একটা চিঠি
শীতল মিশ্র
|
Sketch: The Writer |
(কবি কাজি নিজামুদ্দিন এর লেখা বই ''শাখায় শব্দ পাতায় প্রাণ" বই খানি উপহার পেয়ে আমার অনুভূতিএকটা চিঠি আকারে প্রকাশ করেছি।আ র স্যারের কবিতা গুলি র লাইন নিয়েছি বলেই আরো সুন্দর হয়েছে বোধ হয়! আপনাদের কে পড়তে অনুরোধ করব)
৭/০২/১৭
বিয়ে বাড়ী। সাজগোজ। সানাই। বর আসলো। শঙ্খ ধ্বনি। মালাবদল। খাওয়াদাওয়া।
আত্মীয়পরিজন এর সাথে অনাবিল আনন্দ।মাথায় কিন্তু ঘোরাফেরা করছে ভোর পাঁচটা র
লোকাল।ধরতে হবে না হলে ডিউটি জয়েন করতে পারব না। ৮ ঘন্টা র জার্নি।এমন সময় হাতে
পেলাম আপনার স্নেহের পরশ মাখা - "শাখায় শব্দ পাতায় প্রাণ "।
ভাবলাম কে আমি? আপনার অনেক ছাত্রছাত্রী, বন্ধু, শুভাকাঙ্ক্ষী। আপনার প্রতিফলিত আলো দেখেছি আমার কাছের ভাই, বন্ধু সাথীদের যেমন অমিত,শক্তি, সুকান্ত,বাদল,
অঞ্জুশ্রী আরো অনেকে।আপনার বাগানের ফুলগাছেদের বড় হতে
দেখেছি।আপনার আদর ভালবাসা আর যত্নে ওরা আরো সজীব আরো গাঢ়।আর আমার ওই বাগানের বেড়ার
ধারে আগাছাদের সাথে বেড়ে ওঠা। কখনো ছাগল এ দেয় মুড়িয়ে বা গরুতে দেয় মাড়িয়ে।ঠিক যেন
রবীঠাকুরের "ছেলেটার '(কবিতা)মত।
আপনার হাতের পরশ পাওয়ার সু্যোগ
হয়ে ওঠেনি।
ভোরে ১ মিনিটের জন্য লোকাল মিস করলাম।অগত্যা নির্লিপ্ত ভাবে পরের লোকালের জন্য
বসে থাকলাম।
আসানসোল পৌছনোর পর উপায় না দেখে স্টাফদের সাথে শতাব্দী র লাগেজ ভ্যানে উঠে
পরলাম। সব বন্ধ। না আছে জানলা।ধানবাদে সবাই নেমে গেল।আমি একা লাগেজের মেঝেয়।একদিকে
ইঞ্জিন আর এক দিকে জেনারেটর এর আওয়াজ। সেই পরিবেশে আপনার "শাখায় শব্দ পাতায়
প্রাণ"....হাতে নিয়ে বাকি সময় মন জুড়িয়ে গেল। আগেই কয়েকটা কবিতা পড়েছি ফেবু
পোস্টে।যেগুলো তীর্থদা ছবির মাধ্যমে উপস্থাপনা করেছিলেন। অসম্ভব সুন্দর ভালোলাগা
যুগলবন্দী উপভোগ করেছিলাম।পরে একটা স্কেচ আমি পোস্ট করেছিলাম।
একমাস পর আপনার দেওয়া উপহার আমার
হাতে।
শ্রদ্ধেয় স্যর,,,,,,প্রনাম নেবেন।একটা চিঠি আপনার জন্য।
না কোন রিভিউ লেখার মত জ্ঞান বা পাণ্ডিত্য আমার কিছুই নেই।শব্দ জগৎে যা
সহজলভ্য তাই আমার পাথেয়।যেমন ডাল,ভাত,আলুসেদ্ধ আর কাঁচালংকা।
তবু "শাখায় শব্দ পাতায় প্রাণ"
আমায় যেন ছুঁয়ে গেছে।সত্যি করে
বলতে আমি কবিতা খুব একটা বুঝি না।তবু আপনার সরল শব্দসম্ভার প্রকৃতি র আঙিনায়
ছড়ানো। আমার মনের বিবর্ণতা কে আবার যেন সবুজ করে তুলেছে।
"সেদিনের অমল আর এদিনের কৃষ্ণ কিশোর
দুজনে খুঁজে ফেরে সবুজের অন্তরে সবুজ প্রাণ
কেন্দুয়া,শাল,পিয়াল মহুয়া মাতালে স্বপ্ন বিভোর। "
কবিতা: "স্বপ্ন গাঁয়ে"
আমিও অনেক ফুলগাছ লাগিয়েছি স্যর
স্কুলে,লাইব্রেরী তে,বন্ধুর বাড়ীতে,,,,,। আমার কোন নিজস্ব বাগান নেই।তবু প্রতিদিন আমায় হাত নাড়ে,, কথা বলে।সবার প্রতি ভালবাসা যেমন দেয় তেমন আমি ও পাই।
আপনার বাগানের প্রতিটি সাইকাস অনেক
বাগানে ছড়িয়ে আরো সাইকাস তৈরি করছে। তাই তারাও আপনাকে ছাড়তে চায় না রেখে দেবে
চিরদিন "হৃদমাঝারে"!
"বনপলাশের আলিঙ্গন দেব তোমায়
পলাশের মতো রঙীন মন দেব তোমায়
পলাশের মত শব্দহীন কবিতা দেব তোমায়,,,,"
কবিতা: পলাশ
এসব লিখতে লিখতে আমি বুঝতে পারছি, পেরিয়ে যাচ্ছে, লাগেজ ভ্যানের বাইরে ঝাড়খণ্ড এর ক্যানভাস এ ছড়িয়ে থাকা
বনপলাশ,
স্বর্নরেখা নদী,,পাহাড়,,,জঙ্গল।
"অনেকদিন হারিয়ে যাইনি বনপথে
অনেকদিন জীবনধারণ কোনমতে
আবার এই নাচার বসন্ত দিয়েছে দোলা
হয়ে যাবো আজ দুজনেই পথিকভোলা।"
কবিতা:এই বসন্তে (৬১ পাতা)
স্যর,,
আর কিছু দিন পর পলাশের রং ভরিয়ে তুলবে ঝাড়খণ্ড এর ক্যানভাস,,,,,,
"এই শাল পিয়াল
মহুয়া মাতাল লাল মাটির দেশে
মেহূল, শিশির
ভেজা শিউলি গন্ধমাখা
বকুল বিছানো পথে একদিন আসিস।
তোকে নিয়ে যাবো লাল সাদা
শালুক সাজানো পুকুর ধারে,,, "
কবিতা:মেহূল আয়
"ধানকাটা মাঠে দুএকটি শিষ পড়ে আছে
খুঁটছে সেই ধান, শালিকেরা মহাভোজে
সর্ষেক্ষেতের পাশের আলপথে
কে দাঁড়িয়ে এত আলো নিয়ে
তার শাড়ীর আঁচলে মুঠো মুঠো
সর্ষেফুল
কে দিল এত পরম সোহাগে আদরে?"
কবিতা :শীত রুপিনীকে(৪৩) পাতা,
প্রকৃতি নেমে এসেছে আপনার কবিতায়। প্রকৃতি র রং এ রঙিন হয়ে যায় পাঠকের
মন।!!!ছবি আঁকা হয়ে আছে অক্ষরে অক্ষরে।
০৯/২/১৭
একদিন পেরিয়ে আবার বসেছি আপনার
লেখা বই খানি নিয়ে।ট্রেন দ্রুতগতিতে
পেরিয়ে যাচ্ছে গোদাবরী ব্রীজ।এই ব্রীজের নীচে প্রতিদিনকার মত আজকেও হয়তোকয়েকটা
ডিঙি ঘোরাফেরা করছে।না ওরা মাছ ধরে না।যাত্রী দের নদীর উদ্দেশ্য এ দেওয়া দান মানে
টাকা পয়সা বা অন্য যা কিছু জল থেকে তুলে এনে সেদিনকার মত দিনগুজরানো।
"সব নদীজল নোনাজল হয়ে
বহুদিন আগে গেছে বয়ে
বিয়াস, ঝিলম কিম্বা মেঘনা হয়ে
এই দুচোখের কিনারা বেয়ে,,,।"
কবিতা;ফেরা ৬০ পৃ
কত কি ঘটে যায়।ঘটছে।ট্রেন ছুটছে।
জীবন ছুটছে।
"এই মানব মন্ডল সৌরমণ্ডলে
কোন তফাৎ নেই শুধু
এখানে মাধ্যাকর্ষণ নেই
তাই কাওকে ধরে রাখা যায় না"
তবুও সে চলে যায়
সে দিয়ে যায় কিছু
স্মৃতি কুসুম চরণ চিহ্নে
সাজিয়ে।"
কবিতা:মানব মন্ডল ৪৯ পৃ
",,,,জীবনের এই খেলায় ভয়কে জয়
করে আয়, ফিরে আয় সেই সেখানে
রেলপাড়ের মাঠে,প্রজাপতির পাখনায়"!
কবিতা:ফিরে আয় ১১৪ পৃ
স্যর,,
অন্ধ্রপ্রদেশ এ এখন ঠান্ডা নেই,,অবশ্য ঠান্ডা সেরকম পড়ে না।এখানে যেদিকে তাকাই তালগাছ আর
তাল গাছ।আবার মাঠ সবুজ হয়ে উঠেছে।ধান গাছ আবার মাঠ ভরিয়েছে।
"সরু আলপথ বেয়ে বিস্তীর্ণ ধানমাঠ
দুধারে যেমন সবুজ গামছা পেতে শুয়ে
থাকে
সরু সরু নালা দিয়ে সারাদিন জল বয়ে চলে
ব্যাঙ ডাকে,সরু
সরু সাপ আর নানান মাছ
ভেসে চলে, মাটির ভিতর দিয়ে মাটির গান,,,"
কবিতা: আমার স্বর্গ পৃ৮৭
আহা কি সুন্দর,,,,,,।
আবার যখন ফিরে যাব সাঁওতাল পরগনা র
অভিমুখ এ।সেখানে এখন বসন্ত।
"শিমুল রাঙা বসন্ত দিন
আজ ফাগুনে সবই রঙীন।
নরম রোদের শিমুল সখী
একটি দুটি মেলেছে আঁখি।"
কবিতা:কৃষ্ণ চুড়া
বা
,,,,,,হারিয়ে যাওয়া সময়টাকে
দেখে এলাম মেঘের দেশে
সাঁওতালী এক মেয়ের বেশে।"
কবিতা:বর্ষারূপিনী
বা
"শালবীথি শাজাণো রাস্তায়
দাঁড়িয়ে টুপটাপ বৃষ্টি তে
ভিজে যায় গাড়ির উইন্ড স্ক্রিন
ঝাপসা- দুচোখে নরম বৃষ্টি।''
কবিতা:বৃষ্টিদিনের আনন্দ
কোন কবিতার কথা লিখব।!লিখে শেষ করা যাবে না।
ভাগ্যিস টাইপিং লেখা,আমার
হাতের লেখা এত বিচ্ছিরি যে পড়তেই পারতেন না।ছোটবেলা থেকেই বাংলায় তালবশ্য লিখতেই
হিমশিম খেয়ে যেতাম। আর তালবশ্য' দিয়ে আমার নামের শুরু। এতক্ষন তালেই আটকে থাকতাম।
যাই হোক তালেগাছের দেশ ছেড়ে আমাদের "স্মার্ট সিটি"র বাবুদের 'কথা লিখেছেন
"ভরে যাবে, সারি সারি ফ্লাট বাড়িতে
ওদের বলেছি একটুও ঘাস, আগাছা
জংলীফুল যেন, কোথাও দেখা না যায়
সব সাফ করে দিতে হবে,,,,,,!
কবিতা:স্মার্টসিটি
তা হলে এই অধম আগাছার জায়গা কোথায়
হবে!
পরিশেষে একটা কথা,,,
রবী ঠাকুরের "ছেলেটা"
কবিতায় কবির আক্ষেপ
যে তিনি ছেলেটির মনের মতন করে কবিতা লিখতে পারেননি,,,তাই হয়তো পাতা ছেড়া,,,,,,
কিন্তু আপনি আমার মন রাঙা করেছেন,,,,
তাই শ্রদ্ধেয় ড: সুশীল ভট্টাচার্য মহাশয়ের কথাটাই প্রমানিত হয়েছে,,,,,,,আধুনিকতা য় মোড়া সহজবোধ্য কবিতা,,,,,,।
প্রনাম নেবেন।
ইতি,
শীতল
।। সমাপ্ত ।।
| Aleekpatamagazine.blogspot.in |
| Editor: Swarup Chakraborty | Publisher: Debasree Chakraborty |
|ALEEK PATA-The Expressive World |Online Magazine |
|a DISHA-The Dreamer Initiative |
|Special Puja Issue,2019 | September-October, 2019 |
| Third Year Third Issue |20Th Edition|
|© All Rights Reserved By The Editor and The Publisher |