অলীক পাতার অন্যান্য সংখ্যা- পড়তে হলে ক্লিক করুন Library ট্যাব টি



। । "অলীক পাতা শারদ সংখ্যা ১৪৩১ আসছে এই মহালয়াতে। । লেখা পাঠানোর শেষ তারিখ ১৫ ই আগস্ট রাত ১২ টা ।.."বিশদে জানতে ক্লিক করুন " Notice Board ট্যাব টিতে"

Wednesday, July 4, 2018

যখন তখন-ধারাবাহিক -দন্ত্যস্থ (প্রথম পর্ব)-স্বরূপ চক্রবর্তী


দন্ত্যস্থ

(প্রথম পর্ব)

স্বরূপ চক্রবর্তী


সংখ্যা-১৫, (৫ই জুলাই,২০১৮)


(১)
স্থান:- আবার কৈলাস পর্বত, চৈত্রমাস
কাল:- প্রায় মধ্যরাত্রি, আকাশে পূর্ণিমার চাঁদ
পাত্র:- সপরিবার মহাদেব


আজ সকাল থেকেই শিব ও শিবার মধ্যে চলছে মন কষাকষি, যাকে বলে 'দাম্পত্য কলহ', কি? বিশ্বাস হচ্ছেনা বুঝি? আরে বাবা হয় হয়, এখানেও হয়, ফি বছর বাংলায় যাতায়াত করার ফলে মা দুর্গা ও ভোলেবাবার মধ্যেও দাম্পত্য কলহের বীজ ঢুকেছে, তবে তার যথেষ্ট কারনও আছে, ওইতো সেবার, এক থিম পুজোর আর্টিস্ট থিমের চক্করে মায়ের পোশাক- আশাক এত আধুনিক করে দিয়েছিল যে লজ্জা ঢাকা দায় হওয়ার জোগাড়, নেহাতই বাপের বাড়ি বলে কথা, মা ব্যাপারটাকে মানিয়ে গুছিয়ে নেবার চেষ্টা করে ছিলেন, কিন্তু গতবছর এক প্যান্ডেলে তো হৈচৈ কান্ডশিবঠাকুর তো রেগে কাঁই, কর্তাদের একদম অভিশাপ টভিশাপ দিয়ে ফেলেন আর কি,তা, রাগবার কথা তো বটেই, আরে বাবা! তোরা 'গ্লোবাল ওয়ার্মিং ' থিম নিলি তা, বেশ, তা বলে সমস্ত দেবী দেবতা, মায় অসুরকেও কচি কলাপাতার পোষাক পরাবি! আচ্ছা, সেটাও না-হয় মানা গেল, কিন্তু তোরা লক্ষ্য  রাখবি না যে কখন পড়ার রাম ছাগলটি, তার সমস্ত গার্লফ্রেন্ড দের নিয়ে প্যান্ডেলে হামলে পড়ে সমস্ত 'পোষাক' কে 'শাক' ভেবে স্রেফ সাবড়ে দিয়েছে? সে তো মা কোনও ক্রমে সিংহের ওপর চড়ে বসে রক্ষা পেয়েছেন, তা না হলে কি যে হতো.......?সেই ঘটনাটি আজও শিবের মনে টাটকা, তাই যখনই মা দুর্গা এই ভরা চৈত্রে মর্ত্যে যাবার বায়না ধরলেন, তখন শিবের মাথা ভিসুভিয়াস হতে দেরি হলনা, নেহাতই মা গঙ্গা শিবের মাথায় জল টল ঢেলে ব্যাপারটা ম্যানেজ দিলেন।


বছরে একবার ছাড়া মায়ের বাংলা ভ্রমণ নিষিদ্ধ, মাও এটা মেনে নিয়েছিলেন, কিন্তু বাদ সাধল ওই ' চৈত্র সেল '


আসলে হয়েছে কি, যবে থেকে ওই মর্ত্যবাসীরা একেবারে গুনে গেঁথে বলে দিল যে গোটা পৃথিবীতে আর মাত্র শতিনেক বাঘ অবশিষ্ট রয়েছে, সুতরাং ওদের শিকার করা চলবেনা, তখন থেকেই মা এর কপালে ভাঁজ,কারন মহাদেব যে কেবল মাত্র বাঘ ছাল ছাড়া আর কিছু পরেন না, তার ওপর আবার সেদিন ওঁনার  সবেধন নীলমণি শীতে পরার একমাত্র রয়্যাল বেঙ্গলের ছালটি স্বর্গের ধোপাকে কাচতে দিয়ে পড়েছেন ফ্যাসাদে, ব্যাটা ছাল টিকে ছিঁড়ে ফর্দাফাই করে নিয়ে এসে বলে কি না, 'এত শতাব্দী প্রাচীন ছাল কাচা আমার কম্ম নয়,' তারপর জিব কেটে, পোষা গাধাটির শিংয়ে হাত রেখে বলল,
'
এই আমি আমার ব্যবসার  , মায় আমার প্রিয় গাধাটির দিব্বি বলছি, এই ছাল আমি আর কাচতে নেবো না, শিগগির একটি নতুন ছাল আনুন' বলে কাচার পয়সা টয়সা না নিয়েই দাপিয়ে চলে গেল।


"
এ তো মহা ফাঁপরে পড়া গেল, এখন নতুন ছাল পাই কোথায়?" মায়ের কপালে চিন্তার ভাঁজ।


সুতরাং খোঁজ পড়ল কার্তিকের, এই পরিবারের একমাত্র টেক স্যাভি স্মার্ট সদস্যের।
মা শুধোলেন ,' হ্যাঁ রে কাতু, একটু দ্যাখ না, যদি তোর ওই অনলাইন না কি যেন বলে, ওখানে কোনও রয়্যাল বেঙ্গলের ছাল পাওয়া যায় কি না?'


কার্তিক তখন 'স্কাইবুক লাইভেমগ্ন, সেখানে স্ক্রিনের তলায় ব্যানার স্ক্রল করছে,


রয়্যাল বেঙ্গল রহস্য, কে বা কারা যেন সুন্দর বনের গভীরে সেঁধিয়ে কয়েকটি ধাড়ি ধাড়ি বাঘকে মেরে তাদের ছাল ছাড়িয়ে নিয়ে গেছে',  


ব্রেকিং নিউজের সাথে নিউজ প্রেজেন্টারের রিসার্চ টিপ, ' শোনা যাচ্ছে যে সুন্দর বনের নগ্ন বাঘের বডির সাথেই আফ্রিকাতে ফোকলা হাতির বডি পাওয়া গেছে, মানে, বডি আছে কিন্তু কে বা কারা দাঁত গুলি সমূলে উপড়ে নিয়ে গেছে, গোটা পৃথিবীর পুলিশ ও গোয়েন্দা হন্যে হয়ে চোরাশিকারীদের তল্লাশ করছে।'


মায়ের ধাক্কায় কার্তিকের মগ্নতা ভাঙে, ' দেখছ না, সারা পৃথিবীর কি হাল!,বাবাকে বলো ওসব বাঘছাল টাগছাল ছেড়ে ট্রেন্ডি হতে, বল ফ্লোরাল প্রিন্টেড বারমুডা ধরতে, একেবারে ইন থিং, আর ইজিলি পাওয়া যায়, একটা ক্লিক আর ,'বৈতরণী ডট কমথেকে এক্কেবারে কৈলাসে হোম ডেলিভারী, নো পাঙ্গা নো ইস্যু।'


'
কিন্তু...',মায়ের কপালে ভাঁজ।


এমন সময় গনেশ এসে হাজির, সব শুনে ফুট কাটল, 'একটু চেষ্টা করলে হয়ত বাঘ ছাল পাওয়া যেত'


গণেশের কথা শুনে কার্তিকের পিত্তি জ্বলে গেল, এমনিতেই দুইজনের মধ্যের সিবলিং রাইভ্যালরি পুরোনো,সেই পুরাণ যুগ থেকেই চলে আসছে, পৃথিবী পরিক্রমনের কম্পিটিশনের থেকেই, তার ওপর এই সেইদিন ভ্যালেনটাইন ডে তে, বাবার গাঁজা খেয়ে স্বর্গের কার্নিশ টপকে ফুলের বাজারে পড়া, আর চোর সন্দেহে লোকজনের মারের হাত থেকে বাবাকে বাঁচিয়ে নিয়ে আসার পর থেকেই,

 (যারা জানেন না তারা ভ্যালেন্টাইন বম বম টা একটু পড়ুন)

গণেশ এই পরিবারের নয়নের মনি, তার কথায় সবাই ওঠে বসে, কার্তিক নিজেকে সামলে নিল।


গণেশের কথা শুনে মা বুকে বল পেলেন


'
হ্যাঁ রে, বাবা, তুই কি কিছু উপায় বলতে পারিস?'


'
উপায় তো ওই একটাই, চৈত্র সেল!'


'
মানে?', মায়ের জিজ্ঞাসা।


'
বাংলায় এখন চৈত্র সেল চলছে, শুনেছি সেখানে সবকিছুই পাওয়া যায়, শুধু বাঘের ছাল কেনো ,দাঁত, নখ, দুধ সব পাওয়া যায়।'


'
যায়?', মায়ের মাথার পেছনের হাজার ওয়াটের   জ্যোতির্বলয় টি  জ্বলে উঠল, শিব তেরিয়া হয়ে উঠলেন, ' কথায় কথায় এতো আলো জ্বালিয়ে দাও কেন?

  
ইলেক্ট্রিসিটির বিল টাও তো মাথায় রাখতে হবে , না কি?'

কার্তিক মুচকি হেসে মনে মনে ভাবল, 'এবার চাঁদ, তোমায় দেখাবো ফাঁদ,'বলল, ' ঠিক আছে, তুইই বল  আমাদের ঠিক কি করা উচিত '


প্রশ্রয় পেয়ে গণেশ বলল,' আমরা সবাই মিলে চলো কোনও চৈত্র সেলে যাই,'
'ওনার সাইজ টা মাথায় রাখলেই ..,'

'ত্রিপল, মানে ট্রিপল এক্সেল,' মুখের কথা কেড়ে বলে কার্তিক।

'ঠিক, বাবা না গেলেও চলবে,' মধ্যস্থতা করল লক্ষী ।

স্বরস্বতী বলল,' আমিও বাদ,' 'কেনো?'  মা শুধোলেন


ওখানে এখন ভীষণ ধুলো আর নোংরা, আমার হাঁসের পাখা, আমার শাড়ী সব নোংরা হয়ে যাবে'

'তোর যত শুভ্র শুভ্র বাতিক, থাক তুই ঘরেই।

সে তো হলো, কিন্তু কোন বাজারে যাওয়া যায়


'
দ্যাখ না, দাদা , তোর 'গোলগাল' ম্যাপে, কোথায় ট্রাফিক একটু কম,'


'
হুম বাছাধন, আজ তুমি পড়েছ ফাঁদে, আমি কার্তিক, তোমার বড় ভাই কি সাধে,?' মনে মনে বলে কার্তিক কিছুক্ষণ খুট খাট করে সুন্দরবনের লাগোয়া একটি বাজার খুঁজে বের করল।


"
বাসুদেব পুর বাজার।"
সব ঠিকঠাক



সেই রাতে জরুরী তলব পড়ল নন্দী ভৃঙ্গীর মহাদেবের কাছে,

"এই, তোরা দুটোতে গিয়ে এক্ষুনি একটা সার্ভে করে আয়, ওই বাসুদেবপুর না কি যেন জাগাটার নাম, তোদের মায়ের তো বঙ্গে যাবার একটা সুযোগ চাই ব্যস, আর ওদিকে আমি চিন্তায় মরি আর কি, কচি কচি ছেলেপুলে নিয়ে এই প্যাচ প্যাচে গরমে... যাক গে বুঝবে ঠ্যালা।" বলে গাঁজার কলকে তে মনোযোগ করলেন ভোলানাথ,

"বাবা, বলছি কি, মানে ইয়ে যদি একটু ... পেসাদ, না, থাক”, বাবার রক্তচক্ষু দেখে থতিয়ে গেল নন্দী।



                                                    ()

বাসুদেব পুরের আকাশে নিশুত রাতে নন্দী-ভৃঙ্গী কে গ্লাইড করতে দেখা গেল।

"বাজার টা স্ক্যান কর, হাঁদারা", ওদের 'শিং ফোনে' বাবার হুঙ্কার শোনা গেলো।

"আচ্ছা বাবা”, বলে দুজনেই দুই দুই চারটে শিং খুলে ফেললো। যাক, অ্যান্টেনা নেই,
বাবার হুঙ্কারও নেই, ছদ্মবেশ ধারণ করার জন্য শিং খুলতে হয়েছে বলে বাবাকে বুঝিয়ে দেওয়া যাবে 'খন।

ওরা উড়তে লাগল ইতি উতি। বাসুদেবপুর হল সুন্দর বনের লাগোয়া  একটি মাঝারি সাইজের গঞ্জ, নোনা জলের খাঁড়ি দিয়ে তিনদিকে ঘেরা,তবে, এখানকার বাজারটি বেশ জমাটি, বেশ কয়েকটি বড়সড় দোকান আছে এখানে, আশেপাশের গ্রাম, এছাড়া ক্যানিং , নেতিধোপানি, গোসাবা, ইত্যাদি সুন্দর বনের তাবড় তাবড় এলাকা থেকে নোনা খাঁড়িতে ডিঙি নৌকা বেয়ে লোকজন আসে, আর জঙ্গলের খাবারে অরুচি ধরলে মাঝে মাঝে ডোরা কাটা কেঁদোরা এখানে হামলা করে, তবে এখানকার বাসিন্দারা এতে অভ্যস্থ , তাদের চলে যায়।

উড়তে উড়তে একটি বেশ বড়সড় শাটার টানা দোকানের সামনে এসে পড়ল ওরাবিশাল সাইন বোর্ড টাঙানো, "জটাধর বস্ত্র বিপনী", "এখানে সকল প্রকার কাপড় সুলভে পাওয়া যায়" "প্রোপ্রাইটর : হলধর পাঁজা"। সবই ঠিক আছে, কিন্তু সাইন বোর্ডের দুই প্রান্তে দুইটি ইয়া সাইজের শিব ঠাকুরের ছবি একটু বেমানান লাগল ওদের।

"হুমম, বেশ বড়ই দোকানটা, কি বলিস?" বলল ভৃঙ্গী।

"চল দেখা যাক", সায় দিয়ে বলল নন্দী

জটাধর ভান্ডারের পেছনেই মালিকের বাড়ী, দোকানটা বাজার মুখো আর বাড়িটি খাঁড়ি মুখো। ওরা বাড়ির দিকটা তে ভেসে চলল, ওদিক পানে যাবার সময় তাজা গাঁজার সুমিষ্ট ধোঁয়া ওদের নাকে প্রবেশ করল, দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে অর্থবহ ইশারা করল।
()

জটাধর বস্ত্র বিপনীর মালিক ষাটোর্ধ হলধর বাবুর এই তল্লাটে বড় এবং সৎ ব্যবসায়ী বলে খুব নামডাক, তিন পুরুষের এই ব্যবসা শুরু করেন হলধরের পিতা জলধর, সেই ব্যবসা বাড়ান  হলধর আর এখন তাঁর পুত্র সূত্রধর ব্যবসা দেখাশোনা করে, তিনি এখনও দোকানে যান,বিশেষতঃ পুজো পার্বণ বা মেলা টেলা হলে, ক্যাশ সামলান, খদ্দেরের ভীড় দেখতে তার বেশ লাগে। শোনা যাচ্ছে যে আসছে পঞ্চায়েত ভোটে তিনি নির্দল প্রার্থী হবেন, হলধরের আর একটি বিশেষত্ব হল দেবদ্বিজে তাঁর অচল ভক্তি, বিশেষতঃ ভোলেবাবার তিনি কট্টর চেলা, রোজ রাত্তিরে খাওয়া দাওয়ার পর তিনি বাবার আরাধনায় বসেন, উপকরণ অতি সামান্য, উত্তম কোয়ালিটির গাঁজা, কলকে, আর দেশলাই, ব্যস, বেশ কয়েক ছিলিম টেনে আর ব্যম ব্যম হুঙ্কার ছেড়ে তিনি তাঁর আরাধনা শেষ করেন তার পর সদর দরজা বন্ধ করে তবে শুতে যান, এই সব ক্রিয়া প্রক্রিয়া সাঙ্গ করতে বেশ রাত হয়ে যায়, তাই পরিবারের শান্তি বজায় রাখতে বাইরের ঘরেই তিনি ঠাঁই নিয়েছেন।

চৈত্র মাস চলছে , আজ বেশ গরম, তাই তিনি একেবারে বাইরের দাওয়াতে তিনি তাঁর পুজোর আসন পেতেছেন, নন্দীরা ধীরে ধীরে হলধরের সামনে ল্যান্ড করল।
হলধর সবেমাত্র পরিপাটি করে দুই ছিলিম শেষ করার পর সবে তিন নম্বরটি ধরাচ্ছেন, এমন সময় দুটি গ্রাম্য লোক যেন আকাশ থেকে ভেসে তাঁর সামনে এসে দাঁড়াল, হতে পারে তৃতীয় ছিলিম, কিন্তু হলধরের জ্ঞান বেশ টনটনে আছে, "এত রাতে আবার এরা কারা, আপদ", তিনি ভোটে দাঁড়াচ্ছেন শুনে আশপাশের অনেক লোক তাঁর কাছে বিভিন্ন কাজের উমেদারী করতে আসে, হলধর তাঁর সাধ্য মত সাহায্য করেন,কিন্তু তা বলে এত রাতে....। কিছুটা বিরক্তির সাথে তিনি লোক দুটোকে জিজ্ঞাসা করলেন,

"কে হে তোমরা, এত রাতে, কি ব্যাপার"?

হাটুরে লোকদের মত খাটো ধুতি, মাথায় বাবরি চুল, অদ্ভুত ধরণের পিরান গায়ে লোকদুটির গায়ের রং এক্কেবারে মিশকালো, আর সবচেয়ে বে মানান হচ্ছে ওদের পায়ের রাংতা ওয়ালা নাগরা।

"কোন যাত্রা দলের লোক হে তোমরা? এমন সং সেজে এত রাতে ঘুরে মরছে দ্যাখো"

"ব্যম ভোলে" বলে হুকার ছাড়লেন হলধর।

চমকে উঠে নন্দী-ভৃঙ্গী আমতা আমতা করে নিজেদের জন্য একটি পরিচয় খুঁজছিল, কিন্তু অমন সুমিষ্ট ঝাঁঝালো গাঁজার গন্ধে প্রাণ টা আকুলি বিকুলি করে উঠছে, যাক শালার সার্ভে, এখন যেভাবেই হোক দু এক ছিলিম না টানতে পারলে

 ...উফফ, কি সুন্দর গন্ধ....।

"কি! নিজেদের পরিচয় দিতে এত ধানাই পানাই কিসের হে তোদের?" বিরক্ত হলধর তুই তোকারিতে নেমে এলেন।

“ঠিক বলেছেন স্যার, আমাদের ওই নাম"

"আমি ধানাই, আর ও আমার তিন মিনিটের ছোট ভাই পানাই", বলে নিজেদের দেখালো নন্দী।

"হাঃ হাঃ, এ আবার কি ধরণের নাম?" , জিজ্ঞাসা হলধরের।

“না, মানে দুগণ্ডা ভাই বোনের পর যখন আমাদের জন্ম হল, তখন বাবা মাথায় হাত দিয়ে বসল,”আমার গরীবের সংসার, খুদ কুঁড়ো খাইয়ে নাহয় এদের মানুষ করব কিন্তু এখন এই দরিদ্র চাষার রতন এই ছেলে দুটোর জন্য নাম পাই কোথায়? আমরা যে বড্ড গরীব"।

সেই শুনে আমার দাদু, যাঁকে আমাদের দুগন্ডা ভাই বোনের সকল অন্যায় আবদার মেটাতে হত, তিনি বিরক্ত হয়ে বললেন, "আরে নামের জন্য অত ধানাই পানাই কিসের? দুটোর নাম হোক ধানাই আর পানাই", " আর বলে দিচ্ছি সুবল, এই শেষ, না হলে কিন্তু বৌমাকে বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দেব বলছি, মনে থাকে যেন "।
ওদের কথা শুনে হলধর বেশ আমোদ পেলেন,

"বোস বাছারা", বলে দাওয়ার এক পাশে বসালেন এবং নন্দী ওরফে ধানাই এর দিকে গাঁজার ছিলিম এগিয়ে দিয়ে বললেন, "এই নাও, মহাদেবের প্রসাদ, তুমি বড় ভাই, তুমিই আগে..."

"বড় আমার বড় এয়েছেন রে, বলে কলকে টা এক প্রকার ছিনিয়ে নিল ভৃঙ্গী ওরফে পানাই"।

পারিবারিক কলহের মধ্যে না পড়ে হলধর শুধোলেন , " এবার বলোতো বাছারা, তোমাদের এখানে আসার কারণটি কি"?

"আজ্ঞে, আমরা হেতাল গঞ্জের জমিদার বাড়ি থেকে আসছি, উনারা ভীষণ শিব ভক্ত," বলে কপালে হাত ঠেকায় ধানাই।

আপনাদের বাসুদেব পুর বাজারের নামডাক শুনে এখানে এসে আপনার ও আপনার দোকানের ব্যাপারে জানলাম, তা, আমাদের মা জননীর খুব বাজার করার দরকার, ওদিকে আমাদের এলাকায় মশার উৎপাতে ব্যবসাপত্র প্রায়  বন্ধ,লোকজন সব এলাকা ছেড়ে পালাচ্ছে, কিন্তু জমিদার পরিবার তো আর যেতে পারে না, তাই ওখানেই পড়ে আছেন, তো, জমিদার গিন্নী আর তাঁদের দুই ছেলে এখানে আপনার দোকানে কালকে আসবেন কেনাকাটা করতে, একটু খেয়াল রাখবেন, এই আর কি।"

“কিন্তু, সাবধান! ঘনিয়ে আসে পানাই,"ওঁদের আসল পরিচয় কিন্তু কেউ যেন জানতে না পারে, এই টুকু অনুরোধ"।

"এ আর বড় কথা কি, আমার দোকানে ওঁরা আসবেন, তাতেই আমি ধন্য”, বিগলিত হাসলেন হলধর।


ক্রমশঃ


দ্বিতীয় পর্ব


















Monday, June 25, 2018

যখন তখন-গল্প-শম্পা সান্যাল


ঙে  ঙে ছোঁয়া 

শম্পা সান্যাল
সংখ্যা-১৪, (২৫ শে জুন,২০১৮)


তুমুল হৈচৈ-এর মাঝে পর্ণার জোরালো গলা হাই গাইস 
আরে, আপনার চেয়ে আপন যে জন! কোথায় ছিলি ?? 
পর্ণা, নামটা পর না, আপনার ইত‍্যাদি নানাভাবে ব‍্যাখ‍্যায় জাড়িত বন্ধু মহলে।
দ‍্যাখ্, কাকে ধরে এনেছি!
দ্রুত চোদ্দ জোড়া চোখ যার উপরে এসে পড়ে, সামান্য অস্বস্তি কাটিয়ে বলে আমি নন্দা, মানে অভিনন্দা চ‍্যাটার্জি।
আজ তোদের সাথে আলাপ করিয়ে দেবো বলে আমার মামাতো বোনকে ধরে এনেছি।
ভালো, ভালো করেছিস
সব তো হা হয়ে গেছিস, আরে হাই, হ‍্যালো কিছু তো বল্ বলে পর্ণা হাসতে থাকে।
ধ‍্যাত্, কোনো সিরিয়াস আলোচনায় ডিস্টার্ব করলাম মনে হচ্ছে!
সিরিয়াস! এরা! 
এই  নারে, মাদল একটা প্ল‍্যান বলছিল আরকি!
মাদলের প্ল‍্যান!! চ রে নন্দা। প্ল‍্যানটা কি?
কেন! চলে যাচ্ছিলি, যা না এবার কথা বলে মাদল।
আরে, তোর তো সব বিরাট ভাবনা, তাই বলছিলাম বাবু!! বলো বলো 
ফাঁকা হয়ে যা
ধ‍্যাত্, বলতো তোরা, বেশি বেশি!!
মাদল নিজের লেখা নাটক সোশ‍্যালে করবে বলছে, কমলিনী বলে।
বাঃ, দারুণ ব‍্যাপার!
গান‌ও লিখবে, আর একজনের ফুটনোট
এবং ধ‍্যাড়াবে 
হাসিতে ফেটে পড়ে সবাই। নন্দা একটু ইতস্তত করে বলে কে মাদল?
ওহো! তোর সাথে তো কারো আলাপ‌ই করাইনি। ঐ যে, উনি, ঢ‍্যাঙা, উনি হলেন মাদল, আমাদের নেতা। আর ও কমলিনী, ও ....
আপনি
এই , এই আপনি কিরে! তুই , তুই বল্।
ওকে, তুমি নাটক লেখো ? 
ঐ আর কি! বন্ধুরা উৎসাহ দেবে, দেখছো সব কেমন 
আরে, রবিবাবুকে আর ভালো লাগছে না
মোটেও আমি সেকথা বলিনি, আমি রবীন্দ্রনাথকে আমাদের জীবন থেকে চাইলেও কি পারবো বাদ দিতে!
অনেক ভাট্ বকেছিস, চল্ তো 
আমার যাওয়া হবে না রে 
আমিও রে 
অবশেষে পূর্ব পরিকল্পনা মাফিক জনা সাতের সাথে নন্দা সহ ব‌ইমেলায় যাওয়া ; ক্রমশঃ মাদল -অভিনন্দা পরস্পর পরস্পরের কাছে বড়ো আপনার হয়ে গেল।


         ‌‌         আজও কমনরুমে মিটিং। টিফিন সেশন, অত‌এব তুমুল কলরব। তার‌ই মাঝে প্রতিবার‌ই কেন সোশ‍্যালে রবীন্দ্রনাথ! আর কেউই কি কিছু লিখে যাননি?
আরে, এতো অল্প সময়ে আর কার কথা ভাবা যায় বল্ তো 
নাচ, গান
ছাড়তো! নাচ- গান মাস্ট নাকি!
সেকি! কেবল অভিনয়!
তাহলে আর দেখবে না কেউ।
সমবেত হাসির রোল।
শোন্ মাদল, তোর প্রস্তাবটা একদমই ভুল না তবে তার জন্য যতটুকু সময় প্রয়োজন সেটা তো নেই আর দোয়েল, মধু ওরা এতো ভালো গান করে, ওরা তাহলে কি করবে! কলেজের জি.এস. শৌনক বয়স-সহ সবেতেই বড়ো তবে ওদের উপর কর্তৃত্ব ফলালেও মর্যাদা দেয়।
নাচ, গান যারা করবে করুক না, নাটকের সাথে কি সম্পর্ক ওদের? টোটাল প্রোগ্রাম- এর সময় কতোটুকু সেটা তো মাথায় রাখ্।
তাহলে 
আমার তো 'রাজা ও রানী' এতো ভালো লাগে !
সে তুই রানীর পার্ট পাবি তো তাই
মোটেও না 
এই চল্, চল্ , চললাম রে বলতে বলতে দ্রুত সব নিজ নিজ ক্লাসের উদ্দেশ্যে চলে গেল। বেড়িয়ে এলো আলাপন, মাদল, বিতানুরা কয়েকজন।তুই নিজে লিখে নাটক করবি?
কেনো? লিখতে পারি না!!
না পারবি না কেন! তোর সে ক্ষমতা আছে কিন্তু কলেজে তোর লেখা নাটক মর্যাদা পাবে?
আমি তো জানি সেটা, সেই বুঝেই তো 
বেশ, লিখবি, রিহার্স দিয়ে সময়ে নামাতে পারবি?
হু, সেটা আমাকেও ভাবাচ্ছে তাই তো ভাবছি!!
আর আমাদের প্রোগ্ৰাম দেখার জন্য তো আমরাই থাকবো বলে হো হো করে হাসে বিতানু। 
কেন!!
সব তো ঐ ইকা-মিকা-ডিকা-র সময় আসবেন!
একদম, এটা ঠিক বলেছিস। সত‍্যিরে, মাদল এখানে ভালো কিছু করে লাভ নেই!
তোরা আছিস তো! আমার আনন্দ যদি তোদের ভালো লাগে!

     ‌         অভিনন্দা হাজারটা গালাগাল মনে মনে দিয়ে যাচ্ছে সাথে মোবাইল-এ ট্রাইগেল কোথায় ছেলেটা! না, ঠেকে আসেনি, সে খবর পেয়েছে। বাবা-মায়ের সজাগ দৃষ্টি এড়িয়ে কতবার ট্রাই করবে। হোয়াট অ‍্যাপস থেকে মেসেঞ্জারে কোনো রেসপন্স করছে না। পরীক্ষা সামনে, পড়াতে মন বসছে না, উফফ্ !!
ডোনা পড়া হয়ে গেছে?
হ‍্যাঁ, কেন?
তোদের গানের স্কুলের প্রোগ্রামে তোর কোন্ কোন্ গান? বলতে বলতে মা চা-মুড়িমাখা নিয়ে ঢোকেন।
আহা, দারুণ মেখেছো মা। তুমি নাও 
নাঃ, তুই খা।
এবারে তো কেবল বসন্তোৎসব আর তার মানেই "ঝরে ঝরে......বলে হাসতে থাকে নন্দা, যার বাড়ির নাম ডোনা।
সত‍্যিরে, বসন্ত মানেই দোল । বাঙালি দোল- দুর্গোৎসব একসাথে হামেশাই বলে।
মাস্টারমশাই দুটো সোলো রেখেছেন আর সব কোরাস।
পড়া হয়ে গেলে রেওয়াজে বস্।
হু, বসবো তবে তারজন‍্য একটা মন লাগে তো!
বাবা! তোমার মন এখন কোথায়!
আচ্ছা,মা তোমাদের বসন্তকাল কেমন ছিল?
কেমন আবার! তবে, হ‍্যাঁ  "কাল"-টা বোঝা যেতো বুঝলি! এখনতো হেমন্তকাল হারিয়েই গেছে প্রায়। আর বসন্ত! শীতের অবসানে গ্ৰীষ্মের আগমনের মাঝে অনেকটা সন্ধিপুজোর মতোন। কত সুন্দরমা নিজ-জগতে লীন হয়ে যান। দোলের দিন বাবা-মাকে পাড়ার অনেকেই আসতেন প্রণাম করতে, ছেলেরাই বেশী জানিস। আমরা লুকিয়ে দেখতাম
সেকি ! খেলতে না?
এই , তুই খেলিস?
আমাদের এখানে কি সেই পরিবেশ আর কি না কি রঙের মধ‍্যে থাকে!
না, ইচ্ছে যে হতো না তাও না কিন্তু ঐ ! জানলা দিয়ে দেখতাম কালো পিচের রাস্তাটা নানা রঙের  আলিঙ্গনে রঙিন, পাল্ট পাল্টে যাচ্ছে নতুনের ছোঁয়ায়। অনেক জিলিপি এনে রাখতেন বাবা, যারা প্রণাম করতে আসতো তাদের মুখে তুলে দিতে হতো।
হা,হা,হা খাইয়ে দিতে নাকি!
হ‍্যাঁরে, হাতে তো রঙ মাখা তাই বলতে বলতে মা যেন আনমনা হয়ে যান।
মা, কি হলো 
নাঃ, কিছু না। কত কথা, কত স্মৃতি
বলো না মা, বলো বলো প্লিজ 
থামবি! হয় পড়্ নাহলে হারমোনিয়াম নিয়ে বোস বলে মা কাপ-বাটি গুছিয়ে চলে যান।
অন‍্যসময় হলে হয়তো মা-কে জোরাজুরি করতো, এখন নিজের জ্বালায় অস্থির। আবারও চেষ্টা
বল্ 
ব‌অঅল!! তুই দেখেছিস কটা মিসড্ কল?
দেখেছি
দেখেও! তাহলে এখন ধরলি কেন?
আরে বল্ না
কি, কি হয়েছেটা কি ? 
কিছুনা, শোন্ রাতে কথা বলবো, এখন রাখছি।
ওকে, জো হুকুম।
মিতালি দ্রুত মেয়ের কাছ থেকে সরে আসতে পারে, পারে না অতীত থেকে। আজো ফেব্রুয়ারি মাস এলে মনে আসে ; বসন্ত সমাগত। বাবা-মাকে প্রণাম করতে এসে ওদের দুই বোনের প্রতি অনেকেরই মনোযোগ আকর্ষণ করার প্রচেষ্টা  দুইবোনের হাসি, ঠাট্টার খোরাক হতো। "একটা টিপ, একটা টিপ কেবল" বলতে বলতে ওরা এগোতো আর সভয়ে দুজনে সঙ্কুচিত ; বাবা বা মা সরলমনে বলতেন " ওকি! নিতে হয়, তোমরাও দাও। এটাই তো উৎসব! আর তারপর মায়ের হাত জোড়া থাকলে মুখে.....। এরকমই একটা সময়  যখন মন আর বয়সের গলাগলি সম্পর্কে বাস, এলো বসন্ত, এলো প্রেম। নতুন পরিবার পাড়ায় এসেছে, মায়েদের সামান্য আলাপ‌ও হয়েছে। ছেলেটিকে দেখে, আজ বন্ধুদের সাথে ওকে দেখে বুকটা এমন হলো কেন! বাবা-মা স্পেশাল খাতির করে দুটো কথাও বল্লেন, এর‌ই মাঝে কয়েকবার চোখাচোখি হয়েছে, কিছু কি বলছে ওর চোখ! 
মিতা, মা ওদের একটু মিষ্টি দেতো রে!
যথারীতি টিপ-পর্বে বন্ধুদের সঙ্গে ও এগিয়ে এলো না, হাসছে ওর ভয় দেখে।
শুধু টিপ কিন্তু! তোমরা আগেরবার মাথায় দিয়ে দিয়েছিলে
হা করো, হা করো হ‍্যাংলারা 
এই এসব কি কথা! বাবা উবাচ।
হাসতে হাসতে সবাই খাচ্ছে, ও চুপচাপ।
একি! তুমি নাও! মা, হার্দিককে দাও। 
আমার হাতে ..... দিতে গিয়ে মৃদু স্পর্শ, অদ্ভুত অনুভূতি!
সবাই যাওয়ার পর ঋতু বলছে হারুটা কেমন ক‍্যাবলা মার্কা 
হারু!! 
আরে ঐ নতুন ছেলেটা 
এবার হাসে তবে একটু একটু রাগ‌ও হচ্ছে। 
ওর নামটা একদম আনকমন।
দেখবি ঐ নামে কেউ ডাকবে না, ঐ হারু, হাড়ি এসব‌ই জুটবে বলে হাসতে হাসতে বিছানায় গড়াগড়ি।
ওরা তো বাইরে থাকতো, তাই হয়তো! এতে হাসার কি হলো শুনি! 
এ‍্যাঁ!!! দিদিই
এভাবেই কেটে গেছে দুটো বছর। না, সম্পর্ক গড়ে ওঠেনি, তবে পছন্দটা দুজনেই বোঝে। এখন কতো সহজ! কি সাবলীল ভাবে ছেলেমেয়েদের মধ্যে বন্ধুত্ব, ভালোও লাগে।
শুনলি তো সব, বল্ এবার।
কি বলবো!
আরে, আমরা কি পারি না নিজেরা নাটক লিখে মঞ্চস্থ করতে?  এতে তো আলাদা একটা তৃপ্তিও মেলে! কিরে! হ‍্যালো!
বলে যা 
মানে!
মানের কিছু নেই, বুঝতে পারছি পোকাটা আবার .....
ছাড়্, কেন যে বলতে গেলাম!
এই, শোন্ প্লিজ ফোন কাটিস না আমি শুনছি তো, বল্ না
ধুত্, মুড অফ হয়ে গেল। আচ্ছা তুই তো বুঝবি!
কাল বিকেলে ফ্রি আছি, আসবি?
এখন বলতে পারছি না
ডোনা, এই দরজা দিয়েছিস কেন ?
মা, ছেড়ে দিলাম। 
তুমি আবার উঠে এসেছো?
দরজা বন্ধ করেছিস কেন?
আরে, মশার জন্য
মশারির মধ‍্যে বসে....
এই তো সবে টাঙালাম। উফফ্, তুমি যাও তো!
দ‍্যাখো, দেখেছো ঠিক মাথার দিকে জানলা খোলা বলতে বলতে বন্ধ করতে উদ্যত
মা,দমবন্ধ লাগে, বন্ধ করো না
দরজা খোলা থাকলে আবার দমবন্ধ লাগবে কেন? এখন সময়টা ভালো নয়, চারিদিকে জ্বর- জারি আর তোমার তো সারাবছর 
আমি কুড়ি পেরোতে যাচ্ছি মা 
ধন‍্য করছো 
তুমি যাবে !
তুই কি আর পড়বি? না হলে শুয়ে পড়্, আমি লাইট অফ করে দিয়ে যাচ্ছি।
বাবারে বাবা! দ্দাও।
সেই, কি যে জ্বালা!
আস্তে আস্তে আবছা আলোয় ঝুল-বারান্দায় এসে দাঁড়ায় মিতা।এই সময় চেনা পাড়াটাও কেমন অচেনা লাগে! রাস্তার আলোয় অদ্ভুত এক নিঃসঙ্গতা ; সেও যেন সারাদিনের পর ক্লান্তিতে মোড়া, নৈঃশব্দ্যের ব‍্যাঘাত ঘটায় কোন দ্রুত ধাবমান চক্রযান, নিশাচর প্রাণীরা। আগে বারান্দায় হাফ- রেলিং ছিল, একটু ঝুঁকে দু-পাশে দেখা যেতো, এখন নিরাপত্তার খাতিরে এখানে নিজেকে কেমন বন্দিনী মনে হয়। একটু দাঁড়িয়ে ধীরে ধীরে ঘর-মুখী হতেই হয়। ঘড়ির কাঁটা পরের দিনের সূচক -রূপী। শুরু হবে আরো একটি......হ‍্যালো 
ধুর্, মা-র একবার আসতেই হবে!
কালকে সময় হবে না রে 
ভালো, কি কাজ আছে শুনি? আমারো সময় হবে না, যা আমি শুয়ে পড়ছি , গুড নাইট।
পরশু আয় 
হবে না, শুক্রবার আমার পড়া থাকে না!
তোমার তো সারা সপ্তাহ ব‍্যাপী কিছু না কিছু
বেশ, আমার তাই তো তাই। তোর! তোর তো কোন কাজ নেই তাহলে কাল সময় হবে না কেন?
ওকে, দেখছি । সকালে হোয়াটসঅ্যাপ করে দেবোওকে, টাটা 
দ্রুত ফোন বালিশের তলায়। মা- র পায়ের আওয়াজ মনে হলো! শোয়নি!!
মিতালি পর্দা সরিয়ে মেয়েকে দেখে চলে যায়।
        মা, পর্ণাদের কলেজের সোশ‍্যালে যাবো।
হ‍্যা, ঐ করে বেড়াও।
এই করে বেড়াই !
আর কয়দিন আছে, সারাক্ষণ এক মোবাইল... বলতে বলতে টেবিলে বাবার জন্য খাবার জোগাড়ের মধ্যে বাবাক‌ই, দিয়েছো
কি রে কখন বের হবি?
আজ দেরী করে যাবো বাবা।
কেন?
সেরকম ক্লাস নেই তাই সেকেন্ড হাফে যাবো।
ঢাহা মিথ্যে বলতে যে কি  অস্বস্তি লাগে! বাবু দয়া করে জানিয়েছেন তিনটের সময় তিনি অপেক্ষায় থাকবেন। মিতালি কিছুদিন ধরে মেয়েকে লক্ষ্য করছে। ভয় করে ওর মতো কষ্ট না পায়। প্রথম প্রথম মনে হতো সুজয়কে ঠকাচ্ছে না তো! ক্রমে ফিকে হয়ে গেছে, হৃদয়াসনে সুজয় বিরাজিত তবু কেন! অদ্ভুত একটা না পাওয়ার অনুভূতি মাঝে মাঝে আসে! পাড়ার ছোট-বড় অনুষ্ঠানে মিতালিরা দুই বোন থাকেই। 
 দোলের পর একদিন সবাই একসাথে হয়, সারাদিন বিচিত্রানুষ্ঠান, একসাথে খাওয়া কি সুন্দর ছিল সেসব দিন। পাড়ার সকলে একসাথে হতো, মায়েদের ছুটি মিলতো, তবে দেখেছে মায়েরা যেন কেমন! বসতে দিলেও বসে না, বারবার রান্নার দিকে যাবেই যাবে, বাবারা ধমকাবে, হাসবে শেষমেশ সবশেষে কি থাকলো, বাসনপত্র কার কোনটা এসব করতে মায়েদের আসরে নামতেই হতো। হাসি-গল্পে এক বৃহৎ পরিবারের ছবি আঁকা হয়ে যেতো। সেবার‌ও জোর রিহার্সাল চলছে, সকালে নয়, এবার সন্ধ‍্যে বেলায় অনুষ্ঠান, এবার গীতিনাট‍্য শ‍্যামা। নাচের জন্য, গানের জন্য বড়োদের ব‍্যবস্থাপনায় বাইরে থেকে এসেছেন শিক্ষিকারা। এরকমই এক দিন গলা গেল কেঁপে,সুর গেল ভুলে উত্তীয় সে!
কি হলো মিতা, থেমে গেলে কেন!
"ধরা সে যে দেয় নাই, দেয় নাই......"
এতো সুন্দর গান করে! উত্তীয় ফিরে যাও, কেন ফিরে ফিরে যাও....... সারাক্ষণ মন জুড়ে থাকে। সবার প্রশংসা বিশেষ করে ওদের দুজনের। হ‍্যা, কাছাকাছি, কথা বলাও আর এভাবেই একটু একটু করে নিজেদের মেলে ধরা। ধরা পড়ে গেল। একদিন, মাত্র একদিন একান্তে দুজনের নিভৃতে আলাপচারিতার সুযোগ এসেছিল।   কোনো অজুহাত‌ই চললো না, সুজয়ের গৃহিণী হয়ে চলে এলো। ভেবে ছিল সত‍্যটা সুজয়কে জানাবে কিন্তু সাহসে কুলায়নি আর সরে যেতে যেতে  'সে'  রয়ে গেছে এককোণে, বাকিটা সুজয়ের দখলে। আচ্ছা, তাঁর‌ও কি মনে পড়ে! ডোনা, খোঁজ করে জেনেছি ছেলেটা ভালো। আমি আছি রে তোর পাশে। মিতালিচোখের জলে স্নাত, লম্বা বেনুনী ঝোলানো যুবতীতে রূপান্তরিত ; ক্ষণিকের তরে।
রবীন্দ্রনাথের 'রাজা ও রানী' এক অসামান্য প্রেম-কথা। ' প্রেম' যা অন্ধকারকে সরিয়ে নিয়ে আসে আলোর বৃত্তে। এই নাটকের বড় ব‍্যঞ্জনা তাঁর রাষ্ট্রচিন্তা যার প্রধান অবলম্বন রাজা যিনি থাকেন আড়ালে, রানীর সাথে মিলিত হন অন্ধকারে। আড়ালে থেকেই হয়েছেন প্রজাদের সর্বজন গ্ৰাহ‍্য।  রানীর ভ্রান্তিমোচনে আসে আলোর দিশা, উপলব্ধির পথ বেয়ে সত‍্যিই  রানী স্বরূপা, রাজার যোগ‍্যা হয়ে ওঠাবোঝা গেল!
হুউউ, বুঝলাম।
সবদিক ভেবে নিজের লেখা নাটক বাদ দিতে যখন হলো, ভাবলাম এই নাটকটা তো অন্তর্নিহিত অর্থ ধরে পরিবেশন করা যায়, তাই
ক'জন বুঝবে!!
না বুঝুকগে। নতুনের মোড়কে চেনা- জানা লেখা বোঝে ভালো, না বোঝে আরো ভালো।
বি.বি.
কিইইই 
বাসব বাসু মানে বি.বি. সোশ‍্যালে নতুনের ছোঁয়া আনবেন‌ই। 
বল্ যা ইচ্ছে।
বিবি, না বি.বি.! 
তোরাই, হুল ফোটাতে ওস্তাদ।
অন্ধকারে আস্তে করে হাতটা টেনে নেয়।
পাগল, একটা।
পাগল‌ই তো, তোর জন্য।
এবার মাথা ঠান্ডা!!
শান্তি পেলাম না রে! আমার নাটক লিখতে ইচ্ছে করে, আমি লিখবোও দেখিস
লিখবি তো! আমিও তো চাই।
এবার সময় কম, তবু একটু অন্য আঙ্গিকে চিরনতুন রবিকে আরো একটু নতুনত্বের ছোঁয়া দিয়েছি আর কি! বন্ধুরা তো খুশী, এখন















Main Menu Bar



অলীকপাতার শারদ সংখ্যা ১৪২৯ প্রকাশিত, পড়তে ক্লিক করুন "Current Issue" ট্যাব টিতে , সবাইকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা

Signature Video



অলীকপাতার সংখ্যা পড়ার জন্য ক্লিক করুন 'Current Issue' Tab এ, পুরাতন সংখ্যা পড়ার জন্য 'লাইব্রেরী' ট্যাব ক্লিক করুন। লেখা পাঠান aleekpata@gmail.com এই ঠিকানায়, অকারণেও প্রশ্ন করতে পারেন responsealeekpata@gmail.com এই ঠিকানায় অথবা আমাদের ফেসবুক গ্রুপে।

অলীক পাতায় লেখা পাঠান