অলীক পাতার অন্যান্য সংখ্যা- পড়তে হলে ক্লিক করুন Library ট্যাব টি



। । "অলীক পাতা শারদ সংখ্যা ১৪৩১ আসছে এই মহালয়াতে। । লেখা পাঠানোর শেষ তারিখ ১৫ ই আগস্ট রাত ১২ টা ।.."বিশদে জানতে ক্লিক করুন " Notice Board ট্যাব টিতে"

Showing posts with label Bengali New Year 2022. Show all posts
Showing posts with label Bengali New Year 2022. Show all posts

Friday, May 6, 2022

গল্প- বৈঠকি- হুর - অলভ্য ঘোষ

 গল্প- বৈঠকি

হুর

অলভ্য ঘোষ

চিত্র ঋণ -গুগল ইমেজ গ্যালারী

 

কয়েক হাজার লোক জড়ো হয়েছে; সাদা সাদা টুপি পরা মাথা গুলো অনেক ওপর থেকে পাখির চোখে দেখলে মনে হবে জান্নাতে দুধের নহরলম্বা লম্বা বাঁশে বাঁধা নানা রঙের জরির ঝিল্লি দিয়ে সাজানো পতাকা গুলো যেন জান্নাতে ডালিমের গাছ।

 কিন্তু হুর কোথায়?সাদা ধবধবে ফর্সা;গোলাপের পাপড়ির মত গায়ের রং।

 তামাম মুসলমান জান্নাতে গিয়ে এই হুর পাবার জন্য পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে?

 এসব প্রশ্ন যারা করে নাস্তিক না হয় বিধর্মী ইসলাম বিরোধী। জাহান্নামেও এদের ঠাঁই হবে না। দোযখের আগুনে পুড়ে মরবে।

 মাহফিলে বেহেস্তে যেতে উপচে পড়া ভিড়ে একজনও জেনানা নেই। তারা বাইরে বের হবে কোন দুঃখে!তাদের বাইরে বেরোনো গুনা পরওয়ারদিগারের জিকিরে নামাজ, রোজা রাখুক; মশগুল থাকুক খানা পাকাতে ছেলে মেয়ে মানুষ করতে। তাতেই তাদের জান্নাত নসিব হবে।

 -জান্নাত দেখার পরই সঠিকভাবে বোঝা যাবে যে জান্নাত কত বিশাল এবং তার নেয়ামত কত অসংখ্য। আল্লাহ্‌ তা'আলা বলেন, “তুমি যখন দেখবে তখন দেখতে পাবে ভোগ বিলাসের নানান সামগ্রী আর এক বিশাল রাজ্য।” (সূরাহ আদ্‌-দাহ্‌রঃ ২০)”জান্নাতে একটি বৃক্ষের ছায়া এত লম্বা হবে যে কোন অশ্বারোহী ঐ ছায়ায় শত বছর পর্যন্ত চলতে পারবে। দুনিয়ার চেয়ে দশগুণ বড় জান্নাত! জান্নাতের অট্টালিকাসমূহ সোনা-রূপার ইট দিয়ে নির্মিত। তার গাঁথুনি হল সুগন্ধযুক্ত মেশক আম্বর। তার কংকর মোতি ও ইয়াকুতের। তার মাটি জাফরানের। যে ব্যক্তি সেখানে প্রবেশ করবে সে জীবন উপভোগ করবে, তার কোন কষ্ট হবে না। চিরকাল জীবিত থাকবে, মৃত্যু হবে না। জান্নাতিদের কাপড় কখনো পুরানো হবে না। আর তাদের যৌবন কখনো বিনষ্ট হবে না”। (তিরমিজী- কিতাবুল জান্নাহ) জান্নাতিদের প্রত্যেকের অট্টালিকায় তাঁবু থাকবে যেখানে হুরেরা অবস্থান করবে। আল্লাহ্‌ তা'আলা বলেন,”তাঁবুতে সুরক্ষিত থাকবে সুলোচনা সুন্দরীরা।” (আর রাহমান - ৭২)জান্নাতের প্রত্যেক জান্নাতির পছন্দমত সর্ব প্রকার ফলমূল মজুদ থাকবে। জান্নাতের ফলের ছড়া অনেক বড় হবে। জান্নাতের নদীসমূহের পানির রং ও স্বাদ সর্বদা একই রকমের থাকবে। কুরআনুল কারীমে আল্লাহ্‌ তা'আলা বলেন,মুত্তাক্বীদেরকে যে জান্নাতের ও'য়াদা দেয়া হয়েছে তার উপমা হল: তাতে আছে নির্মল পানির ঝর্ণা, আর আছে দুধের নদী যার স্বাদ অপরিবর্তনীয়, আছে পানকারীদের জন্য সুস্বাদু মদের নদী আর পরিশোধিত মধুর নদী। (সূরাহ মুহাম্মদঃ ১৫)

 -আউরতের জন্য বাহাত্তর জন হুর সুরার নদী এসব কি কাজে লাগবে?

 -যে চার আয়াতে হুর শব্দের উল্লেখ আছেহুর দ্বারা পরুষ বা স্ত্রী কোনটাই নির্দিষ্ট করে বোঝানো হয় না। সুতরাং পুরুষদের জন্য মহিলা হুর এবং মহিলাদের জন্য পুরুষ হুর থাকবে।

 বড় হাঁড়িতে বসেছে বিরিয়ানি সকলের জন্য। ম ম করছে গন্ধ।আর যিনি এই ওয়াজ মাহফিলের মূল আকর্ষণ হয়ে  সব প্রশ্নের উত্তর করছেন। সেই হুজুরের  জন্য আছে একটা আস্ত মুরগির; মুরগি মুসল্লম।

 -বোলো মারহাবা বোলো মারহাবা ।

 শেরওয়ানি, সুফিয়ানী দাড়ি, মাথায় সোনালি কাজ করা টুপি; মঞ্চ আলোকিত করে বসে আছে বারেলি জামা মসজিদের ইমাম হুজুর মুফতি খুরশিদ আলম সাহাব।এ ধরনের মাহফিল খানাপিনা ওয়াজের জন্য যারা মোটা অংকের টাকা নজরানা দেয় তাদের জন্য শোকরানা আদায় করে আল্লাহর কাছে দোয়া চায় ইমাম সাহাব।তাদের কামাই হালাল না হারাম একবারও ভেবে দেখে না!

 -কিছুই সঙ্গে যাবে না।সঙ্গে যাবে কি ইমান।কবরে আমাদের শরীর থেকে মাংস খসে খসে পড়বে।এত যত্নের শরীরটা পচে গলে যাবে পোকায় খাবে কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না দান-খয়রাত করেন না হলে সব মাটি হবে।

 এক বুড়ো ইমাম সাহেবের কানে কানে ফিসফিস করে মনে করিয়ে দিল ফতোয়ার কথাটা।যার জন্য এত আয়োজন তা ভুললে চলে।কোনও ওষুধ নেই, কোন নামাজ নেই,তার জন্য কোন কবর নেই;তার জন্য কেবল অপেক্ষা করে আছে ফতোয়া।

 কে সে? নূর না হুর?পুরুষের বেহেশতের পরী হুর সে নয়;নূর ও সে নয় তবে ফতোয়া  হত না। তবে কি হুর নয় Whore? বেশ্যা...রেন্ডি...?

 তিন তালাকের শিকার ও সমালোচক নিদা খান; বছর তিনেক আগে নিদার সঙ্গে উস্মান রেজা খানের  বিয়ে হয়। মাত্র এক বছরের মাথায় ঘর ভাঙে। তিনবার তালাক উচ্চারণ করতেই সব সম্পর্ক শেষ করেন উস্মান। ধর্মপ্রাণ বিশিষ্ট পরিবারের উস্মান নিদা কে এমন মারাত্মকভাবে মারধর করতো যে একদিন তার গর্ভস্রাব ঘটেছিল। নষ্ট হয়ে গেছিল পেটের সন্তানটি।

 -পশুর পেটে বাচ্চা থাকলে ওই অবস্থায় ঐ পশুও কুরবানি করা জায়েজ কি?

 -পেটে বাচ্চা থাকা অবস্থায় পশু কুরবানি করায় শরী ‘আতে কোন বাধা নেই। এছাড়া উক্ত পশুর গোশত খাওয়া যাবে। এমনকি রুচি হ’লে পেটের বাচ্চাও খেতে পারে। আবু সাঈদ খুদরী বলেন, আমি বললাম হে আল্লাহর রাসূল! আমরা উটনী, গাভী ও ছাগী যবেহ করি এবং কখনো কখনো আমরা তার পেটে বাচ্চা পাই। আমরা ঐ বাচ্চা ফেলে দিব, না খাব? রাসূল (ছাঃ) বললেন, ‘তোমাদের ইচ্ছা হ’লে খাও। কারণ বাচ্চার মাকে যবেহ করা বাচ্চাকে যবেহ করার শামিল’ (আবুদাউদ হা/২৮২৮; মিশকাত হা/৪০৯১-৯২)।

 কুরবানির মূল শিক্ষা হল আত্মত্যাগ। এ কোন কুরবানি এ কোন আত্মত্যাগ। বনের পশুর সাথে মনের পশুকে কোরবানি করাই হচ্ছে এর শিক্ষা। আমাদের মনে পশুত্ব-সুলভ যে স্বভাবগুলো রয়েছে তা পুষে রাখা কি কোরবানি?

 এই সব ঘটনাকে জীবনের নিয়তি বলে মানতে রাজি হয়নি নিদা। আদালতে মামলা করেছে তিন তালাক বিরোধিতা করে। জিতেও গেছে উস্মানের বিরুদ্ধে।আর এখানেই আঘাত পেয়েছে স্পর্শকাতর ইসলামের ধ্বজাধারীরা।এ যে ইসলামকে অপমান শরিয়তের অপমান।আসল কথা সবাই যদি হুজুর দের বিচারে সন্তুষ্ট না হয়ে সিভিল কোর্টে ছোটে; হুজুর দের ব্যবসা লাটে উঠবে প্রভাব থাকবে কই।

 চিৎকার করে ওঠে ইমাম সাহেব;

-ওই আউরত যা করেছে তা ইসলাম বিরোধী! তার সাথে আমাদের কোনও সম্পর্ক থাকবে না আজকের পর থেকে।যদি সে অসুস্থ হয়ে পড়ে কেউ তাকে ওষুধ খাওয়াতে যাবে না।যদি সে মারাও যায় তার 'জানাজা' য় নামাজ অর্পণ করাও কঠোর ভাবে নিষিদ্ধ।মরার পর সে কোনও কবরস্থানে এক তিল মাটি পাবে না।

 মরার আগে যারা কিছুই পেল নামরার পরে কি তাদের নিথর দেহটার পাবার কিছু বাকি থাকে।

 ইমাম সাহেব আরও জোরে চেঁচিয়ে উঠল মাইক ভেদ করে সেই চিৎকার যেন উপবিষ্ট অনুরাগীদের অন্তর অবধি কাঁপিয়ে দিতে লাগলো।

-আর যে বা যারা তাকে আমার কথা অমান্য করে সহায়তা বা সমর্থন করবে তাদের শাস্তি হবে একইরকম।

 নিজের অনুগামীদের উপর তার অগাধ আস্থা রেখেই সুর একটু নরম করেন হুজুর মুফতি খুরশিদ আলম সাহাব।

-তবে যদি সে ‘ইসলাম বিরোধী’ কাজের জন্য প্রকাশ্যে ক্ষমা চায় তাহলে অবশ্য ফতোয়া প্রত্যাহার করার ব্যাপারে ভাবনা চিন্তা করা হবে।

 সে পথে হাঁটার আউরত নিদা নয়। আদালত তাঁর পক্ষে রায় দেওয়ার পর থেকে জনসচেতনতা  বাড়ানোর কাজ শুরু করেছেন তিনি। শুধু তিন তালাক নয় নিকাহ হালালার বিরুদ্ধেও সুর চড়িয়েছেন।সারা ভারতবর্ষের সংবাদ মাধ্যম গুলো র প্রশ্নের মুখে এখন নিদা খান। উত্তর প্রদেশের বারেলি জামা মসজিদের ইমাম হুজুর মুফতি খুরশিদ আলম সাহাব তার বিরুদ্ধে যে ফতোয়া জারি করেছেন সে প্রসঙ্গে কিছু বলুন নিদা ...

 নিদা খান বলতে শুরু করে;

-এ ধরনের কাজ যারা করে তাদের পাকিস্তানে চলে যাওয়া উচিত। ভারতের মতো গণতান্ত্রিক দেশে কেউ কারও বিরুদ্ধে ফতোয়া জারি করতে পারে না। আর কে অপরাধী সেটা বিচারের অধিকার আল্লা ছাড়া আর কারও নেই।

 তবে কে বিচারের ভার নিজে হাতে তুলে নিচ্ছে ধর্ম নাকি ধর্মের মাতব্বরেরা। নিদা খান বেহেশতে পুরুষের উপভোগ্য হুর নয়;সে নারীবাদী;মানবতাবাদী জীবনের ওপারে একটা জান্নাতের আকাঙ্ক্ষায় সে তার গোটা জীবন কাটাতে চায় না;বরং এ জীবনেই দুনিয়ার মালিকের দোয়ায় এই নষ্ট পৃথিবীটাকে জান্নাত বানাতে চায়। সে মুসলমান মেয়েদের মানুষের মত বাঁচার অধিকার চায়। আর যে অধিকার আল্লাহ্‌ তা'আলা দিয়েছেন তা ছিনিয়ে নেবার অধিকার দুনিয়ার কারো নেই।

| বর্ষ বরণ সংখ্যা-১৪২৯ | aleekpata.com | 29th Edition |

| ALEEK PATA- Your Expressive World |Online Magazine |

| Editor: Swarup Chakraborty | Publisher: Debasree Chakraborty |

| Bengali New Year, 2022 | April-June 2022 | Fifth Year Third Issue |

© All Rights Reserved by The Editor and The Publisher |

| a DISHA-The Dreamer Initiative |


গল্প- বৈঠকি -সর্বজ্ঞ - তপন তরফদার

 গল্প- বৈঠকি

সর্বজ্ঞ 

তপন তরফদার 

Illustration: Swarup Chakraborty
 

   সর্ব ঘটে কাঁঠালি কলা। সব পাড়াতেই ওই দুয়েকটি  মানুষ আছে যারা জন্মতিথি থেকেই সর্বজ্ঞ। সব বিষয়ে জ্ঞানেন্দ্রিয় সোচ্চার। এরা জলের মত মিশে যেতে জানে। মোক্ষম সময়ে মন্ত্রীর চাল দিয়ে কিস্তিমাত করে দিতে ওস্তাদ। সব মহল্লাতেই কম করে এক দু পিস  সবজান্তাদের দেখা পাওয়া যায়। সমস্যা হয় যখন ভুলকেই  ঠিক বলে চালিয়ে  দিয়ে  নাম  কিনতে চায়। আমি ও একজন  সর্ব ঘটে কাঁঠালি কলা মার্কা  ছেলে। তবে হাটে বাজারে  তা প্রকাশ করিনা। আমি সি আই ডি ডিপার্টমেন্ট এর করণিক, সব কিছুর খোঁজ  রাখতে হয়। কিন্তু খবর  ওগলানো চলবেনা। আমি চাকরির  কথা সবসময় মাথায় রাখি। আমাদের কাজ খবর সঠিকভাবে ওপরওয়ালেকে জানান। আমার বসরা কখনো খোলা মেলা হয়ে  আমাদের সঙ্গে মেশেনা। এই  অলিখিত নিয়ম গুলি সবই চাকরির স্বার্থে, ইংরাজিতে বলে “প্রোটোকল”।

 

    বর্তমান অফিসার জয়ন্ত ফাদিকার কিন্তু আমার সঙ্গে বন্ধুর মতোই মেশেন এবং কথা ও বলেন। আমার মত ধুরন্ধর সর্বজ্ঞও  কারণটা ধরতে পারলাম না। বসের চিন্তা ধারা কিন্তু  খুবই  প্রগতিশীলউনি ওই বস- কেরাণির ভেদাভেদ দুরে সরিয়ে আমার সঙ্গে গল্পগুজব করেন। আমাকে ওনার বাড়িতে যাওয়ার জন্য আমন্ত্রণও করলেন। কি করা উচিত। অনেক ভাবলাম বসের বাড়িতে গেলে জানাজানি হবে। অফিসের অনেকেই  বাঁকা কথা শোনাবে, “এখন তেল মারতে বসের বাড়িতে  ছুটছে। ঘোর কলি কাল।” ওদের মুখ  বন্ধ করতে পারবোনা। কথা বলার জন্য ট্যাক্স দিতে হয় না। আমার সর্বজ্ঞ মন বললো ক্ষতি কি? একবার দেখাই  যাক না। কোথাকার জল কোথায় দাঁড়িয়ে যায়।

 

     রবিবার  ছুটির  দিন সূর্য্যটা  সবে ডুবেও ডোবেনি। অকাশে তখনও চলছে এক অপরূপ সুক্ষ্ম লাল সোনালী রঙের খেলা। এই সন্ধিক্ষণকেই আমার সর্বজ্ঞ মন বললো গোধুলি লগ্ন। বসের বাড়ি যাচ্ছি একটু  মিষ্টি না নিয়ে গেলে ওই প্রটোকল ঠিক মত থাকেনা। আমার হাতে জলভরা কড়া পাকের সন্দেশের বাস্ক।

 

     বসের বাড়িতে ঢোকার সামনের দেওয়ালটাই দেখার মতো। এখনো সবুজের যুগ। গাছ লাগাও গাছ বাঁচানোর যুগ। প্রগতিপন্থী বস যুগের সঙ্গে চলে। ঘরের সামনের দেওয়ালটা ঘন সবুজ রং করে নয় আগাছায় নয় দেওয়াল জুড়ে লাগানো হয়েছে লেমনগ্রাস,রোজমেরি হার্ব দিয়ে হার্ব গ্রিন ওয়াল। সুস্থতা ও সামাজিকতাার হার্ট থ্রব আমার বস। মনে পড়ে গেল আজ ৫ই জুন বিশ্ব প্রকিৃত দিবস। তালেগোলে ভালো দিনেই প্রকৃতি প্রেমী বসের বাড়িতে এসেছি। অতিসুখকর পরিবেশ।

 

       দুধ সাদা কলিং বেলটা টেপা মাত্র শাড়ি পরা মাথা ঢাকা বিরাট ঘোমটা দেওয়া এক মহিলা দরজা খুলে দিলো। বস বসার ঘর থেকেই বললো এ ঘরে এসো। ঘরে ঢুকতেই নজরে পড়লো যামীনি রায়ের আঁকা মা ও মেয়ের রেপ্লিকা। বস প্রথমেই বললো মিষ্টির কোনো দরকার ছিলনা। এরপর হাসি মাখা মুখে টুকটাক কথা শুরু হয়ে গেল। কাঁসার বগি থালা ভর্তি ফুলকো লুচি কালোজিরে দেওয়া আলুর ছেঁচকি, বড়ো বড়ো  দুটি ছানার রাজভোগ। ছোট টেবিলটায় নামিয়ে রাখলো সেই ঘোমটা দেওয়া মহিলা। আমার একটু কেমন খটকা লাগলো। প্রগতিশীল মানুষ অথচ নিজের ঘরের মেয়েদের পর্দার অন্তরালে রাখেন। মন বলছে এ নিশ্চয়ই কাজের লোক অন্য রাজ্য থেকে এনেছে  যারা সবসময় ওই লম্বা ঘোমটা দিয়ে মুখ ঢেকে রাখে। টিভি সিরিয়ালে দেখেছিলাম।

 

          বস বললো খেয়ে নাও। ভালো লাগবে ও ভালোই রান্না করে। মুখে কিছু বললাম না। মনে মনে বললাম ঠিকই ধরেছি কাজের লোক। কথা গড়গড় করে এগিয়ে চলেছে। বস বলে বসলো তুমি বলেছিলে তবলা বাজাতে জানো। আমি জাঁতাকলে পড়ে গেলাম। ছোটবেলায় তবলা কিছুদিন শিখে ছিলাম। ওই সর্বজ্ঞ হওয়ার জিন আমার শরীরে মনের ঘোরে গল্প করে ছিলাম। সবজান্তাদের দলে আমি। নিজের ফেলা জালে নিজেই জড়িয়ে পরলাম। ধামাচাপা দিতে বললাম এখন কোনো রেওয়াজ  নেই। জয়ন্ত ফাদিকার আমার বস, আমাকে এক হাটে কিনে অন্য হাটে বিক্রি করার ক্ষমতা রাখে। বস বললো শুধু  মাত্র ঠেকা দিলেই কাজ হবে। আমার মুখে বিরাশী সিক্কার চড় পড়লো। কিছু উত্তর না দিয়ে ঘাড়টা কাত করতেই হলো। হারমোনিয়াম তবলা বস লাল-সবুজ কার্পেটের উপর সাজিয়ে দিয়ে ডাকলো সুলগ্না -এসো।

 

       আমি  অবাক হয়ে গেলাম মাথায় ঘোমটা দেওয়া মহিলাটি হারমনিয়ামে বসলো। আমার সবজান্তা মন আগেই  বলেছিল, এরা মুখে প্রগতিশীল কাজে নয়। বাড়ির লোকজনকে সেই দাসীদের মত রাখবে মুখে বড়ো বড়ো বিপ্লবের কথা বলে। সুল্গনা বসলো, হাত জড়ো করে নমস্কার করলো। ঘোমটাটা একটুও সরলোনা। বসের এই সামন্ততান্ত্রিক মনোভাবের জন্য বসের প্রতি একটা ঘৃণা জেগে উঠলো। সুলগ্না মামুলি সহজ “আলো আমার আলো” রবীন্দ্র সংগীত ধরলো ওটা দাদরা তালের গান, আমি জানি। আমার বাজাতে কোনো অসুবিধা হলো না। গানটা সবে শেষ হয়েছে এই সময় কলিং বেলটা বেজে উঠতে ধড়মড় করে  উঠতে গিয়ে বেকায়দায়  তবলার হাতুড়িটায় পা পড়ে যায়। পিছলে যায় শরীর। সুলগ্না চিৎ হয়ে বসেরই কোলে পড়ে যায়। সুলগ্নার ঘোমটা খুলে গেছে। আমি একি. দেখছি,নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিনা। হরোর সিনেমায় যেমন রাক্ষসী, পেতনীদের দেখায় ঠিক সে রকম মুখ। ডান দিকের পোড়ানো মাংস থলথল করে ঝুলঝে নাকের হাড়টায় লাল লাল ছোপ। আমি বাজি রেখে বলতে পারি অনেকেই এই ক্ষণেই জ্ঞান হারাতো।

 

        আমার বস পরিস্থিতি সামলে নিয়ে বললো তুমি কি ভাবছো। আমি উত্তর  দেওয়ার আগেই  বলতে শুরু  করলো-  সুলগ্না ডি এ ভি স্কুলের শিক্ষিকা ছিল। একদিন ওর সহকর্মীর স্বামী  স্কুলে  ঢোকার সময় আ্যসিড ছোঁড়ে ওই সহকর্মীকে মারার জন্য। সুলগ্না সহকর্মীকে  ধাক্কা মেরে  সরিয়ে দেয়। সহকর্মী রক্ষা পায়। সুলগ্নার মুখ  ঝলসে যায়। ও আমার থেকে দুরে সরে যায়। লুকিয়ে থাকে অমি যেন ওর সন্ধান না পাই। আমি আমার  প্রেমিকাকে খুঁজে বার করি, বিয়ে করে মনের সুখেই সংসার করছি।

 

      আমি সর্বজ্ঞ হয়ে  ও বোবা হয়ে গেলাম।

| বর্ষ বরণ সংখ্যা-১৪২৯ | aleekpata.com | 29th Edition |

| ALEEK PATA- Your Expressive World |Online Magazine |

| Editor: Swarup Chakraborty | Publisher: Debasree Chakraborty |

| Bengali New Year, 2022 | April-June 2022 | Fifth Year Third Issue |

© All Rights Reserved by The Editor and The Publisher |

| a DISHA-The Dreamer Initiative |


গল্প- বৈঠকি- ব্রাত্য জীবন- মিঠুন মুখার্জী

 

গল্প- বৈঠকি

ব্রাত্য জীবন

মিঠুন মুখার্জী


Image Courtesy : Google Images

 

সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্মালেই সবার কপালে সুখ থাকে না। ছয় ষষ্ঠীতে ভাগ্যদেবতা যা লেখার লিখে দেয়, তাকে কেউ খন্ডন করতে পারে না। কলকাতা শহরের মস্তবড় এক ব্যবসায়ী দীপঙ্কর রায়ের দুই ছেলের পরে এক মেয়ে। ছেলে পছন্দ হলেও মেয়ে সন্তান তার একদম পছন্দ নয়। বছর পাঁচেক আগে তাঁর সহধর্মিনী আরও এক সন্তানের জন্ম দেন। কিন্তু সেই সন্তানটি ছিল তৃতীয় লিঙ্গের অন্তর্ভুক্ত। বাবা এই খবর পাওয়ার পর পন করেন এই সন্তানের মুখ সে জীবনে দেখবে না। তাই তিনি সিদ্ধান্ত নেন অনাথ আশ্রমে এই সন্তানটিকে চুপিচুপি দিয়ে আসবেন। কথায় যা, কাজেও তাই। সকলের অমত থাকা সত্বেও মায়ের নাড়ি ছেঁড়া ধন নিয়ে যাওয়া হয়। সন্তান যেমনই হোক মায়ের কাছে সে  সন্তানই হয়। সন্তান হারানোর যন্ত্রণা একজন মা ছাড়া কেউ বুঝতে পারেন না।

 

              আজ সেই তৃতীয় লিঙ্গের সন্তানটি পাঁচ বছরে পড়েছে। অনাথ ছেলেমেয়েদের মাঝখানে পিতা-মাতা থাকা সত্ত্বেও অনাথের মতো মানুষ হতে হয় তাকে। এই অপরাধ কার? এদিকে অনাথ আশ্রমে তার নাম হয় বৃন্দাবনী। তার দুই দাদা যথাক্রমে অরুময় ও রাধেময়, এবং দিদির নাম শ্যামা। অরুময় ও রাধেময় যমজ হওয়ায় তারা এখন একাদশ শ্রেণীতে পড়ে এবং শ্যামা নবম শ্রেণীতে পড়ে। ছেলে দুটি দীপঙ্কর বাবুর গর্বের হলেও শ্যামাকে সেভাবে ভালোবাসেন না। একবিংশ শতকে দাঁড়িয়ে মেয়েরা এখনো যে ব্রাত্য সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। ছোট সন্তানের শোকে তাদের মা অসুস্থ দীর্ঘদিন। তাই তাদের দেখাশোনা করার জন্য দুজন কাজের লোক রেখেছেন দীপঙ্কর বাবু। এদিকে কোনরকমে অবহেলায় বেড়ে উঠতে থাকে বৃন্দাবনী।

 

            দশ বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। দীপঙ্কর বাবুর বয়স হওয়ায় তার কাজকর্ম অরুময় ও রাধেময় দেখাশোনা করতে শুরু করেছেন। এক উচ্চবংশের ব্যবসায়ীর ছেলের সাথে শ্যামার বিয়ে দিয়েছেন তিনি। মাঝেমধ্যে ছেলেদের দিয়ে খোঁজখবর নেন তিনি। পিতার এহেন আচরন শ্যামার চোখে বুক ফেটে জল এনে দেয়। হঠাৎ অসুস্থ কিছু গুরুতর হওয়ায় শ্যামার মা পরলোক গমন করেন। তার কাজ সম্পন্ন করে দীপঙ্কর বাবু তার ছেলেদের বলেন-“তোমাদের মার চলে যাওয়ায় আমার মনের শান্তি নষ্ট হয়ে গেছে, আমি কিছুদিনের জন্য হরিদ্বারে তীর্থ করতে যাব। তোমরা বড় হয়েছ, ব্যবসা সামলানোর ক্ষমতা হয়েছে, আমার আর চিন্তা নেই। তোমাদের কাছে ছেড়ে দিয়ে আমি তীর্থে যেতে চাই”। ছেলেরা তাদের পিতাকে জানায় তারা পিতার বিশ্বাসের অমর্যাদা করবেন না।

 

          এদিকে বৃন্দাবনী এখন পনেরো বছরের যুবতী। তার যৌবন টলমল করছে বটে, কিন্তু সভ্য সমাজের থেকে সে অবহেলিত। নিজের জীবনের দুঃখ চিরসঙ্গী জেনেও নিজের মতো করে বাঁচার চেষ্টা করে সে। কেউ কেউ তাকে মাসি বলে ব্যঙ্গ করে। তাতে প্রথম প্রথম খুব কষ্ট হতো বৃন্দাবনীর। কিন্তু যত দিন যায় ততই গা সওয়া  হয়ে যায় তার। হিজড়ে মাসিদের দলে নাম লেখায় সে।  পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে যা পাওয়া যায় তাতে তার ভাগে মাসে কুড়ি হাজার টাকার বেশি পড়ে। খাওয়া-পরার অভাব না থাকলেও জীবনের অধিকাংশ সুখ থেকে বঞ্চিত হওয়ায় মাঝে মাঝে খুব কষ্ট পায় সে। তার দলের বদন হিজড়ে, রূপসী হিজড়ে, ফাল্গুনী হিজড়ে তাকে খুব ভালবাসে। তার থেকে সকলেই বড় হওয়ায় তাকে স্নেহ করে সকলে।

 

         বৃন্দাবনী জন্মাবার পর যেহেতু তাকে অনাথ আশ্রমে দিয়ে আসা হয়েছিল, সেহেতু নিজের বংশ পরিচয় কিছুই জানে না বৃন্দাবনী। পিতা-মাতার অভাব মাঝেমধ্যে অনুভব করে, কিন্তু অন্য মাসিরা তার সে অভাব ভুলিয়ে দেয়। একমাত্র শ্যামা ছোটবেলা থেকেই বৃন্দাবনীর খোঁজ নিত। যখন তার পিতা বৃন্দাবনীকে অনাথ আশ্রমে দিয়ে এসেছিল, তখন শ্যামা পিছন পিছন গিয়ে সেটি দেখে ফেলেছিল। তাই বৃন্দাবনীকে একমাত্র শ্যামায় চেনে। মাসিদের সমাজে আসার পর শ্যামা তার স্বামীকে নিয়ে দুবার বৃন্দাবনীকে দেখতে এসেছিল। নিজের পরিচয় দেয় নি কষ্ট পাবে বলে। স্বামীকে বিয়ের পরে সব জানিয়েছিল শ্যামা।

 

       এদিকে দীপঙ্কর বাবু হরিদ্বারে তীর্থ করতে যাওয়ার সুযোগে অরুময় ও রাধেময় নিজেদের পছন্দের মেয়েকে বিয়ে করেন, এবং বোনদের ফাঁকি দিয়ে সম্পত্তি নিজেদের নামে করিয়ে নেন। এখানে বলার প্রয়োজন, দীপঙ্কর বাবু অশিক্ষিত থাকায়, একদিন খাবারের সাথে ঘুমের ঔষধ খাইয়ে সরকারি স্ট্যাম্প পেপারে টিপ সই দিয়ে নিয়েছিলেন অরুময় ও রাধেময়। দীপঙ্কর রায় বাড়ি ফেরার পর সবকিছু জেনে অসুস্থ হয়ে পড়েন। পড়ে গিয়ে মাথা ফেটে প্রচুর রক্ত বেরিয়ে যায়। খবর পেয়ে শ্যামা ও তার স্বামী আসেন তাদের বাড়িতে। এদিকে পাড়ার লোকে দীপঙ্কর বাবুকে হসপিটালে ভর্তি করেন। প্রচুর রক্ত বেরিয়ে যাওয়ার ফলে 'ও নেগেটিভ' রক্তের প্রয়োজন হয়। শ্যামার ও তার স্বামীর রক্ত 'ও নেগেটিভ' না হওয়ায় খুব চিন্তায় পড়ে যায় তারা। ডাক্তার বলেছেন-এক ঘণ্টার মধ্যে রক্ত না দিলে সে তার পিতাকে বাঁচাতে পারবে না।এই কথা শুনে কান্নায় ভেঙে পড়ে শ্যামা।

 

               হঠাৎ করে শ্যামার মাথায় একটা বুদ্ধি খেলে গেল। সত্বর হিজড়ে মাসিদের পল্লীতে গিয়ে বৃন্দাবনীর সঙ্গে দেখা করে সব বৃত্তান্ত খুলে বলল সে। বৃন্দাবনীর প্রথম পিতার প্রতি রাগ হয়েছিল, কিন্তু পরক্ষণেই ভেবে দেখল পিতাকে বাঁচাতে না পারলে কোনদিন সে নিজেকে ক্ষমা করতে পারবে না।

 

               দীপঙ্কর বাবুর অজান্তে বৃন্দাবনীর রক্তে সেদিনের মত মরতে মরতে বেঁচে গেলেন তিনি। যখন জ্ঞান ফিরল তখন তার পায়ের কাছে দাঁড়ানো বৃন্দাবনী, শ্যামা ও শ্যামার স্বামী। শ্যামা তার পিতাকে বৃন্দাবনী সম্পর্কে সব খোলাখুলি বলে। এরপর দীপঙ্কর বাবু লজ্জায় মাথা নিচু করে থাকেন। তিনি বুঝতে পারেন যে, বৃন্দাবনীর ওপর তিনি এত বড় অন্যায় করেছেন, সেই আজ তাঁর প্রাণ বাঁচিয়েছে। তাঁর এই অসময়ে ছেলেরা একবারের জন্যও আসেন নি। বৃন্দাবনী চলে যাওয়ার সময় পিতাকে উদ্দেশ্য করে সে শ্যামাকে বলে- তুমি বললে তাই আমি এখানে এলাম, নতুবা আমি কখনো এখানে আসতাম না। সন্তান ছেলে হোক বা মেয়ে, সে সন্তানই হয়। বাবা-মার প্রতি কর্তব্যই প্রমান দেয় সে সুসন্তান, না কুসন্তান। মেয়েরা পারে না এমন কিছু নেই। আর আমার মত তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদেরও তো পিতা-মাতাই জন্ম দেয়। তাহলে ঈশ্বরের সৃষ্ট সেই সন্তানের কি দোষ বল তো দিদি?” আমরাও তো মানুষ। এই কথা বলতে বলতে বৃন্দাবনীর চোখের কোনে জল দেখা যায়। বৃন্দাবনীর পিতা সকলের সামনে বৃন্দাবনীর কাছে তাঁর কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন। বৃন্দাবনী তার পিতাকে ক্ষমা করেছিল কিনা জানি না, তবে তাঁর প্রতি অভিমান করে নৈশব্দ্যে হাসপাতাল থেকে হিজড়ে পল্লীর দিকে পা বাড়ায়।

| বর্ষ বরণ সংখ্যা-১৪২৯ | aleekpata.com | 29th Edition |

| ALEEK PATA- Your Expressive World |Online Magazine |

| Editor: Swarup Chakraborty | Publisher: Debasree Chakraborty |

| Bengali New Year, 2022 | April-June 2022 | Fifth Year Third Issue |

© All Rights Reserved by The Editor and The Publisher |

| a DISHA-The Dreamer Initiative |



গল্প- বৈঠকি -ছোঁ মেরে ভোঁ - ইন্দ্রাণী দত্ত

গল্প- বৈঠকি

ছোঁ মেরে ভোঁ

ইন্দ্রাণী দত্ত

Collage-Swarup Chakraborty


আরে ধর,ধর ! লম্পট, চোরটাকে কে আছিস একটু ধর বলে হুড়মুড়িয়ে কোন মতে ভুঁড়ি আগলে ভরা বাজারের মধ্যে দিয়ে কিছুটা দৌড়ে গেলেন বিশ্বলোচন বাবু ! 

রঘুনাথ পুরের ভূগোলের শিক্ষক বিশ্বলোচনবাবু মানুষটা মন্দ নয়,তবে বেশ কড়া গোছের, একগুঁয়ে, অন্যের সিদ্ধান্ত তার কাছে নিতান্তই মূল্যহীন ,মাথা ভর্তি টাক জ্বলজ্বল করছে সদর্পে, পরনে ধুতি পাঞ্জাবী, চোখে গোল গোল কালো মোটা ফ্রেমের চশমা ৷ এরকম একটা রাশভারী লোক এ চত্বরে খুব একটা চোখে পড়ে না ৷ তবে এ সকল বিবরণ শুধু বাইরের মানুষদের কাছে ,বাড়ির ভিতরের চিত্রটি বেমালুম উল্টো ! ঘড়ির কাঁটা সকাল ন-টার ঘরে গেলেই প্রতিদিন হাঁকডাক পড়ে যায় বিশ্ববাবুর বাড়ি,

 গিন্নি,অ গিন্নি আসনটা বিছালে নাকি?

গিন্নি ,অ গিন্নি জলটা  দিলে নাকি ?

গিন্নি শুনছো পোস্ত বাটার ওপর একটা সবুজ দেখে কাঁচা লঙ্কা গুঁজে দিও তো, চিবিয়ে, চিবিয়ে খাবো একটু !

ও গিন্নি মাছের বড়াটা একটু বেশি তেল দিয়ে ভাজতে ভুলো না যেন !

দশবার হাঁক দিলে একবার সাড়া দেন বাড়ির কর্ত্রী, আসলে স্ত্রী লোকের হাতে যে ক্ষমতা থাকে তার সম্পূর্ণ প্রয়োগ করে নিজের দম্ভ প্রকাশ করতে মেয়েমানুষরা ভালোই জানে বোধকরি ৷ ঘড়ির কাঁটা ঠিক নটা পনেরোর ঘরে গেলেই আর একটা আওয়াজ শোনা যায় যথারীতি,

ভাত পড়েছে পাতে, খেতে এসো, জলের বোতল নিয়ে এসো সঙ্গে করে, গেলাস দিচ্ছি !

বিশ্ববাবু এই সময়টার জন্যই ওঁৎ পেতে বসে থাকেন, কখন ডাক পড়বে, ব্যাস আয়েস করে দুটো খেয়ে দেয়ে বেরিয়ে পড়া ইস্কুলের উদ্দেশ্যে, আর যেটা বাড়িতে হয় না, না মানে ইস্কুলে গিয়ে যে হম্বিতম্বি দেখান তা তো আর বাড়িতে চলে না ! বউ এর কাছে তিনি অসম্ভব শান্ত নিরীহ গোবেচারা, ওই দিকে ইস্কুলে রঘুনাথ পুরের ভূগোলের সহকারী শিক্ষক বলে কথা ! সেখানে তো আর বউ থাকে না যে মেপে মেপে কথা বলতে হবে ! সেখানে কথা হয় ম্যাপে ম্যাপে, হিমালয়ের উৎস সন্ধান থেকে শুরু করে গুজরাটের কচ্ছের রণে গিয়ে থামেন, গিন্নি সেখানে থাকেন না, থাকে নিজের একটা আস্ত চেয়ার, দুপুরের মালপোয়া ভর্তি টিফিন বক্স, আহা সে যে কি শান্তি ! আর কিছু অনুগত ছাত্রছাত্রী,বাকি কিছু দুষ্টু ছেলেমেয়েও আছে তাদের অবশ্য তিনি হিসেবে ধরেন না বললেই চলে  ৷

সেদিন হয়েছে টা কি, ইস্কুলে তখন ছুটির ঘন্টা বাজলো বলে, বাইরে নেমেছে ঝিরঝির বৃষ্টি! ক্লাস নিয়ে বিশ্ববাবু স্টাফরুমে এসে বসেছেন, সবেমাত্র গল্প জমে উঠেছে, আজকের টপিক ছিল অলিম্পিকে  কি বাঙালির তাস খেলাটা ইনকুলুড করা যায় না? হট টপিক বটে! বাঙালি  তাস খেলায় কতটা এগিয়ে তা কি বিশ্ব দরবারে প্রকাশ পাবে না! সহকারী কম্পিউটার শিক্ষক পটলাবাবু তো বলেই ফেললেন, দেশ এগোচ্ছে বিশ্বদা, সব কিছু ডিজিটাল, অলিম্পিক এ ডিজিটাল গেম কেন রাখা হবে না বলুন তো প্রতিযোগিতার অংশ হিসেবে? বৃহত্তর আন্দোলন করতে হলে তাও করবো আমরা কিন্তু সুযোগ সবাইকেই দিতে হবে কি বলেন? পাশ দিয়ে পার্শ্বশিক্ষক দিপ্তবাবু তো বলেই উঠলেন কথাটা নেহাত  মন্দ বলেন নি। জানেন ছেলেটা আমার বাড়ি বসে এ কদিন  অনলাইন গেম এ বেশ ইমপ্রুভ করেছে, পাবজি ,ফ্রী ফায়ারে ছেলে আমার সিদ্ধহস্ত। ব্যাস কথার মাঝেই সেই একটা মধুর শব্দ, বিশ্ব বাবু পকেট দিয়ে সযত্নে  আনস্মার্ট ফোনটা বার করে দেখলেন, সেই বহু প্রতীক্ষিত টুং টাং মেসেজ আসার শব্দ, মাসের পয়লা তারিখ, মাইনে এসে গেছে , এবার আর আজকের হট টপিক আলোচনায় বিশ্ব বাবুকে  পায় কে? দেরি না করে  ছাতা হাতে বেড়িয়ে পড়লেন খোশমেজাজে।

হ্যালো,হ্যালো ,শুনছো গিন্নি

মাইনে এসে গেছে,

বৃষ্টি হচ্ছে,

খিচুড়ি বসাও,

বড় সাইজের এক ছাইয়া করে কাটা গঙ্গার  ইলিশ নিয়ে যাচ্ছি,

বুঝলে ? হ্যালো

শুনতে পাচ্ছো ?

ধুর কি বলে ওপাশ দিয়ে বুঝিও না !

বেশ, বাজার এসে গেছি ফোন রাখলাম গো বলে নিজের থেকেই ধুম করে ফোনটা কেটে দিলেন ওদিকের উত্তরের অপেক্ষা না করেই  ৷

বিশ্ব বাবু বগলে ছাতাটা খুঁজে, বাজারে ঢুকেই হাতে একটা ইলিশ তুলে পেটটা বেশ টেপা টেপি করছেন,

ভাই ভালো হবে তো ?

এমতাবস্থায় মাছওয়ালা বেশ গম্ভীর ভাবেই একটু হাল্লা করেই রেগে বললেন দাদা পোয়াতি আছে, বেশি টিপবেন না, এখানেই ডেলিভারী হয়ে যাবে  !

বিশ্ববাবু আবার মাঝে মাঝে রসিকতা ভালোই বাসেন, তিনিও ওমনি বলে উঠলেন বলো কি  ভাই, তা তোমার ওই পোয়াতি গঙ্গা স্নান করে এসেছে তো ?

না দাদা ওটা পরের বার করার প্লান আছে, এইবার পদ্মা ঘুরে এসেছে ৷

এদিকে বৃষ্টির পরিমান বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাই রশিকতায় রাশ টেনে হাজার টাকা কেজি দরের ইলিশটা নেবেন বলে মনস্থির করে বললেন,

তাড়াতাড়ি কেটে দেও ভায়া, ছাতায় আর বৃষ্টি মানছে না যে তারপর পকেট থেকে কড়কড়ি শেষ দু হাজার টাকার নোটটা হাতে নিয়ে এগিয়ে দিতে যাবেন, অমনি এ কি অঘটন - মুখ বাঁধা, লম্বামত একটা বছর আঠাশের যুবক  হঠাৎ কোথা থেকে এসে ছোঁ মেরে চিলের মতো টাকাটা নিয়ে ভোঁ, দে দৌড় !

আরে ধর, ধর, আমার টাকা, ইলিশের টাকা ওটা, ধর, ধর।

মাছওয়ালা  মাছ বঁটি উঠিয়ে বেশ খানিকটা তেড়ে গেলো ছেলেটার পিছনে কিন্তু মুহূর্তে অদৃশ্য হয়ে অন্ধকারে মিশে গেল ছেলেটা, ঠিক যেন এরকমি এক অন্ধকার জীবনে।

বেশ কিছু বাজার করতে আসা মানুষজন ততক্ষনে জড়ো হয়ে গেছে বিশ্ব বাবুকে ঘিরে, বিশ্ববাবু এক নিঃশ্বাসে বাজারের মাঝখানে বসে লম্পট, চোর, পকেটমার যা নয় তাই বলে চিৎকার করে চলেছেন, সবাই প্রায় হতবাক ছিনতাইয়ের কান্ড দেখে, কেউ কেউ আবার খুব সাবধানে নিজের পকেটের মানিব্যাগটি একবার দেখে নিলো,

ধীরে ধীরে ভিড় কমে এলো, বিশ্ব বাবুও মুখ ভার করে বাড়ির পথে পা বাড়ালেন 

আজ আর সাধের পোয়াতি ইলিশ দিয়ে খিচুড়ি খাওয়া হলো না, অগত্যা-

গিন্নি অ গিন্নি,

একটু ঝিরি ঝিরি আলু ভাজবে গো !

কটমট চোখে বিশ্ববাবুর গিন্নি বাংলার পাঁচের মতো মুখ করে খিচুড়ি আর ঝিরি ঝিরি আলু ভাজার থালাটা এগিয়ে দিলেন বিশ্ব বাবুর দিকে,


রাত যত গভীর হচ্ছে, বিশ্ব বাবু একবার এপাশ, একবার ওপাশ,

হ্যাগো শুনছো গিন্নি, শুয়ে পড়লে ?

কই গো, মাছগুলো পোয়াতি ছিলো জানো,

গিন্নি, শুয়ে পড়লে !

গিন্নীর সাড়া না পেয়ে বিশ্ববাবু  ইলিশের মায়া ত্যাগ করে একপাশ ঘুরে শুয়ে পড়লেন ৷

পরের দিন সকালে আবার সেই চেনা দৃশ্য,


ঘড়ির কাঁটা নয়ের কাছাকাছি...

গিন্নি, অ গিন্নি আসনটা বিছালে নাকি ?

গিন্নি, অ গিন্নি জলটা  দিলে নাকি ?

গিন্নি শুনছো ডাল বাটার ওপর একটা সবুজ সরু দেখে কাঁচা লঙ্কা গুঁজে দিও, চিবিয়ে চিবিয়ে খাবো।

ও গিন্নি মাছের বড়াটায় আজ বেসন দিও না যেন...

এরপর এই চেনা দৃশ্য মোড়া জীবন কেটে গেছে প্রায় একমাস, আজ আকাশের মুখ সকাল দিয়েই ভার, তার উপরে বাঙালির রবিবার, ভরপেট খেয়ে সদর দরজায় তালা না দিয়েই দুপুরে ঘুমিয়ে পড়েছেন বিশ্ব বাবু, যাকে বলে ভাতঘুম! বয়স বাড়ছে, শরীর আজকাল আয়েস চাইছে বেশি, বৃষ্টি শুরু হয়েছে তুমুল, গাড়ি বারান্দায় বসে এই সময়টা বাড়ির কর্ত্রী “সঞ্চয়িতা” পড়তে বড্ড ভালোবাসেন, তাঁর আবার ভাতঘুমে সময় অপচয় মোটেই পছন্দ নয় !

হঠাৎ সন্ধ্যার নিভু আলোয় “সঞ্চয়িতার” নেশা কাটতে না কাটতেই বিশ্বলোচনবাবুর স্ত্রী দেখলেন একটি ছেলে কাকভেজা অবস্থায় ঘরের সামনে কিছু একটা রেখে সদর দরজা দিয়ে চলে যাচ্ছে বাইরে..

শুনছেন !

কোথায় যাচ্ছেন? কে আপনি? থামুন বলছি, সেকেন্ডের মধ্যেই ভ্যানিশ, তড়িঘড়ি করে বিশ্বলোচনবাবুর  গিন্নি গেলেন বিশ্ববাবুকে ডাকতে,

এই যে শুনছো ?

হুমম!

কি হলো শুনছো?

বলো শুনছি

কেউ একজন গেটের কাছে কিছু রেখে চলে গেল এইমাত্র,

কি! বলে লাফিয়ে উঠলেন বিছানা ছেড়ে বিশ্ববাবু, মানে তুমি তাকে আটকালে না, কি সর্বনাশ! কি সর্বনাশ! আমার তো শত্রুর অভাব নেই গিন্নি, বিস্ফোরক নাকি, কি হবে এবার!

আরে না, না বৃষ্টিতে বিস্ফোরক থাকলে  ভিজে গেছে তো, ভয় নেই, এখন চলো শিগগির !

হুম কথাটা খারাপ বলোনি, আচ্ছা চলো দেখি গিয়ে,


বাড়ির দরজার সামনে একটা ভারী প্যাকেট, ওজন নেহাত কম নয়,সঙ্গে একটা এনভেলপ প্লাস্টিকে মোড়া যাতে বৃষ্টিতে ভিজে নষ্ট না হয়।

বিশ্ববাবু এনভেলপ ছিঁড়ে একটি সাদা কাগজে নীল কালি দিয়ে লেখা চিটিটি পড়তে শুরু করলেন এক নিঃশ্বাসে-

প্রণাম নেবেন মাস্টারমশাই,

আমি আপনার এক অধম, অসভ্য, লম্পট ছাত্র ৷

আজ থেকে সতেরো বছর আগে আমাদের ভূগোলের ক্লাস নিতে নিতে আপনি ভারতের বিস্তার পড়াতে গিয়ে আমাদের জীবনে মায়ের বিস্তার যে সবটা জুড়ে  খুব ভালো ভাবে বুঝিয়ে ছিলেন৷ আর বলেছিলেন নিজের  মা আর দেশ মায়ের জন্য জীবন দেওয়াটাও গর্বের, আনন্দের, এই কাজে কখনো যেন পিছপা না হই।

এই সব কথার অর্থ এখন অবধি বিশ্বলোচন বাবুর বোধগম্য হলো না , কিছুক্ষণ থমকে

রইলেন তারপর আবার বুক ভর্তি বায়ু নিয়ে পুনরায় চিঠির বাকি অংশ পড়তে শুরু করলেন,

সেদিন মায়ের শরীরটা খুব খারাপ হয়ে পড়েছিলো, আমার মা দূরারোগ্য রোগে আক্রান্ত, ডাক্তারবাবুর টাকাটা মিটিয়ে দেওয়ার পর জীবনদায়ী ইঞ্জেকশন কেনার টাকা ছিলো না, প্রায় হাজার দুয়েক টাকা, বাজারে  মাল বইয়ে দেবো বলে অনেককে অনুরোধ করলাম তার বিনিময়ে যদি কিছু টাকা দেয় কিন্তু সেদিন কেউ আমাকে সাহায্য করলো না জানেন, মায়ের সময়ও কমে আসছিলো আমি বুঝতে পারছিলাম, আচমকাই আপনার হাতের টাকাটা,

তারপর চিঠির কিছু অংশ ফাঁকা,

 



পরের অংশে লেখা, আমি মায়ের জন্য জীবন দিই নি কিন্তু ছিনতাই করতে দুবার ভাবিনি, ক্ষমা করতে পারবেন না আপনার এই চোর, ছিনতাইবাজ ছাত্রটিকে? জানেন মাস্টারমশাই আপনার কথা সেদিন রেখাপাত করেছিলো জীবনে, মাকে বাঁচাতে তাই ছিনতাই করাটা আমার কাছে কঠিন ছিলো না একদম৷ কিন্তু  আপনার সব কথা সত্যি নয়, একদিন পিঠ চাপড়ে বলেছিলেন না, এরকম রেজাল্ট করলে একদিন খুব বড় চাকরি করবি, আজ দেখুন না আমার দেওয়া শেষ ইন্টারভিউতে চাওয়া দু লাখ টাকা আমি দিতে পারিনি, আমার উচ্চ শিক্ষার সব ডিগ্রি এখন একটা সামান্য কাগজ, বাবা নেই, জানিনা মা এ যাত্রায় বেঁচে গেলেও আর কতদিন বাঁচিয়ে রাখতে পারবো ,পারলে ক্ষমা করবেন আমাকে, এই একমাসে আপনার দু হাজার টাকা আমি জোগাড় করতে পেরেছি  দিনমুজুর খেটে, এটা ছিনতাইয়ের নয় কারন মা এখন একটু ভালো আছে সেদিনের ইঞ্জেকশন দেওয়ার পর, সেদিন আপনার যে টাকাটি ছিনতাই করে ধার নিয়েছিলাম, পরে আপনাকে চিনতেও পারি মাস্টামশাই, টাকাটি আজ দিয়ে গেলাম আর সাথে একটা ইলিশ মাছ, বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে, আপনি  এসব কিছু নিলে আমার একটু হলেও প্রায়শ্চিত্ত হবে ৷ জানি, আপনার মতো অত বড়ো ইলিশ হয়তো আমি কিনতে পারিনি, তবুও স্বাদ একটু কম হলেও আপনি যদি খান আমার বুকের ভিতর দিয়ে একটা পাথর চাপা কষ্ট একটু হলেও কমবে৷ ভালো থাকবেন মাস্টারমশাই ! আর হ্যাঁ মাস্টারমশাই আপনারা পারেন না বিদ্যালয়ে পুঁথিগত শিক্ষার পাশাপাশি বৃত্তিমূলক শিক্ষায় জোর দিতে? তাতে অন্তত আমরা গরীব ঘরের ছেলেরা কিছু করে খাবারটুকু  জোগাড় করতে পারবো, কোর্স করার টাকা সবার যে থাকে না !

ইতি

আপনার গর্বিত চোর ছাত্র

ইলিশটি গিন্নির হাতে তুলে দিয়ে ততক্ষনে বিশ্ব বাবুর চোখ ছলছল করে উঠেছে তারপর একগাল হাসি নিয়ে বিড়বিড় করে বললেন পাগল ছেলে ! এই ইলিশের স্বাদ সেদিনের থেকে তিনগুন বেশি হবে ,তুই বুঝবি না !

তারপর...

তারপর...

সদর দরজায় তালা দিতে দিতে শোনা গেল সকালের সেই চেনা হাঁক ডাক বৃষ্টি ভেজা সন্ধ্যায়-


গিন্নি,অ গিন্নি বারোটা বাজাবে নাকি !

গিন্নিঅ গিন্নি কড়া করে ভাজবে আমার পিসটা ,

গিন্নি শুনছো সেদিনের মতো খিচুড়িতে তেজ পাতাটা দিতে ভুলো না যেন,

শুনছো তো না কিইইই...!

| বর্ষ বরণ সংখ্যা-১৪২৯ | aleekpata.com | 29th Edition |

| ALEEK PATA- Your Expressive World |Online Magazine |

| Editor: Swarup Chakraborty | Publisher: Debasree Chakraborty |

| Bengali New Year, 2022 | April-June 2022 | Fifth Year Third Issue |

© All Rights Reserved by The Editor and The Publisher |

| a DISHA-The Dreamer Initiative |


Main Menu Bar



অলীকপাতার শারদ সংখ্যা ১৪২৯ প্রকাশিত, পড়তে ক্লিক করুন "Current Issue" ট্যাব টিতে , সবাইকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা

Signature Video



অলীকপাতার সংখ্যা পড়ার জন্য ক্লিক করুন 'Current Issue' Tab এ, পুরাতন সংখ্যা পড়ার জন্য 'লাইব্রেরী' ট্যাব ক্লিক করুন। লেখা পাঠান aleekpata@gmail.com এই ঠিকানায়, অকারণেও প্রশ্ন করতে পারেন responsealeekpata@gmail.com এই ঠিকানায় অথবা আমাদের ফেসবুক গ্রুপে।

অলীক পাতায় লেখা পাঠান