন যখন হাত ধরে কানাগলির অন্ধকারে এনে ফেলেছিল, কেঁদেছিলাম, খুউব। পথের সন্ধানে নেমে দিশাহীন আমি তবুও মরিনি, মরতে দিইনি আমার ভালোবাসাকে। চিঠি লিখেছি বারবার, লাল ডাকবাক্সে ফেলে এসে অপেক্ষায় থেকেছি প্রতিটি দিন। " ক‌ই গো, চিঠি আছেএএ!

 

"এ ডাকের প্রতীক্ষায় ঘরবার করেছি নিত্যদিন। সহসা সেই "চিঠি" যখন এলো, পথসন্ধানী আমাকে এক মুহূর্তে পথঘাট পেরিয়ে এনে ফেললো তেপান্তরের মাঠে। উথালপাথাল হৃদয়ে ঝোড়ো আওয়াজে শুনতে পেলাম তোমার মনের কথা,

 

 "... আমাকে আর চিঠি লিখো না। মেসবাড়ি ছেড়ে চলে যাচ্ছি আমি। তোমার চিঠি না এলে মন আনচান করেছে কিন্তু, খুলে পড়ার সাহস হয়নি কোনোদিন। জানি উত্তর চেয়েছো, আমার চিঠির অপেক্ষায় রয়েছো, তোমার এই সামান্য চাহিদা পূরণের‌ও আমার ক্ষমতা নেই, সাহস নেই সেই অশুভ রাতের স্মৃতির মুখোমুখি হ‌ওয়ার যদিও সে তাড়া করে ফেরে, নিয়ত। ক্লান্ত, বড্ড ক্লান্ত আমি তোমার থেকে ছুটি পেতে চাই। পারলে ক্ষমা করে দিও আমাকে।

                                       ইতি শুভময় গঙ্গোপাধ্যায় ।"

 

শুভময়। আচমকা এক ঝড়ের সন্ধ্যায় তোমার দৌড়ে এসে আশ্রয় নেওয়া, স্পষ্ট মনে পড়ে আজো। হ্যারিকেনের নরম আলোয় সামনে ব‌ই খুলে বসা আমি, একটু দূরে তুমি। আমার দায়িত্বে তোমাকে রেখে মা রান্নাঘরে। আমি তখন সত্যিই নাইন আর তুমি তখন ... তারপর এক শুভদিনে তোমার হাতে সমর্পিত আমি । জীবন-কথা তো বলতে বসিনি তবু কিছু কথা থেকে যায়। ক্যালেন্ডারের পাতা পাল্টে যায়, জীবন‌ও যে ! হঠাৎ করে হারিয়ে গেলাম তোমাদের থেকে, তারপর না তোমার , না আমার বাবা মায়ের , গ্ৰহণযোগ্য থাকলাম না কারো কাছেই।

কেন এমনটা হলো ! এ "কেন"-র উত্তর চাইবো কার কাছে!

"এক সূত্রের দিয়ে, দেব, গেঁথে রাখো এক সাথে

টুটে না ছিঁড়ে না যেন, থাকে যেন ওই হাতে।

তোমার শিশির দিয়ে    রাখো তারে বাঁচাইয়ে

    কী জানি শুকায় পাছে সংসার রৌদ্রের মাঝ।"

এই তো জেনেছিলাম, এই তো মেনে ছিলাম।

দুটি অন্তরের  শপথ-বাক্য বাহ্যিক কলরবে হারিয়েই গেল তবে ! 

বেশ ! ছিন্ন হোক্ সম্পর্ক। আদৌ কি যুক্ত ছিলাম! ঝরা পাতার মতন ঠিকানা বিহীন জীবনেও  মনের মাঝে একফালি বারান্দা সযত্নে বয়ে বেড়াতাম। যেখানে দাঁড়িয়ে আমার ভালোবাসাকে জড়িয়ে ধরতাম, আদর করতাম; তারপর আমার উজাড় করা যতো কথা, যতো ব্যথা পত্রালাপে ছড়িয়ে দিতাম। পড়ো না যে আমি জানতাম, তবুও। হঠাৎ আসা চৈতালি ঝড়ো হাওয়ায় সেই ঠিকানাও হারিয়ে গেল। শুভময়, ভালোথেকো, যেখানেই থাকো ভালো থেকো।

 

                                                  ইতি,ভালোবাসান্তে

                                                             মাধুরী

                                                            ৮। ৪। ৭৪

 

 

পুনশ্চ: ভালো রাখবো নিজেকেও। নতুন করে খড়কুটো জোগাড় করে এনে আবার বাসা বাঁধবো আমি, নিজেকে ভালোবেসে বেঁচে থাকবো, বাঁচবো নিজের আনন্দকে ভালোবেসে। বাঁচিয়ে রাখবো আমার "ভালো বাসা"- কে। জীবন তো ! পাল্টে যাবেই। বসন্তের সমাগমে নতুনকে খুঁজে পেতে বেরিয়ে পড়লাম আমিও।

ঠিকানা বিহীন এ চিঠি ঝোড়ো হাওয়ায় ঘুরে বেড়াক এ ডাকঘর থেকে ও ডাকঘরে, এ ঘর থেকে...

 


| নববর্ষ সংখ্যা-১৪৩০ | aleekpata.com | 31 st Edition |

| ALEEK PATA- Your Expressive World |Online Magazine |

| Editor: Swarup Chakraborty | Publisher: Debasree Chakraborty |

| Bengali New Year 2023 | April-July 23| Sixth Year First Issue |

| © All Rights Reserved by The Editor and The Publisher |

| a DISHA-The Dreamer Initiative |

চিঠি - প্রিয় নিস্তব্ধতা - পায়েল চট্টোপাধ্যায়

 চিঠি

প্রিয় নিস্তব্ধতা

পায়েল চট্টোপাধ্যায়



 

 

প্রিয় নিস্তব্ধতা,

কোলাহল শুনতে পাই বড়। আজকাল নিঝুম রাস্তাতেও কথা শুনতে পাই। যে কথা সহজেই কোলাহল হয়ে যায়। আমার অস্বস্তি হয়। কোলাহলের ভেতর ঝিঁঝিঁ পোকার ডাকের মতো কথারা জেগে ওঠে। নিস্তব্ধতার ভেতর কথারা স্মৃতির মত জেগে ওঠে। যে স্মৃতি কোলাহল থেকে অনেকটা দূরে নিয়ে যায়। যে স্মৃতি আমায় তোমায় ভালবাসতে শিখিয়েছে নিস্তব্ধতা। মেয়েবেলায় যখন দরজার পাশে পিঠ দিয়ে হ্যারিকেনের আলোয় পড়া মুখস্থ করতাম, নিস্তব্ধতার পরশের মতোই জীবনের স্নেহ ভরা হাত গায়ে-মাথায় লেগে থাকত। পড়তে পড়তে আমি তোমার সঙ্গে কথা বলতাম। প্রিয় নিস্তব্ধতা, বেশিক্ষণ তোমার সঙ্গে কথা বললেই মা বোধহয় বুঝতে পারত। "কই রে পড়ছিস না যে, চুপ করে রয়েছিস কেন!" আমি তখন তোমার সঙ্গে প্রেম করতাম নিস্তব্ধতা। বকুনি খেয়ে একটু সুর করে পড়ে নিয়ে আবার তোমায় আঁকড়ে ধরতাম। যে শব্দ মেখে বই পড়তাম, যে শব্দেও তুমি মিশেছিলে। যে নিস্তব্ধতায় মন-আকাশে ডুবে যেতাম আমি। সেই মন-আকাশের জগত নিঃসঙ্গ, নিস্তব্ধ। এই তোমাতে মানে নিস্তব্ধতায় ডুবে থাকা যায়। তোমার মেঘ, আলো, বাতাস সব আলাদা। প্রিয় নিস্তব্ধতা তুমি যেন ঠিক ডায়েরির পাতার মত।

 

তোমার কথা ভাবলেই আমার ডায়েরির কথা মনে পড়ে কেন! আসলেই ডায়েরির পাতার কালো লাইনের ফাঁকে যেমন নিঃসঙ্গতা থাকে সাগর-পাড়ে নুড়ি ছড়িয়ে থাকার মত করে তুমি মানে নিস্তব্ধতা ও ছড়িয়ে থাকে। তেমন নিস্তব্ধতাই খুঁজে বেড়াই আজকাল। তোমার কথা মনে করলেই ছোটবেলার ডায়েরি লেখার কথা মনে পড়ে আমার। সার বেঁধে জেগে থাকা লাইন। যারা তোমায় ছুঁয়েও শব্দের অপেক্ষা করে আধো-ঘুমে জেগে থাকা বালিকার মত, যে বালিকা নীল শাড়ি পড়ে প্রেমিকের হাত ধরে হাঁটার স্বপ্ন দেখে। আমার মনে হয় তুমি মেয়েটাকে শিখিয়েছিলে নিস্তব্ধতা আসলে ভালোবাসা। সেই বালিকা শব্দের পেছনে ছুটতে গিয়ে তন্দ্রা ভুলে যাচ্ছিল। ভাগ্যিস ওকে তুমি নিজেকে চেনালে! তখন মেয়েটা তোমায় মানে নিস্তব্ধতাকে চিনেছিল। যে নিস্তব্ধতা মেয়েটাকে ভালো রেখেছিল। আমি তোমার আলোয় মেয়েটাকে দেখতে পেতাম। নিস্তব্ধতায় ওর প্রেমের আগল খুলে যেত। মেয়েটা অনর্গল কথা বলতো তখন। যে কথার কোন মানে নেই, যে কথায় শুধুই নীরবতা জেগে থাকে।

 

আমার ছোটবেলায় মেয়েটার সঙ্গে রোজ দেখা হতো। প্রিয় নিস্তব্ধতা তুমি জানো, আমরা দুজনেই তোমায় ছুঁয়ে থাকতাম। আর কত কথা হতো আমাদের। শব্দবিহীন কথা। ওর প্রেমিকের কথা, ভালোবাসার কথা। আমরা দুজনেই কোলাহলহীন হয়ে একে অপরের কথা শুনতাম।

 

তারপর আমরা দুজনেই বড় হলাম। দুজনেই ভালোবাসা হারালাম। দুজনেই আসলে তোমায় হারালাম। আমাদের ভেতর জেগে থাকা নিস্তব্ধতা অন্ধকারের চোরাস্রোতে কবে মিলিয়ে গেছে! আমি আজকাল মেয়েটাকে আর দেখতে পাই না। নিস্তব্ধতায় মোড়া শব্দবিহীন একটা অস্পষ্ট অবয়ব জেগে থাকে শুধু।

 

তবে জীবনের পথের বাঁকে ছায়ায় মোড়া অবয়ব ঝাপসা হয়েছে। বিলীন হয়েছে অন্ধকারে। আমার সেই নিস্তব্ধতার সঙ্গী মেয়েটা হারিয়ে গেছে পথের ধারে।

 

নিস্তব্ধতা তুমি জানো, আমি আজকাল শব্দ শুনতে পাই, আমি তোমায় খুঁজি অথচ কতগুলো প্রাণহীন শব্দও আমায় মাকড়সার জাল এর মত জড়িয়ে ধরে, আমি আওয়াজের ভিড়ে, শব্দের ভিড়ে শুধু তোমায় খুঁজি আজকাল। তোমায় ছোঁয়ার চেষ্টা করি।

 

কিন্তু মেয়েবেলার সেই নিস্তব্ধতায় মোড়া অবয়বটা ধূসর হয়। আসলে আমি মেয়েবেলার নিস্তব্ধতাকে খুঁজে বেড়াই। আসলে ওই মেয়েটাই আমায় তোমায় ভালবাসতে শিখিয়েছিল নিস্তব্ধতা। যার জন্য আমি ডায়েরির পাতায় নীরবতা লিখতাম।

 

প্রিয় নিস্তব্ধতা কেন হারিয়ে গেলে তুমি? কোলাহলের ভিড়ে গলি ঘুঁজিতে থাকো তুমি। ছোটবেলার সেই ছায়ামোড়া অবয়ব হয়ে থাকতে পারো তো। আমার ডায়েরির পাতায় লেগে থাকা নিস্তব্ধতাকে ফিরিয়ে দিতে পারো তুমি?

 

প্রিয় নিস্তব্ধতা তুমি কি তোমার ঠিকানা দিতে পারো? কোথায় জোনাকি পোকা হয়ে লুকিয়ে রয়েছে তুমি? কোলাহলের ভেতর সাপ-লুডো খেলতে ইচ্ছে করে না আমার। আমার সেই হারিয়ে যাওয়া নিস্তব্ধতা ফিরিয়ে দাও না! নইলে আমার ভেতরের তুমিকে মানে কোথায় বাসা বেঁধে রেখেছো, সেটা বলে দাও!

 

প্রিয় নিস্তব্ধতা, আমায় তোমার সঙ্গী করে নাও! কোলাহলের ভিড় থেকে নিস্তব্ধতার রামধনু রঙে রাঙিয়ে দিতে পারো তুমি? নিস্তব্ধতার রঙে আমার মেয়েবেলার সেই ছায়াময় অবয়বকে সুস্পষ্ট করতে চাই।

 

                         ইতি,

কোলাহলের ভিড়ে নিস্তব্ধতা খোঁজা এক ঠিকানা।

পায়েল চট্টোপাধ্যায়

| নববর্ষ সংখ্যা-১৪৩০ | aleekpata.com | 31 st Edition |

| ALEEK PATA- Your Expressive World |Online Magazine |

| Editor: Swarup Chakraborty | Publisher: Debasree Chakraborty |

| Bengali New Year 2023 | April-July 23| Sixth Year First Issue |

| © All Rights Reserved by The Editor and The Publisher |

| a DISHA-The Dreamer Initiative |


চিঠি - মেঘপিওন - মধুরিমা ব্যানার্জ্জী

 চিঠি

মেঘপিওন

মধুরিমা ব্যানার্জ্জী




            এবারেও বেরিয়ে পড়েছিল সোহম ও ইন্দ্রাণী। বছরের ছুটিগুলো হিসেবে বরাদ্দ থাকলেও ওরা নিজেদের মতন করে সেটার হিসেব মিলিয়ে নেয়। আসলে হিসাবই জীবন। একসময় ইন্দ্রাণীকে সোহম অনেক চিঠি লিখেছে। তখন প্রথম লাইনেই ‘বৃষ্টি পড়ে এখানে বারো মাস’ থাকত। সোহমকে অবশ্য ইন্দ্রাণী পছন্দ করেছিল বেশ খানিকটা পরেই। কলেজ লাইফে ছিল অভয়। সিনেমার নেশা অভয়কে টেনে নিয়ে গেল। অভয়কে অনেক চিঠি লিখত ইন্দ্রাণী, সে সব অতীত। অভয়ের প্রতি দুর্বলতা অল্প আঁচ পেলেও সোহম ওটা কখনও ঘাঁটায়নি। ভেবেছে পরে সবুর করে শুনবে একদিন। সেই পর টা আর আসেনি। বিয়ের তিন বছরে সোহম অনেকখানি বদলে গেল। আর এই রুঢ় সোহমকে ইন্দ্রাণী আদৌ চেনে কিনা এই গোলোকধাঁধায় ঘুরে বেড়ায়। যে সোহম দশ বারে একবারও রাগ করত না, সেই সোহম আঙুল তুলে কথা বলতেও পিছপা হয়না। এসব ইন্দ্রাণীর সয়ে গেছে। এরই নাম সংসার। যে সয়, সে রয়। সোহম এবার ছুটিতে নিজের কাজ নিয়ে বেরিয়েছে। ড্রাইভ করে দার্জিলিং, সেখান থেকে কিছু কাজ সেরে নেবে। পথিমধ্যে শ্যুটিং এর একগাদা লোক দেখে গাড়ি থামাল সোহম। ইউনিটের লোক বলল, আর্টিস্টের গাড়ি খারাপ হয়ে গেছে, যদি লিফট দেন, উনি খুব ভদ্র। কার্ড চালান হতেই ইন্দ্রাণী নাম পড়ে নেয়, অভয় রায়।

 

            গা টা একটু শিউরে উঠল ওর। সোহম অবশ্য নাম পড়ে কিছুই বোঝেনি। সানগ্লাসটা পরে নিয়েই অভয়কে নমস্কার ভঙ্গীতে বসুন বলায়, অভয়ের জিজ্ঞাসু চোখ বসে পড়ে। গাড়ি চলতে টুকটাক আলাপচারিতায় আসর জমে ওঠে। মধ্যিখানে গাড়ির তেল বাধ সাধল। সোহম গেল তেল আনতে। অভয় নিভৃতে নেমে ছবি তুলতে লাগল। ইন্দ্রাণীও নেমে পড়ল গাড়ি থেকে। চিঠিগুলোর উত্তর দাওনি কেন? সরাসরি ইন্দ্রাণী প্রশ্ন করে। অভয় হেসে বলে, দিয়েছি। তুমি তখন বালিগঞ্জের ঠিকানায়। বালিগঞ্জের কথা শুনে মুখ হা হয়ে যায় ইন্দ্রাণীর। ওটা ওর শ্বশুরবাড়ি। বলল, তুমি জানলে কিভাবে আমি ওখানে থাকি? অভয় জানাল, সে বিয়ের নিমন্ত্রন পেয়েছিল। ইচ্ছে করেই আসেনি । সোহম ভালো পাত্র। সরকারী চাকুরে, ওর ভালো হিল্লে হল। ইন্দ্রাণী বলল, আজও যে ফাঁকটা রয়ে গেছে। কবিতা ও চিঠি শোনার ভাল লোকের অভাব। ভালো কবিতা ট্রান্সলেন করে শুনতে শুনতে সে ঘুমিয়ে পড়ে। অভয় সেই সময় একটু সাহস দেখালে আজ হয়ত সবটা নিজের করে পেতাম। অভয় বলল, ধরতে চেয়ো না মুঠোয়, সবই হারিয়ে যাবে, আমি ফিনিক্স পাখি। কথাগুলো আড়াল থেকে শুনছিল সোহম। চোখের কোনায় জল চিকচিক করছিল একটু। একে কি হিংসা বলে? আসলে ইন্দ্রাণীরও খোলা আকাশের বড় স্বাদ। আর ওর খোলা আকাশ হল অভয়। চিঠিগুলো লুকিয়ে পড়েছিল সোহম। ইন্দ্রাণীর প্রথম প্রথম শ্বশুরবাড়িতে অসুবিধা, সোহমকে প্রেম করেও পুরো মেনে না নেওয়া। কিন্তু ভুল ঠিকানায় যাওয়ার জন্য চিঠিগুলো বারবার ফিরে এসেছে। ভুল হয়েছে ভারি। তবে ইন্দ্রাণী একটা কবিতার লাইন মাঝে মাঝে পড়ে। ওর কি অভয়ের কথা মনে পড়ে? কে জানে।

 

                        বৃষ্টি পড়ে এখানে বারোমাস,

 

 এখানে মেঘ গাভীর মতন চলে,

 পরানমুখ সবুজনালী ঘাস।‘

 

 

            ভাবনায় ছেদ পড়ে সোহমের। অভয় বলে, আরে তুমি চলে এসেছ? আপনি থেকে এক ঝটিকায় সমাপতনে অবাক হয় সোহম। মুহূর্তের ভুল? নাকি সোহমকে জানিয়ে দেওয়া? ইন্দ্রাণী একটুও না ঘাবড়ে পুরনো গল্প-গুজবে ফিরে চলে। হঠাৎ সোহম বলে বসে, ইন্দ্রাণী এই ট্রিপটাই সারপ্রাইজ দিই তোমাকে। অভয়কে যে চিঠিগুলো তুমি দিতে চেয়েছিলে, আজ হাতে হাতে দিয়ে ফেল। মুহূর্তে সবার মুখ ম্লান। ঘাবড়ে যাওয়া ইন্দ্রাণী কিছু বলার আগেই সোহম বলে, জীবনে অনেক উড়ো চিঠি থাকে, যাকে বন্ধ করে বাক্সে রাখলে দমবন্ধ হয়ে আসে। তাই সেই চিঠিদের মুক্ত করো এই মেঘপিওনের হাত ধরে। ওদের আবেগের খুশিটা মেঘ পিওনকে বোধহয় খবর পাঠালো।

  

 মধুরিমা ব্যানার্জ্জী

 ভাটরাপল্লী, পোস্ট অফিস নবপল্লী,  জেলা উঃ ২৪ পরগণা, কোল – ৭০০১২৬


| নববর্ষ সংখ্যা-১৪৩০ | aleekpata.com | 31 st Edition |

| ALEEK PATA- Your Expressive World |Online Magazine |

| Editor: Swarup Chakraborty | Publisher: Debasree Chakraborty |

| Bengali New Year 2023 | April-July 23| Sixth Year First Issue |

| © All Rights Reserved by The Editor and The Publisher |

| a DISHA-The Dreamer Initiative |


Main Menu Bar



অলীকপাতার শারদ সংখ্যা ১৪২৯ প্রকাশিত, পড়তে ক্লিক করুন "Current Issue" ট্যাব টিতে , সবাইকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা

Signature Video



অলীকপাতার সংখ্যা পড়ার জন্য ক্লিক করুন 'Current Issue' Tab এ, পুরাতন সংখ্যা পড়ার জন্য 'লাইব্রেরী' ট্যাব ক্লিক করুন। লেখা পাঠান aleekpata@gmail.com এই ঠিকানায়, অকারণেও প্রশ্ন করতে পারেন responsealeekpata@gmail.com এই ঠিকানায় অথবা আমাদের ফেসবুক গ্রুপে।

অলীক পাতায় লেখা পাঠান