যুগলবন্দী- সংখ্যা # ১৭
কলমেঃ শম্পা সান্যাল
ক্যামেরায়ঃ সুরজিত মাহাত
রম্য রচনা
সম্পাদক উবাচঃ পাঠকের অবগতির জন্য জানাই যে এই লেখাটি তে আমার প্রিয় শিব-দুর্গার পরিবারের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য গনেশ ঠাকুরের চৈত্র সেলে মর্ত্যে আগমন ও নিজের দেড় খানি দাঁত নিয়ে বিব্রত হবার গল্প " দন্ত্যস্থ"র উল্লেখ আমাকে বাধিত করেছে,লেখিকার কাছে আমার কৃতজ্ঞতা অশেষ।
ছবি দেখে লিখতে হবে। কি লিখি! অত কি ছাই পারি!"
মাথায় কিছুই আসছে না, বনে বাদাড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছি যদি কিছু ভাবনা আসে, ওমা! ওটা কে? যাইহোক, দেখা যখন পেয়েছি আলাপ তো করি! পায়ে,পায়ে এগিয়ে যাই। কি ব্যাপার! গোমড়া মুখে বসে আছো যে! এই সময় তাও আবার। তৎক্ষণাৎ তো মাথায় এসে গেল " প্যাঁচা কয় প্যাঁচানি, খাসা তোর চ্যাঁচানি "
ও বাবা, এটা আর কে না জানে! আর সুকুকে নকল করার কোনই দরকারই নেই আমার , হে হে আমি কি যাকগে দেখে যা মনে হচ্ছে পেঁচককুলের হলেও তুমি বাপু লক্ষ্মী নও। নও তো নও,সবাইকে লক্ষ্মী হতে হবে এ দিব্যি তো কেউ দেয়নি! তোমার ড্যাবাড্যবা চোখ দুটো বড়ো সরল, একটু কি ভয়ার্ত! স্বাভাবিক। হতেই পারে। মনুষ্যুকুলকে ভয় তো পেতেই হবে। ও আসল কথাই তো জানা হয়নি, তুমি প্যাঁচা না পেঁচি গো? রাগ করলে পেঁচি বললাম বলে? আরে, তোমার কি ঘুমের সমস্যা নাকি ! কি ব্যাপার! দিনের বেলায় বেরিয়ে পড়েছো যে! পেঁচির সাথে-কি ঠিক ধরেছি তো! ঐজন্য গোমড়া মুখে বসে? আরে বলো না-কাউকে বলবো না, প্রমিস, কি হয়েছে গো? বললাম তো বলবো না কাউকে। ক্বিইইই! আমিও পেঁচি তাই আমাকে-বেশ হয়েছে, দিয়েছে তো বের করে! ঠিক হয়েছে। -নাআআ- না!!! -তাহলে,ও বুঝে গেছি, বুঝে গেছি আর বলতে হবে না, তোমারো আমার মতো দশা, তাই তো! অলীক পাতায় লিখবে কি তাই ভেবে ভেবে ঘুম নেই তো! আমারো গো। আরে, একটাও কমন পড়েনি জানো ! রাতের ঘুম থুড়ি দিনের ঘুম গেছে তো ভোগে?-চুউউপ ।-চুপকরবো!! কেন ? কেন করবো শুনি?
-আমার কোন পেঁচি টেঁচি নেইইই!!
-তা অতো আস্তে আস্তে বলার কি আছে! নিশাচর, নিশিকুটুম্ব তো নও ! জোরে কথা বলো। ঐ বিড়বিড়, মিনমিন করে যারা কথা
বলে, বিরক্ত লাগে। হ্হ্যা, কি বলছিলে, পেঁচি নেই! তাই হুঁকোমুখো হয়ে বসে আছো!
-না আছে তবে -
-কি ছাই যে বলছো! খোলসা করো তো বাপু।
-আছে ,আবার নেই, মানে আমাকে সে চায় না। আমার ভালোবাসার কোন.....
-বুঝেছি, বুঝেছি । হুঃ, এ গল্প ঘরে ঘরে, তার জন্য তোমার হাসতে তো মানা নেই! ধুত্, যতো সময় নষ্ট।চললাম। আরে, একটা কথা মনে এলো। শিবালয়ের কাছেই থাকে স্বরূপ ,বেশ একটা হৃষ্টপুষ্ট নাদুসনুদুস ইঁদুর যদি দেখতে পাও তৎক্ষণাৎ পাকড়াও করে স্বরূপকে ধরে এনে দাও। ও শিবালয় থেকে এনে বাজারে ছেড়ে দিয়ে আর খুঁজে পাচ্ছে না, ফলে প্রেসার ট্রেসার বেড়ে একসা। খুব খুশী হবে, লেখা নিয়ে তোমাকে আর জ্বালাবে না। আরে, শিবালয়ে তো একজন থাকেন। তোমার কেউ তো হন নিশ্চয়ই, কাকীমা,বৌদি যাহোক সম্পর্ক তো একটা আছেই। বলেই জোরে জোরে পেঁচার পাঁচালী-
হুতোম প্যাঁচা, নিমপ্যাঁচা,কুটি প্যাঁচা, গাছ প্যাঁচা, শিকরে প্যাঁচা,লক্ষ্মী প্যাঁচা, কন্ঠি নিমপ্যাঁচা,পাহাড়ি নিমপ্যাঁচা,উদখী নিমপ্যাঁচা, মেটে হুতোমপ্যাঁচা,চিতিপেট হুতোমপ্যাঁচা,তামাটে মেছো প্যাঁচা,মেটে মেছোপ্যাঁচা,খয়রা মেছো প্যাঁচা,খয়রা গাছ প্যাঁচা,দাগিঘাড় কুটিপ্যাঁচা, এশীয় দাগিপ্যাঁচা,খুড়-লে প্যাঁচা, খয়রা শিকরে প্যাঁচা,ছোটকান প্যাঁচা-পরিযায়ী .....
-থামবে!! প্যাচাল পড়া বন্ধ করবে তুমি?
-কেন, কেন !জানো , একারণে খুশী হয়ে....কি বললে ?? আবার বলো, আবার বলো! শিবালয় থেকে ঐ কারণে তোমার বোন খবর পাঠিয়েছেন? স্বাভাবিক। , ঠিক ঠিক যাকগে যা বলছিলাম, বলে ভালো করেছো। ঐ কারণে চিন্তা! ছোঃ,আরে আগে বলবে তো সেকথা। শোনো, সুন্দরবনের কাছে চলে যাও,ওখানেই মিলবে। তাইলে আর তোমাকে কি বললাম! খুঁজে খুঁজে আর বাজার পেলো না! জংলি বাজারে নিয়ে যাওয়া কেন বাপু! যার জন্য যাওয়া সে গুড়ে তো বালি, মাঝখান থেকে-আরে না না, অতো ধন্যবাদ-টাদ দিতে হবে না, এরকম উপকার আমি ফ্রিতেই করে থাকি। ভালো কথা ,তুমি কি জানো ইতিমধ্যে তুমি বন্দী? লেন্স আর লেখনীর যুগল মিলনে ।সেও ঐ স্বরূপের ফন্দি, বুঝলে! তুমি সুন্দরবনে ভয় পেয়ো না, ওখানেই আছেন তিনি। আরে না, না রয়াল বেঙ্গল টাইগার-ছুঁচো সরি ইঁদুর মেরে কখনোই হাত গন্ধ করবে না। আর শিবালয় ছেড়ে তেনারও কি আর ভালো লাগছে!আচ্ছা, চলি এবার। ওদিকে আবার আফটার নুন ডিউটি।
হাঃ,হাঃ,হাঃ কি বলছো ? সেটা আবার কি? আর জানার দরকার নেই গো! ঐ যারে কয় দিন-রাত এক করে খাটা এই আর কি!
যাও, যাও যা বললাম করে ফেলো দিকি! বন্ধন-মুক্ত হও, দেখে আনন্দ তো পাই!