অলীক পাতার অন্যান্য সংখ্যা- পড়তে হলে ক্লিক করুন Library ট্যাব টি



"অলীক পাতা নববর্ষ সংখ্যা ১৪৩১ প্রকাশিত, সমস্ত লেখক -লেখিকা এবং পাঠক -পাঠিকাদের জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা..."বিশদে জানতে ক্লিক করুন " Notice Board ট্যাব টিতে"

Showing posts with label 30th Edition. Show all posts
Showing posts with label 30th Edition. Show all posts

Friday, October 21, 2022

কবিতা - যক্ষপুরী ভ্রমে - সঙ্কর্ষণ

 কবিতা

যক্ষপুরী ভ্রমে

সঙ্কর্ষণ

 


একদিন উদ্যত নল হাতে তুমি সামনে আসবে।

ঘুমঘোরে পড়ে আছি আলো আঁধারিতে...

আমরা কি সেদিন পৃথিবীর শেষ মানুষ থাকবো?

দূরদর্শিতা একটি উপভোগ্য বিশেষত্বও বটে।

উদ্ধত বলয়ের ছ্যাঁকা দিয়ে হঠাৎই প্রশ্ন করবে,

“আমাদের কথা আপনি লেখেননি কেন?”

 

এই বিস্তৃত প্রান্তরকে একটি হাঁড়ির মতো ভাবলে

কখনো ঠাণ্ডা জলের জিয়ানো কই হতে চাইনি।

তবু কেন দৃষ্টিতে বেঁচে থাকে সন্ধ্যার লাল,

ভুলে ভুলে যাওয়া নয় ভুলে ভুলে থাকা রক্ত...

আমাকে একটি বুলেট কি তুমি উপহারে দেবে?

 

বারবার ফিরে আসে বাবু-বিবি-বিলাসের মতো

একা বনে পাখি ডাকা ঝিলমিলে রোদ,

ঢঙঢঙ ঘড়ি বাজা গীর্জার গান... শুধুই কি নেই?

ভেবেছো সুহৃদ সব যদি নেই হয়ে যেতো

আছে-র দ্বন্দ্ব নিয়ে কেন শুধু মরো মাথা খুঁড়ে?

 

তবু আমি একা রয়ে গেছি, তবু তুমি একা রয়ে গেছো।

আমার শূন্য বুকে কেন বেঁচে ওঠে শ্রমিক কৃষক?

ধানজ্বলা আগুনেও থান জ্বেলে

বিধবার ব্যাথাটুকু মুছে দেওয়া যায়...

আমি তো লিখিনি বলো একটিও চিঠি

কেন আশা করো শ্মশানের মাঝে সাদা পালক দেখার?

 

ট্রিগারের চাপে আধোঘুম ভেঙে যায়...

কারা যেন লিখে গেছে, "একবার বলো কবি...

বার্তা কী, বার্তা কী, বার্তা কী? "

 

এখন আর কবিতা লিখিনা।

| শারদ সংখ্যা-১৪২৯ | aleekpata.com | 30th Edition |

| ALEEK PATA- Your Expressive World |Online Magazine |

| Editor: Swarup Chakraborty | Publisher: Debasree Chakraborty |

| Durga Puja , 2022 | July-Oct 2022 | Fifth Year Fourth Issue  |

© All Rights Reserved by The Editor and The Publisher |

| a DISHA-The Dreamer Initiative |

 

প্রবন্ধ -শক্তিদায়িনী বরদাত্রী দেবী দুর্গা - রূপম চক্রবর্ত্তী

প্রবন্ধ

শক্তিদায়িনী বরদাত্রী দেবী দুর্গা

রূপম চক্রবর্ত্তী


 

শ্রী মায়ের আগমনী ধ্বনীতে প্রাণে উষ্ণ শিহরণ জাগে। প্রাণে প্রাণে আনন্দের দোলা লাগে। ছুটে চলে সবাই মায়ের শ্রী চরণে অঞ্জলি দিতে। শ্বশুর আলয় থেকে মেয়ে আসবে বাপের বাড়িতে। তাই সবার মুখে হাসি হাসি রব। পাড়া প্রতিবেশির সত্তায় একটিই আকুতি কখন শারদ প্রভাত আসবে, কারণ তারা তাদের মেয়েটিকে শিউলি ফুলের মালা গেঁথে পরাবে। বার্তা প্রেরকের ভূমিকায় শুভ মহালয়া আসে। বাপের বাড়িতে শুরু হয়ে যায় প্রেমানন্দের সমারোহ। রবীন্দ্রনাথের ভাষায়,

        "আমরা বেঁধেছি কাশের গুচ্ছ,

          আমরা গেঁথেছি শেফালি মালা।

           নবীন ধানের মঞ্জুরী দিয়ে,

           সাজিয়ে এনেছি ডালা।

           এসো গো শারদ লক্ষ্মী,

          তোমার শুভ্র মেঘের রথে।

যে মেয়েটি আসবে তিনি মা জগৎজননী। অসুরবিনাশিনী, শক্তিদায়িনী বরদাত্রী দেবী দুর্গা। যে অসুর প্রতিনিয়ত আমাদেরকে দুর্গতি প্রদানে সচেষ্ট থাকে সে দুর্গম অসুরকে মা বধ করেন তাঁর অপার্থিব করুণায়। দুর্গম অসুরকে জানতে হলে আমাদেরকে আরেকটু গভীরে যেতে হবে। দুর্গম অসুরের দুই রূপ।  প্রথম রূপকে আমরা স্বার্থান্ধতা হিসেবে আখ্যায়িত করতে পারি। প্রতিটি মানুষ  সংসার বন্ধনে আবদ্ধ। সংসারের ঘুর্ণিপাকে মানুষ ঘুরতে ঘুরতে হয়ে পড়ে স্বার্থান্ধ। নিজের স্বার্থ উদ্ধার  করার জন্য মানুষ তার মনুষ্যত্বকে বিকিয়ে দিয়ে হিংসার দাবানলে নিজেকে দহন করতে থাকে। কেউ চান অন্যজনকে ছোট করে নিজেকে বড় করতে। আর কেউ আছেন পরের সম্পত্তি দখল করে নিজেকে কোটিপতি বানিয়ে জগতে প্রচার করছেন। কিছু কিছু মানুষ আছে দুর্বলের উপর নির্যাতন করে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করছে। আমরা পূজো বাড়িতে যখন যাই তখন দেখি মায়ের পদতলে বিজিত মহিষাসুর। " মহীং ইষ্যতি" ইতি মহিষ। যে মহীকে অর্থাৎ জগতকে উগ্রভাবে কামনা করে সে মহিষ। মহিষবৃত্তি সম্পন্ন মানুষ জাগতিক ভোগ সুখ ও আনন্দ লাভের জন্য জগতকে উগ্রভাবে কামনা করে। দুর্ভাগ্যের বিষয় ভিতরের পশুশক্তির পাদুর্ভাবের কারণে সে দুঃখ ভোগ করে।  মা সে পশুশক্তি স্বার্থান্ধতা নামক দুর্গম অসুরের হাত থেকে আমাদেরকে রক্ষা করেন বলে তিনি দুর্গা। মা বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে তাঁর সন্তানকে রক্ষা করে চলেছেন।  দেবী ভাগবতে আছে,

    " সেয়ং শক্তির্মহামায়া সচ্চিদানন্দরূপিণী।

       রূপং বিভর্ত্যরূপা চ ভক্তানুগ্রহহেতবে।।"

সেই সচ্চিদানন্দরূপিনী মহামায়া পরাশক্তি অরূপা হইয়াও ভক্তগণকে কৃপা করিবার জন্য রূপ ধারণ করেন। মা এত করুণাময়ী কেউ থাকে সকামভাবে ডাকুক অথবা নিষ্কামভাবে ডাকুক তিনি মায়ের কৃপা অবশ্যই লাভ করবেন। শ্রী শ্রী চণ্ডীর দ্বাদশ অধ্যায়ের ৩৭ নাম্বার শ্লোকে আছে, সেই দেবীই এই বিশ্ব সৃষ্টি করেন ও তাঁহার দ্বারাই এই জগৎ মায়ামগ্ধ হয়।  তাঁহাকে নিষ্কামভাবে আরাধনা করলে  তিনি অযাচিতভাবে তত্ত্বজ্ঞান  দান করেন এবং তাঁহাকে সকাম উপসনা দ্বারা পরিতুষ্টা করলে তিনি ঐশ্বর্য প্রদান করেন। অযাচিত তত্ত্বজ্ঞান লাভের মাধ্যমে আমরা নিজের ভিতরে লুকে থাকা স্বার্থান্ধতাকে দূর করতে পারি।

 

দুর্গম অসুরের দুই রূপের বর্ণনা দিতে গিয়ে প্রথমে স্বার্থান্ধতার কথা বলেছি। এবার আমি অবিদ্যার কথা বলব, দুর্গম যখন অবিদ্যার অধীন হয় তখন মায়ার গর্তে পড়ে হাবুডুবু খেতে থাকে। মায়ামুগ্ধ জীব ভাবে পৃথিবীর সকল কিছুই তার। তিনি চিরদিন বেঁচে থাকবেন। যা ভোগ করতে ইচ্ছা করে তিনি চেষ্টা করেন তা ভোগ করার জন্য।  অজ্ঞান বা মায়া দ্বারা আমাদের প্রকৃত জ্ঞান আবৃত থাকে। মায়া শক্তির কারণে জীব আমি কর্তা, ভোক্তা, ইত্যাদি কল্পনা সৃষ্টি করে সংসার মোহে হাবুডুবু খায়। পরম পুরুষ শ্রীকৃষ্ণ গীতায় বলেছেন, " পাপ কর্ম পরায়ণ বিবেকশূন্য নরাধমগণ মায়া দ্বারা হতজ্ঞান  হইয়া আসুর স্বভাব প্রাপ্ত হওয়ায় আমাকে ভজনা করেনা।" নিজের অস্তিত্ব বিনাশী অবিদ্যা রূপ মায়াকে যিনি ধ্বংস করেন তিনি জগৎজননী মা দুর্গা। মা হচ্ছেন অভিষ্টদায়িনী। তিনি পরমা ইচ্ছা শক্তি। মানুষের মধ্যস্থিত আসুরিক শক্তিকে বিনাশ করে মুক্তি পথের সন্ধান দেন মা জগৎজননী। আমাদের মত ব্যাক্তিদের মায়ার হাত থেকে নিস্তার পাওয়া খুব দুরহ ব্যাপার। মায়ের কাজ হচ্ছে যারা ধর্ম বিমুখ তাদের প্রতিনিয়ত আবদ্ধ করা। শ্রী চৈতন্য চরিত্রামৃতে বলা হয়েছে,

       " কৃষ্ণ ভূলি সেই জীব অনাদি বহির্মুখ।

          অতএব মায়া তারে দেয় সংসার দঃখ।।

          কভু স্বর্গে উঠায় কভু নরকে ডুবায়।

      দণ্ড্য জনে রাজা যেন নদীতে চুবায় (চৈঃচঃমধ্য ২০)

যাহা হোক দুর্গম অসুরের কথা বলতে গিয়ে স্বার্থান্ধতা এবং অবিদ্যার কথা বিশ্লেষণ করেছি। মাতৃপূজায় আমাদের প্রার্থনা থাকবে এ দুটি অসুরকে বিনাশ করে আমরা ধর্মপথে অথবা অথবা ইষ্টপথে নিজের জীবনকে যেন পরিচালিত করতে পারি।

 

মানব জীবনে অর্থ বিত্তের প্রাচুর্যতা থাকতে পারে কিন্তু সে অর্থ যদি সঠিকভাবে বন্টিত না হয় তাহলে সুন্দর জীবন গঠন করা যাবেনা। বন্টন করার গুপ্ত রহস্য ধর্মই সন্ধান দিতে পারে। ধর্মীয় অনুশাসনবাদ মানুষের জ্ঞানের আলো খুলে দেয়। ধর্মীয় আচরণগুলোর সহজ ও তাত্ত্বিক দিকগুলো আমরা গুরুর কাছ থেকে শিখতে পারি। অন্যদিকে আমরা যারা দুর্গাপূজা করি, কালী পূজা করি সরস্বতী পূজা করি তখন খেয়াল রাখতে হবে পুজোর ভিতরের রহস্যগুলো নিজের জীবনে অধিষ্ঠিত করছি কিনা।  যেমন ধরুন পূজা করতে বসলাম কিন্তু দেখা গেল আমরা ভক্তি করে মায়ের চরণে নিজেকে সমর্পণ করতে পারলামনা।  তাহলে কি আমরা সঠিকভাবে পূজা করছি সেটাই নিজেকে প্রশ্ন করতে হবে। সমাজে অনেক লোক পাবেন যাদের মধ্যে কেউ কেউ আত্মপ্রতিষ্ঠার জন্য বা আত্মপ্রচারের জন্য পূজা করছে। যে পূজার মধ্যে রাজসিকতা আর তামসিকতার গন্ধ পাওয়া যায়।  একবার আমি চট্টগ্রাম শহরের একটি বিশাল বাজেটের পূজোবাড়িতে তন্ত্রধারকের কাজ করেছিলাম। আমি দেখলাম জগৎ মাতা দুর্গা দেবীর পূজা হচ্ছে অথচ কোনো একজন মহিলাকে পাওয়া যাচ্ছেনা একটু উলুধ্বনি দেওয়ার জন্য। পুরোহিত মহোদয় পূজা করছেন, আমি মন্ত্রপাঠ করছি আর অন্যদিকে পুরোহিত মহোদয়কে সাহায্য করার জন্য কোনো লোক খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা। আমরা যদি প্রকৃত ভক্ত হয়ে উঠতে না পারি তাহলে মাতৃ কৃপা থেকে বঞ্চিত হব।

 

হিংসা ও অহমিকার প্রচন্ড আঘাতে জর্জরিত সনাতন সনাতন সমাজকে সাত্ত্বিক পূজা করে মাতৃ করুণা লাভ করার জন্য এগিয়ে আসতে হবে। দেবী মাহাত্ম্যেও বলা হয়েছে

"শ্রোষ্যন্তি চৈব যে ভক্ত্যা মম মাহাত্ম্যমুত্তমম।

ন তেষাং দুষ্কৃতং কিঞ্চিৎ দুষ্কৃতোত্থা ন চাপদঃ।।

যে আমার উৎকৃষ্ট মাহাত্ম্য ভক্তি সহকারে পাঠ করিবে তাহার কোনো পাপ বা পাপজনিত বিপদ হইবেনা। ঋষি মেধস শ্রোতা সুরথ রাজা ও সমাধি বৈশ্যকে দেবীর চরণে শরণাগত হতে বললেন,

"তামুপৈহি মহারাজ শরণং পরমেশ্বরীম।

আরাধিতা সৈব নৃণাং ভোগস্বর্গাপবর্গদা।।

সেই পরমেশ্বরীর শরণাগত হও। তাঁহাকে আরাধনা করিলে তিনি মনুষ্যদিগকে ভোগ, স্বর্গ ও অপবর্গ দান করিয়া থাকেন। নিজের পরমার্থিক মুক্তির লক্ষ্যে আমরা শ্রদ্ধা ভক্তি সহকারে মায়ের কাছে আত্মনিবেদন করব। পাশাপাশি দুর্গাপূজার মূলশিক্ষা সার্বজনীনতাও আমাদেরকে গ্রহণ করতে হবে যাতে একে অপরের প্রতি প্রেমালিঙ্গনে আবদ্ধ হতে পারি। সুন্দর পরিবার, সমাজ নির্মাণের মাধ্যমে আমাদের ধর্মীয় মূল্যবোধ জাগ্রত হয়। প্রত্যেক পূজার্থীর জীবন সুন্দর ও মধুময় হোক। শুভ ও সুন্দর শক্তির জয় হোক। কবিগুরুর ভাষায়,

তুমি নব নব রূপে এসো প্রাণে

এসো গন্ধে বরণে, এসো গানে।

এসো অঙ্গে পুলকময় পরশে

এসো চিত্তে অমৃতময় হরষে,

এসো মুগ্ধ মুদিত দু'নয়নে।

তুমি নব নব রূপে এসো প্রাণে।


| শারদ সংখ্যা-১৪২৯ | aleekpata.com | 30th Edition |

| ALEEK PATA- Your Expressive World |Online Magazine |

| Editor: Swarup Chakraborty | Publisher: Debasree Chakraborty |

| Durga Puja , 2022 | July-Oct 2022 | Fifth Year Fourth Issue  |

© All Rights Reserved by The Editor and The Publisher |

| a DISHA-The Dreamer Initiative |

 

কবিতা - নষ্ট - সুশান্ত সেন

 কবিতা

নষ্ট

সুশান্ত সেন

 

 

নষ্ট হয়ে যাই

যদিও চেষ্টা ছিল না - হবার

অনবরত।

শৈশবেই শিখলাম সত্য মিথ্যা

জানলাম - সব কথা সব জায়গায় বলা যাবে না,

পই পই করে শেখানো হলো

কোনটা সু কোনটা কু,

জানতে হলো সব সময় আর সব জায়গায় সত্যি বলা যাবে না।

এই ভাবে শিখতে শিখতে

ফুলের বুক খোঁড়াও শিখে নিলাম,

তখন অদ্ভুত এক মৌমাছি হয়ে

ফুলে ফুলে মধু খেতে খেতে

হারিয়ে ফেললাম দিক - জ্ঞান।

সেই থেকে অনবরত ঘুরেই চলেছি

চোখে ঠুলি পড়ানো অশ্বের মতন

থামতে আর পারছি না।

পুরোপুরি নষ্ট হওয়া চাট্টিখানি কথা না ।

| শারদ সংখ্যা-১৪২৯ | aleekpata.com | 30th Edition |

| ALEEK PATA- Your Expressive World |Online Magazine |

| Editor: Swarup Chakraborty | Publisher: Debasree Chakraborty |

| Durga Puja , 2022 | July-Oct 2022 | Fifth Year Fourth Issue  |

© All Rights Reserved by The Editor and The Publisher |

| a DISHA-The Dreamer Initiative |

 

Saturday, October 1, 2022

বিশেষ - বাংলার প্রাচীনতম দুর্গা পূজা – পৃথ্বীশ সেন

 

বিশেষ

বাংলার প্রাচীনতম দুর্গা পূজা –

বিষ্ণুপুর মল্ল রাজবাড়ীর পুজো

পৃথ্বীশ সেন

 

দুর্গাপুজো। শুনলেই আনন্দ। বাঙালীর শ্রেষ্ঠ উৎসব। শারদোৎসব। 

উৎসবের সাজে সেজে উঠে বাংলার আকাশ বাতাস। নীলাকাশে পেঁজা তুলোর মত মেঘের ভেসে থাকা। কাশফুল চারিদিকে। রোদের তীব্রতা নেই সেরকম। 

সবে মিলে পুজো পুজো গন্ধ। এই গন্ধ পায়নি এমন বাঙালী বোধহয় নেই। 

 

এক বছরের পুজো গেলেই পরের বছরের জন্য ক্যালেন্ডার দেখে রাখা। আবার কবে আসছে এই উৎসব। 

 

তবে আজকের এই দুর্গাপূজায় অন্য একটা প্রশ্ন করছি 

বঙ্গের সবচেয়ে পুরোন পুজো কোনটি?

সবার আঙ্গুল ঘুরে যাবে কলকাতার দিকে।

কেউ বলবে বাগবাজার। কেউ বলবে শোভা বাজার রাজবাড়ী। কেউ সুরুচি সংঘ তো কেউ বলবে দেশপ্রিয় পার্ক। 

যাইহোক, কলকাতার দুর্গাপুজো কিন্তু ৫০০ বছরে পৌঁছয়নি। 

 

উত্তর হচ্ছে বিষ্ণুপুর রাজবাড়ীর পুজো। 

হ্যাঁ, বাঁকুড়া জেলার বিষ্ণুপুরের মল্লরাজাদের কুলদেবী মৃন্ময়ী দূর্গাদেবীর পুজো হচ্ছে বাংলার প্রাচীনতম পুজো।

কত বছরের পুরনো?

প্রায় ১২০০ বছরের পুরনো এই পুজো। 

 

পুরনো কথা:

মল্লরাজা জগৎ মল্ল ৯৯৪ খ্রিস্টাব্দে তার রাজধানী এই বিষ্ণুপুরে স্থানান্তরিত করেন। 

সেই উদ্দেশ্য এক শুভক্ষণে নতুন রাজবাড়ীর ভিত্তি স্থাপন করা হয়। মাটি খোঁড়া শুরু হলে পরে বেরিয়ে আসে এক দেবীমাতার মুখ। সেদিন রাতে রাজা স্বপ্নে দেখেন দেবীকে। এরপর বানানো হয় গঙ্গামাটি দিয়ে দেবীর অবয়ব। এরপর নিত্য পুজো হতে থাকে দেবীর।প্রাসাদ বানানো শেষ হলে বানানো হয় দুর্গাদালান। সেখানে প্রতিষ্ঠিত হন দেবী।

 



দেবী মহিষাসুর মর্দিনী। তিনি সিংহের উপর দাঁড়িয়ে বধ করছেন মহিষাসুর। তবে এই মূর্তি কিন্তু বেশ আলাদা। দেবীর উপরদিকে রয়েছেন মহাদেব সাথে নন্দী ভৃঙ্গি। তার নিচে দশ মহাবিদ্যার দশ দেবী।তার নিচে বামদিকে উপরে কার্তিক, নিচে সরস্বতী ডানদিকে উপরে গণেশ নীচে লক্ষী। 

 

দুর্গাপুজোর সময় পট পুজো করা হয়। তিন রকমের পট রয়েছে। তিনটি পট নানাবিধ ধাতু দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল। তাতে তিনজন দেবীর ছবি রয়েছে। বড়, মেজ এবং ছোট ঠাকরুন। 

বড় ঠাকরুনের পরনে রয়েছে লাল-হলুদ-সাদা শাড়ি। মেজ ঠাকরুনের শাড়ি লাল। এবং ছোট ঠাকরুনের কমলা শাড়ি। 

 

এই পট অঙ্কন করতেন ফৌজদার পরিবার।একবার এই পট অঙ্কনের সময় ফৌজদার পরিবার ঠিকমতো নিয়ম না পালন করায় পরিবারের একজনের অকস্মাৎ মৃত্যু ঘটে। তারপর থেকে আর এই পট কেউ অঙ্কনের সাহস পাননি। আপাতত এই পটগুলো শালু দিয়ে মুড়ে পুজো করা হয়। 

 

এই মৃন্ময়ী দেবীর মূর্তির কোন অদলবদল হয়নি। যদি রাজপরিবারের কেউ পান স্বপ্নাদেশ তবেই প্রতি পনের থেকে কুড়ি বছরের মধ্যে একবার রঙ করা হয়। ।

 

শৈব মতানুযায়ী একই নিয়ম মেনে পুজো করে আসছিলেন মল্ল রাজারা বংশানুক্রমে। 

 

সময়ের চাকা ঘুরে চলল। কেটে গেল ৬০০ বছর। সময় এল বীর হাম্বিরের। 

 

তিনি হচ্ছেন ৪৯ তম বংশধর। মল্ল রাজবংশের। বংশের নামানুসারে তাদের জনপদের নাম ছিল মল্লভূম। অধুনা বিষ্ণুপুর ছিল রাজধানী। তার পূর্বসূরি মল্ল রাজারা গৌড়ের পাঠানদের সাথে একরকম সমঝোতা করে চলতেন। রাজস্ব দিতেন। কিন্তু সম্পূর্ণ স্বাধীন থাকতেন। মল্ল রাজ্যে কোনরকম মুসলিম হস্তক্ষেপ তারা বরদাস্ত করতেন না। 

 

শক্তিশালী রাজ্য মল্লরাজ্য। এড়িয়ে চলত পাঠানরা। কারনটা ছিল এদিকের জঙ্গল এবং রুক্ষ ভূমি এবং অরণ্যের দুর্ধর্ষ অধিবাসী। যবনদের একদম পছন্দ করত না তারা। মুখোমুখি হলে প্রাণ যেত। তাই সব মিলিয়ে পাঠানরা কিছু রাজস্ব নিয়ে খুশি থাকত।

 

বীর হাম্বির:

◆◆◆◆◆◆◆◆

মল্ল রাজাদের মধ্যে তিনি ছিলেন সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য। তার সময়ে সভ্যতা সংস্কৃতি কৃষ্টির সাথে অর্থনৈতিক সামাজিক উন্নতি হয় সারাটা বিষ্ণুপুরের। 

 

১৫৮৬ সালে সিংহাসনে বসেন বীর হাম্বির। তিনি দুর্গ এবং সেনাবাহিনী বিশেষভাবে সংস্কার করেন। অরণ্যের অধিবাসীদের যুদ্ধরীতি অনুসরণ করে নিজের বাহিনীকে করে তোলেন শক্তিশালী। জঙ্গলের বাগদি সমাজকেও আধুনিক যুদ্ধের সম্বন্ধে ওয়াকিবহাল করান। এমনিতেই তার সময়ে রাজ্যের অর্থ ব্যবস্থা উন্নতি লাভ করেছিল। প্রজারা সবাই ভালোই ছিল তার রাজ্যে।

 

বিষ্ণুপুরের বিখ্যাত রাসমঞ্চ তারই তৈরি।

 

মুন্ডমালার যুদ্ধ:

◆◆◆◆◆◆◆◆

বীর হাম্বির তখন মন্দিরে। কুলদেবীর উপাসনায় ব্যস্ত। এই সময়ে তিনি সম্পূর্ণ একলা থাকেন। কোনরকম গোলযোগ তিনি পছন্দ করেন না। 

কিন্তু খবরটা এল তখনই...

Painting Courtesy : Internet By : Zai 

উড়িষ্যা এবং গৌড়ের দখলদার নেতা সুলেমান কার্নানি সমঝোতা করেই চলছিল মল্লরাজ্যের সাথে। কিন্তু তার ছেলে দাউদ খাঁ কার্নানি'র ইচ্ছে ছিল দখল করবে পুরো দক্ষিণবঙ্গ। দক্ষিণবঙ্গর দখল পেতে গেলে দখল করতে হবে মল্লরাজ্য।যেমন ভাবনা তেমন কাজ। 

লক্ষাধিক সেনা নিয়ে হুট করে হাজির হল দাউদ খাঁ রানীসাগর নামক জায়গায়। উপদ্রব শুরু করল সেখানে জনগণের ওপর। কিছুক্ষনের মধ্যেই পাঠান বাহিনীর উপদ্রব চরম আকার নিল। উদ্দেশ্য বিভীষিকার মাধ্যমে প্রজা সাধারণদের ভয় দেখিয়ে দুর্বল করে ফেলা। আত্মসমর্পণ করতে রাজাকে বাধ্য করা। সেই উদ্দেশ্যে শুরু হয়ে গেল জোর করে ধর্ম পরিবর্তন। মন্দির নোংরা করা। গৃহিদের ঘরের গরু ছাগল ধান লুট। অর্থ সম্পদ লুট। মহিলাদের সম্ভ্রম হানি চরম আকার নিল। প্রতিবাদ করছে যেই, টুঁ শব্দটি করছে তাকে নির্বিচারে হত্যা করছে। মোটকথা রানিসাগরের অবস্থা খুবই খারাপ। 

 

আগেই বলেছি এই খবর এল যখন প্রাসাদে তখন বীর হাম্বির ব্যাস্ত কুলদেবীর উপাসনায়। মৃন্ময়ী দেবী। পরম শৈব বীর হাম্বির তখন একটি মহিষ বলি চড়িয়েছেন সবে। সারা শরীরে রক্তের ছিটে। মন্দির ভেসে যাচ্ছে রক্তে। হাতে তখনও রক্তমাখা খড়্গ ধরা রয়েছে। এই অবস্থায় শুনলেন সব। এরপর বীর হাম্বির সেই রক্তের টিকা মাথায় নিয়ে শপথ করলেন দেবীর সামনে, যুদ্ধ জিতে এসে নিবেদন করবেন মায়ের পায়ে নরমুন্ড মালা। 

 

পুজো শেষ করে বীর হাম্বির সমস্ত সেনাদের জমায়েত করলেন। খবর পাঠানো হল জঙ্গলেরঅধিবাসীদের। যোগ দিল তারাও। বেশিরভাগ বাগদি সম্প্রদায়। সকলে শপথ নিল মৃন্ময়ী দেবীর... শত্রুর মাথা তাদের চাইই চাই।

 

তখন বিষ্ণুপুরের ছিল বারটি দরজা। এক একটি দরজার কাছে এক একটি দুর্গ। এরম একটি দূর্গ ছিল মুন্ডমালা দূর্গ। যুদ্ধ শুরু হল সেই মুন্ডমালা দূর্গের কাছেই। ভয়ানক সেই যুদ্ধে শোচনীয় হার হয় পাঠানদের।লাশের পাহাড় জমে যায় পূর্ব দরজায়। 

 

যুদ্ধ শেষে বন্দি হয় দাউদ খাঁ। হত অন্যান্য সেনাপ্রধানদের মাথা কেটে নিলেন বীর হাম্বির। তারপর সেই মাথাগুলো দিয়ে বানানো হয় একটি মালা। নিবেদন করেন দেবীকে।কথিত রয়েছে সেই মুন্ডমালাতে মুন্ড সংখ্যা ছিল ১০৮।

 

যেখান থেকে এই মাথা সংগ্রহ করেছিলেন হাম্বির সেখানে জমে যায় মুন্ডহীন পাঠানদের শরীর। কারন সৈন্যরা প্রত্যেকেই কেটেছিলেন কম করে একটি মাথা। মুন্ড সংগ্রহ করা হয়েছিল তাই সেই দুর্গের নাম পরবর্তীতে হয়ে যায় মুন্ডমালা ঘাট বা দুর্গ।

 

বিপত্তারিণী:

●●●●●●●●●●

বিপদ তারণ করে দেন এইদেবী। তাই আরেক নাম বিপত্তারিণী । জনশ্রুতি রয়েছে বঙ্গের বিপত্তারিণী পুজোর দিনটি আসলে সেই দিনটি যেদিন রাজা হাম্বির দেবীর আশীর্বাদে শত্রু পরাজিত করে দেবী চরণে সমর্পণ করেছিলেন মুন্ডমালা। 

 

শৈব পুজো থেকে বৈষ্ণব পুজো:

◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆

তবে এই ঘটনার বেশ কিছুদিন পর এক বৈষ্ণব গুরুর কথায় বীর হাম্বির শাক্ত থেকে হন বৈষ্ণব। তখন থেকে মৃন্ময়ী মাতার পুজো হতে থাকে বৈষ্ণব মতে। তারপর থেকে মন্দিরে বলি হয়না। শোনা যায় মায়ের সেই রনচন্ডী মুখ বদলে বর্তমান এই শান্ত রূপের প্রতিষ্ঠা হয় সেই বৈষ্ণব গুরুর সহায়তায়। তবে কোন এক গোপন জায়গায় পুজো হয় সেই আসল রনচন্ডী মূর্তির। 

 

পুজো বৈশিষ্ট্য:

●●●●●●●●●●

এই দুর্গাপুজো চলে উনিশ দিন ধরে। আট দিন থাকে শুক্লপক্ষ। এগার দিন কৃষ্ণপক্ষে। এই পুজো এখনও মল্ল রাজপরিবারের পুজো। প্রতি বছর একই নিয়মনিষ্ঠার সাথে পুজো করা হতে থাকে। যা এখনও চলছে। এই পুজোর অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে। অষ্টমীর দিন কামান দাগা। এবং দশমী থেকে দ্বাদশীর রাবনকাটার নাচ।

 

দশমীর দিন রঘুনাথ জিউ মন্দিরে হয় শ্রীরাম-সীতা-লক্ষণের পুজো। এরপরে বেরোয় শ্রীরামের বাহিনী। পথে নামে মুখোশ পরা হনুমান জাম্বুবান সুগ্রীব এবং অন্যান্য বানরসেনা। এই দলকে বলা হয় রাবনকাটার দল। এই দল রাস্তায় বেরোয় নাচতে নাচতে। ছোট বাচ্চাদের মায়েরা রাস্তার দুপাশে ভীড় জমান। নিজের বাচ্চাদের এদের কোলে তুলে দেন। এরা একটু নাচিয়ে ফেরত দেয় সেই বাচ্চাকে। মায়েদের বিস্বাস এর ফলে এই বাচ্চারা হবে নীরোগ এবং শক্তিশালী। 

 

এই উৎসব চলে দুদিন। দশমীর দিন হয় কুম্ভকর্ণ বধ। একাদশীর দিন হয় মেঘনাদ বধ। দ্বাদশীর দিনে হয় রাবন বধ। রাবন বধের সাথে সাথে হয় ১৯ দিন ধরে চলা এই উৎসবের সমাপ্তি। আবার অপেক্ষা একটি বছরের। 

 

উল্লেখ্য:

এই পুজো দেখতে এসেছিলেন শ্রীরামকৃষ্ণ। 

তিনি মৃন্ময়ী দেবীর মধ্যে জগৎজননীকে দেখতে পেয়েছিলেন।


| শারদ সংখ্যা-১৪২৯ | aleekpata.com | 30th Edition |

| ALEEK PATA- Your Expressive World |Online Magazine |

| Editor: Swarup Chakraborty | Publisher: Debasree Chakraborty |

| Durga Puja , 2022 | July-Oct 2022 | Fifth Year Fourth Issue  |

© All Rights Reserved by The Editor and The Publisher |

| a DISHA-The Dreamer Initiative |

প্রবন্ধ - বাঙালির দুর্গাপূজা ইউনেস্কোতে - বটু কৃষ্ণ হালদার

 প্রবন্ধ

মৃত্যু ভয় কে উপেক্ষা করে বাঙালির দুর্গাপূজা ইউনেস্কোতে স্থান লাভ করল

বটু কৃষ্ণ হালদার

 

বাঙালিদের একটি জরূরী ও একত্রীকারী বৈশিষ্ট্য হচ্ছে যে তারা বেশীরভাগ বাংলা ভাষা মাতৃভাষা হিসাবে ব্যবহার করে, যা ইন্দো-ইরানি ভাষাসমূহ থেকে আগত।২২.৬ কোটি দেশী ও বিশ্বব্যাপী ৩০ কোটি মোট বাংলাভাষী আছে, তাই বাংলা হচ্ছে পৃথিবীর ষষ্ঠতম চলমান ভাষা। বাংলা ভাষা বেশী অংশে বাংলা লিপি দিয়ে লেখা হয়, এবং প্রায় ১০০০-১২০০ খ্রীষ্টাব্দে মাগধী প্রাকৃত থেকে প্রকাশ হলো। বহুরূপে এই ভাষা আজ প্রচলিত, এবং এটা বাঙালি সংহতির জন্য একটি জরূরী প্রভাব সরবাহ করে। এসব ভিন্ন রূপ তিন বিভাগে বিভক্ত করা যায়:

বাঙালির বাংলা ভাষা ও সাংস্কৃতি শুধুমাত্র ভারতবর্ষের পশ্চিম বাংলা নয় সমগ্র বিশ্বের কাছে আবেগ ও বিস্ময়ের। ইতিমধ্যে বাঙালির বাংলা ভাষা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে র রাষ্ট্রীয় ভাষা হিসাবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। বাংলা ভাষা এক দিকে যেমন রাষ্ট্রপুঞ্জের দরজায় কড়া নেড়ে ছে। ইতিমধ্যেই সাউথ আফ্রিকার এক যুবকের কণ্ঠে "সাদা সাদা কালা কালা" গানটিতে বিশ্বের তামাম বাঙালি মজেছেন। তবে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির এমন অভূতপূর্ব সাফল্যের পিছনে লুকিয়ে আছে রক্তে রাঙানো ইতিহাস।১৯৫২ সালের আগে এই বাংলা ভাষাকে স্বীকৃতি দিতে নাড়াচ্ছিল পাকিস্তানি হায়না দারারা। তৎকালীন সময়ে যারা বাংলা ভাষাকে হৃদয় ধারণ করেছিল এর বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছিল। শুরু হয়েছিল এক রক্তক্ষয়ী মহা সংগ্রাম। অবশেষে ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত, সালাম, রফিক,বরকতদের সহ অনেক বাঙালিদের আত্ম বলিদানে অবিভক্ত বাংলার বুকে ১৯৫২ সালে ২১ শে ফেব্রুয়ারি বাংলা ভাষা স্বীকৃতি লাভ করে।এখানেই শেষ নয়, বাংলা ভাষার জন্য পুনরায় এগারো জনকে শহীদ হতে হয়। সালটা ছিল ১৯৬১।বাংলা ভাষার জন্য রক্তক্ষয়ী আন্দোলন হয়েছিল আসামের শিলচরে বরাক উপত্যকায়।বর্তমান সময়ে এসে বাঙালিরা ভাষা দিবস পালন করলে, নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার লড়াই জারি রেখেছে পশ্চিমবাংলায়।বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলা ভাষা সংস্কৃতি গবেষণা ও মুখ্য আলোচ্য বিষয় হয়ে উঠলেও, বাংলা ভাষার অপর ঘর এই পশ্চিমবাংলায় ভাষা সংস্কৃতি সম্পূর্ণরূপে ধ্বংসের পথে।

তবু বাঙালি আছে স্ব মহিমায়।এই বাঙালির অন্যতম আবেগ ও বিস্ময়ের জায়গা হল দুর্গোৎসব।বিগত তিন বছরের অজানা ঘূর্ণিঝড়ের তা থৈ তাথৈ নৃত্যে জীবনের অন্তরসলিলে মৃত্যুর মিছিলে থমথমে পৃথিবীর আতঙ্কিত রূপের কথা মনে পড়লেই শরীরটা হিম হয়ে যায়।

অদৃশ্য ঘাতকের হাজারো প্রশ্ন বানে বিপন্ন,ও অনিশ্চয়তার আবহে ঘুরপাক খেয়েছে মানব জাতির জাগতিক সময়। গৃহবন্দী মানুষ একাকিত্বের যন্ত্রণায় ছটফট করেছে। কান পাতলেই শোনা যেত স্বজন হারানোর চিৎকার। বিগত ২-৩ বছর যাবত হৃদয়ের বসন্তে ফুল ফোটেনি,সাতরঙা রামধনু একা একা ফিরে গেছে শরতের শিহরণ থেকে বঞ্চিত হয়েছি আমরা সবাই।কারণ অতিমারি করোনার ছোবলে ইতিমধ্যেই বহু প্রিয়জনকে হারিয়েছেন অনেকেই।বাঙালির প্রাণের উৎসব ওই সময় নমো নম করে ঘট পূজাতে স্থিমিত হয়েছে। কেউবা ছোট্ট একটা মূর্তি দিয়ে নিয়ম-বিধি মেনে দূরত্ব বজায় রেখে পূজা সারলো। তবে বেশিরভাগ লোক ঘরে বসে অনলাইনে পূজা দেখল পুষ্পাঞ্জলি দিল। আমরা দেখেছি কোথাও বা গণচিতা গণ কবর সাজানো হয়েছে। উৎসবের রেস থমকে গিয়ে বাঁচার আর্তি যেন প্রকট হয়ে উঠেছিল।চারিদিকে যেন হাহাকার আর কপাল চাপড়ানি।মনে হতো একটু ফাঁক পেলেই মহামারী ঢুকে পড়বে আর ছিনিয়ে নিয়ে যাবে তরতাজা প্রাণ। মনটা ডুকরে কেঁদে উঠত বারবার। মানুষ তখন দিশেহারা আবাল বৃদ্ধ বনিতা কেউ রেহাই পেল না। শূন্য হল মায়ের কোল ঘরে ঘরে সন্তান হলো অনাথ,অসহায়।আমরা বিভিন্ন লেখকের লেখায় মহামারীর কথা পড়েছি জেনেছি। পুরাতন ভৃত্য কবিতা টা একটু মনে করুন। কাগজে-কলমে লেখা তেমন ভাবে আমরা ভীত হইনি।তবে খুব কাছে থেকে নিষ্ঠুর মৃত্যুকে দেখলাম। শংকিত হৃদয় বারবার কু ডাকত। হয়তো একদিন ঝড় থেমে যাবে। সময় নদীর স্রোতের মত বয়ে যাবে। হয়তো আবার পূর্ণ উদ্দীপনায় পূজা হবে জীবন স্বাভাবিক ছন্দে ফিরে আসবে। কিন্তু যে মানুষগুলো চলে গেল তারা কি আর ফিরবে? তাদের পরিবার কি ফিরতে পারবে স্বাভাবিক জীবন ছন্দে? পৃথিবীর চিরকালের জন্য মহামারী মুক্ত হোক ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে যেন মহামারীর এই বীভৎসরূপ আর দেখতে না হয়। তবে ওই সমস্ত ভয়ংকর দিনগুলোকে মনে করে নত মস্তকে শ্রদ্ধা জানাবো সেই সমস্ত ডাক্তার নার্স পুলিশ কিংবা যারা সেবা কাজে নিজেদের নিয়োজিত করেছিল, যারা ২৪ ঘন্টা মৃত্যু ভয় কে উপেক্ষা করে ওষুধের যোগান দিয়েছে, সবজি দিয়েছে, গ্যাস সিলিন্ডার পৌঁছে দিয়েছে খাবার দিয়েছে। কিংবা ২৪ ঘন্টা একাধিক শ্মশানে একের পর এক চিতার আগুনে তুলে দিয়েছে মৃত দেহ।

তবুও সাদা মেঘের ভেলা ঢাকের বাদ্য, ডাকের সাজ যেন আকাশে কালো ছায়া কে দূরে সরিয়ে দিয়ে আমরা একটু প্রাণ খোলা হয়ে ওঠার চেষ্টা করব। আবার আমরা একসঙ্গে উৎসবের রেসে মেতে উঠবো।গল্প করব ঘুরবো। ছোট ছোট শিশুরা প্যান্ডেলে দৌড়াবে খেলবে হইচই করবে।তবে এসবের মাঝে অত্যন্ত খুশির খবর হলো

কলকাতা তথা বাংলার প্রধান ও প্রাণের এই উৎসব আন্তর্জাতিক অঙ্গনে স্থান করে নিয়েছে। জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা- ইউনেস্কো বাঙালি হিন্দুদের এই উৎসবকে ‘ইনট্যানজিবল কালচারাল হেরিটেজ অব হিউম্যানিটি’ তথা মানবতার জন্য আবহমান অধরা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে। প্যারিসে অনুষ্ঠিত ২০২১ সালে আবহমান বিশ্ব সংস্কৃতি রক্ষা সংক্রান্ত ইউনেস্কোর আন্তঃসরকারি কমিটির ষোড়শ সম্মেলনে (১৫ই ডিসেম্বর) কলকাতার দুর্গাপূজা তালিকাভুক্তির স্বীকৃতি লাভ করে।

পরিশেষে এটুকু বলা যায় মিলনের হাটে অকল্পনীয় প্রতিকূলতার পরিমণ্ডলে দাঁড়িয়ে অন্তরের বালু রাশিতে আমরা সবাই মিশে যেতে চাই। এই ধোয়া ভরা পৃথিবীর ভীষণ বারুদের বাতাস যেমন থাকবে না, কেমনি কালো মেঘের ভ্রুকুটি একদিন কেটে যাবে। এক সময় আসবে, চাঁদ মাখা শব্দ ফাল্গুনী। সমস্ত দুঃখ-বেদনাকে উপেক্ষা করে এক উন্মুখ নতুন রৌদ্রজ্জ্বল সোনালী প্রভাতের অপেক্ষার অবসানের সাক্ষী হয়ে থাকবো আমরা সবাই।


| শারদ সংখ্যা-১৪২৯ | aleekpata.com | 30th Edition |

| ALEEK PATA- Your Expressive World |Online Magazine |

| Editor: Swarup Chakraborty | Publisher: Debasree Chakraborty |

| Durga Puja , 2022 | July-Oct 2022 | Fifth Year Fourth Issue  |

© All Rights Reserved by The Editor and The Publisher |

| a DISHA-The Dreamer Initiative |

 

Main Menu Bar



অলীকপাতার শারদ সংখ্যা ১৪২৯ প্রকাশিত, পড়তে ক্লিক করুন "Current Issue" ট্যাব টিতে , সবাইকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা

Signature Video



অলীকপাতার সংখ্যা পড়ার জন্য ক্লিক করুন 'Current Issue' Tab এ, পুরাতন সংখ্যা পড়ার জন্য 'লাইব্রেরী' ট্যাব ক্লিক করুন। লেখা পাঠান aleekpata@gmail.com এই ঠিকানায়, অকারণেও প্রশ্ন করতে পারেন responsealeekpata@gmail.com এই ঠিকানায় অথবা আমাদের ফেসবুক গ্রুপে।

অলীক পাতায় লেখা পাঠান