অলীক পাতার অন্যান্য সংখ্যা- পড়তে হলে ক্লিক করুন Library ট্যাব টি
Thursday, April 15, 2021
ক্যানভাস - সিদ্ধার্থ -মৈত্রেয়ী মুখোপাধ্যায়
ক্যানভাস - শ্রীকৃষ্ণ -মলয় বর্ধন
** ক্যানভাস **
শ্রী কৃষ্ণ
মলয় বর্মণ
ফটোগ্রাফি- অর্ঘ্য- সন্দীপ দাস
** আলোকচিত্র**
কবিতা-পুরাতন -পপি মৈত্র
পুরাতন
পপি মৈত্র
পুরাতনে আছে কত ভাঙাগড়ার খেলা ,
পুরাতনে আছে যত সুখ দুঃখের মেলা ।
পুরাতনে লেগে থাকে স্মৃতির পরশ,
স্মৃতির পাতায় রয়ে যায় কিছু অজানা মুখোশ।
পুরাতন কিছু জিনিস রাখা থাকে যতনে,
কেউ কেউ রয়ে যায় শয়নে স্বপনে।
পুরাতন থাক না স্মৃতির দেওয়ালে,
মাঝে মাঝে দোলা দিক মনের খেয়ালে।
পুরাতনে আছে অনেক ভালোলাগা ভালোবাসা,
কিছু স্মৃতিতে ধরা দেয় মাতাল নেশা।
পুরাতন থেকে যায় মনের গভীরে,
স্মৃতি ছাড়া পুরাতন আর আসে না ফিরে।
কবিতা-আগাছার উল্লাসে - অর্পিতা ঘোষ পালিত
আগাছার উল্লাসে
অর্পিতা ঘোষ পালিত
মাটিতে শেকড় ছড়িয়েছিল অনেকটা,
খুশিতে সবুজ পাতায় সেজে উঠেছিল
তবু উৎসবে মেতে আকাশ ছুঁতে পারলোনা!
বিষাদ মেখে বনসাই হয়ে থাকলো
আশেপাশের আগাছাগুলো তরতর করে মাথা তোলে
কুয়াশা মাখা সকালে নতুন প্রসূতি উল্লাস করে আগাছার বিন্যাসে
জল্লাদের হাড়িকাঠে শেষ সময়ের অপেক্ষা…
গাছটার দুর্ভোগ দেখে নিথর বনভূমি
কবিতা-বৃষ্টিভেজা সন্ধ্যে - সুপ্রিয়া মণ্ডল
সুপ্রিয়া
মণ্ডল
জমিয়ে রাখা কিছু টুকরো স্মৃতি, কিছু ক্ষয়ে
যাওয়া সম্পর্ক;
আর চেতন-অবচেতনে সবার
আনাগোনা—
কারা যেন বলেছিলো, ভালোবাসলে
বৃষ্টিতে ভিজতে হয়।
আমি ভালোবাসলাম, কিন্তু
পুড়ে হয়ে উঠলাম আবলুস কাঠ!
আমার ভেতরে ধূ ধূ সাহারা, আর সামনে
মরীচিকার হাতছানি—
ধার চাইলাম একটা বৃষ্টি-ভেজা
সন্ধ্যে, আর
দু'টো
ভরসার হাত,
সন্ধ্যেটা তুলে নিয়ে
মৌসিনরাম আমায় উপহার দিলো,
তাই, আমার বুকে
এখন বঙ্গোপসাগরের ঢেউ,
চোখ জুড়ে হঠাৎ কালবৈশাখীর
আগমন।
চাতকের মতো বসে আছি এক ফোঁটা
বৃষ্টির অপেক্ষায়...
কবিতা-নিরাময় খুঁজি - রবীন বসু
রবীন
বসু
এত রক্ত লেগে আছে হাতে
সহজে কি হাত ধোয়া যায়?
এত পাপ এই ক্ষতি, সেকি
মহার্ঘ প্রায়শ্চিত্তকে পায়?
হিংস্র হায়না মুখ, তীক্ষ্ণ দাঁত
কামড়ে যে লোলুপতা ঝরে
বিদ্বেষ মাখামাখি দংশন
কী দিয়ে যে প্রতিহত করে!
এত দ্বিচারিতা ধরা হাত
মিথ্যার অলজ্জ অভিমুখ
তার সাথে নিত্য ওঠাবসা
পরিণাম অসুস্থ অসুখ !
যত গুপ্ত ক্ষত নিয়ে বাঁচি
ততটাই নিরাময় খুঁজি
প্রাণ আজ উৎসাহ পাক
দু'হাতে
আরোগ্যই পুঁজি।
গল্প-কিছু স্মৃতি অমলিন - অভিষেক ঘোষ
অভিষেক
ঘোষ
(১)
"নাও তৈরি
হয়ে নাও... এবার বেরোতে
হবে ।"
"না.. মা
আজ একদম যেতে
ইচ্ছে করছে না
।"
"কী ব্যাপার
বলো তো ? তুমি আবৃত্তি
না করলে, প্রোগ্রামে লজ্জায়
আমার মাথা কাটা
যাবে, এটা
এতবার বলার পরেও
বুঝতে পারছো না ? এই
জন্যই গত তিন
দিন ধরে বারবার
প্র্যাকটিস্ করাচ্ছি ?"
"কিন্তু আজ
যে..."
"আজ কী ?"
"আজ দুপুরে
টিভি-তে যে শোলে
আছে... !"
"কে তোমার
মাথায় এই বয়সেই
এসব ঢোকায় বলো
তো ?"
"সব্বাই যে
বলছে, শোলে টিভিতে
দিলে নাকি রাস্তাঘাট
একদম ফাঁকা হয়ে
যায় ! সত্যি
মা ?"
"তাহলে তুমি
আবৃত্তি করবে না তাই তো
!"
"আজকের দিনটা
থাক্ না, মা
!"
"আজকে আবৃত্তির
প্রোগ্রামে তুমি যদি না যাও, তাহলে সামনের
মাসে দীঘায় যাওয়া
ক্যানসেল । আমিও যাবো
না, তুমিও যেতে
পারবে না !
ভাবছো খুব বড়ো
হয়ে গিয়েছো, তাই
তো !"
এরপর অবশ্য
আর তর্কের অবকাশ
থাকে না ।
অদেখা সমুদ্রের অচেনা
ঢেউ তার অপ্রকাশিত, অসীম সম্ভাবনা
নিয়ে অ্যায়সা পেল্লায়
হাতছানি দেয়, যে
ক্লাস ফোরের ছেলেটাকে
মায়ের হাত ধরে
গুটিগুটি রওনা দিতেই
হয় ক্লাবের পথে
। সেখানেই বসেছে
বিচিত্রানুষ্ঠানের বিভিন্ন ইভেন্টের
আসর ।
কিন্তু হায়
! না গেলেই
বোধহয় ভালো হত
! মায়ের মুখোজ্জ্বল
তো হলই না, উলটে মায়ের
হাতে কানমলা খেয়ে, কাঁদতে কাঁদতে
চোখ লাল করেই
বাড়ি ফিরতে হল
ছেলেকে । মাত্র আট লাইনের
একটা কবিতা আবৃত্তি
করতে গিয়ে চার
লাইন বলেই কারো
কী করে গুলিয়ে
যেতে পারে, মায়ের মাথায়
তা কিছুতেই আসে না ।
এই জন্যই এত
অভ্যাস... এত্ত প্রহসন
! সব জলে গেল !
এদিকে রাস্তা সেভাবে জনশূন্য
না হলেও বাড়িতে ঢুকেই দেখা গেল, টিভির সামনে একেবারে হট্টমেলা বসে গিয়েছে - বাড়ির এ টু জেড
- সব্বাই উৎসুক চোখে টিভির সামনে হাজির, এমনকি পাশের বাড়ির দুটি ছেলে-মেয়েও
হাজির । 'শোলে' শুরু হয়ে
গিয়েছে। একটা অদ্ভুত ভীতিপ্রদ আর্ত সুর মাঝেমাঝেই আবহে হাজির হয়ে, পিছলে
বেরিয়ে যাচ্ছে আর স্পষ্ট হয়ে উঠছে পাথুরে টিলায় গব্বরের বুটের শব্দ ও বুলেট-আটকানো
একটা ভারী, ঘাতক
বেল্টের রোমহর্ষক ঘষটানি । ডাকাতদল খালি হাতে ফিরে আসার পরে, গব্বর যখন
ঠিক মায়ের মতোই বললো,
"ক্যায়া সমঝ কর্ আয়ে থে ? কি সর্দার বহুৎ খুশ হোগা ? সাবাশি দেগা, কিঁউ
!", খোকার
বুঝতে অসুবিধে হল না,
ওই তিনজন বকা-খাওয়া ডাকাতদল আর প্রতিযোগিতায় একেবারে ল্যাজেগোবরে হওয়া তার
মধ্যে, এতটুকু
পার্থক্য নেই । কিন্তু তারপর ভয়ংকর কান্ড ! কান-টান মুলে দিলেই মিটে যেত ! তা না
করে, গব্বর
সিং একেবারে বন্দুক তুলে বললে, "বহুৎ না ইনসাফি হ্যায় !", বলেই আকাশে
তিনবার ফায়ার করে তিনটে গুলি এমনিই খরচ করে দিল ! একটা ভয়াবহ কিছু হতে চলেছে অনুভব
করে ছোট্ট ছেলেটা তার মায়ের সমস্ত বকাবকি, অসময়ে হাততালি শুনে অসমাপ্ত কবিতা
শেষ না করেই স্টেজ থেকে নেমে আসার নিদারুণ কষ্ট, বেমালুম ভুলে যায় ।
তারপর গব্বর বললো, "হামকো কুছ
নেহি পতা । ইস্ পিস্তল মে,
তিন জিন্দেগি, ঔর
তিন মৌত বন্ধ হ্যায় ।" উফ্ কি সাংঘাতিক !
প্রথম দুটো ডাকাত বেঁচে
যাওয়ার পর কালিয়ার মৃত্যু যে নিশ্চিত তা আর বলে দিতে হয় না ! গব্বর এল আর বললো, "আব তেরা
কেয়া হোগা রে কালিয়া ?"
কালিয়া প্রত্যাশিত জবাবই দিল, সভয়ে "ম্যায়নে আপকা নমক খায়া হ্যায় সর্দার !" উফ্
এর পরেও কেউ বন্দুক তুলতে পারে, এত বিশ্বাসী লোকটার দিকে ! কিন্তু নাহ্... নিষ্ঠুর গব্বর
বললো, "আব
গোলি খা ।" ভাবা যায় ! এর পরেও গুলি চললো না, আর শুরু হল বিকট হাসাহাসি । পাহাড়ের
টঙে বসে সাম্বাটাও হাসতে লাগলো । তিনটে ডাকাত ভুলে গেল, মৃত্যুর
নিশ্চিত পরোয়ানা আর যোগ দিল সেই হাসিতে । আর তারপরই... গব্বরের পিস্তল চললো ।
তিনটে দেহ লুটিয়ে পড়তেই,
শোনা গেল চিল-শকুনের চিৎকার, যেন মোচ্ছবে খেতে এসে এতক্ষণ অপেক্ষায় ছিল ওরা ।
গব্বর নির্বিকার ভাবে বললো, "যো ডর
গ্যায়া, সমঝো
মর্ গ্যায়া ।" ছেলেটি মনে মনে নিজেকেই বলতে বাধ্য হল, এর চেয়ে
আমার মা শতগুণে ভালো বাপু ! গোলি টোলি খেতে হয় না । বলেই পিছন ফিরে দেখে কুলফি
মালাই নিয়ে মা দাঁড়িয়ে,
ঠিক পিছনে । সেটা হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললে, "অনেক বকা খেয়েছ, এবার কুলফি
খাও । কিন্তু গব্বর সিং যেটা বললো, মনে থাকে যেন । যো ডর্ গ্যায়া...
"
সহর্ষে ছেলেটা সে দিন বলে
উঠেছিল, "সমঝো
মর্ গ্যায়া... আর কোনো দিন এরকম হবে না, তুমি দেখো ।"
(২)
পনেরো বছর কেটে গিয়েছে প্রায়…
। সে দিন উত্তরে মা ঠিক কী বলেছিল, আজ আর মনে পড়ে না । শুধু আজ ফেসবুকে
কিছু মাতব্বর বোদ্ধাদের লেখা পড়ে তমালের হাসি পায় ! একটা ফেসবুক গ্রুপে সে শোলে-র
ছবি আপলোড করেছিল গতকাল । আজ লগ-ইন করে দেখছে, কেউ লিখেছে, "ভাই আদেও
দেখার মতো ?" কেউ লিখেছে,
"হিন্দি ছবির আবার ওয়েস্টার্ন !" একজন তো লেকচার দেওয়ার
ভঙ্গিতে ব্যাখ্যা করেছে,
'Once Upon a Time in the West' ছবিটা থেকে শোলে কোথায় কোথায় টোকা আর
'Seven Samurai' না
থাকলে কেন শোলে বানানোই হতো না !
ইচ্ছে করছিল গুছিয়ে জবাব দেবে, কিন্তু
নিজেকে সংযত করে তমাল । সবার রুচি সমান নয়, তাই বোঝাতে গেলে উল্টে ট্রোলড হতে
হবে । তখন উলটে তাকেই কেউ শুনিয়ে যাবে হাঙ্গাল সাহবের সেই অমর সংলাপ "ইতনা
সন্নাটা কিঁউ হ্যায় ভাই !" হাসি পায় তমালের কথাটা ভেবে । সেই সঙ্গে সে অনুভব
করে, কিছু
স্মৃতি এতটাই সজীব থাকে মনের মধ্যে যে, সময়ের চোরাস্রোত কোনোদিনই তা মুছে
দিতে পারবে না । সমালোচকের সমালোচনা তো সেখানে তুচ্ছ । সে ভাবে, আবার ছবিটা
দেখতে হবে, এবার
একেবারে ব্লু রে-তে ।