অলীক পাতার অন্যান্য সংখ্যা- পড়তে হলে ক্লিক করুন Library ট্যাব টি



। । "অলীক পাতা শারদ সংখ্যা ১৪৩১ আসছে এই মহালয়াতে। । লেখা পাঠানোর শেষ তারিখ ১৫ ই আগস্ট রাত ১২ টা ।.."বিশদে জানতে ক্লিক করুন " Notice Board ট্যাব টিতে"

Showing posts with label রহস্য রোমাঞ্চ. Show all posts
Showing posts with label রহস্য রোমাঞ্চ. Show all posts

Sunday, May 8, 2022

গল্প-শিহরণ - শেষ সংকেত- অভীক সাধু

  গল্প-শিহরণ

শেষ সংকেত

অভীক সাধু

Illustration: Swarup Chakraborty
 

আনিশার সাথে রাজেশের অল্প কিছুদিন হলো বিয়ে হয়েছে, জামশেদপুরের মেয়ে আনিশা, বিয়ের পর স্বামীর সাথে কিষাণগঞ্জে চলে আসে। আনিশা জানে তার স্বামী জৈন ট্রান্সপোর্টের একজন সিনিয়ার একাউন্ট্যান্ট, কারণ সম্বন্ধ হবার সময়রাজেশের জীবিকা সম্পর্কে রাজেশের পরিবার আনিশার পরিবারকে সেটাই বলেছিলোআসলে এটা রাজেশের পরিবারও জানতো না যে ট্রান্সপোর্টে কোম্পানির আড়ালে জৈন কোম্পানির আসল ব্যবসা হলো স্মাগলিং! কিষাণগঞ্জ ভারত নেপাল বর্ডারের কাছে হওয়ার জন্য জায়গাটা স্মাগলারদের বেসক্যাম্প ...

 

রাজেশ মাঝে মধ্যেই দুতিনরাত থাকে না,আসলে সে স্মাগলিং গুডস পাচার করতে যায় কিন্তু আনিশাকে বলে যায় কাজে যাচ্ছে, তাকে নাকি ক্লায়েন্টদের হিসাবপত্রের কাজও দেখতে হয়, আনিশা বলে -” তুমি তো জৈনদের কোম্পানিতে একাউন্টসে কাজ করো তাহলে তোমাকে অন্য লোক সে ক্লায়েন্ট হোক বা যেই হোক তাদের হিসাবপত্র দেখতে হবে কেন ?” রাজেশ উত্তর দেয় -”দেখো এটা তো কোনো বড়ো শহর নয় যে কাজের জন্য তুমি লোক চাই বলে হাঁক পাড়লেআর লোক পেয়ে গেলে ! এখানে কাজের লোক পাওয়াই যায় নাতাই আমি ক্লায়েন্টদের কিছু কাজ করে দি আর এতে পয়সাও পাওয়া যায়। এটা সত্যি; আনিশা দেখেছে ছোট শহরে থাকলেও তাদের অভাব তেমন নেই, ডাবল ডোর রেফ্রিজারেটরএ.সি টিভি সবই আছে। বাড়িটার বাইরে থেকে দেখে অবশ্য বোঝা যায় না যে তার মধ্যেকার  বাসিন্দাদের আধুনিক জীবনযাপনের সব উপাদানই মজুত ! তবু আনিশা রাজেশকে অনুযোগ করে যে প্রতি মাসেই অন্তত দুবার দুতিন দিন করে রাজেশের এই বাইরে কাটানো তার মোটেই ভালো লাগে না। রাজেশ হেসে বলে টাকা না থাকলে প্রেম ট্রেম উড়ে যাবে !

 

কিষাণগঞ্জে ঠান্ডা ভালোই পড়েসেবার দিওয়ালির পরেই বেশ ঠান্ডা ঠান্ডা ভাব। পুজো আর দিওয়ালি আনিশার সাথে কাটিয়ে রাজেশ তার কাজে বেড়িয়ে যায়, এইবার অবশ্য বাইরে যাবার জন্য রাজেশের অনিশাকে বেশি মানাতে হয়নি কারণ প্রথমতঃলম্বা ছুটিতে রাজেশ তাকে নিয়ে কার্শিয়াং বেড়াতে নিয়ে গিয়েছিলো, ঘোরাটা সত্যিই খুব আনন্দদায়ক ছিল আনিশার কাছে - কেননা এই ভ্রমণ তার কাছে ছিল একঝলক টাটকা বাতাসের মতোযা তার রোজকার একঘেয়েমির থেকে তাকে মুক্তির স্বাদ দিয়েছিলো। বেড়িয়ে ফেরার পথে পুরো একসপ্তাহ রাজেশ ছিল আনিশার বাড়িতেদিওয়ালি এবার তারা জামশেদপুরেই উদযাপন করে, তাই রাজেশের তথাকথিত ক্লায়েন্টের কাজে যাবার কথা শুনে আনিশা খালি বলেছিলোএবার একটু তাড়াতাড়ি ফেরার চেষ্টা করো। রাজেশ তাকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেয়ে বলে -” সুন্দরী বৌকে ফেলে ক্লায়েন্টের কাছে যাবার যে কি কষ্ট তা যদি বুঝতে ! কিন্তু সবই পেটের দায় !” আনিশা কপট রাগ দেখিয়ে বলে -”থাক থাকআর আদিখ্যেতা করতে হবে না !”

 

একদিন দুদিন করে  এবার  সাতদিন কেটে গেলো, কিন্তু রাজেশের ফেরার নামই নেই। প্রথম কয়েকদিন যদিও বা রাজেশের সাথে আনিশার মোবাইলে কথা হয়েছিল শেষ দুদিন থেকে রাজেশের মোবাইলে নট রিচেবল আসছে, এবার আনিশা সত্যিই খুব চিন্তিত হয়ে পড়লো, শেষ যেদিন তার সাথে রাজেশের কথা হয়রাজেশের গলার স্বরে উদ্বেগ লক্ষ্য করেছিল আনিশা। সে রাজেশকে জিজ্ঞেস করে তুমি কি কিছু নিয়ে চিন্তায় আছো রাজেশ “ও কিছু না “-বলে এড়িয়ে যায়। এই শহরে তার চেনা জানা বলতে কেউই প্রায় নেই, রাজেশ তাকে  কোনোদিন  নিজের অফিসের কোনো বন্ধুর সাথেও আলাপ করায় নি। তাই নিরুপায় হয়ে আনিশা গেলো তাদের বাড়িওয়ালির কাছে- বাড়িওয়ালি পুনামজী  বিধবা বৃদ্ধা, সারাদিন জপতপ পুজোআর্চা নিয়েই থাকেন, উনি বললেন –“দেখো বেটিরাজেশ মেরে মকান তুম আনেসে একমহিনে পেহেলে কিরায়া পে লিয়া থাআইডেন্টিটি কে লিয়ে রাজেশকা ভোটার কার্ড তো মেরে পাস হ্যায়লেকিন উসসে জ্যাদা মুঝে কুছ নেহি মালুম!”

এতটা বলে পুনামজী একটু থামলেন; তারপর বললেন –“কিষাণগঞ্জমে মেরা চালিস সাল হো গ্যয়া,কিষাণগঞ্জ পোলিশবালা হেল্পফুল হ্যায় - ম্যায়নে তো আজতক কাভি নেহি শুনি, লেকিন মেরে খেয়ালসেফিরভি কাল তুম একবার থানাসে ঘুমকে আও, পোলিশ কো তো ইনফর্ম করনা হি পড়েগা।

সেদিন বিকেল থেকেই খুব বৃষ্টিআর তার সঙ্গে ঝড়, সন্ধ্যে হলে কারেন্টও চলে গেলো। আনিশার ইনভার্টারটা পিঁপ পিঁপ করে দুবার আওয়াজ করে স্তব্ধ হয়ে গেলো। ও বুঝলো যে ব্যাটারিটা হয়তো গেছে। রাজেশ দিওয়ালির সময় একবার বলেছিলো ব্যাটারি চেঞ্জ করতে হবে, কিন্তু শেষ কদিন লোডশেডিং না হওয়াতে আর এইরকম মানসিক অবস্থাতে সে ব্যাটারি চেঞ্জ করার কথা সম্পূর্ণ ভুলে মেরে দিয়েছে, কি আর করা ! দিওয়ালির সময় কেনা পড়ে থাকা একটা ছোট মোমবাতি সে জ্বালালো - তাতে অবশ্য ঘরের অন্ধকার পুরোপুরি কাটেনি, হঠাৎ দরজাতে ধাক্কা ! আনিশা চেঁচিয়ে বলে -”কে?”

আমি রাজেশদরজা খোলো।

আনিশা খুলে দেখে রাজেশের একহাতে ছাতা ছাড়া কিছু নেই। কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার এতো বৃষ্টিতেও খালি একটা ছাতা থাকলেও রাজেশ ভেজে নি !

রাজেশ দ্রুত দরজা বন্ধ করে অনিশাকে একটা খাম দিয়ে বলে –“আমাকে আরেকবার অফিসে যেতে হবে।

আনিশা বললো -”এই দুর্যোগের রাতে কোথায় যাবে ?”

হটাৎ আনিশার মোবাইল বেজে উঠলো। সে মোবাইল রান্নাঘরে ফেলে এসেছিলো, রান্নাঘরে গিয়ে দ্রুত ফোন ধরে দেখে পার্সোনাল লোনের জন্য কল, বিরক্ত হয়ে ফোন রাখতে না রাখতেই কারেন্ট চলে এলো,বসার ঘরে এসে দেখে - দরজা হাট করে খোলা- রাজেশের চিহ্নমাত্র নেই ! সে বাইরে বেরিয়ে দেখে রাস্তা ফাঁকা। খামের মধ্যে একটা চিরকুট আরেকটা চিঠি। চিঠিতে লেখা আছে-“গিজারের মধ্যে একটা প্যাকেট আছেওটা নিয়ে এখান থেকে পালাও।” সে কিছু বুঝতে পারে না - তার মাথা কাজ করছে না যেন ! তবু সে গিজার খুলে দেখে ভালোভাবে প্যাক করা একটা ছোট বাক্স, বাক্সের মধ্যে সোনার বিস্কুট ! আনিশার বুক কাঁপতে থাকে - এসব কি চিরকুটে দেখে লেখা আছে -মনীশ - আর একটা  মোবাইল নম্বরসে ওইনম্বরে ফোন করে, কিন্তু যাকে আনিশা ফোন করেসে ফোন না ধরে লাইন কেটে দেয় ! তারপর একটা অচেনা নম্বর থেকে ফোন আসে তার মোবাইলে, সে ফোন ধরলে কোনো সম্বোধন না করে খুব দ্রুত একটা অচেনা কণ্ঠ বলতে থাকে –“ভাবি - আপনার সামনে বিপদ, তাড়াতাড়ি পালান - ওরা রাজেশকে মেরেছে আপনাকেও ছাড়বে না !”

আনিশা চেঁচিয়ে ওঠে –“কি যাতা বলছেন ?”

ওকে থামিয়ে দিয়ে লোকটি বলতে থাকে -” আমিও পালিয়ে বাঁচছি। আপনাকে বোধহয় রাজেশ কিছু বলেনি, আসলে আমরা একটা স্মাগলিং গ্যাঙের হয়ে কাজ করতাম। রাজেশ আর আমি সুস্থভাবে বাঁচতে চাইছিলাম,আমরা একজন পুলিশ অফিসারের সোর্স হিসাবে কাজ শুরু করেছিলাম- কিন্তু সর্ষের মধ্যেই তো ভূত থাকে, থানা থেকে কেউ সেটা আমাদের স্মাগলিং গ্যাঙের লিডারকে জানিয়ে দিয়েছিলো- তাই ওরা রাজেশকে শেষ করে দেয়,আমিও পালাচ্ছি আপনিও পালান।” বলে লাইনটা লোকটি কেটে দেয়।আনিশা হতভম্বের মতো মাটিতে বসে পড়ে, সে যেন কাঁদতেও ভুলে যায় ! তাহলে যে তাকে সাদা খামটা দিয়ে চলে গেলো - সে কে ছিল ?

| বর্ষ বরণ সংখ্যা-১৪২৯ | aleekpata.com | 29th Edition |

| ALEEK PATA- Your Expressive World |Online Magazine |

| Editor: Swarup Chakraborty | Publisher: Debasree Chakraborty |

| Bengali New Year, 2022 | April-June 2022 | Fifth Year Third Issue |

© All Rights Reserved by The Editor and The Publisher |

| a DISHA-The Dreamer Initiative |


Tuesday, January 5, 2021

হিম শীতল গল্প-কুয়াশা- সান্ত্বনা দাস

 

কুয়াশা
সান্ত্বনা দাস

 

অলংকরণঃ বর্ণালী গাঙ্গুলী

শীত এসেছে। জানালা দিয়ে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখে মধুমিতা, গাছের পাতাগুলো খসে পড়ছে টুপ টুপ করে। হলুদ বর্ণ পাতাগুলো এলোমেলো উড়তে থাকে, দু'একটা এসে পড়ে মধুমিতার মাথায় মুখে আবার সরে যায়। শরীরে একটা শীতের শিহরণ লাগে ওর। এই পাতা ঝরা বিকেল তারপর রাত রজনীগন্ধার মিষ্টি সুবাস ওকে আচ্ছন্ন করে রাখে। একটু পরেই কুয়াশা নামবে একটু একটু করে। রাস্তার আলোকস্তম্ভের আলোগুলোতে  যেন গ্রহণ লাগছে, আবছায়া হয়ে আসছে সেগুলো।কুয়াশারা নেমে এসেছে  মধুমিতার জানালার ওপর। রোজকার মতো অভিসারে এসেছে ওরা। মধুমিতা জানালাটা খুলল তারপর ভিজে জানালায় তর্জনী দিয়ে ছবি আঁকতে লাগল, ফুটে উঠল মানুষের মুখ অবয়ব। মধুমিতা করপোরেট অফিসে চাকরি করে। ছুটি বেশী পায় না। সারাদিন অফিস করে সন্ধ্যায় এইটুকু সময় তার  একান্ত নিজস্ব। তাই জানালা দিয়ে কুয়াশাদের ঢুকতে দেয় মধুমিতা আর ভিজে জানালায় ছবি আঁকে তার রোজ স্বপ্নে দেখা কোন এক অচেনা মুখ।

মধুমিতার বন্ধু শিবানী বছরের শেষে আট দিনের  একটা ছুটি নিয়ে ঘুরে আসার ইচ্ছায় মধুমিতাকে এসে বলল "চল না ঘুরে আসি, বিভাসদের   দেশের বাড়িতে অনেক গাছ আছে,পুকুর আছে  তাছাড়াও সাজান বাড়ি ভাল লাগবে ", বিভাস ওর স্বামী মধুমিতার মা বললেন "ও খুব ঠান্ডা লাগায় জানালা খুলে, কুয়াশায় ভিজে যায় একটু দেখো। "

ওরা রওনা হল একদিন শীত ভোরে যখন পাখীরা ডানা  ঝাপটে শিশির ঝরাচ্ছে পালক থেকে ,সূর্যের রক্তিম আলো ঊষার অবগুন্ঠনের আড়ালে চকিত দৃষ্টিলোভা সেই সময় ওরা যাত্রা করল সেই ছুটি কাটানোর অভিলাসে। পাঁচ ঘন্টার যাত্রা পথে হাসি আনন্দে কাটল কিছুটা পথ, এক জায়গায় বিভাস বলল "অনেকক্ষণ গাড়ি চালালাম এবার চা খাওয়া যাক "।নামল ওরা গাড়ি থেকে। রাস্তা সরু হয়ে এসেছে, কিছুটা ভাঙ্গা চোরা অর্থাৎ শহর ছেড়ে শহরতলীর পথ। চা খেয়ে আবার চলল গাড়ি। দু'পাশে নারকেল বাগান, কলা গাছের সারি, নানা রকমের পাখী দেখতে দেখতে ওরা চলল। হঠাৎ গাড়ি ব্রেক কষল। একটা বিড়াল রাস্তা পার হচ্ছে। দাঁড়াল গাড়ি দু'মিনিট, আবার চলল। অবশেষে পৌঁছল দেশের বাড়ি। জায়গার নাম মতিঝিল। সুন্দর সাজান বাড়ি। বিরাট আম বাগান নারকেল বাগান,একদিকে গোলাপ ঝাড় পিছনে পুকুর। সারাদিনের ক্লান্তি চলে গেল ওদের। ঘুরে ঘুরে জায়গাটা ওরা দেখল তারপর খাবার খেয়ে রাতে শুতে গেল। খোলা মাঠে তির তির করে কুয়াশা নামল। মধুমিতা মাঝরাতে জেগে উঠল। কে যেন ডাকছে নাম ধরে। ও উঠে জানালার কাছে গেল,


 
জানালাটা অল্প খুলতেই কুয়াশারা ওকে ছুঁয়ে গেল। ওর চোখে মুখে মৃদু স্পর্শ পেল ঠান্ডার। তর্জনী দিয়ে জানালার গায়ে ভিজের ওপরে ও অস্পষ্ট একটা ছবি আঁকল ওর স্বপ্নে আসা একটা মুখ, কিছুটা অবয়ব। হাত বাড়িয়ে কুয়াশা ছুঁয়ে নিল। কখন আবার শয্যায় গেল। রাত ভোর হল।

তিনদিন কাটার পর শিবানী আর বিভাস চুপি চুপি ওর ঘরে এল। পিছন থেকে দেখল জানালার কাঁচে ওর দু'বছর আগে অ্যাকসিডেন্টে মারা যাওয়া  দাদার মুখ আঁকা, ভিজের ওপরে। কিন্তু দাদাকে মধুমিতা দেখেনি শুধু কানে শুনেছে খুব সাধারণ চাকরি করা ছেলে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছে, তাতেই না করেছে মধুমিতা।  শিবানীর দাদা অপূর্ব দেখেছে মধুমিতাকে দূর থেকে। তার কিছুদিন পরেই মারা গেল দাদা। কিন্ত দাদার মুখ ও আঁকল কি করে! ও তো চেনেনা তাকে। পরদিন ওরা গাড়িতে উঠল ।ফেরার পালা। খানিকটা যাওয়ার পর আবার একটা বিড়াল। এপার থেকে ওপার। হয়ত কাকতালীয়। ঝাঁকানি দিয়ে গাড়ি থামল। মধুমিতা গাড়ির সীটে মাথা রেখে চোখ বুজল শিবানীর শত ডাকেও আর চোখ খুলল না।

Download ALEEK PATA Mobile APP
DOWNLOAD ALEEK PATA ANDROID APP
শিশির সংখ্যা -১৪২৭।
| Aleekpatamagazine.blogspot.com |
  |ALEEK PATA- Your Expressive World |Online Magazine |
| Editor: Swarup Chakraborty | Publisher: Debasree Chakraborty |
| Special Winter Issue, 2020 | December-February 2020 -21| 
| Fourth Year  Fourth Issue |25 th Edition|
|© All Rights Reserved By The Editor and The Publisher |
|a DISHA-The Dreamer Initiative |























 

হিম শীতল গল্প-রুম নম্বর চারশ বার -অরুণ চট্টোপাধ্যায়

 রুম নম্বর চারশ বার
অরুণ চট্টোপাধ্যায়

অলঙ্করণঃ বর্ণালী গাঙ্গুলী


এমন একটা সুন্দর ঘর পেয়ে আহুতির এত আনন্দ হল যে সে আর অপেক্ষা করতে পারল না। কাল সারা রাত জেগে ক্লান্তও ছিল। তাই জুতো সমেত দড়াম করে পড়ল বিছানায়।

তমালেরও প্রায় একই অবস্থা। ক্লান্তিতে প্রায় ভেঙ্গে পড়ছে। কোনরকমে কাঁধের আর হাতের ব্যাগগুলো রেখেই সে সোফায় গিয়ে হেলান দিয়ে বেলজিয়াম কাঁচের সুদৃশ্য সেন্টার টেবিলের ওপর পা রেখে চোখ বুঝে ফেলল।

ক্যাঁ করে বাজল ডোরবেল।

-খোলা আছে। চোখ বোঝা অবস্থাতেই বলল তমাল। এখন চোখ চাওয়াও যেন বাড়তি একটা পরিশ্রম।

আওয়াজ করে ঢুকল হোটেল বয়। টেবিলের ওপর ঠক ঠক করে শব্দ করে রাখল কফি আর স্ন্যাক্স। এই হোটলে চেক ইন করার সময় হল দুপুর বারোটা। এখন বেজেছে বারোটা কুড়ি

আধ মিনিটের মধ্যে পট থেকে কফি ঢেলে টেবিলে রেখে বিছানায় শোয়া আহুতিকে ঠেলা দিল তমাল, কফি ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।

-উঁ- সাড়া দিল আহুতি কিন্তু উঠল না। নিশ্চয় বেশ ক্লান্ত। থাক বেচারি একটু রেস্ট নিক বরং। নিজের কফি শেষ করে আহুতির কাপটাও শেষ করে দিল। পট খুলে দেখল সেখানে আরও এক কাপ অনায়াসেই হয়ে যাবে। তাই মহুয়া সেটা যখন উঠবে খেয়ে নেবে।

বেরিয়ে আলগা করে দরজাটা টেনে দিল তমাল। করিডোরে একটা সিসি টিভির চোখ দেখেছিল আসার সময়। তাই চুরি যাওয়ার ভয় নেই। চোরকে সঙ্গে সঙ্গে ধরতে না পারলেও তার ছবি দেখা যাবে যে কোনও ক্যামেরায়।

আহুতির শরীর এত ক্লান্ত ছিল যে সে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিল। ঘুমটা একটু পাতলা হতেই তার মনে হল তার পাশে যেন তমালও শুয়ে আছে। ঘুমের ঘোরে তমালের শরীর আরও জোরে চেপে ধরে সে ঘুমিয়ে পড়ল।  

একটু পরে ঘুমটা আর একটু পাতলা হল। তমালের ঘন স্পর্শ বেশ লাগছে তার। আধো আধো গলায় আহুতি তাকে আর একটু চেপে ধরে বলল, এস না আরও কাছে।

একটু পরেই তার মনে হল এই স্পর্শ তো তমালের নয়। যেন কেমন আলাদা আলাদা মনে হচ্ছে?

ঝট করে ঘুম ভেঙ্গে গেল তার। চোখ চেয়েই খেল খেল একেবারে যেন ইলেক্ট্রিক শক। আরে এ লোকটা তো তমাল নয়। এ কে? লোকটা এখানে এল কী করে? আর তাকে জড়িয়ে ধরেই এতক্ষণ সে শুয়ে ছিল নাকি? ইস ছি ছি! এখন যদি তমাল ঢুকে পড়ে তাহলে যে কেলেংকারির একশেষ।

দরজায় ঘচাং করে শব্দ। ল্যাচ কি খুলে ঘরে ঢুকছে তমাল। মুখ শুকিয়ে আমসি হয়ে গেছে আহুতির মনের মধ্যে হন্যে হয়ে হাতড়ে বেড়াচ্ছে অজুহাত। স্বামীকে কিছু তো একটা বলতেই হবে। হে ভগবান সে যেন বিশ্বাস করে।

-আমি জানি না দেখ না—কোথা থেকে যে এসে পড়ল। কেন যে দরজায় চাবি দিয়ে গেলে না ভাবতে পারছি না। ইস –বিশ্বাস কর আমি কিচ্ছু জানি না-

আহুতির ছল ছল চোখের দিকে তাকিয়ে তমালের মনে হল এইটুকু সময়ের মধ্যে বৌয়ের আবার কী হল যে একেবারে কেঁদেই পড়ল? ভ্রূ কুঁচকে প্রশ্ন করল, কী এসে পড়ল?

-এই যে দেখ না।

ঝট করে ঘুরে আহুতি বিছানার দিকে তাকাল। কিন্তু সেখানে তো কিছু নেই। তাহলে কি পাশবালিশ জড়িয়ে ধরেই এতক্ষণ ঘুমোচ্ছিল সে? কিন্তু তার বেশ স্পষ্ট মনে আছে কোনও পাশবালিশ তার বিছানায় ছিল না। না এখনও তো নেই।

মুচকি হাসল তমাল, বুঝেছি। নিশ্চয় আরশোলা কিংবা টিকটিকি।

চুপ করে রইল আহুতি। হাতের ঘড়িটা দেখে ব্যস্ত হয়ে পড়ল তমাল, চল চল। বেলা এখন একটা বেজে গেল। আরে কফিও খাও নি দেখছি।

লাঞ্চের পরে তারপর তমাল নেমে যায় বিচের দিকে তমাল অনেকটা। ম্যানেজারকে একা পাওয়ার জন্যে মৌরি নেবার ছলে একটু রয়ে গেল আহুতি। আর প্রশ্নটা ঠিক তখনই করল 

-পাশবালিশ! না ম্যাম আমরা তো বেডে রাখি না।

ম্যানেজারের উত্তরটা চিন্তা আরও বাড়িয়ে দিল আহুতির। প্রকাশ্য দিনের আলোয় এতটা ভুল দেখল সে? ঘর থেকে বেরোবার সময় পাশবালিশের ব্যাপারটা আর একবার দেখে নিলে ভাল হত।

দীঘার কাছাকাছি সমুদ্রের ধারে একটা টুরিস্ট স্পটে এসেছে তারা। থাকে শিলিগুড়ি। কাল রাত্রে ট্রেনে চেপেছিল। আজ ভোরে শিয়ালদহ পৌঁছে চলে এসেছে সোজা এসপ্ল্যানেডে। সেখান থেকে ধরেছে লাক্সারি বাস। স্বাভাবিক কারণেই আজ প্রচন্ড ক্লান্ত থাকার কথা তার। আর এই ক্লান্তিতে মাথার মধ্যে এলোমেলো কিছু হয়ে যাওয়াটা অসম্ভব কিছু নয়।

বিচে বিশেষ কথা বলল না তমালের সঙ্গে। তমাল তেমন জোরাজুরিও করল না। তমাল এখানে বেশ কিছুদিন থাকবে বলে পরিকল্পনা করে এসেছে। এখান থেকে আবার তাজপুর টাজপুর এসব নাকি যাবে। তাই অত তাড়ারও কিছু নেই। সামান্য বিচে ঘুরেই ঢুকে পড়বে হোটেলে। লনে বসে থাকবে চেয়ার পেতে।

 রাতে ঘুমটা বেশ গাঢ় হয়েছিল কিন্তু মাঝরাতে হঠাৎ ভেঙ্গে গেল। তার একদম গায়ে গায়ে লেগে আছে তমাল। ভীষণ চাপ লাগছে তার। ভালও লাগছে ঘুমের মাঝে স্বামীর এই ঘনিষ্ঠ আদর। একটা আবেশে ঘোর হয়ে ছিল হয়ত। ঘুমটা ভেঙ্গে গেল হয়ত সেই জন্যেই

কিন্তু এই স্পর্শ তো তমালের নয়? বুকের ভেতরে একটা শিহরণ। উঠে পড়ল সে ধড়মড় করে। আরে এ তো সেই ছেলেটা। নাইট ল্যাম্পের আলোতেও বেশ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। খালিগায়ে শুয়ে আছে বিছানায়। একেবারে ঠিক তার পাশেই। এতক্ষণ তাকে জড়িয়ে ধরেই ছিল তবে? কিন্তু কী সাহস! এ কোথা থেকে এল আর তমাল কোথায় গেল?

আর্ত চিৎকারটা আপনা আপনিই গলা দিয়ে বেরিয়ে এল আহুতির। চিৎকার করেই চোখদুটো বুজে ফেলেছিল সে।

ঘুম আসছিল না বলে বাইরে বারান্দায় বসে সিগারেট খাচ্ছিল তমাল। ভেতর থেকে আহুতির চিৎকারে দৌড়ে এসেছে। জ্বেলে দিয়েছে ঘরের বড় আলো।   

একেবারে জড়সড় হয়ে বসে আছে আহুতি। থরথর করে কাঁপছে ভয়ে। চোখে প্রশ্ন ঝুলিয়ে ভেতরে এসে দাঁড়িয়ে ছিল তমাল। আহুতি শুধু বিছানায় তার পাশের দিকে তাকিয়ে আছে।

-আমাকে একা ফেলে রেখে তুমি বাইরে সিগারেট খাচ্ছিলে? কেঁদে ফলল আহুতি।

আহুতির এই আচরণে বেশ আশ্চর্য হল তমাল। রাত গভীরে ঘুম না এলে বাইরে বারান্দায় চেয়ারে বসে সিগারেট খাওয়া তার চিরকালের অভ্যাস। বিয়ের পর থেকে তো একবারের জন্যেও আপত্তি করে নি আহুতি?

-কী ওখানে?  

কী বলবে আহুতি? এই লজ্জার কথা কি তমালকে বলা যায়? তাকে জড়িয়ে ধরে একটা অজানা লোক- ছি ছি। কিন্তু এখন তো নেই? বাইরের দিকের দরজা বন্ধ। পেছন দিকের দরজা দিয়ে তমাল এল। তাহলে লোকটা পালাল কোন পথে? তাহলে কি তারই ভুল? এত বড় মাপের একটা ভুল? হতে পারে? নিজের মাথা সম্পর্কে নিজেরই সন্দেহ হচ্ছে এখন।    

 

এখনও পুরো ধাতস্থ হতে পারে নি আহুতি। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বিচে না গিয়ে শরীর খারাপ বলে শুয়ে রইল বিছানায়। এমন কী তমালকেও যেতে দিল না।  আর তমাল তার পাশে বসে একটা ম্যাগাজিন পড়তে লাগল। সে তো ভেবেই পায় না তার বৌ এত ভয় কিসে পেল।

লাঞ্চ সেরে এক রকম জোর করেই বৌকে বিচে নিয়ে গেল। সেখানে ভয় অনেকটা কেটে যাবে। কাঁপা কাঁপা পায়ে আহুতি চলল তমালের সঙ্গে। তার মুখ দেখে সন্দেহ হল তমালের যে তার ভয় এখনও কাটে নি।

-খুব ভয় পেয়েছ দেখছি। কী হল এমন?

-ওই লোকটা-বলতে বলতে থেমে গেল আহুতি। কেননা কাল থেকে দু’বার দেখা হয়েছে ছেলেটা বা লোকটার সঙ্গে কিন্তু তার পাশেই যে তাকে শুয়ে থাকতে দেখেছে এমন বলতে খুব সংকোচ হচ্ছিল। কিন্তু এখন ভাবল এটা চেপে রাখা ঠিক নয়। আবার খুলে বলাও তো বেশ ঝামেলার। বিচেও অন্যমনস্ক হয়ে শুধু ভাবছিল স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কটাই বড় গোলমেলে চাইলেও সব কিছু খুলে বলা যায় না।  

ফিরে ঘরে না ঢুকে একেবারে ডিনার সেরেই নিল তারা। আবার নিচে নামতে যদি ভয় করে আহুতির? খেতে খেতেও ভয়ে ভয়ে এদিক ওদিক তাকাচ্ছিল সে। আগের রাতের আতঙ্ক এখনও কাটে নি। সাহস দিল তমাল, কাম অন আহুতি। আজে বাজে ভেবে দুঃস্বপ্ন দেখেছ। এসব ভুলে যাও।

হয়ত তাই। আহুতিও ভাবল। সে কিছুক্ষণ খাবার নাড়াচাড়া করে উঠে পড়ল। কিন্তু বেসিনে হাতমুখ ধুয়ে এসে আবার চেয়ারে তমালের মুখোমুখী বসে পড়ল। একা যাওয়ার সাহস নেই।  

আলোটা নিভিয়ে নাইট ল্যাম্প করে দিল তমাল। আপত্তি করে উঠল আহুতি হাঁ হাঁ করে।

-কী পাগলামী করছ আহুতি? এতবড় আলো জ্বেলে ঘুম হয়?

আলো জ্বেলে তমালের ঘুম হবে না। আর আলো নিভিয়ে আহুতির ঘুম হবে না। আদরের একটা মৃদু ব্যর্থ চেষ্টা করে নিজেই ঘুমিয়ে পড়ল তমাল। বিচে এতক্ষণ ঘুরে আর কিছু লোকের সঙ্গে বকবক করে শরীর টায়ার্ড। ঘুম চেখের পাতায় দাঁড়িয়েই ছিল। সে শোয়া মাত্র তারাও ধপাস করে চেপে বসে পড়ল। গভীর ঘুমে সে চোখের পাতাগুলো খুলে গেল তার ঠিক পাশ থেকেই আসা তার বউয়ের গোঙানীর আওয়াজে।

খাটের পাশেই দেওয়ালের সঙ্গে লাগানো সুইচে হাত দিল তমাল। জ্বলে উঠল বড় আলোটা। আহুতির চোখে আতংকের কালো ছায়া।

-সে আমাকে নিতে এসেছিল। তুমি বিশ্বাস করবে না কিন্তু সত্যি সে আমাকে নিতে এসেছিল।

মহা ভাবনায় পড়ল তমাল। এ তো হ্যালুসিনেশন। তার মানে দৃষ্টি বিভ্রম। কাল যা হোক একটা ডাক্তারের কাছে নিয়েই যেতে হবে। নাহলে ফেরার পথে রাস্তায় বেয়াড়া কিছু হলে আর সামলান যাবে না।

ভাবছে তমাল। ফেরার টিকিট ক্যানসেল করে এগিয়ে আনতে হবে কোলকাতা ছাড়া ভাল চিকিৎসা হবে না।

-সেই লোকটা আবার এসেছিল। কী দারুন রাগ ঝরে পড়ছে তার চোখেমুখে। ধমকাচ্ছে আমাকে তোমাকে দেখিয়ে বলছে, এই লোকটা তোমার পাশে শুয়ে আছে কেন? একে চলে যেতে বল প্রীতি। তুমি আমার শুধু আমার।

ভ্রূ কুঁচকে তমাল বলল, প্রীতি? কে প্রীতি? তুমি তো আহুতি? লোকটা নিশ্চয় নেশা করে এসেছে আর জানলার বাইরে থেকে তোমাকে ভয় দেখিয়ে মজা করেছে। আর তুমি ভেবেছ সত্যি।

থমথমে মুখ আহুতির। ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে স্বামীর দিকে। তারপর জানলার দিকে আবার বিছানার দিকে। তমালও ভাবছিল সিঁড়ি ছাড়া পেছনের বারান্দায় কে কীভাবে আসবে?

পরের দিন সারা সকালটা বারান্দায় সিগারেট খেয়েই কাটিয়ে দিল তমাল। বিচে যাওয়ায় মন নেই আহুতির। সে ঘুমোচ্ছিল তাকে আর বিরক্ত না করে তমাল একাই চলে গেল। কাল কী সব উল্টোপাল্টা স্বপ্ন দেখেছে। আজ একটু ঘুমোয় তো ঘুমোক।

হঠাৎ আহুতির মনে হল বেশ বেলা হয়েছে এবার উঠে পড়া যাক কিন্তু তমাল কোথায়? এই ঘরে সে একা ছিল নাকি এতক্ষণ? আচ্ছা ক্যালাস তো তমাল। বৌ যে এত ভয় পাচ্ছে তাতে তার হুঁশ নেই এতটুকু? বেমালুম তাকে ফেলে চলে গেল।

কোনরকমে দৌড়ে নামল নিচে। লাঞ্চ রেডি। তমাল অপেক্ষা করছে তার জন্যেই। কোনও রকমে লাঞ্চ খেয়ে এসেই শুয়ে পড়েছে আহুতি তমালের হাত ধরে একরকম টানতে টানতে ওপরে নিয়ে এসেছে।

এসেই শুয়ে পড়েছে আহুতি স্বামীর কোলে মাথা রেখে। একটু পরেই ঘুমিয়ে পড়ল। তমাল দেখল সন্ত্রস্ত তো বটেই আবার একটা অবসাদ গ্রস্তও বটে সে একাই বেরিয়ে গেল বিচে।

ভয়ানক ক্লান্তিতে ঘুমটা সত্যি এসে গিয়েছিল আহুতির হঠাৎ নাকে একটা পোড়া পোড়া গন্ধ এল। যেন কোথাও কিছু পুড়ছে। প্রথমে ভাবল হোটেলের রান্নাঘর থেকে আসছে গন্ধটা। তারপর মনে হল হোটেলের রান্নাঘর তো সেই গ্রাউন্ড ফ্লোরে। এই ঘরেই কিছু পুড়ছে না তো? মনে হতেই তড়াক করে লাফিয়ে উঠল।

গায়ে লাগল একটা ছ্যাঁকা। প্রচন্ড আগুনের হলকা। তার মানে আগুন লেগেছে হোটেলে। কি হবে এবার? এদিকে তমালও নেই।

পালাতেই হবে। দৌড়ে দরজার দিকে এল আহুতি। দরজা খুলতে যাবে এমন সময় তার মনে হল আরে, আগুনের হলকাটা তো আসছে বারান্দার দিক থেকে। একদম এই ঘরের পাশে কী হবে এবার?

দৌড়ে এখনই তমালকে ডাকতে হবে। হাতল ধরে টান দিল। তারপর মনে হল একটু ভেতরে এসে বারন্দায় উঁকি তো পাড়া যাক। কিন্তু আগুনের শিখা যে ভাবে বিস্তার করেছে তাতে মনে হয় এক্ষুনি না বিরাট একটা ক্ষতি হয়ে যায়।

তাড়াতাড়ি কিছু একটা করতে হবে। খুব তাড়াতাড়ি। কিন্তু কী করা যায়? হঠাৎ নজরে পড়ল ঘরের কোণে টেবিলের ওপর ইন্টারকমটার দিকে। এটার কথা তো এতক্ষণ মনে পড়ে নি।

আবার দৌড়। টেবিলের কাছে এসে তুলল রিসিভার। ভাবল এক মিনিট। মনে করার চেষ্টা রিসেপশনের নম্বরটা।

-হ্যালো রিসেপশন। রুম নাম্বার চারশ বার বলছি।

-বলুন। আজ কি ডিনার তাড়াতাড়ি দিতে হবে ম্যাডাম? সরি, এক ঘন্টার আগে দিতে পারব না।

-আহা শুনুন না ডিনার নয়।

ওপার চুপ করে রইল। সেই ফাঁকে বেশ কিছুটা হাঁপিয়ে নিল আহুতি।

-শুনুন আমাদের ঘরে আগুন লেগেছে। প্লিজ কিছু করুন। ডু সামথিং। কুইক না হলে—

-আগুন! বলছেন কী? আগুন কী করে লাগবে? কোথায়?

একে উত্তেজনা তাতে এই সিরিয়াস সিকোয়েন্সে এমন ক্যালাস রিয়াকশন ম্যানেজারের। ভয় আর উত্তেজনার সঙ্গে আবার একরাশ বিরক্তি।

-কী করে লাগবে তা কী করে জানব ম্যানেজার বাবু। হোটেল তো আপনার। আমার তো নয়। এ-সি

 থেকেও তো আগুন লাগতে পারে।

-প্লিজ ম্যাডাম। রিল্যাক্স। আগুন লাগলে তো আমাদের ফায়ার আলার্ম বেজে ওঠার কথা। সে যা হোক। কিন্তু কোথায়? ঘরের ভেতরে নাকি?

রিসিভার কানে ধরেই বারান্দার দিকে এক ঝলক তাকিয়ে নিল আহুতি। সেখান থেকে গলগল করে আসছে আগুন আর কালো ধোঁয়ার স্রোত। আর আগুনের প্রবল হলকা।

-হ্যাঁ হ্যাঁ বাইরের বারান্দার দিক থেকে প্লিজ সময় নষ্ট করবেন না। উত্তেজনায় কাঁপছিল আহুতির গলা। হাতও।  

ওপার বলল, ওকে ম্যাডাম আমি এক্ষুনি যাচ্ছি। প্লিজ চিন্তা করবেন না।

আহুতি তো অবাক। লোকটার গলা যে রকম ঠান্ডা তাতে তো মনে হল আহুতির কথা সে বিশ্বাসই করে নি।

উদ্বিগ্ন হয়ে বলল, প্লিজ প্লিজ প্লিজ!

ওপার ঝট করে লাইন কেটে দিল। আহুতির মনে হল এখুনি সে দৌড়ে পালায় কিন্তু একটা কৌতূহল তার পেয়ে বসেছে বারান্দায় কী এমন জিনিস থাকতে পারে যে তার থেকে আগুন লাগতে পারে?

রিসেপশনে ফোন করে তার মনে একটু জোর এসেছে যেন এখন আর একা নেই এই বিপদের মধ্যে এমনি ভাব ভয়ে ভয়ে একটু একটু করে ব্যালকনির দরজাটার দিকে এগিয়ে যাবার চেষ্টা করছে।

ব্যালকনিটা পেছন দিকে। এদিকে একটা মাঠ পেরিয়ে শুধু একটা বড় পুকুর আছে। লোকজন বিশেষ নেই। নাহলে এতক্ষণে কারুর কারুর চোখে পড়ে যাওয়ার কথা ছিল আগুনটা। তাছাড়া এখন রাত বেশ হয়েছে। বিচে বেশ রাত পর্যন্ত থাকতে ভালবাসে তমাল। তাই সে এখনও ফেরে নি।  

দরজা খোলার সাহস হল না। জানলায় পর্দাটাই সরাল। তার ঘুমোনর সময়েই তমাল হয়ত খুলে রেখে থাকবে। সেখান দিয়ে মাঝে মাঝে ছুটে আসছে আগুনের হলকা। ছোট ছোট ফুলকি। আর কালো ধোঁয়া।

কেরোসিনের গন্ধ। মনে হচ্ছে কেরোসিন থেকেই আগুনটা লেগেছে। হলকা আসছে তবু সাবধানে উঁকি পাড়ল। আর সঙ্গে সঙ্গে চোখ বন্ধ করল। এত বীভৎস দৃশ্য চোখের এত সামনে সে কখনও দেখে নি। 

মানুষটা জ্বলছে। দাউ দাউ করে জ্বলছে। মুখ যন্ত্রণায় হয়েছে বিকৃত। একটা জীবন্ত মানুষ এখুনি একটা পোড়া লাশ হয়ে যাবে।

আর পারল না আহুতি। দৌড়ে গিয়ে বিছানায় বালিশে শক্ত করে মাথা গুঁজে পড়ে রইল। কয়েক মুহূর্ত পরে নিজেকে একটু সামলে ভাবতে শুরু করল। একটা লোক সুইসাইড করছে। কিন্তু বারান্দায় সে পৌঁছল কেমন করে? ঘরের ভেতর থেকে তো ব্যালকনির দরজা বন্ধ

তাহলে কি পাইপ বেয়ে বেয়ে কোনও রকমে উঠেছে?

সেই লোকটা। যাকে তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে শুতে দেখেছে সে নিজে। লজ্জার সঙ্গে ভয় মিশে এক অদ্ভুত অনুভূতি গ্রাস করল তার মস্তিষ্ককে। লোকটাও কি তবে সেই লজ্জায় আত্মহত্যা করছে?

জ্ঞান হারিয়ে ফেলল সে।

জ্ঞান যখন ফিরল তখন দেখল একঘর লোক। তমাল ঝুঁকে তাকে পরীক্ষা করছে। তার হাতে জলের গ্লাস। মুখে ঠান্ডা কিছু ছিটের স্পর্শ তাকে বুঝিয়ে দিলে তাকে জল ছিটিয়ে জ্ঞান ফেরাবার চেষ্টা করছে তমাল।

পেছনে ম্যানেজার আর কয়েকজন লোক। ধড়মড় করে উঠে বসার চেষ্টা করতেই তাকে জোর করে শুইয়ে দিল তমাল। তমালের চোখে প্রশ্ন।

পাশের ঘরের এক ভদ্রমহিলা তার স্বামীকে বললেন, হ্যাঁগো, তোমার কিছু ওষুধ নেই। বলকারক? মেয়েটিকে খাওয়ালে হয় না?

-আচ্ছা আমি এনে দিচ্ছি। বলে দ্রুতপদে চলে গেলেন ভদ্রলোক।

ভয়ের চোখে ব্যালকনির দরজার দিকে তাকালো আহুতি। দরজাটা বন্ধ। জানলাটা খোলা বটে তবে সেখানে একটা অন্ধকার ছাড়া আর কিছু নেই। আগুন তবে এরা নিভিয়ে ফেলল? এত তাড়াতাড়ি? কিন্তু পোড়া গন্ধটা তো পাওয়া যাচ্ছে না আর। মাত্র কটা মিনিটেই সে গন্ধও উবে গেল?

-আগুন? কোথায় গেল?

-ম্যাডাম আমি তো বলেছিলুম ওসব কিছু নয়। ম্যানেজার বলল, হয়ত একটা দুঃস্বপ্ন।

দুঃস্বপ্ন? হ্যাঁ এ ছাড়া আর কি ভাবা যেতে পারে এই পরিস্থিতিতে।

 

-সেই লোকটা আজ সন্ধ্যায় আত্মহত্যা করেছে বাইরে ব্যালকনিতে—

-আবার এক কথা। ধমকাল তমাল, বলছি না ওটা দুঃস্বপ্ন?

ওকে একটা ঘুমের বড়ি খাইয়ে দিল সে। আপত্তি না করে মুখে দিয়ে জল খেতে খেতে আহুতি বলতে লাগল বাকিটা, সে নাকি আমার প্রেমিক চন্দন। আমি নাকি তার প্রেমিকা প্রীতি। কী আশ্চর্য কথা বল দেখি-

শেষ কথাগুলো জড়িয়ে এল আহুতির। একটু পরে ঘুমিয়ে পড়ল।

 

সকালে উঠে সাইকিয়াট্রিস্টের খোঁজ করে তার কাছে যাওয়ার তাড়া পড়ে গেল তমালের। রোগের একেবারে গোড়াতেই ঠিক করে দিতে চায় সে। কিন্তু তার মনে প্রশ্ন হঠাৎ এই বিকৃতির কারণ কি? বেশ তো ভাল ছিল আহুতি

রিসেপশনের একদম ডানদিকে একটা বিরাট আয়না আছে দেওয়ালে। সেদিকে ততটা চোখ পড়ে না যাবার কথা নয়। তবে আহুতির চোখ পড়ে গেল। কিন্তু পড়েই আটকে গেল যেন।

আয়নার ঠিক উল্টোদিকে একটা ছোট ঘর। এখানে উঁচু বেদিতে ঠাকুর বসান আছে। শ্বেত পাথরের এক গনেশের মূর্তি। সে তো থাকতেই পারে। ব্যবসা ক্ষেত্র যে। কিন্তু আহুতির আকর্ষণ সেটা নয়। বরং সে নিজে।

এত অবাক সে আগে আর কখনও হয় নি। সে তো এই হোটেলে পা রাখল এই দিন দুয়েক আগে। তাহলে তার ছবি এই হোটেলে আসবে কী করে?

একেবারে ধনুকের তীরের মত ছুটে গেল পাশের সেই ছোট্ট ঘরটায়। হাঁ করে তাকিয়ে রইল গনেশের মূর্তির ঠিক নীচে রাখা একটা ফোটো ফ্রেমের দিকে। ছবিটা বেশ বড় সাইজের। যেখানে টাটকা ফুলের মালায় কাঁচে আটকা হয়ে রয়েছে তার নিজের ছবিটা।

হাঁ করে তাকিয়ে রইল আহুতি। একেবারে তো তারই মত দেখতে। শুধু পোশাক পরিচ্ছদ আর চুলের বাহার অন্য। বিস্ময়ের পরে বিস্ময়। পাশের ছেলেটির দিকে নজর পড়ল এবার। আর হাত-পা থেকে শুরু করে সারা শরীর থরথর করে কাঁপতে লাগল।

দূর থেকে সেটা দেখে তমালের মনে হল কিছু একটা হয়েছে। সে চলে এল সেখানে। আহুতি কিছু না বলে শুধু তার ডান হাতের আঙ্গুলটা বাড়িয়ে দিল ছবির দিকে। ছবির ভেতরে যেন আর একটা আহুতি। আর তার পাশে—

-জানো আমি লজ্জায় বলতে পারি নি এই ছেলেটাই রোজ আমাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে থাকত। কিছু মনে কর না আমার কোনও দোষ নেই।

হ্যালুসিনেশন আবার প্রকট হয়ে উঠেছে। তমাল ভাবল। ভেতরে ভেতরে কেঁপে উঠলেও শান্ত স্বরে বলল, ডোন্ট বি সিলি ডিয়ার স্বপ্ন সব সময় সত্যি হয় না।

মুখে এ কথা বললেও একটা চিন্তা তাকে কিন্তু গ্রাস করেই রাখল। ছেলেটার কথা হ্যালুসিনেশন বলে উড়িয়ে দিলেও যে প্রশ্নটা ওই কাঁচে ঢাকা ফোটো ফ্রেমে ধাক্কা খায় তা হল এখানে আহুতির ফটো এল কী করে? সে কি এর আগে কখনও এসেছিল এই হোটেলে? আর তখন কেউ তার সঙ্গে বদমায়েশি করে ছবি তুলে লটকে দিয়েছে এই ছবির ফ্রেমে?

নাকি সত্যি প্রেমিক আহুতির? সে কি তার এই প্রেমিকের সঙ্গে এই হোটেলে এসে রাত কাটিয়ে গেছে কোনও এক সময়? এখন এই হ্যালুসিনেশন এটা কি সেই কুকর্ম ঢাকা দেওয়ার একটা নাটক?

নিজের ওপরেও বেশ রাগ হতে লাগল তমালের। ইস বিয়ের আগে একটু খোঁজ খবর করা উচিৎ ছিল।

তড়িঘড়ি ম্যানেজার ছুটে এসেছে। কিন্তু তারা না ডাকতেই।

-আমিও খুব অবাক হয়েছিলাম ম্যাডাম আপনাদের আসার সময়ই। দুটো মানুষের মধ্যে এত মিল তো পাওয়া যায় না সহসা।

ছবির দিকে আবার তাকাল আহুতি। বলল, কিন্তু এ তো—এ তো—

-সুইসাইড করেছে? প্রশ্নটা করে ম্যানেজার নিজেই বলল, হ্যাঁ, সুইসাইড করেছিল। কেরোসিন গায়ে ঢেলে আগুন লাগিয়ে। আপনাদের ব্যালকনিতেই। মেয়েটা তার আগে।

-তাহলে আমি যে সেদিন-

আহুতিকে থামিয়ে দিয়ে ম্যানেজার বলল, হ্যাঁ ম্যাডাম। আপনার ঘটনা অনেকেই দেখে। আসলে এই ঘরটা বন্ধ থাকে। যারা থাকে তাদের কেউ কেউ এমন ঘটনা দেখেছে। তাই আমরা ওই ঘরটা তালাবন্ধ রাখি। কিন্তু এখন এই প্রচন্ড চাপের মধ্যে কি আর ঘর এভাবে বন্ধ ফেলে রাখা যায় বলুন? আর ভূতের ব্যাপারটা তো আর সবাই বিশ্বাস করে না। সেটা সত্যি কি মিথ্যে সে নিয়েও যথেষ্ট সন্দেহ আছে।

-কিন্তু আমার ছবি-আমি কি করে এলুম ফোটোতে?

-ওটা আপনি নন ম্যাডাম। আপনার মত দেখতে ছিলেন আমাদের প্রীতি ম্যাডাম। আমাদের মালিক সুশোভন দাসের একমাত্র মেয়ে। প্রেমে পড়ে গিয়েছিল চন্দনের সঙ্গে। চন্দন আমাদের হোটেলের খুব সামান্য র‍্যাংকের কর্মচারী ম্যাডাম। নিজের বাড়ি থেকে বাবাকে লুকিয়ে হোটেলের এই চারশ বার নম্বর ঘরে দুজনে প্রেম করত।

দুজনেই চুপ করে রইল।

-কিছুদিন যাবার পরে আমাদের চোখে ধরা পড়ে গেল ব্যাপারটা। কিন্তু প্রীতি ম্যাডাম আমাদের ব্ল্যাক মেল করত এই বলে যে বাবাকে বা অন্য কাউকে বলে দিলে সে সুইসাইড করবে।

তমাল বলল, তারপর?

-এসব জিনিস কি চাপা থাকে স্যার? একদিন মালিক সব জানতে পেরে চন্দনকে অপমান করে চাকরি থেকে বরখাস্ত করে হোটেল থেকে তাড়িয়ে দিয়েছিলেন। হোটেলের সিকুরিটির কাছে কড়া নির্দেশ ছিল সে যেন কোনক্রমেই হোটেলে পা রাখতে না পারে। এত ধনী হোটেলের মালিক কি নিজের একমাত্র মেয়ের সঙ্গে তার সামান্য কর্মচারীর বিয়ে দিতে পারে বলুন?

-এক সন্ধ্যায় ঘর খুলে তার মৃতদেহ উদ্ধার করা হল। বিষ খেয়েছিল প্রীতি ম্যাডাম।

কিছুক্ষণ চুপচাপ। আহুতির নীরব মুখে জিজ্ঞাসা আর কৌতূহল।

-তারপর কি হল? নিস্তব্ধ ঘরে তমালের কথাটা যেন তপ্ত তেলে বেগুন পড়ার মত ছ্যাঁক করে উঠল। চমকে উঠল ম্যানেজারও। বলল, হাসপাতালে আর নিয়ে যেতে হয় নি আমাদের তখন মারা গিয়েছিলেন ম্যাডাম প্রীতি। মালিক তো শোকে অজ্ঞান হয়ে পড়লেন। কিছুদিন আগেই ওনার স্ত্রী মারা গিয়েছিলেন একটা শক্ত অসুখে। এখন তাই একেবারে একা হয়ে গেলেন।

কোথা থেকে খবর পেয়ে চন্দন এসে হাজির। কিন্তু গেটে তাকে আটকে দেওয়া হল। কাঁটা তার দিয়ে ঘেরা পাঁচিল টপকে ছিন্নভিন্ন রক্তাক্ত হয়ে সে ঢুকল। সিকুরিটি আটকাল। সে পেছন দিক দিয়ে পাইপ বেয়ে বেয়ে অতিকষ্টে উঠে গেল চারতলায়। আপনারা তো দেখেছেন পেছনের বারান্দায় কোনও গ্রিল নেই। জানলাটা খোলা ছিল। মালিকের কাছে কাকুতি মিনতি কত। কিন্তু মালিক রাজি হলেন না।

আবার সব চুপচাপ। আহুতির কানের কাছে কে যেন ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে।

নীরবতা ভাঙল ম্যানেজার, সন্ধ্যের অন্ধকার তখন বেশ গাঢ়। ম্যাডামের বডি তখনও পড়ে। পুলিশকে খবর দেওয়া হয়েছে তারা না আসা পর্যন্ত বডি এখানে পড়ে থাকবে। এমন সময় বাইরে দেখা গেল বারান্দায় আগুনের লেলিহান শিখা। সবাই ছুটে গিয়ে দেখল চন্দনের শরীর আগুনে পুড়ে যাচ্ছে। গায়ে আগুন লাগিয়েছে সে।

-কিন্তু কেরোসিন পেল কোথায়?

আমাদের মেড সার্ভেন্টরা এখানে মাঠের শেষে কোয়ার্টারে থাকে। একজনের বাড়ি থেকে খানিকটা কেরোসিন সে জোগাড় করেই উঠেছিল ওপরে। সেই সময় তো নিচে কেউ ছিল না বলতে গেলে।

আহুতির কানে আর কিছু ঢুকছিল না। তীব্র আগুনের শিখায় চন্দনের সেই পুড়ে যাওয়ার দৃশ্য তার চোখের সামনে ভাসছিল। সে মাত্র গতকাল রাত্রে নিজে চোখে দেখেছে এই দৃশ্য এই মর্মান্তিক দৃশ্য আবার ভেসে উঠল। থরথর করে কেঁপে উঠছিল সে বারবার।

-তারপর? তমাল কৌতূহলী।

আহুতির কানের সামনে যেন ভেসে আসছিল চন্দনের সেই আকুতি। একটি বার তার প্রেমিকাকে শেষ দেখতে চাওয়ার কাতর প্রার্থনা।

-মেয়ের প্রেমের স্মৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে কসুর করেন নি মালিক। চন্দন আর প্রীতি ম্যাডামের ছবি বড় করে বাঁধিয়ে এখানে রেখে রোজ সকালে সকলের অলক্ষে মালা পালটে দিয়ে যান। ধূপ জ্বেলে যান।

পরের দিন সকালেই আহুতিরা ফিরে গেল। সাইকিয়াট্রিস্ট আর দেখাতে হয় নি।

Download ALEEK PATA Mobile APP
DOWNLOAD ALEEK PATA ANDROID APP
| শিশির সংখ্যা -১৪২৭।
| Aleekpatamagazine.blogspot.com |
  |ALEEK PATA- Your Expressive World |Online Magazine |
| Editor: Swarup Chakraborty | Publisher: Debasree Chakraborty |
| Special Winter Issue, 2020 | December-February 2020 -21| 
| Fourth Year  Fourth Issue |25 th Edition|
|© All Rights Reserved By The Editor and The Publisher |
|a DISHA-The Dreamer Initiative |























Main Menu Bar



অলীকপাতার শারদ সংখ্যা ১৪২৯ প্রকাশিত, পড়তে ক্লিক করুন "Current Issue" ট্যাব টিতে , সবাইকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা

Signature Video



অলীকপাতার সংখ্যা পড়ার জন্য ক্লিক করুন 'Current Issue' Tab এ, পুরাতন সংখ্যা পড়ার জন্য 'লাইব্রেরী' ট্যাব ক্লিক করুন। লেখা পাঠান aleekpata@gmail.com এই ঠিকানায়, অকারণেও প্রশ্ন করতে পারেন responsealeekpata@gmail.com এই ঠিকানায় অথবা আমাদের ফেসবুক গ্রুপে।

অলীক পাতায় লেখা পাঠান