অলীক পাতার অন্যান্য সংখ্যা- পড়তে হলে ক্লিক করুন Library ট্যাব টি



। । "অলীক পাতা শারদ সংখ্যা ১৪৩১ আসছে এই মহালয়াতে। । লেখা পাঠানোর শেষ তারিখ ১৫ ই আগস্ট রাত ১২ টা ।.."বিশদে জানতে ক্লিক করুন " Notice Board ট্যাব টিতে"

Showing posts with label 2019. Show all posts
Showing posts with label 2019. Show all posts

Wednesday, October 2, 2019

অল্প স্বল্প গল্প-অবান্তর কথা -দ্বৈতা হাজরা গোস্বামী


অবান্তর কথা

দ্বৈতা হাজরা গোস্বামী



নেই নেই নেই

Image Courtesy: Google Image Gallery

জীবনটা নেই নেই নেই করে কেটে গেলো। কী মধ্যবিত্তের জীবন , কী বড়লোকের জীবন। চাল নেই , ডাল নেই , প্রেম নেই , চাকরি নেই , চাকরি আছে প্রমোশন নেই , 
ছোটবেলায় দেখেছি নেই কথাটা বলতো না মা,জেঠিমারা । বলতো বাড়ন্ত। রান্না ঘরের মাথায় লেখা থাকতো "অন্নপূর্ণার পূর্ণ ভাণ্ডার " যেন ম্যাজিক শব্দ। গরীবের ঘরে গেলেও কেউ কিছু না খেয়ে ফিরে যেত না। অন্তত মুড়ি বাতাসা , নাড়ু মুড়কি , গুড়ের পাটালি , লেবু চিনি শরবত। এখন কারোর বাড়িতে গেলেই
কী খাবেন ? গরম না ঠাণ্ডা ? দুধ ছাড়া না দুধ যুক্ত , সুগার আছে না নেই ?
তারপর এলো বিশাল একখানা মগে সবুজ চা। খুব স্বাস্থ্যকর এবং বিস্বাদ। এক চুমুকেই খিদে মেরে দেবে। আস্তে আস্তে চুমুক দিয়ে মনে মনে শপথ "আর কোনোদিন আসি ?" 
আসলে গাঁয়ের লোককে নেমন্তন্ন  করার অনেক জ্বালা।  এটিকেট , এলিগেন্স , এজুকেশন , " ই " দিয়ে শুরু কোনো কিছুই নেই। মেপে খেতে পারেনা , চেপে হাসতে পারেনা। বিড়াল ডিঙোনো ভাত খায় , মানে বিড়াল ডিঙোতে গিয়েও পারবেনা, মুখ থুবড়ে পড়ে যাবে। কিন্তু এসব কথা বলা চলবেনা। গরীব লোকের সব আছে। রাগ আছে , ঘুম আছে , সেন্টিমেন্ট আছে, পাকস্থলী শুকিয়ে যায়নি , মুখ হাঁ করা খিদে আছে।
বড়লোকের ফেসবুক আছে। জীবন আসলে ততটাও রোমান্টিক নয় যতটা ফেসবুকে দেখায়।
জীবন যাপনে মধ্যবিত্ত , বাইরে বড়লোক , আদতে ছোটোলোক। জীবনে প্রেম নেই ,প্রেম খুঁজতে চলো সুইজারল্যান্ডে। হাতে হাত ধরে ছবি। মেড ফর ইচ আদার।
ইনবক্সে , এতো ভালো ছবি দিলাম লাইক করলিনা ? লাভ দিতে হবে। তুমি আমার ছবিতে লাভ না দিলে তোমাকে জীবনে রেখে কী লাভ? 
ভালোবেসে ট্যাগ করেছে , ত্যাগালে অভিমান। 
এখনকার দিনে খুব সহজেই ত্যাজ্যপুত্র , ত্যাজ্য ভাইপো , ত্যাজ্য বাপ করা যায়। ব্লক করে দিলেই হলো। বক বক করলেই ধরে ব্লক করে দিতে হয়। মানুষ এখন বেশি জ্ঞান পছন্দ করে না। জন্মথেকেই স্মার্টফোনে স্মার্ট ,  গুগল সব গুলে খাইয়ে দিচ্ছে। মানুষকে কিছু জিজ্ঞেস করতে গেলেও তেড়িয়া। "গুগুল আছে তো , শুধুশুধু বিরক্ত করেন ক্যান ?"
বিরক্ত না করে অনুরক্ত হন , রক্তের কেউ হলে তো আরও সমস্যার। বাড়বাড়ন্ত দেখলেই রক্ত গরম। আমার নেই , ওর আছে , ওর হচ্ছে , ও পাচ্ছে , আমারই বাড়ির লোক অথচ আমি প্রমোশন পেলে কোনো সাড় নেই। বসের শালার প্রমোশনে লাভ দিচ্ছে , গলাগলি ছবি দিচ্ছে যেন "পিছলে জনম কা বিছড়া হুয়া" ,
 জেলাসি আর জেলুসিল বাঙালির নিত্য সঙ্গী। এখন অবশ্য মধ্যবিত্ত বাঙালি খুব স্বাস্থ্যসচেতন। ঘুম থেকে উঠে হাঁটে , সারাদিন সবুজ চা , সন্ধেয় হলুদ চা , রাতে লাল চা , মনটা শুধু চা চা চা , চাই চাই চাই করে।
জামা চাই , শাড়ি চাই , বাড়ি চাই , গাড়ি চাই , খ্যাতি চাই , ফিগার চাই , কোটি টাকার বিয়ে চাই , ভিরুশকা , নিকিয়াঙ্কা , দীপভীর, গরীবের নামে কি  এসব সম্ভব ? কানাই মালতী, মালকানা হয়ে তালকানা।
বিয়ের আগে প্রেম চাই , প্রেম করছি , বিয়ে করবো করবো করছি , বিয়ে করে ফেলেছি , প্রেম ধরে ফেলেছি , প্রত্যেকটার আলাদা ফটোশুট, না হলে মন খারাপ , মন খারাপ কাটছেই না।  
সব আছে , সব আছে , কী যেন নেই নেই , কথা বলার , কথা শোনার মানুষটা নেই।


পৃথিবী একটা বিশাল বাজার

Image Courtesy: Google Image Gallery


পৃথিবী একটা বিশাল বাজার আর মানুষ হলো তার প্রোডাক্ট।
এক একটা মানুষ একেকটা ব্র্যান্ডের। ব্র্যান্ড না থাকলে মানুষই নয়। পদার্থ ব্র্যান্ড , অপদার্থ ব্র্যান্ড , গুরু ব্র্যান্ড , শিষ্য ব্র্যান্ড, নিজের ব্র্যান্ড চেনাও , বাজারে দাম বাড়বে হু হু করে। কিন্তু পাল্টি খেলে কী  হবে বলা মুশকিল।
সারাজীবন কুচুটে শাশুড়ির রোল করে শেষে সর্বংসহা বিধবা মায়ের রোল করলে মোটেই পাবলিক মেনে নেবে না।
মিষ্টি মেয়ে ব্র্যান্ডের নরম মেয়েরা সারাজীবন মার খেয়েও দু’ একটা গাল দেবে না কিছুতেই। ওসব ভাষা তাদের মুখে মানায় না। ওই ভাবমূর্তি  সারাজীবন ধরে রেখে এগোতে হবে।
পৃথিবীতে এসেছো মানেই তুমি কিছু একটা করবে।
 "পেট চিন্তা চমৎকার " গরিবের ঘরে জন্মালে ওতেই সময় কেটে যাবে একটুও বোর লাগবে না  , বড়লোকের ঘরে জন্মালে শুরুতেই ওই চিন্তা নেই।   কমলা , বেদানা, আঙ্গুর পিস্ পিস্ করে পিষে পিষে  খাওয়ানো হবে যাতে  রক্ত হয় , বড় চাকরী করে বাবা মায়ের প্রতি রক্তের টান থাকে। সেই টানে পাঁচ, দশ বছরে একবার বাড়ি ফিরে  এসে বলে -" কী নোংরা জায়গা, এখানে থাকা যায়না "
 দুঃস্বপ্ন দেখে ভারতেই  মৃত্যু হচ্ছে অজানা ভাইরাসের আক্রমণে , পচা হসপিটালে , বিনা চিকিৎসায়।
"সেই দেশেতেই মরি " কী আল্হাদ, জন্মভূমি অব্দি ঠিক আছে।
গরীব মানুষের গায়ে রক্তের বদলে জল। খেটে খেটে রক্ত জল কী সাধে বলে ? ছোটবেলায় এক কাপ দুধে তিন কাপ জল মিশিয়ে খেয়েছিলো। জলের ধারে বস্তি , মশার আখড়া। মরেও গেলো  জলাতঙ্কে , জলবসন্তে ,বন্যার জলে ডুবে। রক্তে আয়রন নেই শুধুই আয়রনি।
অর্থাৎ সস্তার প্রোডাক্ট। বেশিদিন টিকলো না। আবার স্টেশনে নব্বই বছরের বুড়ি ভিখিরি। কুঁজো হয়ে গেছে।  দিব্যি চলে ফিরে বেড়াচ্ছে আর ঘরের বুড়িটা সত্তরেই নেতিয়ে পড়েছে।বড্ড বেশি পরনির্ভরশীল। ছেলেমেয়ের মুখ চেয়েই তো বুড়ো হওয়ার স্বপ্ন দেখেছে। বুড়ো বয়সে সুখ ভোগ করবে বলে মধ্যবিত্ত বাপ মা সারাজীবন পয়সা জমায়। খেটে খেটে হাড় কালি , রাতে ফাটা গোড়ালিতে বোরোলীন।
ওরা বড় হলে সংসারের চিন্তা নেই , এন্তার ঘুরবে। ষাট পেরোতেই খাট , বাষট্টি তে বাত। এতদিন শরীরের কথা ভাবোনি , শরীর তো ছেড়ে কথা বলবে না। ভালো ব্র্যান্ডের বিদেশে চাকুরী ছেলে মেয়ে তো তোমরাই চেয়েছিলে ?
অপদার্থ ভাইপোটি তবু খোঁজ খবর নেয়। নিশ্চয় কিছু ধান্দা আছে। বুড়োর তোষকের নিচে টাকার গাদি।
যাই  হোক শেষ  বেলায় মুখে জল তো সেই দিয়েছে। ক্লাস ফাইভ অব্দি পড়া  মুদির দোকানি।

গুরুজীর একটু ঠেলা লাগে

Image Courtesy: Google Image Gallery


আমরা সবাই এখন একটা দোলাচলে,  করবো? না  করবোনা ?
যাবো?  না  যাবো না , দুলেই চলেছি দুলেই চলেছি।
পাশ আর ফেল এর মাঝের দড়িতে হনুমানের মতো ঝুলে দোল খাচ্ছি।ইন্টারভিউটা হতে হতেও হলোনা।
অথচ উত্তর সব ঠিক ছিল , ইন্টারভিউ কর্তার গোঁফের আড়ালে পইরটের মতো হাসি ছিল। কিন্তু চাকরিটা হলো না।
ওভার কোয়ালিফায়েড। বড় বেশি পড়ে ফেলেছেন। জেনে ফেলেছেন ফালতু ফালতু। এই কাজে এতো জানার দরকার নেই। শুধু গলার জোর বেশি চাই। ঐরকম ফ্যাঁসফেঁসে গলায় ওদের শাসন করা যাবে না।
ক্লাসে বাঁদরের চাষ হয়। চেহারাটাও একটু দজ্জাল না হলে টিকতে পারবেন না।
বিয়ের বাজারে মেয়ে লিস্ট মিলিয়ে বিয়ে করছে। এক্সেল শিট রেখেছে- ঝন্টুর স্যালারি , পিন্টুর স্যালারি পাশাপাশি , পিন্টুর রোজগার বেশি , কিন্তু ঝন্টু বেশি হ্যান্ডসাম , পিন্টুর পেটের রোগ , ঝন্টুর বাবার সম্পত্তি ,
হিসেব কষে যাচ্ছে , অংকে মাথা ছিল একটুর জন্য অনার্সে ফেল। কিন্তু এও এক দোলাচল। এ কী উনিশ বছরের কচি বয়সে ফস করে বিয়ে করে নেওয়া নাকি ?

বয়স আরও উনিশ পেরিয়ে পাকা মাথা।
পাকা মাথায় বিয়ে না করাই উচিত। মা কাকিমাদের অবস্থা দেখলেই ইরিটেশন হয়। সারাজীবনে কী পেলো ? একবার ভেবেও দেখলো না। সংসার সংসার খেলতে খেলতে দিনগুলো কেটে গেলো।
 আইডেন্টিটি চাই , আইডেন্টিটি চাই , সাধারণের মাঝে অসাধারণ , ট্যালেন্ট সবার থাকে না। যাদের থাকে গোঁফ ওঠার আগেই হাওয়া। জেঠুরা মাথা নেড়ে বলে -" ট্যালেন্ট ছিল ছেলেটার মধ্যে ,বখে গেলো।"
বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে বখে গেলো।
-কী করে ?
-টিউশন পড়ায় , আর সামান্য লেখালিখি।
-কবিতা লেখাই কাল হলো।
-সে আর বলতে ? কবি আর কাঙাল সমগোত্রীয়।
-ওর দুঃখের কথা কে শোনে ?
বটতলায় বসে থাকা দার্শনিক ছাগল অথবা বিচালি বাবা। সারাদিন বিচালি খেয়ে থাকেন একটুও বিচলিত হন না।
 সাফল্য হাতের মুঠোয় এসেও ফাঁক গলে বেরিয়ে যাচ্ছে ? কেন এমন হয় ?
-হয় হয়, দাড়ি চুলকে বাবা বলবেন -" এরকমই হয় এই ভবসংসারে , এই মায়াপ্রপঞ্চে " শুধু গুরুজীর একটু ঠেলা লাগে। নৌকোটা ধরে একটু ঠেলে দেবেন। আবার দুলতে দুলতে চলতে শুরু করবে।
যাদের ওই ঠেলে দেওয়ার লোক নেই তারা নিজের মতো ধাক্কা খেতে খেতে চললো


 
রাইটার্স ব্লকের বিপরীত

Image Courtesy: Google Image Gallery

লেখকের কলম দিয়ে কর্পোরেশনের জলের মতো হুড়হুড় করে লেখা আসছে। দিনে লিখছেন , রাতে লিখছেন , খেতে খেতে লিখছেন , বাসে ট্রামে অটোতে সর্বত্র লিখে যাচ্ছেন। এ হলো রাইটার্স ব্লকের বিপরীত অবস্থা। ব্রেনে জমে থাকা জমাট অনুভূতি গুলো বরফ গলা জলের মতো নিচে নামছে। কী করে এমন হলো ? প্রকাশকদের তাড়নায় গতবছর পুজোর পর থেকেই এই অবস্থা। যা ইচ্ছে তাই লিখছেন , পছন্দ না হলে দাঁত কিড়মিড় করে ছুঁড়ে ফেলছেন। ভালো লাগলে ধেই ধেই করে নেচে উঠছেন। লেখক মাত্রই জানে যে লেখক হওয়া কী অসম্ভব কঠিন ব্যাপার। ভৌতিক উপন্যাস লেখার সময় মাথায় চোদ্দ ভূতে ভর করে। রাতের বেলা আওয়াজ পাল্টে যাচ্ছে। বাড়ির লোকজন তটস্থ। খোনা ভাষায় বলছেন -" খেঁতে দাঁও, শুঁতে যাবো , বুঁলটি পঁড়তে বস "
বুল্টি তো দাঁতে দাঁত লেগে চিঁ চিঁ করছে। বুল্টির মা বিপদতারিনীর সুতো বাঁধছে। কিন্তু লেখার ভূত কী এতো সহজে যায় ?
গোয়েন্দা গল্প লিখছেন , সারাক্ষণ চোখ সরু করে ভাবছেন। বুল্টি আর বুল্টির মা কে জেরা করছেন। ভর দুপুরে কোথায় যাওয়া হয়েছিল? পার্লারের রাস্তায় কাদা , কিন্তু জুতোতে তো কাদা নেই ? উড়ে উড়ে গিয়েছিলে নাকি ?
তৃতীয় মাছের মুড়ো  কোথায় গেলো ?   পেটি থাকলে মুড়ো তো  থাকতেই হবে। স্কন্ধকাটা মাছ তো আর নয়।
- মুড়ো ছ্যাঁচড়া তে গেছে।
-" ছ্যাঁচড়াই তবে ভিলেন কালপ্রিট। ওকে পাতায় তুলে শাস্তি দেওয়া হোক।"
কল্পবিজ্ঞান লিখতে লিখতে ভাবছেন জানলার পাশের টিকটিকিটা টিকটিকি না অন্য কিছু। মানদা মাসি কিরকম রোবটের মতো কাজ করে। সব কথার একই রকম জবাব দেয়।ঘুমন্ত  শ্যালকের  কপালে  আব না নাকি গোপন কোনো সুইচ। আঙ্গুল দিয়ে খোঁচাতেই চিৎকার। বাঘা ফোঁড়া ফেটে গেছে।
।। সমাপ্ত ।।

| Aleekpatamagazine.blogspot.in |
  | Editor: Swarup Chakraborty | Publisher: Debasree Chakraborty |
|ALEEK PATA-The Expressive World |Online Magazine |
|a DISHA-The Dreamer Initiative |
|Special Puja Issue,2019 | September-October, 2019 |
| Third Year Third Issue |20Th Edition|
|© All Rights Reserved By The Editor and The Publisher |



















খাই খাই- এসো বোসো আহারে -পৃথ্বীশ সেন


খাই খাই

পৃথ্বীশ সেন

সম্পাদকের কথাঃ

বাঙালি ভোজন রসিক, আর তার ভোজন স্পৃহা আরও বেড়ে যায় কোনও উৎসব বা ছুটির দিনে, আর, শারদোৎসবের মত আর কোনও উৎসব বাঙালির ক্যালেন্ডারে আছে কি? নেই, আর তাই এই মহোৎসবের উপাচার, স্পেশাল ডিশ নিয়ে আমরা হাজির হয়েছি অলীকপাতার পুজা সংখ্যায়। একটি আমিষ আর আর একটি নিরামিষ। এক্কেবারে হাতেগরম পাঠিয়েছেন  পৃথ্বীশ সেন

আসুন দেখা যাক, রেসিপি গুলি...
 রান্না করে কমেন্ট লিখতে ভুলবেন না কিন্তু।

১) আমিষ রেসিপি - ইলিশ ঘী পুলাও

Photo Courtesy : Author: Edited By: Swarup Chakraborty
 কাল খুব ভালো সাইজের একটা ইলিশ পেয়েছি, একদম মনের মত। তাই দিয়ে রাত্রে পুলাও বানালাম। খেতে সত্যিই ভালো হয়েছিল,কিন্তু ফেসবুকে টেস্ট করানোর উপায় নেই যখন আপনারা নিজেরা ঘরে বানান, খুবই সহজ বানানো।

পরিমান পরিমাপ সব এর মধ্যেই উল্লেখ আছে, আপনারা বেশি কম পরিমানে বানালে সেই অনুযায়ী অনুপাত করে নেবেন।

 প্রস্তুতি ঃ

 প্রথমেই মাছের টুকরো গুলো নুন আর গন্ধরাজ লেবুর রস (প্রায় অধকাপ মত) দিয়ে ভিজতে রেখে দিলাম। প্রায় ঘন্টা ছয় ভিজলে খুব ভালো হয়।

দুধ ২০০ মিলি লিটার গরম করে এক কাপ মিছরী গলিয়ে নিন, তারপর কাজু একমুঠো কিসমিস একমুঠো ভিজতে দিন।

আপাতত এটুকুই ম্যারিনেশন 

পদ্ধতিঃ

Photo Courtesy : Author: Edited By: Swarup Chakraborty
৬ ঘন্টা পর, ইলিশ গুলো তুলে নিন লেবুর রস থেকে। একটা পাত্রে গাওয়া ঘী দিয়ে খুব কম আঁচে ভাজুন। মিনিট খানেক পরে উল্টে দিন। হালকা লাল রঙ লাগতে শুরু করলেই, নামিয়ে নিন।

৫০০ গ্রাম বাসমতি চাল ভালো করে ধুয়ে রেখে দিন। আর মাছের থেকে বেরনো লেবুর রস টা এতে দিয়ে ভালো করে মাখিয়ে নিন।

ইলিশ সরিয়ে নিয়ে ওই তেলে পেঁয়াজ কুচি এক চামচ ভেজে নিন। এরপরে এক চামচ পেঁয়াজ, রসুন, আদা বাটা মেশান। ভালো করে ভাজুন খুব কম আঁচে। দিন তেজপাতা, ৪ টা এলাচ, ৪ টা লবঙ্গ, ২ টুকরো দারচিনি।

ভাজা হয়ে গেলে তেজপাতা বাদ দিয়ে সব মসলা নামিয়ে ঠান্ডা করে নিন।

ওই পাত্রেই এবারে ভেজা চাল দিয়ে ভাজুন ভালো করে।

পেঁয়াজ আদা রসুন গরম মসলা ঠান্ডা হলে একসাথে বেটে নিন আর মিশিয়ে দিন ওই ভাজা চালের সাথে।

এক চামচ গোল মরিচ গুঁড়ো মেশান।

এরপর মেশান দুধ কাজু কিসমিস। ভালো করে নেড়ে নিন।

৮০০ মিলি লিটার গরম জল মেশান। টেনে এলে পরে নুন দিন স্বাদমতো।

উপরে ভাজা ইলিশের টুকরো গুলো দিয়ে দিন।

কয়েকটা কাঁচা লঙ্কা মাঝে চিরে উপরে দিয়ে দিন।

মাঝে একটা বাটিতে পোস্ত কাঁচালঙ্কা বাটা নুন ইলিশে মিশিয়ে বসিয়ে দিন। (যদি চান তো)

ঢাকনা দিয়ে ফুটতে দিন মিনিট দশ

১০ মিনিট পর তৈরি।

খুব খিদে পেয়ে গেছে, নামাবার সময় ছবি তোলার কথা আর মনে নেই।
তাই থালার ছবিটাই তুলতে হল।


বিঃদ্রঃ

মাপে জল দিলে ফ্যান হবেনা। আর নাহলে জল ঝরিয়ে নিতে হবে। তবে জল মাপে দিলে ঝরঝরে পুলাও পাবেন, সাথে ঘী লেবুর গন্ধ টাও  থাকবে।

কোন রং ব্যবহার করিনি, গোলমরিচ আর চাল ভেজে দেবার জন্য এমন লালচে সাদা পুলাও রং হয়েছে, চাইলে হলুদ গুঁড়ো বা খাবার রং ব্যবহার করতে পারেন।

যদি বেশি মিষ্টি চান মিছরি বা চিনি বেশি পরিমাণে ব্যবহার করতে পারেন। 
(চিনি অ্যাভয়েড করি তাই আমি মিছরি ব্যবহার করেছি)


২) নিরামিষ রেসিপি - ভেজ জাকুতি

Photo Courtesy : Author: Edited By: Swarup Chakraborty

১) গোটা ধনে জিরে লঙ্কা গোল মরিচ একসাথে রোস্ট করে নিন তাওয়া গরম করে

২) ঠান্ডা হলে একসাথে গুঁড়ো করে নিন ।

৩) এবার কড়ায় সর্ষে তেল দিয়ে আলু ভেজে নিন

৪) তারপরে ক্যাপসিকাম ভেজে নিন

৫) এবার নারকেল আদা সর্ষে রসুন তেঁতুল গুড় নুন একসাথে বেটে নিন।

৬) কড়ায় আবার তেল দিন গোটা সর্ষে গোটা জিরে ফোড়ন দিন আর তেজপাতা দিন

৭)সর্ষে ফুটতে শুরু করলে ওই নারকেল পেস্ট টা দিয়ে ভেজে নিতে হবে।

৮) একটু পরে আলু ক্যাপসিকাম মিশিয়ে দিয়ে নাড়তে হবে এবং মটরশুঁটি মিশিয়ে দিতে হবে

৯) যখন রস টেনে টেনে আসবে আরো কিছুটা নারকেল পেস্ট করে মিশিয়ে দিয়ে ঢাকনা দিয়ে অল্প 

আঁচে  পাঁচ  মিনিট রেখে ঢাকনা বন্ধ করে দিন।

ব্যাস  রেডি।

।। সমাপ্ত ।।

| Aleekpatamagazine.blogspot.in |
  | Editor: Swarup Chakraborty | Publisher: Debasree Chakraborty |
|ALEEK PATA-The Expressive World |Online Magazine |
|a DISHA-The Dreamer Initiative |
|Special Puja Issue,2019 | September-October, 2019 |
| Third Year Third Issue |20Th Edition|
|© All Rights Reserved By The Editor and The Publisher |



























ফেলুদার গল্প-এবার মামলা মানালিতে- মিঠুন দাস


এবার মামলা মানালিতে

মিঠুন দাস





কোথাও একটা ঘুরে এলে হয়না?" গরম গরম সিঙ্গাড়ায় কামড় দিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন জটায়ু। "যা বিচ্ছিরি অবস্থা হয়েছে কল্লোলিনী তিলোত্তমার, জ্যাম, গরম, ভিড় আর তো পারা যাচ্ছে না মশাই।

কোথায় যাওয়া যায়, সেটা আপনি বলুন নাবলল ফেলুদাহাত কি ফাঁকা নাকি?”
আরে সে আর বলবেন না মশাই। জানেন তো এবার আমার লাস্ট উপন্যাস টার ডিজিটাল ভার্সন বেরিয়েছে। সেসব নাকি আবার ট্যাব পড়া যাবে। লোভে পরে আমিও একটা ট্যাব কিনে দেখলুম মশাইসহ্য করা গেলো না। বেঁচে থাক আমার বই আর বইপাড়া।আমি জানতাম ফেলুদারও এই কথাটা পছন্দ হবে। নিজে বই পড়তে ভালোবাসে। রাতে শোবার আগে বই না পড়লে ঘুম আসে না।
ব্যাপারে আমি আপনার সাথে একমত লালমোহন বাবুবলল ফেলুদা।যতক্ষণ না পাতার নরম সুবাস পাচ্ছি, বইয়ের দুমলাট দুহাতে রেখে সযত্নে একটার পর একটা লাইনে চোখ বোলাচ্ছি, আঙ্গুলের ছোঁয়ায় পাতা ওলটাচ্ছি, ততক্ষণ আরাম কোথায়? সে কথা ছাড়ুন, অন্য কিছু একটা বলবেন মনে হচ্ছিল।
হ্যাঁ মশাই, ভেবে দেখলাম রহস্য রোমাঞ্চ তো অনেক হল, পাবলিক এর টেস্টও বদলে যাচ্ছে, এইবার সেই অনুযায়ী কিছু লিখেই দেখি না, তাই অন্যরকম একটা ছক কেটেছি, কিন্তু এগোতে পারছি না। তাই ভাবলাম একটু ঘুরে আসলে হয়। বাইরে গেলেই দেখেছি আমার প্লট এর সমস্যা মিটে যায়।
কোথায় যাওয়া যায় সেটা আপনিই বলুন না”, বলল ফেলুদা।কোথায় যেতে চাইছে আপনার মন?”
পাহাড়টা মাঝে অনেকদিন বাদ পড়ে গেছে। বলছিলাম আর একবার সিমলা গেলে হয় না? আগেরবার তো কেস এর চক্করে কোথাও ঘোরাই হল না।
কথাটা শুনেই মনটা নেচে উঠল। বাক্স রহস্যের তদন্তের ব্যাপারে শেষবার যে সময় সিমলা গেছিলাম তখন সেখানে বরফ, আর সে বরফ আকাশ থেকে মিহি তুলোর মত ভাসতে ভাসতে নীচে নেমে এসে মাটিতে পুরু হয়ে জমে, আর রোদ্দুরে সে বরফের দিকে চাইলে চোখ ঝলসে যায়, আর সে বরফ মাটি থেকে মুঠো করে তুলে নিয়ে বল পাকিয়ে ছোঁড়া যায়। বুঝতে পারলাম প্রস্তাবটা ফেলুদারও মনে ধরেছে।
ঠিক যখন হয়েই গেছে তখন বেকার টাইম নষ্ট করে আর লাভ নেই, লন্ড্রি থেকে গরম জামাকাপড় আনাতে হবে, বুকিং টা সেরে ফেলতে হবে। শুধু সিমলা তো আর নয়, তার সাথে কুলু, মানালি, রোটাং আরও অনেক জায়গা আছে। এখান থেকে দিল্লি, সেখান থেকে বাই রোড সিমলা।
প্লেন করে দিল্লি এসে সোজা গাড়ি নিয়ে সিমলা। প্লেন আসার সুবিধা হল অনেকটা সময় বাঁচে যেটা ঘুরে বেরানোর কাজে লাগানো যায়। পথে কোন উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটেনি। ফেলুদা বসেছিল ড্রাইভার এর পাশে, আমি আর লালমোহন বাবু পিছনের সিটে। মাঝরাস্তায় একবার থেমে গরম জামা কাপড়গুলো সুটকেস থেকে বের করে পরে নিলাম। যদিও বেশি হাইটে উঠিনি তবু এরই মধ্যে কানের পাশটায় ঠাণ্ডা লাগতে শুরু করে দিয়েছে। আসতে আসতে ওনার নতুন গল্পের প্লট টা শুনলাম।

বুঝলে তপেশ, শুরু করলেন জটায়ু, "একজন অসফল ব্যাবসায়ি হুট করে একদিন তার ছেলে, মেয়ে, বউ সবার কাছে টাকা ধার চাইতে লাগলেন। সবাই তো অবাক। বাড়ির লোকের কাছে টাকা না পেয়ে তিনি একে একে চেনা পরিচিত সবার কাছে ধার চাইতে শুরু করলেন। বিরক্ত হয়ে সবাই এড়িয়ে যাওয়া শুরু করল। কয়েকদিন পর জানা গেলো ভদ্রলোক অনেক টাকা লটারিতে জিতেছেন যেটা উনি আগে থেকে জানতে পেরেছিলেন। কেউ যাতে টাকা চাওয়ার কথা না ভাবে তাই এই প্ল্যান।মনে মনে বললাম ভালোই ভেবেছেন ভদ্রলোক। তবে ফেলুদার সাহায্য ছাড়া দাঁড়াবে না। আগে থেকে লটারির ফল জেনে যাওয়ার বিশ্বাসযোগ্য কারণ বের করা জটায়ুর কম্ম নয়।

সিমলায় এসে উঠলাম ক্লার্কস হোটেলে। আগেরবারও এটাতেই ছিলাম। পাহাড়ের ঢালু গায়ে তৈরি হোটেল। লাঞ্চ খেতে খেতে লালমোহন বাবু বললেনসাহেব রা মশাই থাকতে জানত। এসব জায়গায় এসে মনের সুখ, চোখের সুখ, শরীরেরও সুখ। এত আরাম সহ্য হলে হয়।
পরের দিন সকাল সকাল রওনা দিলাম কুলু হয়ে মানালির পথে। সিমলা থেকে কুলু ঘণ্টার রাস্তা, কুলু তে ব্রেক দিয়ে বিয়াস নদীর ধারে ফটো তুলে এগিয়ে চললাম মানালির পথে, প্রায় ৪২ কিমি. রাস্তা। মানালি থেকেই শুরু ঐতিহাসিক ট্রেড রুট। শুনেই তো জটায়ু প্রচণ্ড উত্তেজিত। এখান থেকে এভারেস্ট ওঠা যায় নাকি, আলেকজান্ডার কি এখান দিয়েই হেঁটে বেড়াতেনএইসব উদ্ভট প্রশ্ন করে চললেন অনবরত। মানালি তে আমরা উঠেছি দি হিমালয়ান হোটেল এ। ভিক্টোরিয়ান গথিক স্টাইল বানান দুর্গ। শুধু যে বাইরেটা দুর্গের মত তাই না, ভেতরটাও মধ্যযুগের মত করেই বানানো, আসবাবপত্রও তাই। ঘরের ভেতর ফায়ারপ্লেস দেখে একটু থতমত খেয়ে গেলেন লালমোহন বাবু।নিজের ঘরে নিজেই আগুন লাগাব, আমি কোনদিন ভাবিনি ফেলুবাবু।
বিকেলের দিকে মানালি শহরটা ঘুরতে বেরিয়ে জটায়ু পুরো অবাক। যা দেখছেন খালি বলছেন কোথায় এলুম মশাই?” শেষে বাধ্য হয়ে ফেলুদা কে বলতে হল আপনার প্রশ্নের যে সোজা উত্তর তা হয় সেটা আপনি ম্যাপ খুললেই পেয়ে যাবেন, তাই সেটা আর বলছি না, বাকিটা ইন্দ্রিয়গুলো খোলা রেখে জাস্ট অনুভব করে যান। মুখ দেখে বুঝলাম উত্তরটা ভদ্রলোকের পছন্দ হয়নি।
আইসক্রিম খাবি তোপসে?” ফেলুদার ডাক শুনে এগিয়ে গিয়ে দেখি ৩টে কোন অর্ডার করেছে।ঠাণ্ডার মধ্যে আইসক্রিম  খাবার মজাই আলাদা, বুঝলেন লালমোহন বাবু?” কোন একটা কামড় দিয়ে শুরু করল ফেলুদামানালি নামটা এসেছে মনু থেকে, সেই পুরাণ এর মনু যাকে বলা হয় বিষ্ণুর অবতার। মাছের পিঠে চেপে এখানেই এসে নামেন মনু আর নতুন করে সমাজ তৈরি করেন বন্যার পর। অবশ্য ব্রিটিশরা আসার আগে অব্দি এখানকার খবর বিশেষ কেউ জানত না। ওরাই এখানে এসে আপেল চাষ শুরু করে, এখনো ওটাই এখানকার লোকের মূল জীবিকা। কি বুঝলেন?”
জানলাম, শিখলাম, বুঝলামদিব্যদৃষ্টি লাভ করলামহেসে বললেন জটায়ু।মন ভরে গেছে মিত্তির মশাই। তবে কি জানেন আগেরবারের এক্সপিরিয়েন্সটা আরও ভালো ছিল। ওই রকম ঘাড়ের কাছে বরফ পড়াটা আমি কোনদিন ভুলবনা। এক আশ্চর্য জিনিস ছিল মশাই।
এটা আপনি মন্দ বলেননি লালমোহনবাবু। তবে বছরের এই সময়টা এখানে বরফ থাকেনা। এখন বরফ পেতে হলে আপনাকে যেতে হবে রোটাং এর দিকেবলল ফেলুদা।
তাহলে ওয়েট করছি কেন, চলুন গাড়িটা বুক করে আসা যাকভীষণ স্মার্টলি বললেন জটায়ু।
গাড়ি অবশ্য সঙ্গে সঙ্গে বুক হল না। পারমিশন এর ব্যাপার আছে। ঠিক হল পরের দিনটা আমরা আশেপাশে ঘুরে বেড়াব আর পরশু রোটাং যাব। হোটেলে ফিরে দেখি দুজন লোক বসে রিসেপ্সনে দাবা খেলছে। পাস দিয়ে যাবার সময় তাদের একজন ঘাড় ঘুরিয়ে পরিষ্কার বাংলায় বললবাঙ্গালি মনে হচ্ছে?” ফেলুদা হেসে হ্যাঁ বলল।আমার নাম অনির্বাণ সান্যাল, আর ইনি আমার পার্টনার রমা।বললেন ভদ্রলোক।
আমি রমাকান্ত কামার, সামনে থেকেও যা পিছন থেকেও তাইবললেন অন্য ভদ্রলোক। ফর্সা দোহারা চেহারা, গলার সরটাও বেশ মানানসই।আপনারা কি কোলকাতা থেকে?” লালমোহন বাবুকে মনে হয় বয়োজ্যেষ্ঠ দেখে তাকেই প্রশ্নটা করলেন রমাকান্ত বাবু।
আগ্যে হ্যাঁ, আমার নাম লালমোহন গাঙ্গুলি, ইনি প্রদোষ মিত্র আর এটি ওনার খুড়তুতো ভাই শ্রীমান তপেশ রঞ্জন মিত্র
প্রদোষপ্রদোষমিত্রনামটা খুব চেনা চেনা লাগছেআপনি কি গোয়েন্দা? মানে ওই লাইনের সাথে যুক্ত?” চেরা গলায় প্রশ্নটা করলেন অনির্বাণ বাবু। ফেলুদা পার্স খুলে নিজের কার্ডটা বার করে দিল ভদ্রলোককে। আমি জানি এটা নতুন কার্ড, কোলকাতায় ওর একটা ফ্যান ফোরাম আছে - ওরাই বানিয়ে দিয়েছে।
আপনারাও কি কোলকাতা থেকেই?” প্রশ্নটা করলেন জটায়ু।
আমি যদিও কোলকাতার লোক, তবে যাওয়া হয়না অনেকদিন। ব্যাবসার কাজে বেশির ভাগ সময়টাই কোলকাতার বাইরেই কাটে। আর আমার পার্টনার বোম্বাই এর বাসিন্দা, অবশ্য বাংলাটা ভালোই বোঝে আর বলতেও অসুবিধা নেইজানালেন মিঃ সান্যাল।
কিসের ব্যাবসা আপনাদের?” বলল ফেলুদা।
আমাদের একটা কনসালটেন্সি ফার্ম আছেএকটু অন্যমনস্ক গলায় বললেন মিঃ কামার।
রোটাং টা মিস করবেন না কিন্তু, আমরা যাচ্ছি কাল। সারা বছর যদিও রাস্তা খোলা থাকেনা, তবে লাকিলি এই সময়টা এসেই যখন পড়েছেন, ঘুরে আসুন। রাস্তা ঠিক আছে, আমরা খোঁজ নিয়েছিবললেন সান্যাল।
ইচ্ছে তো আছে, গাড়িটাও বুক করে এলামজানালেন জটায়ু।
তবে জানেন তো এখানকার পাহাড়গুলো যাকে বলে ইয়াং, কাঁচা বয়স আর কি, তাই মাঝে মাঝেই ল্যান্ড স্লাইড লেগেই থাকে। অবশ্য মিলিটারি আছে, ঝটপট রাস্তা পরিষ্কার করে ফেলে।অভয় দিয়ে বললেন সান্যাল মশাই। জটায়ুকে দেখে ঠিক বুঝলাম না কতটা নিশ্চিন্ত হলেন।
চল হে সান্যাল, ডিনারটা সেরে ফেলা যাক, কাল আবার সকাল সকাল ওঠা আছে। আর বোর্ড এর যা অবস্থা তো শেষ হবার নয়, পরে আবার দেখা যাবেগম্ভীর গলায় বললেন কামারবাবু। আমার কেমান জানি মনে হল আমাদের কথাবার্তা শেষ করার জন্যই বললেন ভদ্রলোক।
নমস্কার মিঃ মিত্র, কার্ড টা আমার কাছেই রাখলাম, যদি কখনো দরকার লাগে। ব্যাবসার কাজে যদিও আমরা পুলিশের ওপর বেশি ভরসা রাখিহেসে বললেন মিঃ সান্যাল। আমরাও প্রতি নমস্কার জানিয়ে চলে এলাম ওখান থেকে।
নামের ব্যাপারটা কি বললেন বলুন তো ভদ্রলোক? সামনে পিছন থেকে এক মানেটা কি?” মাথা চুলকে বললেন জটায়ু।
ওটা এক ধরনের অ্যামবিগ্রাম, মানে নামটা সামনে থেকে লিখলেও যা হবে, লেটারগুলো যদি পিছন থেকে পরপর সাজিয়ে লেখা হয় তাহলেও একই দাঁড়াবেবুঝিয়ে বলল ফেলুদা।তবে নামটাই যে শুধু ভদ্রলোকের ব্যাপারে ইন্টারেস্টিং, তা নয়।
আমার ভদ্রলোককে ভীষণ অন্যমনস্ক মনে হয়েছিল। কথাটা ফেলুদাকে বলতে বললব্যাপারটা আমিও লক্ষ্য করেছি রে তোপসে। দাবার বোর্ডটার যা অবস্থা দেখলাম ভদ্রলোক ইজিলি চেকমেট দিতে পারতেন, কিন্তু পুরো অন্যদিকে চলে গেলেন। বেড়াতে এসেও ব্যাবসার চিন্তা মনে হয় মাথা থেকে যায়নি।
আমার কিন্ত ওই সান্যাল লোকটাকে কেন জানি ভালো ঠেকল না, কিরকম সাপের মত চেরা গলায় কথা বলে শুনলেন? পুরো ঘনশ্যাম কর্কট এর মত, কথা বললেই মনে হবে একটা সাপ ফণা তুলে আওয়াজ করছেমতামত জানালেন জটায়ু।
ফেলুদা কথাটাকে বিশেষ পাত্তা দিল বলে মনে হল না। একথা সত্যি যে ভদ্রলোকের গলাটা আমারও ভালো লাগেনি, তবে ফেলুদার সাথে থেকে এটা শিখেছি যে বাইরে থেকে দেখে লোককে বিচার করলে বেশির ভাগ সময়েই সেটা ঠিক হয়না। লালমোহনবাবুকে গুড নাইট জানিয়ে শুতে চলে গেলাম। কাল সকাল সকাল উঠে শহরটা ঘুরে দেখতে হবে। হেঁটে হেঁটে ঘুরে না দেখলে একটা শহরের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য গুলো চেনা যায়না। আর বোম্বে, কাশি, গ্যাংটক কোথাও যখন বাদ পড়েনি মানালিটাই বা বাদ যায় কেন!

সকালে উঠেই দেখি আকাশ মেঘলা, গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। মনটাই খারাপ হয়ে গেলো। তবে কিছুক্ষণ পরেই আকাশ পরিষ্কার হয়ে গেলো আর আমরাও বেরিয়ে পরলাম। শহরের মধ্যে দেখার বলতে দুটো মন্দির আর একটা ক্লাব জাতীয় জায়গা। প্রথম মন্দিরটা একটা পার্কের ভিতর, বেশ সুন্দর। লালমোহনবাবু দিব্যি মন্দিরে ঢুকে পুজো দিয়ে মাথায় ফোঁটা দিয়ে বেরিয়ে এলেন। দ্বিতীয় যে মন্দিরটায় গেলাম, সেখান থেকে বরফ ঢাকা পাহাড়ের সুন্দর একটা ভিউ পাওয়া গেল আর আমিও মনের খুশিতে পটাপট ছবি তুলে ফেললাম। ক্লাবটার লোকেশানও বেশ সুন্দর, একটা পাহাড়ি নদীর ধারে যার জল বরফের মত ঠাণ্ডা, হাতে দিলে মনে হয় হাত কেটে যাবে। ক্লাবে এসেই শুনলাম সোলান ভ্যালীর কথা, রোটাং যাওয়ার পথ খোলা না থাকলে লোকে ওই সোলান ভ্যালীতেই যায়। ওখানে নাকি আইস স্কিইং এর ব্যাবস্থা আছে। ফেলুদা জটায়ুর দিকে চাইতেই ভদ্রলোক জিভ কেটে বললেনরক্ষে করুন মশাই। আমার জন্য হাঁটাই ভালো। ওসব প্রখর রুদ্রকেই মানায়, জটায়ুকে নয়। তবে আপনারা যেতে চাইলে আমি আপত্তি করব না।আমরা অবশ্য জটায়ুকে কোথাও ফেলে যাওয়ার কথা ভাবতেই পারিনা। হোটেলে ফেরার পথে ভাবছিলাম দিনটা বেশ ভালোই কাটল, তখনো তো জানিনা আসল ঘটনা আমাদের জন্য অপেক্ষা করে বসে আছে।
হোটেলের গেটের কাছে এসেই মনে হল কিছু একটা গণ্ডগোল হয়েছে। লনের কাছটায় অনেকে মিলে জটলা করে আছে, তাদের মধ্যে রমাকান্তবাবুও আছেন। অন্যমনস্কতার বদলে একটা বিহ্বল ভাব, আর ভদ্রলোক এই ঠাণ্ডার মধ্যেও ঘামছেন। এগিয়ে গিয়ে দেখি জটলাটা মিঃ সান্যালকে ঘিরে। স্থির ভাবে শুয়ে আছেন ভদ্রলোক, দেহে প্রাণ আছে কিনা বোঝা যাচ্ছেনা।  ভদ্রলোক যে পড়ে গেছিলেন সেটা বোঝা যাচ্ছে, জামা কাপড়ে এমনকি মুখেও বরফের কুচি লেগে রয়েছে। ফেলুদা হাঁটু গেড়ে বসে নাড়ি ধরে দেখল, যে কাজ চালাবার মত নাড়ি দেখতে জানে সেটা আমার জানা ছিল।
কি হয়েছে মশাই?” জটায়ুর জিজ্ঞাসার উত্তরে ছোট্ট করে মাথা নেড়ে বুঝিয়ে দিল সব শেষ।
ঠিক কিভাবে কি হল বলতে পারবেন মিঃ কামার?” এরিমধ্যে দেখি এগিয়ে গেছে মিঃ সান্যালের পার্টনার এর দিকে।
আমরা তো সকালবেলা গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গেছিলাম রোটাং এর দিকে। শুরুর দিকে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পড়লেও একটু এগোতেই আকাশ একেবারে পরিষ্কার হয়ে গেল। রোটাং পৌঁছে আমরা একটু আলাদা হয়ে গেছিলাম। সান্যাল এদিক ওদিক ঘুরে বেড়াচ্ছিল আর আমি একটা ভালো ভিউ পাওয়ার আশায় এগিয়ে গেছিলাম। বেশ কিছুটা সময় পর সান্যালের দিক থেকে কোন আওয়াজ না পেয়ে আমি ওকে খুঁজতে যাই, লাঞ্চ এর টাইম হয়ে গেছিল। ডাকাডাকি করে কোন সাড়া না পেয়ে আমি আমাদের ড্রাইভারকে ডেকে আনি। অফ-সিজন বলে এমনিতেই এখন টুরিস্ট কম রোটাং এ। দুজনে মিলে খোঁজার পর একটা বরফের পাথরের পিছনে ওকে পড়ে থাকতে দেখি। ধরাধরি করে তুলে আনার সময় ভেবেছিলাম হয়ত মাথা ঘুরে পরে গেছে, মুখ চোখে জলের ছিটে দিলেই ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু যে এমনি করে ফাঁকি দিয়ে চলে যাবে সেটা ভাবতে পারিনিবিষণ্ণ ভাবে মাথা নেড়ে বললেন কামারবাবু  যাই দেখি বডি ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যাবস্থা করি।
সেটা তো এখুনি হবে না মিঃ কামার। ওনার মাথার পিছনে একটা ক্ষত আছে, সেটা অবশ্য পড়ে গিয়েও হতে পারে। কিন্তু পোস্টমর্টেম না করে তো বডি সরানো যাবে না, পুলিশকে খবর দিতে হবেবেশ গম্ভীর গলায় কথাটা বলল ফেলুদা।
সী মিঃ মিত্র, আপনি ডিটেকটিভ, রহস্য খুঁজে বেড়ানোই আপনার কাজ, তবে একজন মৃত ব্যাক্তিকে নিয়ে টানা হেঁচড়া না করলেই নয় কি?”
আমি আপনার সেন্টিমেন্টটা বুঝতে পারছি মিঃ কামার, কিন্তু আমি নিরুপায়। আমি হোটেলের ম্যানেজারকে বলে দিচ্ছি পুলিশকে খবর দিতে। ওদের কাজ মিটতে দু-একদিন টাইম লাগবে, তারমধ্যে ওনার যদি কোন রিলেটিভ থাকে আপনি তাদের খবর দিতে পারেনকথাটা বলেই ফেলুদা আমাদের দিকে ফিরে বললচট করে যা তো তোপসে, ম্যানেজার এর অফিস থেকে পুলিশকে খবরটা জানিয়ে দে।
আসুন লালমোহন বাবুবলেই ছুটলাম আমি।
খবর দেওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই স্থানীয় থানা থেকে এলেন ইন্সপেক্টর গিরিধারি। দেখলাম ফেলুদার নাম ভালোই জানা আছে ভদ্রলোকের।ইয়ু ডিড ভেরি গুড জব ইন এলোরা। উই আর ভেরি প্রাউড অফ ইয়ু মিঃ মিত্রবললেন ইন্সপেক্টর। ভদ্রলোকের জানার ছিল ফেলুদা কিছু সন্দেহজনক পেয়েছে কিনা। তাতে ফেলুদা বলল যে মৃত্যুটা মাথার চোট থেকে কিনা সে বিষয়ে সন্দেহ আছে আর চোখ মুখের অবস্থাটাও খুব স্বাভাবিক না। ইন্সপেক্টর গিরিধারির চোখে দেখলাম বেশ একটা প্রশংসার ভাব ফুটে উঠল। পোস্টমর্টেম রিপোর্টটা এলেই খবর দেবেন জানিয়ে বিদায় নিলেন ভদ্রলোক। বললেন ড্রাইভার আর রমাকান্ত বাবুর জবানবন্দিটা নিতে হবে।
আপাতত আর কিছু করার নেই বলে ঘরে এসে ফ্রেস হয়ে নিলাম। বেরিয়ে দেখি জটায়ু আমাদের ঘরে চলে এসেছেন আর ফেলুদা গম্ভীর মুখে পায়চারি করছে।
কালকেই কথা হল সান্যাল বাবুর সাথে আর আজ এই। অবশ্য হার্ট অ্যাটাকেও লোকে মারা যায় আর সেটা হঠাৎ করেই হয়নিজেকেই যেন সান্ত্বনা দিচ্ছে এমনভাবে কথাটা বলল ফেলুদা।
কিরকম বিশ্রী ব্যাপার হল বলুন তো মশাই, আমি তো সান্যাল বাবুকেই দিব্যি ভিলেন হিসাবে কল্পনা করছিলামঅকপট স্বীকারোক্তি করলেন জটায়ু। অবশ্য ক্রাইম ছাড়া ভিলেন কি করে পেলেন ভদ্রলোক সেটা আমি জানিনা। কিছুক্ষণ পর ভদ্রলোক গুডনাইট জানিয়ে শুতে চলে গেলেন। আমিও শুয়ে পড়লাম।

পরের দিন সকালে উঠে আমি আর লালমোহন বাবু বেরোলাম মানালির মার্কেট ঘুরে দেখতে। লালমোহন বাবুর শখ হয়েছে একটা পশমের টুপি কেনার আর তার সাথে সোয়েটার। ওনার গড়পারের বন্ধুরা বলে দিয়েছে পাহাড় থেকে সস্তায় ভালো সোয়েটার কিনে আনার জন্য। ফেলুদা অবশ্য আমাদের সাথে বেরয়নি, হোটেলেই রয়ে গেছে। আর বেরোবার আগে লালমোহন বাবুর থেকে ওনার ট্যাবটা চেয়ে নিয়েছে। বলল নেটে কিছু খোঁজ করার আছে আর মুম্বইতে পটবরধন কে ফোন করার আছে। বোম্বাই এর বোম্বেটে কেসটার সময় ওনার সাথে আলাপ হয়েছিল, এখনো ওখানেই আছেন কিনা তা অবশ্য আমার জানা ছিলনা।
তোমার দাদা ব্যাপারটা নিয়ে একটু বেশি মাথা ঘামাচ্ছে না?” জিজ্ঞাসা করলেন লালমোহনবাবুআমার তো মনে হয় পাহাড়ে গিয়ে প্রেশারের গণ্ডগোল হয় ভদ্রলোকের, আর তা থেকেই মাথা ঘুরে পড়ে গিয়ে মারা যান।কথাটা যে আমারও মনে হয়নি তা নয়, আবার সঙ্গে সঙ্গে এও মনে হয়েছে যে কিছু একটা খটকা না লেগে থাকলে ব্যাপারটা নিয়ে এত ভাবত না ফেলুদা। ওই বাক্স রহস্যের ঘটনাতেও যেমন প্রথমে কিছুই বুঝিনি আমরা। কথাটা জটায়ুকেও বললাম। মাথা নেড়ে ফেলুদার স্টাইলে বললেন ভদ্রলোকহতে পারে, আবার নাও হতে পারে।
হোটেলে ফিরতে ফেলুদা মাথা নেড়ে বুঝিয়ে দিল থানা থেকে ফোন আসেনি। নিজেও দুবার ট্রাই করেছিল, লাইন পায়নি। তবে বলল পটবরধনের সাথে কথা হয়েছে, ভদ্রলোক এখনো বোম্বে থুড়ি মুম্বইতেই আছেন আর সান্যালদের কোম্পানির নামও শুনেছেন।কিছু ডিটেলসের খোঁজ নিতে বললাম আমাদের বন্ধুটিকে, ব্যাকগ্রাউন্ডের আইডিয়াটা থাকলে প্রসিড করতে সুবিধা হয়জানাল ফেলুদা।
আপনি কি ডিটেলস আশা করছেন সেটা তো আমার মাথায় আসছেনামাথা চুলকে বললেন জটায়ু।
কিছুই না, সামান্য কিছু কৌতূহল নিরসন; আর আপনার মাথায় না এলেও খালি আমার মাথায় আসলেই চলবেসকৌতুকে কথাটা বলেই আবার সিরিয়াস হয়ে গেল; “দরকারের সময়েই দেখেছি ফোন লাইনগুলো বিট্রে করে। আর আধ ঘণ্টা ওয়েট করব, তার মধ্যে লাইন না পেলে সোজা থানা থেকেই একবার ঢুঁ মেরে আসববলল ফেলুদা।
ফোনটা অবশ্য এলো আধ ঘণ্টার আগেই আর ফেলুদা কথাও বলল স্পীকারে দিয়ে যাতে আমরাও শুনতে পাই। কথাবার্তা যদিও হল ইংরেজি আর হিন্দি মিশিয়ে, আমি এখানে বাংলাতেই দিচ্ছি।
হ্যালো, ইন্সপেক্টর গিরিধারি বলছি।
হ্যাঁ বলুন, কি পাওয়া গেল রিপোর্টে?”
আপনার অনুমানই ঠিক। মৃত্যুটা ঠিক স্বাভাবিক নয় মিঃ মিত্র।
মাথার চোট?” জিজ্ঞাসা করল ফেলুদা।
মৃত্যুর কারণ মাথার চোট না। ওটা পড়ে গিয়েও হতে পারে বা অন্য কিছুর আঘাতেও হতে পারে। ডাক্তার সিওর না
তাহলে?”
মৃত্যু হয়েছে শ্বাস বন্ধ হয়ে।
মানে গলা টিপে খুন?”
না মিঃ মিত্র, গলায় কোন আঘাত নেই। বলতে পারেন গলা চোক করে মারা গেছেন, মানে ধরুন গলায় খাবার আটকে গেলে যেভাবে চোক করতে পারে।
ইন্টারেস্টিং, আর কিছু পাওয়া গেছে? মানে পেটে কোন খাবারের স্যাম্পেল যা থেকে চোক হতে পারে?”
সেরকম তো কিছু নেই রিপোর্টে, যেটা আছে সেটা হল প্রচুর পরিমানে জল।
জল? মানে মদ জাতীয় কিছু?”
না নাশুধু জল, মানে যা আমরা খাই। তবে ডাক্তারের রিপোর্ট বলছে ন্যাচ্যারাল ওয়াটার নট নরমাল ওয়াটার।
কারণটা কি বলছে?”
সে তো জানিনা মশাই, আমি শুধু রিপোর্ট থেকে আপনাকে পড়ে বললাম। রিপোর্টে এর বেশি কিছু নেই
জলে আর কিছু পাওয়া গেছে?”
না মশাই, বিষের কথা ভাবছেন তো, আমিও ডাক্তারকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম। ওসব কিছু নেই। আমি লোক পাঠিয়েছি রোটাং এর দিকে, স্পটটা একবার ভালো করে খুঁজে দেখা দরকার
অনেক ধন্যবাদ ইন্সপেক্টরঠিক আছেরাখছি তাহলে এখন আর কিছু পেলে জানাতে ভুলবেন না।
ফোনটা রেখে আমাদের দিকে ফিরে ফেলুদা বললশুনলেন তো রিপোর্টের বক্তব্য, কি মনে হল?”
পাহাড়ে তো অনেকসময় অক্সিজেনের অভাব হয়, তাতে তো নিশ্বাসের কষ্ট হয় বলে শুনেছি, তাই থেকেই কি?” বিড়বিড় করে বললেন জটায়ু। আমারও এটা শুনে মনে হল হতেই পারে। ক্যাপ্টেন স্কটেরমেরু অভিযানে তো পড়েছি নিশ্বাসের কষ্টের কথা। ফেলুদা অবশ্য কথাটায় বিশেষ পাত্তা দিলনা।চট করে রুম সার্ভিসে ফোন করে ৩টে চা বল দেখি তোপসে, মাথাটা একটু ছাড়াতে হবেএকটা চারমিনার ধরিয়ে বলল ফেলুদা।
চা দিতে যে বেয়ারা এলো ঘরে ফেলুদা তাকে প্রশ্ন করল -
যে সাহেব মারা গেছেন তাকে চিনতে?”
হাঁ সাহাব, লেকিন হামি কিছু জানিনা সাহাব।
সাহেব কি রেগুলার ওয়াটার খেতেন?”
না সাহাব, স্রিফ মিনারেল ওয়াটার। হামি দিয়ে আসতাম রুমে। লেকিন সাহাব বহুত থোড়া পানি পিতেন, দোবোতল সে পুরা দিন কা কাম চল যাতা থা সাবকা।
ঠিক আছে, তুমি এসোএকটা ৫০টাকার নোট হাতে গুঁজে দিয়ে বলল ফেলুদা।
কিরকম যেন সব গোলমাল হয়ে যাচ্ছে, যে লোক এমনিতে সারাদিন জল খায়না তার পেটে পাওয়া গেল প্রচুর জল!! আবার রোটাং এর কাছে কোন লেক আছে বলেও তো জানিনা যে জলে ডুবে মরবেমাথায় চোট, আবার শ্বাসরোধ!… হরিবল ব্যাপারআসুন লালমোহন বাবু, আয় তোপসেডাকল ফেলুদা, “বাইরে থেকে একটু তাজা হাওয়া খেয়ে আসি।
হোটেলের বাইরে বেরিয়ে পাহাড়ের ঢালের রাস্তা দিয়ে হাটতে শুরু করলাম তিনজনে। ফেলুদা কি ভাবছে ওই জানে। লালমোহন বাবুর অবস্থা আমারই মত। কি যে হচ্ছে কিছুই বুঝছিনা। কেসটা যে কি বা আদৌ কোন কেস আছে কিনা সেটাই মাথায় আসছেনা। মৃত্যুর কারণটা নিয়ে ফেলুদার কোন আইডিয়া আছে কিনা সেটা জিজ্ঞাসা করব ভাবছি এই সময়েই ওর মোবাইলটা বেজে উঠল। নাম্বারটা দেখে বুঝলাম পটবরধনের ফোন, কানে নিয়ে কিছুক্ষণ ওপাশের কথা শোনার পর ফোনটা রাখার সময় ফেলুদা শুধু একটা কথাই বললবোঝো!”
তোরা বরং আর একটু ঘুরে নে, আমি হোটেলে ফিরে যাচ্ছি। চুপচাপ বসে একটু চিন্তা করতে হবেকথাটা বলেই হনহন করে হাঁটা লাগাল। ফেলুদার এই মুডটাকে আমরা দুজনেই ভালমতো জানি বলে কথা না বলে হাঁটা দিলাম পাইন বনের দিকটায়।
কি থেকে কি হয়ে গেল! ভেবেছিলাম এবারের বেড়ানোটায় কোন ঝুটঝামেলা হবে না। তা ওই কথায় বলেনা ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও ধান ভানবেতোমার দাদাটি হল সেই ঢেঁকিবললেন জটায়ু। কথাটা একরকম সত্যি। ফেলুদার সাথে যে কটা জায়গাতেই বেড়াতে গেছি রহস্য যেন পিছুপিছু এসে হাজির হয়েছে; তা সে লখনউ, বেনারস, গ্যাংটক, দার্জিলিং যেখানেই হোক না কেন।
আরও আধ ঘণ্টা মত এদিক ওদিক ঘুরে আমরা হোটেলে ফিরে গেলাম। দেখি ফেলুদার অস্থির ভাবটা তখনো কাটেনি। ক্রমাগত এদিক সেদিক পায়চারি করে বেড়াচ্ছে আর আঙ্গুল মটকাচ্ছে। আমাদের দেখে বললপ্রায় ৯৯ শতাংশ নিশ্চিন্ত হয়ে বলা যায় যে ভদ্রলোককে খুন করা হয়েছে। কিন্তু কিভাবে সেটাই ধরতে পারছি না আর সেটা না হলে খুনিকে ধরাও যাবেনা।
খুনই যে হয়েছে সে ব্যাপারে আপনি এতটা শিওর কি করে হছেন ফেলুবাবু?” শুধলেন জটায়ু।
রিপোর্টটা তো আপনিও শুনেছেন। মাথায় আঘাত, পেটে অতিরিক্ত জলের উপস্থিতি, শ্বাসরোধ হয়ে মৃত্যুএগুলো কো-ইন্সিডেন্স হতে পারে না লালমোহন বাবু। কাজটা করা হয়েছে অত্যন্ত চালাকির সাথে যাতে খুন বলে মনে না হয়, আর হলেও প্রমাণ করা যায়না। ওই চালাকিটা ধরে অপরাধীকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়াই হচ্ছে ফেলু মিত্তিরের কাজ।
খুন'টা”, এখন থেকে এটাকে খুনই বলব, “তাহলে কে করেছে বলে মনে হচ্ছে?”
সারকামস্ট্যান্সিয়াল এভিডেন্স তো একজনের দিকেই ইঙ্গিত করছে, তবে ফাইনাল কথা বলার সময় এখনো আসেনিবলল ফেলুদা। এটা আমি জানতাম। এটার মানে হছে পারিপার্শ্বিক ঘটনা থেকে পাওয়া প্রমাণ।

ফেলুদা যে ব্যাপারটা নিয়ে বেশ প্যাঁচে পড়েছে সেটা বোঝাই যাচ্ছিল। রাতে ডিনারের সময়েও প্রায় কিছুই মুখে দিলনা। লালমোহনবাবু খাইয়ে লোক। নিজের প্লেটটা শেষ করে বললেন ভদ্রলোকএরা যে রাজমা চাওল ছাড়া অন্য খাবারও বানাতে পারে সেটা ভাবিনি মশাই। আর খাবার শেষে আইসক্রিমটা দুর্দান্ত লাগছে। তাড়াতাড়ি খেয়ে নিন ফেলুবাবু, নইলে গলে জল হয়ে যাবে।
এবিসিডি উপাধিটা আপনাকেই দেওয়া উচিত লালমোহন বাবুফেলুদার মুখে কথাটা শুনে চমকে ওর দিকে চেয়ে দেখি চোখদুটো জ্বলজ্বল করছে। জটায়ুও কথাটা শুনে এতটাই অবাক যে হাতের আইসক্রিমের চামচ মুখের কাছেই ধরা রয়ে গেছে, মুখে আর যায়নি।তোরা চট করে খাবারটা শেষ কর, আমি ইন্সপেক্টর গিরিধারিকে ডাকছিবলল ফেলুদা।
তড়িঘড়ি খাওয়া শেষ করে রিসেপশনে এসে দেখি ফেলুদা ওয়েট করছে। আমাদের দেখে বললদারুন বুদ্ধি খাটিয়েছিল লোকটা, ফেলু মিত্তিরকেও প্রায় ধোঁকা খাইয়ে দিয়েছিল।
বাইরে জিপের আওয়াজ শুনে বুঝলাম ইন্সপেক্টর এসে গেছেন। ৩জন কনস্টেবলকে নিয়ে ঢুকলেন গিরিধারিবাবু।তোপসে, ম্যানেজারকে ডাকবলল ফেলুদা। ম্যানেজারের থেকে জেনে তাকে সঙ্গে নিয়ে রুম নাম্বার ৩০৯এর দরজায় দুবার নক করতেই খুলে গেল দরজা, মিঃ কামারের রুম। ভদ্রলোক মনে হয় শুতে যাচ্ছিলেন।
কি ব্যাপার ইন্সপেক্টর এত রাতে?” গম্ভীর গলায় শুধলেন কামার বাবু।
মিঃ সান্যালের খুনের দায়ে আপনাকে গ্রেফতার করা হলজবাবটা এল ফেলুদার থেকে।
হোয়াট ইজ দিস ননসেন্স?” প্রায় চিল্লিয়ে উঠলেন ভদ্রলোক।
ইয়োর গেম ইস আপ মিঃ কামার, যে টর্চটা দিয়ে আপনি সান্যাল বাবুর মাথায় মেরে ওনাকে অজ্ঞান করেছিলেন, মানালি পুলিশ ওটা রোটাং থেকে উদ্ধার করেছে আর হাতের ছাপও মিলে গেছেঠাণ্ডা গলায় বলল ফেলুদা।
আপনি কি পাগল হলেন মিঃ মিত্র? আমার পার্টনারকে আমি খুন করতে যাব কেন?”
কারণটা সম্পূর্ণ ব্যাবসায়িক। আপনার কিছু ভুল স্পেকুলেশনের জন্য ইদানিং তো আপনাদের প্রচুর ক্ষতি হয়ে গেছে। মিঃ সান্যাল তো আপনাকে আপনার অংশটা বেচে দিতে বলেছিলেন আর সেটা ফাইনাল করতেই আপনাদের মানালি আসাবলে চলল ফেলুদা "কিছুদিন আগে আপনাদের গোডাউন থেকে অনেক মাল চুরি যায়। কোম্পানির তরফ থেকে অন্তর্ঘাত এর রিপোর্টও লেখানো হয়েছিল লোকাল থানায়, সেটাও তো আপনারই কাজ।বুঝলাম এই খবরটা পেয়েছে মুম্বই থেকে আসা পটবরধনের ফোনে।
আপনার পাগলের প্রলাপ বন্ধ হলে আপনি এবার আসতে পারেনঠাণ্ডা গলায় কথাটা বললেন রমাকান্ত কামার।
নিশ্চই আসব, আপনার ব্যাপারটা মিটে গেলেই আমার কাজ শেষবলল ফেলুদা। ওর গলায় সেই সুর যেটা নাটকের পেনাল্টিমেট স্টেজে ব্যাবহার করে ও।
শেষ কাজ তো বটেই, আপনার ভাষায়খুনটা কি করে হল সেটা বলবেন কি? মাথার চোট থেকে তো সান্যালের মৃত্যু হয়নি, ইন্সপেক্টর নিজে ফরেনসিক রিপোর্ট দেখে বলেছেনমুখে হাসিটা ধরে রেখে বললেন মিঃ কামারনাকি আপনার মতে রিপোর্টটাও ভুল?”
আপনি ভুলে যাচ্ছেন কেন মিঃ কামার, রিপোর্টে এও বলেছে যে ডেডবডির পেটে প্রচুর জল পাওয়া গেছেইস্পাতের মত গলায় কথাটা বলল ফেলুদা।
কিন্তু জল দিয়ে কি কেউ খুন করতে পারে মিঃ ডিটেকটিভ?” পরিহাসের সুর ভদ্রলোকের গলায়।
না মিঃ কামার, জল দিয়ে নয়; বরফ দিয়েবলে চলল ফেলুদাআপনি মিঃ সান্যালের মাথায় বাড়ি মেরে তাকে অজ্ঞান করেন, তারপর মুঠো মুঠো বরফ পুরে দেন তার মুখে। আর যাই হোক ওই বস্তুটার কমতি নেই রোটাং এ। গলায় বরফের কুচি আটকে শ্বাসবন্ধ হয়ে মারা যান সান্যাল। আপনি জানতেন ওখান থেকে মানালি আসার পথেই সব বরফ গলে জল হয়ে যাবে বডি টেম্পারেচারে আর আপনার পারফেক্ট ক্রাইমটাও ঢাকা পড়ে যাবে। রাশিয়ার মাফিয়াদের খুন করার এই পদ্ধতিটা আপনি কোত্থেকে জানলেন সেটা অবশ্য আমার জানা নেই।
ওহ মাই গড, আয়াম ফিনিশডভেঙ্গে পড়া গলায় বললেন মিঃ কামার।
একেই বলে কামারের এক ঘাসবশেষে বলে উঠলেন জটায়ু।

এই রহস্যভেদে আপনিই হিরো লালমোহন বাবুপুলিশ অপরাধীকে নিয়ে চলে যাবার পর মুখ খুলল ফেলুদাআপনি আইসক্রিমের কথাটা না বললে আমি ধরতেই পারছিলাম না ব্যাপারটা।
হে হেসবই যখন মিটে গেল, কাল তাহলে রোটাং এর প্ল্যানটা?” কিন্তু কিন্তু করে বললেন ভদ্রলোক।
অবশ্যই" একসাথে বলে উঠলাম আমি আর ফেলুদা।

[পুনশ্চঃ এটি একটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক গল্প। শ্রদ্ধেয় মানিকবাবুর কোন খসড়া বা গল্প থেকে নেওয়া নয়। তবে অক্ষম চেষ্টা করা হয়েছে কথোপকথন'টা যতটা সম্ভব ফেলুদার অন্যান্য গল্পের মত রাখা যায়। আশা করছি একজন ফেলুপ্রেমীর এই দুঃসাহস উনি নিজ গুণে মার্জনা করে দিতেন]


।। সমাপ্ত ।।

| Aleekpatamagazine.blogspot.in |
  | Editor: Swarup Chakraborty | Publisher: Debasree Chakraborty |
|ALEEK PATA-The Expressive World |Online Magazine |
|a DISHA-The Dreamer Initiative |
|Special Puja Issue,2019 | September-October, 2019 |
| Third Year Third Issue |20Th Edition|
|© All Rights Reserved By The Editor and The Publisher |










Main Menu Bar



অলীকপাতার শারদ সংখ্যা ১৪২৯ প্রকাশিত, পড়তে ক্লিক করুন "Current Issue" ট্যাব টিতে , সবাইকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা

Signature Video



অলীকপাতার সংখ্যা পড়ার জন্য ক্লিক করুন 'Current Issue' Tab এ, পুরাতন সংখ্যা পড়ার জন্য 'লাইব্রেরী' ট্যাব ক্লিক করুন। লেখা পাঠান aleekpata@gmail.com এই ঠিকানায়, অকারণেও প্রশ্ন করতে পারেন responsealeekpata@gmail.com এই ঠিকানায় অথবা আমাদের ফেসবুক গ্রুপে।

অলীক পাতায় লেখা পাঠান