আমি ঠাকুরেও আছি, ইসলামেও আছি
জয়িতা ময়রা (দাস)
|
Image Courtesy: Google Image Gallery |
আমার সপ্তম বর্ষীয় ক্ষুদেটি রোজ স্কুল থেকে ফিরেই "জানো মা আজ কি হয়েছে" দিয়ে যখন তার গল্পের ঝাঁপি উপুড় করে, তখন আমিও মন্ত্র-মুগ্ধের মতো গোগ্রাসে সব শুনি,
আর কৃতজ্ঞ চিত্তে ঠাকুরের কাছে প্রার্থনা করি - 'মোরে আরো আরো আরো দাও প্রাণ'।
তো সেরকমই একদিন হঠাৎ জানতে পারলাম
তার এক বন্ধু তাকে পরামর্শ দিয়েছে মুসলমান সহপাঠীদের সাথে বন্ধুত্ব না করার। আমারটিও দমবার পাত্র নয়, তৎক্ষণাৎ জবাব দিয়ে এসেছে যেহেতু বন্ধুত্ব না করার তেমন কোন কারণ নেই,
তাই সে করবেই। যদিও সে আদৌ জানে না
কে মুসলিম, আর কে নয়। সে শুধু জানে কারও কারও “মাদার টাং” হিন্দী
- ব্যস ঐ পর্যন্তই। বুঝলাম মা হিসেবে এই ধর্মের
এর ব্যাপারটা ওকে বোঝানোর দায়িত্বটা যে আমারই।
আমি ব্যক্তিগত ভাবে পুজো-আচ্চা এবং তার নিয়ম-নীতি পালন
থেকে শতহস্তে দূরে থাকি। মূর্তি পুজোয় নয়, আমি মানুষে বিশ্বাসী। অর্থাৎ জন্মাষ্টমীতে যেমন মাংস ভাত খেয়ে, পুত্ররত্নটির সাথে নির্ভেজাল ছুটির দুপুর কাটাই,আবার যারা ঠাকুরকে ভোগ দিয়ে, বাড়ির ছানা-পোনাদের গোপাল সাজিয়ে ছবি পোস্ট করেন, সেই সব ছবিও সমান
উপভোগ করি। আমার নীতিই হল “লিভ অ্যান্ড লেট লিভ”, জিও অউর জিনে দো –
সিম্পল।
তো এহেন আমি ঠাকুরেও আছি আবার ইসলামেও
আছি - সেটাই তো স্বাভাবিক। আমার কাছে ঠাকুর বলতে অবশ্যই রবি ঠাকুর, যিনি আমার প্রতিটি দুঃখে- আনন্দে আছেন, থাকেন। আবার ছোটবেলায়
"কাঠবেড়ালি পেয়ারা তুমি খাও"
দিয়ে পরিচয় হওয়া সেই নজরুল ইসলাম কেই বা কিভাবে ছাড়ি বলুন তো
!! আমি মানুষে বিশ্বাসী, তাঁর নাম-গোত্রে নয়। এই কথাটাই আমার পুত্রটিকেও
বোঝাই।
সত্যি বলতে কি, ওকে বনমানুষ থেকে আদিম মানুষের রূপান্তরের সেই রোমাঞ্চকর গল্প শোনাতে শোনাতে
নিজেই অবাক হয়ে যাই, কোন্ বনমানুষ'টি কোন্
ধর্মের সেটা কে ঠিক করেছিল!! ভাবতে অদ্ভুত
লাগে, আমরা শাহরুখ - সলমানের ভক্ত হতে পারি,
আরসালান - রেহমানিয়ার বিরিয়ানী চেটেপুটে সাফ
করতে পারি, তাজমহল'কে দেশের গর্ব মনে করতে
পারি, অথচ অন্য ধর্মের মানুষের সাথে সহজ হতে পারি না,
স্বচ্ছন্দে বন্ধুত্ব করতে পারি না। ধিক আমাদের। এই সব শিশুমন গুলোকেও
অহেতুক জটিল আর সংকীর্ণ করে তুলি আমরা।
তবে সকলের মনে তো পরিবর্তন আনতে
পারব না, অন্ততঃ নিজের সন্তানটিকে যেন শুধুমাত্র 'মানুষ' পরিচয়ে বড় করতে পারি। আর প্রার্থনা করতে পারি সকলের
বুদ্ধি শুভ হোক। কিন্তু যাঁদের হল না বা হবে না, তাঁরা নাহয় পরের কালীপুজোয় ভক্তি সহকারে
গাইবেন বা বাজাবেন - ''কালো মেয়ে'র পায়ের
তলায় দেখে যা আলোর নাচন''। আর টুক করে একটু গুগল করে নেবেন যে কার সৃষ্টি করা এই
রকম কিছু শ্যামা সঙ্গীত আপনার মনে এত ভক্তি ভাবের উদ্রেক ঘটায়।
| Aleekpatamagazine.blogspot.in |
| Editor: Swarup Chakraborty | Publisher: Debasree Chakraborty |
|ALEEK PATA-The Expressive World |Online Magazine |
|a DISHA-The Dreamer Initiative |
| Winter Issue,2010 | January 2020 |
| Third Year Fourth Issue |21st Edition|
|© All Rights Reserved By The Editor and The Publisher |