বরফি
সৈকত সরকার
বরফি
সৈকত সরকার
সম্পাদকীয়- হিম সংখ্যা-১৪২৮
( সত্যজিৎ রায় জন্মশতবর্ষ সংখ্যা, অগাস্ট ২১-জানুয়ারী ২০২২ )
অলীকপাতার প্রিয় বন্ধুরা,
কেমন আছেন সবাই, ভালো নিশ্চয়ই,
অনেক বাধা বিপত্তি ও সুদীর্ঘ বিরতির পর অলীকপাতার বহুকাঙ্খিত এই সংখ্যাটি অবশেষে আপনাদের
হাতে তুলে দিতে পেরে সত্যিই খুব ভালো লাগছে, হাল্কা লাগছে।
শেষ তিনটি সংখ্যার ক্ষেত্রে একটা
কাকতালীয় ব্যাপার খুব অদ্ভুত ভাবে নজরে পড়ল, ব্যাপারটি বেশ মজারও বটে, সেটি হল অলীকপাতা
হাসিরাশি সংখ্যাটি বের হয়েছিল ‘কোভিড-১৯’ এর প্রথম ঢেউয়ের সময়, ‘হাসি খুশি মন সুস্থ
শরীরের আধার’, এই আপ্তবাক্যটির কথা মাথায় রেখে গোটা পৃথিবী যখন নতুন রোগের
ভয়াবহতায় থরথর কাঁপছে তখন আমরা পরিকল্পনা করি ‘হাসিরাশি’ সংখ্যার, খুব বেশি না
হলেও বেশ সাড়া পাই লেখক লেখিকাদের কাছ থেকে, সমস্ত লেখাগুলিকে উপযুক্ত অলঙ্করণে ভরিয়ে তোলেন প্রিয় বন্ধু মিঠুন
দাস, তাঁর ঝকঝকে প্রচ্ছদ ও গল্পের জন্য করা অলঙ্করণ গুলি সমস্ত ব্যাপার টিকে আলাদা
মাত্রা এনে দেয়, এর পরের সংখ্যা আসতে আসতে অলীকপাতার পাঁচ বছর পূর্ণ হয়ে পঞ্চম জন্মদিন
সংখ্যা আসে বাংলা নববর্ষে, সাথে সাথে চলে আসে ‘ডেল্টা’ ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে কোভিডের
দ্বিতীয় তথা সব থেকে ভয়াবহ ঢেউ, আর এই তৃতীয় সংখ্যা টি আসছে তৃতীয় ঢেউয়ের সাথে,
খুব অদ্ভুত তাই না!
দ্বিতীয় ঢেউয়ে চেনাপরিচিত
সবাই আক্রান্ত হতে শুরু করেন, বেশ কিছু প্রিয় জন হারিয়ে যান, ততদিনে একটি
ভ্যাক্সিনের ডোজ নেওয়া আমি নিজেকে খুব বীরপুরুষ ভেবে ও অনেকটা মানবিক কারণেই রোগীদের
কাছাকাছি আসতে বাধ্য হই ফলতঃ কয়েকদিনের মধ্যেই সকন্যা আমিও করোনার ‘আশীর্বাদ’ লাভ
করে ফেলি, ভোগান্তির সে একশেষ, সহধর্মিণী ও প্রকাশিকা দেবশ্রীর আপ্রাণ চেষ্টাতে কোনওক্রমে
এযাত্রা বেঁচে ফিরলেও অদ্ভুত ভাবে মানসিক অবসাদের কবলে পড়ি। সেটা মে মাসের প্রায়
মাঝামাঝি।
অসুস্থতার কারনে মে মাসে শ্রী
সত্যজিৎ রায়ের জন্ম শতবার্ষিকী তে সত্যজিৎ
পাগল আমি আর আমার প্রিয় ভাই - প্রতীক (মুখার্জী) সত্যজিৎ বাবুকে নিয়ে কিছু করতে না
পেরে শারদ সংখ্যায় সত্যজিৎ রায় কে নিয়ে একটি বিশেষ ক্রোড় পত্র করার পরিকল্পনা করি,
প্রতীক প্রচ্ছদ পরিকল্পনা করে ফেলে, চলতে থাকে অলীকপাতার কাজ, কিন্তু বিধি বাম, আমার মানসিক অবসাদ আরও বাড়তে থাকে
আর এর মাঝেই অলীকপাতা ব্লগার ডোমেন থেকে নিজস্ব ডোমেনে মাইগ্রেট করে আর ‘aleekpatamagazine.blogspot.com’ হয়ে যায় ‘aleekpata.com’ আর সঙ্গে নিয়ে আসে কিছু যান্ত্রিক
সমস্যা, ফলে কাজ বন্ধ রাখতে হয় সাময়িক ভাবে, বন্ধ হয়ে যায় পুজা সংখ্যা।
কিন্তু কথায় বলে বিষে বিষক্ষয়, তাই, আমিও
আমার মনের খরা কাটাতে চালিয়ে গেলাম ছোট ছোট কিছু প্রজেক্টের কাজ, দেবশ্রীর ‘দিশা দ্য
ড্রিমার’ পেজের জন্য কিছু ভিডিও বানালাম, এই সময় টিতে প্রতীকের বার
বার উৎসাহ প্রদান ও দেবশ্রীর অনলস প্রচেষ্টা তে কাজ শুরু হল পুনরুদ্দমে, এবার
পরিকল্পনা হল ‘হিম সংখ্যার’। এসে গেল প্রচুর লেখা, ছবি, ফটো, স্থির হয়েছিল যে সখ্যাটি
বেরোবে ডিসেম্বরে, কিন্তু…
সত্যজিৎ বাবু তাঁর গল্পে বিভিন্ন সময়
অতিপ্রাকৃতিক একটা দৃষ্টিকোণ নিয়ে নাড়াচাড়া করেছেন বেশ সফল ভাবে, আর তাঁর জন্মশতবর্ষে
ও বোধহয় তাঁর আমাদের বাজিয়ে দেখার ইচ্ছে হল, আমরা কতটা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ- তাঁর কত বড় ‘ভক্ত’
সেটা দেখতেই বোধহয় হল আমার আর একটি পরীক্ষা-
ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই লেখা
ছাঁটাই বাছাই, শেষ, কম্পোজ হয়ে গেছে, বিজ্ঞাপনের ভিডিও রিলিজ হয়ে গেছে, শুধু অনলাইনের
কাজ গুলো বাকি, পঁচিশের জন্য আমরা সবাই তৈরি, এরই মাঝে দশ তারিখের দিকে কম্পিউটার খুলে
দেখি কি সর্বনাশ, প্রায় দুশো পাতার কাজ করা ফাইল টি কোরাপ্ট হয়ে গেছে, শেয়ারে কাজ করি
আমরা, শেয়ারড ফোল্ডারও এম্পটি!!
মাথায় হাত, কিন্তু এবারে আর হাল না ছেড়ে
দাঁতে দাঁত চেপে পুনরায় শূন্য থেকে শুরু করলাম, আর প্রায় পনের- কুড়ি দিনের পরিশ্রমের
পর, অবশেষে…
যাক, এবার কাজ শেষ করতে পেরে সত্যিই মাথা
থেকে বোঝা নামল।
এবার আপনাদের কেমন লাগল জানাতে ভুলবেন
না যেন…
সত্যজিৎ রায়ের ওপর বিশেষ ক্রোড় পত্র টি
ছাড়াও এবারের নিয়মিত বিভাগ গুলি মিলিয়ে শতাধিক লেখা ছবি ইত্যাদি নিয়ে হিম সংখ্যা সত্যিই
জমজমাট, এছাড়া আছে একটি চমক, অসাধারণ গুনের অধিকারী স্বনামধন্য শিল্পী, আমাদের পরিবারের
নতুন বন্ধু, শ্রী সৈকত সরকার থাকছেন তাঁর তৈরি কিছু অসাধারণ কাজ নিয়ে, আপনারা সবাই
ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, এই প্রার্থনা জানাই সর্বশক্তিমান কে।
নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে নিই বিদায়…
নমস্কার
স্বরূপ চক্রবর্তী
হরিদ্বার
১৭ই জানুয়ারী,২০২২
CLICK ANYWHERE ON THE
COVER PAGE TO READ THE MAGAZINE
পত্রিকা
পড়ার জন্য কভার পেজের ওপর যেকোনোও স্থানে ক্লিক করুন
| হিম সংখ্যা-১৪২৮| aleekpata.com|
|ALEEK PATA- Your Expressive World |Online Magazine |
| Editor:
Swarup Chakraborty | Publisher: Debasree Chakraborty|
Winter ,
2021 | August
-December 2021 | Fifth
Year Second Issue |28 th Edition|
|© All Rights Reserved By The Editor and The
Publisher |
|a
DISHA-The Dreamer Initiative |
ক্যানভাস-দেখছি
সুশান্ত
সেন
ক্যানভাস- দ্রুতি
অলভ্য ঘোষ
ফিরুন সূচিপত্রে
ক্যানভাস-একদিন
প্রতিদিন
অলভ্য
ঘোষ
️
ধারাবাহিক ভ্রমণ কাহিনী (পর্ব ৩)
কৌশিক বসু
অলীকপাতা শারদ সংখ্যা ২০২১ থেকে ধারাবাহিক ভাবে শুরু হওয়া আধ ডজন ভ্রমণ কাহিনীর
তৃতীয় কিস্তি
আগের পর্ব পড়তে ক্লিক করুন এই লিঙ্কে ( পর্ব ২)
এবারের পর্ব কুর্গ
এবারে লিখছি আমাদের কুর্গ ভ্রমণ নিয়ে। আগেরদিন বানেরঘাটা ঘুরে রাত্রে মহীশূর
থাকার একটি কারণ ছিল কুর্গের দিকে একটু এগিয়ে থাকা যাতে একদিনের সফরে একটু বেশী সময় হাতে থাকে। খ্রীষ্টমাস ইভ এর দিন অর্থাৎ
২৪ ডিসেম্বর ২০১১, সকাল আট টা নাগাদ হোটেল থেকে বেরিয়ে পড়লাম আমরা, বেশ কনকনে ঠান্ডা লাগছিলো সকালে, এতটা ঠান্ডা আশা করিনি রাস্তায় একটু
দাঁড়িয়ে ব্রেকফাস্ট করে নেওয়া হলো। ব্রেকফাস্ট যাকে বলে বেশ গুছিয়েই হয়েছিল, তার পরে
রাস্তায় প্রচুর ফলের দোকান দেখলাম, তার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো কমলালেবু, খুব
ইচ্ছে হচ্ছিল কেনার কিন্তু গিন্নী মানা করলো - এক ছেলে গাড়ি নোংরা করবে খেতে গিয়ে আর
লম্বা সফর বাকি আরো ৮ দিনের যার মধ্যে বাসে যাওয়া আছে। তাই নিজের তাৎক্ষণিক লেবু খাবার
ইচ্ছা দমন করতেই হলো, অগত্যা গোমড়া মুখে চললাম।
ছেলে বসেছিল ড্রাইভারের পাশে, ড্রাইভার সাহেব বিশাল চেহারার কানাড়ি ভদ্রলোক,
ব্যাঙ্গালোর থেকে আমাদের সঙ্গে আছেন গতকাল থেকে, বাচ্চা ছেলেকে গান শোনাচ্ছিলেন নিজের
পেন ড্রাইভ এর স্টক থেকে, তার মধ্যে একটি গান ছিল - ওয়াই দিস কোলাভেরি দি। শুনে ছেলে মোহিত, ড্রাইভার সাহেবও ছেলেকে খুশি
করে প্রথমে খুশি, কিন্তু একটু বাদে বুঝতে পারলো কি ভুল করেছে। একবার করে গান শেষ হচ্ছে
আর ছেলে অমনি রিওয়াইন্ড বোতাম টিপে আবার এক গান বাজাচ্ছে। এক গান শুনে কান প্রায় পচে
যাওয়ার জোগাড়! এইসব চলতে চলতে প্রায় আড়াই ঘন্টা গাড়িতে লাগলো প্রথম গন্তব্যস্থলে পৌঁছতে।
প্রথম গন্তব্যস্থল আবে জলপ্রপাত। এই শীতকালে জলপ্রপাতে যথেষ্ট জল দেখে লেবু
না খাবার দুঃখ বা এক গান শোনা পচা কান নিমেষে ঠিক হয়ে গেল। বেশ ভালোই ভিড় ছিল, যতবার
ছবি তুলতে যাই, কেউ ঠিক ফ্রেম এ ঢুকে পড়ে। আমাদের দেশে লোকজন এতো অবুঝ কেন ভাবতে ভাবতে
যেভাবে পারি ছবি তুলে ফেললাম পটাপট। একটি ছোট লোহার ব্রিজ রয়েছে দর্শনার্থীদের জন্য,
সেখান থেকে সুন্দর কিছু ছবি তুলে একটু শান্ত হলাম। কালো পাথরের ওপর জলের সাদা ধারা,
যদিও প্রায় পুরোটা গাছের ছায়ায় নাহলে হয়তো ছবি আরো ভালো আসত।
জলপ্রপাত থেকে আমরা মেডিকেরির দিকে রওনা হলাম, রাস্তায় হরিণ দেখলাম কয়েকবার।
প্রথমবার তো গাড়ি দাঁড় করিয়ে রীতিমতো ছবিও তোলার প্রচেষ্টা হলো, কিন্তু হরিণ বড়ই লাজুক,
তাই ক্লিক করার আগেই ঝোঁপের মধ্যে ধুলে গেল, অগত্যা জায়গাটারই একটা ছবি তুললাম - সবুজে
মোড়া চারদিক, মাঠে গরু চড়ছে। ড্রাইভারসাহেবের কাছে শুনলাম আরো অনেক জন্তু জানোয়ার দেখা
যায় উনি নিজে দেখেছেন - হাতি, চিতা, শুয়োর, ইত্যাদি। এরপর আমরা মেডিকেরি পৌঁছলাম।
একদম প্রথমে গেলাম ওঙ্কারেশ্বর মন্দিরে। প্রথমে মন্দিরে যাওয়ার কারণ কিছুক্ষনের
মধ্যে মন্দির দুপুরে বন্ধ হয়ে যাবে। এই মন্দিরটি ভগবান শিবকে উত্সর্গীকৃত একটি প্রাচীন
মন্দির। রাজা লিঙ্গরাজেন্দ্র দ্বারা ১৮২০ সালে নির্মিত মন্দিরটির বিশেষত্ব হ'ল এটির
নির্মাণ গথিক এবং ইসলামী শৈলীর মিশ্রণকে প্রতিফলিত করে। এটা বিশ্বাস করা হয় যে এখানে
প্রতিষ্ঠিত ভগবান শিবকে কাশী থেকে আনা হয়েছিল এবং কাশীতে পূজা করা পাঁচটি শিবলিঙ্গদের
মধ্যে অত্যন্ত পবিত্র একজন।
এর পরের গন্তব্যস্থল রাজার আসন (Raja’s seat)। তা যে রাজার কারণে এই স্থানের
নামকরণ তিনি যে প্রকৃতি প্রেমিক তাতে কোনো সন্দেহ রইলো না এখানে এসে। অনেকটা খোলা জায়গা
চারদিকে, বহুদূর অবধি দেখা যায়, তাই দৃশ্যও অতি মনোরম। এখানে নিচে একটি প্রায় অর্ধ
বৃত্তাকার বারান্দার মতন আছে আর ওপরে রাজার আসন। এক দিনের না হলেও নিজেকে এক পলকের
রাজা মনে করার চেষ্টা করে এই অপরূপ সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করলাম কিছুক্ষণ। সম্বিৎ
ফিরে পেয়ে কিছু ছবিও তুললাম। এখানে একটি অত্যন্ত ছোট টয় ট্রেন আছে জাতীয় চড়ে কাছাকাছি
অনেকটা ঘুরে দেখা যায়, সৌভাগ্যবশতঃ খুব একটা বেশিক্ষণের অপেখ্যা করতে হয় এমামদের তার
জন্য। কিছুটা রাজার বাগান আর কিছুটা অকৃত্তিম প্রকৃতি ভরা রাজ্য ঘুরে দেখা হলো এই ভাবে।
ঘুরতে ঘুরতে দুপুর দুটো বেজে গেছে, খিদেও পেয়েছে প্রচন্ড, তাই খাওয়াটাও হলো
রাজকীয়, যে রেস্টুরেন্টে গেলাম সেখানে শুধু খালি পাওয়া যাচ্ছিলো তখন, অগত্যা তাই অর্ডার
করলাম। খেয়ে দিয়ে আবার মেডিকেরি দুর্গ জয় করতে এগিয়ে পড়লাম আমরা। দুর্গ বিশাল বা আহামরি কিছু নয়, কিন্তু এসে যখন পড়েছি তখন
ঘুরে দেখলাম। এখানে দশেরা খুব ধুমধাম করে হয়, তার কিছু মূর্তি দুর্গের নিচে রাখা আছে,
আর কিছু মূর্তি আছে যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু কালো পাথরের হাতি। আরেকটি উল্লেখযোগ্য
জায়গা হলো একটি ছাদের মতো জায়গা যেখান থেকে অনেকটা দেখা যায় দুর্গের।
এরপর আমরা পৌঁছলাম দুবারে হাতির ক্যাম্পে, এখানে বুনো হাতি ধরে এনে পোষ মানানো
হয়। আমরা পৌছেছি তখন প্রায় সাড়ে তিনটে বেজে গেছে, আমাদের হাতির স্নান দেখার সৌভাগ্য
আর হয় নি। পাশ দিয়ে কাবেরী নদী বয়ে চলেছে, সৌভাগ্যবশতঃ শীতকাল হলেও জল ভালোই ছিল, একটু নৌকোবিহার করলাম, সঙ্গে প্রকৃতিকে উপভোগ
করা হলো, ঘন সবুজে ঘেরা চারদিক, দূরে কয়েকটা বকও
দেখা গেল উপরি হিসেবে।
পরের গন্তব্যস্থলের নাম খুব সুন্দর,
নামকরণের তাৎপর্য বুঝতে হলে একবার এখানে আসতেই হবে। তবে রাস্তায় গ্রামগুলিও খুব সুন্দর,
গাড়ি দাঁড় করিয়ে কয়েকটা ছবিও তুললাম। যাইহোক, জায়গার নাম নিসর্গধাম, কাবেরী নদীর একটি
ব দ্বীপ - আরেকটি দারুন টুরিস্ট স্পট। ঢুকেই প্রচুর হাঁস আর রাজঁহাস দেখা গেল, গেটের
মুখ থেকেই অনেকগুলো পাখি আর জন্তুর খোপ আছে ডান দিকে, সেখানে হাঁস ছাড়া ময়ূর আর খরগোশ। একটা রাজঁহাস তো প্রায় ঠুকরে দিচ্ছিল আরেকটু
হলে জালের ফাঁক থেকেই! নদীর ওপর একটি সরু লোহার দড়ির সাঁকো আছে যা দিয়ে নদীর ওপর ঘুরে
এলাম, পাশে একটি দড়ির পুরোনো সাঁকো আছে, যাতে ট্যুরিস্টদের উঠতে দেয়া হয়না অবশ্য সতর্কতা
হিসেবে। চারদিকে গাছে অনেক বাঁদর রয়েছে, টুরিস্ট দেখে অভ্যস্ত, একটি তো গাছ থেকে সাঁকোর
দড়ির ওপর দিয়ে ব্যালান্স করে এগিয়ে এলো। আরেকটি একটু দূরে অপেক্ষা করছে - বোঝা গেল
খাবারের আশায় এসেছে। আরেকটু লক্ষণীয় ব্যাপার হলো নদীর নিচে অনেক মাছ ঝাঁক বেঁধে অপেক্ষা
করছে ওপর থেকে খাবারের আশায়। এখানে লোহার জালে ঘেরা অনেক হরিণ এবং তাদের খাওয়ানোর ব্যবস্থাও
আছে, তাই আমার উৎসাহিত হলাম হরিণ কে খাওয়াতে। পাশেই ১০ টাকার শসার প্লেট বিড়ি হচ্ছিলো,
একটা বড় শসাকে ৪ টি লম্বা টুকরো করে কেটে দিচ্ছে, এক প্লেট কিনে নিলাম। একটি করে শসার
টুকরো আমি আর ছেলে খাওয়ালাম, গিন্নীর একটু জন্তু জানোয়ারের প্ততি ভয় আছে, সে ফটোগ্রাফার
হয়ে ছবি তুললো। এর মধ্যেই একটি ঘটনা ঘটলো - আমি দ্বিতীয় শসার টুকরো খাওয়ানোর চেষ্টা
করছি, ছেলের হাতে শেষ টুকরো, হঠাৎ লক্ষ্য করলাম, সেও শসাতে কামড় বসিয়ে দিয়েছে। শসা
তার খুব প্রিয়, তাই আরেকটি টুকরো হরিণকে না খাইয়ে নিজেই খেয়ে নিলো। এখানে হাতির পিঠে
চড়ার সুযোগ আছে, যদিও আমরা আর তা করলাম না। হরিণশালার ঠিক পেছনে একটি বাঁশবনও আছে,
যা ঘুরে দেখার জন্য ও ছবি তোলার জন্য বেশ ভালো স্পট। একটু হেঁটে চলে গেলাম তাল কাবেরী
বলে একটি জায়গায়। তাল কাবেরী কে কাবেরী নদীর উৎস হিসেবে গণ্য করা হয় এবং পবিত্র স্থান
হিসেবে গণ্য করা হয়, অনেকে পুজো আর্চা করছিলো দেখলাম। সবমিলিয়ে নিসর্গধাম অভিজ্ঞতা
খুবই মনোময়।
আমাদের শেষ গন্তব্যস্থল বাইলাকুপপে। এটি কূর্গ বা কোডাগু জেলার অন্তর্গত নয়,
মহীশুর জেলার অন্তর্গত। ধর্মশালার পরে তিব্বতের বাইরে বাইলাকুপে ভারতে দ্বিতীয় বৃহত্তম
তিব্বতি বসতি, স্থাপিত হয় ১৯৬১ সালে । এখানে আমরা নামড্রোলিং মঠটি দেখতে এলাম যা স্বর্ণ
মন্দির নামেও পরিচিত। দলাই লামার ছবি সমেত অনেক বৌদ্ধ মূর্তি দেখার সৌভাগ্য হলো আমাদের।
মন্দিরের বিস্তারিত কারুকার্য মুগ্ধ করার মতো, তার সঙ্গে বাইরে শান্ত পরিষ্কার পরিবেশ,
বেশ ভালো লাগলো, সঙ্গে উপরি হিসেবে বাগানে পাখি আর ফুল।
সেখান থেকে মহীশুর ফিরে আমরা একটা রেস্টুরেন্টে ঢুকে চিকেন চেট্টিনাড আর রুটি
দিয়ে ডিনার সেরে হোটেলে ফিরলাম। একদিনের পাওয়ার প্যাকড সফর শেষ করে। ছবি তো প্রচুর
তুলিই, কিছু ছবিও পোষ্ট করলাম, কেমন লাগলো জানাবেন।
আবে জলপ্রপাত |
ওঙ্কারেশ্বর
মন্দিরে প্রবেশ করার জন্য জলাশয়ের ওপর কংক্রিট এর সরু ব্রিজ |
মন্দিরের প্রবেশ দ্বার |
মন্দির প্রাঙ্গণ |
রাজার আসন থেকে নৈসর্গিক দৃশ্য |
রাজার আসন |
টয় ট্রেনে দেখা দৃশ্য |
নিসর্গধাম- কাবেরী নদীর ওপর লোহার সাঁকো থেকে পুরোনো দড়ির সাঁকো |
নৌকাবিহার |
কূর্গের গ্রাম জীবন |
খাবারের আশায় এগিয়ে আসছে |
নামড্রোলিং মঠের প্রবেশ দ্বার |
হরিণ কে শসা খাওয়ানো পর্ব |
| ||
খাবারের আশায় জলে অপেক্ষা |
স্বর্ণ মন্দির |
ছবিঃ লেখক