অলীক পাতার অন্যান্য সংখ্যা- পড়তে হলে ক্লিক করুন Library ট্যাব টি
Tuesday, March 13, 2018
রম্য রচনা-স্বরূপ চক্রবর্তী
ভ্যালেন্টাইন বম বম
(এই কাহিনীর সত্যতা জানতে দেখুন দেবতাদের
সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট "skybook" )
স্থান: কৈলাস পর্বতের এক নিভৃত কোনা
কাল: ত্রয়োদশীর রাত
পাত্র:
দেবাদিদেব, একটি কলকে,একপাত্র গাঁজা আপাততঃ এই।
আজ ত্রয়োদশী কাম ১৩ই ফেব্রুয়ারী,
মহাদেব একমনে গাঁজা টানছেন আর ধোঁয়া ছাড়ছেন,
ভয়ে ভয়ে সামনে এসে দাঁড়ালো
নন্দী-ভৃঙ্গী ডুও,
করজোড়ে বলল "বাবা, রাত তো অনেক হল, মা তাড়া দিচ্ছেন, কাল আবার
ওনার উপোষ, তা ছাড়া এই ভেজালের বাজারে এত গাঁজা সহ্য হবে তো?"
বাবা রক্তচক্ষু
পাকিয়ে ঝাঁঝিয়ে উঠলেন," খক, খক,.....আমি কি আর..খক, খক সাধে?" "ব্যাটাদের অতিভক্তি
দেখেছিস?"
"খ...অ অ ক ....আজ থেকেই শুরু করেছে," "মধু,দুধ,ঘী, মিষ্টি সব
গঙ্গাজলে মিশিয়ে ঢেলেই
যাচ্ছে,অরুচি ধরে গেল, একটু টেস্ট চেঞ্জ করতে দে", " যা ভাগ
ভাগ"।
এদিকে বাবার উগ্র মূর্তি, ওদিকে মায়ের হাতের বেলনা, "যা থাকে কপালে, শালা
আজ আর বাড়িই ফিরব না" , বলে দুই জনে কোথায় যেন মিলিয়ে গেল।
ওদিকে সকাল হয়েছে, শিবলোকে সাজ সাজ রব, আজ শিব চতুর্দশী, মায়ের আদেশে
গণেশ
গিয়েছে ফুল আনতে, সবচেয়ে সরেস ধুতুরা হল মায়ের ডিমান্ড,
কার্তিক বসে বসে
'স্কাই বুক' ঘাঁটছে, সামনে স্বরস্বতী ব্যাজার মুখে বসে আছে।
" যাই বল সরো, আজকাল
তোর বাজার টা বেশ ডাউন, ফলোয়ার গ্রোথ এক্কেবারে স্টিল,"
"তোর ওই বেঙ্গলের
একদিনের সেলিব্রেশন এক্কেবারে লোকাল, আর এদিকে দ্যাখ, ভ্যালেন্টাইন
ডে উইকে পরিণত
হয়েছে, ভরপুর ইন্টারন্যাশনাল মার্কেট, কিছু কর, না হ'লে তোর ওই লাভ
উইং টা পুরো
ফ্লপ হয়ে যাবে, বাকি থাকবে হাতে বীনা, আর কিস্যু না"।
শুনে তেরিয়া হয়ে ওঠে
স্বরস্বতী,
"কেন? তোর তো বেশ ভালোই বাজার তাই না? দ্যাখ দাদা, আগে প্রপোজ, তারপর
ম্যারেজ,তারপর তোর মূর্তি সুপার ইম্পোজ, তবে গিয়ে একলা বা যমজ,","আগে নিজের
ফলোয়ার
বাড়া, তারপর রোয়াব ঝাড়বি", বলে দাপিয়ে চলে গেল।
ওদিকে মা দুর্গা ভীষণ চিন্তিত, গতকাল রাত থেকেই মহাদেব বেপাত্তা,
নন্দী-ভৃঙ্গীও মহাদেবকে
খুঁজতে গিয়ে ফিরে আসেনি, লক্ষী গেছে নারায়ণের সাথে
'ভ্যালেন্টাইন উইক' সেলিব্রেট করতে,
গণেশ গেছে ফুল আনতে, তাই কাউকে না পেয়ে
কার্তিক কেই পাকড়ালেন মা,
"হ্যাঁ রে, তুই না বাড়ির বড় ছেলে?তোর কি কিছুই করার
নেই? বসে বসে বোনটা কে না জ্বালিয়ে
তোর ওই ছাইপাঁশ 'স্কাইবুক লাইভ' খুলে দেখ না কেউ
কোনো মাতাল লোকের কান্ড পোস্ট করেছে
কি না, তোর বাবা আজকাল আবার নেশা করলে এমন এমন
কান্ড করেন যে মুহূর্তে ভাইরাল হয়ে
যায়, হলে ওখানে গিয়ে ধরে আনা যেত,", "কে জানে
লোকটা গেল কোথায় ?"
ওদিকে চারিদিকে লোকজনের ভীড়, কোলাহলের মাঝে ধীরে ধীরে চোখ খুলে মহাদেব
বুঝলেন যে
তিনি একটি ব্যস্ত বাজারের মাঝ- মধ্যি খানে চিৎপটাং মুদ্রায় পড়ে আছেন,
ধীরে ধীরে তিন নম্বর
চোখ টি একটু খুলতে বুঝলেন যে
কাল রাত্তিরে নেশার ঘোরে বোধ
হয় 'কৈলাসের কার্নিশ' টপকে নিচে এসে পড়েছেন, ধীরে ধীরে
উঠতে গিয়ে ঠোক্কর খেলেন একটি
লোকের সাথে, লোকটি মাথার ফুল ভর্তি ঝুড়ি টি ব্যালেন্স
করতে করতে খেঁচিয়ে
উঠল,
"মরণ, বলি সঙ সেজে রাস্তার মাঝে , কি ব্যাপার?......... ভোলেবাবার ভক্ত মনে হচ্ছে
যেন?
কেন একটু কম গাঁজায় কি শানাচ্ছিল না? যত্তসব, উটকো," বলে নিজের রাস্তায় এগিয়ে
গেল।
মহাদেব বুঝলেন এটি একটি ফুলের বাজার, আরও বুঝলেন যে আজ ভ্যালেন্টাইন
ডে।
ওদিকে গণেশ, বরাবরের বুদ্ধিমান ছেলে, সেটার পরিচয় তো সেই সেবার
কার্তিকের সঙ্গে পৃথিবী
পরিক্রমার কম্পিটিশনের সময়ই পাওয়া গিয়েছিল, সুতরাং ধুতুরা
ফুলের জন্য আদাড়ে বাদাড়ে না
খুঁজে সোজা হাজির এই ফুলের বাজারে, যেখানে একটু আগেই
মহাদেব 'ফল' করেছেন।
তা শুঁড় টিকে ভাঁজ করে ছদ্মবেশ ধারণ করে গণেশ এ দোকান ও দোকান ঘুরে একটি
দোকানে
গিয়ে দেখে একপাশে স্তূপীকৃত ধুতুরা আর অন্য পাশে লাল গোলাপ, প্রথমটি ২০ টাকা
জোড়া,
অন্যটি ২০০ থেকে,৩০০ টাকা জোড়া।
তার টেক স্যাভি বড়দা আর 'স্কাই বুকের'
দৌলতে গণেশ 'ভ্যালেন্টাইন ডে' কি তা জানে, তবে
চাক্ষুষ এই প্রথম, কারণ ওই যে 'আজ
১৪ই ফেব্রুয়ারী কাম শিব চতুর্দশী' , তা, 'চতুর' গণেশের
পক্ষেও গোলাপের ডিমান্ড
বাড়ানোর জন্য 'দোষী' কে খোঁজা অসম্ভব।
মন দিয়ে ধুতুরা পছন্দ করতে করতে হঠাৎ গণেশের কানে গেল একটু দূরে একটি
দোকানের
সামনে বেশ হল্লা হচ্ছে, উৎসুক হয়ে পায়ে পায়ে গিয়ে দেখে কি, "মহাদেব
ভান্ডার" নামের
দোকান টির সামনে একটি উস্কো খুস্কো লোক কে সবাই মিলে উত্তম মধ্যম
দেবার তালে আছে,
লোকটি মনে হয় নেশাগ্রস্থ, একটি মারও এখনো পড়েনি তবুও টলছে।
ভীড়
ঠেলে ভেতরে গিয়ে গণেশের চোখ ছানাবড়া, ভাঁজ করে লুকিয়ে রাখা শুঁড় টি খুলে পড়ে যায় আর
কি!
"আরে! এ তো বাবা,স্বয়ং মহাদেব।"
মারমুখী জনতাকে ঠেকিয়ে গণেশ দোকানদার কে
জিজ্ঞাসা করল," ইনি কি করেছেন?"
"চুরি"।
দোকানদারের ছোট্ট জবাব।
"কত টাকার
জিনিস?"
"কেন? আপনি দেবেন", দোকানদার জামার হাত গোটায়।
"না, মানে, উনি বোধহয়
অজান্তে...."
যেমন তেমন করে ২৫০ টাকা 'জামিনে' বাবা কে মুক্ত ক'রে একটি ফাঁকা
জায়গায় এনে ফেলে গণেশ।
"কি বাবা!শেষমেশ চুরি?"
"চুরি কেন? দেখলি না ওটা আমার
দোকান, 'মহাদেব ভান্ডার'", হেসে বলেন মহাদেব।
বোঝানো অসম্ভব বুঝে গণেশ মরিয়া হয়ে
প্রশ্ন করল, " কি চুরি , থুড়ি, নিয়ে ছিলে শুনি"?
লাজুক লাজুক মুখে মহাদেব বললেন
"তোদের মা আজকের দিনে উপোষ করে আমার পুজো করে, এমন কি নেশা করতেও বাধা
দেয়না,
এর পেছনে কারণ টি কি?" মহাদেবের প্রশ্ন
"কি আবার ভক্তি , শ্রদ্ধা" , গণেশের
,'গেস'
"না - রে, প্রেম, বুঝলি? প্রেম।" বলেন শিব।
আর তার বদলে আমি তো প্রায়
কিছুই করতে পারিনা, তাই মর্ত্যের ছেলে পুলে গুলোকে দেখে,
এইটা, মানে," বলে বাঘ
ছালের গেঁজে খুলে বের করলেন একটি ইয়া সাইজের লাল গোলাপ...
বলুন হর হর মহাদেব, " ভ্যালেন্টাইন বম বম"।
BACK TO INDEX
Monday, March 12, 2018
ব্যক্তি বিশেষ-PERSONALITY
স্বপন রূজ
( শীতল মিশ্র )
[সম্পাদকের কথা]
আমাদের সুপ্ত সৃষ্টিশীলতার ধারক ও বাহক হিসেবে গত বসন্তে আত্মপ্রকাশ করে "অলীক পাতার" বাঙময় জগৎ, ভাবনার অন্তঃস্থল থেকে মনিমুক্ত উদ্ধার করে সকলের সামনে তুলে ধরার এই ব্রতে আমাদের প্রচেষ্টাকে সুদৃঢ় করতে প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে এমনই এক সৃষ্টিশীল মননের সন্ধান করেছেন সুহৃদ কবি "শ্রী শীতল মিশ্র" মহাশয়।
ওনার সৌজন্যে এবারের "অলীকপাতার " ব্যক্তি বিশেষ, কবি "শ্রী স্বপন রুজ মহাশয়", সবটি জানতে আপনাদের সম্পূর্ন প্রতিবেদন টি পড়তে অনুরোধ করি, এবং সাথে আরও অনুরোধ, যে, আপনাদেরও যদি স্বপন বাবুর মতো কোনও বন্ধু,আত্মীয় বা পরিচিত জন থাকেন, তাঁর সম্পর্কে আমাদের জানান, আমরা অলীক পাতায় প্রকাশ করব।
ওনার সৌজন্যে এবারের "অলীকপাতার " ব্যক্তি বিশেষ, কবি "শ্রী স্বপন রুজ মহাশয়", সবটি জানতে আপনাদের সম্পূর্ন প্রতিবেদন টি পড়তে অনুরোধ করি, এবং সাথে আরও অনুরোধ, যে, আপনাদেরও যদি স্বপন বাবুর মতো কোনও বন্ধু,আত্মীয় বা পরিচিত জন থাকেন, তাঁর সম্পর্কে আমাদের জানান, আমরা অলীক পাতায় প্রকাশ করব।
প্রথমে আমার তরফ থেকে শুভেচ্ছা।আজ আমি অপরিচিত এক কবি, যার কোন নিজের মোবাইল নেই,ফেসবুক একাউন্ট নেই, ই মেইল আইডি জানেন না, সেইরকম এক কবিকে "অলীকপাতার" মাধ্যমে হাজির করলাম। "মাননীয় স্বপন রূজ মহাশয়"
![]() |
| স্বপন রূজ মহাশয়ের ছবিটি তুলেছেন শীতল মিশ্র |
যিনি এক অনন্য জগৎ
এর সাথে জড়িয়ে থাকেন। সারাদিন সাত কাজের মধ্যে কবিতা জগৎ থেকে নিজেকে সরিয়ে
নিতে পারেন না।
ঋষি মুনির বিচরণ যেমন তপোবনে তেমন উনি নিজের জগৎ এ নিজেই মালিক। এত
ব্যস্ততার জগৎ এ নিজেকে জাহির করতে চান না। এই ব্যস্ততম জীবন এর দৌড়ে
উনি নাম লেখান নি।তাই উনি কোন মোবাইল বা ফেসবুক বা অন্য কিছুর সাহায্য প্রয়োজন মনে
করেন না।
দাদা,বৌদি, স্ত্রী মেয়ে, বোনের সংসার।
কাজী নিজাম স্যারের (বিজড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক)
ভাষায়
"রূপ সনাতন ' দুই ভাই।
উনি বসবাস করেন প:বর্ধমান এর অণ্ডাল গ্রামে।
গ্রন্থাগারে কর্মরত ছিলেন।বছর কয়েক আগে
উনি অবসর নিয়েছেন।
ওনার কবিতা অনেকেই চান না বেরোক বা প্রচারিত হোক।আমার ইচ্ছা
ছিল।
উনি রাস্তায় আমার মত ছেলেদের দেখা হলে কবিতা পড়ে শোনাতেন।
এখন কর্ম
সুত্রে আমি ভবঘুরে র মত-তবু কোন সময় আমার সংসার আর আমার গ্রামের বাড়ি যেতেই হয়.... পারিবারিক বিষ্ণুপুজার জন্য।
স্বপন রূজ কে ছোটবেলা থেকে দেখি। আর দেখেছি উনি কবিতা লেখেন,"অণ্ডাল" আমাদের গ্রামের নাম,গ্রামের শিক্ষিত মানুষজন একটি লাইব্রেরি তৈরি করেন নিজেদের প্রচেস্টায়,পরে সরকারি গ্রামীন গ্রন্থাগার হিসাবে উন্নিত হয়।
সেই গ্রন্থাগারে কর্মচারী হিসাবে স্বপন দা যোগ দেন।আমরা যখনই গ্রন্থাগারে যেতাম তখনই সময় পেলে ওনার লেখা কবিতা শোনাতেন তাঁর প্রিয়জন কে।প্রতি ঘরোয়া অনুষ্ঠানে ওনার কবিতা পাঠ থাকতই।বর্তমানে উনি অবসর নিয়েছেন,তবু কবিতা বন্ধ হয় নি।
আমি
খুবি কম সময়ের জন্য আমার গ্রামের বাড়ি গেছিলাম। আর রাস্তায় স্বপন দার দেখা। অনেক
দিনের ইচ্ছা স্বপন দার লেখা সবার দ্বারে পৌঁছে দিতে পারি।কিন্তু সময় অভাবে পারি
নি-সেদিন ওনার সাথে রাস্তায় দেখা পাই আকস্মিক ভাবে।
এবং হাজার কাজের ফাঁকে ওনাকে বলি ওনার ডাইরি আনার জন্য, আমি জানি
উনি মোবাইল রাখেন না,ফেসবুক বা মেইল জানেন না।
ওনার দু এক টি কবিতা ওনার কবি বন্ধুর
মাধ্যমে কোন এক সময় বেরিয়েছিল। কিন্তু উনি ওসবেও ইন্টারেস্ট নেন না।
আমি আরো কবিতা ওনার দিতে পারি কিন্তু বেশি ছবি ওনার ডাইরি থেকে নিতে
পারিনি।
তবে ছবি নেওয়ার সময় ওনাকে বলেছিলাম-
"স্বপন দা তোমার ছবি নিলাম।আর কবিতা"।
উনি বললেন, "কি করবি?"
"তোমার কবিতা আমি আমার নামে ছাপিয়ে দেব।"
"যা করবি.. করবি (হাসির সাথে)"
এই হলেন "স্বপন দা", "স্বপন রূজ"
ওনার লেখনী র দীর্ঘায়ু কামনা করি।
নিচের অংশ টুকু ওনার ডাইরী থেকে নেওয়া।
"কৃষ্ণ সমান ভালবাসা ভালবাসা"
ইশ্বরের আংশিক আশীর্বাদে আমি কবিতা লিখি,শুধু আমার জন্য।
আমি কবিতা লিখি শুধু তো তোমারও জন্য।
আমি কবিতা লিখে আনন্দে থাকি মাতোয়ারা।।
কবিতা বিক্রি করে নিজের হাত খরচ চালানো আমার পক্ষে নৈব নৈব চ:।
যে খানে আবেগ থাকে সেখানে গতি আছে।
যেখানে গতি আছে সেখানে জীবন আছে।
সেখানে মরন থাকে, দূর থেকে বহু দূরে।
জীবনের অপর নাম তাই শুধু ভালবাসা,,, ভালবাসা আমার কবিতা লেখা, আমার কাছে-
"কৃষ্ণ সমান"
Preface- Swarup Chakraborty
Editorial -First Year 12Th Edition
( Annual Issue-Spring & Youth )
বন্ধুরা, চারিদিকের এই শিমুল রাঙা বসন্তে, প্রকৃতির
রিক্ততা ও প্রাচুর্যের বৈপরীত্যের মাঝে, প্রকাশ পেল " অলীক পাতার " প্রথম
বর্ষপূর্তি অনলাইন সংখ্যা ,আমাদের খুশীর ঠিকানা নেই।
আমাদের সৃষ্টিশীল মননের একান্ত নিজস্ব আধার "অলীক পাতার" যাত্রা শুরু
২০১৭র বসন্তে, আপনাদের সকলের অপার স্নেহ কে পাথেয় করে একে একে এগারো টি অনলাইন ও
একটি ছাপানো পূজা বার্ষিকী সংখ্যা প্রকাশ পেয়েছে,আমরা গর্বিত।
বসন্ত ঋতু স্মরণ করায় এই ধরায় আমাদের নশ্বরতা। ধারাবাহিক আসা-যাওয়ার
মাঝে পড়ে থাকে শুধু দেয়ালে টাঙানো ধুলো মাখা ফ্রেম বন্দি স্মৃতিটুকু , কিন্তু আমি
জানি আমাদের সকলেরই এই রোজকার জীবন ভোগের বাইরে আছে একটি অন্য জীবন মাত্রা,একটি মননের
চিলেকোঠা,যা প্রায়ই দিনের আলো দেখেনা সমালোচনার ভয়ে, কিন্তু ব্যক্তিগত স্তরে আমার
বিশ্বাস যে আমাদের সকলেরই অধিকার আছে "দেওয়ালে একটি দাগ রেখে যাওয়ার ", "অলীক পাতা"
সেই দেওয়াল হবার চেষ্টা করে চলেছে নিরন্তর, অসাফল্যের ভয় কে জয় ক'রে এগিয়ে চলার
ব্রতে ব্রতী হয়ে।আপনাদের সস্নেহ প্রশ্রয়ে তাই আজ আমি দ্বাদশ সংখ্যার মুখবন্ধ
লিখছি।
এ প্রসঙ্গে আপনাদের জানাই আমাদের নতুন সংযোজন " ব্যক্তি বিশেষ/
PERSONALITY" বিভাগ, অনেক দিন থেকে মাথায় থাকলেও বাস্তবায়িত হয়ে ওঠেনি, কিন্তু
আকস্মিক ভাবে আমাদের কবি-লেখক বন্ধু "শ্রী শীতল মিশ্র" বাবুর স্বতঃ প্রণোদিত
বদান্যতায় শুরু করছি এই বিভাগ টি, যেখানে আমরা তুলে ধরতে চাই সেইসব সৃষ্টিশীল মনন
কে যাঁরা শত বাধার মধ্যেও চালিয়ে চলেছেন তাঁদের সৃষ্টি কর্ম, সকলের অগোচরে। শীতল
বাবুকে ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করব না, কারণ এই পত্রিকা ওনার নিজের।
আপনাদেরও অনুরোধ
আগামী দিনে এই ব্যাপারে সাহায্যের হাত বাড়ান। এবারের প্রতিবেদন কাকে নিয়ে ? এখানে
সেটা বলা সঙ্গত হবেনা, আপনারা নিজেরাই দেখে নেবেন।
দ্বাদশ তথা প্রথম বার্ষিক সংখ্যার বিষয় ছিল "বসন্ত ও তারুণ্য"। বসন্ত
ত্যাগের ঋতু, 'রিক্ত' তার ঝুলি, কিন্তু সত্যই কি তাই? না। বসন্ত তারুণ্যের ঋতু,
নিজেকে ভেঙে চুরে নতুন করে' গড়ার ঋতু, আমি মনে করিনা যে তারুণ্য বয়স কেন্দ্রিক,
তারুণ্য বেশী করে মনন কেন্দ্রিক, সর্বদা নিজেকেই চ্যালেঞ্জ করে জিততে যে প্রস্তুত,
সেই তরুণ, তার সুগার- প্রেশার এর রিডিং বা মাথার পাকা চুল তাকে বৃদ্ধ সব্যস্ত
করেনা, জলজ্যান্ত উদাহরণ বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং, সময়ের 'অকল্পনীয় ব্যাপ্তির ইতিহাস'
কে যিনি মলাট বন্দি করেন " আ 'ব্রিফ' হিস্ট্রি অফ টাইম " নামে, গত কাল
নশ্বরতার জগৎ থেকে যাত্রা করলেন অমরত্বের পথে, তাঁকে দেখেছি তার বিভিন্ন টিভি
প্রোগ্রামে, যাঁর জ্বরা গ্রস্থ শরীর কখনও অন্তরায় হয়নি তাঁর সদা নবীন মননের অবিরল
ধারায়, প্রকৃত অর্থে তিনিই তরুণ|
তারুণ্য একটি মানসিক অবস্থা, যতদিন আমাদের মন
মস্তিষ্ক সজীব, নতুন কে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত, নিজের কাছে নিজেকে প্রমান করতে
তৎপর তত দিনই আমরা তরুণ, স্বচ্ছসলীলা গঙ্গা হাজার হাজার বছর পরও সাবলীল, কিন্তু গত
ইলেকশনের সময় তৈরি পাড়ার পচা নর্দমা.....?
নিজেকে ভেঙে নতুন করে গড়ার এই
প্রথায় এবারের অলীক পাতায় কিছু সংযোজন-
১) "ব্যক্তি বিশেষ/PERSONALITY "
এব্যাপারে আগেই বলেছি।
২) "SUBMIT ENTRY" বিভাগ, যাঁদের মেল আইডি নেই বা মেল
করতে ইচ্ছুক নন, তাঁদের জন্য সরাসরি লেখা জমা করার সুযোগ।
৩) CURRENT ISSUE "
ট্যাব,"অলীক পাতা" অনলাইন সংস্করণ হলেও যাতে বই এর মত করে সহজে পড়া যায় তার
জন্য।
৪) LIBRARY/ OLD ISSUE" ট্যাব , সমস্ত পুরাতন সংখ্যা এখানে একসাথে গুছিয়ে
দিলাম, যাতে সহজে একত্রে পড়া যায়।
ব্যস, আপাততঃ এই, আর হ্যাঁ, প্রথম বার বাংলায় সম্পূর্ন পত্রিকা এবং তাই
সম্পাদকীয় টিও বাংলায়।
এবারের পত্রিকা কেমন হয়েছে জানাতে ভুলবেননা কিন্তু,
আপনাদের গঠন মূলক পরামর্শের অপেক্ষায়........
আপনাদের সকলকে অনেক অনেক
ভালোবাসা,বড়দের শ্রদ্ধা, ও ধন্যবাদ।
ভালো থাকুন, সৃষ্টিতে মাতুন......
আবার
দেখা হবে......
স্বরূপ চক্রবর্তী,
সম্পাদক-অলীক পাতা।
১৫ই মার্চ
,২০১৮,হরিদ্বার
To read the full magazine click the link Below
Thursday, March 8, 2018
স্মৃতিকোণ -হেমন্ত মুখোপাধ্যায়-শম্পা সান্যাল
ঋতুর মধ্যে ঋতুরাজ 'বসন্ত' সবার
বড় প্রিয় কাল। শীতের শেষে বছরের শেষলগ্নে বসন্ত নিয়ে
আসে, দিয়ে
যায় রঙের ছোঁয়া। দোলের অপেক্ষা পূর্ণতা পায় এই সময়ে। এই সময়ে আমারও মনে আসে এক অনির্বচনীয় আনন্দ-ঘন দিনের
স্মৃতি, দিনটা
দোলের সামান্য আগে
বা পরের।
বন্ধু
শিবপ্রসাদের সৌজন্যে প্রাপ্তি। কলেজে পড়ি। ওরই উদ্যোগে গিয়েছিলাম আমাদের এখান থেকে কিছুটা
দূরে শ্রীমতি মৈত্রীয়ী দেবী( আশাকরি রবীন্দ্র অনুরাগী এবং স্নেহধন্য এই লেখিকার
আলাদা পরিচয় দিতে হবে না)-র পরিচালিত সংস্থা অনাথ আশ্রম 'খেলাঘর'-এ।
অত্যন্ত অনাড়ম্বর অথচ এক প্রাণবন্ত আন্তরিকতার ছোঁয়া মাখা অনুষ্ঠানে। আশ্রমের সন্তানসহ
সহায়িকারা খোলা আকাশের নীচে গাছ-গাছালির মাঝে উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে নাচে গানে
নিজেদের উজাড় করে দিচ্ছেন অনাবিল আনন্দ সহকারে। একটি গাছের নীচে বেদীতে মৈত্রীয়ী দেবী
বসা, যথেষ্ট
বয়স তবু কি সুন্দর!
ভিতরের আলোয় আলোকিত যে! কাছে গিয়ে প্রণাম করে আস্তে জিজ্ঞাসা করলাম "শিল্পী
আসবেন এবার?" বললেন"
হ্যাঁ, এবার
আসবেন,বসো।"
ঋজু, দীর্ঘদেহী
অতীব সাধারণ ভাবে
সস্ত্রীক এলেন যিনি তাঁর খ্যাতি আকাশ-ছোঁয়া। সে খ্যাতি যে তাকে
মাটিছাড়া করেনি, দেখলাম
; দেখলাম
অবাক বিস্ময়ে আমার অতি প্রিয়, না কেবল আমারই নয় অবশ্যই- শ্রী
হেমন্ত মুখোপাধ্যায়কে। মৃদু হাসি সহ চারিপাশে ঘুরে ঘুরে দেখতে দেখতে
এসে বসলেন অতি সাধারণ এক কাঠের চেয়ারে, পাশে স্ত্রী শ্রীমতি বেলা মুখোপাধ্যায়।
ব্যস্ততা ভরা জীবনে সুযোগ থাকলে এখানে অবশ্যই আসেন, জেনেছিলাম। এত
কাছে, এত
সহজ স্বাভাবিক ছন্দে শিল্পী ধরা দিলেন, আমি আজও আপ্লুত। সামনে আর একটি চেয়ারে
হারমোনিয়াম রাখা। তবলাও নেই। সামান্য কাছে টেনে নিলেন হারমোনিয়াম, চারিপাশে
যে যার মতোন ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসা,ভরাট গলায় স্বর্গীয় পরিবেশ তৈরি হলো রবির
গানে-
প্রাঙ্গণে মোর শিরীষশাখায় ফাগুন মাসে
আমার কী উচ্ছাসে
ক্লান্তিবিহীন ফুল ফোটানোর
খেলা।
ক্ষান্তকূজন শান্তবিজন সন্ধ্যাবেলা
প্রত্যহ সেই ফুল্ল শিরীষ
প্রশ্ন শুধায় আমায় দেখি
' এসেছে কি- এসেছি কি।'
অনেকের সাথে আমিও ভেসে
গেলাম সে অনির্বচনীয় সুরে। এবার এলো থালায় আবীর, এলো মিষ্টি, রঙে-রসে জারিত হয়ে তৈরি হয়ে গেল এক মনকাড়া পড়ন্ত
বেলার স্মৃতি।
Subscribe to:
Comments (Atom)








