চিঠি লেখার গল্প
পত্রলেখা সুরে
আমার প্রথম চিঠি লেখার অভিজ্ঞতা
বটু কৃষ্ণ হালদার
সালটা ছিল ১৯৯৮_৯৯, আমি
তখন ক্লাস এইট নাইনে পড়ি। এই সময় আমি টুকটাক লেখালেখি করতাম। বিশেষ করে পংক্তি মিলিয়ে
ছড়া লিখতাম। লেখালেখির নেশাটা এসেছিল মূলত রেডিও শুনে শুনে। তৎকালীন সময়ে আমাদের
গ্রামের বাড়িতে ( সুন্দরবনের গোসাবা ব্লকের পাঠানখালী নামক জায়গার কামারপাড়া গ্রাম)
তখনো বিদ্যুতের ব্যবহার শুরু হয়নি। তাই মূলত বেশিরভাগ বাড়িতে বিনোদনের একমাত্র উপায়
ছিল রেডিও। রেডিওতে বিভিন্ন অনুষ্ঠান হতো আর সেই অনুষ্ঠানগুলোতে প্রতিযোগিতামূলক ছড়া
লেখার অনুষ্ঠান হত। সব অনুষ্ঠানের কথা মনে না পড়লেও
হাতুড়ি মার্কা ফিনাইল, ডিটারজেন্ট কোম্পানিগুলো রেডিওতে বিভিন্ন
প্রতিযোগিতামূলক অনুষ্ঠান কত। সেই অনুষ্ঠান শুনে শুনে কখন আমার হৃদয়ে ছড়ালেখা ভর
করেছিল তা ঠিক বুঝে উঠতে পারিনি। তবে সেই সময় আরো একটা অনুষ্ঠান গ্রামবাংলায় খুবই
জনপ্রিয় ছিল তা হল পত্রলেখা সুরে। সেই অনুষ্ঠান বেশিরভাগ সময় পরিচালনা করতেন শশাঙ্ক ঘোষ নামে এক অনুষ্ঠান পরিচালক। যিনি গ্রামবাংলায় খুবই
জনপ্রিয় ছিলেন। সেই অনুষ্ঠানে প্রায় এক ঘন্টা চিঠিপত্র পড়া হতো। কেউবা গান শোনার
অনুরোধ করতেন, আবার অনেকেই ছড়া কবিতা লিখে পাঠাতেন।
সেই শুনে তখন আমারও জেদ চাপলো একটা ছড়া লিখে পত্রলেখা সুরে অনুষ্ঠানে পাঠাবো। যেমন
কথা তেমন কাজ। চটপট লিখে ফেললাম একটা ছড়া। ছড়াটির
নাম ছিল আমার গ্রাম। তবে এ প্রসঙ্গে আরেকটু বলে রাখি যে ডায়েরীতে আমি জীবনের শুরুতে
ছড়া কবিতা নাট্যরূপ লিখতাম। কলকাতায় আসার পর সেটি কিভাবে হারিয়ে গেল তা বুঝতে পারিনি।
যা আমার হৃদয়কে খুবই কষ্ট দেয়। যাই হোক, ছড়া লিখলাম
কিন্তু পাঠাতে হবে ডাকে। পোস্ট কার্ড কিম্বা ইনল্যান্ড খাম
কিনতে গেলে পয়সার দরকার। তাই বাবার পকেট থেকে দুই টাকা চুরি করলাম। স্কুলের পাশেই
ছিল পোস্ট অফিস। টিফিনের সময় পোস্ট অফিস থেকে একটা ইনল্যান্ড
খানা কিনলাম। বাড়িতে এসে চুপি চুপি সেই খামে আমার লেখা টি লিখে ভালো
করে আঠা দিয়ে সেটা স্কুল ব্যাগের মধ্যে ঢুকিয়ে রাখলাম। পরের দিন স্কুলে গিয়ে সেটা
ডাকবক্সে ফেলে দিলাম। শুরু হল অপেক্ষার পালা। তবে অনুষ্ঠানটা দুপুরে হতো বলে সব দিন
শোনা হতো না। কারণ স্কুলে যেতে হতো আমাকে। দিন যায় সময় যায়, কিন্তু
কোন উত্তর আসেনি। আমার ঠাকুমা নিয়ম করে অনুষ্ঠানটা শুনতেন তাই
তাকে বলে রেখেছিলাম। প্রতিদিন এসে জিজ্ঞাসা করতাম কিগো আমার ছড়াটা পড়েছে। ঠাকুমা
একগাল হেসে বলতেন ধুর বোকা সেকি ওদের কাছে পৌঁছেছে রে।
ধীরে ধীরে মনটা ভেঙে যেতে লাগলো। আস্তে আস্তে চিঠির কথা ভুলেই গেলাম। বেশ কিছুদিন পর
স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে গ্রামের কয়েকজন লোক আমাকে রাস্তায় ধরল। বলল তুই পত্রলেখা
শুরুতে ছড়া লিখে পাঠিয়েছিস তা আজকে পড়েছে। আমি এক দৌড়ে বাড়ি এসে ঠাকুমাকে জিজ্ঞাসা
করলাম। ঠাকুরমা বলল হ্যাঁ আজকে পড়েছে খুব সুন্দর হয়েছে আমরা শুনেছি। সেই কথা শুনে
খুব আনন্দ পেয়েছিলাম। রাতে অনেক দেরিতে ঘুম এসেছিল।
| নববর্ষ সংখ্যা-১৪৩০ | aleekpata.com | 31 st Edition |
| ALEEK PATA- Your Expressive World |Online Magazine |
| Editor: Swarup Chakraborty | Publisher: Debasree Chakraborty |
| Bengali New Year 2023 | April-July 23| Sixth Year First Issue |
| © All Rights Reserved by The Editor and The Publisher |
| a DISHA-The Dreamer Initiative |