অলীক পাতার অন্যান্য সংখ্যা- পড়তে হলে ক্লিক করুন Library ট্যাব টি
Wednesday, August 30, 2017
Preface-Swarup Chakraborty
Preface-Sixth Edition
(Pre- Printed Version Edition)
Picture Courtesy: Google Image : Collage: Author |
Dear friends,
Welcome back, we are feeling top of the world while
handing you over the sixth issue of your very own blog. It is you, whose active
participation and patronizing has fueled our team to move forward.
As you may all know that we are about to come up with
“Aleek Pata-The Expressive World” in its first ever printed magazine
avatar. We, the team Aleek Pata is falling short of words while expressing
our happiness which our Aleek Pata family has provided us.
The huge response from all over the globe is really
awesome, we are thankful to those famous as well as the budding writers who
have reposed faith on us and chosen this platform for publishing their
priceless creations.
We wanted to keep each and every creation in Aleek
Pata, but due to some obvious limitations we had to pick and choose only few of
the entries, we apologize for that.
You may resend your articles for the coming issues of
the Blog version, which we publish once in a month.
We thank our mentors, friends, whose unconditional
love and guidance has paved the way for the Printed Version of Aleek Pata.
With Advance greetings of Durgapuja and Dussera we
shall take your leave for now, with the hope to meet you again soon.
Thank You
With Warm regards
Swarup Chakraborty
Team –ALEEK PATA
30/08/2017
Tuesday, August 29, 2017
আজাহারুল ইসলাম
২২ শে শ্রাবন-রবীন্দ্র বিজয়দিবস
Collage : Swarup Chakraborty, Source Courtesy: Google Images |
কাকে নিয়ে স্মরন সভা?,উনি কী স্মরনের জন্য নাকি
উনি তো কাছে পাওয়ার জন্য,
আজ শান্তিনিকেতনের
প্রতিটি ঘাসে, প্রতিটি গাছের পাতায়,স্বর্নশিশিরের
পেয়ালায় পান করব রবীন্দ্রঅমৃত,
কোথায় নেই তুমি গুরুদেব!!!!
শান্তিনিকেতনের ছাতিমতলা থেকে
জোঁড়াসাকোর বারান্দায়,কোথায় নেই!
তাই তোমায় নিয়ে শোকের মালা গাঁথব না আজ;
কোনও কবিতা বলবে না, তুমি আর নেই !
তুমি তো রবীন্দ্রনাথ!!!
কারন শ্রাবণ মাসের আকাশে বিদ্যুৎ এ তুমি রয়েছ,
আবার টিপটিপানি বৃষ্টির চাদরে মুড়েও তুমি রয়েছ,
পাতার সনসন শব্দের দিকে চেয়ে দেখি তুমি রয়েছ,
উন্মাদ মেঘের গতিবেগে ঝড়ের বন্দরেও তুমি রয়েছ।
জাহাজঘাটের নাবিকের পালের ডগায় তোমার কবিতারা
রাতদিনে গাঙচিলের ডানায় মাখিয়ে দেই অসংখ্য
বৃক্ষ,
আর সমুদ্রকোলের স্বেচ্ছাসেবী মাছেরা তা রোপন করে
বিনা শর্তে!!
বৃষ্টিতে ভেজা পায়রা খেলা করে তোমার
সাহিত্যধারায়
আর তুমি আমি দিশেহারা হয়ে
মরু বিজয়ের কেতন উড়াই।
কারন একটাই ঘাসবনের ধারে তুমি যে হোটেলের
টেবিলে দুপুরের ডিনার সেড়েছ,
আমি সেখানে মাছি হয়ে উড়েছি,
কারন তোমার থেকে ঠিক আমার বয়সী সবকিছু
নিতে বড়ই সাধ হয়,
আজ ২২ শে শ্রাবন,তোমার বিজয়
দিবস গুরদেব,
দেবে না আমায় সবকিছু?
মইদুল মোল্লা
ব্যর্থ হতে হয়
Picture Courtesy: Google Images |
এখন আমাকে কদর করেনা কেউ।
তবে দেখেছে অনেকে আমায়,
এই ভাঙা পাঁচিলের উপর কত কষ্ট আমার।
তবু রয়েছি এত দিন বেঁচে ।
হেথা জল নাই।
ছিল কিছুদিন, একটু খানি জল।
যেদিন আমায় উড়িয়ে নিয়ে এসেছিল একটি ঝড়,
সেদিন বৃষ্টি হয়েছিল।
খানিকটা তারিই জল ধরেছিল আমার আশ্রয় দাতা।
এখন আর নেই সেই জল।।
তবে দেখেছে অনেকে আমায়,
এই ভাঙা পাঁচিলের উপর কত কষ্ট আমার।
তবু রয়েছি এত দিন বেঁচে ।
হেথা জল নাই।
ছিল কিছুদিন, একটু খানি জল।
যেদিন আমায় উড়িয়ে নিয়ে এসেছিল একটি ঝড়,
সেদিন বৃষ্টি হয়েছিল।
খানিকটা তারিই জল ধরেছিল আমার আশ্রয় দাতা।
এখন আর নেই সেই জল।।
দেখি মালিটা এসে রোজ জল দেয়
ফুলগাছ গুলোকে।
ওদের ততটা দরকার নেই তবুও।
ওরা রয়েছে মাটিতে।
ইচ্ছে মত সেই জল মাটির থেকে শুষে নিতে পারবে ওরা।
যে জল মাটি সেই দিন প্রান ভরে ধরেছিল;
ওদের ততটা দরকার নেই তবুও।
ওরা রয়েছে মাটিতে।
ইচ্ছে মত সেই জল মাটির থেকে শুষে নিতে পারবে ওরা।
যে জল মাটি সেই দিন প্রান ভরে ধরেছিল;
মানুষ কি নিষ্ঠুর মালিটা রোজ
আমার কষ্ট দেখে,
ঐ গাছগুলোকে দিয়ে অবশিষ্টাংশ ফেলে দেয়।
তবুও কোনদিন মনেহয়না একটুখানি দিই।
অথচ পাশেই রয়েছি আমি।
হয়তো ভেবেছে আমি একটা অপুষ্পক জীব।
আমার রূপ নেই ঠিকই।
কিন্তু গুন থাকতেও তো পারে;
আমারও সৌন্দর্য আসে ।
কিন্তু এই কথাটাই কাউকে বোঝাতে পারছি না।
তবে সেই দিন ওরা যত্ন করবে।
যেদিন আমি ফোটাতে পারবো ফুল;
হয়ত সেইদিন জায়গা করে দেবে থাকার জন্য ।
তখন আমাকে নিয়ে কত মাতামাতি করবে সকলে।।
ঐ গাছগুলোকে দিয়ে অবশিষ্টাংশ ফেলে দেয়।
তবুও কোনদিন মনেহয়না একটুখানি দিই।
অথচ পাশেই রয়েছি আমি।
হয়তো ভেবেছে আমি একটা অপুষ্পক জীব।
আমার রূপ নেই ঠিকই।
কিন্তু গুন থাকতেও তো পারে;
আমারও সৌন্দর্য আসে ।
কিন্তু এই কথাটাই কাউকে বোঝাতে পারছি না।
তবে সেই দিন ওরা যত্ন করবে।
যেদিন আমি ফোটাতে পারবো ফুল;
হয়ত সেইদিন জায়গা করে দেবে থাকার জন্য ।
তখন আমাকে নিয়ে কত মাতামাতি করবে সকলে।।
আসছে শরৎ শীতের আগেই ফুটবে আমার
কুঁড়ি ।
হয়তবা থাকা হবেনা এই সুন্দর পৃথিবীতে।
সব আশা, আকাঙ্ক্ষা, ব্যর্থ হবে আমার।
ঐ যে শাখা, প্রশাখা গুলো, কেমন যেন অবশ হয়ে আসছে।
আশা পুরিল না আর।
ওরা দিলনা জল।
পারলামনা ফোটাতে কুঁড়ি ।
বিদায় নেবার সময় এসেছে এবার।
হয়তবা পরজনমে দেখা হবে মালীর সঙ্গে ।
হে মাতৃভূমি আমি দুঃখীত।
এবার আমায় বিদায় দাও।।
হয়তবা থাকা হবেনা এই সুন্দর পৃথিবীতে।
সব আশা, আকাঙ্ক্ষা, ব্যর্থ হবে আমার।
ঐ যে শাখা, প্রশাখা গুলো, কেমন যেন অবশ হয়ে আসছে।
আশা পুরিল না আর।
ওরা দিলনা জল।
পারলামনা ফোটাতে কুঁড়ি ।
বিদায় নেবার সময় এসেছে এবার।
হয়তবা পরজনমে দেখা হবে মালীর সঙ্গে ।
হে মাতৃভূমি আমি দুঃখীত।
এবার আমায় বিদায় দাও।।
जितेन्द्रनाथ गिरि
मेरे कविता में
Image Courtesy: Pinterest |
मेरे कविता में,
मेरा जीवन छूपा है,
मेरे जीवन में,
मेरा कविता छूपा है ।
वेहद संघर्ष के बाद,
यह मिलन हुआ है,
मेरे दोस्तों,
मुझे मत नकारो,
आपकी हर फयशाला पर,
मेरा शीष् झुका है ।
मेरे कविता में........
नत मस्तक हर भावना का
मैं करता हुं कदर,
ऊजाले और अंधेरा,
दोनो का ही मैं करता हुं आदर ।
सुख और दुखों के मिलन से ही
जीवन होते है पुरे ।
मेरे दोस्तो,
मेरे अर्पण से मुझे मत उखाड़ो ।
आपकी हर जज़्बात पर
मेरे उम्मीद जुड़े हुये है ।
मेरे कविता में........
बूझी बूझी सी अब
जीवन की दीया है मेरा,
आत्मकलह में डूव गई हैअब,
मेरे जीवन की सबेरा ।
अब ना रहा है वो मीत,
अब ना रहा है वो संगीत,
हर कोई संवेदना अब सुखों की
पैरों में पहना दिया है जंज़ीर ।
मेरे कविता में........
মলয়েন্দু মজুমদার
শিল্পীর উল্লাস......
ঝিরঝিরে বৃষ্টি,
অপূর্ব সব শৈল্পিক সৃষ্টি।
খিচুরি, ইলিশ – ভাজা,
বাহারি ভোজনের মজা।
বৃষ্টির প্রকারভেদ-এ
ভোজনের আয়োজন,
উৎসব বিনা উৎসাহিত প্রয়োজন।
উৎসবের হাহাকার,
নিম ভাত অনাহার।
প্রকৃতির উল্লাস,
সভ্যতার সৌন্দর্যায়নের ছারখার।
চারিদিকে হাহাকার,
হতাশার উৎসব
শক্তির – ক্ষমতার,
শক্তির – ক্ষমতার,
নেয়া – দেয়ার উৎসব।
সৌন্দর্যায়নে প্রলেপ যত,
ঢেকে থাকে ক্ষত
তত,
প্রলেপেতে ভালো রাখা,
ভিতর ফাঁপা ভিত কাঁপা।
গঠনমূলক সূত্রতায়,
উপহাস – উপকার,
এভাবেই পেতে চায়,
আরও ত্রান,
আরও মান ।
চাই আরও প্রান,
পেতে আরও ত্রান
এভাবেই পাওয়া,
আরও পেতে চাওয়া।
Monday, August 28, 2017
শম্পা সান্যাল
জীবন জীবনের জন্য
Sketch : Godhuli Roy, Photo : icwow, Collage: Swarup Chakraborty |
অনেকদিন পর আজ শ্রীমতি বাড়ি থেকে বেরিয়েছে। এখন বেরোতেই
ইচ্ছা করে না। কি যে হয়েছে,রাজ্যের আলসেমি। কয়েকদিন
ধরেই অর্কদের বাড়ি যাবে ভাবছে,আজ সেকারণেই বিকেলে বেড়িয়ে
রাস্তায় পরিচিত দু-একজনের সাথে কুশল বিনিময়,ইত্যাদি
বাক্যালাপে চলতে চলতে পৌঁছে গেল গন্তব্যে। একবার বেরোলে মন্দ লাগে না, আসলে হুটহাট করে বেরোবার অভ্যাসই
নেই।
অর্ক সাইকেল নিয়ে গেট খুলে
বেরোতে গিয়েই শ্রীমতিকে দেখে ভিতর দিকে ফিরে চ্যাঁচালো
"মা, কাকীমা এসেছেন"।
"আড্ডা দিতে যাচ্ছিস" ? সহাস্য প্রশ্ন শ্রীমতির।
না,কাকীমা। হায়ার সেকেন্ডারির পর
সব ছড়িয়ে গেছি, আর রোজ দেখা হয়না বন্ধুদের সাথে। রাতুলের কি খবর ? এত ব্যস্ত যে একটুও যোগাযোগ করেনা!
বলবো, তোদের ব্যাপার তো!!
হাসতে হাসতে বলার মাঝে অর্কর মা কাকলির সহাস্য আমন্ত্রণ
" এসো, এসো-বাব্বা, মনে পড়েছে তাহলে! এসো, ভিতরে এসো"।
মা, কাকীমা বেরোলাম।
আয়, কাকলি ,তাড়াতাড়ি
ফিরবি;ততক্ষণে অর্ক চোখের বাইরে।
গেট দিয়ে ঢুকেই শ্রীমতির ব্যাকুল
চোখ চলে গেল স্বর্ণচাঁপা গাছের দিকে, সেদিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতে বললো "তোমার তো খুব মনে
পড়ে"। কাকলি আবারও বললো "এসো, ভিতরে এসো "।আজ শনিবার,অর্কর
বাবা বাইরের ঘরে বসা, ঢুকতেই স্মিত হাসলেন। ভদ্রলোক রাশভারী নন, মৃদুভাষী। নানান সামাজিক কাজে
ব্যস্ত থাকেন কিন্তু দেখা হলে মৃদুহাসি উপহার দিতে ভোলেন না। কাকলি ওকে ডাইনিং-এ
এনে বসালো।ফ্যানটা খুলে দিয়ে রান্নাঘরে যেতে যেতে বললো "আমার তো আর শনি-রবি
নেই, আমার সৌভাগ্য আজ উনি বাড়ি আছেন "। শ্রীমতি ঈষৎ হেসে
বললো "ইসস্, তবে তো ভুল দিনে এসে পড়েছি। এমন নিভৃতালাপের সুযোগ-" কাকলি হো হো করে হেসে বললো "ঠিক বলেছো, খুব অন্যায় করেছো-এখুনি বাবু
বের হবেন বুঝেছো!!!! দাঁড়াও, চা টা দিয়ে আসি "।
চা নিয়ে দুই বান্ধবী ডাইনিং
হলেই বসলো। স্ন্যাক্স ,কুকিজে সাজানো প্লেট, চা সামনে সাজিয়ে কাকলি বসলো
পাশে এসে। শ্রীমতি দেখে আঁতকে উঠে বললো " পাগল, এতসব ...", কাকলি মৃদু ধমক দিয়ে বলল
"খাওতো। এবার বলো ...."বলেই " এক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো - ভালো লাগে না আর। এ বাড়ির
কেয়ারটেকার, এ আসছে,ও যাচ্ছে সারাক্ষণ শুধু ...., শ্রীমতি মনে মনে হাসলো, গৃহবধূদের নির্ধারিত জীবন
পঞ্জী। মুখে বললো " তোমার তো তাও রাতে একা থাকতে হয় না। সেভাবে হিসাব করলে
আমার তো অর্ধেকটা সময় একাই কাটলো!!"
-দাদা এখনও বাইরে যান ?
-আগের থেকে কম, এত কাজের চাপ! বাড়ি থাকলেও ফোনে বকে চলেছে, নিজেদের দরকারী কথাও বলতে পারি
না- বলেই হাসতে হাসতে বলে "
জানোতো , দাদাকে বলেছি তুমি বাইরে থাকলেই ভালো।
-কেনো!!! কাকলির বিস্ময়-তাড়িত কৌতুহল।
-বাইরে থাকলে তোমার দাদা নিয়ম করে দু-বার ফোন করবেই, বাড়ির চেয়ে বিদেশে থাকলে কথা
বলার সুযোগ পাই তাই "। দুই বন্ধু হাসতে থাকে। শ্রীমতির মন চঞ্চল, বলে চলো, বাইরে যাই।
-এখুনি যাবে নাকি !!
-না, একটু গাছটার কাছে যাবো।
-ওওও, মেয়ের সাথে দেখা করবে, বলে কাকলি হাসে।
স্বর্ণচাঁপা। গাছটা টবে প্রায়
তিন বছর ছিল। গাছের নেশা শ্রীমতি ও ওর স্বামীর দুজনেরই। ছাদেই শখ মেটায়, গাছটা মাটিতে লাগানোর কথা
সুদীপ বলতো কিন্তু জায়গা কোথায়! বাড়ির সামনে পিছনে যেটুকু জায়গা তাতে
পেঁপে, পেয়ারা ইত্যাদি প্রথম প্রথম লাগিয়েছিল, ফল হলো এই ফলন্ত গাছগুলো কাটা
গেল।আত্মীয়-বিয়োগ সম।একটা গাছ যখন উপকার করে তখন সে পারিপার্শ্বিকের সহায়ক
কিন্তু অবুঝ গাছ যখন পাতা ঝরায় তার সীমাবদ্ধতা মানে না,তখন সে প্রতিবেশীর প্রতিবন্ধক
স্বরূপ আর তাই শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের জন্য অগত্যা বৃক্ষ-ছেদন।একটা সরু লিকলিকে
নিমগাছ ছাড়া দিয়ে উঠেছে, সঙ্কুচিতের মতো ঝিরঝিরে পাতাসহ নয়নাভিরাম গাছটিকে জানেনা
বাঁচাতে পারবে কিনা। চাঁপা গাছটিকে বনসাই করার কথা কেউ কেউ বলেছিলো, তাতেও শ্রীমতির সায় নেই।
বনসাই করতে সে জানেও না, ভালোও লাগেনা। চারিদিকে মানসিক সংকীর্ণতা, উদারতার এমনিই অভাব। বামন
প্রকৃতির কালো ছায়া সর্বত্র, তার উপরে এক মহীরুহকে যতই দক্ষতা থাক বনসাই রূপ দিতে মোটেও
মন চায় না।সহজ স্বাভাবিক ভাবে যে বেড়ে ওঠে তার প্রকৃতিও সহজ,সরল হয়। যাই হোক, কাকলিকে কথায় কথায় একদিন
গল্প করাতে ও বলেছিল ওর বাড়ির সামনের ফাঁকা জায়গাটাতে ইচ্ছে হলে লাগাতে পারে।
শ্রীমতি খুশি হয়েছিল, ওর বাড়িতে না হোক্ ধরাতলে কোথাও তো আশ্রয় মিলবে, ছড়িয়ে দিতে পারবে ওর
শাখা-প্রশাখা-
, গভীর থেকে গভীরে প্রবেশ করবে
ওর শিকড় আর ওর সুবাসে আনন্দে ভরিয়ে দেবে আশপাশ।
তাই একদিন অর্কদের বাড়ির
সামনে গাছটা লাগিয়ে দিয়েছিল, মাটি মাতৃস্নেহে আশ্রয় দিলে গাছটি যেন প্রাণ পেলো, তরতর করে তার পিছিয়ে পড়াকে
এগিয়ে নিয়ে গেল। অর্ক এরমধ্যে একদিন গিয়ে বলে এসেছিল কাকীমা তোমার গাছে ফুল
ফুটেছে, মা যেতে বলেছেন। সেই থেকে দেখার জন্য মনটা ছটফট করছিল। কথা
বলতে বলতে দুজনে এসে গাছটার পাশে এসে দাঁড়াল।সন্ধ্যে হয়ে এসেছে, গাছটা নিঝুম দাঁড়িয়ে আছে যেন
চাপা অভিমানে বলতে চাইছে এতক্ষণে আমার কথা মনে পড়লো! আস্তে আস্তে গাছটার গায়ে
হাত বোলাতে বোলাতে শ্রীমতি বললো তোমরা ওকে প্রাণ দিয়েছো। কাকলি হাসে,সহাস্য মন্তব্য করে সেটা
ঘ্রাণে বুঝতে পারি। জানো, পথ চলতি অনেকেই দেখি গাছটার দিকে তাকিয়ে। নীচে একটা মলিন
ফুল কুড়িয়ে নিতে নিতে বলে "ফুল তোলো"?
ঐ দুটো চারটে তুলি কখনও। শ্রীমতি ভাবে স্বর্ণচাঁপা ফুলের
গোড়া বেশ শক্ত। মনে মনে বলে "রাগ করিস না মা। দৃঢ়তার সাথে বেঁচে থাক্।
মেয়েরা পরের বাড়ি যাবার জন্যই তো আসে। এভাবেই চারিপাশ সুন্দর করে, আলো করে রাখ্ মা! তোরা ভালো
থাকলে তবেই তো আমাদের বেঁচে সুখ। ফুলে-ফলে সবুজের সমারোহেই তো রয়েছে মানব জীবনের
সুস্থতার বার্তা। হঠাৎ মৃদু হাওয়ায় দুলে ওঠে পাতাগুলো, যেন বলতে চায় তোমরা ভালবাসলে
আমরা নিশ্চয়ই এই উষ্ণ পরিবেশে আনতে পারবো শীতলতার ছোঁয়া।
ভালো থাকবো সবাই।
অনেকদিন পর আজ শ্রীমতি বাড়ি থেকে বেরিয়েছে। এখন বেরোতেই
ইচ্ছা করে না। কি যে হয়েছে,রাজ্যের আলসেমি। কয়েকদিন
ধরেই অর্কদের বাড়ি যাবে ভাবছে,আজ সেকারণেই বিকেলে বেড়িয়ে
রাস্তায় পরিচিত দু-একজনের সাথে কুশল বিনিময়,ইত্যাদি
বাক্যালাপে চলতে চলতে পৌঁছে গেল গন্তব্যে। একবার বেরোলে মন্দ লাগে না, আসলে হুটহাট করে বেরোবার অভ্যাসই
নেই।
অর্ক সাইকেল নিয়ে গেট খুলে
বেরোতে গিয়েই শ্রীমতিকে দেখে ভিতর দিকে ফিরে চ্যাঁচালো
"মা, কাকীমা এসেছেন"।
"আড্ডা দিতে যাচ্ছিস" ? সহাস্য প্রশ্ন শ্রীমতির।
না,কাকীমা। হায়ার সেকেন্ডারির পর
সব ছড়িয়ে গেছি, আর রোজ দেখা হয়না বন্ধুদের সাথে। রাতুলের কি খবর ? এত ব্যস্ত যে একটুও যোগাযোগ করেনা!
বলবো, তোদের ব্যাপার তো!!
হাসতে হাসতে বলার মাঝে অর্কর মা কাকলির সহাস্য আমন্ত্রণ
" এসো, এসো-বাব্বা, মনে পড়েছে তাহলে! এসো, ভিতরে এসো"।
মা, কাকীমা বেরোলাম।
আয়, কাকলি ,তাড়াতাড়ি
ফিরবি;ততক্ষণে অর্ক চোখের বাইরে।
গেট দিয়ে ঢুকেই শ্রীমতির ব্যাকুল
চোখ চলে গেল স্বর্ণচাঁপা গাছের দিকে, সেদিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতে বললো "তোমার তো খুব মনে
পড়ে"। কাকলি আবারও বললো "এসো, ভিতরে এসো "।আজ শনিবার,অর্কর
বাবা বাইরের ঘরে বসা, ঢুকতেই স্মিত হাসলেন। ভদ্রলোক রাশভারী নন, মৃদুভাষী। নানান সামাজিক কাজে
ব্যস্ত থাকেন কিন্তু দেখা হলে মৃদুহাসি উপহার দিতে ভোলেন না। কাকলি ওকে ডাইনিং-এ
এনে বসালো।ফ্যানটা খুলে দিয়ে রান্নাঘরে যেতে যেতে বললো "আমার তো আর শনি-রবি
নেই, আমার সৌভাগ্য আজ উনি বাড়ি আছেন "। শ্রীমতি ঈষৎ হেসে
বললো "ইসস্, তবে তো ভুল দিনে এসে পড়েছি। এমন নিভৃতালাপের সুযোগ-" কাকলি হো হো করে হেসে বললো "ঠিক বলেছো, খুব অন্যায় করেছো-এখুনি বাবু
বের হবেন বুঝেছো!!!! দাঁড়াও, চা টা দিয়ে আসি "।
চা নিয়ে দুই বান্ধবী ডাইনিং
হলেই বসলো। স্ন্যাক্স ,কুকিজে সাজানো প্লেট, চা সামনে সাজিয়ে কাকলি বসলো
পাশে এসে। শ্রীমতি দেখে আঁতকে উঠে বললো " পাগল, এতসব ...", কাকলি মৃদু ধমক দিয়ে বলল
"খাওতো। এবার বলো ...."বলেই " এক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো - ভালো লাগে না আর। এ বাড়ির
কেয়ারটেকার, এ আসছে,ও যাচ্ছে সারাক্ষণ শুধু ...., শ্রীমতি মনে মনে হাসলো, গৃহবধূদের নির্ধারিত জীবন
পঞ্জী। মুখে বললো " তোমার তো তাও রাতে একা থাকতে হয় না। সেভাবে হিসাব করলে
আমার তো অর্ধেকটা সময় একাই কাটলো!!"
-দাদা এখনও বাইরে যান ?
-আগের থেকে কম, এত কাজের চাপ! বাড়ি থাকলেও ফোনে বকে চলেছে, নিজেদের দরকারী কথাও বলতে পারি
না- বলেই হাসতে হাসতে বলে "
জানোতো , দাদাকে বলেছি তুমি বাইরে থাকলেই ভালো।
-কেনো!!! কাকলির বিস্ময়-তাড়িত কৌতুহল।
-বাইরে থাকলে তোমার দাদা নিয়ম করে দু-বার ফোন করবেই, বাড়ির চেয়ে বিদেশে থাকলে কথা
বলার সুযোগ পাই তাই "। দুই বন্ধু হাসতে থাকে। শ্রীমতির মন চঞ্চল, বলে চলো, বাইরে যাই।
-এখুনি যাবে নাকি !!
-না, একটু গাছটার কাছে যাবো।
-ওওও, মেয়ের সাথে দেখা করবে, বলে কাকলি হাসে।
স্বর্ণচাঁপা। গাছটা টবে প্রায়
তিন বছর ছিল। গাছের নেশা শ্রীমতি ও ওর স্বামীর দুজনেরই। ছাদেই শখ মেটায়, গাছটা মাটিতে লাগানোর কথা
সুদীপ বলতো কিন্তু জায়গা কোথায়! বাড়ির সামনে পিছনে যেটুকু জায়গা তাতে
পেঁপে, পেয়ারা ইত্যাদি প্রথম প্রথম লাগিয়েছিল, ফল হলো এই ফলন্ত গাছগুলো কাটা
গেল।আত্মীয়-বিয়োগ সম।একটা গাছ যখন উপকার করে তখন সে পারিপার্শ্বিকের সহায়ক
কিন্তু অবুঝ গাছ যখন পাতা ঝরায় তার সীমাবদ্ধতা মানে না,তখন সে প্রতিবেশীর প্রতিবন্ধক
স্বরূপ আর তাই শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের জন্য অগত্যা বৃক্ষ-ছেদন।একটা সরু লিকলিকে
নিমগাছ ছাড়া দিয়ে উঠেছে, সঙ্কুচিতের মতো ঝিরঝিরে পাতাসহ নয়নাভিরাম গাছটিকে জানেনা
বাঁচাতে পারবে কিনা। চাঁপা গাছটিকে বনসাই করার কথা কেউ কেউ বলেছিলো, তাতেও শ্রীমতির সায় নেই।
বনসাই করতে সে জানেও না, ভালোও লাগেনা। চারিদিকে মানসিক সংকীর্ণতা, উদারতার এমনিই অভাব। বামন
প্রকৃতির কালো ছায়া সর্বত্র, তার উপরে এক মহীরুহকে যতই দক্ষতা থাক বনসাই রূপ দিতে মোটেও
মন চায় না।সহজ স্বাভাবিক ভাবে যে বেড়ে ওঠে তার প্রকৃতিও সহজ,সরল হয়। যাই হোক, কাকলিকে কথায় কথায় একদিন
গল্প করাতে ও বলেছিল ওর বাড়ির সামনের ফাঁকা জায়গাটাতে ইচ্ছে হলে লাগাতে পারে।
শ্রীমতি খুশি হয়েছিল, ওর বাড়িতে না হোক্ ধরাতলে কোথাও তো আশ্রয় মিলবে, ছড়িয়ে দিতে পারবে ওর
শাখা-প্রশাখা-
, গভীর থেকে গভীরে প্রবেশ করবে
ওর শিকড় আর ওর সুবাসে আনন্দে ভরিয়ে দেবে আশপাশ।
তাই একদিন অর্কদের বাড়ির
সামনে গাছটা লাগিয়ে দিয়েছিল, মাটি মাতৃস্নেহে আশ্রয় দিলে গাছটি যেন প্রাণ পেলো, তরতর করে তার পিছিয়ে পড়াকে
এগিয়ে নিয়ে গেল। অর্ক এরমধ্যে একদিন গিয়ে বলে এসেছিল কাকীমা তোমার গাছে ফুল
ফুটেছে, মা যেতে বলেছেন। সেই থেকে দেখার জন্য মনটা ছটফট করছিল। কথা
বলতে বলতে দুজনে এসে গাছটার পাশে এসে দাঁড়াল।সন্ধ্যে হয়ে এসেছে, গাছটা নিঝুম দাঁড়িয়ে আছে যেন
চাপা অভিমানে বলতে চাইছে এতক্ষণে আমার কথা মনে পড়লো! আস্তে আস্তে গাছটার গায়ে
হাত বোলাতে বোলাতে শ্রীমতি বললো তোমরা ওকে প্রাণ দিয়েছো। কাকলি হাসে,সহাস্য মন্তব্য করে সেটা
ঘ্রাণে বুঝতে পারি। জানো, পথ চলতি অনেকেই দেখি গাছটার দিকে তাকিয়ে। নীচে একটা মলিন
ফুল কুড়িয়ে নিতে নিতে বলে "ফুল তোলো"?
ঐ দুটো চারটে তুলি কখনও। শ্রীমতি ভাবে স্বর্ণচাঁপা ফুলের
গোড়া বেশ শক্ত। মনে মনে বলে "রাগ করিস না মা। দৃঢ়তার সাথে বেঁচে থাক্।
মেয়েরা পরের বাড়ি যাবার জন্যই তো আসে। এভাবেই চারিপাশ সুন্দর করে, আলো করে রাখ্ মা! তোরা ভালো
থাকলে তবেই তো আমাদের বেঁচে সুখ। ফুলে-ফলে সবুজের সমারোহেই তো রয়েছে মানব জীবনের
সুস্থতার বার্তা। হঠাৎ মৃদু হাওয়ায় দুলে ওঠে পাতাগুলো, যেন বলতে চায় তোমরা ভালবাসলে
আমরা নিশ্চয়ই এই উষ্ণ পরিবেশে আনতে পারবো শীতলতার ছোঁয়া।
ভালো থাকবো সবাই।
Subscribe to:
Posts (Atom)