অলীক পাতার অন্যান্য সংখ্যা- পড়তে হলে ক্লিক করুন Library ট্যাব টি



। । "অলীক পাতা শারদ সংখ্যা ১৪৩১ আসছে এই মহালয়াতে। । লেখা পাঠানোর শেষ তারিখ ১৫ ই আগস্ট রাত ১২ টা ।.."বিশদে জানতে ক্লিক করুন " Notice Board ট্যাব টিতে"

Monday, July 9, 2018

যখন তখন-ধারাবাহিক -দন্ত্যস্থ (পঞ্চম পর্ব)-স্বরূপ চক্রবর্তী

দন্ত্যস্থ


(পঞ্চম পর্ব তথা অন্তিম পর্ব)

স্বরূপ চক্রবর্তী


সংখ্যা,১৯ (৯ ই জুলাই,২০১৮)


(১৩)


রাত প্রায় এগারোটা,  আজ হলধর বাবুর মনটা বড় চঞ্চলসেই ছেলেটি কোথায় যে গেলআহাবেশ পরিবারটিঠিক যেন শিব দুর্গার পরিবারআজ দোকানের কাজের ভিড়ে ওদের আর খোঁজ করা গেলো নাকালকে একবার লোক পাঠিয়ে দেখব 'খন।

যদি ধানাই পানাই আর একবার আসততা হলে জানা যেত।

 আজকে উনি ঘরের ভেতরেই বসে ছিলেনমাঝারি সাইজের ঘরবড়সড় একটি জানালাএকটি দরজা অন্তঃপুরের দিকে খোলেআর তার উল্টো দিকে বাইরের দরজাযেটা বাইরের দাওয়াতে খোলেএকটি একজনের শোওয়ার উপযুক্ত খাটঘরের মাঝে একটি মার্বেল টপ টেবিলে পুজোর অর্থাৎ গাঁজার সাজ সরঞ্জাম সব সাজানোকিন্তু বেশ বোঝা যায় যে ও বস্তুর ব্যবহার এখনো হয়নি।

তাওরা এলোএসে জানালা দিয়ে উঁকি মারতে লাগলওদের দেখতে পেয়েই হলধর গিয়ে সদর দরজা খুলে ওদের সাদরে আপ্যায়ন করলেন-

এসো এসো ভায়ারাকোথায় ছিলে তোমরা? তোমাদের মা ঠাকুরণ আর ছেলে দুটি ঠিক ঠাক বাড়ি পৌঁছেছেন তোছোট ছেলেটি কোথায় যে ঘুরতে চলে গেলমা ঠাকুরণও দোকান থেকে কিছুই নিয়ে গেলেন না"।

“রোসোরোসোসব বলছি"হাত তুলে হলধর কে থামাল,"এখন আমরা তোমাকে যা বলতে চলেছিতার কথা যেন কেউ ঘুণাক্ষরেও জানতে না পারেকথা দাও"।

“দিলামবললেন হলধর"।

"তুমি জান আজ যাঁরা তোমার দোকানে এসেছিলেন তাঁরা কে?"

"কেনোতোমরাই তো বললে যে ওনারা হেতাল গঞ্জের জমিদার পরিবারআহাকি সুন্দরঠিক যেন শিব ঠাকুরের সংসার"।

একদম ঠিকওঁরা তাঁরই পরিবার"গম্ভীর গলায় বলল নন্দী।

হা হা করে হেসে উঠলেন হলধর, "অর্থাৎ তোমারা ধানাই পানাই নও নন্দী ভৃঙ্গী"।

"একদম ঠিক!” বলল ওরা।

"এই; এটা কিন্তু বেশী হয়ে যাচ্ছেএই দেখ, আমি কিন্তু এখনো পুজোয় বসিনি"অবিশ্বাস জলধরের গলায়, “কি, কি  প্রমান আছেদেখি!"

"প্রমান?, হুমমআমরা তোমাকে সশরীরে দর্শন দিতে পারব নাতবে..., ," বলে এদিক ওদিকে দেখে পানাই বলল, " ওই লোহার আলমারিতে একটি লাল শালুতে মোড়া বাক্স আছে ঠিক?, যেটা  হরিপদ সরখেল আজ সন্ধ্যায় তোমার কাছে গচ্ছিত রেখে গেছে।

হলধর ভাবলেন ঠিকই তোআজ সন্ধ্যায় হরিপদ দারোগা এসেছিলমাঝে মাঝেই আসেএকটু অন্ধকার হলেআড্ডা দেয়চা খায়আর মুখ বাঁধা থলেবা বাক্স বন্দী কিছু গচ্ছিত রেখে যায়বলেথানার দস্তাবেজআপনি মান্যগণ্য মানুষতাই একটু সামলে রাখুনআবার পরে এসে নিয়েও যায়। হরিপদর সামনেই সেগুলি উনি লোহার আলমারী তে তুলে রাখেন আর দারোগা চাইলে ফেরৎ দিয়ে দেনঅন্যের ব্যাপারে উনি বেশি নাক গলান নাকিন্তু এসব তো এদের জানার কথা নয়কিন্তু তবু সন্দেহ তো যায় নাতাই বলেন ,"এতে কি প্রমান হয়না যে তোমরা চোরআড়ি পেতে আমার বৈঠক খানার ব্যাপার স্যাপার দেখেছ?"

"কি! আমরা চোর! যতবড় মুখনয় তত বড় চোপা!" ধমকে ওঠে ভৃঙ্গী।

ওকে শান্ত করে নন্দী বলে, "আচ্ছাআমরা না হয় উঁকি মেরেছিকিন্তু ওই পোঁটলায় কি আছে তা কি তুমি জান?"

"আমি পরের জিনিস বিনা অনুমতিতে ছুঁই না"

"ঠিক আছেআমরা বলছিওতে কোনো সরকারী জিনিস নেইআছে এক গোছা টাকাআর সোনার গয়না।"

হলধর দরজা বন্ধ করে ট্যাঁক থেকে চাবি নিয়ে আলমারি ও বাক্স টি খুলে দেখে চোখ কপালে তুলে ফেললেন। টাকা ও একজোড়া বড় সাইজের ঝুমকো কানের দুল আছে বটে।

"ওই টাকা আর গয়না হল ঘুষের জিনিসআর ওটা ও নিয়েছে বড় সায়েব কে দিয়ে নিজের প্রমোশন নেবার জন্য"।

হলধর বাবুর চোখে অবিশ্বাস দেখে ওর বলল "তবে দেখো,"

ওদের দেখে চোখ উল্টে হলধর মূর্ছা গেলেনকারন আর কিছুই নয়ওরা দুজন জমি থেকে প্রায় ছয় ইঞ্চি ওপরে ভেসে রয়েছে







(১৪)


চোখে মুখে জলের ঝাপটা দিয়ে হলধরের  জ্ঞান ফেরানো হোল, সব কিছু বোঝানোর পর হলধর কে উড়িয়ে নিয়ে ওরা থানায় পৌঁছে গেল।

থানায় গিয়ে হলধর নাইট ডিউটির হাবিলদার কে দিয়ে দারোগা কে ডেকে পাঠালেন।

 হলধর মানী লোক, ভবিষ্যতের প্রধান, দারোগা পাশের কোয়ার্টার থেকে চোখ 
কচলাতে কচলাতে থানায় এসে হলধর কে দেখে বসতে বলল।

 নন্দীরা অদৃশ্য অবস্থায় রয়েছে।

"বলুন স্যার, আপনি এত রাতে! কি ব্যাপার?"

হরিপদ সোজাসুজি লক আপের কাছে গিয়ে বললেন,"সরখেল, ওই ছেলেটিকে এক্ষুনি ছেড়ে দাও, ও নির্দোষ, আর তুমি জান যে ও কে? উনি সাক্ষাৎ শিব পুত্র 'গণেশ'"

সরখেল চোখ গুলি গোল্লা পাকিয়ে হলধরের দিকে হাঁ করে তাকিয়ে বলল, " লোকে বলে আমি ঘুষ খাই, কিন্তু অতি বড় নিন্দুকেও বলবে না, যে, আমি গাঁজা খাই, এত রাতে সময় না নষ্ট করে কাল সকালে একবার আসুন, ঠান্ডা মাথায় কথা বলা যাবে এখন"।

সরখেল তাকে গাঁজা খাওয়ার খোঁটা দিচ্ছে দেখে জ্বলে উঠলেন হলধর পাঁজা

"সরখেল!" হুঙ্কার দিলেন হলধর।

"তোমার সমস্ত কালো কারবার আমি জানি, আমার কাছে অকাট্য প্রমান আছে,

ওঁকে ভালোয় ভালোয় ছাড়ো, না হলে সদরে রিপোর্ট যাবে, তাতে ফল ভালো হবেনা।
তখন তোমার ট্রান্সফার হবে সুন্দরবনের একেবারে ভেতরে, ওখানে তুমি ঘুষ খাবেনা, বাঘেরা তোমায় চিবিয়ে খাবে।"

সরখেলও হার মানার পাত্র নয়, " ও যদি দেবতা হবে তাহলে দৈব শক্তির সাহায্যে নিজেই বেরিয়ে আসুক।"

"তোমার পাপ চোখে ওঁদের দৈব শক্তি দেখা সম্ভব নয়","তবে...প্রমান চাও

আচ্ছা..", “তোমার একটি পুরোনো কোমরের ব্যাথা আছে না?"

"আছেই তো, উঁ হুঁ হুঁ, সোজা হয়ে বসতেও পারিনা", সরখেল ডুকরে উঠল।

ওই গরাদ ধরে এদিকে পেছন ফিরে একবার দাঁড়াও তো।"

মজা দেখতে সরখেল তাই করল।

"এইবার। বাবারা, আপনারা আছেন তো? যেমন কথা হয়ে ছিল.."


দুইজোড়া অদৃশ্য পায়ের ভীষণ জোরালো লাথি এসে পড়ল সরখেলের পশ্চাদ দেশে, একটা ভীষণ মট করে শব্দ হল আর সরখেল মুখ থুবড়ে পপাত চ।

হতবাক সরখেল বলল, " কে ? কে?"

"সে কথা ছাড়ো,” হলধর আর হাবিলদার মিলে সরখেল কে টেনে তুললেন।

বল, তোমার, কোমরের ব্যাথা আছে না গেছে?"

অদৃশ্য লাথি খেয়ে আর সদরে ঘুষের রিপোর্ট হবার শাসানিতে কাজ হল, সরখেল তালা খুলে দিয়ে বলল, বাবা গণেশ, আমরা পাপী তাপী মানুষ, মর্ত্যে এসেছেন ঠিক আছে, কিন্তু পরের বার দয়া করে এদিক পানে আসবেন না, আর আসলেও অমুল্য দাঁতগুলো বাড়ীতেই খুলে রেখে আসবেন, না হলে আমাদের মত গরীবদের বাঁচা দায় হবে।
(১৫)

ভোর হয়ে আসছে, মৃদু মন্দ শীতল হাওয়া ভেসে আসছে সুন্দরবনের জঙ্গল থেকে।

থানার বাইরে এসে হলধর হাতজোড় করে গণেশ কে বললেন," বাবা, এত দূর যখন এসেছেন, তখন দুটি দিন আমার বাড়িতে অতিথি হয়ে আসুন, আমি আপনার পরিচয় কাউকে দেবোনা।"

স্মিত হেসে গণেশ বলল, " কথা দিচ্ছি, আসছে পয়লা বৈশাখ হাল খাতার দিনে তোমার কাপড়ের দোকানে আমি নিজে এসে তোমার পূজো গ্রহণ করব"।

এই বলে গণেশ, নন্দী-ভৃঙ্গী ধীরে ধীরে বাতাসে মিলিয়ে গেল।

আর গণেশের ইঁদুর? সে এক অন্য গল্প , তোমাদের শোনাবো অন্য কোন সময়।।


Sunday, July 8, 2018

যখন তখন-ধারাবাহিক -দন্ত্যস্থ (চতুর্থ পর্ব)-স্বরূপ চক্রবর্তী



দন্ত্যস্থ


 (চতুর্থ পর্ব)

স্বরূপ চক্রবর্তী


সংখ্যা-১৮, (৮ ই জুলাই,২০১৮)




()

এদিকে গণেশের আশায় বসে থেকে মা এর মন দুঃশ্চিন্তায় ভরে উঠছে, দুপুর প্রায় গড়িয়ে এলো বলে, আর দেরী করা যায় না,ওদিকে সন্ধ্যের আগে কৈলাসে ফিরে রাতের খাবার সময় মত না দিলে খালি পেটে গাঁজা খেয়ে শিব ঠাকুর কৈলাস মাথায় তুলে ফেলবেন।

"অ বাবা কাতু, দেখ না তোর ভাইটি কোথায় গেল? " 

ওদের এই বিপদ দেখে হলধর ওদের সান্ত্বনা দিলেন

জল খাইয়ে মা দুর্গা কে বললেন, " ভয় নেই মা, আপনার ছেলে ঠিক ফিরে আসবে, মা দুর্গার নাম নিন, সব ঠিক হয়ে যাবে।

মা মনে মনে ভাবলেন, "কিন্তু মা দুর্গা নিজে বিপদে পড়লে কার নাম নেবেন?"

মায়ের করুন মুখ দেখে কার্তিক বলল , "মা, তুমি এখানে একটু বসো, আমি একবারটি এগিয়ে দেখি কোথায় গেল ছেলেটা"।

কিন্তু মা সঙ্গে যাবেন বলে জিদ ধরলেন, সুতরাং দুজনে মিলে এগিয়ে চললেন।
খুঁজতে খুঁজতে মা কে নিয়ে কার্তিক এসে পৌঁছল বাজারের সেই জায়গাটাতে, যেখান থেকে গণেশ কে কিছুক্ষণ আগে  পাকড়াও করেছে ন্যালার চ্যালা, পথচলতি লোকজন কিছুই তেমন বলতে পারল না, কিন্তু ওদের এভাবে হন্যে হয়ে কাউকে বা কিছুকে গরু খোঁজা খুঁজতে দেখে একটি লোক স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে কার্তিক কে জিজ্ঞেস করল," কি ভাই,কি  খুঁজছেন?"

"কি নয়, কাউকে”, বিরক্ত গলায় বলল কার্তিক

"একটি নাদুস নুদুস হ্যাবলা মত ছেলে, আমার ভাই, একেবারে ইঁচড়ে পাকা, এদিকে একা একা এসেছিল, তার পর আর কোনো পাত্তা নেই।"

লোকটি বলল "ভাই?"
"তাহলে তো ব্যাপার সুবিধের নয়।"

“সুবিধের তো নয়ই, ভীষণ পাজি আর ডেপো ছেলে", বললে কার্তিক।

“কিন্তু আপনার ভাই যার খপ্পরে পড়েছে সে শুধু পাজিই নয়, পাজির পা ঝাড়া একেবারে"।

"মানে?” কার্তিক মনে মনে আমোদ পায়।

"কি ব্যাপার বাবা?" মা উদ্বিগ্ন মুখে প্রশ্ন করেন।

ওইটে আমার দোকান ",রাস্তার পাশের একটি সোনা গয়নার দোকানের দিকে দেখিয়ে বলল লোকটি।

"আমি দোকান থেকে দেখলাম যে, আপনাদের বর্ণনা মত একটি ছোট ছেলেকে ধরে নিয়ে গেল বাসুদেবপুর থানার ছোট কনস্টেবল নীলরতন ওরফে ন্যালার চ্যালা এক খেচর";

"ওদের কাজই হ'ল যে কোনো নতুন লোককে দেখলেই থানায় নিয়ে গিয়ে কয়েদির সংখ্যা পুরো করা"," কারণ থানার হেফাজত থেকে ফি দিনই কোনও না কোনো কয়েদি সটকান দেয়, বা বলা যায় ঘুষ দিয়ে পার পেয়ে যায়"

"সে কি! সর্বনাশ হয়েছে বাবা, আমার ছেলেকে থানায় নিয়ে গেছে?" , বলে মা ডুকরে কেঁদে উঠলেন," বাছা তুমি আমাদের দয়া করে একবার থানায় নিয়ে যাবে বাবা?"

মা এর পোশাক ও চেহারা দেখে দোকানীর মনে সম্ভ্রমের উদ্রেক হয়, সে বলে

" আপনার  কথা ঠেলতে মন চায়না, কিন্তু ওই হরিপদ দারোগা আর ওর কুকর্মের সাথী নীলরতন ভীষণ শয়তান মা, এই আমার ব্যাপারটাই ধরুন , আমার একমাত্র শ্যালক গত পরশু আমার বাড়ী প্রথম বার আসছিল, তা, নতুন লোক দেখে ওই ন্যালা ব্যাটা ওকে ফাঁসিয়ে থানায় নিয়ে ফাটকে আটকে রেখেছিল, আজ সকালে আমি অনেক টাকা আর সোনার ঝুমকো দুল ঘুষ দিয়ে শালাকে ছাড়িয়ে আনি","শালা ভীষণ পাজি।"

"কে? তোমার শালা?" জিজ্ঞেস করল কার্তিক।

"না, ওই হরিপদ সরখেল আর তার সাগরেদ নীলরতন ওরফে ন্যালা, আমি থানার দরজা অব্দি যেতে পারি, কিন্তু ভেতরে যেতে অনুরোধ করবেন না দয়া করে",

" আমার বিশ্বাস ওই হরিপদ দারোগা মায়ের পেট থেকে বেরোতেও মনে হয় ঘুষ নিয়েছিল।"

বুদ্ধিমান কার্তিক সব বুঝছিল, এই অবস্থায় মা সাথে থাকলে একটা যা তা কান্ড হবে বুঝে কার্তিক মা কে ওই গয়নার দোকানের ভেতরে ঠান্ডা হওয়াতে বসিয়ে মালিক কে নিয়ে থানার দিকে এগোলো...

(১০)

এই ঘটনার ঘন্টা কয়েক আগের ব্যাপার-
থানায় গণেশকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে, ব্যাপারটাতে সরাসরি হরিপদ হাত লাগিয়েছে-
"তোর নাম কি ছোকরা?"
গণেশ"
"তা বেশ"
"তোর বাবার নাম কি"?
"মহাদেব"
"কি দেব"?
"মহাদেব"?
বাড়ি কোথায়?
"কৈলাস"
"চোপ! ব্যাটা বেয়াদব", বলে টেবিলে সজোরে রুল ঠুকলেন হরিপদ।
"এবার বলবি ওই হাতির দাঁত গুলো তোর"।
"আমার ই তো",” আসার সময় বাবা মহাদেব বলে দিয়েছেন ছদ্মবেশ ধারন করতে, তাই প্যাঁচ খুলে দাঁত দেড় খানি থলেতে রেখে ছিলাম"।

হো হো করে অট্টহাসিতে  নীলরতন আর কয়েদি সহ গোটা থানাটি কাঁপিয়ে হরিপদ বিষম টিষম খেয়ে ভুঁড়ি সামলে নিজেকে ধাতস্থ করলেন, "ব্যাটা তুমি একটি পাকা ক্রিমিন্যাল, উফফ ওরে ন্যালা রে রে এ এ , তুই যে কি একখানা বিরাট কাজ করেছিস স্রেফ ভাবা যায় না," বলে হরিপদ জালার মত পেট টাতে  হাত বুলিয়ে আত্ম তৃপ্তির হাসি হাসলেন।
“যাক, এখন ব্যাটাকে লকআপে ভরে রাখ, বেলা গড়িয়ে গেল, আমি চাড্ডি মুখে দিয়ে একটু বিশ্রাম করে আসি, খাবার পর পিঠটা সোজা না করলে আমার আবার পুরোনো কোমরের ব্যাথাটা চাগাড় দিয়ে ওঠে"। এই বলে কোনও ক্রমে আড়াইমনি শরীরটা কে চেয়ার থেকে টেনে তুলে উঠতে যাবে-

 এমন সময় গণেশ ফুট কাটল, " ঘুষের পয়সায় শুধু গান্ডেপিণ্ডে গিললে আর শারীরিক পরিশ্রম না করলে বাত, ব্যাধি সব হয়"।

"চোপ! ব্যাটা ফিচেল, এই ন্যালা, ব্যাটা কে এক্ষুনি ফাটকে ঢোকা, আমি এসে এর ব্যবস্থা করছি", বলে কোমরের বেল্ট টাইট করতে করতে সরখেল কোয়ার্টারের দিকে পা বাড়ালেন।

(১১)

প্রায় আধঘন্টা পরের কথা, লকআপের সামনে টুল নিয়ে বসে ন্যালা ঢুলছিল, এমন সময় থানার দরজায় টোকার শব্দ শুনে নিদ্রা ছুটে গেল তার,
দরজা দিয়ে কার্তিক কে উঁকি মারতে দেখা গেল, কার্তিকের পাশ দিয়ে সোনার দোকানী শুধু মুণ্ডু  বাড়িয়ে ভেতরের অবস্থা দেখার চেষ্টা করছিল, আধো অন্ধকারে কিছুই বিশেষ বোঝা যাচ্ছিল না,

ন্যালা হুঙ্কার ছাড়ল,  " কি ব্যাপার? কাকে চাই?"

হুঙ্কার শুনেই দোকানী সটকান দিল।

কার্তিক একটু ভেতরে গিয়ে বলল," আজ্ঞে আপনাকে, দারোগা বাবু"।

 কার্তিকের মুখে দারোগা ডাক শুনে ন্যালা গলে ননী,কিন্তু মৌখিক গাম্ভীর্য বজায় রেখে বলল "  ভেতরে এস, বল কি সমস্যা"?

কার্তিক একেবারে লক আপের সামনে এসে আধো অন্ধকারে ঠাহর করে দেখেযা ভেবেছে ঠিক তাই, অন্ধকারে এক কোনায় মুখ নিচু করে বসে আছে কার্তিকের জীবনের চির শত্রু, তার ভাই , -'গণেশ'

"এইবার, যাদু, তুমি পড়েছ ফাঁদে, তোমার জ্যঠামি এইবার চিরতরে ঘুচবে, বার বার বললাম যে দাঁত গুলির প্যাঁচ খুলে কৈলাসেই ছেড়ে আয়, তা নয়, ওনার শুধু শো অফ"। "সেই কত যুগ আগে পৃথিবী পরিক্রমার নামে মায়ের চারদিকে চক্কর লাগিয়ে চিটিং বাজি করে জিতে আর সেবার ভ্যালেন্টাইন ডে তে বাবাকে মারের হাত থেকে বাঁচিয়ে তুমি নিজেকে হিরো ভাবতে শুরু করেছ, এবার তুমি বুঝবে চাঁদ, এই পৃথিবীতে হরিপদ দারোগার হাত থেকে বিনা দৈব শক্তি আর আমার সাহায্য ছাড়া কিভাবে বাঁচবে, আমি দেখব", মনে মনে ভাবল কার্তিক।

মুখে বলল দারোগা বাবু আমি একজন কে "খুঁজতে খুঁজতে এখানে এসেছি।"

নিজের পদের প্রমান দিতে নীলরতন উঠে গিয়ে দারোগার চেয়ারে বসে পড়েছে।

কার্তিকের আওয়াজ শুনে গণেশের ধড়ে যেন প্রাণ এলো, "দাদা, আমায় বাঁচা , প্লিজ"।

"হুমম, দেখি, কি করতে পারি", কার্তিক নীলরতনের দিকে এগিয়ে গিয়ে বলল,

" দেখুন দারোগা সাহেব, এই লোকটি কে কোথায় পেলেন? আমি ইন্টারনেটে এর ছবি দেখেছি, আপনার তো লটারী লেগে গেছে, এই লোকটি একটি মহা ফেরেব্বাজ ইন্টারন্যাশনাল চোরা কারবারী, একে মোটেই ছাড়বেন না", বলে হনহনিয়ে বেরিয়ে গেল।

কার্তিকের কথা গণেশ শুনতে পারল না, কিন্তু দাদার ওভাবে চলে যাওয়া দেখে প্রমাদ গনল।

কিছুক্ষণ পর কার্তিক হতাশ মুখে মা এর কাছে ফিরল, " নাহ, মা, থানায় যাকে আটক করে রেখেছে, সে অন্য কেউ, আমাদের গণেশ নয়।"
"নয়? বলিস কি রে? “বলে মা ডুকরে কেঁদে উঠলেন।

বাজারে ধীরে ধীরে সন্ধ্যে নেমে আসতে লাগল, দোকান গুলোতে বাতি জ্বলতে শুরু করেছে, কার্তিক বলল, "চলো মা, আমরা ফিরেই যাই  কৈলাসে, এই অন্ধকারে দৈব শক্তির সাহায্য ছাড়া আমরা কিছুই করতে পারব না, ওখানে গিয়ে বাবাকে বললে কিছু একটা ব্যবস্থা অবশ্যই হবে।"
অগত্যা নিমরাজী মা, কৈলাসের দিকে রওয়ানা হলেন।

(১২)

সব শুনেটুনে শিব ঠাকুর তো রেগে কাঁই,
"তোমরা সব এত বে আক্কেল হলে কি ভাবে? এখন কোথায় খুঁজি ছেলে টাকে, কে জানে কোথায় আছে, কিভাবে আছে?", “পই পই করে নিষেধ করে ছিলাম, কিন্তূ, এই সংসারে আমার কথা কেউ কি কখনো শুনেছে?
এবার ধৈর্য্যের বাঁধ ভাঙল মা এর, চিৎকার করে বলে উঠলেন, " এখন তো ছেলে ছেলে করে আদিখ্যেতা করছ, তখন মনে ছিল না, যখন তোমার পেয়ারের বিষ্ণু ছেলেটার মাথাটি কেটে নিয়ে ছিল? আবার আদিখ্যেতা করে অরিজিনাল মাথার জায়গায় হাতির মাথা জুড়ে দেওয়া হয়েছিল, সেই থেকে বাছা আমার দাঁত নিয়ে ব্যস্ত হয়ে থাকে, তুমি কি কিছু জানো যে মর্ত্যে হাতির দাঁতের কি চড়া দাম? ওরা জানতে পারলে বাছা কে আমার ছেড়ে দেবে ভেবেছ?" বলে  ডুকরে কেঁদে উঠলেন মা।

এখন , গণেশ  দাঁত নিয়ে কেন গেছে ? এই কঠিন প্রশ্ন টি করার সাহস পেলেন না দেবাদিদেব। শুধু মিনমিনিয়ে বললেন, ' আহা, আহা রাগ করো কেন ? আমি আছি তো, দেখি কি করতে পারি?"

হ্যাঁ, তাই দ্যাখো, তা নাহলে আজ থেকে তোমার খাওয়া দাওয়া বন্ধ, তখন শুধু থেকো গাঁজার ওপরে, এই বলে রাখলাম ।" বলে মা দাপিয়ে বেরিয়ে গেলেন।

মহাদেব প্রমাদ গনলেন, আবার ডাক পড়ল নন্দী-ভৃঙ্গীর, সব কথা বুঝিয়ে বলা হল তাদের
বাবা বললেন , শোন, সেই হলধর না কি যেন লোকটি, ওর মনে হচ্ছে এলাকায় প্রভাব প্রতিপত্তি বেশ, একবার ওকেই ধর , কিন্তু খবরদার! খুব প্রয়োজন না হলে  নিজেদের পরিচয় একদম দিবিনা, মর্ত্যের লোকজন আজ কাল হয়েছে মহা পাজি, না ভূতে বিশ্বাস করে, না, ভগবানে, এমন লোকের কাছে যাওয়া ভূত বা ভগবান কারুর যাওয়াই সেফ নয়, নেহাৎ বাধ্য না হলে দৈব শক্তির প্রয়োগ  এক্কেবারে নয়, মনে থাকে যেন'



ক্রমশঃ








Main Menu Bar



অলীকপাতার শারদ সংখ্যা ১৪২৯ প্রকাশিত, পড়তে ক্লিক করুন "Current Issue" ট্যাব টিতে , সবাইকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা

Signature Video



অলীকপাতার সংখ্যা পড়ার জন্য ক্লিক করুন 'Current Issue' Tab এ, পুরাতন সংখ্যা পড়ার জন্য 'লাইব্রেরী' ট্যাব ক্লিক করুন। লেখা পাঠান aleekpata@gmail.com এই ঠিকানায়, অকারণেও প্রশ্ন করতে পারেন responsealeekpata@gmail.com এই ঠিকানায় অথবা আমাদের ফেসবুক গ্রুপে।

অলীক পাতায় লেখা পাঠান