অলীক পাতার অন্যান্য সংখ্যা- পড়তে হলে ক্লিক করুন Library ট্যাব টি



। । "অলীক পাতা শারদ সংখ্যা ১৪৩১ আসছে এই মহালয়াতে। । লেখা পাঠানোর শেষ তারিখ ১৫ ই আগস্ট রাত ১২ টা ।.."বিশদে জানতে ক্লিক করুন " Notice Board ট্যাব টিতে"

Showing posts with label April-August 2019. Show all posts
Showing posts with label April-August 2019. Show all posts

Saturday, August 31, 2019

গল্প-মায়ের ভাবনায়-শম্পা সান্যাল


   মায়ের ভাবনায়

শম্পা সান্যাল





(১)

আবার তুই ফ্রিজে হাত দিয়েছিস?
___কখন!!
___কখন না!  ছিছিছি। আমি জানি একটু কোল্ডড্রিংকস আছে। তীর্থকে এই গরমে দিতে গিয়ে দেখি নেই!
___আঃ,আআআ
___আরে কি হলো কি বৌমা? মারছো কেন?
___বাবা, দিন কে দিন এতো অসভ্য
___আরে ,করেছেটা কি?
___এত্তো পাজি, খেয়ে বাইরে রাখ্।তাহলেও তো চোখে পড়তো। খেয়ে খালি বোতল সাজিয়ে রেখেছে। দেবো একেবারে
___আরে, ছাড়ো ছাড়ো। আচ্ছা, দিদিভাই এরকম আর করো না কেমন!
___যাঃ, বই নিয়ে বোস্।
___এখন!!
___চ্চুপ! কোনো কার্টুন টার্টুন না, সব বন্ধ। অসভ্য মেয়ে। রাগে গজগজ করতে করতে মিত্রা অন্য কাজে ব্যস্ত হয়। শ্বাশুড়ি উপর থেকে নীচে নামতে নামতে শুরু করেন,
___ঠাকুর ঘর থেকে শুনছি, কি করেছে দিদুন?
___হ্যা, হ্যা, পুজোয় তাহলে কেমন মন বোঝাই যাচ্ছে!!
___কথা শুনলে পিত্তি জ্বলে যায়। নীচে কুরুক্ষেত্র হলে আওয়াজটা উপরেই বেশি যায়, বুঝেছেন!! কানে কালা সে আবার
___কানে কালাই হয়, কানা নয়। বলো দিদিভাই!
____হিহিহি,
___আহা, এই তো বকা খেয়ে কাঁদছিলেন, এখন দ্যাখো ঠাকুরদার সাথী হয়ে কেমন হাসি বেরোচ্ছে! এই বকা খেলি কেন?
__মা মেরেছে
___তা কেন শুনি!
___ঐ কোল্ডড্রিংকস
___বৌমার সবেতেই বাড়াবাড়ি। বাড়িতে বাচ্চাকাচ্চা বলতে তো একটিই। সে খাবে না তো
___মা! এভাবে প্রশ্রয় দেবে না।
___কিইই! প্রশ্রয় দিচ্ছি! বাড়ির মেয়ে, বাড়িরটাই খেয়েছে। অন্যের বাড়িতে চুরি করে খেয়েছে নাকি! বেশ করেছে।
___বাঃ, ভালো। এরপর শুনবো মায়ের কোনো শিক্ষাই নেই। যেমন মা তেমনি ছা__ , কিচ্ছু বলবো না আর।
___না বাবা, তোমাদের মেয়ে তোমরাই শাসন করো। আমাদের তো আর
___আঃ, তুমি তিলকে তাল করছো! বৌমা যেটা বলছে
___ওঃ, আমি তাল পাকাচ্ছি! বেশ। বলে যাও।
শ্বশুরমশাই__উফফ্। বয়সের ফারাকটাই আছে। নাতনি- ঠাকুমা সব এক।
___আচ্ছা মা, সবটাতো শুনলে না। নাতনির পক্ষ নিয়ে বলতে শুরু করলে।
__শোনার কি আছে।  কোলড্রিংঙ্কস খেয়েছে, এইতো!
___না। খাক্। কিন্তু লুকিয়ে খাবে কেন। কেউ কি বারণ করবে?
___আশ্চর্য কথা বলোতো বৌমা। বাড়ির মেয়ে
___না। বাড়ির মেয়ে হলেও আমাদের কাউকে বলতে পারতো। বেশ বলেনি, বলেনি। খালি বোতলটা জায়গায় রাখাটা
___বাবা!! মানে তুমি বোঝাবেই যে
___হ্যাঁ, ছোট থেকেই শিখতে শিখতে বড়ো হয়ে ওঠে সবাই। ভালো- মন্দ বোধ ওদের থাকে না তাই সেটা আমাদেরই
___দ্যাখো, তোমার শ্বশুরের স্নান হয়ে গেল বোধহয় ‌
___হ্যাঁ, দেখেছি। দিচ্ছি।
                                          (২)

___খোকা এলো নাকি বৌমা?
___হ্যাঁআআ
অরুণ ঘরে ঢুকেই মেয়ের খোঁজে, মেয়েও বাবা-অন্ত তবে আজ মায়ের বকুনির জেরে পড়া ছেড়ে উঠে আসতে সাহস পায়নি।
___পিপ্ পিপ্ তাড়াতাড়ি! কোথায়!
___আবার! আবার খেলনা কিনে এনেছো?
___আরে বাবা, অনেকদিন পরই তো আনলাম। বলছে ক'দিন ধরে।
___অনেকদিন! পনেরো দিনও হয়নি।
__ধুরর্, ওতো মেলা থেকে কি ছাইছাতা কিনলো
___ছাইছাতা!! ওগুলো কি খুব সস্তা! আর একটা বাচ্চার কাছে খেলনাটাই বড়, দামী কি
___আরে! ছাড়ো না!
___বাবাই
___পড়া হয়ে গেছে?
___না, বাকীইই
___তাহলে তাড়াতাড়ি সেরে ফেলো। তারপর
___তারপর কি বাবাই ?
___উঁহু, এখন বলবোওও নাআআ।
___বলো না, বলো না প্লিজ
___কিচ্ছু দেবে না ওকে। একটা কথাও শোনে না।
___হ্হ্যা, সেকি! কি করেছো আজ আবার!
___এখন যদি কাশি শুনি না! দেবো দু ঘা
___উফফ্, খোকা রে! তোরা তিনজন ছিলি আর বৌমা তো একটাকে নিয়েই অস্থির।
___মা, আমাদের সময় আমরা বড়দের যথেষ্ট ভয় পেতাম। আমরাও তো চার ভাইবোন! কেউ অবাধ্যপনার সাহস দেখায়নি তো।
___বাবারে বাবা, আরে করেছেটা কিইই?
___কি আবার!! ঐ ফ্রিজ থেকে...... শ্বাশুড়ি সুন্দর ব্যাখ্যা দিলেন।
অরুণ___দ্যাখো, এসব দুষ্টুমি সব বাচ্চাই করে একটুআধটু। অতো ধরো না।
মিত্রা বলে __দুষ্টুমি নিয়ে বলছি না। ওর এই বুদ্ধিটা আমার ভালো লাগেনি। খেয়ে খালি বোতলটা ঢুকিয়ে রাখা, উঁহু
___বৌমার মাথায় একটা কিছু ঢুকলেই হলো! এতো বাড়াবাড়ি
___সেই!
অরুণ___ভেবোনা। বকা খাবার ভয়ে করেছে। আমরাও কি কম দুষ্টু ছিলাম! এখন আর ওরা সে সুযোগ কোথায় পায় বলো!
___বাবাই, হয়ে গেছে।
___ বাঃ হয়ে গেছে!
___দ্দাওও। তাহলে এরপর __
___বোঝো! একটা হাতে পেতেই! নতুন খেলনা পাওয়ার আনন্দ নেই!! পর পর খেলনা কিনে দেওয়া! মূল্য বুঝবে! নষ্ট করছে, আবার পেয়ে যাচ্ছে। এই আস্কারা পেতে পেতে দেখো চাহিদা কোথায় যায়!
 মনখারাপ করে মিত্রা ঘর লাগোয়া ছোট্ট ব্যালকনিতে এসে দাঁড়ায়। অসম্ভব। পিউ তো একটা নরম মাটি। ওকে সুন্দর করে গড়ে তুলতে তো পরিবারের সবাইকে চাই। খারাপ কেউ চায়না কিন্তু ধুর্। যা হবে, হবে।
                       ‌‌‌                   (৩)

রুনু এসেছে। বাড়িতে বাচ্চাদের হৈচৈ সরগরম করে রেখেছে।
___চলে এসো সবাই। শিগ্গির শিগ্গির
___কি দিচ্ছো বৌদি ওদের?
___কাস্টার্ড। তোকেও দেবো।
___না গো, আমি একটু চা খাবো। রাতে খাবো কাস্টার্ড। কিন্তু রিম্পি বুম্বা কি খাবে! তুমি ম্যাগি করে দিতে পারতে।
___কি সবসময় ম্যাগি ম্যাগি করিস! আজ খাক্, নাহয় ; কই, কি হলো, চলে এসো। পিউউউ
___এটা কি মানি?
___খাও। বলোতো খেয়ে কেমন হয়েছে!
___আমি খাবোনা
___আমিও। ও মাআআ
___দ্যাখ্ না খেয়ে।
___বৌদিকেতো আমি বললাম। ম্যাগি হলেই ওদের হয়ে যায়।
___রোজ রোজ ওগুলো খাওয়া ভালো নাকি!
___বৌমা, ম্যাগি নেই?
___আছে। এটা তো ওদের জন্যই বানালাম।
___তুমি তাহলে
___সব খাওয়ার অভ্যাস করতে হয়। কোথায় কখন
___আঃ, বৌমা! এই তোমার বড় দোষ! তুমি যেটা বলবে, সেটাই ঠিক। ওদের আর তোমার এই দুদিনে কিছু শেখাতে হবে না। ওরা যা চাইছে
___আঃ মা!! বৌদি তো ঠিকই বলছে। ওদের এতো বায়না!
___আচ্ছা, একটু মুখে দিয়ে দ্যাখো তো!
___খা না দি'ভাই। খুব ভালো রে।
মিত্রা মনে মনে ভাবে,ছোটর থেকে এতো মতামত! খাবে না তো খাবেই না!!
___ঠিক আছে, ম্যাগি বানিয়ে দিচ্ছি।
___এতো অসভ্য হয়েছিস তোরা!
___আঃ, রুনু মামাবাড়িতে এসে ইচ্ছেমতো খাবে না তো কি! একদম বকবি না।
___মা, এই করেই তো ওদের আহ্লাদ বেড়ে যায়। বাড়িতে ঠাম্মা, এখানে
মিত্রা হাসে। তবু ভালো। আমি বললে তো এখনই
___নে, ধর্।
___ওবাবা, চিঁড়ে ভাজলে এখন আবার!
___না রে! কেনা। খা। মা, নাও। আমি বাবাকে দিয়ে আসছি।
___দাদার দেরী হচ্ছে না আজকে!
___হ্যাঁ, বলেই  গেছে আজকে দেরী হবে।
___কেন বৌমা?
___এসে বলছি।
___ঢং দেখলে গা জ্বালা করে।
___ম্মা! কি বলছো! তুমি না!
___থামতো। খালি কটর কটর, আমরা যেন বাচ্চা মানুষ করিনি আর।
___চুপ করবে! বৌদি এসো!
___আসছিই
___তুমি খেলে না!
___না গো।
___ওমা! একটু খাও। আমার থেকে নাও।

                                            (৪)

বছরে একবারই আসে ননদ। নন্দাইও আসে ওদের নিয়ে যেতে। দু'দিন থেকেও যায় সেসময়। দূরে থাকে, তাই ওরা আসলে মা,ভাই আহ্লাদে কি করবে বুঝে উঠতে পারে না। না, বন্ধুর মতো ননদ এলে ভালো লাগে মিত্রারও। অনেক দিন পর আত্মীয়ের বাসায় যাওয়া হয়। ঘোরা, বেড়ানোয় দিনগুলো কেটে যায় দ্রুত।  বাড়িটাও একদম জমজমাট। আকর্ষণ___প্রতিবার ওর কলকাতা চষে বাজার করায় মিত্রারও খুব আগ্রহ। দুজনে দুপুরের পর বেড়িয়ে হাতিবাগান, মানিকতলা থেকে গড়িয়াহাট___দরদাম করে কেনাকাটা! কি জানি কেন, মল গুলোতে কেনাকাটার আনন্দ পায় না এভাবে কেনায় যতোটা পায়।
রুনুও মিত্রার মতোন। আসলে ফেলে আসা দিনগুলোকে খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা। লুকিয়ে সিনেমা দেখা, পুজোর সময় বাবা মায়ের সঙ্গে, কলেজে ওঠার পর নিজের তো বটেই বন্ধুদের সামান্য কিছু কেনার থাকলেও দল বেঁধে নিউ মার্কেট, ময়দান চষে ফেলা আর ইচ্ছে মতো খাওয়া। দেরী হলে মায়ের বকুনি এখনো জোটে। ___তোরা কি রে! সেই কখন বেড়িয়েছিস! বাচ্চাগুলো....
সুবিধা, রুনু মাকে ম্যানেজ করে নেয়। একটু পরে শুরু হয় দেখানো।  কর্তাদের টিপ্পনি-সহ মজা, বাচ্চাদের আনন্দ। কিন্তু মিত্রা গন্ডগোল করে আবারো।
___এই তোরা কি রে! কতোদিন পর একসঙ্গে ভাইবোনেরা খেলবি,গল্প করবি তা না, টিভিতে কার্টুন দেখছিস সব। বন্ধ করতে উদ্যত হতেই ___না মানি, প্লিজ মানি
___আরে বৌমা, ওরা চুপচাপ বসে দেখছে, তুমি কেন ওদের বিরক্ত করছো বলোতো! দেখুক না।
___কার্টুন তো বাড়িতেও দেখে মা। পিউ একা বসে দেখে। এখন সবাই মিলে তো
___তোমার শাসনের আর শেষ নেই।
 রুনুও বলে__আরে ওদের মতো থাকতে দাও না বাবা। এ'কটাদিন স্কুলের তাড়া, হোমওয়ার্ক ওসব থেকে ওদেরও ছুটি, আমাদেরও। বাব্বা! কবে যে সব বড়ো হবে!
____বৌমাকে তো বলি, বাচ্চাদের সাথে অতো কটরকটর করতে নেই। আরো অবাধ্য হয়ে যায় তাতে।
___কটরকটর কি করি! ভালো-মন্দ বোধ তো আমরাই তৈরি করে দেবো নাকি! সহবৎ কিছু দেখে শিখবে, কিছু শেখাতে হবে। আমি কেবল সেগুলোই
___না, মা আমি তোমাকে বোঝাতে পারবো না। ছাড়ো!
____দ্যাখো বৌদি মা কিন্তু ঠিক কথাই বলছেন
হুঁঃ, মা- মেয়ে এক হয়েছেন! ঐতো দেখছি তোমার ছেলে মেয়েদের! এদের বলে কোনো লাভ নেই। আমার একটা মাত্র সন্তান। ওকে আমি মনের মতো করে তৈরি করবো। তোমরা যা ভাবো ভাবো গে যাও।    
                                        (৫)

সত্যি, দেখতে দেখতে কবে যে ছেলে- মেয়েরা সব  বড়ো হয়ে গেল!!  রুনু-বিপ্লব এসেছে অনেকদিন পর। নন্দাই-এর রিটায়ার্ড লাইভ। স্বামী-স্ত্রী এসেছে। ছেলে বিদেশে। মেয়েও চাকরি করে, দিল্লীতে। একটি পাঞ্জাবী ছেলের সাথে থাকে। মিত্রা অবাক হয়ে যায় দেখে। কতো সহজে বলছে!  সামনের বছর বিয়ে। তারই গল্প চলছে। ফোনে কথা হয়,  এতোসব বলেনি। ইদানিং আর আগের মতোন আসতে পারতো না। অনেক দিন পর একসাথে। হাসি ঠাট্টা সবই চলছে, কেবল কেমন যেন মনমরা আবহাওয়া। যে ছেলে মেয়ে নিয়ে সারাক্ষণ ব্যস্ততা,সেটা আর নেই। স্বাভাবিক কিন্তু,  হ্যাঁ পিউ- প্রসঙ্গ আজ বড়ো স্পর্শকাতর এই বাড়িতে। আগেও ছিল। আজো।
___দাদা, আপনার আর কতোদিন?
___ মেরে এনেছি। আর আট-ন মাস। ভালো লাগে না আর।
___আমারো তাই মনে হতো। ভাবতাম, রিটায়ার করে ঘুরে বেড়াবো কিন্তু আপনার বোনের পায়ের যা অবস্থা  তাতে
__হুঁ, আমাদেরো তাই। পিউ বলে যেতে। রিটায়ার করে যাবো বলেছি। দ্যাখা যাক্।
___বৌদি!  আর রাগ করে থেকোনা। ওতো ভালো আছে তাই না!
___হ্যাঁ, আছে বোধহয়।
___রুনু, তোর বৌদিকে বুঝিয়ে লাভ নেই রে। মা পর্যন্ত বলেছেন মেনে নিতে অথচ
___আমার কষ্টটা তোমরা বোঝো না।
____আচ্ছা!!  বলুন তো বৌদি, আপনার কষ্টটা কি??
___ও আর বলে কি হবে!! পারলাম কি আটকাতে!
মনের মতো করে একটি মাত্র সন্তানকে মানুষ করে তুলতে কতো যে শখ আহ্লাদ ছাড়তে হয়েছে। সময়ের অভাব, পয়সায় অভাব তার উপরে বাবা মা ছিলেন তাদের দেখাশোনা, আত্মীয় কুটুম্বিতা সবই তো সামলেছে। পিউকে নিয়ে সবাই গর্ব করে। ওর ব্যবহারের প্রশংসা শুনে সবাই খুশি হয়। এটার জন্য যে মিত্রাকে যে কতো কথা শুনতে হয়েছে!!  তবু তৃপ্তি, পেরেছে। মেয়েকে মানুষ করতে পেরেছে। কেবল পড়াশোনায় ভালো না, দরকার সত্যিকারের ভালো মানসিকতা, সবাইকে নিয়ে চলার শিক্ষা। পরীক্ষা দিতে যাওয়ার সময় কাজে সাহায্য করার জন্য যিনি ছিলেন, মিত্রা ওঁদের প্রণাম করার সময় বলতো পিসিকে করো। মিনু লজ্জা পেয়ে না, না বলতো। পরে কিন্তু বলতো না কারণ এই সম্মান ওর ভালো লাগতো। সম্মান দিলে সম্মান পাওয়া যায়! কখনো বন্ধুদের নামে অভিযোগ করলে মিত্রা আগে পিউকে বকতো।__ তুমি কি করেছিলে বলো।
শ্বাশুড়ি যথারীতি বলতেন, বৌমার চোখের বালি মেয়েটা। বকতে পারলে আর কিছু চায়না! ততোদিনে মিত্রা বুঝে গেছিল। শ্বাশুড়ির কথা কানে নিতো না। আসলের চেয়ে সুদের স্বাদ মিষ্টি রে___মা বলতেন। শ্বাশুড়ির কথা বললে শুনেছে এই প্রবাদ-বাক্য।
               কথা শুনেছে নিজের মায়ের থেকেই। খেয়ে প্লেট সিঙ্কে রেখে আসা বা সবাই চা খেয়েছেন, কাপ-প্লেট গুলো__ পিউ যাও রান্নাঘরে রেখে এসো কিংবা....
 মা__আঃ, ফুলি তুই ঐটুকুন মেয়েকে কি পেয়েছিস বলতো! অবাক হয়ে মিত্রা বলেছে ___আমাকে তো ওর থেকেও ছোট বয়সে কাজ করিয়েছো মা!
___সে তখন তোরা সব পিঠোপিঠি, পেরে উঠতাম না তাই! আর দ্যাখ্ মেয়ে জনম তো! সারাজীবন তো ঐ করতেই হবে।
___না মা, আজ আর ছেলে মেয়ের ফারাক করো না। ঘরের কিছু জরুরী কাজ সেকারণেই সব্বার শেখা উচিৎ। ছোট থেকে স্বাবলম্বী হওয়া প্রয়োজন কি ছেলে কি মেয়ে সবার।
বড় বৌদি ওর কথায় সায় দিতো কিন্তু এও শুনেছে___ফুলদি পিউকে অলরাউন্ডার বানাবে রে!
অলরাউন্ডার!!    
   সেই মেয়ে এক মুসলিম ছেলের সাথে নিজের ভাগ্য জড়িয়ে নিলো! কতো স্বপ্ন সব ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেল।  আন্দাজ করতে পারছিল, কিন্তু যেদিন শুনলো শেহনাজের সাথে সম্পর্ক, নিতে পারেনি। কান্নাকাটি, অশান্তি। মেয়ে তার মতেই জেদ ধরে রাখলো। অরুণ, মা এরাও সাথ দিলো দেখে আশ্চর্য হয়ে গেছিল মিত্রা। সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবার, ছেলেও সবদিক দিয়ে ভালো কিন্তু!!  দুই বাড়ির উপস্থিতিতে রেজেস্ট্রি ম্যারেজ হলো।
___বৌদি, দ্যাখো আপত্তি ওঁরাও করতে পারতেন তবে করেননি তো!
___ওরা কেন আপত্তি করতে যাবে!! পিউর মতো মেয়ে!!
___এটা ভুল বললেন বৌদি। নন্দাই বলেন।
___কেন! ভুল কিসে!
___অন্য ধর্মের মেয়ে ওঁরাই বা নেবেন কেন? আমাদের মতোন ওঁদেরও ছুৎমার্গ আছে। ওঁরাই বা অন্য ধর্মের মেয়েকে.....
এবার অরুণ মুখ খোলে___ বিপ্লব, আলাপ করে দেখো, অত্যন্ত শিক্ষিত ভদ্র পরিবার। মিত্রা তো এতোদিনে ওঁদের বাড়িও যায়নি। শেহনাজ তো সব জেনেও মিত্রার সঙ্গে কি সুন্দর ব্যবহার করে। তাও যে কেন!!
____বৌদি, অনেক হয়েছে। দাদা রিটায়ার করলে ওদের কাছে যাও। আর মান করে থেকো না। দাদা, তুই এরমধ্যে পাশপোর্ট বানিয়ে ফেল্।
অরুণ____ সহজ ভাবে নিলে পিউ এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে করতোও না। ওতো তোর মেয়ের থেকে ছোট অথচ মা- মেয়ের জেদাজেদিতে বিয়ে করে চলে গেল। আমরা তো ওর বিয়ে আরো একটু পরেই দিতাম!
____আমরা তো আসতেই পারলাম না। এমন সময়
মিত্রা বলে___হ্হ্যা!! আমরাই জানলাম দুদিন আগে তো তোমরা !!
মিত্রার চোখ দিয়ে টপটপ করে জল পড়ে। কতোদিন মেয়েটার সাথে কথা বলে না। দেখেনা কতোদিন! খুব ইচ্ছে করে , খুব কিন্তু!!মেয়ে বাবার সঙ্গে কথা বলে।  অভিমানে মায়ের থেকে সরে আছে। মিত্রার ধারা___অভিমানী। দেড় বছর হতে চললো, দুজনে কথা বলেনা। শেহনাজ কিন্তু মাঝে মধ্যে ওর সাথে কথা বলে। তবে, পিউর সাথে কথা বলুন, একদিনও বলেনি। মিত্রা বলে __রুনু, জানিস ওরা যে বিদেশ যাচ্ছে, তাও কি আমি জানতাম!! তোর দাদা কিন্তু জানতো, অথচ ......
এবার অরুণ হাসে।___ শোনো তাহলে!  পিউ আমাকে অনেক আগেই বলেছিল। সেইমতো ব্যবস্থা সব নিজেই উদ্যোগ নিয়ে করছিল। শেহনাজও। দুজনেই উচ্চশিক্ষার জন্য আবেদন নিবেদন যা করতে হয় করছিল। তখন মিত্রা পিউকে ছাড়বে না ভেবেই বাবা-মেয়ে শলা করে মিত্রার কাছে গোপন করে গেছিলাম। বিয়েও ওরা পরেই করতো।  তারপর তো! যাক্ যা হয়ে গেছে
মিত্রা ____ক্কিইই!!
রুনু____তাই নাকি দাদা!!! বোঝো কান্ড! না বৌদি, আর রাগ করোনা। অনেক হয়েছে। একটা মাত্র মেয়ে!!
বহুদিন পর ভিডিও কলিং-এ পিসি ভাইঝি... এবং অবশেষে মা- মেয়ে মুখোমুখি। জলের ধারায় মুছে গেল সব রাগ, সব অভিমান।

                                         (৬)

               বাবা-মেয়েতে বড্ড ভাব।  এখনো এটা করিস অথবা করিসনা বলা যায়নি মিত্রার তবে মেয়ে এখন আর সবসময় চুপ করে শোনে না বরং শাসন করে ওদেরকেই। প্রায়ই পিউ বলে___মা, তোমার মতো শাসন কেউ করেনা। আমাকে উঠতে বসতে, হ্যাঁ, এখন একথাগুলো শেহনাজের  সামনেই হাসতে হাসতে বলে, অন্যদের সামনেও বলে। মিত্রা মুখে হাসিকে টেনে আনে যদিও, ভিতরটা গুমরে মরে।
শাসনটাই দেখলি রে!!
ভিতটা তৈরি করে দিয়েছিলাম বলেই না সহজে অন্য ধারায় অবলীলায় মিশে যেতে পেরেছিস!!
হার- জিৎ ঠিক কার যে হলো!!
আপনারা কি জানেন????



 Back To Index















আষাঢ়ে গপ্পো-লাল আলো -সান্ত্বনা দাস

লাল আলো 

 সান্ত্বনা দাস




         সেই ঘরটায় ওরা চারজন এখনও বসে থাকে। সারাদিনে নিজেদের কাজ সেরে সন্ধ্যাবেলা ওরা চলে আসে এই ঘরটায়। আগেও আসত, তখন ওরা ছিল পাঁচজন বিমল, অতীন, মাধব, শুভ আর সোমনাথ। পাহাড়ের কোল ঘেঁষে ছোট একটা গ্রাম ।একটু দূরেই শহর। একটু পর পর ট্রেন যায়। গ্রামের নাম ফলবতী। পাশ দিয়ে ছুটে চলেছে ঝির ঝিরে নদী তির তির করে।ফুলে ফলে গ্রামের শ্রী আছে। স্কুল আছে। পাঁচ বন্ধু স্কুলে যায়, পড়াশোনার পর শুরু ওদের ডানপিটেমি। ছুটির দিন গুলতি মেরে আম পাড়া, পাখি ধরার খাঁচা যত রসদ জড়  ছিল ঐ পোড়ো ঘরটায়। গ্রামের পাশে জঙ্গলের মধ্যে  ঘর। বড়রা  বলত 'যাসনা ওখানে, ভূত প্রেত দত্যি দানো আছে ,সাঁঝবেলায় সব জড় হয় ওখানে।' ডানপিটেগুলো চিৎকার করে বলত 'তোমাকেও নিয়ে যাব দাদু '।কার বাড়িতে মড়া পোড়ানো, কোথায় রোগীকে হাসপাতালে দেওয়া সোমনাথ বিমলের দল আগে হাজির। অতীনের মায়ের খুব জ্বর সেবার, সারা রাত অতীন আর মাধব বসে বসে মায়ের মাথায় জলপটি দিল। তিন্নি বোনের বিয়েতে পাঁচজনে মিলে খাটাখাটনি করে তুলে দিল বিয়ে। তিন্নির মা নেই, অসুবিধে কাউকে সেরকম বুঝতে দেয় নি। 


         সেবার পুজোয় অন্নদা মাসীকে সবাই টিফিনের পয়সা জমিয়ে কাপড় কিনে দিল। রাস্তার পাশে তেঁতুল বাগান  লোকে এড়িয়ে যায় ঐ রাস্তা বলে কে যেন বসে থাকে গাছে ।ওরা যায় তেঁতুল পাড়তে। এরকম করে  ওরা কৈশোর পার হতে চলল। 
স্কুল শেষ করে শহরে কলেজে ভর্তি হল। ট্রেনে করে যায় ট্রেনেই ফেরে, একসঙ্গে। একদিন হঠাৎ ট্রেন থেকে সবাই নেমে পার হয়েছে শুধু সোমনাথ পার হতে পারল না। লাল সিগন্যাল হঠাৎ নিবে গিয়েছিল, হয়ত যান্ত্রিক গোলযোগ । বিপরীত দিক থেকে এসে পড়ল আর একটা ট্রেন। সোমনাথ আর উঠল না। চার বন্ধু ঝাঁপিয়ে পড়ল ওর দেহটার ওপর,বলল 'তুই আমাদের ছেড়ে যাস না সোমনাথ '। সোমনাথের হাতটা একটু উঠল, হয়ত ওদের আশ্বস্ত করতে চাইল তারপর স্থির হয়ে গেল। 
              
        গ্রামের লোকজন চোখের জলে বিদায় জানাল ওকে। তার পর থেকে ঐ স্টেশনে আর ট্রেন অ্যাকসিডেন্ট হয় নি। একটা লাল আলো যথা সময় স্টেশনে সিগন্যাল দেয় ।সবাই দেখে দূর থেকে। না কেউ কাছে যায় না। সন্ধ্যা বেলা শেষ ট্রেনে ফেরের  চার বন্ধু অতীন বিমল শুভ আর মাধব। লাল আলোটা সিগন্যাল দেয়, ট্রেন থামে। চার বন্ধু এগিয়ে চলে ঐ পোড়ো ঘরটার দিকে, সঙ্গে চলে সেই লাল আলো, কখনও চারজনের মধ্যিখানে কখনও শেষে। ওরা কোনো দিকে  তাকায় না, নিজেদের মধ্যে শুধু কথা বলে। ঘরে ঢুকে যায় সবাই। বেশ কিছুক্ষণ পরে ওরা বার হয়। লাল আলোটা আর থাকে না। এখন গ্রামের সবাই আর বলে না 'ওখানে যাস না ভূত আছে, বলে ওদিকে যাস না, ওখানে আমাদের সোমনাথ আছে '।

 Back To Index






















কবিতা-রাজনীতি - পল্লব সরকার

রাজনীতি 

   পল্লব সরকার 




রাজনীতি রাতারাতি 
   বদলে দেয় দিন, 
আগাড়ে-ভাগাড়ে জীবন যার
    নিমেষেই রঙিন ।
ক্ষমতার বিন্দু ইন্দু সম
    গগনে বিরাজ করে,
অমাবস্যার কালো তারও যে ছিল 
ভুলে যায় চিরতরে ।
কলন্ক যত  বেড়ে যায় তত
   ঔজ্জ্বল্যের মহিমা ,
জনগন মন মলিন চেতন
শতবার করে ক্ষমা।

 Back To Index





















রম্যরচনা-মলয়েন্দু মজুমদার-ভালবাসার কাঁঠাল প্রীতি


ভালবাসার কাঁঠাল প্রীতি

মলয়েন্দু মজুমদার



গ্রামের বাড়ি থেকে পালিয়ে ননী বিয়ে করে পাড়ারই মেয়ে শিখাকে। বাড়ির লোক যাতে খুঁজে না পায়, তাই স্টাফ কোয়ার্টারের সেলাই বাড়িতে এক কামরার একটি ঘর ভাড়া নেয় ননী। শিখার তিনকূলে কেউ নেই। মা-বাপ মরা মেয়েটি কোন্‌ ছোটবেলায় পিসির হাত ধরে ওপার বাংলা থেকে এসে হরিণঘাটায় পিসির এক ভাই-এর বাড়িতে ওঠে। সেই পিসিও আজ আর নেই। পিসি গত হয়েছে তাও বছর তিনেক হল।  দূর সম্পর্কের এই মামার বাড়িতে সে থাকছে তাও আজ প্রায় ষোল বছর, বিনিময়ে সারাদিন গাধার খাটুনি খাটতে হয় আর উপরি পাওনা মামির আলঙ্কারিক গঞ্জনাশিখা পালিয়ে যাওয়ায় এই জগৎ সংসারে কারুর কিছু যায় আসে না শুধুমাত্র মামার একটি কাজের লোকের প্রয়োজন হবে, এই যা ! পাড়ার ছেলে ননীর খুব মায়া হয় শিখাকে দেখলে। একদিন সন্ধ্যে বেলায় শিখা রাস্তার টিউবয়েলে জল আনতে গেছে। আশেপাশে কেউ নেই দেখে, সাহস করে নিজের মনের কথা শিখাকে বলে ননীকাঠবেকার ননীর প্রস্তাব শিখার মন্দ লাগে না। এই প্রথম কেউ তাঁকে ভালবেসে কথা বললে। এভাবেই শুরু, অতঃপর পালিয়ে বিয়ে করে উড়ে হাবড়ার ভাড়া করা বাসায়।

এতদিনে শিখা নিজের বলে কাউকে পেল। অসীম আনন্দে ডুবে আছে সে। ননী রোজগারপত্র করে কিনা, করলে কি কাজ করে সে এসব কিছুই জানেনা। অনেক সকালে বেড়িয়ে যায় ননী, ঘরে ফেরে সন্ধ্যেবেলা। নিয়ে আসে কখনো সিঙ্গাড়া ,মুড়ি কখনো বা চপ, মুড়ি -এভাবেই চলছিল। জ্যৈষ্ঠ মাস শেষ, চারিদিকে আম-কাঁঠালের গন্ধ। শিখার খুব হরিণঘাটার মামা বাড়ির কথা মনে পড়ছে। বাড়ির সামনের কাঁঠাল গাছটার কাঁঠালগুলো কি মিষ্টি ! মনে পড়তেই শিখার চোখে জল এসে গেল। রাতে শুয়ে শুয়ে অনেক কষ্টে ননীকে তার কাঁঠাল প্রীতির কথা জানায় শিখা। তারপর প্রায় দিন দুয়েক ননী অনেক রাত ক’রে ঘরে ফেরে। জিজ্ঞাসা করলে বলে কাজ ছিল। এভাবেই চলছিল রথের মেলা পর্যন্ত।



রাত প্রায় তখন তিনটে, চিরঞ্জীব প্রকৃতির ডাকে সারা দিতে বাইরে যাবে। জানলা খুলে একটু বাইরেটা বোঝার চেষ্টা করছে, তারপর বাইরের আলো জ্বালাবেচতুর্দিক নিঃশব্দ, রাস্তার লাইটের আলোয় সে দেখতে পায়, কিছু একটা বাড়ির দিকে ঢুকছে আবার এদিক ওদিক দেখছে। সতর্ক হয়ে ওঠে চিরু মানে চিরঞ্জীব। ফিসফিস করে দাদা, সঞ্জীবকে ঘুম থেকে ডেকে ওঠায়চিরুদের বাড়িটা রাস্তা থেকে অনেকটা ভিতরে কিন্তু ওদের পাশের বাড়ি কিংবা সামনের বাড়ি গুলো রাস্তার যথেষ্ট কাছে বাড়ীর দুই পাশে ও পিছনে অনেক বড় বড় গাছপালা, সামনে রাস্তার দিকেও বেশ কয়েকটি গাছপালা আছে।  একারনেই বেশী রাতে চিরুর একটু ভয় – ভয় করে। রাস্তার লাইটের আলোয় চিরুরা দেখতে পায় একটি মানুষের ছায়া কাঁঠাল গাছের নিচে দাঁড়িয়ে। কেমন যেন ভয় করতে লাগল তাঁদের। চিরুর আবার ভীষন ভূতের ভয়। সে দাঁত চেপে বলে ওঠে, ভূ—ত! ইশারায় কথা বলতে নিষেধ করে সঞ্জীব। সঞ্জীব তুলনায় একটু সাহসী। এইদিকে চিরু আর বাইরে না গিয়ে থাকতে পারছে না, প্রবল চাপ সামলাতে পারছে না সে। ঘরেই না হয়ে যায় শেষ পর্যন্ত।  হঠাৎ সঞ্জীব জানলাটা বন্ধ করে দেয় এবং বলে ওঠে “দাঁড়া কাঁঠাল চুরি করবি, এত সাহস!”   আমার সব কটা কাঁঠাল গুনে রাখা আছে। চোর! বলে ওঠে চিরু। চোর তো বটেই, গভীর রাতে একা অন্যের বাড়িতে নিশ্চই সাধু আসবে না !  তবে আপাতত একজনকে দেখতে পাচ্ছি, হয়ত দলবল আড়াল থেকে নজর করছে। চিরু আর সঞ্জীব বাড়ীর পিছনের দরজা দিয়ে বেড়িয়ে আসে। দুজনের হাতেই কিছু আছে, যদি ওরা দলে ভারী হয় তবে নিজেদেরকে বাঁচাতে হবে তো নাকি ! দাদাকে পাহারায় রেখে এক নিঃশ্বাসে জরুরি কাজটি সেরে নেয় চিরু। তারপর অতি সন্তর্পণে দুজনে দুদিক থেকে গিয়ে কাঁঠালসহ চোরটিকে জাপটে ধরে। চিরুর হাতে ছিল দরজার খিল, সঞ্জীব চোরটিকে জাপটে ধ’রে চিৎকার করতে থাকে। হাতের খিল দিয়ে চিরু চোর বাবাজির পিঠে সজোরে আঘাত করে। “বাবাগো! “ বলে আর্তনাদ করে ওঠে চোরটি। আর্তনাদ ও চিৎকারে পাড়া প্রতিবেশীদের ঘুম ভেঙে যায়। সামনের বোসদের বাড়ি থেকে অশোক, খোকন, তপনরা তিন ভাই ঘুমচোখে দৌড়ে বেড়িয়ে আসে। পাশের বাড়ির চিরুর জ্যাঠতুত ভাইরা বেড়িয়ে আসে। ঐসময়টা সবার ঘুমই ভেঙে যায় চোরের আর্তনাদ ও চিরুর চিৎকারে। সুযোগ পেয়ে সব্বাই হাতের সুখ করে নেয়। এমতাবস্থায়, বোসদের বড় ভাই, অশোক, সবাইকে নিরস্ত করতে ময়দানে অবতীর্ণ হয়।



একটা ছেলে আজকের দিনে কাঁঠাল চুরি করবে, সেটা ভাবা যায় ! ততক্ষণে সূর্যদেব প্রায় দর্শন দিতে শুরু করবেন পাড়ার লোকের সংখ্যাও বেড়ে গেছে। কোথাকার ছেলে?  কী ভাবে ধরা পড়লো ? অফুরান প্রশ্ন – উত্তর পর্ব চলছে।  ছেলেটির সাথে কথা বলে জানা যায়, তাঁর সদ্য বিবাহিতা বউ খুব সাধ করে কাঁঠাল খেতে চেয়েছে।  কিন্তু কাঁঠাল কিনতে অসমর্থ ননীর চুরি করা ব্যতীত উপায় ছিল না। বেশ কয়েকদিন ঘুরে দেখার পর এই গাছের কাঁঠাল গুলোই তাঁর মনে হয়েছে যে তুলনামূলক সহজে চুরি করা যেতে পারে।  “দ্যাখ, ছেলেটা অনেক পিটুনি খেয়েছে শুধুমাত্র একটা কাঁঠালের জন্য। ওর নববিবাহিতা বউটিও হয়ত সারারাত অপেক্ষায় আছে। ওকে ছেড়ে দেওয়াই উচিৎ হবে। “ ব’লে ওঠে অশোক। চিরুদের বুঝিয়ে শেষ পর্যন্ত ঐ কাঁঠালটিই ননীর হাতে তুলে দেওয়া হয়। ননীকে প্রতিজ্ঞা করানো হয়, জীবনে আর কক্ষনো সে চুরি করবে না।



 Back To Index





























Main Menu Bar



অলীকপাতার শারদ সংখ্যা ১৪২৯ প্রকাশিত, পড়তে ক্লিক করুন "Current Issue" ট্যাব টিতে , সবাইকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা

Signature Video



অলীকপাতার সংখ্যা পড়ার জন্য ক্লিক করুন 'Current Issue' Tab এ, পুরাতন সংখ্যা পড়ার জন্য 'লাইব্রেরী' ট্যাব ক্লিক করুন। লেখা পাঠান aleekpata@gmail.com এই ঠিকানায়, অকারণেও প্রশ্ন করতে পারেন responsealeekpata@gmail.com এই ঠিকানায় অথবা আমাদের ফেসবুক গ্রুপে।

অলীক পাতায় লেখা পাঠান