অলীক পাতার অন্যান্য সংখ্যা- পড়তে হলে ক্লিক করুন Library ট্যাব টি



। । "অলীক পাতা শারদ সংখ্যা ১৪৩১ আসছে এই মহালয়াতে। । লেখা পাঠানোর শেষ তারিখ ১৫ ই আগস্ট রাত ১২ টা ।.."বিশদে জানতে ক্লিক করুন " Notice Board ট্যাব টিতে"

Showing posts with label Suspense. Show all posts
Showing posts with label Suspense. Show all posts

Wednesday, October 21, 2020

অধিবাস পর্ব- রহস্য রোমাঞ্চ- প্রতিহিংসা - অবাস্তব ডায়েরী

 

প্রতিহিংসা
অবাস্তব ডায়েরী


অবশেষে  কলকাতার বুকে  ঘটে  যাওয়া  রহস্যময়  খুনের  সমাধানের  নিস্পত্তি  হলো আজ। না ! পুলিশ  এর  কোনো  সমাধান  করতে  পারেনি।  এই  সমাধানের  পিছনে  রয়েছে  আমি আর। ...

না  গোড়া  থেকেই  সব  শুরু করা যাক।

আমি..., নাহ  আমি  নাম  টা   এখনই  বলবো না। কলকাতার  নামী  একটা  বহুজাতিক  সংস্থা উইলসন  ইনফরমাটিকা এর  একজন  টেকনিক্যাল  এজেন্ট।  বিগত  সাত  বছর ধরে এই  কোম্পানি তে  কাজ  করছি। সেক্টর  ফাইভ  এর প্রায়  ২১ একর  জায়গা জুড়ে অফিস। আমাদের অফিস মেইনলি আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর ওপর কাজ করে। দেশে বিদেশে প্রধানত রোবোটিক্স হিউম্যানয়েড আর রোবোটিক্স মেশিনারী এক্সপোর্ট করা হয়। মূলতঃ পূর্ব এশিয়ার দেশ গুলোর সাথেই আমাদের ব্যবসা চলে। 

তবে সাম্প্রতিক কালে জার্মানিতে আমাদের নতুন ব্রাঞ্চ অফিস খুলছে।আমার মনের মতো একটা  প্রোফাইল।আমার সহকর্মী বলতে অর্ঘ্য। ও যদিও আমার আন্ডার এ কাজ করে। বেশ করিৎকর্মা ছেলে। 

 বেশিদিন হয়নি জয়েন করেছে তবুও কর্মদক্ষতার জন্য কোম্পানির সুনজরে এসেছে। এছাড়া আরেকজন আছে  রাহুল। একটু নিজের স্বার্থ নিয়ে চলে বলে ওর সাথে আমার বেশি বনে না। 

আর ছিল আমাদের ডিপার্টমেন্টাল হেড রেহান। ও ছিল আমাদের থেকে অনেক বছরের সিনিয়র। বিদেশে কাজ করার জন্য ওর জন্য কমিউনিকেশন ছিল দুর্দান্ত। আর রোবোটিক্স এর জন্য ছিল অগাধ জ্ঞান। মূলত বেশ কিছু  সফলতার জন্যই ওকে ডিপার্টমেন্টাল হেড করা হয়েছে। আর একজন অসাধারণ টীম লিডার। চারিত্রিক দিক থেকে যেমন খুব ভালোমানুষ ছিল, তেমনি কর্মদক্ষতা ছিল। 

আমাদের সাথে সম্পর্ক এতটাই ভালো ছিল যে  মাঝে মাঝে ওর বাড়ির হাউস পার্টিতে আমাদের ইনভাইট করতো। ওর বাড়িতে ওর নিজস্ব বানানো একটা রোবট আছে। আমাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলো।

ওর নাম ছিল মোমো।  ওর বাড়ির লোক অন্য শহরে থাকতো , তাই টুকটাক কাজের জন্যই নাকি এইসব বানিয়েছিলো। প্রায়  ১৬ রকম  ভাষা  জানতো  মোমো। আমাদের  কোম্পানির  বানানো  রোবটের  তুলনায়  অনেকটাই  আলাদা  ছিল  মোমো। ওর সমস্ত  ইনফরমেশন  নখদর্পনে  ছিল। সব  থেকে  আশ্চর্য  ছিল  ও প্রত্যেক  তা  মানুষ  কে  আলাদা ভাবে  চিনতে  পারতো। আর ওকে  বানানো  হয়েছিল  অবিকল  একটা মানুষ এর  মতো। আর যখন    কেউ  রেহানের  বাড়ি  আসত তারা  মোমো   কে  দেখে ঘাবড়ে  যেত। 




রিসেন্টলি আমাদের  অফিস থেকে  দুজন   কে  জার্মানি  পাঠাবার  প্রস্তাব  উঠেছে। আমরা  সবাই  নিশ্চিত  রেহানের এর  সাথে  আরেকজন  কে  পাঠানো  হবে। প্রত্যেকেই  ফরেন  ট্যুরের  লোভ  সামলাতে  পারছি না। কিন্তু অদ্ভুত ভাবে আমাকে আর অর্ঘ্যকে সিলেক্ট করা হয়েছে এই মিটিং এর জন্য। আমরা তো যারপরনাই খুশি।জীবনে প্রথম বার সুযোগ পেয়ে অর্ঘ্য তো পুরো পাগল। 

আবার রেহান কে জন্য বেশ খারাপ ও লাগছে। এরকম একজন সিনিয়রকে কেন সিলেক্ট করলো না তা আমার মাথায় ঢুকলো না। অফিস শেষে আমরা দুজন তাই গেলাম রেহান এর বাড়ি। দেখি ও ল্যাপটপের সামনে বসে ডায়রি  নিয়ে কিছু একটা করছে। আমাদের দেখতে পেয়ে চট করে ডায়েরি আর ল্যাপটপ টা বন্ধ করে দিলো। আমাদের দেখে ব্যস্ত হয়ে বললো 

এই কিছু না, আচ্ছা, তোরা  যেন কবে যাচ্ছিস ? ”

আমাদের তো সব ঠিক করে আছে। শুধু অফিস থেকে টিকেট আসলেই হবে। কিন্তু যাই বল তোকে কেন সিলেক্ট করলো ঠিক বুঝলাম না। তুই আমাদের সিনিয়র, তার ওপর আবার বাইরের প্রজেক্ট কমপ্লিট করার এক্সপেরিয়েন্স আছে”।

মুখটা নামিয়ে কথাটা বললো রেহান। অর্ঘ্য বললো “তুই কি খুব আপসেট ?” “আরে দূর আপসেট হতে যাবো কেনো?” তোদের ওপর কোম্পানি কত বড় দায়িত্ব দিয়েছে। টিম লিডার হিসেবে আমারও খুব ভালো লেগেছে। তোরা ভালো ভাবে প্রজেক্ট সামলা। একদিন না একদিন টিম লিডার সবাইকেই হতে হবে।

আজ আমি আছি,কাল তোদের মধ্যেই কেউ হবি”।

বলতে বলতে দেখি সামনে হাজির মোমো।

আমাদের সামনে দাড়াতেই ওর চোখে দুটো সবুজ আলো জ্বলে উঠলো।

তার পর বললো  “ওয়েলকম দীপন। ওয়েলকম অর্ঘ্য। মোমো তোমাদের স্বাগত জানায়।“ তারপর সামনের টেবিলে কাপ গুলো রেখে চলে গেলো।

আমি বললাম “ল্যাপটপের সামনে বসে অত মনোযোগ দিয়ে কি করছিলি?

“আর বলিস না মোমো কে আরেকটু অ্যাডভান্স বানাবো ভাবছিলাম। সামনের মাসে রোব সাইন্স এক্সিবিশন এর জন্য ওকে নিয়ে যাবো। তোরা যাওয়ার পরেই এই এক্সিবিশন টা”।

তার পরে আবার ডাইরি টা খুলে লিখতে বসে গেলো।

ওর হাব ভাবে বুঝলাম , ও বলতে চাইছে  তোরা এবার মানে মানে কেটে পড়। 

কফির শেষ চুমুক টা দিয়ে আমি অর্ঘ্য কে নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। 

গাড়িতে যেতে যেতে অর্ঘ্য চুপ করে বসে। আমি বললাম , “আজ গাড়িতে যাচ্ছিস কাল আবার ফ্লাইটে চড়বি”।

আমার স্বপ্নের ক্লাব বায়ার্ন মিউনিখ। একবার হলেও ইচ্ছে ছিলো আলিয়াঁজ এরিনা র সামনে দাড়াব। ছোটো বেলায় জার্মানী কে ফুটবল ওয়ার্ল্ডকাপেই দেখেছি।  আর কদিন বাদে জার্মানী তে পা রাখবো।"

অর্ঘ্য এতক্ষণ চুপ ছিল। এবার ও মুখ খুললো, " তুই মোমো র হাব ভাব পরিবর্তন দেখলি?"

 আমি বললাম  “রেহান ওকে কত অ্যাডভান্স বানাচ্ছে। একটু তো পরিবর্তন হবেই। এমনিতেই ওকে আবার সামনের মাসে  হ্যাকথনে পাঠাবে। কত ভালো রেহান দা।

আমাদের কত করে উইশ করলো। নিজে যাচ্ছে না তাও কোনো আফসোস নেই”

অর্ঘ্য শুধু বললো  “সেইই”।



তারপর তিন দিন কেটে গেল। পরের সপ্তাহে আমাদের যাওয়া। রাতের ডিনার করছি, দেখি অর্ঘ্যর বাড়ি থেকে কল করছে। ফোন ধরতেই বলল,

"ওর পিসির একটা অ্যাকসিডেন্ট হইছে। ইমিডিয়েটলি হসপিটাল যেতে হবে ।

কোনো রকমে খাবার ফেলেই হসপিটাল এ পৌঁছলাম। হসপিটালে গিয়ে দেখি আইসিউ এর সামনে অর্ঘ্য আর ওর কয়েকজন আত্মীয় দাঁড়িয়ে, একরকম বিধ্স্ত হয়ে। আমি ওকে জিজ্ঞেস করলাম “এসব হল কি করে ?”

অর্ঘ্য বলল “জানি না , টিউশন পড়িয়ে ফিরছিল , ডাক্তার বলছে কিছুতে হেভিলি শক খেয়েছে। ইন্টারনাল অর্গান অনেক ড্যামেজ খেয়েছে। বাঁচার সম্ভাবনা নেই একদম।”

 পরদিনই অর্ঘ্যর কথা সত্যি প্রমাণিত হল। ওর পিসি মারা গেল। এরম অস্বাভাবিক মৃত্যুর জন্য পুলিশে তদন্ত শুরু করলো। আর এদিকে  গোটা  অফিস চাউর  হয়ে গেছে এই ঘটনাটা।  বস থেকে  শুরু করে এমপ্লয়ী  সব্বাই ফোন করছে।  ঘটনা শুনে রেহানও দুঃখ প্রকাশ করলো। আমাকে অফিসে ডেকে বলল “আরে ভাই বসের  মুখে  শুনলাম , অর্ঘ্যর ইনসিডেন্টটা...। তোরা  এতো বড়ো  একটা প্রজেক্টে যাবি ,আর  ঠিক  সেই  সময়েই  এরকম একটা আকস্মিক  ঘটনা।  আচ্ছা  চল একবার ওদের  বাড়ি যাই।” 

হুমমম চল, এমনিতে ছেলেটা ভেঙে পড়েছে, এই সময়ে  মানসিক শক্তি  খুব দরকার”। আমি সম্মতি জানিয়ে বললাম। 



এই ঘটনার পর অর্ঘ্য জানিয়ে দিল ওর পক্ষে আর প্রজেক্টে জার্মানি যাওয়া সম্ভব না। ওর কথায় আমি চমকে উঠলাম আর  বললাম “আর মাত্র এক সপ্তাহ  বাকি আছে ,লাইফ এর  এতো বড়ো  একটা অপরচুনিটি কি করে ছাড়বি  তুই ?” অর্ঘ্য এর কোনো উত্তর দিল না। আমি আবার  বললাম “দেখ ভাই, আমি চাই না তুই এই প্রজেক্ট থেকে  সরে যাস।  ঠান্ডা মাথায় ভেবে সব ডিসিশন নে। “ কিন্তু এই মৃত্যু যেহেতু অস্বাভাবিক সন্দেহের আওতায় অর্ঘ্য আছে।  তাই অর্ঘ্যকে শহর ছাড়তে বারণ করেছে লোকাল পুলিশ। ফলে আর কিছু করার থাকলো না। অবশ্য পুলিশ এখনো কোনো রহস্য উদ্ধার করতে পারেনি। কারণ এরম ইলেকট্রিক শক হঠাৎ রাস্তায় লাগার কোনো স্বাভাবিক কারণ নেই। আর যদি কেউ খুন করে থাকে ,তবে এভাবে ইলেকট্রিক শক দিয়ে খুন করবেই বা কেন আর এটা করা সম্ভব না।

নেক্সট দিন আমি কেবিনে বসে কাজ করছি। অর্ঘ্য স্যার কে বললো ওর না যেতে পারার  কারণ।

স্যার সবটাই জানতো, তাই মেনে নিলো। আমাকে অ্যাসিস্ট করার জন্য আমাদের জুনিয়র রাহুলকে নেওয়া  হলো। স্যার বললেন ও যেন আমার থেকে সব কিছু   বুঝে নেয়। 

রাহুল আমাদের সাথে বেশি মেলামেশা করতো না। নরমাল মুখ দেখা হলে শুধু কথা বলতো।


কিন্তু ওই দিন দেখি স্যারের কেবিনে স্যার আর রেহানদা র কি একটা বিষয় নিয়ে তর্কাতর্কি হচ্ছে। কিছুক্ষন পর রেহান গোমড়া মুখ করে বেরিয়ে এল। আমরা জিজ্ঞেস করতে ও আমাদের এড়িয়ে চলে গেল। কিন্তু এসব খবর হাওয়ায় ভাসে। পরে জানলাম অর্ঘ্য যাবেনা তাই জন্য ও জানতে চেয়েছিল ওর জায়গায় রাহুল কে
  কেন পাঠানো হচ্ছে।তো বস বলেছে “তুমি হোল্ড এ থাকো ,যদি ওদের কেউ না যেতে পারে, তাহলেই তুমি যাবে।” এইরকম শর্ত শুনে রেহান গিয়েছে ক্ষেপে।  তবে এ ব্যাপার নিয়ে আমরা রেহানদা কে খুব একটা ঘাটালাম না। রাহুল আমার থেকে সমস্ত কাজ বুঝে নিল। 





আমার যাওয়ার ঠিক তিন দিন আগেই ঘটলো সেই ঘটনা। আমার একজন নিকট আত্মীয়ের এক্সিডেন্ট হলো। এক্সিডেন্টের কারণ অর্ঘ্যর পিসির মতোই ইলেকট্রিক  শক খেয়ে। তবে আমার আত্মীয় যে আমার সম্পর্কে দাদা হয় প্রাণে বেঁচে গেছে। কিন্তু পুরো প্যারালাইসিস হয়ে গেছে। কথা বলার শক্তি হারিয়েছে। আমাদের কেমন যেন সন্দেহ হল দুটো মৃত্যুই কোনো এক ব্যক্তির জন্য হয়েছে। আর সেই ব্যক্তিটি একজনই। মন সায় দিচ্ছিল না যে প্রজেক্ট থেকে ইস্তফা দি। কিন্তু কি করবো বুঝতে পারছিলাম না। 

 

অর্ঘ্য কেন জানি না সেদিনের পর থেকে বারবার রেহান দাকে  সন্দেহ করছিল। তবে ওর মত লোককে সন্দেহ করা অমূলক। কিন্তু অর্ঘ্য বারবার বলছিল এর পেছনে রেহানের হাত আছে। তাই অর্ঘ্য বলল একবার “রেহানের বাড়ি যাবি “? অর্ঘ্য ছেলেটা বেশ বুদ্ধিমান ও যা বলে বেশ ভেবেচিন্তে বলে ,তাই ওর কথা ফেলতে পারলাম না। আমি বললাম “চল”। পরদিন একটা কাজের অজুহাতে রেহানের বাড়ি গেলাম আমরা দুজন। আমাদের কে দেখে অবাক হয়ে রেহান বলল ,” আরে তোরা এখানে?”



আমি বললাম “হ্যাঁ রে ওই প্রজেক্টের বিষয়ে একটা সমস্যা হচ্ছে তাই জন্যই তোর কাছে আসা।”

ও হাসিমুখে বলল “ও বা ভালোই করেছিস এসে। বল কি সমস্যা হচ্ছে।”

অর্ঘ্য বলল “রেহান তুই এত কাজে হেল্প করেছিস। আজ আমাদের তরফ থেকে একটা গিফট এনেছি তোমার জন্য। “ বলেই  ও হুইস্কি বোতলটা টেবিলে রাখলো। আমি ব্যাপারটা কিছুই বুঝলাম না। রেহান বোতলটা হাতে নিয়ে হাসিমুখে বলল “আরে এসবের কি দরকার ছিল। তা এনেছিস যখন আজ এইটা হাতে নিয়েই কথা হোক। দাঁড়া আমি গ্লাস আর বরফ নিয়ে আসি”। এরপর তিনজন হুইস্কি হাতে কথা বলতে থাকলাম ,আস্তে আস্তে দেখলাম রেহান কেমন নেশার ঘোরে ভুলভাল বকা শুরু করেছে। ও বলছে “ভাই তোরা জানিস আমি তোদের মধ্যে সব চেয়ে সেরা এমপ্লয়ী । তোরা সব আমার কাছে চুনোপুঁটি রে। আমি জানিস আইআইটি বোম্বে র স্টুডেন্ট ছিলাম। তোদের আমার সাথে কথা বলার ও যোগ্যতা নেই। সেইখানে বস তোদের কে প্রজেক্ট এ নিয়েছে বলে কি সাপের পাঁচ পা দেখেছিস? তোদের যোগ্যতা কি ওখানে যাওয়ার। আরে তোদের থেকে তো আমার রোবট অনেক বেশি কাজ করে দেবে। ওকে আমি ডিজাইন করেছি আমার স্বার্থসিদ্ধির জন্য। আমার একটা ইশারায় ও সব কিছু করে দেবে। ” শেষের কথাটা  যেন আমার মাথায় বিদ্যুতের ঝিলিক খেলে দিয়ে গেল। স্বার্থসিদ্ধি মানে , কিসের স্বার্থ ,তবে কি ...?

 

একটু পরেই রেহান নেশায় ঝিমিয়ে গেল আমরা দৌড়ে মোমোর খোঁজ করলাম। আর পেয়েও গেলাম, চার্জে লাগানো ছিল। আমি কিছু ভাবার আগেই অর্ঘ্য মাথার দিকটা খুলতে শুরু করলো। আমি বললাম “এসব কি করছিস ?’ অর্ঘ্য বলল “তুই আগামী একঘন্টা যা হচ্ছে চুপচাপ দেখে যা। একটা কোথাও বলবি না। আমাকে আমার কাজ করতে দে “ তারপর ল্যাপটপ খুলে রোবটের মাথার মেমোরিটা স্ক্যান করলো। তাতে অনেক ডেটা দেখাচ্ছিল তারপর আরো কিছুক্ষুণ নাড়াচাড়া করে বলল “ইউরেকা! যা ভেবেছি ঠিক তাই”। আমি বললাম “কি ভেবেছিলি”?  ও আমার সামনে ল্যাপটপ দিয়ে বলল “নিজেই দ্যাখ”। আমার দেখে চক্ষু চড়কগাছ ল্যাপটপ আমার দাদা আর অর্ঘ্যর পিসির ছবিসহ সমস্ত ডিটেলস আছে। আমি বললাম যাদের  অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে তাদের ডিটেলস রেহানের কাছে কি করে এল ,আর কেনই বা এল। অর্ঘ্য শুধু বলল “খুনটা করেছে রেহান। তবে নিজে না মোমোকে দিয়ে। তুই জানিস মোমো রোবট। ও নিজের শরীর থেকে  ২০০ ভোল্ট বের করতে পারে যা একটা মানুষের মৃত্যুর কারণ, আমার পিসির ক্ষেত্রে তাই হয়েছে। ওকে দেখতে যেহেতু মানুষের মত তাই কেউ বুঝতেই পারেনি। ও নাভির মাধ্যমে এই শক শরীরে দিত। তোর দাদাও মারা যেতে পারত কিন্তু ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেছে। রোবটের ডেটাবেস এ ভিকটিমের সমস্ত ডিটেইলস রাখা আছে। আর স্ক্যানের সাহায্যে ও কাউকে আইডেন্টিফাই করতে পারে। আর সমস্ত তথ্যই কোনো না কোনো সোশাল মিডিয়া থেকে সংগ্রহ করা। আমাদের  ফ্যামিলিকে  এভাবে মারা হয়েছে যাতে এই ঘটনায় দুঃখ পেয়ে আমরা যাওয়া ক্যানসেল করে দি। আর এটাই ওর স্বার্থসিদ্ধি ”

আমার মানতে কষ্ট হচ্ছে রেহান এরম করবে ভাবিনি। আমি বললাম “তবে চল সমস্ত ডিটেলস পুলিশকে দি। “ অর্ঘ্য বলল “লাভ নেই , পুলিশ আসতে আসতে ও মোমোকে বদলে ফেলবে। প্রমান কিছুই হবে না। অন্য উপায় করতে হবে। আমার মাথায় একটা আইডিয়া আছে”।

আমি বললাম “কি করবি তবে”?

অর্ঘ্য বলল “যেমনভাবে ও আমাদের যাওয়া নষ্ট করেছে শুধুমাত্র নিজে যেতে পারবে না বলে । এবার আমরা ওর যাওয়া নষ্ট করবো “

আমি বললাম “কি ভাবে “

অর্ঘ্য কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে মুখে শুধু বলল “না থাকবে বাঁশ ,না বাজবে বাঁশি।  তুই খালি দেখতে থাক”।

দেখতে দেখতে তিন দিন কেটে গেছে আমিও দাদার জন্য যাওয়া ক্যানসেল করেছি। আমার বদলে 

রেহান যাওয়ার সুযোগ পেয়েছে। খুব রাগ আর ঘৃণা হচ্ছিল ওর প্রতি। কিন্তু কি আর করা যাবে। আমরা 

বুঝতে দিইনি যে আমরা সব বুঝে গেছি। যদিও এটা অর্ঘ্যর প্ল্যান। পরদিন ও আর রাহুল যাবে। কিন্তু 

পরদিন অফিসে গিয়ে একটা খবর শুনে চমকে উঠলাম। রেহানের কাল অফিস থেকে ফেরার পথে 

অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুর কারণ খুবই চেনা , ইলেকট্রিক শকের জন্য। বুঝতে বাকি রইলো না 

অর্ঘ্যর আসল প্ল্যান ঠিক কি ছিল সত্যি “না থাকবে বাঁশ ,না বাজবে বাঁশি”।

Download ALEEK PATA Mobile APP

DOWNLOAD ALEEK PATA ANDROID APP

| Aleekpatamagazine.blogspot.com |

  |ALEEK PATA- Your Expressive World |Online Magazine |
| Editor: Swarup Chakraborty | Publisher: Debasree Chakraborty |
| Special Puja Issue, 2020 | October-November 2020 | শারদ সংখ্যা -১৪২৭।
| Fourth Year Third Issue |24 th Edition|
|© All Rights Reserved By The Editor and The Publisher |
|a DISHA-The Dreamer Initiative |
পড়া শেষ? পত্রিকা বন্ধ করুন



অধিবাস পর্ব- রহস্য রোমাঞ্চ-মুখোশের আড়ালে অরিন্দম ঘোষ

 

মুখোশের আড়ালে
অরিন্দম ঘোষ


অন্ধকার অমাবস্যার ধরণীর বুকে আলোক তরণীর মতো মনে হচ্ছে সমুদ্রের ঢেউ ! যেন কেউ দিওয়ালীর আশার সহস্র সহস্র টুনিবাল্ব প্রজ্জ্বলন করেছে সমুদ্রের ঢেউ গাত্রে। কিন্তু তটভূমিতে এসে উথালপাতাল করা আশার ঢেউ রূঢ় পাথরের জমিতে এসে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করাটাই হল বাস্তব!

সমুদ্রের তটভূমিতে এরকমই একটা পাথরের উপর বসে ছিলাম আমি আর আমার অন্তরাত্মা। ছয় ছয়টা বছরের অবকাশে আবার একাকী- নিঃস্ব - নিঃসঙ্গ! দূরের ঝাউ পাতায় বাতাসের সিরসিরানি আমি স্পষ্টভাবে শুনতে পাচ্ছিলাম। শুধু মন্দিরার সাথে এই দীর্ঘ ছয় বছরের সম্পর্কের যতি চিহ্নটা খুঁজে পাচ্ছিলাম না। 

অনেক প্রশ্ন সমুদ্রের বিশালতায় ডুবে গিয়েও আমার মনে ঢেউ তুলছিল। কয়েক ফোঁটা নোনা জলও যেন আমার অজান্তেই বিশালাকায় সমুদ্রের জলে মিশে গেল।

মন্দিরার সেই চিৎকার করে বলা কথাগুলো - কাপুরুষ কোথাকার! এক্ষুণি বিয়ে করতে পারবে না তো এতদিন আমাকে ব্যবহার করলে কেন ? আমাকে আস্তে আস্তে আরো অন্ধকারে ঠেলে দিচ্ছিল।  শেষ সিগারেটটাও জ্বালিয়ে নিলাম ফস করে। তাও কি কোন আলো জ্বলল এই নির্জন তালসারির অজানা অচেনা তটভূমিতে? 

রঙিন বুদবুদের মতোই মেয়েরা ক্ষণিকের রামধনু দেখিয়ে আমার জীবন থেকে কেন যে মিলিয়ে যায়। এই নিয়ে বারবার তিনবার। প্রথমে বিপাশা, তারপর অনন্যা আর সবশেষে মন্দিরা।
বিধাতা কি তবে আমার ললাট লিখনের সময় কোন মেয়ের স্থায়িত্ব আমার জীবন কালে রাখতে ভুলে গেছেন ?



পাঁচ হাজার পাঁচশো...এক
পাঁচ হাজার পাঁচশো... দুই
পাঁচ হাজার পাঁচশো... তিন

হাতুড়ির তিন নম্বর আঘাতেও যখন আর কোন দাবিদার পাঁচ হাজার পাঁচশোর চেয়ে বড়ো কোনো বুলি হাঁকাল না, তখন বুঝলাম যে নিলামে ওঠা ঐতিহাসিক কাঠের বিটকেল মুখোশটি আমারই হল। অবশ্য অদ্ভুতুড়ে দর্শনের জন্যেই লোকজন মুখোশটির উপর নিলামে তেমন আগ্রহ দেখায়নি! 

তাও যদি মুখোশটি মমির পরানো মুখোশ হত! তাও তো নয়। কোনও এক অজ্ঞাত কুলশীল মিশরীয় অভিজাতের শখের জিনিস বোধ হয়। 

পুরানো ঐতিহাসিক মিশরীয় মুখোশটির কথা আমি প্রথম জানতে পারি কোলকাতার চিনাপট্টীতে এক পুরানো কিউরিওর দোকানে। প্রাচীন জিনিসপত্র সংগ্রহ করার এই শখ আমার বহু দিনের। 

পাঠকদের অবগতির স্বার্থে জানাই যে, আমার নাম অনির্বাণ সরকার। সাংবাদিকতা পেশার সাথে এই পুরানো জিনিস সংগ্রহ করার নেশাও অনেকটা দায়ী আমার হঠাৎ হঠাৎ করে একা-একাই বাইরে বেড়িয়ে যাবার জন্যে।



স্যাঁতস্যাঁতে অন্ধতম অন্ধকূপের মধ্যে দিয়ে এ কোথায় এগিয়ে চলেছি আমি? সর্পিল সরীসৃপে ভরা এ কোন জগৎ? কোনওমতে নিজেকে বাঁচিয়ে বাঁচিয়ে এগিয়ে চলেছি আমি।
সামনে দেখি একটা ভয়ঙ্কর ড্রাগন মুখ দিয়ে যে আগুন বার করছে। একটুর জন্য প্রাণবায়ু রইলো শরীরে। নাকি আমি মরে গেছি? হঠাৎ পা পড়ল একটা হাল্কা পাথরে। ঢুকে গেলাম আরেক অন্ধকার সুঙ্গে। সুঙ্গের খাতে নদীর মত বয়ে চলেছি আমি। এ কোন অজানা নিয়তির পথে ?
হঠাত্‍ করেই বোধোদয় হলো যেন। সাত-সাতটা দরজা কোনও জাদু মায়াবী মন্ত্রবলে পিছলে পিছলে পার করে অন্ধকারের মধ্যেই উজ্জ্বল মায়াবী রূপালী আলোয় ঢাকা একটা ঘরে আমি পৌছে গেছি।
অদ্ভুত ব্যাপার হ’ল ঘরে কোনও আলোক উত্‍স নেই। তবে কোন রহস্যময় পথে আলোক এখানে প্রবেশ করছে ? তবে কী এইখানে আসা আমার ভবিতব্য ছিল ?
ঘরের মধ্যবর্তী অংশে একটা সুবিশাল দাঁড়িপাল্লা। দু’ জন অতিমানবিক দৈব শক্তি ধারী পুরুষের মধ্যে বাকবিতণ্ডা চলছে। তাদের মধ্যে আবার একজনের মুখটি শৃগালের মত। তাকে অন্য জন অনুবিস নামে সম্বোধন করছে। 
ভাষাটা কোথায় যেন শুনেছি ! প্রাচীন কোনও ভাষা কী ? এটাই কী তবে মিশরীয় যমরাজ ওসিরিশের দরবার? এখানেই কী তবে আমার মর্ত্যের ভাল বা মন্দ কাজের হিসাব হবে ?
দুজন লোক আমাকে ধরে সুবিশাল দাঁড়িপাল্লাতে বসিয়ে দিল। আমি পালাবো কী - অক্টোপাসের মত এক সরীসৃপ আমাকে আটকে রেখেছে।
মন্ত্র পুতের মত আমি বসে আছি। মাথায় বিশাল মুকুট পরা সারা গায়ে উল্কি আঁকা একটা ভয়ংকর দেখতে একটি লোক আমার দিকে এগিয়ে আসছে। তার হাতটা যেন ক্রমশ লম্বা থেকে লম্বতর হয়ে যাচ্ছে। হাতের অগ্রভাগে নখগুলো আরও বড়ো হয়ে যাচ্ছে। আমার হৃদয়টাকে বুকের ভেতর থেকে বার করে নিল সে। আর্তনাদ করব কী - আমার মুখের মধ্যে বিশালাকায় এক কুচকুচে কালো মাকড়সা ঢুকে গেল। তখনও যেন হৃদয়টা স্পন্দিত হচ্ছে। বসিয়ে দিল আরেকটি ছোট দাঁড়িপাল্লায় আমার হৃদয়।

আঃ... আঃ... আঃ... আঃ...
চিত্‍কার করে উঠলাম আমি। ঘেমে নেয়ে একাকার হয়ে ঘুম ভেঙে গেলো আমার।
এমন অদ্ভুতুড়ে স্বপ্নের অর্থ কী ? তবে কী প্রাচীন মিশরীয় মুখোশটা এর জন্য দায়ী ? 



আমি যখন প্রত্নতাত্ত্বিক ডাঃ বিষ্ণুগোপাল আচার্যের বাড়িতে ঢুকলাম, তখন প্রায় সন্ধ্যা সাত ঘটিকা। যথারীতি উনি স্টাডিরুমে একরাশি বইয়ের পাহাড়ের মধ্যে বসে আছেন। আমার স্বর্গীয় পিতৃদেব ইতিহাসের প্রফেসর হওয়ায় ওনার সঙ্গে অনেক দিনের সখ্যতা ছিল। পুরানো দিনের চশমা আর কাঁচাপাকা দাঁড়ি গোঁফের জঙ্গলে অযত্নের ছাপ স্পষ্ট। ভদ্রলোকের অগাধ পাণ্ডিত্য। কিন্তু কোন অহঙ্কার ছিল না। উনি আমার সঙ্গে বন্ধুর মত কথা বলতেন। 
আমাকে দেখেই বসতে বললেন। আমার নতুন সংগৃহিত মিশরীয় মুখোশটি নিয়ে অনেকক্ষণ নেড়েচেড়ে দেখলেন। তারপর আতস-কাঁচ কি সব দেখলেন। কতগুলি পুরানো হলুদ পাতা যুক্ত বইয়ের পাতা খুলে দেখলেন। তারপর অবাক হয়ে বললেন, এই মুখোশ তুমি কোথায় পেলে ভায়া ? আমি বললাম, চীনাপট্টির পুরানো এক কিউরিও-র দোকানে নিলামে কিনেছি। চোরাই মাল কিনা জানি না।
উনি চিন্তিত মুখে বললেন, আমি যদি ভুল না বুঝি, এই মুখোশটি ঐতিহাসিক ও দুস্প্রাপ্য। সমস্ত পৃথিবীতে আর মাত্র একটি এই ধরণের মুখোশ আছে, তাও মিশরের কায়রোর মিউজিয়ামে। এই মুখোশটির হাঁড়ির মত আকৃতি আর উপরের শৃগালের প্রতিকৃতি দেখে মনে হচ্ছে এটা মিশরীয় মৃত্যুর দেবতা অনুবিসের মুখোশ। ভয়ের ব্যাপারটা হল, একমাত্র প্রাচীন মিশরীয় পুরোহিতরা ধর্মীয় অনুষ্ঠানের সময় অর্থাৎ মানুষের মৃত্যুর পর যেসব আচার-অনুষ্ঠান হত, সেসময় এই মুখোশ ধারণ করত।
আমি মন দিয়ে শুনে বললাম, এই মুখোশ অন্য কেউ লাগালে কি হবে ? আমি যে এই মুখোশটা একবার ধারণ করেছি, সেটা বেমালুম চেপে গেলাম। উনি একটু ভেবে বললেন, ইতিহাস বলছে, তার ফল হতে পারে মারাত্মক। কারণ 'অনুবিস' ছিল মৃত্যুর পরের জীবন, মায়া জাল আর কালো তন্ত্র মন্ত্রের দেবতা। পুরোহিতরা বিশেষ দেহশুদ্ধির পর এই মুখোশ ধারণ করত। অন্য কেউ এই মুখোশ পড়লে রুষ্ট হতে পারেন অনুবিস, যার ফলে তিনি পারলৌকিক আত্মাদের জীবন্ত করে আমাদের পৃথিবীতে ফেরত নিয়ে আসতে পারেন।



তুঝে ছেড়ে হাওয়া চঞ্চল...
মহব্বত তুমসে শিখি হে...
রাতের নিস্তব্ধতা ভেঙে দিল মিউজিক্যাল কলিং বেলের শব্দ। এত রাতে আবার কে এলো ? মন্দিরা কোলকাতার বিলাস বহুল ফ্ল্যাটে তখন একা। ডিজিটাল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল সে। সময় ডিসপ্লে করছে রাত সাড়ে এগারো ভিউয়িং গ্লাস দিয়ে দেখল সে। আজকাল কাউকে বিশ্বাস নেই।
দরজার বাইরে তখন দাঁড়িয়ে মন্দিরার বাবা। নামকরা টী কোম্পানীর জেনারেল ম্যানেজার বিমল সিনহা। তাড়াতাড়ি কালকে রাতের পার্টির উচ্ছিষ্ট জিনিসপত্র মানে খালি বোতল, বিয়ারের ক্যান, পিজ্জা, প্যাটিস, চিকেন লল্যিপপ সবই সরিয়ে ফেলল সে। কর্পোরেট সেক্টরে কাজ করলে এইসব গেট-টুগেদার পার্টি না করলে চলে না। সবাই বলবে মিডিল-ক্ল্যাস মেন্টালিটি।

মন্দিরা অবাক হয়ে বলল, আরে, ড্যাডি। তোমার তো কালকে আসার কথা ছিল ! মিঃ সিনহা বললেন, আরে বুবলি, তোর ফ্ল্যাটে আসতেও পার্মিশন নিতে হবে নাকি ? এত্তো বড় হয়ে গেছে আমার ছোট্ট বুবলি মা ?
তারপর মিঃ সিনহা যোগ করলেন, আসলে গভর্নমেন্ট টী বোর্ড এর সাথে মিটিংটা ক্যানসেল হয়ে গেছে। ভাবলাম দার্জিলিং গেস্ট হাউসে থেকে কী হবে ? তাই চলে এলাম তোর এখানে।
- তা ভালোই করেছ। কিছু খেয়েছ কী ? না কি অনশন করে রয়েছ এতো রাত অবধি ?
- আমার ছোট্ট বুবলি মা থাকতে আর আমার চিন্তা কী ?
এই বলে মন্দিরার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন মিঃ সিনহা, মা আমায় একটু তোর হাতের স্পেশাল গাজরের হালুয়াটা খাওয়াবি ক্ষীর মেরে। অনেকদিন তোর হাতের রান্না খাইনি। রান্নার হাতটা তুই তোর মার মতই পেয়েছিস।
মন্দিরা ছোট্ট থাকতে মা মারা গেলেও আর বিয়ে করেননি মিঃ সিনহা। যদি মন্দিরার ঠিক মত দেখাশুনা না হয়। মেয়েকে এতোটাই ভালোবাসতেন তিনি। 
মন্দিরা ব্যস্ত হয়ে বলল, একটা ফোন তো করতে পারতে। দেখি আবার ফ্রীজে মিল্ক আছে কিনা ! তুমি তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নাও। অনেক দূর থেকে জার্নি করে এলে। এসিটা আমি অন করে দিলাম ড্রইং রুমের। 
গাজরের হালুয়াটা বানিয়ে নিয়ে ড্রইং রুমে এসে একটু অবাক হলো মন্দিরা। কোথায় আবার গেল ড্যাডি ? ওয়াশ রুমে নেই তো ? ঠান্ডা জল আনতে ফ্রীজের দিকে এগোল সে। ফিরে এসে দেখে ড্যাডি এসে গেছে। 
- কোথায় আবার চলে গিয়ে ছিলে ? তাড়াতাড়ি খেয়ে নাও। নইলে আবার হালুয়াটা ঠান্ডা হয়ে যাবে। কেমন হয়েছে বোল কিন্তু। খুব তাড়াহুড়ো করে বানিয়েছি। এতক্ষণ না খেয়ে কেউ থাকে! মা থাকলে এমন অনিয়ম তুমি করতে পারতে ?
- তুই তো আমার মা ! তুই থাকতে আমার চিন্তা কী ? ফ্যান্টাস্টিক হয়েছে মা ! আর একটু দিবি মা ? কবে আবার এই জগতের মায়া ছেড়ে পরলোকে চলে যাব, যাবার আগে আমার বুবলি-মার ভালোবাসা জড়ানো গাজরের হালুয়া মন ভরে খেয়ে নি ! 
- ড্যাডি ভালো হচ্ছে না কিন্তু। তুমি আজ আবার ছাইপাশ স্কচ্ গিলে এসে উল্টোপাল্টা বকছ ।
- সোনা মা আমার। আমার একটা কথা রাখবি মা। মরার আগে আমাকে দেওয়া শেষ প্রতিশ্রুতি।
- ড্যাডি এবার কিন্তু বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে ! 
- না বুবলি, আমায় বলতে দে মা। অনির্বাণ ছেলেটা মনের দিক থেকে বড়ো ভাল। তুই ওকে ক্ষমা করে দিস। বড্ড একা ছেলেটা। কিন্তু তোকে ভীষণ ভালোবাসে। ওকে তোর জীবন সাথী করে নিস। যদি এই বুড়োর কথা একটু ভাবিস মরার আগে।
- তুমি আবার সেন্টিমেন্টাল ব্ল্যাকমেইল শুরু করলে ? দাঁড়াও, আমি একটু আসছি কিচেন থেকে। 
কিচেন থেকে এসে মন্দিরা অবাক হয়ে দেখল ড্রইং রুমে কেউ নেই। ওয়াশ রুমেও কেউ নেই। সারা ঘর তন্নতন্ন করে খুঁজে দেখল কেউ নেই। ড্যাডিকে কেমনযেন অন্যরকমের মানুষ লাগছিল আজকে, কিছুতেই তাকে এতদিনের অভিজ্ঞতায় মেলাতে পারছিল না মন্দিরা। কিছু একটা গন্ডগোল আছে। কিন্তু কি সেটা ? কিছু না বলেকয়ে কোথায় চলে গেল ড্যাডি ? নিচের নেপালী ওয়াচম্যান কে ফোনে ধরলো সে...
- নেহী ম্যাডাম ! আপকে উধার তো কোই আদমি নেহী আয়া। হাম তো ডিউটি ছোকে কিধার ভি নেহী গয়া !




সকাল থেকেই মাথাটা ভারি ভারি লাগছিল। কাল রাতে তো কোন পার্টিও ছিল না, তাও যে কিসের হ্যাংওভার অনেক ভেবেও কোন কুল কিনারা পেলাম না। আমি কোলকাতার প্রথম শ্রেণীর বাংলা দৈনিক সংবাদপত্রের জার্নালিস্ট অনির্বাণ সরকার। আমার লেখাকে কোলকাতার অনেক কেউকেটা ব্যক্তি সমীহ করে চলে। অথচ কিছুতেই মনে পড়ছে না কাল রাতের কোন কথা।
ব্রেইনের মেমারী সেলগুলো যেন ঘুমিয়ে পড়েছে।এতো দেরিতেই বা আমি কি করে উঠলাম ? আরে, তাইতো আমার মোবাইলটা কোথায় গেল ? এতোক্ষণে তো মোবাইলে অ্যালার্ম বাজা উচিত ছিল। প্রায় দুপুর হয়ে এল। নাঃ, মোবাইলটা আগে খুঁজে বার করতেই হবে। আমার আঁতেল প্লাস মাকাল ফল বস্ না জানি কতবার ফোন করে করে খিস্তি দিয়েছে। সেক্রেটারীকে দিয়ে আমাকে টার্মিনেশান লেটার ধরানো খালি বাকি! 
কি ভেবে নিজের অজান্তেই টিভিটার রিমোট চিপে দিলাম। বাঙলা খবরের চ্যানেল দেওয়াই ছিল। আমি ফ্রেস হতে হতে শুনতে পেলাম...
"
বিশিষ্ট সাংবাদিক অনির্বাণ সরকার কাল রাত থেকে নিজের বাড়ি থেকে রহস্যজনকভাবে উধাও। দার্জিলিং থেকে শিলিগুড়ি আসার রাস্তায় এক মর্মান্তিক পথ দূর্ঘটনায় টী এস্টেটের জেনারেল ম্যানেজার বিমল সিনহা কাল রাত থেকে নিখোঁজ। নিজস্ব সংবাদদাতার মতে, রাত প্রায় ন'টার সময় চারজনকে নিয়ে গাড়িটি বৃষ্টিতে পিচ্ছিল পাহাড়ী রাস্তায় টাল সামলাতে না পেরে গভীর খাতের মধ্যে পড়ে যায়। খারাপ আবহাওয়ার জন্য পুলিস এখনো কারো ডেড বডি উদ্ধার করতে না পারলেও, কারো বেঁচে থাকার সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে..."
হঠাত্‍ করেই মোবাইল ফোনটা উদ্ধার হলো ড্রেসিং টেবল থেকে। ভাইব্রেট করা রয়েছে। বত্রিশটা মিস্ কল। আমি তো বিশাল ভিভিআইপি দেখছি। মনে পড়েছে একটু একটু...
কাল রাতে মুখোশটা নিয়ে নাড়াচাড়া করছিলাম। ভাবছিলাম একবার মুখোশটা মুখের উপর লাগিয়ে দেখবো। কী আছে ঐ মুখোশে ? কেন সবাই এত ভয় পায় ? 
তারপর...তারপর...সব ব্ল্যাং। মুখোশটা গেল কোথায় ? রাতে আমি বা কোথায় ছিলাম? ঐ আবার মোবাইলটা ভাইব্রেট হচ্ছে। যা ভেবেছি তাই, আমার জিগরী দোস্ত সৈকতের কল।
-  কোথায় ছিলি মাইরি ? সারা রাত ? এদিকে তো তোর বস আমাদের পাগল করে দিচ্ছে। কিরে শুনতে পারছিস না ? কালা হয়ে গেলি নাকি অনির্বাণ ? আমি সৈকত বলছি...
- হ্যালো , বল সৈকত।
- তোর না আজকে প্রেজেন্টেশন ছিল। গুরু কোন রূপবতি কন্যার চক্করে ছিলেন কাল রাত্রে ? শোন...মন দিয়ে। অনিমেষ তোর নামে থানায় মিসিং ডায়েরি করেছে। তুই ভুল ভাল একটা স্টোরিলাইন বানিয়ে একটা ডক্টর সার্টিফিকেট বাগিয়ে জলদি অফিস চলে আয়। অবশ্য যদি তোর চাকরিটা লাগে, তাহলেই... !
- সকাল সকাল খিস্তি বের করাস না তো মুখ থেকে। কার মুখ দেখে যে উঠেছি আজকে !রাতের ঘটনা কিছুই মনে নেই। একদম ব্ল্যাং, তুই একটু ম্যানেজ কর। আমি আধা ঘন্টার মধ্যে আসছি ভাই। তুই একটু ম্যানেজ কর।
- টিভিতে নিউজটা শুনেছিস ? তোর মন্দিরার বাবা কালকে একটা অ্যাক্সিডেন্টে মারা গেছেন। সব নিউজ চ্যানেলে দেখাচ্ছে।
- দাঁড়া দেখছি। ছেড়ে দিলাম।
আবার কার যেন ফোন আসছে। চাকরিটা বোধহয় আর থাকলো না ! স্ক্রিনের দিকে না দেখেই ফোনটা ধরলাম।
- তুমি কী এখুনি একবার আমার সাথে দেখা করতে পারবে প্লিজ - খুব আর্জেন্ট। যত তাড়াতাড়ি পারো তুমি...মন্দিরার গলার সেই দৃঢ়তা যেন ভেঙে চুরমার করে দিয়ে গেছে কেউ...নইলে সে এভাবে বিনতি করবে অনির্বাণকে!
- কাকুর কী খবর ? কিছু খবর পেলে কী ?
- জানি না। আমি কিচ্ছু জানি না। তুমি আসতে পারবে কিনা বলো।
- টেনশান কোর না। আ'য়াম অন দ্য ওয়ে। শুধু গাড়িটা বের করতে যতটুকু সময় লাগে...
মানুষের প্রায়োরিটি যে কত তাড়াতাড়ি বদলে যায় ! এখন আমার কাছে মন্দিরার কাছে পৌঁছানোটাই সবচেয়ে জরুরী। নিমেষে চাকরির কথা ভুলে গেলাম।
গাড়িটা বের করতে গিয়ে অবাক হয়ে গেলাম। ইঞ্জিনটা এখন গরম। রাতে গাড়ি নিয়ে বেরলাম কখন ? অথচ কিছুই মনে নেই ! এমনটা আগে কখনো হয়নি।
আরো অবাক হয়ে গেলাম এই দেখে যে, অদ্ভুত দর্শন মিশরীয় মৃত্যুর দেবতা অনুবিসের মুখোশটা আমার গাড়ির ফ্রন্টসীটে বসে যেন মুখ ভেঙচাচ্ছে আমায়। যেন বলছে, কিরে কেমন দিলাম বল ! 



Download ALEEK PATA Mobile APP

DOWNLOAD ALEEK PATA ANDROID APP

| Aleekpatamagazine.blogspot.com |

  |ALEEK PATA- Your Expressive World |Online Magazine |
| Editor: Swarup Chakraborty | Publisher: Debasree Chakraborty |
| Special Puja Issue, 2020 | October-November 2020 | শারদ সংখ্যা -১৪২৭।
| Fourth Year Third Issue |24 th Edition|
|© All Rights Reserved By The Editor and The Publisher |
|a DISHA-The Dreamer Initiative |
পড়া শেষ? পত্রিকা বন্ধ করুন


 

 

Main Menu Bar



অলীকপাতার শারদ সংখ্যা ১৪২৯ প্রকাশিত, পড়তে ক্লিক করুন "Current Issue" ট্যাব টিতে , সবাইকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা

Signature Video



অলীকপাতার সংখ্যা পড়ার জন্য ক্লিক করুন 'Current Issue' Tab এ, পুরাতন সংখ্যা পড়ার জন্য 'লাইব্রেরী' ট্যাব ক্লিক করুন। লেখা পাঠান aleekpata@gmail.com এই ঠিকানায়, অকারণেও প্রশ্ন করতে পারেন responsealeekpata@gmail.com এই ঠিকানায় অথবা আমাদের ফেসবুক গ্রুপে।

অলীক পাতায় লেখা পাঠান