অলীক পাতার অন্যান্য সংখ্যা- পড়তে হলে ক্লিক করুন Library ট্যাব টি



। । "অলীক পাতা শারদ সংখ্যা ১৪৩১ আসছে এই মহালয়াতে। । লেখা পাঠানোর শেষ তারিখ ১৫ ই আগস্ট রাত ১২ টা ।.."বিশদে জানতে ক্লিক করুন " Notice Board ট্যাব টিতে"

Showing posts with label SATYAJIT RAY. Show all posts
Showing posts with label SATYAJIT RAY. Show all posts

Monday, January 17, 2022

সত্যজিৎ শতবর্ষ ক্রোড় পত্র- চলন্ত চিত্র- ভুতের রাজা - সৈকত সরকার


 

 ভুতের রাজা

সৈকত সরকার 


ফিরুন সূচিপত্রে



| হিম সংখ্যা-১৪২৮| aleekpata.com|
  |ALEEK PATA- Your Expressive World |Online Magazine |
| Editor: Swarup Chakraborty | Publisher: Debasree Chakraborty|
 Winter , 2021 | August -December 2021 | Fifth Year  Second  Issue |28 th Edition|
|© All Rights Reserved By The Editor and The Publisher |
|a DISHA-The Dreamer Initiative |

Thursday, January 13, 2022

সত্যজিৎ শতবর্ষ ক্রোড় পত্র-কার্টুন-একশোয় একশ -মিঠুন দাস



একশোয় একশ

মিঠুন দাস





 

ফিরুন সূচিপত্রে



| হিম সংখ্যা-১৪২৮| aleekpata.com|
  |ALEEK PATA- Your Expressive World |Online Magazine |
| Editor: Swarup Chakraborty | Publisher: Debasree Chakraborty|
 Winter , 2021 | August -December 2021 | Fifth Year  Second  Issue |28 th Edition|
|© All Rights Reserved By The Editor and The Publisher |
|a DISHA-The Dreamer Initiative |

সত্যজিৎ শতবর্ষ ক্রোড় পত্র-মগজাস্ত্র-ভক্ত -রাজ চক্রবর্তী

 



ভক্ত

রাজ চক্রবর্তী

 

Image Courtesy: Google Image Gallery

। এক।

 

এই রাস্তা ধরে সোজা দশাশ্বমেধ। এক মুখ সিগারেটের ধোঁয়া ছেড়ে বলল কিংশুক।

দোতলার বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছে ওরা দু’জন। কিংশুক আর তনিমা। কিংশুকের কথা শুনে হো হো করে হেসে তনিমা বলল, —কি স্থান মাহাত্ম্য মশাই, এখানে এসে দাঁড়াতে না দাঁড়াতেই সত্যজিৎ রায়ের ডায়লগ বলছিস। ফেলুদা হয়ে গেলি না কি?

কিংশুক এক মনে রাস্তার দিতে তাকিয়ে ছিল। জয় বাবা ফেলুনাথের সেই দৃশ্যটা চোখের সামনে যেন সচল দেখতে পাচ্ছে। ছবিটা একই রকম আছে প্রায়। তবে লোকজন আরও বেড়েছে। গাড়ির সংখ্যাও অনেক। রাস্তাটা সেই আগের মতনই চওড়া।

পিছনে পায়ের আওয়াজ পেয়ে দেখল ক্যালকাটা লজের বর্তমান মালিক এগিয়ে আসছেন হাসি মুখে।

 

কোন অসুবিধা হচ্ছে না তো? ভদ্রলোক সামনে এসে হাতের পেনটা বুক পকেটে ঢোকাতে ঢোকাতে বললেন।

না না! দিব্য আছি। কিংশুক সিগারেটটায় শেষ টান দিয়ে সেটা মাটিতে ফেলে পা দিয়ে পিষে দিল।

আপনারা স্নান-টান করে ফ্রেশ হয়ে নিন, আমি বলে দিয়েছি হয়ে গেলেই ঘরে গরম গরম খাবার দিয়ে যাবে। বাথরুমে গিজার বসান আছে এখন। সবসময় রানিং হট এন্ড কোল্ড ওয়াটার। কোন অসুবিধা হবে না।

 

পুজোর ছুটিতেই ওরা এসেছে বেড়াতে। অক্টোবর মাস, কিন্তু এখনই বেশ একটা ঠান্ডা ঠান্ডা ভাব। বাতাসের আলতো ছোঁয়াও শরীরে শিরশিরানি জাগায়।

অলস আড়মোড়া ভেঙে কিংশুক বলল, —অনেক দিনের ইচ্ছা ছিল, বুঝলেন মিস্টার চক্রবর্ত্তী?

কি ইচ্ছা? অবাক চোখে তাকালেন ভদ্রলোক।

কাশীতে এসে সত্যজিতের স্মৃতিধন্য এই লজে ওঠার। এই বারান্দায় দাঁড়িয়ে শুটিং হয়েছিল, ভাবতেই গায়ে কাঁটা দিচ্ছে।

আমাদের এই লজটা বলতে পারেন ওনার জন্যই আরও বিখ্যাত আজ। অনেক বাঙালীই এসে খোঁজ করেন। দেখতে চান ঘুরে ঘুরে।

আমার কিন্তু খুব খিদে পেয়েছে। সুন্দর আলোচনাটার তাল কেটে দিয়ে তনিমা বলল।

তুই না একটা যা তা। পুরো জল ঢেলে দিলি! ঝাঁজের সাথে কথাটা বলে কিংশুক মিস্টার চক্রবর্ত্তীর দিকে ঘুরে বলল, —স্নানটা সেরেই নিই বুঝলেন। একটু রেস্টও দরকার।

ঘরে ঢুকে বিছানায় শরীরটা এলিয়ে দিয়ে কিংশুক বলল, —তোর জ্বালায় একটু শান্তিতে সত্যজিৎ চর্চাও করতে পারব না?

সুটকেশ খুলে টাওয়েল, সাবান, স্লিপার আরও সব দরকারী জিনিস বের করছিল তনিমা। মেকি রাগ দেখিয়ে বলল, —তুই সত্যজিৎ রায় নিয়েই থাক। আমার খিদে পেয়েছে, বলব না?

 

বিকেলের সূর্য পশ্চিম আকাশে ঢলে পড়তেই ওরা দু’জন বেরিয়ে পড়ল শহরটা ঘুরে দেখতে। প্রথমেই সোজা চলে এল গনেশ মহাল্লায়। এখানে কিংশুকের এক পুরানো বন্ধুর বাড়ি। মৃগাঙ্ক দাশগুপ্ত। কলকাতার ছেলে, বর্তমানে কর্মসূত্রে এই বেনারস শহরে রয়েছে প্রায় সাত আট বছর। ওর তাড়নাতেই বলতে গেলে বেনারস বেড়াতে আসা। বেশ কয়েক মাস ধরে পিছনে পড়ে আছে কিংশুকের। একবার আয় ভাই, খুব ভালো লাগবে। অগত্যা আসতেই হল। ওরা রওনা দেওয়ার সময়ও মৃগাঙ্ক বারবার বলে দিয়েছে পৌছেই যেন সোজা চলে আসে তার বাড়ি। কাজেই কিংশুক আর তনিমার প্রথম গন্তব্য হল মৃগাঙ্কর বাড়ি।

 

চক্রবর্ত্তী লজ থেকে গনেশ মহাল্লা খুব একটা দূর নয়। লজ থেকে বেড়িয়ে বারবার কিংশুক ফোন করতে লাগল মৃগাঙ্ককে। কিন্তু কোন উত্তর নেই। বেশ কয়েকবার চেষ্টা করার পর কিংশুক বিরক্ত হয়ে বলল,

ছেলেটা আগাগোড়াই এরকম কেয়ারলেস। নেমন্তন্ন করে এখন বাবু আর ফোনই রিসিভ করছে না। ওর বাড়িটা তো আমি চিনিও না। আর এখানকার যা সরু রাস্তা আর গায়ে গায়ে বাড়ি। খুঁজে বের করা আমার পিতারও অসাধ্য।

তনিমা বলল, —এখানে শুনেছি বেশ কয়েক ঘর কুমোর বাস করেন। জয় বাবা ফেলুনাথের শশি বাবুও এখানেই থাকতেন, মনে আছে?

আলবাত! কিন্তু এখন আমাদের দরকার নট শশি বাবু বাট মৃগাঙ্ক বাবু। একটু দাঁড়া তো!

কিছুটা এগিয়ে একটা পান-সিগারেটের দোকান থেকে এক প্যাকেট সিগারেট কিনে নিল কিংশুক। সেই সঙ্গে জানতে চাইল মৃগাঙ্ক দাশগুপ্তর বাড়ির হদিসও।

মৃগাঙ্ক বাবু! উ তো কাল রাত বিমার হল। এ্যাম্বুলেন্স মে কহি লে গেয়ে। ম্যায় তব দুকান পে হি থা।

আকাশ থেকে পড়ল কিংশুক। কাল সন্ধ্যাবেলা ট্রেন ছাড়ার পরও ওর সাথে কথা হল। আর এরই মধ্যে বিমার, এ্যাম্বুলেন্স... সব জট পাকিয়ে গেল কিংশুকের। অন্য মৃগাঙ্ক নয় তো?

দুসার কোই মৃগাঙ্ক দাসগুপ্তা হ্যায় ক্যা?

জি নেহি সাহাব। একই হ্যায়। দাসগুপ্তা তিন চারঠো হ্যায়, মগর মৃগাঙ্ক একই মিলেগা জি।

ঘর কৌনসা হ্যায়? হতাশ গলায় জানতে চাইল কিংশুক।

দোকানদার বাড়িটা দেখিয়ে দিল দূর থেকে। সরু গলিটা এঁকেবঁকে চলে গিয়েছে যতদূর চোখ যায়। প্রায় অন্ধকার গলিটাতে ঢুকতে বেশ বেগ পেতে হবে বাইরের লোক হলে। দিনের বেলাতেও এই গলিতে সূর্ষের আলো পৌছায় কিনা সন্দেহ।  কিংশুক তনিমার দিকে তাকিয়ে বলল, —চল তো দেখি কি হল! আয়। তনিমার হাত ধরে এগিয়ে গেল কিংশুক।

 

এখানকার বাড়িগুলোর ধরন প্রায় একই রকম। মাঝখানে চৌকো উঠোন, সরু বারান্দা আর তাকে ঘিরে সারি সারি ঘর। সদর দড়জা দিয়ে ঢুকে সেই উঠোনে পৌছে উপরের দিকে তাকালেই চোখে পড়বে একফালি চৌকো আকাশ। এইরকমই একটা বাড়িতে ঢুকতে হল কিংশুক আর তনিমাকে।

এখানে কোথায় থাকে মৃগাঙ্ক? প্রথমটা অন্ধকারে চোখ সইয়ে নেওয়ার জন্য কয়েক পলক অপেক্ষা করল কিংশুক, তারপরই প্রশ্নটা মাথায় চাড়া দিয়ে উঠল। খুব একটা কসরত অবশ্য ওদের করতে হল না। সেই সময়ই একজন বেশ মোটা গোছের ভদ্রলোক কি একটা গানের সুর ভাঁজতে ভাঁজতে বাড়িটা থেকে বের হচ্ছিলেন। তাকে জিজ্ঞাসা করতেই তিনি উপরের একটা ঘরের দিকে আঙুল তুলে ইশারা করলেন। তারপর আবার সুর ভাঁজতে ভাঁজতে চোখের আড়ালে চলে গেলেন।

কিংশুক ভ্রু নাচিয়ে তনিমার দিকে তাকিয়ে বলল, —এ একেবারে মগনলালের ডেরা। চল ওপাশে সিঁড়ি আছে মনে হচ্ছে।

অনভ্যস্থ লোককে এই অন্ধকার সিঁড়ি দিয়ে উঠতে বেশ বেগ পেতে হবে কোন সন্দেহ নেই। মোবাইলের টর্চটা জ্বালিয়ে ওরা দু’জন উঠে এল উপরে।

নির্দিষ্ট ঘরটার সামনে গিয়ে দু’জনেই অবাক হল। ঘরে বেশ পেল্লায় মাপের একটা তালা ঝোলান। স্বাভাবিকভাবেই ওরা  কিংকর্তব্যবিমূঢ় অবস্থায় কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইল। কিংশুক আবার ফোন করল মৃগাঙ্ককে। তারপর তনিমার মুখের দিকে তাকিয়ে বলল, —আগে তাও রিং হচ্ছিল, এখন সুইচ অফ বলছে!

চল ফিরে যাই। কেমন বন্ধু তোর কে জানে! আর যদি সত্যিই অসুস্থ হয়ে থাকত নিচের ওই ভদ্রলোক নিশ্চই জানাতেন আমাদের, তাইনা? তনিমা এবার বেশ বিরক্ত হয়েছে। বেড়াতে এসে উটকো একটা ঝামেলায় পুরো সন্ধ্যাটাই মাটি। কিংশুক কিন্তু কিন্তু করছে এরই মধ্যে ওপাশের একটা ঘরের দরজা খুলে একজন মহিলা বাইরে এলেন হয়ত কোন কাজে। কিংশুক এক ছুটে তার দিকে এগিয়ে গেল।

এক মিনিট ম্যাডাম জি। আপ মৃগাঙ্ক দাসগুপ্তা কো জানেত হ্যায়?

মৃগাঙ্ক। হাঁ জরুর। ভদ্রমহিলা বেশ অবাক চোখে তাকালেন ওদের দিকে।

কাহা মিলেগা ও, কুছ কহ সকতে হ্যায় আপ?

আপনারা বোধহয় বাঙালি! তাইনা?

পিছন থেকে ভারি একটা কন্ঠস্বর ভেসে এসে চমকে দিল ওদের। সেই নিচে দেখা ভদ্রলোক কোন ফাঁকে আবার উপরে চলে এসেছেন।

নমস্কার আমার নাম পরীন্দ্র বর্ধন। আপনি কি কিংশুক?

আরও অবাক হয়ে হাত তুলে নমস্কার করল কিংশুক, —আপনি কি করে...

অবাক হওয়ার কিছু নেই। কাল মৃগাঙ্ক চলে যাওয়ার আগে বলছিল আপনারা আজ আসতে পারেন।

মৃগাঙ্ক কোথায়?

মৃগাঙ্ক কাল রাতে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ায় ওর কয়েকজন বন্ধু ওকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছে। এখানে একাই থাকত জানেন তো! সাথে আর দু’জন বন্ধু। ওরাই সাথে করে নিয়ে গিয়েছে।

কোন হাসপাতাল জানেন কিছু? ওর ফোনেও পাওয়া যাচ্ছে না। সুইচ অফ বলছে। আগেও অনেকবার করেছি, রিং হল কেউ ধরল না।

তা জানি না। এখানে তো এখন অনেক প্রাইভেট হসপিটাল হয়েছে। ওখানে যাবে বলে মনে হয় না। হয়ত কৈলাশপুরিতে গেছে।

আপনি কি এই বাড়িতেই থাকেন? এবার প্রশ্নটা করল তনিমা।

হ্যাঁ হ্যাঁ! ওই যে মৃগাঙ্কর পাঁচটা দরজা পরের ঘরটা। আমি অবশ্য ফ্যামিলি নিয়ে থাকি। আমার অলমোস্ট সিক্সটি ইয়ার্স হয়ে গেল মশাই এই কাশীতে।

কিংশুক অন্য কিছু একটা চিন্তা করছিল অন্যমনস্কভাবে বলল, —মিস্টার বর্ধন আমরা এবার আসি। আমার মোবাইল নাম্বারটা দিয়ে যাচ্ছি। অমলের কোন খবর পেলে অবশ্যই জানাবে। আমিও চেষ্টা করে যাব ওর মোবাইলএ। যদি অন হয়! আপনার নাম্বারটাও একটু দিয়ে দিন।

আমি তো মোবাইল ব্যবহার করি না একদম। আপনারটা তো রইল, আমিই খবর দেব নাহয়!

ভদ্রলোকের মুখের দিকে তাকিয়ে মনে হল তিনি নাম্বার দিতে চান না।

আচ্ছা নমস্কার। কথা শেষ করে আর দাঁড়াল না কিংশুক। ওরা সিঁড়ি বেয়ে আবার নেমে এল। চৌকো উঠোনটায় নেমে উপরের দিকে তকিয়ে কিংশুক দেখল পরীন্দ্র তখনও তাদের দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন একই জায়াগায়।

 

 । দুই ।

 

রাত্রে বিছানায় শুয়ে বেশ কিছুক্ষণ এপাশ ওপাশ করল কিংশুক। ক্লান্ত তনিমা তখন অঘোরে অসাড়ে ঘুমাচ্ছে। এক সময় উঠে বাইরে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়াল কিংশুক। কোথায় একটা খটকা লাগছে যেন! একটা মানুষ অসুস্থ হতেই পারে, কিন্তু সে একটা ফোন করতে পারবেনা এটা অস্বাভাবিক। এক যদি সে মরণাপন্ন হয় তাহলে অবশ্য আলাদা কথা। কিন্তু পরীন্দ্র বাবুর কথা শুনে মনে হয়নি মৃগাঙ্ক মরণাপন্ন। উল্টে কাল হাসপাতালে যাওয়ার আগে কিংশুকের কথা বলে গিয়েছে সে পরীন্দ্রকে।

আশেপাশে কোথাও একটা গ্র্যান্ডফাদার ক্লকে বেশ শব্দ করে রাত দু’টো বাজল। এরই মধ্যে তিনটে সিগারেট খাওয়া হয়ে গিয়েছে তার। চতুর্থটা আগুন জ্বালাতে যাবে তখনই খুট করে একটা আওয়াজে পিছন ফিরল সে। অন্ধকারে একটা ছায়ামূর্তি সিঁড়ি বেয়ে উঠে আসছে উপরে। চট করে নিজেকে আড়ালে নিয়ে গেল কিংশুক। ছায়াটা উঠে এসে ওদের দরজার হাতলে আলতো করে হাত রাখল। কিংশুক বুঝতে পারল হাতলটা ঘুরিয়ে খোলার চেষ্টা করছে লোকটা। কি করা উচিত বুঝতে পারল না কিংশুক। সেতো আর সত্যি ফেলুদা নয় যে লোকটার উপর ঝাঁপিয়ে পড়বে। বেশ কয়েকবার ব্যর্থ চেষ্টা করে লোকটা আবার সিঁড়ি দিয়ে নেমে গেল। কিংশুক বারান্দার থামের আড়াল থেকে বাইরে চলে এল। আস্তে আস্তে সিঁড়ির উপর থেকে নিচের দিকে তাকিয়ে আর কাউকে দেখতে পেল না।

 

সকালে মিস্টার চক্রবর্ত্তীকে কথাটা জনাতেই তিনি আকাশ থেকে পড়েলন। চোখ দু’টো প্রায় ছানাবড়ার মতন করে বলেলেন, —অসম্ভব স্যার। আমাদের লজে রাত এগারোটার পর তালা পড়ে যায়। আমি নিজে পুরো লজ পরীক্ষা করে তবে নিজের ঘরে যাই। চাবি থাকে আমার জিম্মায়। কেউ এভাবে ঢুকে আসবে ভাবাই যায় না। ঘড়িতে ছ’টা কুড়ি। কিংশুক সকালের কাগজটায় চোখ বোলাচ্ছিল। পাশে রাখা চায়ের কাপটা অর্ধেক খালি। ঠান্ডা হয়ে গিয়েছে বলে সে আর মুখে তোলেনি। মাথার মধ্যে চিন্তাগুলো ক্রমশ জট পাকিয়ে যাচ্ছে। তনিমা এমনিতেই একটু দেরী করে ওঠে। আর এখন তো ছুটিতে রয়েছে, কাজেই তাকে সকাল সকাল পাওয়া যাবে না কিংশুক জানে। একবার ভাবল মৃগাঙ্কর বাড়িতে ঢুঁ মেরে আসবে গিয়ে। যদি কোন খবর পাওয়া যায়। ওর বন্ধুরা তো নিশ্চয়ই ফিরবে রাত্রে! পরীন্দ্র বাবু নাকি মোবাইল ব্যবহার করেন না। তাই ফোন করে খবর নেওয়ার রাস্তাও আপাতত বন্ধ।

কিংশুককে অবাক করে দিয়ে তনিমা আজ বেশ সকালেই উঠে পড়েছে। ঘরে ঢুকতেই বলল, —কিরে রাত্রে ঘুমাসনি মনে হচ্ছে! চোখ লাল, গাল ফোলা। কি ব্যাপার বস্?

তুই তো সারারাত নাক ডেকে ঘুমালি, তাতেই আমার ঘুম হয়েছে।

সাত সকালে মুড অফ নাকি? কি হল বলবি তো!

একবার মৃগাঙ্কর ওখানে যাব ভাবছি। ওর বন্ধুরা নিশ্চই রাতে ফিরেছে। পরীন্দ্র বাবু তো কোন খবর দিলেন না!

হয়ত ওরা অনেক রাতে ফিরেছে। হয়ত উনি ভাবছেন আমরা এখনও ঘুমাচ্ছি। সবে তো সাতটা বাজল। একটু ওয়েট করেই দেখ না বাবা!

হুম্! কিংশুক খাটের পাশে রাখা ইজি চেয়ারটায় শরীরটা ছেড়ে দিল। সত্যি কাল টেনশনে সারারাত সে ঘুমাতে পারে নি। চোখ দু’টো টনটন করছে। ঘন্টাখানেক ঘুমিয়ে নিলে মন্দ হয় না।

দু’চোখ কখন লেগে গিয়েছে টের পায়নি কিংশুক। তনিমার ডাকে ধড়ফড়িয়ে উঠে বসল।

কি হল? ধরা গলায় বলল কিংশুক।

ফোন।

কে পরীন্দ্র বাবু? চেয়ার ছেড়ে লাফিয়ে উঠল কিংশুক।

না, অন্য কেউ!

কে?

জানি না শুধু...। কিংশুক লক্ষ করল তনিমার হাত থরথর করে কাঁপছে। এক ঝটকায় ফোনটা কেড়ে নিল সে। কানে দিতেই কেবল এনগেজড টোন শুনতে পেল। ফোনটা কেটে গিয়েছে।

কে বলবি তো?

তনিমা উত্তর না দিয়ে ফ্যালফ্যাল করে চাইল কিংশুকের দিকে। হঠাৎ কিংশুকের মনে পড়ল ওর ফোনে অটো কল রেকর্ডিং সবসময় চালু করা থাকে। সে রেকর্ডিংটা চালু করল। প্রথমে কয়েকটা গাড়ির আওয়াজ। মন্দিরের ঘন্টার শব্দ। তারপর গম্ভীর গলায় শোনা গেল,

বাদুড় বলে, ওরে ও ভাই সজারু,

আজকে রাতে দেখবে একটা মজারু।

আজকে হেথায় চাম্‌চিকে আর পেঁচারা

আসবে সবাই, মরবে ইঁদুর বেচারা।

তনিমায় হাত ধরে তাকে সোজা করে বসাল কিংশুক। বলল, —তুই যেতে পারবি?

কোথায়?

মৃগাঙ্কর সন্ধানে। কিছু গন্ডগোল আছে অবশ্যই। না হলে তুই থাক আমি একাই...

কিংশুকের কথা শেষ হওয়ার আগেই তনয়া উঠে দাঁড়াল, —মানিকদা আর ফেলুদা কি তোর একার সম্পত্তি নাকি! কবিতাটা সেই দৃশ্যটাকে চোখের সামনে একদম স্পষ্ট করে দিয়েছিল, তাই একটু টলে গিয়েছিলাম। আমিও যাব চল। আর এক মুহূর্ত দেরী না করে ওরা সোজা চল এল মৃগাঙ্কর বাড়ির সামনে। রাস্তায় এখন বেশ ভিড়। স্থানীয় মানুষজন নিজের নিজের কাজে ব্যস্ত। বাজার দোকান সর্বত্র লোক সমাগম প্রচুর। ভিড় পেরিয়ে আসতে ওদের বেশ কিছুটা বেগ পেতে হল।

 

বিশাল কাঠের দরজাটা আজ ভেজান রয়েছে। দু’পাশে ময়ুরের ছবি আঁকা দেওয়াল জুড়ে। কাল রাতের অন্ধকারে এতসব খেয়াল হয়নি কিংশুকদের। দিনের আলোয় আজ আশপাশটা বেশ স্পষ্ট। একটার গায়ে আরেকটা বাড়ি। নির্জন গলিটা এই কোলাহলমুখর সময়েও যেন একলাই অপেক্ষা করছে ওদের জন্য।

দরজাটা ঠেলতেই ক্যাঁচ করে শব্দ উঠল একটা। ভিতর থেকে শোনা গেল অজানা কন্ঠস্বর, —কৌন হ্যায়!

মুখটা বাড়িয়ে কিংশুক দেখল একজন বৃদ্ধ মানুষ উঠোনের একপাশে বসে কাঠের উনোন জ্বালাবার চেষ্টা করছেন। তাঁর চারপাশে ছোট-ছোট কাঠের টুকরো ছড়িয়ে রয়েছে। কিংশুক সামনে এগিয়ে গিয়ে বলল, —হাম মৃগাঙ্ক সে মিলনে আয়ে হ্যায় চাচাজি।

কৌন মৃগাঙ্ক? বৃদ্ধ চশমা ছাড়া চোখ দু’টো কুঁচকে ওদের দেখার চেষ্টা করছেন।

মৃগাঙ্ক দাশগুপ্তা! মেরা দোস্ত হ্যায় জি। ইস মকান মে রহতে হ্যায় না, উপরকে উস কমরে মে। হাত তুলে উপরে নির্দেশ করল কিংশুক।

ক্যা বকতে হো! বৃদ্ধ রীতিমতো বিরক্ত। —এ মেরা মকান হ্যায়। মৃগাঙ্ক উগাঙ্ক কোই নহি রহতা ইধার। আপ সে কুছ ভুল হুই হ্যায়। জাহা তক ম্যায় জানতা হু ইস ইলহাকে মে মৃাগাঙ্ক নামকা কোই রহতা হি নহি।

শায়দ আপকো মালুম নহি! কিংশুক তর্কের খাতিরে বলে।ক্যা বাত করতে হো আপ! মুঝে ইস মহল্লেমে ষাট সাল হো গয়া। জাও ভাগো ইহাসে। বহুত কাম হ্যায় মেরা। বৃদ্ধ আবার নিজের কাজে মন দিলেন।

একজন ভালো ছাত্র হঠাৎ ফেল করলে তার মনের অবস্থা যেমন হয়, কিংশুক আর তনিমার এখন সেই অবস্থা।

কি হ’ল কেসটা? তনিমা চোখ বড় বড় করে তাকাল কিংশুকের দিকে।

আগে পেটে কিছু দিতে হবে না হলে মগজাস্ত্র কাজ করবে না। চল মোড়ের মাথায় গরম গরম কচুরি ভাজছে, আসার সময় দেখেছি। উত্তরের অপেক্ষা না করে কিংশুক হাঁটা লাগাল।

 

ফোনটা বেজে উঠতেই ধরফরিয়ে উঠে বসল কিংশুক। দুপুরের খাওয়াটাও আজ একটু বেশি হয়ে গিয়েছে। টেনশনে থাকলে কিংশুক একটু বেশিই খেয়ে ফেলে। এটা ওর বরাবরের অভ্যাস। তার উপর দুপুরে বেশ কয়েক পশলা বৃষ্টি হয়ে গিয়েছে। বাইরেটা এখনও মেঘলা। ঘর লাগোয়া বারান্দাটা দিয়ে ঠান্ডা হাওয়ার স্রোত এসে ধাক্কা দিচ্ছে ঘরের পর্দায়। বিছানায় আধশোয়া হয়ে মোবাইল ঘাঁটতে ঘাঁটতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছিল কিংশুক।

ফোনটা তুলে কানে দিতেই ওপাশে গম্ভীর স্বরটা শোনা গেল, —কিংশুক বাবু?

কে?

আমি মৃগাঙ্কর বন্ধু। ওর থেকে আপনার নাম্বারটা পেলাম। মৃগাঙ্কর খুব বিপদ।

ফোনটা স্পিকারে দিয়ে দিল কিংশুক। তনিমাও অবাক চোখে উঠে বসেছে। একটু থেমে থেকে গলাটা আবার বলল,  আপনি কি আসতে পারবেন? আপনার সাথে কথা আছে।

কোথায়? ঠান্ডা গলায় প্রশ্ন করল কিংশুক। টেবিল থেকে সিগারেটের প্যাকেটটা টেনে নিল সে।

আপনি জ্ঞানবাপি চেনেন?

হ্যাঁ চিনি। কিন্তু আপনাকে তো চিনি না!

আপনি চলে আসুন জ্ঞানবাপিতে। আমার লোক থাকবে। নীল শার্ট। আসুন কথা আছে।

এখনই আসব? আবার প্রশ্ন করে কিংশুক।

না না এখন নয়। রাত আটটার পর আসুন।

ফোনটা কেটে গেল। কিংশুক নিঃশব্দে সিগারেটে অগ্নিসংযোগ করল।

কিছু বুঝলি? তনিমার প্রশ্নটা শুনে মাথা ঘোরাল কিংশুক।

মনে হচ্ছে বুঝেছি।

কি ব্যপার রে?

ক্রমশ প্রকাশ্য। একমুখ ধোঁয়া ছাড়ল কিংশুক।

তিন ।

 

সাড়ে সাতটা নাগাদ কিংশুক আর তনিমা চলে এল দশাশ্বমেধ ঘাটের কাছে। উত্তরদিকে কিছুটা গেলেই জ্ঞানবাপি মসজিদ। সন্ধ্যারতির পর ঘাটে এখনও বেশ ভিড়। কিংশুক একটু আড়ালে গিয়ে একটা সিগারেট ধরিয়ে চারিদিকে নজর দিল। নদীর জল এখন শান্ত অনেকটা। লাইটপোস্টের চড়া আলো নদীর জলে চিকচিক করছে। ঠান্ডা হাওয়া এলোমেলোভাবে এসে ছুঁয়ে যাচ্ছে ওদের দু’জনকে।

আরও কিছুটা সময় কাটিয়ে ওরা হাঁটা দিল জ্ঞানবাপির দিকে। ছোট ছোট দোকান রাস্তার দু’পাশে। কাজের জিনিস থেকে শুরু করে হাবিজাবি নানা সামগ্রি এখানে পাওয়া যায়। সেদিকে নজর দিতে দিতে ওরা এগিয়ে চলল। মসজিদের কাছে আসতেই নীল শার্ট পরা একজনকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখল। লোকটা এক মনে সিগারেট টানছিল, কিংশুকের সাথে চোখাচুখি হতেই সেটা ফেলে দিয়ে এগিয়ে এল।

কিংশুক তনিমার কনুই ছুঁয়ে আস্তে আস্তে বলল, —মনে পড়ছে?

ইয়েস স্যার! অবিকল সেই।

হুম্! চল যাওয়া যাক।

জ্ঞানবাপির পিছনদিকে কিছুটা গিয়েই একটা সরু গলির ভিতর ঢুকে এল ওরা। নীল শার্ট চলেছে আগে আগে। বেশ কিছুটা চলার পর ওরা একটা বাড়ির সামনে এসে থামল। কয়েক দাপ সিঁড়ি উঠে গিয়েছে উপরে, তারপর মূল দরজা। তনিমা বলল, —এতো অবিকল সেই.।।

ওর হাত চেপে কিংশুক বলল, —চুপ! শুধু দেখে যা।

আবার সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠে এল ওরা। নীল শার্ট বাইরে একটু অপেক্ষা করতে বলে ভিতরে চলে গেল। রেলিং ধরে নিচে ঝুঁকে দেখল কিংশুক। তারপর উল্টোদিকের রেলিংয়ের দিকে তাকিয়েই চিৎকার করে উঠল, —আরে বিকাশ সিংহ যে। এদিকে আসুন।

লোকটা থতমত খেয়ে চাইল এক পলক। ততক্ষণে নীল শার্ট বাইরে চলে এসেছে,  আইয়ে, আন্দর আইয়ে।

উষ্ণ অভ্যর্থনা পেয়ে কিংশুক আর তনিমা সটান চলে এল ভিতরে। ঝিম ধরা অন্ধাকার ঘরের ভিতরটায়। কয়েক পলক সময় লাগল দৃষ্টি একটু সয়ে যেতে। মাঝারি মাপের ঘরটার তিন দিকের দেওয়াল ঘেঁসে সোফা পাতা রয়েছে। সামনে মাটিতে মোটা গদির উপর ধবধবে সাদা চাদর পাতা। গোটা তিনেক মোটা তাকিয়েও রয়েছে। পিছনের দেওয়াল জুড়ে নানান দেবদেবীর ফটো। ডানদিকের সোফায় আয়েশ করে বসল কিংশুক। ঘরে আর কেউ নেই।

তনিমাকে ইশারায় পাশে বসতে বলে আবার একটা সিগারেট ধরালো কিংশুক। তনিমা কিছুই বুঝতে পারছে না। ওর মনে অবস্থাটা বুঝতে পেরেই কিংশুক বলল, —আর একটু ধৈর্য্য ধর।

ঘরের দরজায় মোটা কাপড়ের পর্দা টাঙানো রয়েছে। একজোড়া পা সেখানে দেখেই কিংশুক বলল, —আসুন সিংহি মশাই। ভিতরে আসতে আজ্ঞা হোক!

পর্দা সরিয়ে যিনি ঢুকে এলেন তাকে তনিমা বিলক্ষণ চেনে। পরীন্দ্র বর্ধন। তনিমা চাইল কিংশুকের দিকে। কিংশুক মাথা দুলিয়ে বলল, —এবার আসল লোককে ডাকুন মশাই। কোথায় সে? কয়েক পলক থেকে নিজেই আবার চিৎকার করল, —শশী বাবু ও শশী বাবু। এবার উদয় হোন, রাত যে অনেক হল!

কি বলছেন এসব যা তা। প্রতিবাদ করেন পরীন্দ্র।

যা তা কি বলছেন। শুনুন মশাই আমি মানিক বাবুর একজন একনিষ্ঠ ভক্ত। আমাকে বোকা বানানো সহজ নয়। আপনার আসল নাম জানি না তবে পরীন্দ্র বর্ধন আপনার নকল নাম, আমি হান্ড্রেড পার্সেন্ট সিওর।

মানে?

পরীন্দ্র মানে সিংহ, আর বর্ধন হল বিকাশ। এবার নামটা উল্টে নাও তনিমা। বিকাশ সিংহ। ইনি হলেন চরিত্র নাম্বার ওয়ান।

আর শশী বাবু কাকে বললে?

কবিতাটা মনে কর তনিমা বাদুড় বলে, ওরে ও ভাই সজারু... এবার মনে কর কবিতাটা শুনে তোর কোন দৃশ্যের কথা মনে পড়ছে! ফেলুদা কবিতা বলছে, আর রক্তাক্ত আহত শশী বাবু গলি দিয়ে এগিয়ে আসছেন। তারপরই সব শেষ। কাজেই বোঝাই যাচ্ছে এখানে কবিতায় ‘মরবে ইঁদুর বেচারা’ বলতে শশী বাবুকেই বোঝান হচ্ছে।

কিন্তু তোমার এই শশী বাবুটি কে?

আসছে সে আসছে। কিংশুক কথা শেষ করার আগেই সিঁড়িতে পায়ের আওয়াজ পাওয়া গেল। তনিমা নিঃশ্বাস বন্ধ করে দরজার দিকে তাকালো।

এক ঝটকায় নিজের শরীরটা তুলে নিয়ে দরজার পর্দাটা সরিয়ে কিংশুক বলল, —এই যে আমাদের মৃগাঙ্ক বাবু। আসুন স্যার।

মৃগাঙ্ক ঘরে এসে ঢুকল। সেও অবাক।

কি করে ধরলি রে?

নামের রহস্য ভেদ করে। পরীন্দ্র বর্ধন নামটা প্রথম থেকেই কেমন যেন লাগছিল আমার। আর আজ সকালে যখন গিয়ে দেখলাম তোর ঠিকানার সবটাই বদলে গিয়েছে তখন পরীন্দ্র বর্ধনের উপর সন্দেহটা আরও বেশি করে পড়ল। নামটার মানে খুঁজতে গিয়ে পেলাম বিকাশ সিংহ কে। তারপর কবিতা আর তার সাথে রিলেটেড সিনটা মনে করতেই তোর নামটাও মনে এল। মৃগাঙ্ক মানে চন্দ্র, আর চন্দ্র মানে শশী। আর ফোনের কথাটা ভাব। মৃগাঙ্ক নিজে ফোন না করে বন্ধুকে নাম্বার দিচ্ছে খবর দিতে এটা কেমন কথা! তারপর জ্ঞানবাপি, নীল শার্ট মগনলালের মতন সাজানো বসার ঘর। আর কি চাই!

কিন্তু এসব তো সাজানো নাও হতে পারত! ধর আমার সত্যিই কোন বিপদ হল, তখন?

সেটাও মনে হয়েছে। কিন্তু তারপর তোর ফোনের কথা মনে পড়ল। তুই সবসময় ফোন করে বলতিস, চলে আয় বেনারস। এক নতুন মানুষের সাথে আলাপ করাব। তারও নাম মানিক, ভালো নাম সত্যজিৎ। কাজেই তুই যে এই ভাবে আমাদের বোকা বানিয়ে মানিকদার মুখোমখি করতে চাস সেটাই আমার মনে হল। আর গতকাল রাতে আমাদের লজের ঘরে যে ছায়ামূর্তির আবির্ভাব হয়েছিল তিনি সম্ভবত মিস্টার চক্রবর্ত্তী নিজে। তাকেও দলে টেনেছিলি তুই। কিরে তাইতো?

ব্রাভো ব্রাভো! হাততালি দিয়ে উঠল মৃগাঙ্ক। —তুই সত্যি মানিক বাবুর ভক্ত।

একশবার! কিন্তু কোন পুরষ্কার কি পাব না এর জন্য?

অবশ্যই পাবেন। পর্দা সরিয়ে এবার আসরে অবতীর্ণ হলেন ক্যালকাটা লজের মালিক মিস্টার চক্রবর্ত্তী।

আর সেটা কি? মুচকি হেসে বলল কিংশুক।

মৃগাঙ্ক আমার অনেক দিনের বন্ধু। ওকে কথা দিয়েছি, আমাদের কারসাজি আপনি ধরতে পারলেই আপনাকে সেই ঘরটায় এক রাত থাকতে দেব। আমরা নর্মালি কাউকে সেখানে থাকতে দিই না।

কোন ঘরটার কথা বলছেন মিস্টার চক্রবর্ত্তী? কিংশুক ভ্রু কোঁচকালো।

যে ঘরটায় ফেলুদা এন্ড পার্টি থাকতেন। শুটিংয়ের সময় যেমন ছিল, ঠিক তেমনি করে রাখা আছে। আজ রাতে আপনারা সেই ঘরের অতিথি।

তানিয়ার মাথার ধোঁয়াটে ভাবও কেটে গিয়েছে এতক্ষণে। সে দু’হাত জোড় করে বলল, —থ্রি চিয়ার্স ফর মানিক দা...

সকলে সমস্বরে বলল, —হিপ হিপ উরররেএএএএএ!

ফিরুন সূচিপত্রে



| হিম সংখ্যা-১৪২৮| aleekpata.com|
  |ALEEK PATA- Your Expressive World |Online Magazine |
| Editor: Swarup Chakraborty | Publisher: Debasree Chakraborty|
 Winter , 2021 | August -December 2021 | Fifth Year  Second  Issue |28 th Edition|
|© All Rights Reserved By The Editor and The Publisher |
|a DISHA-The Dreamer Initiative |

সত্যজিৎ শতবর্ষ ক্রোড় পত্র-তুলি কলমে মানিক-মহারাজা তোমারে ... -শীতল মিশ্র

 


মহারাজা তোমারে সেলাম

শীতল মিশ্র


ফিরুন সূচিপত্রে



| হিম সংখ্যা-১৪২৮| aleekpata.com|
  |ALEEK PATA- Your Expressive World |Online Magazine |
| Editor: Swarup Chakraborty | Publisher: Debasree Chakraborty|
 Winter , 2021 | August -December 2021 | Fifth Year  Second  Issue |28 th Edition|
|© All Rights Reserved By The Editor and The Publisher |
|a DISHA-The Dreamer Initiative |

সত্যজিৎ শতবর্ষ ক্রোড় পত্র-কবিতা- ছায়াদ্রুম-জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়


 ছায়াদ্রুম
জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়
Image Courtesy: Google Image Gallery
 

একটি দীর্ঘদ্রুম পাহাড় ছাড়ায় দীঘল ছায়ার টানে প্রাণের শীতল

সে যে রাঢ়ভূমি ভালোবেসে সবুজ উড়ান কথকতা কাহিনীতে

আনন্দসৃজন হ্যামলিন বাঁশি তোমার ফেলু মিত্তির

প্রফেসর শঙ্কু বঙ্কুবাবুর বন্ধু মজার মৌচাক

 

জাদুময় তুলিতে তোলে আলোর ফসল প্রাণিত উজ্জ্বল কাঁচে

কথা বলে প্রাণ পথের পাকে পাকে জেগে ওঠে ধ্রুপদী কথামালা

প্রকৃত জীবন তার ধূসর বেদনার অহংকারে হায়ারোগ্লিফ হয়ে যায়

কতটা বাস্তব জীবন সেলুলয়েড গাঁথা বিশ্ব দেখেছে

সেই শরতের কাশবন আশ্চর্য রেল মায়াহরিণীর মতো

ঝিকঝিক উড়ান অপু-দুর্গার চোখের অমর হীরক রাজা

গুপি বাঘা ভূতের রাজা আগন্তুক...

তুমি এক পরশপাথর সব আলো করে দাও

তুমি এক অমর দীর্ঘদ্রুম ছায়ায় ছুঁয়ে যাও অনন্ত প্রান্তর তেপান্তর।

ফিরুন সূচিপত্রে



| হিম সংখ্যা-১৪২৮| aleekpata.com|
  |ALEEK PATA- Your Expressive World |Online Magazine |
| Editor: Swarup Chakraborty | Publisher: Debasree Chakraborty|
 Winter , 2021 | August -December 2021 | Fifth Year  Second  Issue |28 th Edition|
|© All Rights Reserved By The Editor and The Publisher |
|a DISHA-The Dreamer Initiative |

Main Menu Bar



অলীকপাতার শারদ সংখ্যা ১৪২৯ প্রকাশিত, পড়তে ক্লিক করুন "Current Issue" ট্যাব টিতে , সবাইকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা

Signature Video



অলীকপাতার সংখ্যা পড়ার জন্য ক্লিক করুন 'Current Issue' Tab এ, পুরাতন সংখ্যা পড়ার জন্য 'লাইব্রেরী' ট্যাব ক্লিক করুন। লেখা পাঠান aleekpata@gmail.com এই ঠিকানায়, অকারণেও প্রশ্ন করতে পারেন responsealeekpata@gmail.com এই ঠিকানায় অথবা আমাদের ফেসবুক গ্রুপে।

অলীক পাতায় লেখা পাঠান