দন্ত্যস্থ
(পঞ্চম পর্ব তথা অন্তিম পর্ব)
স্বরূপ চক্রবর্তী
সংখ্যা,১৯ (৯ ই জুলাই,২০১৮)
|
(১৩)
রাত প্রায় এগারোটা, আজ হলধর বাবুর মনটা বড় চঞ্চল, সেই ছেলেটি কোথায় যে গেল, আহা, বেশ পরিবারটি, ঠিক যেন শিব দুর্গার পরিবার, আজ দোকানের কাজের ভিড়ে ওদের আর খোঁজ করা গেলো না, কালকে একবার লোক পাঠিয়ে দেখব 'খন।
যদি ধানাই পানাই আর একবার আসত, তা হলে জানা যেত।
আজকে উনি ঘরের ভেতরেই বসে ছিলেন, মাঝারি সাইজের ঘর, বড়সড় একটি জানালা, একটি দরজা অন্তঃপুরের দিকে খোলে, আর তার উল্টো দিকে বাইরের দরজা, যেটা বাইরের দাওয়াতে খোলে, একটি একজনের শোওয়ার উপযুক্ত খাট, ঘরের মাঝে একটি মার্বেল টপ টেবিলে পুজোর অর্থাৎ গাঁজার সাজ সরঞ্জাম সব সাজানো, কিন্তু বেশ বোঝা যায় যে ও বস্তুর ব্যবহার এখনো হয়নি।
যদি ধানাই পানাই আর একবার আসত, তা হলে জানা যেত।
আজকে উনি ঘরের ভেতরেই বসে ছিলেন, মাঝারি সাইজের ঘর, বড়সড় একটি জানালা, একটি দরজা অন্তঃপুরের দিকে খোলে, আর তার উল্টো দিকে বাইরের দরজা, যেটা বাইরের দাওয়াতে খোলে, একটি একজনের শোওয়ার উপযুক্ত খাট, ঘরের মাঝে একটি মার্বেল টপ টেবিলে পুজোর অর্থাৎ গাঁজার সাজ সরঞ্জাম সব সাজানো, কিন্তু বেশ বোঝা যায় যে ও বস্তুর ব্যবহার এখনো হয়নি।
তা, ওরা এলো, এসে জানালা দিয়ে উঁকি মারতে লাগল, ওদের দেখতে পেয়েই হলধর গিয়ে সদর দরজা খুলে ওদের সাদরে আপ্যায়ন করলেন-
“এসো এসো ভায়ারা, কোথায় ছিলে তোমরা? তোমাদের মা ঠাকুরণ আর ছেলে দুটি ঠিক ঠাক বাড়ি পৌঁছেছেন তো? ছোট ছেলেটি কোথায় যে ঘুরতে চলে গেল, মা ঠাকুরণও দোকান থেকে কিছুই নিয়ে গেলেন না"।
“এসো এসো ভায়ারা, কোথায় ছিলে তোমরা? তোমাদের মা ঠাকুরণ আর ছেলে দুটি ঠিক ঠাক বাড়ি পৌঁছেছেন তো? ছোট ছেলেটি কোথায় যে ঘুরতে চলে গেল, মা ঠাকুরণও দোকান থেকে কিছুই নিয়ে গেলেন না"।
“রোসো, রোসো, সব বলছি", হাত তুলে হলধর কে থামাল,"এখন আমরা তোমাকে যা বলতে চলেছি, তার কথা যেন কেউ ঘুণাক্ষরেও জানতে না পারে, কথা দাও"।
“দিলাম, বললেন হলধর"।
"তুমি জান আজ যাঁরা তোমার দোকানে এসেছিলেন তাঁরা কে?"
"কেনো, তোমরাই তো বললে যে ওনারা হেতাল গঞ্জের জমিদার পরিবার, আহা, কি সুন্দর, ঠিক যেন শিব ঠাকুরের সংসার"।
“একদম ঠিক, ওঁরা তাঁরই পরিবার", গম্ভীর গলায় বলল নন্দী।
হা হা করে হেসে উঠলেন হলধর, "অর্থাৎ তোমারা ধানাই পানাই নও নন্দী ভৃঙ্গী"।
"একদম ঠিক!” বলল ওরা।
"এই; এটা কিন্তু বেশী হয়ে যাচ্ছে, এই দেখ, আমি কিন্তু এখনো পুজোয় বসিনি", অবিশ্বাস জলধরের গলায়, “কি, কি প্রমান আছে? দেখি!"
"প্রমান?, হুমম, আমরা তোমাকে সশরীরে দর্শন দিতে পারব না, তবে..., ," বলে এদিক ওদিকে দেখে পানাই বলল, " ওই লোহার আলমারিতে একটি লাল শালুতে মোড়া বাক্স আছে , ঠিক?, যেটা হরিপদ সরখেল আজ সন্ধ্যায় তোমার কাছে গচ্ছিত রেখে গেছে।
হলধর ভাবলেন ঠিকই তো, আজ সন্ধ্যায় হরিপদ দারোগা এসেছিল, মাঝে মাঝেই আসে, একটু অন্ধকার হলে, আড্ডা দেয়, চা খায়, আর মুখ বাঁধা থলে, বা বাক্স বন্দী কিছু গচ্ছিত রেখে যায়, বলে, থানার দস্তাবেজ, আপনি মান্যগণ্য মানুষ, তাই একটু সামলে রাখুন, আবার পরে এসে নিয়েও যায়। হরিপদর সামনেই সেগুলি উনি লোহার আলমারী তে তুলে রাখেন আর দারোগা চাইলে ফেরৎ দিয়ে দেন, অন্যের ব্যাপারে উনি বেশি নাক গলান না, কিন্তু এসব তো এদের জানার কথা নয়, কিন্তু তবু সন্দেহ তো যায় না, তাই বলেন ,"এতে কি প্রমান হয়না যে তোমরা চোর? আড়ি পেতে আমার বৈঠক খানার ব্যাপার স্যাপার দেখেছ?"
"কি! আমরা চোর! যতবড় মুখনয় তত বড় চোপা!" ধমকে ওঠে ভৃঙ্গী।
ওকে শান্ত করে নন্দী বলে, "আচ্ছা, আমরা না হয় উঁকি মেরেছি, কিন্তু ওই পোঁটলায় কি আছে তা কি তুমি জান?"
"আমি পরের জিনিস বিনা অনুমতিতে ছুঁই না"
"ঠিক আছে, আমরা বলছি, ওতে কোনো সরকারী জিনিস নেই, আছে এক গোছা টাকা, আর সোনার গয়না।"
হলধর দরজা বন্ধ করে ট্যাঁক থেকে চাবি নিয়ে আলমারি ও বাক্স টি খুলে দেখে চোখ কপালে তুলে ফেললেন। টাকা ও একজোড়া বড় সাইজের ঝুমকো কানের দুল আছে বটে।
"ওই টাকা আর গয়না হল ঘুষের জিনিস, আর ওটা ও নিয়েছে বড় সায়েব কে দিয়ে নিজের প্রমোশন নেবার জন্য"।
হলধর বাবুর চোখে অবিশ্বাস দেখে ওর বলল "তবে দেখো,"
ওদের দেখে চোখ উল্টে হলধর মূর্ছা গেলেন, কারন আর কিছুই নয়, ওরা দুজন জমি থেকে প্রায় ছয় ইঞ্চি ওপরে ভেসে রয়েছে।
(১৪)
চোখে মুখে জলের ঝাপটা দিয়ে হলধরের জ্ঞান ফেরানো হোল, সব কিছু বোঝানোর পর হলধর কে উড়িয়ে নিয়ে ওরা থানায় পৌঁছে গেল।
থানায় গিয়ে হলধর নাইট ডিউটির হাবিলদার কে দিয়ে
দারোগা কে ডেকে পাঠালেন।
হলধর মানী লোক, ভবিষ্যতের প্রধান, দারোগা পাশের কোয়ার্টার থেকে চোখ
কচলাতে কচলাতে থানায় এসে হলধর কে দেখে বসতে বলল।
নন্দীরা অদৃশ্য অবস্থায় রয়েছে।
হলধর মানী লোক, ভবিষ্যতের প্রধান, দারোগা পাশের কোয়ার্টার থেকে চোখ
কচলাতে কচলাতে থানায় এসে হলধর কে দেখে বসতে বলল।
নন্দীরা অদৃশ্য অবস্থায় রয়েছে।
"বলুন স্যার, আপনি এত রাতে! কি ব্যাপার?"
হরিপদ সোজাসুজি লক আপের কাছে গিয়ে বললেন,"সরখেল, ওই ছেলেটিকে এক্ষুনি ছেড়ে দাও, ও নির্দোষ, আর তুমি জান যে ও কে? উনি সাক্ষাৎ শিব
পুত্র 'গণেশ'"।
সরখেল চোখ গুলি গোল্লা পাকিয়ে হলধরের দিকে হাঁ করে
তাকিয়ে বলল, " লোকে বলে আমি ঘুষ খাই, কিন্তু অতি বড় নিন্দুকেও বলবে না, যে, আমি গাঁজা খাই, এত রাতে সময় না নষ্ট করে
কাল সকালে একবার আসুন, ঠান্ডা মাথায় কথা বলা যাবে এখন"।
সরখেল তাকে গাঁজা খাওয়ার খোঁটা দিচ্ছে দেখে জ্বলে
উঠলেন হলধর পাঁজা,
"সরখেল!" হুঙ্কার দিলেন হলধর।
"সরখেল!" হুঙ্কার দিলেন হলধর।
"তোমার সমস্ত কালো কারবার আমি জানি, আমার কাছে অকাট্য
প্রমান আছে,
ওঁকে ভালোয় ভালোয় ছাড়ো, না হলে সদরে রিপোর্ট যাবে, তাতে ফল ভালো হবেনা।
ওঁকে ভালোয় ভালোয় ছাড়ো, না হলে সদরে রিপোর্ট যাবে, তাতে ফল ভালো হবেনা।
তখন তোমার ট্রান্সফার হবে সুন্দরবনের একেবারে ভেতরে, ওখানে তুমি ঘুষ খাবেনা, বাঘেরা তোমায় চিবিয়ে
খাবে।"
সরখেলও হার মানার পাত্র নয়, " ও যদি দেবতা হবে তাহলে দৈব শক্তির সাহায্যে নিজেই
বেরিয়ে আসুক।"
"তোমার পাপ চোখে ওঁদের দৈব শক্তি দেখা সম্ভব নয়","তবে...প্রমান চাও?
আচ্ছা..", “তোমার একটি পুরোনো কোমরের ব্যাথা আছে না?"
আচ্ছা..", “তোমার একটি পুরোনো কোমরের ব্যাথা আছে না?"
"আছেই তো, উঁ হুঁ হুঁ, সোজা হয়ে বসতেও পারিনা", সরখেল ডুকরে উঠল।
“ওই গরাদ ধরে এদিকে পেছন ফিরে একবার দাঁড়াও তো।"
মজা দেখতে সরখেল তাই করল।
"এইবার। বাবারা, আপনারা আছেন তো? যেমন কথা হয়ে ছিল.."
দুইজোড়া অদৃশ্য পায়ের ভীষণ জোরালো লাথি এসে পড়ল
সরখেলের পশ্চাদ দেশে, একটা ভীষণ মট করে শব্দ হল আর সরখেল মুখ থুবড়ে পপাত চ।
হতবাক সরখেল বলল, " কে ? কে?"
"সে কথা ছাড়ো,” হলধর আর হাবিলদার মিলে সরখেল কে টেনে তুললেন।
“বল, তোমার, কোমরের ব্যাথা আছে না
গেছে?"
অদৃশ্য লাথি খেয়ে আর সদরে ঘুষের রিপোর্ট হবার
শাসানিতে কাজ হল, সরখেল তালা খুলে দিয়ে বলল, বাবা গণেশ, আমরা পাপী তাপী মানুষ, মর্ত্যে এসেছেন ঠিক আছে, কিন্তু পরের বার দয়া করে এদিক পানে আসবেন না, আর আসলেও অমুল্য
দাঁতগুলো বাড়ীতেই খুলে রেখে আসবেন, না হলে আমাদের মত গরীবদের বাঁচা দায় হবে।
(১৫)
ভোর হয়ে আসছে, মৃদু মন্দ শীতল হাওয়া
ভেসে আসছে সুন্দরবনের জঙ্গল থেকে।
থানার বাইরে এসে হলধর হাতজোড় করে গণেশ কে বললেন," বাবা, এত দূর যখন এসেছেন, তখন দুটি দিন আমার বাড়িতে অতিথি হয়ে আসুন, আমি আপনার পরিচয়
কাউকে দেবোনা।"
স্মিত হেসে গণেশ বলল, " কথা দিচ্ছি, আসছে পয়লা বৈশাখ হাল
খাতার দিনে তোমার কাপড়ের দোকানে আমি নিজে এসে তোমার পূজো গ্রহণ করব"।
এই বলে গণেশ, নন্দী-ভৃঙ্গী ধীরে
ধীরে বাতাসে মিলিয়ে গেল।
আর গণেশের ইঁদুর? সে এক অন্য গল্প , তোমাদের শোনাবো অন্য
কোন সময়।।
সমাপ্ত