অলীক পাতার অন্যান্য সংখ্যা- পড়তে হলে ক্লিক করুন Library ট্যাব টি



। । "অলীক পাতা শারদ সংখ্যা ১৪৩১ আসছে এই মহালয়াতে। । লেখা পাঠানোর শেষ তারিখ ১৫ ই আগস্ট রাত ১২ টা ।.."বিশদে জানতে ক্লিক করুন " Notice Board ট্যাব টিতে"

Showing posts with label Anjali. Show all posts
Showing posts with label Anjali. Show all posts

Wednesday, October 21, 2020

অঞ্জলি পর্ব- কবিতা- ধর্ষিতা সত্যজিৎ পাল

 

ধর্ষিতা
সত্যজিৎ পাল

 

কয়েকজনের লালসা থেকে বাঁচতে

       চিৎকার যে করলাম কতো।

বাঁচাতে এগিয়ে কেউ এলো না

      আজ বদনাম করছে নিজের মতো।

 

ধর্ষিতা তো হয়েছিলাম আমি

      চরিত্রহীনা হয়েছি কারো চোখে।

লজ্জা অপমান বাড়ছে এত

      সইতে পারছি না আর বুকে।

 

লজ্জায় নিজেকে বন্দি করে রেখেছি

      চলতে যে আর পারবনা মাথা উঁচিয়ে।

ওইযে, ওইদিকে, ওই মেয়েটা বলে

       যন্ত্রনাটা যদি কেউ দেয় খুঁচিয়ে ?

 

শরীরের যন্ত্রণা সইলাম যখন

     ভাবলাম জীবনটা দিই শেষ করে।

মানুষের কথাগুলো যখন কানে আসছে

     লজ্জায় ঘৃণায় একটু একটু করে যাচ্ছি মরে।

 

অপরাধীদের শাস্তি চেয়ে গোটা দেশ ফুঁসছে

       তবু চলে গেলো অনেকগুলো অস্ত।

কারন, আমাদের দেশের উকিল বাবুও

      ওদের বাঁচানোর জন্য ব্যস্ত।

 

দেশে আসুক সেই আইন

      ধর্ষণকারী শাস্তি পাক হাতে হাতে।

সেদিন যেন কোন উকিল 

       থাকতে না  পারে ওদের সাথে

Download ALEEK PATA Mobile APP
DOWNLOAD ALEEK PATA ANDROID APP


| Aleekpatamagazine.blogspot.com |
  |ALEEK PATA- Your Expressive World |Online Magazine |
| Editor: Swarup Chakraborty | Publisher: Debasree Chakraborty |
| Special Puja Issue, 2020 | October-November 2020 | শারদ সংখ্যা -১৪২৭।
| Fourth Year Third Issue |24 th Edition|
|© All Rights Reserved By The Editor and The Publisher |
|a DISHA-The Dreamer Initiative |
পড়া শেষ? পত্রিকা বন্ধ করুন


অঞ্জলি পর্ব- গল্প- সোনা মা - ডাঃ অরুণ চট্টোপাধ্যায়

 

সোনা মা
ডাঃ অরুণ চট্টোপাধ্যায়


গত কাল থেকেই আমাদের বাড়ি আত্মীয়স্বজনে পরিপূর্ণ। কাকা, কাকিমা, ভাইয়েরা। কাকার বড়মেয়ের শ্বশুরবাড়ির লোকজন। আমার মামা, মামীমা, মামার ছেলে মেয়েরা আরও নানান আত্মীয় কুটুমে বাড়ি গমগম করছে। হাসিঠাট্টা, নানা কথাবার্তা, চিৎকার, বাচ্চার বায়না আর কান্না সব মিলিয়ে বাড়ি একেবারে জমজমাট।

অন্যদিন এ বাড়িতে আমরা মোটে তিন প্রাণী সারাদিন বাড়ি প্রায় যেন নিশ্চিন্দি পুরী। কিন্তু আজকের দিন আলাদা। আজ এক শুভ দিন আর আমার জীবনে এক স্মরণীয় ঘটনা ঘটবে এই দিনে। আজ আমার বিয়ে। কেমন যেন নিজেকে সাবালক সাবালক বলে মনে হচ্ছে। বেশ ভাল লাগছে।

খুব ভোরে মা তুলে দিয়েছে আমাকে। মা মানে আমার সোনা মা। একদম ছেলেবেলা থেকেই আমি মাকে এই নামে ডাকি। মাও আমাকে আদর করে ডাকত, আমার সোনা ছেলে একদম কিন্তু দুষ্টুমি করবে না। করলে তোমার সোনা মায়ের খুব নিন্দে করবে লোকে।

তা আমার সোনা মায়ের নিন্দে হোক এমন কাজ কি আমি করতে পারি? তাই একদম দুষ্টুমি করতুম না। মা আমাকে রাতে তার বিছানায় পাশে শুইয়ে আমার সারা শরীর আলতো করে চাপড়ে চাপড়ে আদর করে বলত, আমার সোনা ছেলে তার সোনা মায়ের খুব কথা শোনে।

একদম ভোরে আমাকে তুলে দিয়ে সোনা মা বলে গেল, দেখ এই দধিমঙ্গলে যা খাবি খাবি। আর কিন্তু সারাদিন কিছু খেতে পাবি না বিয়ে না মেটা পর্যন্ত।

বাইরে তখনও আবছা আঁধার। আমাকে ঘিরে সবাই। বেশির ভাগ মেয়েরাই সামনের সারিতে। পেছনে দাঁড়িয়ে দেখছে পুরুষের দল। ভোরের সর্বপ্রথম মাঙ্গলিক অনুষ্ঠান দধিমঙ্গল। প্রদীপ জ্বলছে। শাঁক বাজছে। বেশ ভাল লাগছে। একটা রোমাঞ্চ। বিয়ে মানে তো একটা নতুন অভিজ্ঞতা।

যত যাই হোক আমার মন কিন্তু উড়ু উড়ু। আশ্চর্য সেই মুখটা কই? আমার সোনা মায়ের? যে মুখের মালিক আজ আমার এই সাতাশ বছর বয়েস পর্যন্ত শুধু আমার চিন্তা করে গেছে অনুক্ষণ সেই মুখটা কই? শরীর খারাপ হল নাকি হঠাৎ?

-এত চঞ্চল কেন কি খুঁজছিস প্রতুল ?

-আমার সোনা মা কই? দেখ তো আবার শরীর খারাপ হল নাকি ?

-আরে না না শরীর ওর দিব্বি আছে। কাকিমা বললেন, আজকের দিনে ঝর্ণাদির কত কাজ। সব সামলাতে হবে তো ?

তা ঠিক। এই সংসারের কর্ত্রী বলে কথা তার কি আর ফুরসৎ আছে ? কিন্তু একটি বারের জন্যে আসতে পারল না ? দেখতে পারল না তার সোনা ছেলে ফলারটা ঠিক খাচ্ছে কিনা ? একটু আগেই তো বলল আজ নাকি সারাদিনে আর কিছু খাওয়া চলবে না।

আমার খুব অভিমান হল সোনা মায়ের জন্যে। আজ আমার এত বড় শুভ দিন তবু তার ফুরসৎ নেই? যে মানুষটা আমার অসুখ হলে দিনের পর দিন না খেয়ে আমার মাথার কাছে বসে থাকে মুখ চুন করে। তার চোখের কোণ চিকচিক করতে দেখেছি আমি স্পষ্ট। আমাকে ভালমন্দ কত কিছু খাওয়ানোর জন্যে যে প্রাণপাত করত সে কেন এই মুহূর্তে আমার কাছে থেকে দূরে ?

অনুষ্ঠান শেষ হতে আমি সোনা মাকে খুঁজতে থাকি। কিন্তু সোনা মা তখন কাজ করছে আর নয় কাজের তদারকি করছে কাকিমা বলল, নে নে সর তোর তো হয়ে গেল আবার সেই গায়ে হলুদের সময়

-দেখ না কাকিমা সোনা মা আজ দধিমঙ্গলের সময় একটু কাছে পর্যন্ত এল না।

আমি কেঁদে ফেলি প্রায়। কাকিমা এবার একটু গলা নরম করল, দেখ প্রতুল আজ তোর বিয়ে। কতবড় একটা কাজ। আজ কি ফুরসৎ আছে তোর সোনা মায়ের ?

গায়ে হলুদ হল কিন্তু সোনা মা সবার পেছনে সবার আড়াল থেকে একটু দেখল। বিকেল বেলা সাজের সময়েও তাই আমি ছোট ছেলের মত বায়না ধরলুম, আমি সোনা মায়ের হাতে সাজব।

-বর সাজানোর লোক এসে গেছে পার্লার থেকে। গম্ভীর ভাবে কথাটা বলে বাবা চলে গেল।

গাড়ি এল। সেজেগুজে টোপর মাথায় দিয়ে আমি বাবার সঙ্গে গাড়িতে উঠলুম। পেছনে বড় গাড়িতে চলল বরযাত্রীর দল। কিন্তু সোনা মাকে কোথাও দেখা গেল না।

গাড়িতে একবার বাবাকে বললুম, সোনা মা কি আসবে না বরযাত্রীর সঙ্গে?

-তোমার সোনা মা বাড়িতে থেকে কালকের সব গোছগাছ করে রাখবে। কাল যে বধূবরণ। নতুন বৌকে তুলতে হবে না ঘরে ?

পরের দিন বধূবরণ হল। স্ত্রী আচার হল। হুল্লোড় হল। কিন্তু সোনা মাকে না দেখে জিজ্ঞেস করলুম, সোনা মা নতুন বৌকে বরণ করবে না? শাশুড়ি হয়ে বৌমাকে ঘরে তুলবে না ?

কেউ কথা বলল না। আমার কথাটা ক্রমে মিইয়ে ন্যাতা হয়ে গেল। সব ব্যবস্থা সম্পূর্ণ করে কাকিমা বরণ করে আমাদের নিয়ে গেল। জানলা দিয়ে একফাঁকে সোনা মার চিক চিক করা চোখের কোল আর বিষণ্ণ শুকনো মুখ দেখে প্রায় উঠতে যাচ্ছিলাম। সঙ্গে সঙ্গে কাকিমা প্রায় দৌড়ে এল। হাতে তার সন্দেশের থালা। বলল, এস মিষ্টি খেতে হয় দুজনকে। এখন কিছুক্ষণ চুপ করে বসে থাক।

একটু পরে অবশ্য নতুন বৌকে ঘরে রেখে আমি বেরোলাম। কাকিমাকে জিজ্ঞেস করতেই দাঁতে দাঁত চেপে বলল, ন্যাকামো করিস নি প্রতুল। সোনা মা তোর-

কিন্তু আমি তো এটা জানি। ছেলেবেলায় সেই যখন তিনমাসের ছিলুম সদ্য মা হারা তখন অবশ্য জানতুম না। তবু তিনমাস থেকে এই সাতাশটা বছর এই সোনা মা ই যে আমার মা ছিল। আমার সব কিছু দেখা শোনার ভার ছিল। ‘মায়ের অভাব’ এই শব্দবন্ধ আমার কাছে সম্পূর্ণ অজানা ছিল। জ্ঞান হবার পর প্রথম কিছুদিন কিছুতেই মাথায় ঢুকত না বাবা কেন মায়ের সঙ্গে শোয় না। বাবার কি তবে মায়ের সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে? পরে অবশ্য আসল কথাটা জেনেছি।

-প্রতুল আচ্ছা পাগল তো তুই ? কাকিমা ফিসফিস করে বলল, তোর বৌকে বরণ করবে কি ? ও যে বাঁজা মেয়ে মানুষ জানিস না ? এ সব শুভ কাজ-

বাকিটা আর বলল না কাকিমা। আমার কানও এর বেশি হয়ত শুনতে পছন্দ করত না।  

না, সোনা মা আমার নিজের মা নয়। আমাদের বাড়ির কাজের লোক ছিল। আজও তাই আছে। কিন্তু বাঁজা অপরাধে স্বামী পরিত্যক্তা হয়ে বাবার সংসারে কাজের লোক হিসেব আশ্রয় পেয়েছিল। আবার সেও আশ্রয় দিয়েছিল সদ্য মাতৃহারা তিনমাসের সেই শিশুটিকে। অন্যের গর্ভের পালন করা সন্তান দিয়ে নিজের সন্তানের অভাব পূর্ণ করতে চেয়েছিল।

আমি বড় হলুম। কলেজের পড়া শেষ করে চাকরি পেলুম। সোনা মার কি আনন্দ। আমার কপালে চুমু খেয়ে বলল, আজ আমার সোনা ছেলে সাবালক হয়ে গেল।  এবার ওর একটা বিয়ে দিতে হবে।

বাবা অবশ্য মেয়ে খুঁজতে শুরু করল। কাকিমারা জব্বলপুর থেকে এসে মেয়ে পছন্দ করে গেল। আমার ইচ্ছে ছিল আমার সোনা মা-ই মেয়ে পছন্দ করে। আমি একবার বলেও ছিলুম। কাকিমা বলেছিল, দেখ প্রতুল আমরা তোর জন্যে খারাপ মেয়ে পছন্দ করব না। 

আজ পর্যন্ত সে কখনও বুঝতে দেয় নি সে আমার নিজের মা নয়। সামান্য একটা বাড়ির কাজের লোক।

কিন্তু আজ বুঝতে দিল। কিংবা অন্যেরা বাধ্য করল তাকে বুঝিয়ে দিতে। আমার সোনা মা কেবল একটা অবলম্বন মাত্র ছিল। একটা চারা লাউ গাছকে মাচা পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার একটা সরু কঞ্চি মাত্র। আজ কঞ্চিটাকে সরিয়ে নিলেই বা কি?    


Download ALEEK PATA Mobile APP
DOWNLOAD ALEEK PATA ANDROID APP


| Aleekpatamagazine.blogspot.com |
  |ALEEK PATA- Your Expressive World |Online Magazine |
| Editor: Swarup Chakraborty | Publisher: Debasree Chakraborty |
| Special Puja Issue, 2020 | October-November 2020 | শারদ সংখ্যা -১৪২৭।
| Fourth Year Third Issue |24 th Edition|
|© All Rights Reserved By The Editor and The Publisher |
|a DISHA-The Dreamer Initiative |
পড়া শেষ? পত্রিকা বন্ধ করুন


অঞ্জলি পর্ব- কবিতা-শান্তি নেই- মুহা আকমাল হোসেন

 

শান্তি নেই 
মুহা আকমাল হোসেন

 

শান্তি কোথায় পাবে তুমি?

 সংসার ত্যাগী সন্ন্যাসী। 

মনের ঘরে তালা দিয়ে 

থাকো না তুমি বনবাসী। 

 

যতদিন ওই স্মৃতি শিখা

 জ্বলবে তোমার প্রাণ বাসে

বিরহ বাতাস বইবে তবু

 তোমার জীবন সন্ন্যাসে। 

 

স্মৃতি নিয়ে শতাব্দী যায়

 জীবনটা তাই কাঁদে হাসে 

সংসারে নেই সংসারে নেই

 জীবন তাই পরিহাসে 



Download ALEEK PATA Mobile APP

DOWNLOAD ALEEK PATA ANDROID APP

| Aleekpatamagazine.blogspot.com |

  |ALEEK PATA- Your Expressive World |Online Magazine |
| Editor: Swarup Chakraborty | Publisher: Debasree Chakraborty |
| Special Puja Issue, 2020 | October-November 2020 | শারদ সংখ্যা -১৪২৭।
| Fourth Year Third Issue |24 th Edition|
|© All Rights Reserved By The Editor and The Publisher |
|a DISHA-The Dreamer Initiative |
পড়া শেষ? পত্রিকা বন্ধ করুন




অঞ্জলি পর্ব-কবিতা-বেহুলার প্রতি -সুমন্ত কুন্ডু

 

বেহুলার প্রতি
সুমন্ত কুন্ডু




মন্দাসের ভেলায় অস্ত্র রেখো বেহুলা,  

পাড়ি দিতে হবে অনেকটা পথ

কে আছে সাথে,  

মৃত স্বামী আর দেবতার অভিশাপ !

 

চাঁদ লড়ে মনসার সঙ্গে, শিব সয় দেবাজ্ঞা,  

সেসবে তোমার কি, তোমার তো বাসর !

মধুর রাত, মায়াবী স্বপ্ন, ইচ্ছে , আদর –

সেখানে আঘাত, প্রবঞ্চনা, তুমি হতভাগিনী শুধু

 

ইতিহাসের পাতায় শুধু বীরেরা লড়ে

তোমায় বাইতে হবে ভেলা

মৃত স্বামী সঙ্গে নিয়ে, একদম একলা –

 

মন্দাসের ভেলায় অস্ত্র রেখো বেহুলা,

অনেক কালনাগিনীর সঙ্গে লড়তে হবে তোমায়

অধিকার দাবী করার আগে । 

 

 

Download ALEEK PATA Mobile APP
DOWNLOAD ALEEK PATA ANDROID APP


| Aleekpatamagazine.blogspot.com |
  |ALEEK PATA- Your Expressive World |Online Magazine |
| Editor: Swarup Chakraborty | Publisher: Debasree Chakraborty |
| Special Puja Issue, 2020 | October-November 2020 | শারদ সংখ্যা -১৪২৭।
| Fourth Year Third Issue |24 th Edition|
|© All Rights Reserved By The Editor and The Publisher |
|a DISHA-The Dreamer Initiative |
পড়া শেষ? পত্রিকা বন্ধ করুন


Tuesday, October 13, 2020

ছুটি ছুটি- ভ্রমণ - হঠাৎ বেরিয়ে পড়া আলেপ্পীতে- কৌশিক বসু



হঠাৎ বেরিয়ে পড়া আলেপ্পীতে
কৌশিক বসু



  

অনেক ফোরামে এত সুন্দর ভ্রমণ কাহিনী পড়ে আমারও লেখার একটু ইচ্ছে হলো হঠাৎ করা ট্রাভেল প্ল্যান এবং কিছু চমকপ্রদ অভিজ্ঞতা নিয়ে, বছর আষ্টেক আগের । সত্যি কথা বলতে এভাবে কোনোদিন লিখিনি, তাই কোনরকম ভূলভ্রান্তি মার্জনা করে দেবেন দয়া করে । 

 

অফিসের এক সহকর্মীর  সঙ্গে পরিবার সহ আগে বেড়িয়ে এসেছি কাজিরাঙ্গা আগের বছর তাই দুর্গা পূজার আগেই অফার এলো কানহা যাওয়ার - ডিসেম্বরের শেষের দিকে। কিন্তু অফিস থেকে আমাকে বলে রাখা হয়েছে যে কোন সময়ে ইংল্যান্ড যেতে হবে, তাই কানহা যাত্রা কানা করতে হলো। কিন্তু নভেম্বরের শেষের দিকে উপলব্ধি হলো যে ইংল্যান্ডের যাওয়া জানুয়ারির আগে হচ্ছে না, তখন একটা শেষ চেষ্টা করলাম কানহা যাত্রার, কিন্তু  পাওয়া গেলো না ট্রেন বা হোটেল বুকিং। অগত্যা নিজেই কিছু করার একটা শেষ প্রচেষ্টা করলাম। খুঁজতে খুঁজতে হঠাৎ অফিস এর একটি গেষ্ট হাউস খালি পেয়ে গেলাম মুন্নার এ দুদিনের জন্য, নেহাৎ ভাগ্যের জোরে বলতে হয় - সঙ্গে সঙ্গে বুক করে ফেললাম। এখানে একটু উল্লেখ্য হলো আমাদের ভ্রমণে একটু পাহাড় না থাকলে গিন্নীর মুখ ভার হয়ে থাকে, তাই মুন্নার নিয়ে গিন্নীর  ভেটো জুটবে না তা জানতাম। কিন্তু মুন্নার অনেক দূর, ট্রেনে যাওয়া মানে চার পাঁচদিন বেরিয়ে যাবে, অত ছুটিও পাওয়া যাবে না, তাই ফ্লাইট বুকিং করবো ভাবলাম। কাছাকাছি বিমানবন্দর কোচিন কিন্তু কলকাতা থেকে ভাড়া দেখে মাথা ঘুরে গেল। অগত্যা ম্যাপ ঘেঁটে দেখলাম ব্যাঙ্গালোর থেকে যাওয়া যেতে পারে, বাস আছে মুন্নার যাওয়ার। কিন্তু ক্রিসমাসের সময় টিকিটের দাম আগুন, তাই দুদিন এগিয়ে একটু ঠিকঠাক দামের টিকিট বুক করে ফেললাম - ২৩ সে ডিসেম্বরের এ যাওয়া আর ১ লা জানুযারি ফেরা। এবারে বাকি দিনগুলো ভরার কাজ। কেরলে যখন যাচ্ছি তখন আরেকটু কেরল কেমন হয়? গিন্নীকে কয়েকটা জায়গার নাম দিলাম, উঠে এলো আলেপ্পী এবং বুকিং হলো হোটেল এবং বাস ব্যাঙ্গালোর থেকে। পড়ে রইলো আরো তিনদিন। ব্যাঙ্গালোর এর ভিড়ভাট্টা ছেড়ে ঠিক করলাম থাকবো মাইসোর এ, একটি দিন কূর্গ ঘুরে আসবো, তারপরে ব্যাঙ্গালোর এ ফিরে এসে বাসে করে আলেপ্পী। গিন্নী ছাড়া আমার চার বছরের ছেলে তাই তার দিকটাও ভাবতে হবে, তাই ঠিক করলাম প্রথমে বানের ঘাটা দেখে মাইসোর যাবো। এই হলো প্ল্যানিং বৃত্তান্ত। 

 

এরপরে আলেপ্পী নিয়ে একটু লিখতে চাই।  গিন্নীর ইচ্ছে ছিল হাউসেবোট এ থাকা, কিন্তু তার জলে ভয় আছে সেটা জানি ভালো করে। তাছাড়া অফিসের এক সহকর্মীর কাছে জানলাম যে হাউসবোট দিনের বেলা চলে, সন্ধে হলে পাড়ে বাঁধা থাকে, যার মানে সন্ধ্যে থেকে আটকে থাকা। তাই ঠিক করলাম পম্বা নদীর পাড়ে কোন হোটেলে থাকবো। একটু ঘাঁটাঘাঁটি করে একটি হোটেলের সন্ধান পেলাম। যা অনবদ্য মনে হলো যে একটি ১৫০ নছরের পুরনো সেগুন কাঠের তৈরী ধানের গোলা কে একটু পরিবর্তন করে হোটেলের ঘর বানিয়েছে। কনসেপ্ট টা দারুণ লাগলো, বুকও করে দিলাম। হোটেল ম্যানেজার এর সঙ্গে কথা কয়েকবার হয় দুদিনের প্ল্যান করতে। ম্যানেজার বলে দিয়েছিল যে ব্যাঙ্গালোর থেকে আলেপ্পীর সব বাস ত্রিভান্দ্রাম যায়, তাই বাসে উঠেই ড্রাইভারের সঙ্গে কথা বলিয়ে দিতে, বুঝিয়ে দেবে কোথায় নামতে হবে, কারণ হোটেলটি ছিল আলেপ্পী শহরের বাইরে ত্রিভান্দ্রাম যাবার রাস্তায়। আমরা ব্যাঙ্গালোর বাস স্ট্যান্ড পৌঁছে গেছি বিকেল ৪ টের মধ্যে, ৬ টায় বাস ছাড়বে, সারারাত বাসে কাটাতে হবে ভোরবেলা ৬ টা নাগাদ  আলেপ্পী পৌঁছনোর কথা। কাছাকাছি দোকানে একটু খাবার কিনতে বেড়িয়েছি বাসে খাবার জন্য হঠাৎ দেখি বাসের এজেন্সির একজন আমাকে এসে বললো এখুনি বাসে উঠতে হবে কারণ আগামীকাল কেরল বন্ধ, তাই সব বাস কে ত্রিভান্দ্রাম ৬ টার মধ্যে পৌঁছতে হবে, অতএব তাড়াহুড়ো করে বাসে উঠে পড়লাম, মাঝখানের দিকে সিট পেলাম। জানতে পারলাম রাত ৩ টে নাগাদ আলেপ্পী পৌঁছবে। যাইহোক বাসে উঠেই মোবাইলে ড্রাইভারের সঙ্গে কথা বলিয়ে দিয়েছি ম্যানেজার বাবুর, ভাষা বিন্দু বিসর্গ বুঝলাম না, তারপরে ম্যানেজার বাবু বলে দিলেন একটি গাড়ি থাকবে আমাদের পিকআপ করতে। বাসে যাইহোক সময় কাটছে কোনরকমে, কোচিন এর পর আলেপ্পী আসবে, তাই কোচিন আসছে দেখেই ড্রাইভারের সঙ্গে দেখা করতে গেলাম। সেখানেই চমক - গিয়ে দেখি ড্রাইভার অন্য একজন! আমি জিজ্ঞেস করতে ড্রাইভার বললো সে জানে কোথায় নামাতে হবে, কোচিন এলে অনেকে নামবে তাই সামনের দিকে চলে আসতে। ক্রিসমাসের রাত, মধ্য কেরল ক্রিশ্চান অধ্যুষিত, তাই প্রায় প্রত্যেক বাড়ি সুন্দরভাবে আলোকিত। কিন্তু মনের মধ্যে একটু চিন্তা হচ্ছে, গিন্নীর মুখেও চিন্তার ভাঁজ। আলেপ্পী এলো এরপর, আরো কয়েকজন নামলো, কিন্তু ড্রাইভার দাদা আমাকে ইশারায় বসতে বললো। তার একটু পরে প্রায় রাত সাড়ে ৩ টে নাগাদ হঠাৎ বাস দাঁড়িয়ে পড়লো আর ড্রাইভার এবারে বললো নামতে। এই শেষরাতে প্রায় ভয়ে ভয়ে মালপত্র নিয়ে নামলাম, হালকা আলো রাস্তায়, এদিক ওদিক দেখছি, একটা ব্রীজের পাশে নামিয়েছে, নিচে পম্বা নদী বয়ে চলেছে, হঠাৎ লক্ষ্য করলাম একটা মারুতি গাড়ি দাঁড়িয়ে আর একজন বেরিয়ে এলো। কি হবে ভাবছি তখন নিজের নাম শুনলাম, পরিচয় দিলেন নিজের, তিনিই ম্যানেজার। এত রাতে ড্রাইভার আসবে না বলে উনি নিজেই এসেছেন। 

 

আশ্বস্ত হয়ে গাড়িতে উঠে পরলাম। একটু গিয়েই নদীর পাড়ে গাড়ি দাঁড়িয়ে পড়লো । দেখি নদীর ঘাটে একটি দেশী নৌকো রয়েছে, সেখানেই আমাদের মালপত্র তোলা হলো। ভাবছি যদি নৌকো উল্টোয় তাহলে তো বাকি টুর মায়া হবে এই জিনিসপত্রের সঙ্গে! এর মধ্যে ম্যানেজার বাবু বললেন আমাদের নৌকোয় উঠতে। আমি গিন্নীর দিকে তাকালাম প্রতিক্রিয়া দেখতে, সে তো আঁতকে উঠলো, না এত ছোট নৌকোয় উঠবো না, ভয় করছে। তখন ম্যানেজার বাবু বললেন তাহলে একটু ট্রেক করতে হবে মিনিট ১৫ র মতো। গাড়ি গ্যারেজে রেখে আমরা হাঁটা শুরু করলাম, ধানক্ষেতের আল দিয়ে হেঁটে কিছুক্ষণ বাদে পৌঁছলাম হোটেল। 

হোটেলে পৌঁছে আতিথেয়তায় মন ভরে গেল, ওই সময়ে ভোরের আলোও ফোটে নি ঠিক করে - সঙ্গে সঙ্গে আমাদের হোটেলের ঘরে কফি আর বিস্কুট চলে এলো ম্যানেজার বাবুর গিন্নীর হাতে হাসি মুখে, ছেলের জন্য দুধ বা কমপ্ল্যান ইত্যাদি । তখন বুঝলাম সত্যি অন্যরকম হোটেল - ম্যানেজার পরিচয় দেওয়া ভদ্রলোক আসলে মালিক, ওদের বাড়ির ধানের গোলাকে ৪ টে বেশ বড় ঘর বানিয়েছে এটাচড টয়লেট সহ, ঘরে টিভি, ওয়াইফাই, এসি সব কিছু আছে। ঘরের ওপরে সেগুন কাঠের সিলিং, তার ওপর টালির ছাদ। ব্রেকফাস্ট থেকে ডিনার সবই প্যাকেজ এর মধ্যে। তিনি থাকেন মা, বাবা, স্ত্রী ও দুই সন্তান ও ভাগ্নেকে নিয়ে।  

 

ঘরে বসে একটু টিভি চালিয়ে কফিতে চুমুক দিয়েছি, হঠাৎ গিন্নীর ডাক টয়লেট থেকে। গিয়ে দেখি কিছুটা শেড দেওয়া আর স্নান করার জায়গাটায় শাওয়ার লাগানো তবে চারদিকে নুড়ি পাথর মেঝেতে আর কিছু গাছও রয়েছে।  তবে গিন্নীর ডাকের আসল কারণটা দেখলাম ওপরের দিকে তাকিয়ে, কিছুটা আকাশ দেখা যাচ্ছে গাছের পাতার ফাঁক দিয়ে।  ভালো করে চারদিক সার্ভে করে দেখে নিলাম, কোনো বাড়িঘর নেই, গিন্নীকে বললাম কেউ থাকবে না কয়েকটা পাখি ছাড়া। নিজে যখন স্নান করলাম ব্যাপারটা বেশ মজার লাগলো। 

 

একটু ঘুমিয়ে উঠলাম, আরেকপ্রস্থ  কফি ঘুম কাটানোর জন্য, সঙ্গে ব্রেকফাস্টে আর লাঞ্চে কি খাব তা জিজ্ঞেস করা হলো বিকল্পের সাথে - খাঁটি কেরালীয় খাবার এবং অত্যন্ত সুস্বাদু,আণ্টি অর্থাৎ মালিকের মা র হাতে। ৯ বছর হয়ে যাওয়ায় সব খাবারের নাম মনে নেই, তবে ব্রেকফাস্টে ডিমের তরকারি দিয়ে আপ্পাম আর কারিমিন (পমফ্রেট মাছের একটা অনবদ্য খাবার)  এই দুটো মনে আছে। তাদের ব্যবহারের আন্তরিকতা এমনই ছিল যে  কিছুক্ষণের মধ্যে মনে হলো যেন কোন নিকট আত্মীয় বাড়ীতে এসেছি। ছেলেকে ঘরে আর পাওয়া যাচ্ছে না, মিশে গেছে ওদের বাচ্চাদের সঙ্গে, আমি রাজিব অর্থাৎ ম্যানেজার বা তার বাবার সঙ্গে গল্প করছি,আমার গিন্নী রাজীবের গিন্নীর সঙ্গে। 

 

ঘুরে দেখেছি সকালে পম্বা নদীতে নৌকাবিহার করে বিখ্যাত ব্যাকওয়াটারস। আর বিকেলে দেশী নৌকোয় চড়ে আয়ুর্বেদিক মালিশ করতে যাওয়া, পূর্ব অভিজ্ঞতার জেরে রাজিব ও বুঝে গেছিল আমার গিন্নীর জলে বীরত্ব, তাই দুটো প্লাস্টিকের চেয়ারে বসে আমরা গেলাম আর ফিরলাম আর সারা নৌকোবিহারে উপলব্ধি করলাম অনেকেই পাড় থেকে তা উপভোগ করছিল, তাদের কৌতুক ভরা মুখে যা বোঝা যাচ্ছিল। পরের দিন আলেপ্পি শহর আর সমুদ্র সৈকত দর্শন করলাম আর বাকি সময় প্রকৃতির সান্নিধ্যে বিশুদ্ধ ল্যাদ।

 

পরেরদিন সকালে আমরা যখন চলে যাচ্ছি কোচিন এর উদ্দেশ্যে তখন সত্যি মনে হচ্ছিল ছেড়ে চলে যাচ্ছি নিকট আত্মীয়র কাছ থেকে। ছেলের মুখও দেখলাম থমথমে। তবে যাওয়ার আগের দিন সন্ধেবেলা নিজের কৌতুহল আর না চেপে রেখে রাজিবকে জিজ্ঞেস করলাম এই কিছুটা খোলা বাথরুমের পটভূমি। মুচকি হেঁসে বলল ওদের এই হোটেল কয়েকবছর হয়েছে, তার আগে সন্ধেবেলা হাউসবোট ওদের বাড়ির পাশে লাগিয়ে রাখতো, তখন কিছু যাত্রী নেমে ওদের বাথরুম ব্যবহার করার অনুরোধ করতো, সেখান থেকেই ওরা হোটেল করার প্ল্যান করে। এবং এই প্রকৃতিযুক্ত বাথরুমের পরিকল্পনা আসে এই যাত্রীদের মতামতের ভিত্তিতে, বিশেষতঃ বিদেশী পর্যটকদের কাছ থেকে।

 

কিছু ছবিও পোষ্ট করলাম, কেমন লাগলো জানাবেন।

 


 ভোরের প্রথম আলোয় পম্বার জল





এরকম একটি নৌকো এসেছিলো আমাদের মালপত্র নিতে





নৌকাবিহার






 নৌকাবিহার




 নৌকাবিহার





 নৌকাবিহার





ছোট ব্রিজের তলা দিয়ে এলাম





 হাউসবোট, যেখানে থাকিনি আমরা





চলমান ডাবের দোকান





সেগুন কাঠের ধানের গোলা কে হোটেলে রূপান্তরিত





 ধানক্ষেতে সূর্যোদয়





তাজা দোলনচাঁপা ফুল






 তাজা রঙ্গন ফুলের থোকা   

 




গাছে কচি ডাব






ল্যাদ





 আলেপ্পীর মন্দিরে





লাইটহাউস , সমুদ্রসৈকতে






আলেপ্পীর বিচ এ আমরা




বড়দিনের সাজানো চার্চ - বাইরে






চিল্লার পার্টি






বিদায় নেওয়ার আগে 

Download ALEEK PATA Mobile APP

DOWNLOAD ALEEK PATA ANDROID APP

| Aleekpatamagazine.blogspot.com |

  |ALEEK PATA- Your Expressive World |Online Magazine |
| Editor: Swarup Chakraborty | Publisher: Debasree Chakraborty |
| Special Puja Issue, 2020 | October-November 2020 | শারদ সংখ্যা -১৪২৭।
| Fourth Year Third Issue |24 th Edition|
|© All Rights Reserved By The Editor and The Publisher |
|a DISHA-The Dreamer Initiative |
পড়া শেষ? পত্রিকা বন্ধ করুন



Main Menu Bar



অলীকপাতার শারদ সংখ্যা ১৪২৯ প্রকাশিত, পড়তে ক্লিক করুন "Current Issue" ট্যাব টিতে , সবাইকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা

Signature Video



অলীকপাতার সংখ্যা পড়ার জন্য ক্লিক করুন 'Current Issue' Tab এ, পুরাতন সংখ্যা পড়ার জন্য 'লাইব্রেরী' ট্যাব ক্লিক করুন। লেখা পাঠান aleekpata@gmail.com এই ঠিকানায়, অকারণেও প্রশ্ন করতে পারেন responsealeekpata@gmail.com এই ঠিকানায় অথবা আমাদের ফেসবুক গ্রুপে।

অলীক পাতায় লেখা পাঠান