|
চিত্রঋণঃwww.google.com |
আমার তিন বছরের মেয়েকে
বাইকে চড়িয়ে ঘোরাতে বেরিয়ে
জিজ্ঞেস করলাম কোথায় যাবি ?
উত্তরে সে বলল জানি না !
রাস্তার বাঁদিকে পার্কের
দোলনা দেখিয়ে বললাম ওখানে
যাবি ? বলল না ! আরও অনেকটা
দূরে গিয়ে স্টেডিয়ামের মাঠের
সামনে দাঁড়ালাম, সে আর বাইক
থেকে নামে না । মাঠের দিকে
ইশারা করলাম, সে দু’দিকে
মাথা ঝাঁকাল । ফিরতি পথে আবার
চলতে চলতে প্রশ্ন করলাম তবে
কোথায় যাবি ? উত্তরে সে
আবার বলল - জানি না !
এলোমেলো কত কথাই তো বলতে শিখেছে –
‘জানি না’ কথাটি শুনলাম এই
প্রথম ওর মুখে, শুনেই যেন
ভেতর থেকে নড়ে উঠলাম । আমিও
আর কোথাও দাঁড়াই না !
সামনে বসে থাকা মেয়ের হাতের
ইশারায় কখনো বাঁয়ে কখনো
ডাইনে, রাস্তা থেকে গলি,
গলি থেকে রাস্তা শুধু পথেই ঘুরে-ফিরি
সন্ধ্যের স্বর্ণালী ঘোর
নিয়ে । চলতে চলতে একই রাস্তায়
দু’বার, কখনও বা ফিরে আসি
গলির শেষে কোন বাড়ির প্রাচীরে
ধাক্কা খেয়ে । আবার নতুন
নির্দেশে চলতে শুরু করি উদ্যমে !
তবু পথ চলি, পথেই চলতে থাকি
– কোথায় যেতে চাই না জেনেই ।
চলতে চলতেই থামি একসময়
রামলীলা ময়দানের
সিংহ-দ্বারের মুখে; পেছন
ঘুরে দেখি আটটার টিফিন ব্রেকে
দলে দলে আলো জ্বেলে বেরিয়ে
আসছে কর্মীরা কারখানার
হাঁ-মুখ গেটের ভিতর হতে –
হাতে করে এক পাউন্ড রুটি !
পৌনে এক ঘন্টার অবসর – এরই
মধ্যে বউ-ছেলে-মেয়ের
সাথে ভাগ করে খাবে সবাই
শ্রমের বিনিময়ে পাওয়া রুটি -
সাথে আম-আচারের টুকরো,
তেলটুকু জমা হবে কাঁচের বয়ামে ।
লালাভরা জীভ নিয়ে আমিও আবার
চলতে শুরু করি, এবার
ঘরে ফিরি ; দিনের শেষ
খাবারের পাতে বউকে বলি – এক টুকরো
আমের আচার দিতে, লালা
প্রশমিত হয় । চোখ আটকে তেলে !
তারপরও বিচরণ করি স্বপ্নে
ভূত–অতীত–ভবিষ্যতে ।